অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৮
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহা অবাক চোখে মাশরাফির দিকে তাকিয়ে ছিল৷ সে উপলব্ধি করতে পারছিল মাশরাফির ভালোবাসা তার জন্য কতটাই না অমলিন যে এই পরিস্থিতিতেও মাশরাফি নিজের কথা না ভেবে শুধু আরহার কথা ভাবছে৷ আরহার চোখে জল চলে এলো। মাশরাফিকে আরহার সামনেই হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গেলো পুলিশ। আরহা কাঁদতে লাগল। মাশরাফি যাওয়ার আগেও আরহাকে ইশারা করে চুপ থাকতে বলল।
মাশরাফিকে নিয়ে যাবার পরই রিয়াশা এগিয়ে এলো। সে এসেই আরহাকে বললো,”আরহা, তুই তো আমার ভাইয়াকে বিশ্বাস করিস তাই না? তুই তো জানিস,ভাইয়া এমন কিছু করতে পারে না। তাহলে তোর পরিবারকে বল না আমার ভাইয়ার উপর থেকে এসব মামলা তুলে নিতে। আমার ভাইয়ের পুরো ক্যারিয়ার যে ধ্বসে যাবে এমন কিছু হলে! ও একজন উঠতি ক্রিকেটার ছিল অথচ এসব স্ক্যান্ডালে নাম জড়িয়ে নিজের ক্যারিয়ারের হুমকি তৈরি করল।”
আরহা বুঝতে পারে না সে কি বলবে। এরমধ্যে রাজীব হাসান এগিয়ে এসে বলেন,”আইন আইনের মতোই চলবে৷ এতে আমাদের কষ্ট হলেও কিছু করার নেই রিয়াশা। ভালো এটাই হবে যে, তুমি বাস্তবতা মেনে নাও।”
এরমধ্যে আরহা রিয়াশার হাত আলতো করে স্পর্শ করে বলে,”তুই একদম চিন্তা করিস না রিয়ু। আমি মাশরাফি ভাইয়ের কোন ক্ষতি হতে দেব না। ওনার উপর আসা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা এটা প্রমাণ করে আমি ওনাকে জেলের বাইরে নিয়ে আসবোই।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলেই আরহা আচমকা বেরিয়ে যায়। মিসেস রুমি রিয়াশার হাত ধরে বলে,”চল, আমরাও থানায় যাব। তোর আব্বুর মতো আমি পারব না এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে। এদেশের আইনের উপর আমার কোন ভরসা নেই। এদেশে যেখানে লাখ লাখ আসল অপরাধী মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে আমার নিরপরাধ ছেলে বিনা অপরাধে শাস্তি পাবে আমি মা হিসেবে কোন ভাবেই সেটা মেনে নেবো না। মাশরাফি আমি জেল থেকে বের করে আনবোই।”
বলেই তিনি রিয়াশাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। রাজীব হাসান ভীষণ অসহায় বোধ করতে থাকেন। এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে তিনি পড়েছেন উভয় সংকটে।
আরহা রাস্তা দিয়ে অমনোযোগী হয়ে হেটে যাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ করে তার ফোন বেজে ওঠে। আরহা অন্যমনস্ক হয়েই ফোনটা রিসিভ করে। বিপরীত দিক থেকে এক পুরুষালি কন্ঠস্বর বলে ওঠে,”নিজের প্রেমিককে চোখের সামনে বিনা অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে দেখে কেমন লাগল তোমায়? নিশ্চয়ই ভালো লাগে নি। তুমি কি চাও যে, তোমার প্রেমিক আবার জেলের বাইরে আসুক?”
“কে আপনি? আর কি বলছেন এসব?”
“আমি কে, কি চাই সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পাবে। পরবর্তী ম্যাসেজে যেই ঠিকানাটা পাঠাচ্ছি চুপচাপ সেখানে চলে আসো। আর একদম দেরি করবে না।”
বলেই ফোনটা কেটে দেয়।
“হ্যালো..হ্যালো…”
আরহা আর কোন জবাব পায় না। একটু পরেই তার ফোনে ম্যাসেজে ঠিকানা পাঠানো হয়। আরহা পরে বিরাট সংশয়ে! সে আনমনে বলে,”কি করবো এখন আমি? এই ঠিকানায় যাওয়া কি ঠিক হবে? কিন্তু না গিয়েও যে উপায় নেই। কে এভাবে মাশরাফি ভাইয়াকে ফাসালো সেটা আমায় জানতেই হবে।”
জাঈদ সমানে পায়চারি করে চলেছে। এমন সময় আরুশি ছুটে এসে বলে,”এসব আমি কি শুনলাম জাঈদ? তোমরা বাবা-ছেলে থানায় গিয়ে নাকি মাশরাফির নামে মামলা করে এসেছ যার দরুণ ওকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব কি শুরু করলে তোমরা?”
জাঈদ বলে,”যা করেছি একদম ঠিক করেছি মাম্মা। চাচ্চুর খুনিকে উচিৎ শাস্তি পেতেই হবে।”
“তুমিই উসকেছ তোমার পাপাকে তাই না? কেন এসব ছেলেমানুষী করছ? মাশরাফির উপর তোমার পূর্বের ক্রোধ মেটানোর জন্যই কি এসব করছ? একবারো নিজের বোনের কথা ভাবছ না তুমি? প্রতিশোধের নেশায় এত অন্ধ হয়ে গেছ। তোমার বোন সকাল সকাল সেই যে মাশরাফির সাথে দেখা করতে বেরিয়েছে এখনো ফেরে নি। সে খেয়াল আছে তোমার?”
এমন সময় আকাশ সেখানে এসে বলে,”জাঈদ ভাইয়া যা করেছে একদম ঠিক করেছে বড় আম্মু। আমি তো বুঝতে পারছি না, তোমরা মা-মেয়ে ঐ খু*নিটার হয়ে কেন এত কথা বলছ। যদি আমার আব্বুর যায়গায় বড় আব্বু থাকত তাহলেও কি এভাবে ওকে সাপোর্ট করতে পারতে?”
এমন সময় সায়রা সেখানে এসে আকাশকে চোখ রাঙিয়ে বলে,”মুখ সামলে কথা বল আকাশ। কাকে কি বলছিস তুই? উনি তোর বড় আম্মু হন। এক্ষুনি ক্ষমা চা।”
“আমি ভুল কিছু বলি নি আম্মু। তাই কারো কাছে ক্ষমা চাইতে পারবো না। আর বাকিদের কথা নাহয় বাদ দিলাম, তুমি কিভাবে ঐ মাশরাফির হয়ে কথা বলছ? আব্বুর শোক বেমালুম ভুলে গেলে? নিজের স্বামীর খু*নির হয়ে কথা বলতে লজ্জা করছে না তোমার?”
আফিফা খানও সেখানে চলে আসেন। একেই নিজের সন্তান শোক তার উপর নিজের নাতিদের এমন জঘন্য ব্যবহার তার মন বিষিয়ে তোলে। তিনি এগিয়ে এসে আকাশের গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারেন। আকাশ অবাক হয়ে বলে,”তুমি আমায় মারলে দাদি?”
“হ্যাঁ, মারলাম। এতক্ষণ শুধু এটা ভেবে চুপ ছিলাম যে, তুমি যা করছ সেটা নিজের বাবার শোকে কিন্তু এখন যেটা করছ তা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নিজের বড় আম্মু, নিজের মা কাউকেই তুমি ছাড় দিচ্ছ না৷ জিভ খুব বড় হয়ে গেছে তাই না? নিজের বিধবা মায়ের সাথে আর একবার শুধু এই সুরে কথা বলে দেখো, তোমার জিভ আমি টেনে ছিড়ব।”
এমন সময় আমিনা সেখানে এসে আকাশকে বলে,”আকাশ, তুই চুপ থাক। থানায় মামলা করা হয়েছে তো বাকিটা দেখা যাবে। এখন নিজেদের মধ্যে আর ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই।”
আরহা ম্যাসেজে পাঠানো ঠিকানায় এসে হাজির হলো। কিন্তু সেখানে কেউ ছিল না৷ কিছু সময় অপেক্ষা করার পর হঠাৎ করে সে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পায়। পেছনে তাকিয়ে হতবাক স্বরে বলে,”আপনি?”
হাসান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসে। আরহা বলে,”তার মানে আপনিই আছেন এসবের পেছনে? কিন্তু কেন? কেন এভাবে আমাদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করলেন।”
হাসান বললো,”ঝামেলার তো এখনো কিছুই দেখো নি তুমি সুইটহার্ট। আসল ঝামেলা এখনো বাকি আছে ”
হাসানের গলায় সুইটহার্ট শব্দটা শুনে আরহা আরো বেশি চমকে ওঠে। তুমুল চমকের সুরে বলে,”তারমানে..আপনি সেই লোক যে আমায় ফোনকলে বিরক্ত করত..আমায় অশ্লীল চিঠি পাঠাতো।”
“এইতো, একদম ঠিক ধরেছ। সবকিছু তো তোমাকে পাওয়ার জন্যই আমি করেছি সুইটহার্ট। সেদিন তো তোমাকে দেখার জন্যই ড্রোন ওড়াচ্ছিলাম। ড্রোনের মাধ্যমে তোমার উপর নজরদারি করাই ছিল আমার মূখ্য উদ্দ্যেশ্য। আর দেখো আমার সৌভাগ্য, সেই ড্রোনে এমন কিছু ধরা পড়ে যা আজ আমাদের এই পরিস্থিতিতে নিয়ে এলো। এতদিন আমি তবু চুপ ছিলাম কিন্তু যখন দেখলাম পাখি হাতছাড়া হতে চলেছে তখন তো আমায় ব্যবস্থা নিতেই হতো।”
বলেই আরহার শরীরে বাজেভাবে স্পর্শ করতে চায়। আরহা ঘৃণাভরে সরে দাঁড়িয়ে বলে,”কি চান আপনি?”
হাসান একটা গা জ্বালানি হাসি দিয়ে বলে,”এই তো সঠিক পথে এসেছ, আমি তোমাকে চাই সুইটহার্ট। শুধু তোমাকে।”
“তোমার এই ইচ্ছা কখনো পূরণ হবে না। আমার মনপ্রাণ জুড়ে কেবল মাশরাফি ভাইয়া আছেন।”
“জানতাম, তুমি এত সহজে রাজি হবে না। তাই তো তোমায় এখানে ডাকা। আপাতত আমি মাশরাফিকে ফাসিয়েছি কিন্তু আসল ফুটেজটাও কিন্তু আছে আমার কাছে যেটা আমি গোপন রেখেছি সবার কাছে। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, তোমার জন্যই তোমার চাচ্চু মারা গেছে। তুমি কি চাও, সেটা আমি প্রকাশ্যে আনি?”
“আপনি আমায় ব্ল্যাকমেইল করছেন।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৭
“ধরো তাই। যদি তুমি আমায় বিয়ে করতে না চাও তো…”
“আপনার যা করার আপনি করুন। আমি ভয় পাই না। কোন কিছুর বিনিময়ে আমি রাজি হবো না।”
বলেই সে হাসানের মুখে থু থু ছিটায়। হাসান রেগে বলে,”কাজটা ভালো করলে না। এবার এর ফল পেতে প্রস্তুত হও।”