অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৯
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহা থানায় এসে বসে আছে মাশরাফির সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাকে মাশরাফির সাথে দেখা করতে দিতে নারাজ। আরহা তাদের সামনে হাজারবার অনুরোধ করার পরেও পুলিশ অফিসারদের মন গলে না। আরহা হতাশ হয়ে থানার সামনেই বসে পড়ে বলে,”আমাকে যতক্ষণ অব্দি না আপনারা ওনার সাথে দেখা করতে দিচ্ছেন ততক্ষণ আমি এখানেই বসে থাকব।”
পুলিশ অফিসার বলেন,”দেখুন, এভাবে দেখা করার কোন নিয়ম নেই৷ একটু আগেই মিস্টার মাশরাফি হাসানের মা-বোন এসে ওনার সাথে দেখা করে গেছে। এখন আর নতুন করে কারো সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া সম্ভব না।”
আরহা কিছু বলতে যাবে এমন সময় রাজীব হাসান থানায় চলে এলেন। রাজীব হাসানকে দেখেই পুলিশ অফিসার স্যালুট জানালেন৷ আরহা এগিয়ে গিয়ে রাজীব হাসানের সামনে হাতজোড় করে বলল,”আঙ্কেল, দয়া করে আমার সাথে একবার মাশরাফি ভাইয়ার দেখা করার ব্যবস্থা করে দিন। আমার ওনার সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।”
“তুমি বাড়ি ফিরে যাও আরহা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“প্লিজ, আঙ্কেল, আমাকে শুধু একবার ওনার সাথে কথা বলতে দিন। ওনার সাথে কথা না বলে আমি যাব না। আমি কথা দিচ্ছি, বেশি সময় কথা বলবো না।”
রাজীব হাসান হার মানেন।
“বেশ, যাও মাশরাফির সাথে দেখা করে এসো। তোমাকে ৫ মিনিট দিলাম কথা বলার জন্য।”
আরহা আর অপেক্ষা না করে দ্রুত দৌড়ে যায় কারাগারের ভেতর। মাশরাফির জেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”মাশরাফি ভাইয়া..”
মাশরাফি মাথা তুলে আরহাকে দেখে অবাক হয়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আরহা তুমি..তুমি এখানে কেন এলে?”
আরহা ক্রন্দনরত স্বরে বলে,”আপনার সাথে আমার অনেক জরুরি কথা আছে মাশরাফি ভাইয়া।”
“তুমি কাউকে কিছু বলো নি তো? দেখো, আমি সব সামলে নেব তোমাকে আমায় নিয়ে ভাবতে হবে না।”
“আমি আর এসব লুকিয়ে রাখতে পারছি না মাশরাফি ভাইয়া৷ তাছাড়া, আজ যা হলো, যে সত্য আমি জানতে পারলাম তারপর তো আরোও নয়।”
মাশরাফি অবাক হয়ে জানতে চায়,”কি হয়েছে আজ?”
আরহা হাসানের সাথে তার সমস্ত কথোপকথনের কথা খুলে বলে মাশরাফিকে। সব শুনে মাশরাফি বলে,”তুমি হাসানের শর্ত মেনে নাও আরহা।”
আরহা বিস্ফোরিত চোখে তাকায়। চেচিয়ে উঠে বলে,”পারবোনা আমি। কি ভেবেছেন কি আপনি? একেই আমার জন্য মিথ্যা অপবাদ স্বীকার করে নিয়েছেন আপনি। আমাকেও কসম দিয়ে আটকে রেখেছেন..আর এখন চাইছেন আমি ঐ হাসানকে বিয়ে করি…!”
“এটাই তোমার জন্য ভালো হবে আরহা। যদি সব সত্য সামনে আসে তাহলে তোমার পরিবার তোমায় দূরে ঠেলে দেবে।”
“যা হবার হয়ে যাক, আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। ঐ হাসানকে বিয়ে করার থেকে তো পরিবার থেকে আলাদা হওয়াও ঠিক আছে। এবার আমি সবার সামনে সব সত্য বলব। তাতে যে যাই বলুক।”
“পাগলামো করো না আরহা।”
“পাগলামো আমি না আপনি করছেন। আমি আগেই সবাইকে সব সত্য বলে দিতে চেয়েছিলাম শুধু আপনার জন্য পারিনি৷ কিন্তু এবার আর নয়, এবার আমি সবাইকে সব সত্য বলব। কি হবে এতে? সর্বোচ্চ সবাই আমাকে পর করে দেবে। তারপর আপনি আছেন তো আমাকে আপন করে নেয়ার জন্য, তাই না? আমাকে আগলাতে পারবেন না আপনি?”
“আমি বুঝতে পারছি আরহা..আচ্ছা, তুমি কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিও না। একটু সময় দাও, আমি সব ঠিক করার ব্যবস্থা করছি।”
“আপনি এখানে জেলে বসে কিভাবে সব ঠিক করবেন? আমি এখান থেকে ফিরেই সবাইকে সব সত্য বলব। হাসান সবাইকে সভ জানানোর আগে আমি বলে দেয়াই ঠিক হবে। কারণ হাসানের মাধ্যমে সবাই যদি সত্যটা জানে তাহলে আমাকে আরো বেশি ভুল বুঝবে।”
“শোনো, তোমার এখনই কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আমি আব্বুর সাথে কথা বলে দেখছি কিভাবে সবকিছু ম্যানেজ করা যায়।৷ তুমি আমায় কথা দাও, এখনই কাউকে কিছু বলবে না ”
আরহা কিছু বলতে যাবে এমন সময় একজন পুলিশ এসে বলে,”আপনার কথা বলার সময় শেষ। চলে আসুন।”
আরহা মাশরাফির দিকে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে আসে।
আরহা বাসায় ফিরে সরাসরি নিজের রুমে এসে টেবিলে বসে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে থাকে। এমন সময় মাথায় কারো স্পর্শ অনুভব করে মাথা তুলে তাকায়। তাকাতেই নিজের মাকে দেখে চোখের জল মোছে। আরুশি নিজের মেয়েকে এভাবে কাঁদতে দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”আরহা, আমি তোমার মা। আমার থেকে তোমার চোখের জল লুকানোর প্রয়োজন নেই।”
আরহা আরুশিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি মাম্মা। আমাকে তোমরা ক্ষমা করবে তো?”
আরুশি আরহাকে আগলে নিয়ে বলেন,”সন্তানেরা তো ভুল করবেই। আমাদের বড়দের তো তাদের ভুল শোধরানোর সুযোগ দিতে হবে। তুমি আমায় সবটা খুলে বলো আরহা। আর কেউ তোমার পাশে না থাকলেও তোমার মাম্মা তোমার পাশে থাকবে৷ কথা দিলাম আমি।”
আরহা যেন এবার একটু ভরসা পায়। সে নিজের মাকে সব সত্য বলতে উদ্যত হয়,”মাম্মা..আসলে..চাচ্চুর মৃত্যুর জন্য মাশরাফি ভাইয়া দায়ী নয়..”
“মানে? তাহলে কে দায়ী?”
“আমি দায়ী। চাচ্চু আমার জন্য মারা গেছে। ”
আরহার কথা শুনে আরুশি বিস্ফোরিত চোখে তাকান। বলে ওঠেন,”এসব কি বলছ তুমি?”
“হ্যাঁ, মাম্মা৷ ঠিক বলছি আমি..কিন্তু বিশ্বাস করো আমি স্বেচ্ছায় কিছু করি নি। আমার হাত লেগে..”
আরহার কান্নার মাত্রা বাড়ে।
“আমাকে বাঁচাতে মাশরাফি ভাইয়া সব দোষ নিজের উপর নিয়েছে। ওনার কোন দোষ নেই।”
আরহা আরুশির হাত শক্ত করে ধরে বলে,”ভয় পেও না, আমি বুঝতে পারছি তুমি ইচ্ছা করে কিছু করো নি। কিন্তু এই সত্যটা এভাবে এতদিন গোপন রেখে তুমি ঠিক করো নি। এখনই চলো, সবার সামনে সব সত্যটা বলবে। আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলবো সবটা।”
আরহা আরুশির সাথে যেতে উদ্যত হয়। এমন সময় হঠাৎ ক্ষিপ্তবেগে আরহার রুমে প্রবেশ করে আমিনা। তাকে এভাবে আসতে দেখে আরহা এবং আরুশি দুজনেই অবাক হয়। আমিনা ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো ছুটে এসে আরহাকে আরুশির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঠাস করে তাকে থাপ্পড় মারে। আরহা আরুশি দুজনেই হতবাক। আরহা বলে ওঠে,”আমিনা আপু…”
আমিনা চেচিয়ে বলে,”চুপ..তোর মতো খুনির মুখে আমি আপু ডাক শুনতে চাই না। তুই আমার আব্বুর খুনি…”
এমন সময় সায়রা সেখানে ছুটে আসে। এসেই বলে,”আমিনা, কি করছিস এসব?”
আমিনা আরহার হাত ধরে টানতে থাকে। আর সবাইকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”নিচে এসো তোমরা। আজ সবার সামনে এই খু*নিটার পর্দাফাঁস হয়ে যাক।”
বলেই সে আরহাকে অমানুষের মতো হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যেতে থাকে। সায়রা ও আরুশি পিছন পিছন যেতে থাকেন। আরুশি বলেন,”আমার কথাটা শোনো..আমিনা..”
কিন্তু আমিনা কারো কথা শোনে না। নিচে জাঈদ, আকাশ এবং আরহাম ছিল। আমিনা আরহাকে এভাবে নিয়ে আসতে দেখে জাঈদ রেগে আমিনার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”হচ্ছেটা কি আমিনা? ছাড়ো আমার সিসের হাত। ওর সাথে এমন করছ কেন?”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৮
আমিনা চেচিয়ে বলে,”একটা খু*নির সাথে এর থেকে কত ভালো ব্যবহার করব?”
“মুখ সামলে কথা বলো। আমার বোন খু**নি মানে? কি বলছ এসব?”
আমিনা নিজের ফোন বের করে একটা ভিডিও প্লে করে সবাইকে দেখাতে থাকে। আর বলে,”এই ভিডিওটা হাসান নামের ঐ লোকটা আমায় পাঠিয়েছে…এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মাশরাফি ভাইয়া না আরহাই আমার বাবার খু**নি। মাশরাফি ভাইয়ার বেলায় তো তুমি সবাই একচুলও ছাড় দাও নি। এবার দেখি, নিজের বোনের বেলায় তুমি কি করো।”
জাঈদ বলে ওঠে,”এটা হতে পারে না। এই ভিডিও নকল। আমার সিস খু-*নি নয়।”