অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭৮

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭৮
ইয়াসমিন খন্দকার

আমিনা কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরল৷ তার সন্তানকেও ফেরানো হয়েছে তার সাথে। আমিনার ছেলে অবশ্য সবসময় জাঈদের কাছেই থাকে। আমিনা বিছানায় শুয়ে ছিল আর জাঈদ ছেলেকে নিজের কোলে নিয়ে ছিল৷ আমিনা আচমকা বলে ওঠে,”বাবুকে একটু আমার কাছে দাও। আমি ওকে একটু নেই।”
জাঈদ বিরক্তির সাথে বলে,”তুমি একটা সিজারিয়ান মা। তাই তোমার শরীর দূর্বল। এই অবস্থায় তোমার কোলে আমাদের বাবুকে দিয়ে আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাইনা। বুঝলে? এমনিতেই তোমার বেখেয়ালির জন্য কত বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে ”

আমিনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আর বেশি তর্ক করে না। কিছু সময় পর আকাশ চলে আসে। সে এসেই বলে,”আরে আমার মামা! কি সুন্দর হয়েছে। ভাইয়া ওকে একটু আমার কোলে দাও।”
জাঈদ বলে,”তুমি হাত ভালো করে ধুঁয়ে এসেছ?”
“হ্যাঁ, আমি হাত স্যানিটাইজিং করেই এসেছি।”
“কতক্ষণ আগে স্যানিটাইজ করেছ?”
“এই ১০ মিনিট আগে।”
“এখন আবার স্যানিটাইজ করো তারপর আমার বাবুকে কোলে নিবা। আমি ওকে নিয়ে কিছু ঝুঁকি নিতে চাই না।”
আকাশ আমিনার দিকে তাকায়। আমিনা ইশারা করে আকাশকে জাঈদের কথা শুনতে বলে। অগত্যা আকাশ জাঈদের সামনে আবারো হাত স্যানিটাইজ করে। এরপর কোলে নেয়। জাঈদ বলে,”সাবধানে..আস্তে করে ধরবে। বাচ্চাদের বেশি জোরে ধরতে নেই। ওদের শরীরের হাড় অনেক নরম হয়।”
“আমি জানি সেটা ভাইয়া।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমিনা তার ছেলেকে স্তনদুগ্ধ পান করাচ্ছিল। একটু খাওয়ার পর বাচ্চাটা আর খেতে চাইছিল না। কিন্তু যেহেতু বাচ্চাটার ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম তাই সায়রা আমিনাকে বলেন,”আরেকটু খাওয়ানোর চেষ্টা কর।”
অগত্যা আমিনা কিছুটা জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। যার ফলে তার ছেলে কাঁদতে শুরু করে দেয়৷ আমিনা তাকে থামানোর চেষ্টা করে এমন সময় জাঈদ এসে বলে,”হচ্ছেটা কি এসব?”
আমিনা বলে,”দেখো না, ও কিছুতেই খেতে চাইছে না।”
জাঈদ এগিয়ে এসে রাগী কন্ঠে বলে,”তুমি কেমন মা যে নিজের সন্তানকে ঠিকমতো খাওয়াতে পারছ না? আর পারবেই বা কি করে। তুমি তো শুধু সবকিছু নষ্ট করতে পারো। ভালো কোন কিছুই তো করতে পারো না।”

“এসব তুমি কি বলছ জাঈদ?”
“একদম ঠিক বলছি। আমার ছেলেকে আমার কোলে দাও। আমি ওকে খাওয়াচ্ছি। প্রয়োজনে আমি ওকে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়াবো। তবুও তোমার জন্য আমার ছেলেকে আমি কাঁদতে দেখতে পারবো না।”
আমিনা জাঈদের কথাটা শুনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তার চোখে জল চলে আসে। আমিনা বলে,”আমি বাবুর মা জাঈদ! আর তুমি বলছ আমার কারণে আমাদের বাচ্চা কাঁদছে।”
“হ্যাঁ, যা সত্য তাই বলছি।”
বলেই সে নিজের ছেলেকে নিজের কোলে নেয়। সায়রা বলেন,”জাঈদ, একটা বাচ্চার জন্য তার মায়ের বুকের দুধ বেশি জরুরি।”

“যেসব বাচ্চার মা মারা যায় তারা কি না খেয়ে থাকে?”
আমিনার দুচোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে জাঈদের এই কথা শুনে। সে গুঙিয়ে উঠে বলে,”কিন্তু আমি এখনো বেঁচে আছি জাঈদ।”
“তোমার থাকা আর না থাকা তো একই রকম। তুমি এখনো এটাই জানো না, কিভাবে একটা বাচ্চার কেয়ার করতে হয়। তাই তোমার ভরসায় আমি নিজের ছেলেকে বড় করতে পারবো না। আমি ঠিক করেছি, প্রয়োজনে একজন আয়া রাখব ওর দেখভালের জন্য।”
সায়রা খান বলেন,”এর কি প্রয়োজন জাঈদ? আমরা সবাই তো আছি।”
“আয়ারা ট্রেইনিং নেয় কিভাবে বাচ্চাদের সামলাতে হবে। তাই ওনাদের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। আর এমনিতেই অনেক কষ্টে আমি নিজের ছেলেকে পেয়েছি৷ তাই ওকে নিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চাই না।”
বলেই সে নিজের ছেলেকে নিয়ে চলে যায়। আমিনা ওভাবেই কাঁদতে থাকে।

আরহা ঘরে চুপচাপ বসেছিল। মাশরাফি রুমে এসে আরহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আরহা সামান্য হেসে বলে,”তুমি?”
“হুম, আমার বউয়ের কি মন খারাপ?”
“কিছুটা।”
“কেন?”
“জানি না। আমার কেন জানি, আমার ভাইপোর সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু..”
“আমি তো বলেছি দেখা করাবো। আমার উপর তোমার ভরসা নেই?”
“ভরসা আছে তবে…”
“আচ্ছা, আমি জাঈদের সাথে কথা বলবো৷ ও সবকিছু ম্যানেজ করবে। এখন তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।”
“কেন?”

“আরে,,আর এক সপ্তাহ পর তোমার মেডিকেল ক্লাস শুরু হবে। তখন তুমি এত ব্যস্ত হয়ে যাবে যে, আমরা একসাথে সময় কাটানোর সুযোগই পাবো না। আমাকেও আবার জাতীয় টিমে চান্স নেয়ার জন্য কয়েকটা ম্যাচ খেলতে হবে। তাই এখনই যত আনন্দ করার করে নেই। পরে আর সময় পাবো না। তাই আমি ঠিক করেছি,আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।”
“কোথায় যাব ঘুরতে?”
“শহর থেকে অনেক দূরে প্রকৃতির কোলে।”
আরহা হেসে ফেলে। এমন সময় রিয়াশা এসে বলে,”ভাইয়া, ভাবি তোদের থেকে দোয়া চাই আমার।”
মাশরাফি বলে,”দোয়া? কিসের জন্য?”
রিয়াশা হেসে বলে,”আমি আগামীকাল IELTS এক্সাম দেব৷ তার জন্য।”
মাশরাফি অবাক হয়ে বলে,”কি? আগে তো বলিস নি।”
আরহাও অবাক হয়ে বলে,”তুই না গায়িকা হতে চেয়েছিলি। তাহলে এখন আবার IELTS!”
“কি অবাক হলি তো? আমি এভাবেই সবাইকে সারপ্রাইজ করে দিতে চেয়েছিলাম। তাই কাউকে কিছু না বলে এভাবে এতদিন গোপনে প্রস্তুতি নিয়েছি।”
“কিন্তু হঠাৎ IELTS কেন?”

রিয়াশা বলে,”গায়িকা হওয়ার পাশাপাশি আমার আরো একটা ইচ্ছা আছে, সেটা হলো আমার স্বপ্নের দেশ কানাডায় যাওয়া। সেই জন্যই মূলত এটা করা। আমি আব্বু, আম্মুকেও জানিয়েছি। তারা রাজি হয়ে গেছে।”
মাশরাফি বলে,”আমিও তোকে সম্মতি দিলাম। আমার বোনের সুখেই আমার সুখ। তোর স্বপ্ন পূরণে যেভাবে সাহায্য করা দরকার আমি করবো। এখন যা ভালো করে পড়াশোনা কর, IELTS স্কোর কিন্তু কমপক্ষে ৮ আনতে হবে। বুঝলি?”
“আচ্ছা, ভাইয়া।”
আরহাও খুশি হয়ে বলে,”যাক, তোর এই স্বপ্নের ব্যাপারে তো আগে বলিস নি তবে আমি দোয়া করি যেন তোর এই স্বপ্ন পূরণ হয়।”
এরপর আরহা ও মাশরাফি বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে।

আমিনা ড্রয়িংরুমে বসে ছিল আকাশ ও সায়রার সাথে। সায়রা আমিনার ছেলেকে কোলে নিয়ে আসে। আচমকা জাঈদ একজন মহিলাকে সাথে নিয়ে ভেতরে এলেন। আমিনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,”উনি কে?”
জাঈদ বলল,”উনি একজন প্রশিক্ষিত আয়া। আমাদের সন্তানের দেখভালের জন্য আমি ওনাকে এনেছি।”
আমিনা কাতর স্বরে বলল,”তুমি সত্যি সত্যি আয়া আনলে। আমার থেকে একজন বাইরের মানুষের প্রতি তোমার ভরসা এত বেশি?”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭৭

“অবশ্যই। তোমাকে আমি কিভাবে ভরসা করবো বলতে পারো? তোমার জন্য আমার মা-বোন আজ বাড়িছাড়া, আমার সন্তানেরও কত বড় ক্ষতি হতে যাচ্ছিল তোমার অসাবধানতার জন্য। এখন তোমার ভরসায় আমি নিজের সন্তানকে রাখব না। উনি প্রশিক্ষিত ওনার উপর ভরসা করা যায়।”
আমিনা তার ছেলেকে কোলে নিয়ে বলে,”আমি আমার বাবুকে পেটে ধরেছি। আমার থেকে এই মহিলা ওকে ভালো সামলাবে এটা কিভাবে সম্ভব?”
“জন্ম দিলেই যে ভালো সামলাবে এমন না। তুমি ভালো কিছু পারো না, পারো সবকিছু ধ্বংস করতে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭৯