অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৮৬

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৮৬
ইয়াসমিন খন্দকার

আমিনা স্কুল থেকে ফিরে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নিলো। তার মনটা আজ আবারো খারাপ হয়ে গেছে। আমিনা তাই মন খারাপ করে বসে রইলো বিছানায়। এমন সময় কাধে কারো স্পর্শ পেতেই তার চেতনা ফিরল। আরুশিকে দেখেই আমিনা বলল,”বড় আম্মু, তুমি?”
আরুশি বললেন,”সবসময় এমন পেঁচার মতো মুখ বেজার করে থাকো কেন আমিনা? এই ছয় বছরে একবারো তোমায় প্রাণখুলে হাসতে দেখিনি। নিজের শরীরেরও তো কোন যত্ন নেও না। এভাবে কি দিন চলে?”
আমিনা বলে,”কি করবো আমি? আমার জীবনেরই মাঝে মাঝে কোন মূল্য খুঁজে পাই না আমি। সেখানে এসব বিলাসিতা।”

“নাহ, এসব বললে আমি শুনবো না। আজ তোমাকে আমি নিজের হাতে সাজিয়ে দেব। এসো তো এইদিকে।”
বলেই আরুশি একপ্রকার জোরপূর্বক আমিনাকে নিয়ে গিয়ে সাজাতে থাকেন। আমিনা বুঝতে পারে না, কেন তাকে এভাবে সাজানো হচ্ছে। আমিনাকে খুব সুন্দর একটি জর্জেটের শাড়িও পড়িয়ে দেন আরুশি। আমিনা বলে ওঠে,”আজ কি আমরা কোথাও ঘুরতে যাব বড় আম্মু?”
“নাহ, কেন আমার কি এমনি নিজের মেয়েকে সাজানোর ইচ্ছা হতে পারে না?”
আমিনা আর কিছু বলে উঠতে পারে না। এমন সময় আরুশির ফোন বেজে উঠতেই তিনি একটু দূরে সরে যান। আকাশ ফোন করেছে। আরুশি ফোনটা রিসিভ কর‍তেই আকাশ বলে ওঠে,”ওদিকের কি অবস্থা বড় আম্মু? আপুকে সাজানো কমপ্লিট?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হুম, ওকে সাজালাম৷ কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন লাগছে। এভাবে আমিনার থেকে কথাটা লুকানো কি ঠিক হচ্ছে?”
আকাশ বলে,”আপুকে সবটা বললে ও কখনোই রাজি হতো না৷ তাই ওর থেকে লুকিয়েই আমাদের সবটা করতে হবে৷ তুমিও তো এটা মানো তাইনা যে আপু জীবনে একটু সুখ ডিজার্ভ করে। বিনা দোষে আমার আপু ৬ বছর অনেক সাফার করেছে আমি তাকে আর সাফার করতে দিতে পারি না। জাঈদ ভাইয়া তো বিদেশে গিয়ে নিজের নতুন জীবন শুরু করেছে তাহলে আপু কেন পারবে না? আপুও তার নতুন জীবন শুরু করবে।”
আরুশি দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। তিনি নিজের চোখের সামনে আমিনাকে ৬ বছর তড়পাতে দেখেছেন৷ তাই আকাশের কথার সাথে তার দ্বিমত নেই। মেয়েটা সত্যিই জীবনে একটু সুখ ডিজার্ভ করে।

সাফোয়ান চৌধুরী বাড়িতে ফিরে রোহনকে গোসল করালো। তারপর নিজের হাতে তাকে খাইয়েও দিলো। এমন সময় সাফোয়ান চৌধুরীর মা সালমা চৌধুরী এসে বললেন,”রোহন দাদুভাই, তুমি একটু নিজের রুমে যাও তো। আমার তোমার চাচ্চুর সাথে জরুরি কথা আছে।”
রোহন বাধ্য ছেলের মতো উঠে চলে যায়। সাফোয়ান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি কথা আম্মু?”
সালমা চৌধুরী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”আমি জানি, আমার কথা শুনে বরাবরের মতো তুই নাখোশ হবি কিন্তু আমার কথাটা তোকে রাখতে হবে। জীবন এতটা সহজ নয় যতটা তুই ভাবিস। আজ আমি আছি জন্য তুই রোহনকে সামলাতে পারছিস। কিন্তু যখন আমি থাকবোনা তখন কি হবে?”

“তুমি যা বলার সোজাসুজি বলো। এতো ঘোরানো প্যাচানো কথা আমি বুঝতে পারছি না।”
“দেখ, তোর ভাইয়া ভাবির মৃত্যুর পর তুই একা হাতে রোহনের সব দায়িত্ব সামলাচ্ছিস। যাতে ওর প্রতি তোমার ভালোবাসা ও দায়িত্বের কোন খামতি না হয় তাই তুই বিয়ে করতেও রাজি নস। কিন্তু বিয়ে একটা ফরজ কাজ। এভাবে বিয়ে না করে জীবন কাটানো যায় না৷ আমি তোর জন্য আজ একটা মেয়ে..”
সাফোয়ান চৌধুরী বিরক্তির স্বরে বলে,”আম্মু..এব্যাপারে তো আমি অনেক আগেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যা বলার। তবুও কেন তুমি বাড়াবাড়ি করছ? আমি বিয়ে করবো না মানে না।”
সালমা চৌধুরী বলেন,”আজ এসব জেদ করে তুই পার পাবি না। তুই যদি আজ মেয়েটাকে দেখতে না যাস তাহলে কিন্তু আমার মরা মুখ দেখবি।”

“আম্মু! এটা কিন্তু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল হয়ে গেল।”
“যদি তুই এটা ভাবিস তো তাই সই। কিন্তু আমার কথা তোকে রাখতে হবে।”
অগত্যা সাফোয়ান চৌধুরীর আর কিছু করার ছিল না। সে নিজের মায়ের কথায় রাজি হয়ে যায়। হার স্বীকার করে বলে,”বেশ, তুমি যখন এত করে বলছ তখন আমি মেয়ে দেখতে যাব। তবে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতে আমি পারবো না।”
“আগে মেয়েটার সাথে দেখা কর। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেবার নিবি।”

জাঈদ আবরাজকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ আবরাজ ইদানীং ভীষণ অসুস্থ থাকে। আবরাজ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে জাঈদকে বলে,”পাপ্পা! আমাকে মাম্মি এনে দাও না তাহলে আমি একেবারে সুস্থ হয়ে যাব।”
জাঈদ কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। সে শুধু আবরাজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”এসব কথা পরে আলোচনা করা যাবে। আপাতত তুমি ঘুমাও।”
আবরাজ জেদ করে বলে,”নাহ, আমার মাম্মি চাই। রিয়ুকেই আমার মাম্মি বানাতে হবে তোমায়। রিয়ু ছোট থেকে আমার খেয়াল রাখে, আমাকে আদর করে। অন্য বাচ্চার মাম্মিরা তাদের জন্য যা করে রিয়ু সেই সবকিছু আমার জানি করে। তাহলে কেন আমি ওকে মাম্মি ডাকতে পারব না?”
জাঈদ বুঝতে পারে না তার ছেলেকে কিভাবে কি বোঝাবে। এমন সময় আবরাজ বলে ওঠে,”যদি তুমি আমাকে মাম্মি এনে না দাও তাহলে আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাব। এত দূরে যে তুমি আমায় আর কখনোই খুঁজে পাবে না।”

জাঈদের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। এখন তো আবরাজ ছাড়া তার আপন বলতে কেউ নেই। জাঈদ আবরাজকে আগলে নিয়ে বলে,”এমন কথা বলে না রাজ! তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচব?”
“তাহলে আমায় কথা দাও, আমার জন্য তুমি মাম্মি নিয়ে আসবে, রিয়ুকেই আমার মাম্মি বানাবে।”
জাঈদ চোখ বন্ধ করে। তার সামনে আমিনার মুখশ্রী ভেসে ওঠে। একসময় তো আমিনাকে খুব ভালোবাসত সে। সেই কিশোর বয়স থেকেই আমিনা ছিল তার সব। তাকে ঘিরে কত স্বপ্ন সাজিয়েছিল। আমিনার সাথে কাটানো সব স্মৃতি তার মনে পড়ে যায়। এমন সময় হঠাৎ করে আমিনার বেখেয়ালিপনার কথা মনে পড়তেই জাঈদের চোয়াল শক্ত হয়। সে বলে,”আমিনা মা হবার যোগ্য নয়। ওর কাছে নিজের ছেলেকে আমি কখনোই ফিরতে দেব না।”
জাঈদ বলে ওঠে,”আমি ভেবে দেখছি।”
রিয়াশার সাথে এবার জাঈদকে কথা বলতে হবে। রিয়াশা আবরাজের প্রতি স্নেহশীল হলেও জাঈদকে সেই নজরে দেখে না। তাই তার মত ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না জাঈদ।

সালমা চৌধুরী, সাফোয়ান চৌধুরী ও রোহন এসে বসেছে আমিনাদের বাসায়। আরুশি তাদের আপ্যায়ন করছেন। আকাশও ততক্ষণে সেখানে উপস্থিত হয়েছে। সায়রা খান এসব কিছু বুঝতে পারছে না। তিনি নিজের পাশে দাঁড়ানো আকাশকে জিজ্ঞেস করেন,”তোরা এসব কি করছিস আমি বুঝতে পারছি না? সকাল থেকে আমি আর আরুশি আপু মিলে এত রান্না করলাম, কেন করলাম কিছুই জানালেন না উনি। এখন আবার এনারা কারা এসেছেন? এনাদের তো আমি চিনিও না।”

আকাশ বলে,”একটু অপেক্ষা করো সব জানতে পারবে।”
সাফোয়ানের ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। সে চুপচাপ গম্ভীর মুখে বসে ছিল৷ সালমা চৌধুরী বলে ওঠেন,”মেয়ে কোথায়? তাকে নিয়ে আসা হোক.”
সায়রা খান তার কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,”এসবের মানে কি?”
আকাশ বলে,”আমরা যা করছি আপুর ভালোর জন্যই করছি।”
“কিন্তু আমিনা এখনো বিবাহিত। তোরা ওকে না জানিয়ে এভাবে..”
“বিয়ে? এটা কেমন বিয়ে? জাঈদ ভাইয়া এউ ৬ বছরে আপুর কোন খোঁজ নিয়েছে? আপু বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটাও তো জানতে চায়নি। তাহলে আপুর কি দায় এভাবে একতরফাভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার?”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৮৫

“এভাবে একটা সম্পর্ক শেষ হয় না আকাশ। আমিনা কখনো মানবে না। আর আমিও চাই না, আমিনা জাঈদের সম্পর্কটা এভাবে শেষ হোক। আমিও আশাবাদী ওদের ছেলে একদিন ফিরবে।”
এমন সময় আমিনাকে নিয়ে আসা হয়। রোহন আমিনাকে দেখেই হাসিমুখে বলে,”আমিনা মিস!”
আমিনা রোহন, সাফোয়ান চৌধুরীকে দেখে হতবাক হয়ে যান। সে ভাবে, এনারা কেন এসেছেন এখানে?

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৮৭