অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৬

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৬
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশাকে নিজের সাথে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলো জাঈদ। আরিশা যদিও আসতে চায়নি কিন্তু জাঈদ একপ্রকার জোর করেই তাকে নিয়ে এসেছে৷ আরিশাকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসতেই তাকে দেখতে পান জামিলা শেখ। তিনি এগিয়ে এসে জাঈদকে প্রশ্ন করেন,”তুই ওকে কোথায় পেলি?”
জাঈদ উত্তর দিলো,”যেখানেই পাই না কেন, ওকে আমি ফিরিয়ে এনেছি এটাই সবথেকে বড় কথা। ভাবছি এখন থেকে একটা লোককে ঠিক করে রাখতে হবে দিন রাত ২৪ ঘন্টা ওর উপর নজর রাখার জন্য।”
জামিলা শেখ ভীষণ বিরক্ত হয়ে যান জাঈদের কথা শুনে। কোথায় তিনি ভেবেছিলেন আপদ বিদায় হবে তা না, আপদ আরো ঘাড়ে চড়ে বসছে। জাঈদ আরিশার সামনে এসে বলে,”শোন, এরপর থেকে আর এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করবে না৷ দেখলে তো, আজ কি বিপদে পড়তে যাচ্ছিলে? যদি আমি সঠিক সময় না পৌঁছাতাম তো কি হতো? আর এমনিতেও তোমার যাওয়ার তো আর কোন যায়গাই নেই। এই বাড়িতেই নাহয় আশ্রিতা হয়ে থাকলে তুমি!”

জাঈদের বলা শেষ কথাটা শুনে আরিশা বিস্ফোরিত চোখে তাকায়। জাঈদ সেটা দেখে বলে,”এভাবে তাকানোর কি আছে? তোমার মতো অনাথ মেয়েকে আশ্রিতা করে রাখছি সেটা কি ভালো লাগছে না? তোমাকে তো আফিফাদের বাড়িতেও আর কেউ আশ্রয় দিবে না। রাস্তায় গেলে কু-*কুর শিয়ালেরা ছিড়ে খাবে। তার থেকে তো এখানে থাকাই তোমার জন্য নিরাপদ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিশার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করল৷ কিন্তু সে কাঁদল না। এদিকে জামিলা শেখ জাঈদের উদ্দ্যেশ্যে বললেন,”ওকে যদি তোমার আশ্রিতা করে রাখার ইচ্ছা হয় তো রাখতেই পারো, এমনিতেই আমাদের বাড়িতে অনেক কাজের লোক আছে। তাদের মতো নাহয় ও থাকল। কিন্তু একটা কথা আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমি বা তোমার বাবা কেউই ওকে এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিব না। আর তুমি তো জানোই, আমি নিজের বোনের মেয়ে সন্ধ্যার সাথে অনেক আগে থেকেই তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। সন্ধ্যা আগামীকাল লন্ডন থেকে ফিরছে। আমি চাই না, সন্ধ্যা তোমার বিয়ের কথা জানুক। এই মেয়েকে আর এই বাড়িতে তোমার বউয়ের মর্যাদা দিয়ে রাখা যাবে না। আজ থেকে তোমাকে ওকে এই বাড়ির আশ্রিতা বলে পরিচয় দিতে হবে!”

জাঈদ আরিশার দিকে তাকায়। আরিশাকে দেখে ভাবলেশহীন লাগছিল। জাঈদের কেন জানি মাথায় জেদ চেপে বসে। এমনিতেই মেয়েটা পালিয়ে গিয়ে তার মেজাজটা গরম করে দিচ্ছিল অথচ এখন এত খুশি শোনার পর এমন ভাব করছে যে সে কিছু পরোয়াই করে না। জাঈদ ভীতি রেগে যাচ্ছিল আরিশাকে এমন শান্ত দেখে। তাই সে মনে মনে বলে,”নাহ, আমি তোমায় কোন দয়া দেখাবো না। এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে তুমি অনেক বড় ভুল করেছিলে৷ এবার তার শাস্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।”
এমন ভাবনা থেকেই জাঈদ বলে ওঠে,”বেশ, আমি মেনে নিলাম তোমার কথা। আজ থেকে আরিশা এই বাড়ির আশ্রিতা হয়েই থাকবে। আমার স্ত্রী হয়ে নয়।”

আরিশা জাঈদের কথাটা শুনল। তার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল। কিন্তু বাইরে থেকে যেন সে ঠিক ততোটাই শক্ত ছিল। কোনরকম কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সে যেমন নিশ্চুপ ছিল তেমনই থাকে। এদিকে জামিলা শেখ বলেন,”তাহলে ওকে তোমার ঘর থেকে বের করার ব্যবস্থা করো। আমি চাই না, সন্ধ্যা এসে এমন কোন দৃশ্য দেখুক যা ওর খারাপ লাগে। ওকে তুমি সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দাও। এমনিতেই এই বিয়ের ব্যাপারে বাইরের কেউ কিছু জানে না। তাই ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে তেমন কোন সমস্যা হবে না।”
জাঈদ আরিশার দিকে আবারো তাকালো। আরিশা এখনো ঠিক একইভাবে দাঁড়িয়ে। রাগের মাথায় সে বলে দিলো,”বেশ!”
অতঃপর জাঈদ আরিশার দিকে ঝুঁকে বলে,”নিজের অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করতে প্রস্তুত হও। আর দ্বিতীয় বার আমাদেরও বাড়ির বাইরে পা রাখার দুঃসাহসও দেখিও না। নাহলে তোমার আপ্পির জীবনে বিপদের কালো ছায়া নেমে আসবে।”

এতক্ষণে আফিফার বিপদের কথা শুনে আরিশার হুশ ফেরে। সে বলে ওঠে,”নাহ, আপনি আমার আপ্পির কোন ক্ষতি করবেন না। আমার সাথে যা খুশি করুন, আমার কোন অসুবিধা নেই৷ কিন্তু আমার আপ্পির কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ।”
“নিজের আপ্পির ভালো চাইলে আমার কথা মতো চলো।”
“বেশ, আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। আপনার সব কথা মেনে নেবো আমি।”
“গুড গার্ল। এখন যাও নিজের সব জিনিসপত্র নিয়ে সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে শিফট হও। আমার ঘরে আর থাকবে না তুমি।”
আরিশা চোখের জল মুছে এগিয়ে যায়।

আফিফা সবেমাত্র মেডিকেল থেকে বাড়িতে ফিরল। অনেক প্রেশার গেছে আজ তার উপর দিয়ে। এখন একটু আরাম বোধ করছে সে। আফিফা ধীরে ধীরে হাপ ছাড়ছিল। এমন সময় নির্ঝর এসে আরিশাকে বলে,”এসে গেছ তুমি?”
“হুম, এই মাত্র এলাম।”
“ওহ, তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সামনের আসে আমরা হানিমুনে ইউরোপে ঘুরতে যাব। তোমার পাসপোর্ট, ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে সেজন্য৷ এখন থেকেই তৈরি হয়ে নাও।”
আফিফা বলে,”সামনের মানে যাওয়া সম্ভব না। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে।”
নির্ঝর খানিক রেগে বলে,”ক্লাস ক্লাস ক্লাস! তোমায় দেখে কি মনে হয় জানো? এই দুনিয়ায় তুমি একাই মেডিকেল স্টুডেন্ট। সবকিছুতেই এত অজুহাত দাও কেন তুমি?”

“আমি সত্যি বলছি।”
“থাক, তোমায় আর কিছু বলতে হবে না। বেশ তুমি ক্লাসই করো। তোমায় কোথাও যেতে হবে না। আমি একাই যাব ইউরোপে ট্যুর দিতে।”
বলেই নির্ঝর রেগেমেগে রুম থেকে বের হয়। এদিকে আফিফা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিজের বিছানায় বসে পড়ে সে। বিছানার ধারেই তার পড়ার টেবিল। সেই টেবিলেই তার আর আরিশার একত্রে একটা ছবি জ্বলজ্বল করছে। আরিশা সেই ছবিটা হাতে তুলে নিয়ে বলে,”জানি না,আমার বোনটা এখন কেমন আছে। এই অবস্থায় কিনা আমি ঘুরতে যাব? কখনোই না। আমি ঠিক জানি আরিশার সাথে নিশ্চয়ই ঐ কুলাঙ্গারটা অনেক অন্যায় করছে। আমায় আরিশাকে ওর হাত থেকে উদ্ধার কর‍তেই হবে৷ সেদিন আমি আরিশার মুখ দেখেই অনেক কিছু আন্দাজ করেছি। এবার আমায় কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। সরাসরি কিছু করা যাচ্ছে। যা করার করতে হবে লুকিয়ে। নিজের বোনকে ঐ নরক থেকে উদ্ধার না করে আমি কিছুতেই আনন্দ করতে পারব না।”

এদিকে নির্ঝর রুম থেকে বের হতেই আদৃতার মুখোমুখি হয়। নির্ঝরকে দেখেই আদৃতা বলে ওঠে,”কি হলো ব্রো? তোমায় দেখে এমন লাগছে কেন?”
“এমন মানে?”
“কেমন জানি আপসেট লাগছে। আমি খেয়াল করছি, বিয়ের পর থেকে তুমি কেমন যেন হয়ে গেছ! আগে তুমি কতোটা হাসিখুশি ছিলে। এখন আর তেমন নেই।”
“তেমন কিছু না। তুই ভুল ভাবছিস আদৃতা।”
“সে তুমি যাই বলো আমি বুঝতে পারছি ব্রো। এজন্যই তো আমি বলছিলাম তোমায় এই বিয়েটা না করতে। আমি তো আগেই বুঝেছিলাম এই বিয়েটা করে তুমি সুখী হবে না। যাইহোক, জানো আমার ফ্রেন্ড সন্ধ্যা কাল লন্ডন থেকে সিলেটে আসছে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৫

“সন্ধ্যা? মানে তোর ঐ কোকড়ানো চুলের বান্ধবীটা?”
“হ্যাঁ, ওই। মনে আছে, ও তোমাকে পছন্দ করত? অনেক বার আকারে ইঙ্গিতে বোঝানোরও চেষ্টা করেছে। কিন্তু তুমি ওকে সেরকম পাত্তা দাও নি৷ এখন তো তুমি বিয়ে করে নিয়েছ। এখন শুনলাম, ও ওর কোন খালাত ভাইকে বিয়ে করবে। ওর ফ্যামিলি থেকে নাকি বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ওর খালু নাকি সিলেটের বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। আমার তো মনে হয়, ও সুখীই হবে। মাঝখান থেকে তুমি ঝামেলায় পড়লে!”
নির্ঝর রেগে বলে,”ফারদার আর আমার সামনে এমন কথা বলবি না একদম।”
বলেই সে রেগেমেগে চলে যায়। আদৃতা নির্ঝরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”যতোই তুমি আমার উপর রাগ দেখাও, এটা আমি খুব ভালো করেই জানি যে ঐ টিপিক্যাল মেয়েটাকে বিয়ে করে তুমি কখনো খুশি হবে না, কখনোই না।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৭