অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২৪
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দিতে বাইরে আসে। দরজা খুলতেই দেখতে পায় তার সামনে অগ্নিদৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছেন ইভা চৌধুরী ও সাজিদ চৌধুরী। ইভা চৌধুরী ক্ষেপে উঠে বলেন,”এই মেয়েটার জন্য আজ আমাদের এত অপমান সহ্য করতে হলো৷ এই ছেলে ছলে, বলে, কৌশলে আমার ছেলেটাকে নিজের প্রেমের জালে ফাসিয়েছে।”
আরিশা তো এসব কথার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। এরইমধ্যে সাজিদ চৌধুরী ইভা চৌধুরীকে বলেন,”তুমি নিজেকে সামলাও ইভা। এতোটা অস্থির হয়ো না। চলো ভেতরে গিয়ে বসে কথা বলি।”
বলেই তিনি ইভা চৌধুরীকে ধরে নিয়ে ভেতরে যান। এদিকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনে জামিলা শেখ ছুটে আসেন। তিনি এসেই ইভা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেন,”কি হয়েছে আপা? তুমি এমন চিৎকার চেচামেচি করছ কেন?”
ইভা চৌধুরী ক্ষেপে উঠে বলেন,”চিৎকার করব না তো কি করব? এ কেমন মেয়েকে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিস তুই? জানিস, এই মেয়েটা আমার ছেলের দিকে নজর দিয়েছে। এরজন্য আমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে! এখন আমার ছেলে চাইছে একে বিয়ে করতে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জামিলা শেখ এমনিতেই আরিশার উপর ক্ষেপে ছিলেন এসব কথা শুনে যেন তার সমস্ত ক্ষোভ উগড়ে দেন। আরিশার সামনে গিয়ে তার হাত শক্ত করে ধরে বলেন,”এই তাহলে তোর আসল রূপ? আমি তো আগেই জানতাম, তুই সুবিধার মেয়ে নয়। প্রথমে আমার ছেলে…”
কিছু বলতে গিয়েও তিনি থেমে যান। বুঝতে পারেন ইভা চৌধুরী ও সাজিদ চৌধুরীর সামনে এসব বলা ঠিক হবে না। তাই তিনি বলে ওঠেন,”তুই এ বাড়িতে থেকে আর কোন অশান্তি সৃষ্টি করিস সেটা আমি মোটেই হতে দেব না। আমি এই মুহুর্তে তোকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।”
ইভা চৌধুরীও সম্মতি জানিয়ে বলে,”হ্যাঁ, হ্যাঁ তাই কর। আজ আমার ছেলের দিকে নজর দিয়েছে কাল তোর ছেলের দিকে নজর দেবে। এমন দুশ্চরিত্রা মেয়েকে বাড়িতে রাখার দরকার নেই। এদের উদ্দ্যেশ্যই তো এটা। বড়লোক বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে সেবাড়ির ছেলের মাথা খেয়ে রাজরাণী হওয়া।”
জামিলা শেখ আরিশার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে দিতে যান। আরিশা শুধু নীরবে কাঁদছিল। সে ইভা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্য বলে,”বিশ্বাস করুন, আমি এমন কিছুই করিনি। আমি মোটেই আপনার ছেলেকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করিনি। আমি তো ওনার থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছিলাম কিন্তু..”
জামিলা শেখ আরিশার কোন কথা না শুনে তাকে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে ফেলে দিতে চান। এমন সময় কেউ একজন এসে আরিশাকে আগলে নেয়। আরিশা হতবাক হয়ে আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”আপ্পি! তুমি?!”
আফিফা ও আরিশা এতদিন পর একে অপরকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। মূলত আফিফা আজ এখানে আরিশার খোঁজ নেয়ার জন্যই এসেছিল৷ কিন্তু এখানে এসে যে এমন দৃশ্যের মুখোশের হবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারে নি। আরিশাকে আগলে নিয়ে আফিফা বলে ওঠে,”তুই একদম চিন্তা করিস না, বোনু। তোর আপ্পি চলে এসেছে। এবার আর কেউ তোর গায়ে একটা হাতও দিতে পারবে না।”
কথাটা বলেই আফিফা রক্তিম চোখে জামিলা শেখের দিকে তাকায়। অতঃপর হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,”আপনার সাহস কি করে হলো আমার বোনুর সাথে এমন ব্যবহার করার? কি ভেবেছেন কি আপনি? ওর কেউ নেই জন্য ওর সাথে যা খুশি তাই ব্যবহার করবেন? তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আমি আরিশার বড় ফোন আফিফা, আমি যতদিন বেচে আছি ততদিন আমার বোনের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।”
জামিলা শেখ দাঁত কটমট করে বলেন,”নিজের বোনের প্রতি এত দরদ থাকলে তোমার বোনকে নিয়ে বিদায় হও এখান থেকে। তোমার বোনের জন্য আমাদের পরিবারে একের পর এক সমস্যা তৈরি হচ্ছে।”
আফিফা তেজি কন্ঠে বলে,”বোনুকে তো আমি এখান থেকে নিয়ে যাবোই। তবে আপনারা ভাববেন না, সবকিছু এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। আমার বোনুর সাথে আপনি, আপনার ছেলে যা যা অবিচার করেছে সবকিছুর জবাব আপনাদের দিতে হবে। আপনার ছেলে জাঈদ শেখ কোথায়? ঐ কাপুরুষকে আসতে বলুন। ও তো আমার বোনকে এখানে নিয়ে এসেছিল৷ এবার ঐ সবকিছুর জবাব দিয়ে যাক।”
জামিলা শেখ বুঝতে পারেন আরিশা আর আফিফা এখানে বেশিক্ষণ থাকলে তার বোনের সামনে আরিশা ও জাঈদের বিয়ের ব্যাপারটা চলে আসবে। তাই তিনি তাদের দ্রুত বিদায় করার জন্য বলেন,”জলদি বেরোও এখান থেকে। নাহলে আমি সিকিউরিটি গার্ড দেখে তোমাদের বের করে দেব।”
এমন সময় হঠাৎ করে আদৃতা সন্ধ্যাকে সাথে নিয়ে সেখানে চলে আসে। এসেই তারা আরিশা ও আফিফার মুখোমুখি হয়। আফিফা ও আদৃতা একে অপরকে দেখে চরম অবাক হয়। আদৃতা বলে ওঠে,”তুমি এখানে?!”
সন্ধ্যা আদৃতাকে জিজ্ঞেস করে,”ইনি কে? তুই কি এনাকে চিনিস?”
“হ্যাঁ, চিনব না কেন? ইনি তো আমার মহান ভাবি, নির্ঝর ব্রোর ওয়াইফ আফিফা।”
এরপরেই আদৃতার নজর যায় আরিশার দিকে। সে হতবাক স্বরে বলে,”তুমি এখানে কি করছ?”
সন্ধ্যা বলে ওঠে,”তুই আরিশাকে চিনিস?”
“হুম, খুব ভালো করেই চিনি।”
এমন সময় ইভা চৌধুরী এগিয়ে এসে আদৃতাকে বলেন,”এই মেয়েটাই সেই অপয়া যে আমার ছেলেকে বশ করেছে৷ এর জন্যই সায়ন তোমাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ”
আদৃতা হতবাক স্বরে বলে ওঠে,”এটা কিভাবে সম্ভব? এই মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
“সেটা তো আমরাও জানি। কিন্তু এর স্বামী একে ত্যাগ করেছে। তারপর আমার বোন জামিলা দয়া করে ওকে এই বাড়িতে আশ্রয় দিলে ও এখন এই বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে পেয়ে ওকে বশ করে নিয়েছে।”
আফিফা ইভা চৌধুরীর কথা শুনে বলে ওঠে,”আপনার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে। আরিশাকে জামিলা শেখ এখানে দয়া করে আশ্রয় দেয় নি। বরং…..ওনার ছেলে জাঈদ শেখ আমার বোনটাকে বিয়ার করে এখানে নিয়ে এসেছে।”
আফিফার এই কথাটা যেন একটা ছোটখাটো বিস্ফোরণের মতো প্রভাব বলে। সন্ধ্যা বলে ওঠে,”এসবের মানে কি? আরিশার স্বামী জাঈদ ভাই!”
জামিলা শেখ ঘামতে শুরু করেন। সন্ধ্যা আরিশাকে জিজ্ঞাস করে,”তোমার বড় বোন এসব কি বলছে আরিশা? জাঈদ ভাই তোমার স্বামী? তুমি তো এই ব্যাপারে আমাকে কিছু বলো নি।”
জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”মিথ্যা, মিথ্যা এসব কিছু মিথ্যা। এরা দুই বোন মিথ্যা বলছে। তুমি এদের বিশ্বাস করো না সন্ধ্যা।”
এমন সময় জাঈদ শেখ বাইরে থেকে সবেমাত্র ফেরে। দূরে দাঁড়িয়ে সে এতক্ষণ ধরে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। জাঈদ এগিয়ে আসতেই জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”এই তো জাঈদ এসে গেছে। জাঈদ তুই সব সত্য সবাইকে খুলে বল। দেখ, এই আরিশা আর এর বোন মিলে কি জঘন্য মিথ্যাচার করছে। তুই বলে দে সবাইকে যে এই মেয়েকে তুই বিয়ে করিস নি।”
জাঈদ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলে,”ওরা কেউ মিথ্যা বলছে না আম্মু, মিথ্যা বলছ তুমি। সত্যি এটাই যে,আমি আরিশাকে বিয়ে করেছি। ও আমার স্ত্রী।”
জাঈদের কথা শুনে সন্ধ্যা একেবারে ভেঙে পড়ে। ইভা চৌধুরী, সাজিদ চৌধুরীও হতবাক হয়ে যান। সন্ধ্যা এগিয়ে এসে জাঈদের কলার ধরে বলে,”তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে জাঈদ ভাই? কি দোষ করেছিলাম আমি?”
বলেই সে কাঁদতে থাকে। জামিলা শেখ তাকে সামলাতে আসলে সে বলে,”তুমি আমার থেকে দূরে থাকো খালা। আমি ঘৃণা করি তোমাকে।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২৩
অতঃপর সে আরিশাকে বলে,”তোমাকে আমি নিজের বোনের মতো দেখেছিলাম। তুমি অন্তত আমাকে সমস্ত সত্যটা বলতে পারতে।”
আরিশা নিজের চোখের জল মুছে বলে,”এতদিন আমি অনেক ভুল করেছি। তবে আজ আমি সবাইকে সমস্ত সত্যটা খুলে বলবো যে আমার সাথে ঠিক কি কি হয়েছে।”