অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩০

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩০
ইয়াসমিন খন্দকার

নিঝুম দৌড়ে গিয়ে সালমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,”আমার মেয়ে বৃষ্টি..”
সালমা হতবাক চোখে এই অচেনা মহিলার দিকে তাকালো। কে এই মহিলা? এনাকে তো সে চেনেও না। তাহলে ইনি কেন তাকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করছেন? সালমা ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারে না৷ এদিকে নিঝুম সালমাকে বলতে থাকে,”এতগুলো দিন তুমি আমার থেকে দূরে ছিলে..তোমাকে জন্ম দিলেও আমি তোমাকে পালন করার সৌভাগ্য পাইনি। কিন্তু আজ..তোমাকে নিজের পাশে পেয়ে আমি আপন আপন অনুভব করতে পারছি। তুমি আমার মেয়ে..”

সালমা তার বাবা আব্দুল রহমানের দিকে তাকায়। আব্দুল রহমান বলে ওঠেন,”ইনিই তোর আসল আম্মা।”
সালমার পুরো পৃথিবী যেন ওলোট-পালট হয়ে যায়। সালমার যখন এরকম অবস্থা ছিল তখন হঠাৎ করে নিঝুম বলে,”বহু বছর আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল৷ সন্তানের অদল-বদল ঘটেছিল। আর সেখানেই আমার আর তুমি যাকে আম্মু বলে জানো তার সন্তানের বদল ঘটেছিল।”
সালমার পালিত মা খোদেজা খাতুন কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলেন,”সালমা, তুই আমার পুরি না..এইডা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
সালমাও অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে,”আমি তোমারই পুরি আম্মা। এনারা কে আর কিসব বলছেন..আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এমন সময় ব্লু হসপিটালের লোকটা সামনে আসেন। অতঃপর তিনি সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। এসব শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। সালমা বলে ওঠে,”এসব কিভাবে হতে পারে? আমার পুরা জীবনটাই তাইলে একটা মিথ্যা?”
বলেই সে কাঁদতে থাকে। আবরাজ এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল৷ সে এসে সালমার পাশে দাঁড়ায়। সালমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তোমার পুরো জীবনটা মিথ্যা নয়। তোমার বাকি জীবনটা এখনো পড়ে আছে। তুমি এতদিন ভুল পরিচয়ে ভুল যায়গায় ছিলে তবে এবার তোমার আসল পরিবারে ফিরে যাবার সময় এসেছে।”
সালমা বলে,”আসল পরিবার?”

ছবি বেগম এগিয়ে এসে বলেন,”হ্যাঁ, তোমার আসল পরিবার। যেখানে তুমি বড় হয়েছ, সেটা তোমার মিথ্যা পরিচয় ছিল৷ কিন্তু তোমার আসল পরিবার অন্য কোথাও। তুমি আমার নাতনী। বাকি জীবনটা তুমি সেই পরিচয়েই বাঁচবে।”
আব্দুল রহমান এবার ব্যকুল কন্ঠে বলেন,”আর আমার আসল পুরি? হে কোনখানে?”
ছবি তুলতে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বলেন,”ঐ যে আদৃতা..ওকে এতদিন আমরা আমাদের নাতনী ভেবেছিলাম। কিন্তু ঐ আপনাদের আসল মেয়ে।”
কথাটা শুনেই আব্দুল রহমান আর খোদেজা বেগম ছুটে যান আদৃতার কাছে। খোদেজা বেগম আদৃতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার পুরি!”

আদৃতা খোদেজা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”দূর হন আমার কাছ থেকে। একদম স্পর্শ করবেন না আমায়। আপনারা আমার কেউ নন৷ এসব কিছু মানি না। এসব নিশ্চয়ই আমার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কিছুতেই এই গরিব পরিবারের মেয়ে হতে পারি না।”
ছবি বেগম বলেন,”এসব বলে কোন লাভ নেই৷ সত্যটাকে অস্বীকার করা যাবে।”
“কিসের সত্য? কোন সত্যই আমি মানি না।”
নিঝুম বলে ওঠেন,”আদৃতা, তুমি ভীষণ বাড়াবাড়ি করছ। ওনারা তোমার আসল মা-বাবা ওনাদের সাথে তুমি এমন খারাপ ব্যবহার করতে পারো না। তোমাকে অনেক আগে থেকেই আমি বলে আসছি, সকল মানুষকে যোগ্য সম্মান দিতে কিন্তু তুমি নিজের অহংকার আর দম্ভতে এতটাই অন্ধ ছিলে যে..”
আদৃতা গলা উচু করে বলে,”চুপ করো তুমি। বলছি না, এনারা আমার মা-বাবা নয়।”
নির্ঝর বলে ওঠে,”রিয়্যালিটি মেনে নে আদৃতা। আমরা তো বলেছি, তুই সবসময় আমাদের কাছে আপনজন হয়েই থাকবি। তা কেন এমন বিহেভ করছিস তুই?”

ছবি বেগম বলেন,”আমাদের কাছে থাকবে মানে কি? ও ওর আসল মা-বাবার কাছে থাকবে না?”
খোদেজা বেগমও বলেন,”আমিও নিজের আসল পুরিকে নিজের কাছে রাখতে চাই।”
আবরাজ খান বলেন,”আদৃতাকে আমি ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতোই বড় করেছি। হয়তোবা ও আমার আসল মেয়ে নয়। কিন্তু তাই বলে, আমি তো ওকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। মিস্টার আব্দুল রহমান, যা অন্যায় হয়েছিল তার ফল আমাদের দুজনকেই ভোগ করতে হয়েছে। আমি বুঝি, আমার এখন যেমন অনুভূতি হচ্ছে আপনার অনুভূতিও তেমন। আমি আপনার মেয়েকে আপনার থেকে আলাদা করতে পারি না, আবার আদৃতাকেও এখানে থাকতে বলতে পারি না৷ কারণ, ও যেই পরিবেশে বড় হয়েছে তাতে করে ও এই পরিবেশে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারবে না। তাই আপনাদের কে আমি একটা প্রস্তাব দিতে চাই। আপনারা আমাদের সাথে সিলেটে চলুন। আমাদের বাসার পাশে, আপনাদের থাকার একটা ব্যবস্থা করে দেব।”

আব্দুল রহমান বলেন,”এটা কিবাবে অয়? এইভাবে আপনাদের দয়া..”
“দয়া না। মনে করুন, এটা অতীতের সেই ভুলের পরিণাম।”
এদিকে আদৃতা হঠাৎ করে বলে ওঠে,”তোমরা আমার কথা শোনো, এভাবে শুধু একজন মানুষের কথায় তোমরা সব বিশ্বাস করতে পারো না। আগে প্রমাণ তো করো, যে এই সালমা আক্তার বৃষ্টিই তোমাদের মেয়ে।”
নিঝুম বলে ওঠে,”কি বলতে চাও তুমি?”
আদৃতা বলে,”ডিএনএ টেস্ট..এটা করলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
আবরাজ বলে ওঠে,”বেশ। তাই হবে। চলো, আমরা দ্রুত সিলেটে ফিরে যাই। তারপর সব সত্যতা যাচাই করা হবে।”

সিলেটের একটি হাসপাতালের মধ্যে অবস্থান করছে খান পরিবারের সবাই। সকলের সাথে সালমা ও তার পালিত পরিবারও আছে। কিছু সময় পর আবরাজ ও সালমার ডিএনর স্যাম্পল নেয়া হয় পরীক্ষা করার জন্য।
আদৃতা বলে ওঠে,”আমি নিশ্চিত এবার সব সত্য সামনে আসবে। ঐ মেয়েটা কিছুতেই আসল নয়, আমিই তোমাদের আসল মেয়ে সেটা এবার প্রমাণিত হবে।”
সালমা নিশ্চুপ ছিল৷ তবে ছবি বেগম বলেন,”দেখা যাক, আসল সত্য কি।”
একটু পর আদৃতা বাইরে যাওয়ার নাম করে চুপিচুপি পরীক্ষাগারের বিশেষ ল্যাবে ঢুকে পড়ে। আদৃতাকে সেখানে আসতে দেখেই একজন ডাক্তার বলে ওঠেন,”আরে আপনি এখানে কি করছেন?”
আদৃতা বলে ওঠে,”চুপ করুন, আমার কথা মন দিয়ে শুনুন। এখানে যেই স্যাম্পল আপনাদের কাছে পাঠানো হয়েছে তার রিপোর্ট যাই আসুক না কেন..আপনাদের নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে।”

“মানে? এসব কি বলছেন আপনি? আমরা অনেক বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করি। এসব ভুল রিপোর্ট আমরা দিতে পারব না।”
আদৃতা তখনই নিজের কাছে থাকা ২০ লাখ টাকা বের করে। মূলত এখানে আসার আগেই তার নামে থাকা ব্যাংক একাউন্ট থেকে সে এই টাকা বের করেছিল। আদৃতা টাকাটা তাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এখনও কি আপনারা না-ই বলবেন?”
ডাক্তারদের চোখ লোভে চকচক করে ওঠে। তারা হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিয়ে বলে,”কোন ব্যাপার না, আপনাদের কাজটা হয়ে যাবে।”
এমন সময় হঠাৎ করে একটা কন্ঠ ভেসে আসে,”তাই বুঝি। এখন টাকার লোভে আপনারা ভুল রিপোর্ট দিবেন?”
কথাটা শোনামাত্রই সবাই ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। ছবি বেগম এসে দাড়িয়েছেন। তাকে দেখামাত্রই আদৃতা বলে ওঠে,”গ্রানি, তুমি!”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২৯

ছবি বেগমের সাথে সাথে খান বাড়ির বাকি সবাইও সেখানে চলে আসে। ছবি বেগম এগিয়ে এসে বলেন,”আমার আগে থেকেই সন্দেহ ছিল এই মেয়ে এমন কিছুই করবেম”
বলেই তিনি ডাক্তারদের হাত থেকে টাকা কেড়ে নেন। আদৃতা বলে ওঠে,”গ্রানি, আমার কথাটা শোনো।”
কিন্তু ছবি বেগম তার কোন কথা না শুনে তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,”চুপ, একদম চুপ। তুমি কি ভেবেছিলে এভাবে আমাদের ঠকাবে? আমার আসল নাতনী কে সেটা এবার সামনে আসবেই। তারপর তোমায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করছি দাড়াও।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩১