অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৩
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা বর্তমানে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে৷ রাহেলা খন্দকার আরিশার পাশে এসে দুধ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আরিশাকে পড়তে দেখে তিনি বলেন,”এই দুধটুকু খেয়ে নাও। তাহলে পড়াশোনায় আরো ভালো করে মন দিতে পারবে।”
আরিশা নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে দুধটুকু নিয়ে খেয়ে নেয়। রাহেলা খন্দকার জিজ্ঞেস করেন,”তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা? এইচএসসি পরীক্ষার তো আর বেশিদিন বাকি নেই।”
আরিশা বলে,”আমার সিলেবাস তো প্রায় শেষ। এখন আর নতুন কিছু পড়ছি না। গুরুত্বপূর্ণ টপিকস গুলো রিভাইজ করছি।”
“আচ্ছা, প্রাইভেট টিউটররা ভালো করে পড়াচ্ছে তো? নাকি আরো কয়েকটা টিউটারের ব্যবস্থা করব।”
“না, আর দরকার নেই।”
“ওহ আচ্ছা, ঠিকাছে ভালো ভাবে পড়াশোনা করো।”
অতঃপর কিছু একটা মনে করে তিনি বলেন,”আচ্ছা, তোমার যার সাথে বিয়ে হয়েছিল মানে জাহাঙ্গীর শেখের ছেলে ও নাকি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে শুনলাম।”
জাঈদের ব্যাপারে কথাটা শোনামাত্রই আরিশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”হতে পারে। আমি এই ব্যাপারে কিছু জানি না মা।”
“ছেলেটা তো নাকি নির্দোষ ছিল। ও তোমাকে মেরে ফেলার চক্রান্তের মধ্যে ছিলনা। মা হিসেবে তোমায় একটা কথা বলি, তুমি সম্পর্কটা নিয়ে একটু ভাবতে পারো।”
আরিশা বলে,”আমি এসব নিয়ে কিছু ভাবতে চাই না। আপাতত আমি জাস্ট নিজের পড়াশোনায় ফোকাস করব।”
“হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। কিন্তু বিয়ের মতো একটা সম্পর্ককে তো অস্বীকার করা যায়না। তুমি যদি এই সম্পর্কটা রাখতে না চাও বলতে পারো, আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দেব৷ কিন্তু এভাবে সম্পর্ক ঝুলিয়ে রাখার তো কোন মানে নেই।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আরিশা বলে,”মা, তোমায় একটা অনুরোধ করছি। দয়া করে এই বিষয় নিয়ে আমায় আর কিছু বলো না। আমি আগে এক্সামটা ভালো ভাবে দেই একটা ভালো ভার্সিটিতে এডমিশন নেই। তারপর এসব নিয়ে ভাবব।”
“বেশ, তাহলে আমি আর এই বিষয় নিয়ে কিছু বলব না আপাতত। তবে তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে একটু ভেবেচিন্তে নিও। কারণ এই সিদ্ধান্তের উপর তোমার ভবিষ্যতের অনেক কিছুই নির্ভর করবে।”
বলেই রাহেলা খন্দকার চলে যান। এদিকে আরিশাকে ভীষণ দ্বিধাগ্রস্ত লাগছিল। হঠাৎ করে আরিশার সামনে জাঈদের চেহারা ভেসে ওঠে৷ আরিশা পড়ার টেবিল থেকে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনি আমার জীবনের এমন এক ব্যক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন যাকে না তো আমি ভুলতে পারছি আর না পারছি আপনাকে মনে রাখতে। আপনাকে ঘৃণাও করতে পারছি না আবার ভালোও বাসতে পারছি না। সত্যিই আমাদের সম্পর্কটা বড্ড এলোমেলো হয়ে ঝুলে আছে। এবার এর একটা দফারফা করা দরকার। জানিনা,আপনি কোথায় আছেন। তবে আমার কেন জানিনা বারবার মনে হচ্ছে,খুব শীঘ্রই আপনার সাথে আমার আবার দেখা হবে৷ তারপর হয়তো আমাকে আমার জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা নিতে হবে।”
আদৃতা ভীষণ দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। যার ফলে বৃষ্টি ভীষণ ভয় পাচ্ছিল। তাই সে আদৃতাকে বলল,”আপু, গাড়িটা একটু আস্তে চালান না৷ আমার ভীষণ ভয় লাগছে।”
আদৃতা আচমকা মাঝরাস্তায় গাড়িটা থামিয়ে দিলো। জোরে ব্রেক কশায় বৃষ্টি নিজেকে সামলাতে হিমশিম খেল। আদৃতা বৃষ্টিকে বললো,”গাড়ি থেকে নামো।”
বৃষ্টি অবাক স্বরে বললো,”এটা কোন যায়গা আপু? এটা তো আমাদের গ্রাম না। আপনি এ কোথায় নিয়ে এলেন আমায়?”
“চুপচাপ গাড়ি থেকে নামো বলছি।”
হুংকার দিয়ে বলে ওঠ আদৃতা। বৃষ্টি ভয়ে ভয়ে গাড়ি থেকে নামে। বৃষ্টি গাড়ি থেকে নামতেই আদৃতা তার হাত থেকে তার মোবাইলটা কেড়ে নেয়। বৃষ্টি ভীত স্বরে বলে,”আমার ফোন..”
আদৃতা বৃষ্টি গাল চেপে ধরে বলে,”চুপ..একদম চুপ..এসব কিচ্ছু তোর নয়। তুই এখানে এসে যা কিছু দখল করেছিস সবকিছু আমার। আমার মম, আমার ড্যাড, আমার ব্রো, আমার ফ্যামিলি এমনকি আমার আইডেন্টিটি, সব কেড়ে নিয়েছিস তুই।”
বৃষ্টি বলে,”আপনি ভুল ভাবছেন আপু। আমি আপনার থেকে কিচ্ছু কেড়ে নেই নি। বরং যা আমার আমি শুধু তাই..”
আদৃতা জোরে একটা ধমক দিয়ে বলে,”খুব আমার আমার করতে শিখে গেছিস তাইনা? আজ তোর বল বুলি আমি বন্ধ করবো। এই আদৃতাকে তুই চিনিস না, আমার পথে বাধা হওয়ার চেষ্টা করলে তার পরিণাম কি হয় এবার তুই সেটা টের পাবি।”
বলেই আদৃতা হঠাৎ করে গাড়িতে উঠে বসে। বৃষ্টি বলে ওঠে,”আপু..আপনি এভাবে গাড়িতে উঠে বসলেন যে।”
আদৃতা কোন কথা না বলেই গাড়িটা চালু করে। এদিকে বৃষ্টি একাই থেকে যায়। কিছুটা দূর সামনে এগিয়ে এসে আদৃতা কাউকে একটা ফোন করে বলে,”মালটাকে খালাস করে দাও। তোমাদের একাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে।”
এদিকে বৃষ্টি একা একা কাঁদছিল ভীষণ। এই অচেনা অজানা যায়গায় সে কি করবে বুঝছিল না। আশেপাশে কোন জন মানুষও নেই। বৃষ্টি কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই সে হাটতে শুরু করে। আচমকা কয়েকজন পুরুষ এসে তার পথ আটকে ধরে। বৃষ্টি ভয়ে কুকিয়ে ওঠে। তাদের মধ্যেই একজন বলে ওঠে,”মালটা তো হেব্বি সুন্দর আছে। মেরে ফেলার আগে একটু এর সাথে এশ করে নেই।”
বৃষ্টি বলে ওঠে,”কে আপনারা? দয়া করে এমন কিছু করবেন না আমার সাথে। আমি তো আপনাদের কোন ক্ষতি করিনি। আমাকে যেতে দিন। আল্লাহর দোহাই লাগে।”
হঠাৎ করে যেই লোকটা একটু আগে কথা বলেছিল সে এগিয়ে এসে বৃষ্টির ওড়না ধরে টান মারে। বৃষ্টি অসহায়ের মতো নিজেকে বাঁচানোর আকুতি করতে থাকে। কিন্তু জানোয়ারগুলোর কানে যেন সেসব আকুতি পৌঁছায় না।
সকাল সকাল খান ভিলায় যেন আমাবস্যা নেমে এসেছে। বৃষ্টিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিঝুম খান, আবরাজ খান সবাই ভীষণ চিন্তিত। নিঝুম খান অনেকটা অসুস্থই হয়ে পড়েছেন মেয়ের চিন্তায়। তিনি বলতে থাকেন,”এতগুলো বছর পর আমার মেয়েটাকে ফিরে পেলাম। এখন কি তাকে আবার হারিয়ে ফেলব? ও হঠাৎ কোথায় চলে গেল আমাদের কাউকে কিছু না বলে। আজ তো আমাদের লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। আর আমার মেয়েটাই নেই।”
আবরাজ খান বলেন,”তুমি চিন্তা করো না নিঝুম। আমি পুলিশকে ইনফর্ম করেছি। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
আনিকা খান নিঝুমকে সামলানোর চেষ্টা করেন। ছবি বেগমও বিলাপ করে চলেছেন। ইতিমধ্যে আদৃতা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসা মাত্রই ছবি বেগম বলে ওঠেন,”নিশ্চয়ই এই আদৃতাই আমার বৃষ্টি দিদিভাইয়ের সাথে কিছু করেছে। ও তো ওকে সহ্যই করতে পারে না।”
নির্ঝর প্রতিবাদ করে বলে,”এসব তুমি কি বলছ গ্রানি? আদৃতা কেন এমন করবে। ও এমন মেয়েই নয়।”
আবরাজও বলেন,”হ্যাঁ, আমি আদৃতাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছি। হতে পারে ও বৃষ্টিকে মেনে নিতে পারছে না কিন্তু বৃষ্টির ক্ষতি করার মতো নিম্ন মানসিকতা ওর নেই।”
আদৃতাও ন্যাকাকান্না করে বলে,”তোমাদের আসল মেয়ে আসার পর থেকে তো তোমরা আমায় পর করে দিয়েছ। তাই সবকিছুতে আমারই দোষ দেখতে পাও। দেখো গিয়ে ঐ মেয়েই আবার না নিজের কোন প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে। এসব গ্রামের মেয়ের কোন ভরসা আছে নাকি। কি পরিবেশে যে বড় হয়েছে।”
এমন সময় হঠাৎ করে সায়ন এসে বলে,”কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা জাজ করার আগে একটু অপেক্ষা তো করো আদৃতা।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪২
আবরাজ বলে ওঠেন,”তুমি!”
সায়নের পেছন থেকে বৃষ্টি বেরিয়ে এসে বলে,”আপনার ষড়যন্ত্র সফল হয়নি আদৃতা আপু। আমি একদম সুস্থ স্বাভাবিক আছি।।আর এবার সবাই আপনার সব ষড়যন্ত্র জানতে পারবে।”