অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৫

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৫
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশার এইচএসসি পরীক্ষা অবশেষে শেষ হয়ে গেল। পরীক্ষা মোটামুটি ভালো ভাবেই দিয়েছে সে। এখন শুধু ফলাফল হাতে পাওয়ার অপেক্ষা। এরমধ্যেই কয়েক মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। সবার জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আফিফার প্রেগ্যান্সির এখন ৪ মাস চলছে। সে এখন বেশ নিয়মমাফিক চলাফেরা করছে৷ আবরাজ খান ও নিঝুমও বৃষ্টিকে নিয়ে লন্ডনে চলে গেছেন। তবে এই কয়েকমাসে জাঈদের সাথে আরিশার দেখা হয়নি। কারণ জাঈদ নিজের লুকোচুরি খেলা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে আরিশার বাবা আলমগীর খন্দকার এখন নির্বাচনে জয় লাভ করে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আরিশা নিজের ঘরে বসেছিল। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলেও তার স্বস্তি নেই। সামনেই তার এডমিশন টেস্ট। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে আরিশা। আরিশা আজকেও নিয়ম করে পড়ছিল এমন সময় হঠাৎ করে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। আরিশা ফোনটা রিসিভ করে বলে,”হ্যালো, কে?”
কিন্তু বিপরীত দিক থেকে কোন উত্তর আসে না৷ আরিশা বিরক্ত হয়ে বলে,”আপনি কে বলুন তো? দীর্ঘ কয়েক মাস থেকে এভাবে আমাকে ফোন করে বিরক্ত করছেন অথচ কোন কথা বলছেন না। কিছু তো বলুন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তবুও কোন উত্তর আসে না৷ আরিশা বলে,”বেশ, আমি ফোনটা রেখে দিচ্ছি।”
বলেই আরিশা কল কেটে দেয়। কলট কেটে দিতেই বিপরীত দিক থেকে জাঈদ বলে ওঠে,”খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে তোমার সাথে।”
আরিশা আবার পড়ায় মন দেয়৷ আর ভাবতে থাকে এই লোকটা কে হতে পারে। এমন সময় হঠাৎ করে রাহেলা খন্দকার এসে বলেন,”কি করছ আরিশা?”
“এই তো মা, একটু পড়ছিলাম৷ কেন?”
“তোমার বাবা একটু তোমায় ডাকছে। একটু এসো তো।”
আরিশা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আচ্ছা, আসছি।”

বলেই আরিশা তার মায়ের সাথে যেতে থাকে। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হতেই আরিশা দেখতে পায় আলমগীর খন্দকার বেশ চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছিলেন৷ আরিশাকে দেখামাত্রই তিনি বলে ওঠেন,”এই তো আরিশা৷ এসো আমার পাশে এসে বসো৷ তোমার সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।”
আরিশা নিজের বাবার কথামতো তার পাশে গিয়ে বসে। আরিশা বসতেই আলমগীর খন্দকার বলে ওঠেন,”এই কথা গুলো আমার অনেক আগেই বলা উচিত ছিল। কিন্তু এতদিন তুমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলে জন্য বলা হয়নি৷ তবে আজ বলার উপযুক্ত সময় এসে গেছে। আমি জানি, আমার আর তোমার মায়ের অনুপস্থিতিতে তোমার জীবনে কত ঝড় উঠেছে৷ তবে সবথেকে বড় ঝড় বোধহয় জাঈদ শেখ।”
জাঈদের নামটা শোনামাত্রই আরিশার মুখে আধার নেমে আসে। আরিশা বলে ওঠে,”বাবা হঠাৎ এসব কথা..”

“প্রয়োজন আছে বলেই বলছি। ঐ শেখ পরিবারের জন্যই আমাদের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। ঐ জাঈদের বাবা জাহাঙ্গীর শেখ জন্মের পরই তোমাকে আমাদের থেকে আলাদা করেছিল। জাঈদের মা তোমায় মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আর জাঈদ ও তো তোমায় বিয়ে করে তোমার জীবনটাই এলোমেলো করে দিয়েছে। আমি চাই না,তোমার উপর ওদের আর কোন অশুভ ছায়া পড়ুক। শুনেছি ঐ জাঈদ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, জানি না এখন ও কোথায় আছে। তবে আমি ওকে খুঁজে বের করবো। তারপর তোমার সাথে ওর ডিভোর্সের ব্যবস্থা করব।”

ডিভোর্সের কথাটা শুনেই কেন জানি আরিশার কেমন একটা অনুভূতি হয়। তন্মধ্যে আলমগীর খন্দকার আবারো বলে ওঠেন,”আর হ্যাঁ, মূলত যেজন্য তোমায় ডাকা। আমার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম সঙ্গী আমার বন্ধু রুহুল কবীরের ছোট ছেলে ঈশান যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরেছে। এখন বাবার সাথে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে যোগ দেবে বলে ভাবছে। রুহুলের সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক। ও আমাকে নিজের বন্ধু নয় ভাই ভাবে আর আমিও। আমরা একসাথেই রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলাম। আর ওর ছেলে ঈশানও যথেষ্ট ভালো একজন ছেলে। রুহুলই আমায় প্রস্তাবটা দিয়েছে যে তোমার সাথে ওর ছেলের বিয়ে দিতে চায়।”
আরিশা যেন এবার আরো বেশি অবাক হয়৷ রাহেলা খন্দকার বলে ওঠেন,”আমি জানি, এই সিদ্ধান্তটা নেয়া তোমার জন্য কঠিন কিন্তু তোমার বাবা কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। আমিও ঈশান ছেলেটাকে ছোটবেলা থেকে চিনি। যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে৷”

আরিশা বলে,”কিন্তু মা,আমি তো পড়াশোনা করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই।”
“সেই নিয়ে তো কোন অসুবিধা নেই। রুহুল বলেছে তুমি চাইলে বিয়ের পরেও পড়াশোনা করতে পারবে। দেখো আরিশা, তুমি আমার একমাত্র সন্তান। আমার আর তোমার মায়ের অবর্তমানে তোমার জীবনে অনেক ঝড় উঠেছে কিন্তু আমি চাই না আর কোন ঝড় উঠুক। তাই একজন যোগ্য পাত্রের হাতে তোমায় তুলে দিতে চাই। আর ঈশানের থেকে বেশি ভরসা আমি আর কাউকে ভরসা করতে পারি না। তাই এই বিয়েটা দিতে চাইছি।”
রাহেলা খন্দকারও নিজের স্বামীর কথায় সমর্থন করে বলেন,”হ্যাঁ, আর তুমি চাইলে ঈশানের সাথে একবার আলাদা করে কথা বলে দেখতে পারো। ঈশানও তোমার সাথে কোন ক্যাফেতে বসে আলাদা করে কথা বলতে চেয়েছে।”
আরিশা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমায় ভাবার জন্য একটু সময় দাও।”
বলেই সে চলে আসে। আলমগীর খন্দকার আরিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। রাহেলা খন্দকার বলে ওঠেন,”ওকে একটু সময় দাও। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আরিশা নিজের রুমে বসে তার মা বাবার বলা কথাগুলো নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল। এমন সময় হঠাৎ করে তার ফোন বেজে ওঠে। আরিশা ফোন হাতে নিয়েই দেখতে পায় আফিফা ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করেই আরিশা বলে,”আপ্পি! তুমি এখন কেমন আছ? ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করছ তো? আর হ্যাঁ নিজের খেয়াল রাখছ তো? ”
“আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, রাখছি। উফ, তোর কথা শুমে মনে হচ্ছে ডাক্তার আমি না তুই।”
“যতোই তুমি ডাক্তার হও, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি তোমার ছোট থেকেই অনীহা। আমার এখনো মনে আছে, ছোটবেলায় কিভাবে সবসময় পড়াশোনা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে যে খাওয়ার কথাও ভুলে যেতে। আম্মুকেই ঠেলে ঠেলে তোমায় খেতে পাঠাতে হতো।”
“হয়েছে, হয়েছে। এখন বল তো, তোর খবর কি?”

আরিশা বলে,”আপ্পি তুমি একদম ঠিক সময় ফোন করেছ। আমি একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি।”
বলেই সে তার মা-বাবার বলা সমস্ত কথা আফিফাকে খুলে বলে। সব শুনে আফিফা বলে,”আমার মনে হয়, আঙ্কেল আন্টি একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওনারা তোর বাবা-মা। ওনারা তোর খারাপ চাইবেন না। আর এমনিতেও ঐ জাঈদের জন্য তোর জীবন যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে৷ এবার তোর জীবন নতুন করে শুরু করা দরকার৷ আর ওনারা তো নাকি বলেই ছে, বিয়ের পরও পড়ার সুযোগ দেবে৷ তাহলে প্রব্লেম কি?”
আরিশা বলে,”হ্যাঁ, সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু…”
“কিন্তু কি? ঐ জাঈদের কথা ভাবছিস নাকি তুই? ওর কথা একদম ভাববি না। ঐ জাঈদ আর ওর ফ্যামিলি তোর সাথে কত অন্যায় করেছে, তোকে কত কষ্ট দিয়েছে সেটা ভুলিস না৷ তুই যা, আজই গিয়ে ঈশান নামের ছেলেটার সাথে দেখা কর। আমার মনে হয়, ছেলেটা অনেক ভালো হবে।”
“কিন্তু আপ্পি আমার মতো মেয়ে কি ওনার যোগ্য হবে? আমার তো একবার বিয়ে হয়েছিল আর ঈশান তো একদম অবিবাহিত। আর তাছাড়া, আমার জীবনের সবথেকে ভয়াবহ সত্যটা তো তুমি জানো যে, আমি কোনদিনও মা হতে পারব না।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৪

“তুই নাহয় ওকে সব কথা আগেই জানাস। সব জেনে যদি ও বিয়েতে রাজি হয়, তাহলে তো হয়েই গেল।”
আরিশা বলে,”বেশ, তাহলে আমি তাই করবো।”
বলেই আরিশা ফোনটা রেখে দেয়। অতঃপর ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের মা-বাবার সামনে গিয়ে বলে,”তোমার মিস্টার ঈশানকে জানিয়ে দাও,আমি ওনার সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত।”
আলমগীর খন্দকার খুশি হয়ে বলেন,”বেশ৷ আমি এখনই ওকে বলছি।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৬