অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৭

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৭
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশার সাথে আজ ঈশানের এনগেজমেন্ট। সেই উপলক্ষ্যেই আজ খন্দকার বাড়ি পুরো সেজে উঠেছে উৎসবের আমেজে। আরিশাকে আজ বিউটি পার্লার থেকে লোক এসে ভীষণ সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। তার পরণে একটি লম্বা গোলাপি গাউন ও তার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি যা তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আফিফারাও আজ সপরিবারে এসেছে আরিশার এনগেজমেন্টে। আফিফাকে আসতে দেখে আরিশা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি ভালো আছ আপ্পি? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছ তো? এখন কিন্তু তোমার ভেতরে আরো একটি প্রাণ বেড়ে উঠছে। সেটা মনে রেখো।”

“হ্যাঁ, রে। তুই তো এমন ভাবে বলছিস যেন আমি একটা ছোট বাচ্চা। যাইহোক, তোকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর লাগছে। ঈশান তো তোর দিক থেকে চোখই সরাতে পারবে না।”
আফিফার কথা শুনে আরিশা লজ্জায় রাঙা হয়ে বলে,”ধুর! কি যে বলো না তুমি আপ্পি!”
এমন সময় ছবি বেগম বলে ওঠেন,”ও তো ঠিকই বলছে। তোকে সত্যি অনেক ভালো লাগছে আরিশা।”
এমন সময় রাহেলা খন্দকার এসে বলেন,”আপনারা চলুন৷ নিচে গিয়ে সব গেস্টদের সাথে পরিচয় হয়ে নেবেন।”
আনিকা খান বলে ওঠেন,”না, না। আমরা ওখানে গিয়ে কি করব?”
আবির খানও বলেন,”সেটাই। আমরা এখানেই ঠিক আছি।”
“এসব বললে কিন্তু হবে না৷ হতে পারে আমি আরিশাকে জন্ম দিয়েছি কিন্তু ওর জন্মের পর থেকে তো আপনারাই ওকে কোলেপিঠে করে বড় করে তুলেছেন। তাই আপনাদেরও আরিশার উপর অধিকার আছে৷ কিছু ক্ষেত্রে আমার কিংবা ওর বাবার থেকে বেশি আছে।”
রাহেলা খন্দকারের কথা শুনে সবাই মুগ্ধ হন। আরিশার দাদি সিতারা বেগমও এসে বলেন,”হ্যাঁ, বৌমা একদম ঠিক বলেছে। আপনারা নিচে চলুন, সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেবেন।”
আরিশা আফিফাকে বলে,”আপ্পি ওরা সবাই যাক। তুমি একটু আমার সাথে বসো, তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
সবাই চলে যায় নিচে। শুধু আরিশা ও আফিফা একা ছিল সেখানে। আফিফা বলে,”হ্যাঁ, বল। কি যেন বলবি বলছিলি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরিশা বলে,”জানো আপ্পি, আমি আজ জাঈদ শেখকে দেখেছি।”
“কি? ঐ শয়তানটাকে দেখেছিস তুই? কোথায় আর কিভাবে? ও আবার তোর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে নি তো? শোন ও যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে তোর বাবাকে সব বলে দিবি৷ তারপর তোর বাবা ওকে জেলের ঘানি টানাবে।”
“না,আপ্পি সেরকম কিছু না। জাঈদ শেখ তো এখন একটি ক্যাফেতে ওয়েটার হিসেবে কাজ করছে। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না।”
“বেশ হয়েছে। সবটাই কর্মফল। তুই এখন ঐ লাফাঙ্গাটাকে নিয়ে আর কিছু ভাবিস না তো। তুই এখন এই এনগেজমেন্টে মন দে।”
“আচ্ছা।”
সিতারা বেগম এসে আরিশাকে বলে,”দিদিভাই, তুমি নিচে চলো। তোমার হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে এনগেজমেন্ট করতে।”
আফিফা আরিশার হাত ধরে বলে,”চল, আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।”

দুই বোন মিলে একসাথে নিচে নামে। রুহুল কবির, তার স্ত্রী ও ঈশান সবাই একসাথেই দাঁড়িয়ে আছে। আরিশাকে আসতে দেখেই রুহুল কবির এগিয়ে এসে বলেন,”বাহ, মা। তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল৷ যেদিন থেকে তোমার বাবার কাছে শুনেছি তার হারানো মেয়ে ফিরে এসেছে সেদিন থেকেই আসব ভাবছিলাম। কিন্তু এতদিন সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে এবার তো সুযোগ পেয়েছি। খুব শীঘ্রই তোমাকে নিজের ঘরের বউ করে নিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হতে চলেছে আমার।”
আরিশা সামান্য হাসে। রুহুল কবির পিছিয়ে গিয়ে ঈশানকে ইশারা করেন। ঈশান তারপর এগিয়ে এসে আরিশাকে বলে,”আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে আরিশা। এই পিংক ড্রেসটায় আপনাকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে।”
আরিশা লজ্জায় লাল হয়ে যায়৷ আফিফা বলে ওঠে,”মিস্টার ঈশান, আমি কিন্তু আপনার হবু জেঠানি হবো তাই আমার সামনে একটু লজ্জা রাখুন।”

ঈশানও এবার সামান্য লাজুক হাসে। আফিফা বলে,”আমার বোনটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। একটা ভুল জীবন ওর সম্পূর্ণ জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিল। এবার অন্তত ও আপনার মতো একটা ভালো মানুষের সঙ্গ পাক।”
আলমগীর খন্দকার এগিয়ে এসে বলেন,”এখন তাহলে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শুরু করা যাক।”
ঈশান ও আরিশাকে পাশাপাশি এনে সবার মাঝখানে দাঁড় করানো হয়। ঈশান একটা ডায়মন্ড রিং বের করে আরিশাকে পড়িয়ে দেয়ার জন্য এগোতে থাকে। ঈশান আরিশা হাতে ডায়মন্ড রিং পড়াতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ করে সেখানকার আলো নিভে যায়। ঈশান এই ঘটনায় ব্যাপক বিরক্ত হয়ে বলে,”হঠাৎ এভাবে লাইট টা অফ হলো কিভাবে? কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না।”
আলমগীর খন্দকার বলেন,”উফ! কি জ্বালা।”
কিছু সময় পর হঠাৎ করে আবারো আলো জ্বলে ওঠে। আর ঠিক সময়েই একটি বাইকে করে একদম হিরোর মতো এন্ট্রি নেয় জাঈদ শেখ।
ঈশান বলে ওঠেন,”কে আপনি? আর হঠাৎ এভাবে ভেতরে প্রবেশ করলেন কিভাবে? সিকিউরিটি আটকালো না?”
জাঈদ নিজের হেলমেটটা খুলে দেয়। তার মুখ দেখেই আরিশা বলে ওঠে,”আপনি!”

জাঈদ বলে,”আমি বেঁচে থাকতে আমার বউ অন্য কারো সাথে এনগেজমেন্ট করে নেবে এটা কিভাবে হতে পারে। তাই তো আমায় আসতে হলো এই অনাচার থামাতে।”
আফিফা বলে ওঠে,”এই ছেলে। তুমি আবার কেন এসেছ? আমার বোনুকে এত কষ্ট দিয়েও তোমার শান্তি হয়নি? আবার ওর জীবনের সব সুখ কেড়ে নিতে চলে এসেছ।”
জাঈদ শেখ হালকা হেসে বলে,”এসব আপনি কি বলছেন আপু? আমি আপনার বোনের সুখ নষ্ট করতে আসব কেন? আমি তো ওর সাথে সুখের সংসার শুরু করতে এসেছি।”
আলমগীর খন্দকার রেগে বলেন,”তোমার সাহস কি করে হয় এখানে আসার। সিকিউরিটি কোথায় তোমরা। এদের সব’কটাকে চাকরি থেকে তাড়াব।”
“সিকিউরিটি ডেকে লাভ নেই। সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।”

ঈশান এবার রেগে জাঈদের শার্টের কলার ধরে বলে,”এই ছেলে! বের হও এখান থেকে।”
জাঈদের তো এতে মেজাজ ভীষণ গরম হয়ে যায়। সে ঈশানের নাক বরাবর একটা ঘুষি দিয়ে বলে,”কে থাকবে আর কে বিদায় নেবে সেটা তো এখনই পরিস্কার হয়ে যাবে।”
রুহুল কবির এসে বলেন,”তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুললে। তোমায় তো আমি…”
রুহুল কবির নিজের কথা শেষই করতে পারেন না। এমন সময় হঠাৎ করে সামনে লাগানো একটি স্ক্রিনে একটি ভিডিও ভেসে ওঠে। যেখানে ঈশানকে বলতে শোনা যাচ্ছে,”আমি পারবো না ড্যাড। শুধুমাত্র তুমি বলেছিলে জন্য আমি মেয়েটাকে দেখতে এসেছিলাম। একেই তো মেয়েটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল তাছাড়াও দেখতেও তেমন সুন্দর নয়। তার উপর তো এখন আমি শুনছি ও কোনদিন মাও হতে পারবে না। এই মেয়েকে বিয়ে করে কি আমি শোপিস করে সাজিয়ে রাখব নাকি?”

একই সাথে পরবর্তী সব কথোপকথন কথা শোনা যায়। কারণ সেদিন ক্যাফেতে জাঈদ লুকিয়ে ঈশান আর তার বাবার বলা সব কথোপকথন রেকর্ড করে। ফলে তাদের সব উদ্দ্যেশ্যের কথা উপস্থিত সবাই জেনে যায়। রুহুল কবির ও ঈশানের থোতা মুখ তো সম্পূর্ণ ভোতা হয়ে যায়।
আলমগীর খন্দকার রুহুল কবিরের দিকে তাকিয়ে বলেন,”এসবের মানে কি কবির? আমি তো তোমায় বন্ধু ভেবেছিলাম আর তুমি…”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৬

রুহুল কবির আমতাআমতা করে বলে,”এসব মিথ্যা..আমাদের ফাসানো হচ্ছে। সব এই ছেলের চক্রান্ত।”
জাঈদ বলে,”এসব বলে আর লাভ নেই। রিয়ালিটি মাইনা নেন, আপনারা ধরা পড়ে গেছেন চাচা।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৮