অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৮
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল জাঈদের দিকে। জাঈদের দৃষ্টিও তার পানেই ছিল। আরিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। আরিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আফিফা তাকে জড়িয়ে ধরে। আরিশা বলে ওঠে,”কেন বারবার আমার সাথে এমন হয় গো আপ্পি?আমি তো কখনো কারো কোন ক্ষতি করিনি৷ তাহলে কেন ভাগ্য আমাকে এভাবে বারংবার কষ্ট দেয়। এর পেছনের কারণ কি? আমি কি সত্যিই কোন সুখ ডিজার্ভ করি না?”
এমন সময় আরিশার বাবা আলমগীর খন্দকার রাগী কন্ঠে রুহুল কবিরের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তোমাকে আমি বন্ধু ভেবেছিলাম কবির কিন্তু আমার পিঠ পিছে যে তুমি এভাবে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে সেটা আমি ভাবতে পারি নি। আমি এবার পার্টির উপর মহলে কথা বলে দেখব তোমার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়। আপাতত তুমি নিজের ছেলেকে নিয়ে বের হও এখান থেকে।”
রুহুল কবির ভীষণ অপমানিত বোধ করেন। তাই আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে ঈশান ও নিজের স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তিনি স্থানত্যাগ করেন। রুহুল কবির যেতেই আরিশাকে এসে জড়িয়ে ধরেন রাহেলা খন্দকার। অতঃপর বলেন,”একদম কাঁদবে না। তোমার মা তোমার সাথে আছে।”
এরমধ্যে জাঈদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল৷ আলমগীর খন্দকার তার কাছে গিয়ে বলেন'”আজকে তুমি যা করলে তার জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। এখন বলো, তুমি আমার কাছে এর বিনিময়ে কি চাও?”
“আমি যা চাই, সেটা কি আপনি আমাকে দেবেন মিস্টার খন্দকার?”
আলমগীর খন্দকার কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন জাঈদ কি চাইতে পারে। তাই তিনি বলেন,”কিছু সিদ্ধান্ত অনেক জটিল, তবে যদি আমার সাধ্যের মধ্যে থাকে তাহলে আমি চেষ্টা করব।”
জাঈদ হালকা হেসে বলে,”আমার বেশি কিছু চাই না। আমি শুধু আপনার মেয়ের সুখের দায়িত্ব নিতে চাই।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আরিশা অবাক হয়ে যায়৷ আলমগীর খন্দকার বলেন,”আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি এমন কিছু চাইতে পারো। যাইহোক, এবিষয়ে আমি কিছু বলব না। যদিও তোমার প্রতি আমার রাগ ছিল কিছুটা তোমার বাবা-মার কর্মের জন্য কিন্তু আজ তুমি যেভাবে আমার মেয়েকে রক্ষা করলে তাতে আমার কোন রাগ অবশিষ্ট নেই তোমার প্রতি। তবে আমার মেয়ে তোমাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আমার মেয়ের একার৷ আমি সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।”
জাঈদ কথাটা শুনেই ধীরপায়ে আরিশার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পায়ের কাছে বসে পড়ে৷ অতঃপর বলে,”বারবার তুমি আমায় ফিরিয়ে দিয়েছ আরিশা, এবারই আমি শেষবারের মতো ভালোবাসা ভিক্ষা চাইতে এসেছি। এবার যদি তুমি আমায় না করে দাও, তাহলে আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, এই জীবনে আর কখনো এই মুখ তোমাকে আর দেখাবো না। তোমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাব।”
জাঈদের কথাটা শুনে আরিশার কেমন জানি অনুভব হয়। আরিশা একবার আফিফার দিকে তাকায়৷ আফিফা যেন ইশারা করে আরিশাকে বলছে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে। আবেগকে নয়, বিবেককে প্রাধান্য দিতে। তাই আরিশা বলে,”আমায় ভাবার জন্য একটু সময় দিন।”
জাঈদ বলে,”বেশ, এতদিন যখন অপেক্ষা করতে পেরেছি তখন আরো কিছু সময় নাহয় অপেক্ষা করে নেবো। তবে তোমার ইতিবাচক উত্তরের আশায় রইলাম।”
বলেই জাঈদ হালকা হেসে উঠে দাঁড়ায়।
আরিশা একা রুমে বসে ভাবছিল সে কি সিদ্ধান্ত নেবে৷ এমন সময় আফিফা তার রুমে এসে বলে,”বোনু, তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিস?”
আরিশা বলে,”না আপ্পি। আমি এখনো দ্বিধার মধ্যে আছি।”
“দেখ, জাঈদ আজ যা করলো তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আমি নিজেও ওর প্রতি কৃতজ্ঞ তোকে এত বড় বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য। কিন্তু তাই বলে ওর অতীতে করা সব অন্যায় তো মুছে যায়না। ওর আজকের এই ভালো কাজের জন্য তো কিছুতেই ভোলা যায়না যে ও আগে কি কি করেছে। জোর করে তোকে বিয়ে করেছে, তোর উপর দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে, সবার চোখে তোকে খারাপ করেছে আর…”
আফিফা নিজের কথা শেষ করার আগেই আরিশা বলে ওঠে,”সবথেকে বড় কথাটাই তো তুমি বলতে ভুলে গেছ আপ্পি। জাঈদ শেখ আমার সাথে বিয়ের আগে কিভাবে তোমার উত্ত্যক্ত করত, এমনকি কিভাবে তোমার আর নির্ঝর ভাইয়ের বিয়ে ভেঙে দিতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস, তোমার বদলে আমায় তুলে নিয়ে গেছিল জাঈদ শেখ এর চ্যালারা। নাহলে হয়তোবা আজ আমার বদলে তোমার সাথে ওনার বিয়ে হতো।”
“আরিশা! এসব কি বলছিস তুই?!”
আরিশা হালকা হেসে বলে,”এটাই তো সেই মূল কারণ যার কারণে তুমি জাঈদ শেখকে এতোটা ঘৃণা করো। তাইনা?”
আফিফা আর কিছু বলতে পারে না। আরিশা আফিফার হাত নরম করে স্পর্শ করে বলে,”আমি তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য কথাটা বলি নি আপ্পি। তোমার যায়গায় থাকলে হয়তো আমিও একইভাবে চিন্তা করতাম। তাছাড়া জাঈদ যা করেছেন তা অনেক অন্যায় ছিল আমি মানছি। তবে তুমিও তো নিশ্চয়ই এটা মানবে যে, যেই জাঈদ শেখকে তুমি ঘৃণা করেছিলে সেই জাঈদ শেখের সাথে আজকের জাঈদ শেখের কোন মিল নেই। তারা দুজন যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুজন মানুষ। আমিও তো আগের সেই জাঈদ শেখকে ঘৃণা করতাম। কিন্তু আজ যে জাঈদ শেখ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তাকে তো আমি ঘৃণা করতে পারবো না।”
আফিফা বলে,”হয়তো তুই ঠিকই বলছিস কিন্তু..”
“না, আপ্পি৷ এখানে কিন্তুর আর কোন যায়গা নেই। লোকটার চোখে আমি নিজের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি। তাই ওনাকে আজ আমি আর ফিরিয়ে দিতে পারবো না৷ তাছাড়া, তুমিই তো আমায় শিখিয়েছ, ক্ষমাই মহৎ গুণ। তুমিও তো নির্ঝর ভাইকে ক্ষমা করেছিলে তার সত্যিকারের ভালোবাসা আর তড়পানো দেখে। তাহলে আজ যখন জাঈদও ঠিক একইভাবে সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়ে মন থেকে আমার কাছে ক্ষমা চাইছে তখন কেন আমায় আটকাচ্ছ আপ্পি?”
আফিফা যেন নিজের ভুল বুঝে যায়৷ তাই সে বলে,”বেশ, তুই নিজের ভালোর জন্য যা সিদ্ধান্ত নিবি আমি তোর পাশেই থাকব। যদি তুই ভাবিস, জাঈদের সাথে তুই সুখী থাকবি তাহলে তাই হোক। আমি চাই, তুই শুধু একটু সুখী হ।”
বলেই আফিফা আরিশাকে জড়িয়ে ধরে। আরিশা বলে,”আপ্পি। এখন তাহলে আমি গিয়ে জাঈদকে গিয়ে বলি৷ বেচারাটা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।”
“আচ্ছা, যা।”
আরিশা রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামে। জাঈদ বলে,”তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ আরিশা?”
আরিশা একটু গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে বলে,”হ্যাঁ, নিয়েছি। আপনি চলে যান মিস্টার জাঈদ শেখ।”
জাঈদের মন ভেঙে যায়। সে ভেবেছিল আরিশা তাকে ইতিবাচক উত্তর দেবে। কিন্তু আরিশা যে তাকে এভাবে আশাহত করবে তা জাঈদ ভাবেনি। জাঈদ ছলছল চোখে বলে,”বেশ, আমি যাচ্ছি। তুমি ভালো থেকো। নিজের খেয়াল রেখো।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৭
বলেই জাঈদ বেরিয়ে যেতে নেবে এমন সময় আরিশা বলে ওঠে,”হেই মিস্টার জাঈদ শেখ। সারাজীবন তো অনেক ভিলেনগিরি করলেন এখন শেষে বাপ্পারাজের একটিং করলে হবে? যাচ্ছেন যান, ভালো কথা। গিয়ে কাজি ডেকে নিয়ে আসুন। আজ আবার আমরা আরেকবার নাহয় বিয়ে করব। আগেরবার বিয়ে তো জোর করে হয়েছিল, আমার পরিবারও পাশে ছিল না। এবার নাহয় সবার উপস্থিতিতে স্বেচ্ছায় আমি বিয়ে করবো না।”
আরিশার কথা শুনে জাঈদ ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। এক আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। জাঈদ বলে,”আই লাভ ইউ, আরিশা। কথা দিচ্ছি,তোমায় অনেক সুখে রাখব।”