অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৮

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৮
ইয়াসমিন খন্দকার

আরুশি আজ যথাসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হয়েছে। কারণ আজ এখানে বসন্তবরণ উৎসব পালন করা হবে। যেখানে আরুশিকেও পারফরম্যান্স করতে হবে। আরুশি আজ একটা লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়েছে। এই শাড়িতে তাকে অপূর্ব লাগছে। যদিওবা শাড়ি সামলাতে গিয়ে ভীষণ হিমশিম খাচ্ছে বেচারি মেয়েটা। আরুশি শাড়িটা হাতে নিয়ে কোনরকমে হাটছিল এমন সময় সে রাজীবের মুখোমুখি হয়। রাজীব আরুশিকে দেখে যেন তার মাঝেই হারিয়ে যায়। আরুশি রাজীবকে দেখে হাসিমুখে বলে,”আমায় কেমন লাগছে ভাইয়া? আসলে শাড়ি পড়তে পারি না তো তাই..”

“ভালোই তো লাগছে তোমাকে আরু। এখন থেকে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করো। তোমাকে শাড়িতেই ভালো মানায়।”
কিছুটা দূর থেকে তাদের এভাবে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে আরহাম। তার গা পিত্তি সমস্ত কিছু একদম জ্বলে যায়। আরহাম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,”এই মেয়েটা এমন কেন? যখনই দেখো ছেলেদের সাথে..অসহ্যকর। কিন্তু আমার এসব দেখে এত কষ্ট হচ্ছে কেন? আমার তো সায়রার সাথে এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে আর খুব শীঘ্রই বিয়েও হতে চলেছে। ঐ মেয়ে যা খুশি করুক আমার তাতে কিনা যায় আসে না।”
রাজীব আরুশির হাত শক্ত করে ধরে বলে,”আমার সাথে একটু ঐদিকে চলো, একসাথে একটু এনজয় করি চারপাশের দৃশ্যগুলো। আমাদের আবার পারফরম্যান্সও তো করতে হবে।”
আরুশি বলে,”ভাইয়া আপনি যান আমি দেখি মারিয়া কোথায়৷ ওর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
“আচ্ছা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরুশি মারিয়াকে খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষণ খোঁজার পর দেখতে পায় মারিয়া একটি গাছের নিচে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে৷ এটা দেখে আরুশি মারিয়ার কাছে গিয়ে বলে,”কিরে কখন এসেছিস তুই? কয়দিন থেকে দেখছি তোর কোন খোঁজ খবরই নেই।”
মারিয়া কিছুটা রাগী স্বরে বলে,”আমার খোঁজ খবর নেওয়া না নেওয়া নিয়ে তোর কি যায় আসে? তোর খোঁজ খবর নেয়ার লোকের তো আর অভাব নেই আরু।”
আরুশি মারিয়ার কথা শুনে অবাক স্বরে বলে,”মানে? এভাবে কেন বলছিস?”
“তো আর কিভাবে বলব?”
“তুই কি কোন কারণে আমার উপর রাগ করে আছিস মারিয়া?”
মারিয়া এবার কেঁদে দেয়। তাকে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে দেখে আরুশি মারিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,”কি হয়েছে মারিয়া? তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?”
মারিয়া কান্নারত স্বরে বলে,”তুই রাজীব ভাইয়ের থেকে দূরে থাক প্লিজ। আমি রাজীব ভাইকে ভীষণ ভালোবাসি…তুই তো জানিস বল…”

আরুশি হতবাক স্বরে বলে,”হ্যাঁ, জানি কিন্তু…তুই সবটা আমায় খুলে বল আসল কাহিনি কি।”
মারিয়া কিছু বলবে তার আগেই তাদের ক্লাসেরই আরেকটা মেয়ে এসে আরুশিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”আরুশি, একটু এদিকে এসো..রাজীব ভাই তোমায় ডাকছে।”
আরুশি মারিয়ার দিকে তাকায়। মারিয়া করুণ চোখে আরুশির দিকেই তাকিয়ে ছিল। আরুশি সামনের দিকে এগোয়। একটু দূরে যেতেই দেখতে পায় একটা যায়গা খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা। চারিদিকে বিভিন্ন ফুল, বিশেষ করে কৃষ্ণচূড়া আর গোলাপ। আরুশি দেখতে পায় একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল রাজীব। রাজীব আরুশির দিকে এগিয়ে আসে। আরুশি রাজীবকে দেখে বলে,”ভাইয়া..আপনি..এসবের মানে কি?”
রাজীব আরুশির সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। অতঃপর বলে,”আমি আজ অনেক সাহস করে তোমাকে নিজের মনের কথা বলার জন্য এখানে এসেছি আরু। তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই আমি তোমার ঐ দুচোখের মায়ায় পড়েছি। আমি তো কবি নই..তাই খুব একটা সাজিয়ে গুছিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি না। আমার চোখের দিকে তাকাও তাহলেই তুমি সব বুঝে যাবে।”
আরুশি এবার হতবাক কন্ঠে বলে ওঠে,”মানে?”

একটু দূরেই মারিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে ছিল। আরুশির নজরে আছে সেটা৷ এতক্ষণে সে বুঝতে পারে কি কারণে মারিয়া এতদিন তাকে এড়িয়ে চলছিল। কারণটা তাহলে রাজীব ভাই৷ কিন্তু আরুশি মনে তো রাজীবের জন্য এমন কোন অনুভূতি নেই। সে তো তাকে শুধু একজন সিনিয়র হিসেবেই দেখে। আর সবথেকে বড় কথা, আরুশি কিছুতেই নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে কষ্ট পেতে দেবে না। তাই আরুশি বলে ওঠে,”আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া আপনি কি বলতে চাইছেন। আপনার অনুভূতিকে আমি সম্মান করি। কিন্তু আমার পক্ষে আপনার প্রস্তাব মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমায় ক্ষমা করবেন।”

বলেই আরুশি চলে যেতে নেয়। এমন সময় হঠাৎ করে রাজীব আরুশির হাত ধরে ফেলে। ব্যথিত কন্ঠে বলে,”আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিও না আরুশি। আমি জানি, তুমি অন্য কারো সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আর আমি ছেলে হিসেবে তো খারাপ না। আমাকে অন্তত একটা সুযোগ দাও তোমার ভালোবাসা জয় করার।”
“আপনি কেন বুঝতে পারছেন না, এটা সম্ভব নয়।”
“কেন সম্ভব নয়?”
আরুশি বুঝতে পারে কোন বড় অজুহাত না দিলে রাজীব তার পিছু ছাড়বে না। তাই আরুশি বলে ওঠে,”কারণ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমার মনজুড়ে শুধু সেই লোকটাই আছে।”
রাজীব উদগ্রীব স্বরে বলে,”আমাকে মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই আরু। আমি জানি, তোমার জীবনে এমন কেউ নেই।”

“আপনি ভুল জানেন।”
বলেই আরুশি চলে আসতে নেয়। রাজীব বলে ওঠে,”যদি সত্যি এমন কেউ থাকে তাহলে তাকে আমার সামনে নিয়ে আসো। নাহলে আমি এত সহজে তোমার পিছু ছাড়ছি না।”
আরুশি গটগট পায়ে হেটে সামনে যায়। একটু দূরে যেতেই ক্রন্দনরত আরুশিকে দেখতে পেয়ে তাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলে,”একদম কাঁদবি না তুই। আমার কাছে সবার আগে আমাদের বন্ধুত্ব। আর আমি কখনো রাজীব ভাইকে ওই নজরে দেখিনি৷ তুই তো জানিস সেটা।”
“হ্যাঁ, কিন্তু রাজীব ভাই তো তোকে ভালোবাসে। আমি ওনাকে যতদূর চিনি উনি ভীষণ জেদি একটা মানুষ। উনি নিশ্চয়ই যেকোন মূল্যে তোকে নিজের করে নেবে।”
আরুশি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”এটা কখনোই সম্ভব না।”
“কিন্তু তুই যে ওনাকে বললি তুই কাউকে ভালোবাসিস এখন এটা কিভাবে সত্যি প্রমাণিত করবি? এটা সত্য প্রমাণিত কর‍তে না পারলে যে উনি তোর পিছু ছাড়বে না আর..আমিও আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পাবো না।”
“তাহলে এখন আমি কি করবো?”
“আমি তোর কাছে হাতজোড় করছি আরু, তুই এখন যেকারো সাথে একটু প্রেমের অভিনয় কর যাতে করে রাজীব ভাই তোর থেকে দূরে সরে যায়। যেকোন সময় কিন্তু রাজীব ভাই এসে তোর প্রেমিককে দেখতে চাইবে তাই যা করার তাড়াতাড়ি কর।”

“কি বলছিস এটা তুই? এটা কিভাবে সম্ভব?”
“প্লিজ, না করিস না। আমি যদি রাজীব ভাইকে না পাই তাহলে কিন্তু আমি নিজেকে শেষ করে দেব।”
“মারিয়া!”
আরুশি ভাবতে থাকে এখন কি করবে। এমন সময় আরুশির নজর যায় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আরহামকে। আরহামকে দেখেই আরুশির মাথায় কিছু একটা বুদ্ধি খেলে যায়। এইরকম সময় অচেনা কারো কাছে সাহায্য চাওয়ার থেকে এটাই ভালো হবে। তাই আরুশি আরহামের কাছে গিয়ে বলে,”এই যে শুনুন..আমার আপনার সাহায্য লাগবে।”
আরহাম আরুশির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,”কি? তোমার আমার সাহায্য লাগবে? সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে?”
“ব্যাপারটা সিরিয়াস। প্লিজ, মজা করবেন না।”
“ঠিক আছে, বলো তোমার কি সাহায্য চাই।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭

আমান দেখছে বাড়িতে সবাই কত খুশি আরহাম ও সায়রার বিয়ে নিয়ে। ইতিমধ্যেই শপিং এর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে৷ সায়ন চৌধুরীকে ১৫ দিনের মধ্যেই আবার লন্ডনে ফিরতে হবে তাই এরমধ্যেই বিয়েটা করিয়ে দিতে চায় পরিবারের সবাই। আমানের এসব দেখে কষ্টে বুক ফেটে যায়। তবুও সে সিদ্ধান্ত নেয় নিজের ভাই ও পরিবারের স্বার্থে নিজের একতরফা ভালোবাসা কোরবানি দেওয়ার।

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৯