অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১০

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১০
ইয়াসমিন খন্দকার

আরুশি আরহামের দিকে হতাশ চোখে চেয়েছিল। আরহামের দৃষ্টিও ছিল আরুশির দিকে নিবদ্ধ। হঠাৎ করে আরুশি বলে ওঠে,”আমার মনে হয়, আমরা অনেক বড় একটা ভুল করলাম। মারিয়ার এসব পাগলামীতে সায় দেয়া আমাদের উচিৎ হয়নি।”
আরহাম বলে,”এতোটা সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই। পুরো বিষয়টাকে আমি একটা অভিনয় হিসেবেই নিয়েছি৷ ধরে নাও,আমরা একটা নাটকে অভিনয় করেছি। ব্যস, ঝামেলা শেষ।”
বলেই আরহাম খামখেয়ালি মেজাজে সামনের দিকে এগোতে থাকে। একটু দূর এগিয়ে গিয়ে আবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে আরুশির দিকে তাকায়। আরুশিও আরহামের দিকে তাকিয়ে ছিল। তাই তাদের দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। আরহামের বুকের বাঁ-পাশটা হঠাৎ কেন জানি ধড়াক করে ওঠে। তাহলে কি এটা কোন লুকানো অনুভূতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। শত্রুতার আড়ালে কি আরহামের মনে আরুশির জন্য এতদিন অন্য অনুভূতি ছিল যা সে আজ উপলব্ধি করতে পারছে।

এদিকে মারিয়া আরহাম ও আরুশির সব ঘনিষ্ঠ ছবি রাজীবকে হোয়াটসঅ্যাপ করে পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর ম্যাসেজে লিখে,”দেখলেন তো রাজীব ভাই,ওরা একে অপরের সাথে কতটা সুখী। আপনি আর ওদের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন না দয়া করে
সব ভালোবাসা তো আর পূর্ণতা পায় না। আরুশি আরহাম ভাইকে ভালোবাসে তাই আপনি ওদের মাঝ থেকে সরে যান। ওদের একসাথে সুখী হতে দিন। আর নিজের জন্য অন্য কোন জীবনসঙ্গী খুঁজে নিন। এমনো তো হতে পারে যে,অন্য কেউ আকুলভাবে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
ম্যাসেজটা পাঠিয়েই মারিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”রাজীব ভাই এবার আরুশিকে ভুলে যেতে বাধ্য। এই সুযোগে আমি ওনার মনে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করে নেব।”
রাজীব হোয়াটসঅ্যাপে আসা ম্যাসেজগুলোর দিকে মলিন চোখে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে অশ্রু জমে যাচ্ছিল। একটু আগে অব্দিও তার মনে একটু হলেও আশার প্রদীব জ্বলছিল যে, আরুশি হয়তো তাকে মিথ্যা বলছে। কিন্তু এই ছবিগুলো দেখার পর সবকিছুই তার কাছে পানির মতো পরিস্কার। রাজীব দুঃখের সাথে বলে,”বেশ, আরু। তুমি যদি অন্য কারো সাথে সুখী হতে চাও তাহলে আমি তোমার সুখের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না৷ তোমাকে সুখী দেখাই আমার মূল উদ্দ্যেশ্য..সেটা যদি আমার সাথে না হয়ে অন্য কারো সাথে হয় তাহলে তাই সই…”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

১ সপ্তাহ পর,
নির্ঝর খান ভীষণই উদ্বিগ্ন হয়ে তার বাবার রুমের সামনে পায়চারি করছেন। একটু পাশেই দাঁড়িয়ে তার মা নিঝুম খান অঝোরে কেঁদে চলেছেন। আফিফা খান কোনরকমে নিজের শাশুড়ীকে সামলে বলছে,”আপনি একদম চিন্তা করবেন না। বাবার কিছু হবে না।”
নিঝুম খান বলেন,”চিন্তা না করে কিভাবে থাকব আফিফা? আমি নিজেও তো একজন ডাক্তার। তাই ওনার অবস্থাটা বুঝতে পারছি। তুমি তো ওনার চেকআপ করলে, তুমিও নিশ্চয়ই বুঝেছ ওনার অবস্থা এখন কতটা খারাপ…”
আফিফা খান মলিন চোখে নিজের স্বামীর দিকে তাকান। নির্ঝর খান বলেন,”ড্যাড বলছিল, নিজের মৃত্যুর আগে উনি আরহাম আর সায়রার বিয়ে দেখে যেতে চান। এটাই ওনার শেষ ইচ্ছা। আর এই ইচ্ছেটা আমায় পূরণ করতেই হবে। ড্যাডের যা অবস্থা তাতে যে কোন সময় যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে, তাই আমি ঠিক করেছি আগামী ২ দিনের মধ্যেই আরহাম আর সায়রার বিয়ে দেব।”
আফিফা খান বলেন,”কি বলছ তুমি? এত তাড়াতাড়ি কিভাবে সম্ভব?”
“খুব বেশি বড় আয়োজনের দরকার নেই। আমি কেটারিং আর ডেকোরেশনের লোকদের বলে দিচ্ছি তারাই সব করে দেবে। আর সব তো ঠিকই আছে। এখন শুধু সায়নের সাথে একটু কথা বলে নেব। ”
“কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করা কি ঠিক হবে?”
“ড্যাডের ইচ্ছা আমায় পূরণ করতেই হবে। নাহলে ওনার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না।”

বলেই নির্ঝর খান সায়ন চৌধুরীকে ফোন করেন। অতঃপর তার সাথে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। আফিফা খান দ্বন্দে ভুগছিলেন। নিঝুম খানও বলেন,”আমার মনে হয় নির্ঝর একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। তাড়াহুড়োর মধ্যে নেয়া সিদ্ধান্ত কখনো ঠিক হয়না। আর তাছাড়া, আরহামের আচরণেও একয়দিনে আমি কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। ও কি আদৌ বিয়েটা করতে চায় নাকি চাপের কারণে রাজি হয়েছে?”
আফিফা খান বলেন,”নাহ, আমি বা আপনার ছেলে কেউই তো ওকে কোন চাপ দেইনি। শুধু ওর দাদার অসুস্থতা আর ইচ্ছার কথাই জানানো হয়েছে। ও তাতেই রাজি হয়েছে।”
নিঝুম খান এবার নিজের জীবনের ইতিহাসগুলো মনে করেন। কিভাবে এক জোরপূর্বক বিয়ে তার জীবন তছনছ করে দিয়েছিল। যদিও পরে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছিল কিন্তু এজন্য তার জীবন, তার মা শান্তি বেগমের জীবন এমনকি নির্ঝরের শৈশবটাও বাবাহীন কেটেছে। এসব মনে করেই নিঝুম খান বলেন,”তবুও তুমি একবার আরহামের সাথে কথা বলো। আমি চাই না,আমাদের যা সহ্য করতে হয়েছে আমাদের নাতি-নাতনীদেরও সেই একই সাফারিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয় এটা সারাজীবনের একটা ব্যাপার।”
“আচ্ছা, আমি বলে দেখবো আপনার বড় নাতিকে।”
এদিকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমান সবকথাই শুনছিল। এমনিতেই আরহাম ও সায়রার বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে সে বিষাদে ভুগছিল। এখন বিয়ের তারিখ এতোটা এগিয়ে আসায় তার মনোকষ্ট যেন আরো বাড়ে। আমান আনমনেই বলে ওঠে,”আল্লাহ! আমি সায়রাকে নিজের চোখের সামনে অন্য কারো হতে দেখব পারব না। যাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে কল্পনা করেছি তাকে নিজের ভাবির স্থান দিতে পারব না। তুমি কি পারো না, আল্লাহ কোন একটা মিরাকল করতে? হয় আমায় তুলে নাও আর নাহলে এই দিন আমায় দেখিও না..”

আরহাম মন খারাপ করে ক্যান্টিনে একটা টেবিলে একা বসেছিল৷ একটু আগেই তার বাবা নির্ঝর খানের সাথে কথা হলো। তিনি আরহামকে আগামী পরশু বিয়ের ব্যাপারে জানালেন। যা শুনে আরহাম কেন জানি মেনে নিতে পারছে না। যদিও বা সে নিজের বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারেনি কিন্তু তার কেন জানি এখন এই বিয়েটা করতে একদম ইচ্ছা করছে না। বারবার তার আরুশির কথাই মনে পড়ছে। আরহাম এবার নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে বলে,”এসব কি ভাবছিস তুই আরহাম? ২ দিন বাদে সায়রার সাথে তোর বিয়ে আর এখন তুই অন্য একটা মেয়ের কথা ভাবছিস! সেম অন ইউ।”
এমন সময় আরহামের বন্ধু সাগর ও মুন্না তার সামনের একটি চেয়ার দখল করে বসে। সাগর বলে ওঠে,”কি ব্যাপার বন্ধু? তুই তো খুব সুপার রুস্তম বের হলি। পরশু তোর বিয়ে আর আজ আমরা সেটা জানলাম।”
আরহাম অবাক হয়ে বলে,”তোরা কিভাবে জানলি? আমিই তো একটু আগে জানলাম।”
সাগর বলে,”তোর বাবা তো আমার বাবার বিজনেস পার্টনার..উনি আমার বাবাকে ইনভাইট করেছেন আর আমার বাবা আমায় বলল। তুই কি আমাদের বন্ধু ভাবিস না? শেষ পর্যন্ত তোর বাবার থেকে আমাদের তোর বিয়ের ব্যাপারে জানতে হলো।”

“আরে আমি তো জানতাম যে দেরি আছে কিন্তু ড্যাড যে কেন এত তাড়াহুড়ো করছে…”
মুন্না জিজ্ঞেস করে,”তা পাত্রীটা কে? মানে আমাদের ভাবি কে? নাম কি তার? তাকে কি আমরা চিনি?”
“নাহ, তোরা কেউ তাকে চিনিস না। সে আমার ফুফাত বোন সায়রা।”
একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল রাজীব ও মারিয়া। মারিয়াই মূলত এক সপ্তাহ ধরে রাজীবের সঙ্গ দিয়ে তার মন পাবার চেষ্টা করছিল। সেই প্রয়াসেই আজ এখানে নিয়ে আসা। কিন্তু পরিস্থিতি তো পুরো উল্টে গেল। রাজীব আরহামের উদ্দ্যেশ্যে বলে উঠল,”কি? তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চলেছ। কিন্তু তুমি তো আরুর সাথে রিলেশনে আছ..এভাবে ধোকা দিলে আমার আরুকে..”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৯

বলেই আরহামের শার্টের কলার আকড়ে ধরে। আরহাম মারিয়ার দিকে তাকায়। মারিয়া তাকে অনুনয় করে সত্যটা না বলার৷ কিন্তু আরহাম বলে দেয়,”আমি আরুশির সাথে কোন রিলেশনে নেই। সবটাই অভিনয় ছিল!”
“কি?”
মারিয়া বলে,”হায় আল্লাহ! এবার কি হবে। আমার সব পরিশ্রম এভাবে পানিতে গেল,”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১১