অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১১

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১১
ইয়াসমিন খন্দকার

আরহামের কথা শুনে রাজীব হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার কাছে সবটা ধোয়াশাময় লাগছিল। রাজীব বলে,”এর মানে কি? তোমরা তাহলে কেন আমার সাথে এমন নাটক করলে যে তুমি আর আরু একে অপরকে ভালোবাসো?”
আরহাম বলে,”সেটা আপনি আরুশিকে গিয়েই জিজ্ঞেস করুন।”
বলেই আরহাম ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। রাজীব মারিয়াকে জিজ্ঞেস করে,”আরহাম এসব কি বলে গেলো মারিয়া? আরু তাহলে ওর সাথে কোন সম্পর্কে নেই? তাহলে আমার সাথে মিথ্যা অভিনয় কেন করল?”
মারিয়া কি বলবে বুঝতে পারছিল না। রাজীব বলে,”যাইহোক, যদি আরু আরহামের সাথে সম্পর্কে না থাকে তাহলে এখনো আমার সুযোগ আছে। আমি আমার আরুকে নিজের করে নিতে পারি এখনো।”

কথাটা ভাবতেই রাজীবের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এদিকে মারিয়া রাজীবের কথা শুনে চমকে ওঠে। সে ভাবে,”এত দিনে আমি ভেবেছিলাম রাজীব ভাইকে নিজের করে পাব। কিন্তু…রাজীব ভাই আবারো আরুকে নিজের করে পেতে চাইছে। নাহ, এটা আমি হতে দিতে পারি না। আমি কিছুতেই আরুকে আবার আমার আর রাজীব ভাইয়ের মধ্যে আসতে দেব না। তার জন্য আমায় যত নিচে নামতে হয় নামব। আরুশি যদি এভাবে সিঙ্গেলই থাকে তাহলে রাজীব ভাইকে দমানো যাবে না। এবার আমি এমন কিছু করব যাতে রাজীব ভাই আর কখনো আরুশির দিকে না তাকায়।”
কথাগুলো ভেবেই মারিয়ার চোখ যায় তার ফোনে। ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকে কিছু ছবি দেখে সে বলে,”এই ছবিগুলোই এখন আমার অস্ত্র হবে। আমায় ক্ষমা করে দিস আরু। কিন্তু ভালোবাসা আর যুদ্ধে সবকিছুই জায়েজ। নিজের ভালোবাসাকে আপন করে পেতে হলে যে,আমায় আমাদের বন্ধুত্বের বলিদান করতেই হবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

খান বাড়িতে লেগেছে উৎসবের আমেজ। আগামীকাল আরহাম ও সায়রার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। সেজন্য এখন চলছে প্রস্তুতি মূলক কাজ। গোটা বাড়ি সেজে উঠলেও আমান দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাইয়ের বিয়ের আনন্দ যেন তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। আমান এভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ করে সে কারো একটা সাথে ধাক্কা খায়। সামনে তাকাতেই সায়রাকে দেখে অবাক হয়৷ সায়রা আমানের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওহ, আমান তুমি। একটু দেখেশুনে চলাফেরা করো।”
আমান এবার ভালো ভাবে সায়রাকে পর্যবেক্ষণ করে। সায়রা গায়ে হলুদ উপলক্ষে খুব সুন্দর একটা হলুদ শাড়ি পড়েছে। আমানের বুকের ছটফটানি বাড়ে। সে বলে ওঠে,”তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে সায়রা আপাই…”
সায়রা একটা লাজুক হাসি দেয়। অতঃপর বলে,”ধন্যবাদ…”
বলেই সামনের দিকে এগোয়। আমান সায়রার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে নিজের মনের কথা না জানানোর কষ্ট আমার চিরকাল থেকে যাবে সায়রা…আমি তো ভাবতেই পারছি না যে কাল থেকে তোমায় নিজের ভাবির আসনে বসাতে হবে….”

বলেই সে নিজের চুল খামচে ধরে।
এদিকে সায়রা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল৷ হঠাৎ করে সে আরহামের মুখোমুখি হয়। আরহাম একটি গিটার হাতে বাইরে আসছিল৷ সায়রাকে দেখেই থেমে যায়। সায়রা লাজুক ভাবে মাথা নামিয়ে নেয়। আরহাম সায়রার দিকে তাকায়। কিন্তু সায়রার অতিরিক্ত লাজুকলতা ভাব দেখে তার বিরক্ত লাগে। সায়রার এই লাজুক ভাবের মাঝে সে যেন আরুশির চঞ্চলতা ও প্রতিবাদী চেতনা খুঁজে বেড়ায়। নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হয় সে। অতঃপর সেই রাগ সায়রার উপর দেখিয়ে বলে,”সব সময় এত লজ্জা পাও কেন তুমি? বড় হয়েছ তো লন্ডনে, আমি তো শুনেছি লন্ডনের মেয়েরা বেশ স্বাধীনচেতা ও আধুনিক ঘরানার হয়..কিন্তু তোমার ব্যবহারগুলো আমার কেমন জানি অদ্ভুত লাগে।”
আরহামের মুখে এমন কথা শুনে সায়রা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। আরহাম বলে,”আমার এমন লাজুক মেয়ে একদম পছন্দ নয়। তাই বিয়ের পর একটু লজ্জাটা কমিও।”

সায়রা বলে ওঠে,”লজ্জাই নারীর ভূষণ..আমার মা ছোটবেলায় আমাকে এটা শিখিয়েছে। হ্যাঁ, আমি একটু লাজুক হতে পারি কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি আধুনিক নই। আমার সম্পর্কে কিছু বলার আগে একটু ভালো ভাবে জেনে নেবেন। নেহাত বাবা আমায় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা শিখিয়েছে নাহলে আপনার বলা কথা গুলোর উচিৎ জবাব দিতাম। আর শুনে রাখুন, আপনার যদি আমাকে পছন্দ না হয় তাহলে এই বিয়েটাও আপনাকে করতে হবে না। আমি আপনাকে জোর করিনি। আমি শুধুমাত্র পরিবারের সবার কথাতেই এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। এমন নয় যে,আপনাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।”

সায়রার এই প্রতিবাদী রূপ দেখে আরহাম হতবাক হয়ে যায়। সায়রাকে দেখে তো সব সময় চুপচাপ আর শান্তশিষ্টই মনে হয় কিন্তু সে যে এমন যোগ্য জবাবও দিতে পারে তা আরহামের ভাবনার বাইরে ছিল। সায়রার এই প্রতিবাদী আচরণেও যেন সে আরুশিকেই খুঁজতে থাকে। নিজের ভাবনার উপর রেগে গিয়ে এবং আরহাম সায়রাকে বলে,”আমি দুঃখিত, এভাবে বলা উচিৎ হয়নি। আসলে…”
সায়রা বলে,”সরি বললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। তাই এরপর থেকে কাউকে কিছু বলার আগে একটু ভাবনা চিন্তা করেই বলবেন।”
বলেই সায়রা শান্তভাবে স্থান ত্যাগ করে। আরহাম বলে,”মেয়েটা আরুশির মতো চঞ্চল নয় শান্ত স্বভাবের। কিন্তু প্রতিবাদী মনোভাবে আরুশির থেকে কোন অংশে কম নয়..”
এবার আরহাম রেগে নিজেই নিজেকে বলে,”ধুর..আমি এই আরুশির কথা বারবার কেন ভাবছি? ভাড়মে যায় আরুশি..আমাকে সায়রাকে বিয়ে করতেই হবে। তাই আমার উচিৎ সায়রাকে নিয়েই ভাবা।”

আরুশি খান বাড়িতে এসে চুপচাপ এককোনায় দাঁড়িয়ে আছে। আরিশা ও জাঈদও আজ এসেছে আরহাম ও সায়রার গায়ে হলুদ উপলক্ষে। একটু পরেই গায়ে হলুদের আচার আচরণ শুরু হয়ে যায়।
আরুশি চুপচাপ এককোণায় দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় হঠাৎ মারিয়া কোথা থেকে যেন চলে আসে। সে সায়রার সামনে উপস্থিত হয়ে বলে,”আমি আরহাম ভাইয়ার জুনিয়র….”
সায়রা হাসিমুখে মারিয়ার সাথে কথা বলে। মারিয়া সায়রার গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিয়ে বলে,”হলুদের সাজে আপনাকে সুন্দর লাগছে। তবে একটা কথা জানেন কি, গায়ে হলুদ হয়ে যাওয়া মানেই কিন্তু বিয়ে হওয়া নয়। এটা তো ইসলামিম বিয়ের রীতির মধ্যেই পড়ে না। আসল বিয়ে তো তখন হয় যখন কবুল বলা হয়..তার আগে অব্দি বিয়ের কোন আনুষ্ঠানিকতাই সত্যি নয়।”

মারিয়ার মুখে এমন কথা শুনে সায়রা কিছুটা হচকচিয়ে যায়। সায়রা মারিয়ার মুখের এমন অবাক ভাব দেখে বলে,”মজা করছিলাম। যাইহোক, আপনার জন্য শুভকামনা রইল। বিবাহিত জীবন সুখী হোক আপনার..যদি শেষপর্যন্ত বিয়েটা হয় তো..”
বলেই মারিয়া সামনে থেকে স্থান ত্যাগ করে। সায়রা বলে,”কি বলছিল এসব উনি? ওনার কথার কিছুই তো বুঝলাম না। কি বলতে চাইছেন টা কি উনি? বিয়েটা হবে না মানে…”
এমন সময় হঠাৎ করে মারিয়া এগিয়ে গিয়ে আরুশির কাছে গিয়ে অবশিষ্ট হলুদ তার গায়ে মাখিয়ে দেয়। আরুশি বলে,”এটা তুই কি করলি মারিয়া? আর কখন এলি তুই?”
“এই তো একটু আগেই এলাম। আর সবাই হলুদ মাখছিল তুই এককোণায় মুখ ভাড় করে দাঁড়িয়ে ছিলি তাই আরকি..”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১০

আরুশি রাগী স্বরে বলে,”এটা তুই ঠিক করলি না। এভাবে হলুদ মাখালি যে মনে হলো আজ আমারই বিয়ে।”
“হতেও তো পারে।”
“মানে? এসব কি বলছিস তুই আমি কিছুই বুঝছি না। আজ আমার বিয়ার কিভাবে হবে।”
“জন্ম,মৃত্যু, বিয়ে তিন আল্লাহর হাতে। আল্লাহ চাইলে হয়তো আজই তোর বিয়ে হবে। কেউই তা আটকাতে পারবে না। বিয়ের ফুল ফুটবেই তখন।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১২