অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৬
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহাম ও আরুশি সকালে ঘুম ভাঙতেই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেননা তর্ক করতে করতে কখন যে তারা ঘুমিয়ে পড়ছিল বুঝতেই পারেনি৷ আরুশি যখন বুঝতে পারে আরহাম তার পাছেই বিছানায় শুয়ে ছিল তখন সে সহসা দূরে সরে গিয়ে বলে,”হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে শোয়ার? কাল তো আপনিই আমাকে বলেছিলেন বিছায়ায় শুতে আর আপনি নাকি সোফায় শোবেন তাহলে…আপনি এখানে কেন?”
“কারণ আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না।”
“তাহলে আমায় কেন বললেন বিছানায় শুতে? আপনার সাথে এক বিছানায় থেকেছি এটা ভাবতেও তো আমার কেমন জানি লাগছে।”
“শোনো,আমরা স্বামী-স্ত্রী। তাই আমরা একসাথে থাকতেই পারি।”
“এই বিয়ে আমি মানি না। আর না তো কখনো আপনাকে স্বামী হিসেবে মানব।”
“আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমরা দুজন এক হয়েছি। আর তিনি যদি আমাদের সংসার লিখে রাখেন তাহলে তোমার সাধ্যি নেই তা অস্বীকার করার।”
আরুশি আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় আফিফা খান এসে দরজায় কাড়া নাড়েন। আরুশি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই তিনি বলে ওঠেন,”তোরা এখনো ঘুম থেকে ওঠিস নি? আজ তোদের বৌভাত। তাড়াতাড়ি নিচে আয়।”
“এসব তুমি কি বলছ খালামনি বৌভাত মানে?”
“আরে বিয়ের পর বৌভাত হয়, জানিস না?”
“সেটা তো জানি আমি৷ কিন্তু আমাদের বৌভাতের মানেটা কি? এটা তো কোন বিয়েই নয়। তুমি তো সবটাই জানো, কোন পরিস্থিতিতে বিয়েটা হয়েছে। এখন বৌভাতের আয়োজন করলে নানান লোকে নানান কথা বললে। শুধু শুধু এসব তামাশার কি কোন দরকার আছে?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কোন তামাশা হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখে নিস। আমি আছি তো, আমি সব সামলে নেব।”
বলেই আফিফা খান আরুশির হাতে একটা শাড়ি আর একটা পাঞ্জাবি ধরিয়ে দিয়ে বলেন,”এগুলো পড়ে তৈরি হয়ে নে তোরা৷ আর দ্রুত নিচে নেমে আসবি। আর যেন ডাকা না লাগে।”
“কিন্তু বড় খালামনি, খালু বিষয়টাকে কিভাবে নেবে? উনি তো বিয়েটাই মেনে নেন নি। সেখানে বৌভাত..”
“তোর খালুকে আমি ম্যানেজ করে নেব। এখন এত সাতপাঁচ না ভেবে দ্রুত তৈরি হয়ে৷ নে তো। আমাকে আবার এদিকের সব কাজ শেষ করে হাসপাতালে যেতে হবে,অনেক রোগী দেখতে হবে আজ।”
বলেই তিনি চলে যান। আফিফা খান চলে যেতেই আরহাম এগিয়ে এসে আফিফার হাত থেকে নিজের পাঞ্জাবি আর পাজামাটা নিয়ে বলে,”দেখলে তো, কিভাবে সাড়ম্বরে বৌভাতের আয়োজন হচ্ছে। এভাবেই ধীরে ধীরে সবটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷ তোমার জীবন আমার সাথে বাঁধা পড়ে গেছে। বাস্তবতাটা মেনে নাও।”
“এই ধরনের জঘন্য বাস্তবতা আমি কখনো মানব না। আর না তো আপনার মতো মানুষের সাথে সংসার করব।”
বলেই আরুশি শাড়িটা নিয়ে অন্য একটা রুমের দিকে রওনা দেয়।
আরুশি ও আরহামকে বৌভাত উপলক্ষ্যে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। আরুশি এসেছে থেকে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে। কারণ এখানে আসা কিছু অতিথির চাহনি তার কাছে তীব্র অস্বস্তিকর লেগেছে। কিছু জন তো এই মাত্র বলাবলি করল,”আরে দেখেছ, কি কাণ্ড, বিয়েটা কার সাথে হওয়ার কথা ছিল আর কার সাথে হলো৷ সবই ঐ আরুশি নামের মেয়েটার জন্য।”
“তা নয়তো কি! একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিল। তোদের আগে থেকে রিলেশন ছিল আগে বলতে পারতি। শুধু শুধু মেয়েটাকে বিয়ের আসরে নিয়ে এসে অপমান করলি কেন? ঐ মেয়ের দীর্ঘ শ্বাসের ফল কি তোরা পাবি না? দেখবেন এই সংসার একদম সুখের হবে না।”
আরুশির কানে এসব কথা আসতেই সে আরো বেশি পরিমাণে বিরক্ত হয়। আরহামের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”শুধুমাত্র আপনার জন্য আমাকে আজ এত জঘন্য কথা শুনতে হচ্ছে। এরজন্য আমি আপনাকে কক্ষনো ক্ষমা করব না।”
আরহাম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”সত্যটা যখন সামনে আসবে তখন শুধু শুধু আমাকে দোষারোপ করার তুমি নিজের ভুলটা বুঝবে।”
এমন সময় হঠাৎ করে আফিফা খানের সাথে নির্ঝর খান সেখানে উপস্থিত হন। আফিফা খানই তাকে একপ্রকার জোরপূর্বক এখানে নিয়ে এসেছেন। নির্ঝর খান রেগে বলেন,”আমাকে কেন নিয়ে এসেছ এখানে? তুমি তো জানোই, এই বিয়েটায় আমার কোন মত ছিল না। আর না এই বিয়েটকে আমি মেনে নিয়েছি।”
“দেখো, তুমি মানো বা না মানো বিয়েটা তো হয়েছে। এটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই৷ তাই শুধু শুধু এসব কথা বলার কি দরকার?”
“আমি কিচ্ছু জানি না। এই বিয়েটা আমি মানি না তাই কোন উৎসবেও আমি অংশ নেবো না।”
বলেই তিনি আফিফা খানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যান। তিনি যেতেই নিঝুম খান এসে আফিফা খানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”তুমি চিন্তা করো না। আমি আর তোমার শ্বশুর ওর সাথে কথা বলে দেখবো। এসব জেদের কোন মানেই হয় না।”
এমন সময় আমান এগিয়ে এসে আরহাম ও আরুশির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”ভাইয়া, আরু আপাই তোমরা একটু কাছাকাছি দাঁড়াও তোমাদের একসাথে একটা ছবি তুলে দেই।”
আরহাম আরুশির দিকে তাকায়। আরুশি প্রতিক্রিয়াহীন। তাই আরহাম সাহস করে তার কাছে আসে৷ আমান বলে,”আরু আপাই তুমি হাসছ না কেন? একটু হাসো।”
আফিফা খান বলেন,”আপাই কিরে? ও এখন তোমার ভাবি হয়। ভাবি বলে ডাকো।”
“উফ..মম। যতোই উনি ভাইয়ার বউ হোক আমার জন্য সবসময় আমার আরু আপাই’ই থাকবে।”
আরুশি এবার একটু হাসার চেষ্টা করে। আমান একত্রে তাদের ছবি তোলে। একটু পরেই জাঈদ শেখ চলে আসেন। কিন্তু আরিশা আসে না। জাঈদ শেখকে দেখেই আরুশি তার কাছে ছুটে গিয়ে তার বুকে আছড়ে পড়ে। জাঈদ শেখ নিজের মেয়ে বুকে আগলে নিয়ে বলেন,”কি হয়েছে আমার প্রিন্সেসের? সে ঠিক আছে তো?”
“না, তোমার প্রিন্সেস একদম ঠিক নেই। কারণ তোমার কুইন তোমার প্রিন্সেসের উপর রাগ করেছে। আজকেও আমার সাথে দেখা করতে আসেনি।”
“চিন্তা করো না৷ সব ঠিক হয়ে যাবে। আরিশা আসলে তোমাকে খুব ভরসা করতো তো তাই একটু বেশিই রেগে গেছে।”
“কোন ব্যাপার না। আমি নিজের সত্যতা প্রমাণ করে আবার আম্মুর ভরসা জিতে নেব।”
তাদের কথার মাঝেই হঠাৎ করে রাজীব চলে আসে বৌভাতের অনুষ্ঠানে। রাজীবকে দেখেই আরুশি অবাক স্বরে বলে ওঠে,”রাজীব ভাই এখানে?”
বলেই সে এগিয়ে যায় রাজীবের দিকে। রাজীব আরুশিকে দেখেই বলে,”এসব আমি কি শুনলাম আরু? তোমার সাথে নাকি আরহামের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আমি তো যতদূর জানতাম, আরহাম আর তুমি আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করছিলে আর আরহামের সাথে ওর ফুফাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তাহলে এসবের মানে কি?”
“তোমাকে আর কি বলবো রাজীব ভাই..নিজের বন্ধুকে আমি বিশ্বাস করে বাজেভাবে ঠকে গেছি। যার জন্য এত কিছু করলাম দিনশেষে সেই আমাকে ঠকালো।”
আরুশি এবার রাজীবের সামনে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে৷ সব শুনে রাজীব হতবাক হয়ে যা। যদিও মারিয়ার আচরণে তার মাঝে মাঝে সন্দেহ হতো যে হয়তো সে তাকে পছন্দ করে কিন্তু তাকে পাওয়ার জন্য যে মারিয়া এত নীচে নামবে সেটা সে কখনো ভাবতে পারেনি। রাজীব বলে ওঠে,”মারিয়া অনেক বড় অন্যায় করেছে৷ ওর জন্য সবাই তোমাকে ভুল বুঝছে। কিন্তু তুমি কোন চিন্তা করো না৷ আমি তোমাকে মারিয়ার সব অন্যায় সামনে আনতে সাহায্য করব।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৫
“ধন্যবাদ ভাইয়া।”
দূর থেকে তাদের কথা বলতে দেখে আরহাম। আর হিংসার জ্বলতে থাকে।