অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৭

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৭
ইয়াসমিন খন্দকার

আরুশি রাজীবের সাথে কথা বলে দূরে সরে আসতেই আরহাম তার সামনে এসে তাকে বলে,”ঐ রাজীবের সাথে তুমি কি কথা বলছিলে আরুশি?”
“সেটা জানা আপনার জন্য জরুরি নয়। ভালো হয় যদি আপনি নিজের চরকায় তেল দেন।”
“আরুশি! তুমি সবসময় আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না। ভুলে যেও না আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা কি।”
“কিসের সম্পর্ক? এই সম্পর্কের কোন মানেই নেই আমার কাছে। সেটা আর কতবার আপনাকে বলার পর আপনি বুঝবেন?”

“আমার কথা বাদ দাও, আমি নাহয় তোমার কাছে কিছু নই৷ কিন্তু এই রাজীব তোমার কি? সবসময় তো মুখে ভাই ভাই বলে ফ্যানা তোলো..আর তুমি যে আমাকে দোষারোপ করো সবসময় তো একটু নিজের দিকেও আঙুল তোলো এবার। তোমার ফ্রেন্ড মারিয়া আমাদের যেই ছবিগুলো দেখিয়েছে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তার জন্য কি তুমি দায়ী নও? তুমি এসেছিলে আমার সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আমি তোমার কাছে যাই নি।”
” কিন্তু ঐ ছবিগুলো তোলায় তো আপনার মত ছিল। আমি তো শুরুতেই না করে দিয়েছিলাম কিন্তু শুধু আপনার কথায়..”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এসব বলে তুমি নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে চাচ্ছ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আজ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য আমার থেকে তোমার দায় বেশি। আরে তোমার যদি রাজীবকে এতই ভালো লাগে তাহলে ও যখন প্রপোজ করেছিল তখন ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে কেন? ওর প্রস্তাবটা গ্রহণ করে নিতে। কিন্তু না, তোমার মাথায় তো মহান হওয়ার ভূত চেপেছিল। নিজের বান্ধবীর জন্য ত্যাগ করে তোমায় মহান সাজতে হবে। সেই মহান সাজতে গিয়ে আজ দেখো তুমি কি পরিস্থিতিতে পড়েছ। আর তোমার যেই বান্ধবীর জন্য তুমি এত কিছু করলে সেই বা তোমার এই মহানুভবতার কি প্রতিদান দিল? কিন্তু এসব নিয়ে তুমি ভাববে না আরুশি৷ তুমি শুধু আমাকে দোষারোপ করবে, আমি কোন ভুল না করলেও আমাকে এটা ভাবতে বাধ্য করবে যে সবকিছুর দায় আমার কিন্তু নিজের ভুলগুলো তুমি স্বীকারও করবে না।”

“হ্যাঁ, মানছি৷ এই সব ভুল আমার৷ কিন্তু আপনি আমায় বদ্ধ ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রপোজ করেছিলেন,আপনার ঐ প্রপোজালের কারণে আজ এই জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরজন্য কেউ আমাদের বিশ্বাস করতে চায়নি৷ নাহলে আমি ঠিকই প্রমাণ করে দিতে পার‍তাম যে, মারিয়ার দেখানো ছবিগুলোর আসল কারণ কি।”
“বাহ, এটাই ভালো পারো তুমি। এত কিছুর পরেও আমাকে দোষারোপ করছ। আমারই ভুল ছিল যে, তোমার মতো একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম যার সত্যটাকে স্বীকার করার সৎসাহস নেই, যে শুধু অন্যের ভুল খুঁজে বেড়ায় আর নিজের ভুল আড়াল করে। তো যাও, তুমি এবার যা চাইবে তাই হবে। তুমি প্রমাণ করে দাও, মারিয়ার সব অপকর্ম। তারপর আবার সবার সামনে মহান সাজো। তারপর তুমি চলে যাও নিজের রাস্তায় আর আমি নিজের রাস্তায়। জোর করে তোমাকে ধরে রাখার কোন অভিপ্রায় আমার নেই।”
বলেই আরহাম রেগেমেগে স্থান ত্যাগ করে। আরুশি আরহামের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,”এই লোকটা এমন কেন? ছোটবেলা থেকে কখনো আমার সাথে একটু ঠিক করে কথা বলে নি। অনাথ, আশ্রিতা কত কিছু বলে অপমান করেছে, যখনই সুযোগ পেয়েছে আমায় ছোট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারপর হঠাৎ নিজের বিয়ের দিন আমাকে বললেন,আমায় ভালোবাসে। আজ আবার বলছেন, উনি আমায় ছেড়ে দিতে চান। আসলে ইনি চান টা কি?”
বলেই আরুশি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

বৌভাতের পর দুই দিন পেরিয়ে গেছে। সেদিনের ঘটনার পর থেকে আরহাম আর আরুশির সাথে কোন কথা বলে নি। নিজ থেকে সোফায় ঘুমিয়ে পড়ছে। আরুশিও আর যেচে কথা বলতে যায়নি। বরঞ্চ আজ সে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। পরনে একটা হালকা গোলাপী রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে সে তৈরি হয়ে নিয়েছে৷ সাথে হিজাবও বেধে নিয়েছে। তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য নিচে নামতেই ড্রয়িংরুমে আফিফা খান তাকে আটকে দিয়ে বলেন,”কিরে আরু! কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
“আসলে বড় খালামনি আমায় এখন একটু ভার্সিটিতে যেতে হবে।”
“ওহ, একটু কিছু খেয়ে যা।”
“না, বড় খালামনি অনেক দেরি হয়ে গেছে৷ আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।”
এমন সময় আরহামও সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে৷ আরহামকে দেখামাত্রই আফিফা খান বলে ওঠেন,”আরহাম, তুমিও নিশ্চয়ই ভার্সিটি যাচ্ছ তাই না? আরুকেও নিজের সাথে নিয়ে যাও।”
আরহাম দাঁড়িয়ে একবার আরুশির দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার কোন অসুবিধা নেই তোমার আরুকে নিয়ে যেতে। কিন্তু ওকে একবার জিজ্ঞেস করো, ও আমার সাথে যেতে ইচ্ছুক নাকি, না মানে ওকে ভার্সিটি নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য লোকও তো থাকতে পারে!”
আরুশি রেগে বলে ওঠে,”বলতে কি চাইছেন আপনি?”
“সেটা তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ।”

“শুনুন, আমার আপনার সাথে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই আর না তো আমি অন্য কারো সাথে যাব। আমার আম্মু আমায় একলা পথ চলতেও শিখিয়েছেন। আমি একাই চলে যেতে পারব, বুঝলেন?”
বলেই আরুশি হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। আফিফা বলে ওঠে,”আরু..শোন..”
আরুশি আর দাঁড়ায় না। আফিফা খান বলে ওঠেন,”তুমিও না আরহাম। দিলে তো মেয়েটাকে রাগিয়ে!”
“তোমরা সবাই শুধু আমার দোষটাই দেখো। তোমাদের ঐ রাগী, জেদি, একগুয়ে, মহান আরুর কোন দোষই তো তোমাদের চোখে পড়বে না। যত অনুভূতি, যত সাফারিং শুধু আরুশিকেই তো কর‍তে হচ্ছে এই বিয়ের জন্য তাই না? এদিকে ড্যাড যে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে, ফুফা আমাকে দোষী ভাবছে, গোটা সমাজের চোখে আমি খারাপ হয়ে গেছি সেটা নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই।”
বলে আরহামও রেগেমেগে বেরিয়ে যায়। আফিফা খান এবার একটা হতাশার শ্বাস ফেলে বলেন,”হায় আল্লাহ! এদের দুজনেরই রাগ, জেদ কম না। এদের সংসার যে কেমন হবে। এদের মধ্যে কি কখনো বনিবনা হবে? নাকি সারাজীবন এই ঝগড়া ঝামেলা আর ভুল বোঝাবুঝি নিয়েই কাটবে। দুজনেরই সমান ইগো!”

নিঝুম খান আফিফা খানের কাধে হাত রেখে বলেন,”ওদের দেখে আমার নিজের আর তোমার শ্বশুরের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আসলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন আগুন হলে আরেকজনকে পানি হয়ে হয়। যেমন তোমার আর নির্ঝরের সম্পর্ক। নির্ঝরের সব রাগ, জেদ, অবিচার সত্ত্বেও তুমি ওর পাশে থেকেছ। ওকে ক্ষমা করেছ, বুঝিয়েছ। এসব কারণে তোমাদের দাম্পত্যে সেরকম সমস্যা আসেনি। কিন্তু আমি আর তোমার শ্বশুর..দুজনের কেউই একে অপরকে ছাড় দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তোমার শ্বশুর ডানে যেতে বললে আমি যেতাম বানে। নিজের ইগো, নিজের জেদ বজায় রেখে চলতাম। নিজেকেই ঠিক মনে করতাম।।আর আমার এসব ভাবনার কারণেই আমাদের সংসারে অনেক ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। আমাদের জীবনের অনেকগুলো বছর নষ্ট হয়ে গেছিল। তবে আমি আশা করি, আরুশি ও আরহাম দাদুভাইয়ের জীবনটা অন্তত আমাদের মতো হবে না। কিন্তু ওদের সম্পর্ক দেখে কেন জানি আমার ভীষণ ভয় করছে। কারণ ওরা যেন আমার আর তোমার শ্বশুরেরই প্রতিচ্ছবি।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৬

কথাগুলো ভেবেই নিঝুম খান নিজের অতীতে হারিয়ে গেলেন। আবরাজ খানের সাথে জোরপূর্বক বিয়ের পর লন্ডনে গিয়ে জেদের বশে নানান ভুল সিদ্ধান্ত, ইমরানের করা কাজগুলো, সন্তানকে একা বড় করার লড়াইগুলো মনে করেই তার বুক কেপে উঠল

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৮