অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৮

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৮
ইয়াসমিন খন্দকার

আরুশি ভার্সিটিতে এসে চুপচাপ ক্লাস করতে চলে গেল। ক্লাস শেষ হতে বেরিয়ে আসতেই মারিয়া তার পথ আটকে ধরলো। মারিয়াকে দেখেই আরুশির মাথায় রাগ চেপে গেল। তাই সে মারিয়াকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু মারিয়া বলে উঠলো,”আরু, আমার কথা শোন। আমি ইচ্ছা করে কিছু করি নি আমি তো..”

মারিয়া আর কিছু বলার আগেই আরুশি ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় মারিয়ার গালে। মারিয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আরুশির দিকে। আরুশি হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,”একদম আমায় আরু বলে ডাকবি না। আমাকে এই নামে ডাকার অধিকার তুই হারিয়েছিস। তোকে তো আমি নিজের বন্ধু ভেবেছিলাম, তোর জন্য কত কিছু করেছি আমি। তার বিনিময়ে তুই কি দিলি আমায়? আমার কাছ থেকে আমার সবথেকে প্রিয় জিনিস, আমার সম্মানটাই কেড়ে নিলি! আমার আম্মুর চোখে, সমাজের মানুষের সামনে আমায় অপরাধী করে দিলি। তুই জানিস, আজ যখন আমি ভার্সিটি আসছিলাম তখন সবাই আমাকে আড়চোখে দেখছিল। সবার দৃষ্টিতেই যেন আমার জন্য একপ্রকার নিচু ভাবনা ছিল। কারণ সবাই ভাবছে আমি অন্য একটা মেয়ের সাথে অন্যায় করেছি। কিন্তু এসব কিছুর জন্য যে তুই দায়ী সেটা তো কেউ জানে না৷ তবে যাইহোক, এসব করে ভাবিস না তুই জিতে গেছিস। তোর সত্যটাও একদিন সবার সামনে আসবে। আর সেদিন তুই আমার থেকেও কয়েক গুণ বেশি কষ্ট ফিরে পাবি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলেই আরুশি স্থানত্যাগ করে। মারিয়া আরুশির যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,”তুই আমার সম্পর্কে যাই ভাবিস, আমার কিছু যায় আসে না। এখন আমার জীবনের উদ্দ্যেশ্য শুধু একটাই,যেকোন উপায়ে রাজীব ভাইকে নিজের করে নিতে হবে। তার জন্য যা করতে হয় আমি করবো৷ যতটা নিচে নামতে হয় নামবো।”
বলেই একটা হিংস্র দৃষ্টিতে তাকায়।
আরুশি ভীষণ রাগের সহিত সামনের দিকে এগিয়ে চলছিল৷ এমন সময় রাজীবের সাথে তার মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়। রাজীব আরুশিকে বলে,”তোমায় এমন লাগছে কেন আরু?”
“আর বলবেন না রাজীব ভাই, কিছু কালসাপ তো এমন আছে যারা কেবল ছোবল মেরেই ক্ষান্ত হয় না৷ তারপরও আবার বিষদাঁত ফোটাতে চায়।”
“বুঝতে পারছি তুমি কার কথা বলছ। এত চিন্তা করো না। কালসাপের বিষ কিভাবে ঝাড়তে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তোমার নির্দোষতা আমি প্রমাণ করে দেব।”

বলেই রাজীব আরুশির কাধে হাত রেখে ভরসা দেয়। অতঃপর সামনের দিকে পা বাড়ায়। দূর থেকে আরহাম তাদের এভাবে দেখে নিয়ে আবার ভুল বোঝে এবং হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,”আরুশি এমন কেন করছে? এই রাজীবের সাথে সবসময় এভাবে লেপ্টে থাকে কেন? নাহ, আগে যা হবার হয়েছে। কিন্তু এখন আরুশি আমার স্ত্রী। ওকে আটকানোর ক্ষমতা আমার আছে।”
এমন ভাবনা থেকেই আরহাম আরুশির দিকে এগিয়ে আসে। আরুশি আরহামকে দেখেই হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,”আপনি এখানে?”
“কেন? তোমার রাজীব ভাইকে আশা করছিলে বুঝি?”
“মিস্টার আরহাম! আপনার এসব নীচ চিন্তাভাবনা বন্ধ করুন।”

“আমার চিন্তাভাবনাকে বন্ধ করার আগে তুমি ঐ রাজীব ভাইয়ের কাছে যাওয়া বন্ধ করো৷ ভুলে যেও না তুমি এখন আমার স্ত্রী। আর একজন স্বামী হিসেবে পরপুরুষের সাথে তোমার এত মেলামেশা আমি মেনে নেবো না।”
“আমার আর কিছু বলার নেই। যেই লোক মেয়েদের দিকে তাকিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করে তার চিন্তাভাবনা আর এরথেকে কত ভালো হবে। আমার আর রাজীব ভাইয়ের ভাই-বোনের সম্পর্ককে আপনি এতোটা নোংরা ইঙ্গিত করছেন।”
“তুমি ওনাকে ভাইয়ের চোখে দেখতে পারো কিন্তু উনি তো তোমায় বোনের চোখে দেখেন না। তাই যা করবে ভেবেচিন্তে করো। সবসময় নিজের ভোগান্তির জন্য অন্যকে দোষারোপ করে পার পাবে না। এই কথাটা মনে রেখো।”
বলেই আরহাম স্থান ত্যাগ করে। আরুশি আরহামের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।

মারিয়া ভার্সিটির লাইব্রেরিতে বসে বসে বই পড়ছিল। এরমধ্যে হঠাৎ করে রাজীব সেখানে চলে আসে। রাজীবকে দেখামাত্রই মারিয়া বলে ওঠে,”রাজীব ভাই আপনি!”
রাজীব মারিয়ার হাত ধরে টেনে লাইব্রেরীর মধ্যকার একটি ফাকা রুমে নিয়ে যায়। অতঃপর তার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”কেন করলে তুমি এমন? আরুর জীবনটা কেন এভাবে নষ্ট করে দিলে? ও তো তোমার বন্ধু ছিল।”
“মানে? এসব কি বলছেন টা কি আপনি?”
“আমি কি বলছি সেটা নিশ্চয়ই তুমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছ। তাই বেশি চালাকি করার চেষ্টা করো না। তোমার জন্য আরুকে যা যা সাফার করতে হয়েছে তা সবকিছু তোমাকেই ঠিক করতে হবে।”
“রাজীব ভাই, আপনি আমার কথা শুনুন..”
“তোমার কোন কথা আমি শুনতে চাই না, তোমার পাশে দাড়াতেও আমার ঘৃণা করছে। নেহাতই তুমি একজন মেয়ে বলে এখনো আমার হাত না চলে মুখ চলছে নাহলে তোমার মতো মেয়েকে তো আমি…তুমি গোটা নারীজাতির কলঙ্ক।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি মানছি আমি নারীজাতির কলঙ্ক। কিন্তু আপনাকে ভালোবেসে সেই কলঙ্ক আমি নিজের গায়ে নিতে প্রস্তুত।”
“ছি! এ কেমন ভালোবাসা তোমার যা অন্যের জীবন নষ্ট করতে শেখায়। এমন ভালোবাসা আমার চাই না। তুমি আমার সাথে চলো, আরুশি ও আরহামের পরিবারের সবার সামনে সমস্ত সত্যটা খুলে বলো। আরুর গায়ে যে মিথ্যা কলঙ্ক লেগেছে তোমার জন্য তা দূর করো।”
মারিয়া বলে,”বেশ, আপনি যা যা বলছেন আমি তার সবটাই করবো। কিন্তু তার বিনিময়ে আপনাকে আমায় ভালোবাসতে হবে..আমায় নিজের করে নিতে হবে।”
“এসব কি পাগলের মতো কথা বলছ তুমি? তোমার মতো পাগল মেয়েকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কেবল তোমাকে ঘৃণাই করি।”

মারিয়ার পাগলামীর মাত্রা বাড়ে। সে নিজের চুল খামচে ধরে বলে,”ঘৃণা করেন আমায়? কোন ব্যাপার না। এই ঘৃণা একসময় ভালোবাসায় বদলে যাবে। আমি খুব ভালো করেই জানি, ঐ আরু আমাদের মাঝে না থাকলে আপনি আমাকেই ভালোবাসতেন।”
“ভুল জানো তুমি, আরু থাকুক বা না থাকুক তোমাকে আমি কখনো ঐ নজরে দেখতাম না। তাই এসব পাগলামী বন্ধ করো আর সবাইকে সত্যটা বলে দাও। শুধুশুধু আরুর লাইফটা নষ্ট করো না।”
“পাগলামী? পাগলামীর কি দেখেছেন আপনু এখনো? এবার দেখবেন, আসল পাগলামী কাকে বলে..”
বলেই হঠাৎ করে মারিয়া এগিয়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। রাজীব বলে ওঠে,”এসব কি করছ তুমি?”
মারিয়া বলে,”ভালোয় ভালোয় যখন আমি আপনাকে পাবো না তো একটু খারাপ ভাবেই পেলাম..”
বলেই মারিয়া নিজের সালোয়ারের হাতা ছিড়ে ফেলে। নিজের আঙুল দিয়ে হাতে, মুখে আঁচড় কাটতে থাকে। রাজীব বলে ওঠে,”মারিয়া থামো..এসবের মানে কি?”
মারিয়া বাঁকা হাসে। অতঃপর মিথ্যা আর্তনাদ করে বলে ওঠে,”কে কোথায় আছেন? প্লিজ আমাকে বাঁচান..সামবাডি হেল্প মি…”

“মারিয়া…কি বলছ এসব তুমি? থেমে যাও প্লিজ..এসব করে কি প্রমাণ করতে চাইছ তুমি?”
এরইমধ্যে লাইব্রেরিতে থাকা কিছু ছেলেপেলে ছুটে আসে রুমটির সামনে। তাদের আওয়াজ পেতেই মারিয়ার আর্তনাদ আরো তীব্র হয়৷ একসময় কয়েকজন ছেলে মিলে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসতেই মারিয়া ছুটে গিয়ে তাদের পেছনে আশ্রয় নিয়ে বলে,”আমাকে বাঁচান প্লিজ..রাজীব ভাই আমার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছে..”
রাজীব বলে ওঠে,”এসব মিথ্যা! আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৭

কিন্তু উপস্থিত সবাই মারিয়াকেই বিশ্বাস করে এবং একজন যুবক এসে রাজীবের কলার চেপে ধরে তার মুখে ঘুষি দিয়ে বলে,”একটা মেয়েকে একা পেয়ে তার সাথে জোরজবরদস্তি করা! এবার তোর মজা দেখাচ্ছি।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৯