অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৯
ইয়াসমিন খন্দকার
আরুশি ছুটে আসলো কলেজ লাইব্রেরিতে। নিজের কিছু বান্ধবীর মুখে সে শুনেছে লাইব্রেরিতে নাকি রাজীব ভাইকে আটক রেখে ঝামেলা হচ্ছে৷ তাই সে ছুটে এসেছে। আরুশি লাইব্রেরিতে এসেই দেখে রাজীবকে ঘিরে রেখেছে কিছু ছেলেপেলে আর মারিয়া কান্না করতে করতে বলছে,”রাজীব ভাই আমার দূর্বলতার সুযোগ দিয়েছে। আমার সাথে জোর করে আমার শ্লীলতাহানি..”
রাজীব চিৎকার করে বলে ওঠে,”এসব মিথ্যা বলা বন্ধ করো মারিয়া। আমি এমন কিছুই করি নি।”
মারিয়া বলে,”তাহলে কি আমার শরীরের এই দাগ গুলো। আমার সেলোয়ারের ছেড়া অংশ এসব কিছু মিথ্যা?”
আরুশি তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসে বলে,”এসবের মানে কি?”
মারিয়া আরুশির দিকে ছুটে এসে বলে,”আমি জানি আরু, তুই আমার উপর রেগে আছিস। কিন্তু অন্তত এই মুহুর্তে আমার পাশে দাঁড়া। এই রাজীব ভাই আমার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে।”
রাজীব করুণ চোখে আরুশির দিকে তাকিয়ে বলে,”আমায় বিশ্বাস করো আরু, এই সব অভিযোগ মিথ্যা। মারিয়া নিজেই নিজের সালোয়ার ছিড়েছে আর নিজের নখ দিয়ে নিজের শরীরে আঁচড় কেটে এসব মিথ্যা অভিনয় করছে।”
আরুশি বলে ওঠে,”আমি তোমায় বিশ্বাস করি রাজীব ভাই। আর আমি খুব ভালো করেই জানি এই মারিয়া নিজের স্বার্থের জন্য কতটা নিচে নামতে পারে। আর সেজন্য আমি তোমার পাশেই আছি।”
ততক্ষণে আরহামও সেখানে ছুটে আসে। সে গভীর চোখে সব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এরইমধ্যে ভার্সিটির কিছু ছেলেপেলে ক্ষেপে গিয়ে বলে,”এই ছেলেকে তো পুলিশে দিতে হবে৷ তারপর পুলিশই বিচার করবে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মারিয়া এবার বলে ওঠে,”প্লিজ..আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই বিষয়টা নিয়ে থানা পুলিশ কিছু করবেন না। এটা আমার মান সম্মানের ব্যাপার। এসব জিনিস ছড়িয়ে পড়লে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। জানেনই তো, এখন একটা মেয়েকেই এসবের জন্য সমাজ দোষারোপ করে। এই দেখছেন না, আমার প্রিয় বান্ধবীও আমাকেই দোষারোপ করছে। অন্যরাও নিশ্চয়ই তাই করবে।”
তাদের ভার্সিটির এক সিনিয়র মেয়ে এগিয়ে এসে মারিয়ার কাধে হাত রেখে বলে,”তুমি কোন চিন্তা করো না, আমরা সবাই তোমার পাশে আছি। তোমার সাথে যা অন্যায় হয়েছে তার বিচার হবেই।”
“নাহ, প্লিজ আপু। আমাকে এসব বলে ভরসা দেবেন না। বাংলাদেশের আইনের উপর আমার কোন ভরসা নেই৷ আমি জানি, এখানকার আইন কতোটা ঠুনকো। এখানে একজন দোষী বিচার পায় না,ভিকটিমকেই শাস্তি পেতে হয়। আর সেজন্য আমি চাই, এই বিষয়টা থানাপুলিশ না হোক।”
“তাহলে তুমি কি চাও?”
“আমি শুধু একটা সম্মান নিয়ে এই সমাজে বেঁচে থাকতে চাই আপু।”
“সেটা কিভাবে?”
“রাজীব ভাই আমার সাথে যা করেছে তারপর এমনিই আমাকে আর কেউ বিয়ে করবে না। তাই ভালো হয়, যদি উনিই আমাকে বিয়ে করে স্বীকৃতি টা দিয়ে দেন৷ তাহলে আমার আর সম্মান হারানোর ভয় থাকবে না। আমি সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারব।”
“কি বলছ কি তুমি? তুমি নিজের সাথে অন্যায়কারীকে বিয়ে করতে চাও?”
রাজীব বলে ওঠে,”না, এটা সম্ভব না। প্রয়োজনে আপনারা আমায় থানায় নিয়ে চলুন। পুলিশের সামনেই নাহয় সবটা প্রমাণিত হবে। কিন্তু এই মেয়েকে আমি কিছুতেই বিয়ে করব না। এই বিয়েটা করার জন্যই তো ও এত কিছু করেছে। ওর এই পরিকল্পনা আমি কিছুতেই সফল হতে দেবো না।”
মারিয়া বুঝতে পারে ব্যাপারটা হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সে বলে ওঠে,”যদি এই বিয়েটা না হয় তাহলে আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। এই লোকটা তো কিছু দিন পর টাকার জোরে ঠিকই জেল থেকে বেরিয়ে আসবে কিন্তু আমাকে সমাজের অপমান আর কটু কথা শুনে বাঁচতে হবে। আমি সেটা মেনে নিতে পারব না। তখন হয়তো আমায় গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে। তাই আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, দয়া করে আমায় ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করুন। এই বিয়ে ছাড়া আমি ন্যায়বিচার পাবো না।”
রাজীব বলে,”তোমার পরিকল্পনা আমি সফল হতে দেবো না। এই বিয়ে আমি করবো না।”
একটা ছেলে রাজীবের কলার ধরে বলে,”বিয়ে করবি না মানে কি? নষ্টামি করার সময় এসব মনে ছিল না। এখন তোকে এই বিয়েটা করতেই হবে।”
“আমি এই বিয়ে করবো না।”
“তবে রে..”
বলেই রাজীবের গায়ে ছেলেটা হাত তুলতে যাবে এমন সময় আরুশি রাজীবকে আগলে দাড়িয়ে বলে,”ওনাকে মারবেন না৷ উনি এই বিয়েটা করবে।”
রাজীব বলে,”এসব তুমি কি বলছ আরু? আমি এই মেয়েটাকে..”
আরু ধীর স্বরে বলে,”আমার উপর ভরসা রাখো রাজীব ভাই। আমি মারিয়াকে কিছুতেই জিততে দেব না। এই বিয়েটা আমি হতে দেব না। বিয়ের আগেই সমস্ত সত্যটা আমি সামনে আনবো। এটা আমি তোমায় কথা দিলাম। তুমি এখন প্লিজ রাজী হয়ে যাও। নাহলে আরো ঝামেলা হবে।”
রাজীব কিছুটা ভরসা পায় আরুশির কথায়। আর সে বলে,”বেশ,আমি রাজি। আমি মারিয়াকে বিয়ে করবো।”
মারিয়া বিজয়ীর হাসি হেসে মনে মনে বলে,”শেষে আমার ভালোবাসাই জয়ী হলো।”
আরুশি মারিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,”এখন যত হাসার হেসে নে,মারিয়া। কিন্তু তোর সত্যি আমি সবার সামনে আনবো। তোর যদি আমি,মিস্টার আরহাম, রাজীব ভাই সবাই অনেক অপমানিত হয়েছে। এবার তুইও সেই সব অপমান ফিরে পাবি।”
আরহাম আরুশির দিকে এগিয়ে এসে বলে,”আমার কেন জানি মনে হচ্ছে,তোমার মাথায় কিছু চলছে আরুশি। তাছাড়া তোমার এই বান্ধবীকেও আমার খুব একটা ভরসা হচ্ছে না। ও যে মিথ্যা বলছে তা দিনের আলোর মতো পরিস্কার। তাই নিশ্চয়ই তুমি এই বিয়েটা হতে দেবে না।”
“ঠিক ধরেছেন আপনি। আর এটাই আমাদের হাতে একটা সুযোগ যাতে করে আমরা মারিয়ার সমস্ত সত্যি সবার সামনে আনতে পারি।”
আরহাম বলে,”আমি জানি, তুমি হয়তো আমায় বিশ্বাস করো না কিন্তু আমিও তোমার পাশে থাকতে চাই সত্যটা সবার সামনে আনার ক্ষেত্রে।”
“বেশ, আমার কোন আপত্তি নেই। তাছাড়া রাজীব ভাইকে নিরপরাধ প্রমানে এখন আমার কারো না কারো সাহায্য লাগবেই।”
আরহাম আরুশির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। আরুশিও হাতটা ধরে নেয়।
এদিকে মারিয়া রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলে,”এবার তোমাকে আমি নিজের করে নেবোই রাজীব ভাই। তুমি না চাইলেও এবার তুমি আমার হবে।”
রাজীব মারিয়ার দিকে ঘৃণাভরে তাকায়। তবুও মারিয়া খুব একটা পাত্তা দেয়ান রাজীবের ঘৃণাভরা দৃষ্টিকে।
এসবের মধ্যে হঠাৎ করে ভার্সিটির কিছু ছেলে বলে ওঠে,”বিয়েটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দেয়া উচিৎ। নাহলে যেই আবার এই রাজীব পালিয়ে যায় বা কোথাও গা ঢাকা দেয়।”
মারিয়াও বলে,”হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন আপনারা। আজকে সন্ধ্যার মধ্যেই বিয়েটা দিতে হবে৷ আপনারা সব আয়োজন শুরু করুন।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৮
মারিয়ার মনে ভয় ছিল যে তার সত্যটা না সামনে চলে আসে। তাই সে তাড়াহুড়ো করে। এদিকে আরুশি ভাবনায় পড়ে যায়। সে আরহামকে বলে,”এত তাড়াতাড়ি আমরা কিভাবে সব সত্য সামনে আনবো?”
আরহাম বলে,”আমাদের যে করেই হোক পারতেই হবে। এখন থেকেই কাজে লেগে পড়তে হবে।”
আরুশি সম্মতি জানায়। মারিয়া আরুশির দিকে তাকিয়ে ভাবে,”আমি জানি, তুই মনে মনে এই বিয়েটা আটকানোর ফন্দি আটছিস। কিন্তু কোন লাভ হবে না। যেভাবে তুই নিজের বিয়ে আটকাতে পারিস নি, সেভাবে আমার আর রাজীব ভাইয়ের বিয়েও আটকাতে পারবি না। দিনশেষে জয় মারিয়ারই হবে।”