অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৭
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা মলিন মুখে খান বাড়ির সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে আছে৷ তার মনটা আজ একদম ভালো নেই৷ আরিশার চোখ বারবার যাচ্ছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের ওদিকে। সময় গুলো যেন কিভাবে দ্রুত পেরিয়ে গেল। চৌদ্দ দিন যেন চোখের পলকে চলে গেল। আজ রাতেই নির্ঝরের সাথে আফিফার বিয়ে। আরিশাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আনিকা খান এগিয়ে এসে বলেন,”এভাবে একা এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? সবাই ওখানে কত আনন্দ করছে। যাও গিয়ে তোমার আপ্পির গায়ে হলুদে অংশ নেও।”
আরিশা মলিন হেসে বলে,”আচ্ছা, যাচ্ছি।”
অতঃপর মুখে একটা নকল হাসি নিয়ে আফিফার কাছে গিয়ে আফিফার গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিয়ে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আপ্পি!”
আফিফা আরিশার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই এখনো সাজিস নি কেন বোনু? এমনি সময় খুব সাজগোছ করিস। যা গিয়ে একটু সাজগোজ কর। এভাবে তোকে ভালো লাগছে না।”
আরিশা বলে,”আমি যদি আরো ভালো করে সাজি তাহলে তো সবার লাইমলাইট আমিই কেড়ে নেব।”
আফিফা হেসে বলে,”সেটা ব্যাপার না। আমি তো সবার লাইমলাইট চাইওনা৷ শুধু তোর হবু জিজুর দৃষ্টিতে থাকলেই হবে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলেই লাজুক হাসে। আরিশাও মেকি হেসে সরে আসে। একটু দূরেই নির্ঝরেরও গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে। আরিশা সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”নাহ, আমি আর কষ্ট পাবো না। বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে।”
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতেই আফিফা নিজের রুমে যায়। তখন হঠাৎ করে নির্ঝর তার রুমে ঢুকে পড়ে এবং দরজা লাগিয়ে দেয়। আফিফা খানিকটা ভয় পেয়ে বলে,”কি হয়েছে?”
নির্ঝর নিজের হাতভরা হলুদ নিয়ে এসে আফিফার গালে মাখিয়ে দিয়ে বলে,”সবাই তো তোমাকে হলুদ মাখালো কিন্তু আমি তো সেই সুযোগটাই পেলাম না।”
বলেই নির্ঝর আফিফার গালে হলুদ মাখিয়ে দেয়। এই অবস্থায় আফিফা ও নির্ঝর অনেক কাছাকাছি চলে আসে। আফিফার গালে হলুদ মাখিয়ে নিজের গালে আফিফার গালের সাথে ঘষে নির্ঝর যাতে করে তার গালেও হলুদ লেগে যায়। আফিফার লজ্জা ও অস্বস্তি বেড়ে যায়। আফিফা নির্ঝরের গালে ছোট্ট করে একটা চুমু দেয়। অতঃপর ধীরে ধীরে তার ঠোঁটেই ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আফিফা ও নির্ঝর যেন এভাবে একে অপরের মাঝে হারিয়ে যায়। দুজনেই তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল। নির্ঝরের হাত এরপর চলে যায় একদম আফিফার স্পর্শকাতর স্থানে। সে আফিফার ব্লাউজের ফিতা খুলতে যাবে এমন সময় আফিফার হুশ ফেরে এবং সে বলে,”কি করছেন টা কি!”
নির্ঝর থেমে যায়। অতঃপর আফিফার কাধে নিজের গরম নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। আফিফা নির্ঝরের কাধে হাত দিয়ে বলে,”আর তো মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। তারপর আমি বৈধভাবে আপনার হয়ে যায়। তখন আপনার যা ইচ্ছা করবেন কিন্তু এখনই এত এগোনো ঠিক হবে না।”
নির্ঝর আফিফার গালে চুমু খেয়ে বলে,”বেশ, করলাম নাহয় একটু অপেক্ষা।”
বলেই সে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। এদিকে নির্ঝর বেরিয়ে যাবার পরই আফিফা নির্ঝর তার শরীরের যেই যেই স্থানে স্পর্শ করেছে সেখানে সেখানে হাত বুলাতে থাকে। অনুভব করে ভালোবাসার স্পর্শ। কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তের কথা ভেবেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে এবং সে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই গায়ে হলুদের শাড়িগুলো চেঞ্জ করে নেয় এবং অন্য একটা শাড়ি পড়ে নিজের বিয়ের বেনারসি টা দেখতে থাকে। লাল রঙের এই বেনারসি পড়ে তাকে যেন অনেক সুন্দর লাগবে। আফিফা শাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,”আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা। তারপরই আমাদের ভালোবাসা টা পূর্ণতা পাবে।”
সোফার উপর পায়ে পা তুলে বসে আছে জাঈদ শেখ। কিছুক্ষণ আগেই সে ঢাকা থেকে ফিরল। পার্টির কিছু জরুরি কাছে দুই সপ্তাহ আগেই তাকে তার বাবা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। আজ এত দিন পর সিলেটে ফিরেই জাঈদ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। অতঃপর নিজের চেলা মন্টুর উদ্দ্যেশ্যে বলল,”আচ্ছা, তোদের ভাবির কি খবর?”
মন্টু কিছুটা ভীত স্বরে বলে,”আসলে ভাইজান…”
মন্টুর কন্ঠের উদ্বেগ টের পেয়ে জাঈদ বলে ওঠে,”কি হয়েছে? তোর গলাটা শুনে এমন লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে?”
মন্টু আমতা আমতা করে বলে,”আসলে..ভাবির..ভাবির সাথে আজ তার চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে।”
মন্টুর কথা টা শুনেই জাঈদ শেখ বিস্ফোরিত চোখে তাকায় এবং উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”কি বললি তুই? তোদের কি এজন্য এত টাকা দিয়ে পুষে রেখেছি? আমার পাখিকে অন্য কেউ উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর সেই খবর তুই আজ আমায় দিচ্ছিস। তোকে তো আমি..”
মন্টু কাদো কাদো স্বরে বলে,”আমার কোন দোষ নেই স্যার। আপনার বাবাই আপনার থেকে এই কথাটা গোপন রাখতে বলেছিলেন। সামনেই তো ইলেকশন তাই তিনি চান নি এসব জেনে আপনি কোন ঝামেলা করুন এবং তার প্রভাব ভোটে পড়ুক। এজন্যই উনি আপনাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমি সব জেনেও আপনাকে কিছু জানাতে পারি নি কিন্তু আপনার নুন খেয়েছি তাই আর নেমোক হারামি করতে পারব না। তাই জানিয়ে দিলাম।”
মন্টুর কথা শুনে জাঈদ এবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলে,”যাইহোক, সত্যটা আমাকে জানিয়েছিস এটাই অনেক। এবার আমাকেই কিছু করতে হবে। এই বিয়েটা আমি কিছুতেই হতে দেব না। আফিফা শুধু আমার। আফিফাকে আমি নিজের করে নেবোই। প্রয়োজনে বিয়ের আসর থেকে ওকে তুলে আনব।”
মন্টু বলে,”স্যার,কোন ঝামেলা করবেন না প্লিজ..সামনে ইলেকশন..”
“ইলেকশনের গুষ্টি কিলাই..চল আমার সাথে।”
আফিফা বিয়ের সাজে সেজে উঠেছে। বেনাসরি শাড়ি পড়ে আজ তাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে আফিফা নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় পর আরিশা এসে আফিফাকে বলে,”তোমাকে অনেক সুন্দরী লাগছে আপ্পি!”
আফিফা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”ধন্যবাদ বোনু৷”
“নির্ঝর ভাইয়া তো আজ তোমার থেকে চোখই ফেরাতে পারবেন না।”
আফিফা আরো লজ্জা পায়। আরিশা আফিফার হাতটা ধরে বলে,”তুমি অনেক সুখী হবে দেখে নিও।”
আফিফা বলে,”তাই যেন হয়।”
“আমার ভাগের সব সুখও তুমি নিয়ে নাও আপ্পি। প্রয়োজনে আমার জীবন দুঃখ ছেয়ে যাক তবুও তুমি সুখী হও।”
আফিফা বলে,”ধুর পাগলী! তোর সুখ নিয়ে আমি কেন সুখী হবো? আমার ভাগ্যে যেটুকু সুখ আল্লাহ লিখে রেখেছেন তাই আমার জন্য যথেষ্ট।”
এরইমধ্যে আদৃতা সেখানে এসে খানিকটা বিরক্তি স্বরে বলে,”আমার ব্রো আর কতক্ষণ বিয়ের আসরে বসে থাকবে? তোমাদের দুই বোনের এসব মেলোড্রামা শেষ হলে একটু নিচে এসো।”
আরিশা কিছু বলতে যাবে এমন সময় আফিফা বলে,”থাক, আজকের দিনে কোন ঝামেলা করার দরকার নেই। চল, নিচে যাই।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৬
বলে যেই না বেরোতে যাবে এমন সময় আফিফা বলে,”ওহ,আমার ফোনটা তো সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় যে রেখেছি মনে হয় রুমেই আছে।”
আরিশা বলে,”তুমি নিচে যাও আমি তোমার ফোন নিয়ে যাচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
বলেই আফিফা রুম থেকে বের হয় আর আরিশা আফিফার ফোন খুঁজতে থাকে।