অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২০

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২০
ইয়াসমিন খন্দকার

আরুশি ও আরহাম একসাথে বসে আছে। তারা দুজনে মিলে পরিকল্পনা করছে কিভাবে মারিয়ার সব ষড়যন্ত্র সামনে আনা যায়। আরহাম হঠাৎ করে বলে,”আরুশি, আমাদের কাছে শুধুমাত্র আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় আছে৷ তারমধ্যে আমাদের যা করার করতে হবে নাহলে রাজীব ভাইয়ের সাথে মারিয়ার বিয়ে হয়ে যাবে।”
আরুশি বলে,”ঠিক বলেছেন আপনি৷ এবার আর মারিয়াকে জিততে দিলে চলবে না..আমাদের এবার ওর সত্যটা সামনে আনতেই হবে। কিন্তু কিভাবে?”

দুজন মিলে অনেক সময় ধরে আসছিল কিন্তু তাদের মাথায় কোন বুদ্ধি আসছিল না। এমন সময় রাজীব মলিন মুখে তাদের দিকেই এগিয়ে আসে। তার করুণ দৃষ্টি দেখে আরুশি এগিয়ে যায়৷ রাজীবের কাধে হাত রেখে বলে,”রাজীব ভাই..আমি তোমার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু তুমি এতোটা ভেঙে পড়ো না।”
“এই বিয়েটা হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাব আরু। তুমি কেন আমায় মারিয়ার প্রস্তাবে রাজি হতে বললে। ঐ মেয়েটা তো এটাই চেয়েছিল। এর থেকে তো আমার জেলে যাওয়াই ভালো ছিল।”
আরহাম এগিয়ে এসে বলে,”এখনই এত ভেঙে পড়বেন না। যেকোন ভাবেই হোক এই বিয়েটা আমরা আটকাবোই। কথা দিচ্ছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাজীব এবার একটু ভরসা পায়। মারিয়া দূর থেকে তাদের কথোপকথন শুনে হালকা হেসে বলে,”তোমরা যতই চেষ্টা করো না কেন তাতে কোন লাভ হবে না৷ দিনশেষে জয় এই মারিয়ারই হবে। মারিয়া কখনো হারতে শেখে নি আর না তো এবার হারবে।”
বলেই সেও এগিয়ে এসে রাজীবকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”রাজীব ভাই..আপনি এখনো এখানে কি করছেন? যান বিয়ের প্রস্তুতি নিন৷ আজ আপনার সাথে আমার বিয়ে বলে কথা। সুন্দর করে সাজতে হবে না।”
রাজীব ঘৃণার সাথে বলে ওঠে,”তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করার থেকে তো আমার মরে যাওয়াই ভালো।”
“মরার কথা বাদ দিন রাজীব ভাই। আপনাকে আমার হাতে হাত রেখে সারাটা জীবন কাটাতে হবে।”
আরুশি বলে ওঠে,”তুই এতটা নীচে নামবি জানলে আমি তোকে কখনো সাহায্য কর‍তাম না মারিয়া। এভাবে কি কেউ ভালোবাসা পায়? শুধু রাজীব ভাইকে পাওয়ার জন্য তুই কতগুলো জীবন নষ্ট করলি।”
“আমি কারো জীবন নষ্ট করি নি আরু। আমি শুধু নিজের জীবন সাজিয়েছি।”
বলেই মারিয়া স্থান ত্যাগ করে। আরুশি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”অন্যের জীবন নষ্ট করে নিজের জীবন সাজানো সম্ভব নয়। এবার সেটা তুই টের পাবি।”

ভার্সিটির পাশেই ছোট্ট একটি কমিউনিটি সেন্টারে মারিয়া ও রাজীবের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। মারিয়া বর্তমানে নিজের রুমে আছে। তার মা-বাবা ও ছোট বোনও এসেছে। তাদেরকে মারিয়া কোনভাবে ভুল বুঝিয়ে সবটা ম্যানেজ করেছে। তবে রাজীবের পরিবার থেকে কেউ আসেনি। মারিয়াও জোর করেনি। বিয়ের পর তো ঠিকই বউ হয়ে রাজীবের বাড়িতেই সে উঠবে। তখন তো রাজীব তাকে অস্বীকার করতে পারবে না। এসব ভেবেই লাল বেনারসি পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মারিয়া বলে,”বাহ, মারিয়া! কত সুন্দর তুই। রাজীব ভাই যতোই চেষ্টা করুক বেশিদিন তোর প্রেমে না পড়ে থাকতে পারবে না।”
কথাটা ভেবেই সে গুনগুন করে গাইতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ করে তার রুমে ঢুকে কেউ দরজা বন্ধ করে দেয়। মারিয়া পিছন ফিরে তাকিয়ে আরুশিকে দেখে অবাক স্বরে বলে,”আরু তুই..”
আরুশি সহসা মারিয়ার দিকে একটা বন্দুক ঠিক তার কপাল বরাবর তাক করে বলে,”চুপ..একদম চুপ..এক পাও নড়ার চেষ্টা করবি না।”

মারিয়া বলে,”এসব কি করছিস তুই আরু? বন্দুকটা নামা..”
“না, আজ আমি বন্দুকটা নামাবো না। এই বন্দুক তোর মাথার খুলি ভেদ করবে। আমার জীবন তো তুই নষ্ট করেছিস কিন্তু রাজীব ভাইয়ের জীবন তোকে আমি নষ্ট করতে দেব না।”
“আমি জানি, তুই আমার সাথে মজা করছিস। এই বন্দুকে কোন গুলি নেই।”
“তাই নাকি?”
বলেই উপরের দিকে তাক করে একটা গুলি ছোড়ে। মারিয়া কানে হাত দিয়ে বলে,”আরু..প্লিজ..এসব পাগলামি করিস না। আমি তো তোর প্রিয় বান্ধবী..তুই নিশ্চয়ই আমাকে মারবি না।”
“কেন? পাগলামি কি শুধু তুই একাই করতে পারিস? আমি পারি না। আর তুই যদি বন্ধু হয়ে আমাকে ফাঁসাতে পারিস তাহলে আমি কেন তোকে গুলি করতে পারবো না?”
“নাহ…আমাকে মারিস না প্লিজ..সবেমাত্র রাজীব ভাইয়ের সাথে আমি নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছি সেই স্বপ্নটা শেষ করিস না।”

“তাহলে নিজের করা সব অপরাধ তুই স্বীকার কর। নাহলে কিন্তু..”
“আচ্ছা, আমি করছি। হ্যাঁ, তোর আর আরহাম ভাইয়ের মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিল না, আমার জন্যই তোরা মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করেছিলি আর সেই সব ছবি আমি সবাইকে দেখিয়ে দেই যার ফলে তোদের বিয়েটা হয়, এতে তোর বা আরহাম ভাইয়ের কোন দোষ ছিল না।”
“আর রাজীব ভাইয়ের ব্যাপারটাও বল।”
“রাজীব ভাই নির্দোষ ছিল। উনি আমার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন নি। আমিই নিজের গায়ে নিজে আঁচড় কেটে আর সালোয়ারের হাতা ছিড়ে মিথ্যা অভিনয় করেছি।”
এমন সময় আরুশি বন্দুকটা নামিয়ে ঠাস করে মারিয়ার গালে থাপ্পড় বসিয়া বলে,”সবটা স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ। এবার নিজের কর্মফল ভোগ কর।”

বলেই আরুশি ঘরের দরজা খুলে দেয়। ঘরের বাইরে মারিয়ার মা-বাবা, আরহাম, আরিশা-জাঈদ, আফিফা-নির্ঝর, ভার্সিটি কিছু স্টুডেন্ট, শিক্ষক এবং পুলিশ অফিসাররা দাঁড়িয়ে ছিল। সবার পেছনে ছিল রাজীব। এতক্ষণে তার নিচু মাথা উঁচু হলো। মারিয়ার মা মনোয়ারা খাতুন এগিয়ে এসে মারিয়ার গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বললেন,”ছি! আমার মেয়ে হয়ে তুই এত নিচে নামবি আমি ভাবতেও পারিনি। নিজের স্বার্থের জন্য তুই এতজনের জীবন নষ্ট করে দিলি। আমার তো আফসোস হচ্ছে তোকে জন্ম দেওয়ার জন্য।”
মারিয়ার বাবাও বলে ওঠেন,”আজ থেকে মারিয়া আমার কাছে মৃত। আজ থেকে আমার শুধু একটাই মেয়ে।”
বলেই তিনি মারিয়ার ছোট বোনকে বুকে আগলে নেন। মারিয়া করুণ কন্ঠে বলে,”আব্বু..”
“চুপ। ঐ মুখ দিয়ে আর কখনো আমায় আব্বু বলে ডাকবে না।”

আরিশা খন্দকারও বলে ওঠেন,”তুমি আর আরু সেই ছোটবেলার বান্ধবী। তোমাকে আমি কখনো আরুর থেকে আলাদা ভাবে দেখিনি। আর সেই তুমিই কিনা আমার আরুর এত বড় ক্ষতি করলে।”
মনোয়ারা আক্তার আরুশির সামনে গিয়ে হাতজোড় করে বললেন,”আমাকে ক্ষমা করে দিও মা, আমি নিজের মেয়েটাকে ভালোভাবে মানুষ করতে পারিনি যার ফল তোমাদের ভোগ করতে হলো।”
অতঃপর তিনি রাজীবের কাছেও ক্ষমা চান। রাজীব বলে,”এভাবে ক্ষমা চাইবেন না আন্টি। আপনাদের কোন দোষ নেই। আপনাদের মেয়েই মানসিক অসুস্থ হয়ে উঠেছে। ওকে এসাইলামে পাঠানো দরকার।”
মারিয়া বলে ওঠে,”হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি মানছি আমি অনেক ভুল করেছি কিন্তু আমার তাতে কোন আফসোস নেই। কারণ যা করেছি আমি নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য করেছি। আর ভালোবাসা আর যুদ্ধে সবই গ্রহণযোগ্য।”
এবার মারিয়ার বাবা এগিয়ে এসে তাকে থাপ্পড় মেরে বলেন,”বেহায়া মেয়ে! সবার সামনে এসব বলতে লজ্জা করছে না।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৯

মনোয়ারা বেগমও মারিয়াকে আরো একটা থাপ্পড় দিয়ে বলেন,”তুই এমন হবি জানলে জন্মের পরই তোকে বিষ খাইয়ে মারতাম বা নিজেই মরে জেতাম। ”
এবার তাদের ভার্সিটির এক সিনিয়র মেয়ে এগিয়ে এসে মারিয়াকে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বলে,”তোমাকে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম আর তুমি আমাদের এভাবে ঠকালে। আমার বিশ্বাস নিয়ে এভাবে খেললে..”
রাজীব বলে ওঠে,”তোমার মুখে ভালোবাসার মতো এতো পবিত্র শব্দ মানায় না। তুমি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নও।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২১