অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২৩

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২৩
ইয়াসমিন খন্দকার

আরুশি চুপচাপ নিজের ঘরে বসেছিল। এমন সময় বাইরে একটা চিরচেনা স্বর শুনে সে অবাক হয়ে বাইরে বের হয় এবং আরহামকে দেখে অবাক হয়। আরিশা খন্দকার আরহামের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল। আরুশিকে দেখেই তিনি বলেন,”ঐ তো আরু এসে গেছে।”
আরুশি এগিয়ে এসে আরহামের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনি এখানে কি করছেন?”
আরহাম হেসে বলে,”কেন? আমি নিজের খালামনির বাসায় আসতে পারি না?”
আরুশি বলে,”আমি সেটা বলতে চাইনি কিন্তু এভাবে হঠাৎ।”
আরিশা খন্দকার আরুশিকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,”ও ওর খালামনির বাড়িতে এসেছে। তাই এই নিয়ে আমি আর তোর কোন কথা শুনব না। আরহাম, যাও তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করো। আমি তোমার পছন্দমতো সব খাবার রান্না করছি।”

আরহাম মাথা নাড়িয়ে ভেতরের দিকে যায়। আরুশি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজের রুমে এসে বলে,”আম্মু যে কি করে কিছু বুঝি না৷ এভাবে মিস্টার আরহামকে এখানে থাকার অনুমতি দিয়ে দিলো। না জানি, উনি কি উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এখানে এসেছেন।”
আরুশির ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ করে আরহাম তার ঘরের দরজায় সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,”মে আই কাম ইন, আরুশি?”
আরুশি আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,”এসেই যখন পড়েছেন তখন আসুন।”
আরহাম ভেতরে প্রবেশ করে বলে,”আমার এখানে আসায় তুমি কি খুশি হওনি?”
“খুশি হবো না কেন? আসলে একটু অবাক হয়েছি তাই আরকি..”
“মানে তুমি খুশি..?”
“না মানে..”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আচ্ছা, থাক। তোমায় আর কনফিউজড না করি। তো আমি এত মেয়েদের ন্যাকামো করে কিছু বলতে চাইনা। যা বলার স্পষ্ট করেই বলি, আমি এখানে এসেছি তোমার মন জয় করে তোমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবার উদ্দ্যেশ্যেই। অন্য কোন কারণে নয়। আর তুমি আমার সাথে ফিরে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখো।”
আরুশি বলে ওঠে,”আপনি শুধু শুধু জেদ করছেন। কেন বুঝতে পারছেন না যে, আমি এই সম্পর্কটা আরো টিকিয়ে রাখতে অনিচ্ছুক। এই জন্যই তো আমি চাইছি না ফিরে যেতে। তবুও কেন জোর করছেন আমায়? জোর করে কি কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব?”
“আমি এত কিছু জানি না, আরুশি। আমি শুধু জানি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর এই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি লড়াই করবো। এত সহজে কিছুতেই আমি হার মানবো না।”
আরুশি হতাশ স্বরে বলে,”আমার আর কিছু বলার নেই। আপনার যা করার তাই করুন কিন্তু আমি আপনার জীবনে আর ফিরবো না। এটাই আমার শেষ কথা।”

বলেই আরুশি বিছানার দিকে চলে আসতে নেয় এমন সময় হঠাৎ তার ফোনে রাজীবের কল আসে। আরহাম আরুশির ফোনে “Rajib Vai” নামটা জ্বলে উঠতে দেখেই হিংসায় জ্বলে ওঠে। আরুশি ফোনটা রিসিভ কথা কিছুটা দূরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করে। এদিকে আরহাম রেগে মনে মনে বলে,”আমার সাথে কথা বলতে ওর এত অনীহা আর এই রাজীবের সাথে কত হেসে হেসে কথাবার্তা! নাহ, কুল আরহাম কুল। একবার শুধু আমি আরুশিকে নিজের করে পাই। তারপর এসব রাজীব-টাজীবের থেকে ওকে দূরে সরানো যাবে।”

নির্ঝর খান ভীষণ রেগে তার স্ত্রী আফিফা খানের দিকে তাকিয়ে আছেন। আফিফা খান বলে ওঠেন,”তুমি শুধু শুধুই এত রাগ করছ। আরহাম কোন ভুল করেনি আর না তো আমি ওকে সাপোর্ট করে কোন ভুল করেছি। আরু আরহামের স্ত্রী, আর আরহামও ওকে পছন্দ করে। সেখানে তুমি কেন ওদের মধ্যে বাধা হতে চাইছ?”
“শুধু আরহাম পছন্দ করলেই তো হবে না। আরুশি তো আরহামকে পছন্দ করে না। দেখলে না সেদিন কিভাবে মুখের উপর আমার ছেলেকে প্রত্যাখ্যান করল, তারপরও আরহাম কোন আক্কেলে ওর কাছে প্রেমের ভীক্ষা চাইতে গেছে। আমার ছেলেকে কি আমি এতোটাই আত্মসম্মানহীন করে তৈরি করেছি নাকি?”
“এটা তোমার আত্মসম্মান নয়, এটা ইগো। দুটোকে গুলিয়ে ফেলো না৷ ও নিজের স্ত্রীকেই ফিরিয়ে আনতে গেছে, বাইরের কোন মেয়েকে নয়। এজন্য আমি নিজের ছেলেকে নিয়ে গর্ব করি। আর তুমি কেন আরুকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে মানতে চাওনা সেটাও আমি জানি। কারণ তুমি জাঈদ শেখকে তার অতীতের কার্যকালাপের জন্য পছন্দ করো না। আর তুমি ভাবো আরুও হয়তো তার মতোই হয়েছে।”

“সবটাই যখন জানো, তাহলে কেন আমার বিরোধিতা করছ?”
“কারণ আরু শুধু জাঈদ শেখের মেয়ে নয় ও আমার বোনুরও মেয়ে। আর জাঈদ শেখকে আমিও ভরসা করি না কিন্তু আমার বোনুকে আমি পূর্ণ ভরসা করি। আমি জানি,আমার বোনু কখনো কোন ভুল শিক্ষায় নিজের মেয়েকে করতে পারে না।”
“তখন থেকে নিজের মেয়ে নিজের মেয়ে করছ, ও তো তোমার বোনের পালিত মেয়ে। জানিনা ওর আসল ফ্যামিলি স্টেটাস কি।”
“তোমার থেকে আমি এত নীচ চিন্তাভাবনা আশা করি নি নির্ঝর। যাও, আর কথাই নেই তোমার সাথে কোন।”
বলেই আফিফা খান স্থান ত্যাগ করেন। এদিকে নির্ঝর খান এরকম একটা কথা বলায় বেশ লজ্জাবোধ করেন এবং ভাবেন,”তাহলে কি সত্যিই আমি ভুল করছি? আমার কি নিজের ছেলের ভালোবাসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিৎ নয়?”

জাঈদ শেখ আরহামের সিলেটে তাদের বাড়িতে আসার বিষয়টা নিয়ে একদম খুশি নন। তিনি আরিশা খন্দকারকে জিজ্ঞেস করেন,”তুমি কিভাবে ঐ ছেলেটাকে এরকম একটা পরিস্থিতিতে এখানে আসার অনুমতি দিলে আরিশা? তুমি জানো না, গতকালকেই ওর আর আরুর বিচ্ছেদের কথা হলো আর তুমি…”
“শান্ত হও। নাহলে তোমার বিপি বেড়ে যাবে। আমি যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভেবেচিন্তেই নিয়েছি। আর তুমি ভুলে যাচ্ছ আরহাম আমার বোনপো হয়। তাই ও এখানে আসতেই পারে।”
“সেটার বিরোধিতা করছি না,আমি। কিন্তু..সময় পরিস্থিতিটাও তো দেখতে হবে।”
“সব পরিস্থিতি দেখেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরহাম আরুকে ভালোবাসে। আমার কাছে একটা সুযোগ চেয়েছে নিজের ভালোবাসা প্রমাণ করার। আমি কেন ওকে সেই সুযোগ দেব না।”
“কিন্তু আরু তো ওকে ভালোবাসে না।”

“সে তো একসময় আমিও তোমাকে ভালোবাসতাম না। কিন্তু তুমি কি হাল ছেড়েছিলে? শেষ পর্যন্ত কত চেষ্টা করেছিলে আমার ভালোবাসা পাওয়ার। তুমি তো আমার সাথে অনেক অন্যায়ও করেছিলে…তারপরও তো আমি সেসব ভুলে তোমায় আপন করে নিয়েছিলাম। সেখানে আরহাম তো কোন দোষও করেনি। আর তুমি নিজের বেলায় তো এসব ভাবো নি তাহলে আজ নিজের মেয়ের বেলায় ভাবছ কেন? মানের নিজের বেলায় ষোলো আনা আর অন্যের বেলায় কাচকলা। ”
জাঈদ শেখ এবার দমে যান। নিজের আর আরিশা খন্দকারের অতীতের দিনগুলোর কথা মনে করেন। কিভাবে তিনি জোরপূর্বক আরিশাকে বিয়ে করে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একসময় তারই প্রেমে পড়ে যান। যেই মেয়েকে আগে সবসময় অপমান করতেন আজ তারই প্রেমে তার হাত ধরে ২৫ টা বছর কাটিয়ে দিলেন। এসব ভেবে তিনি বলেন,”ঠিক বলেছ তুমি। নিজের বেলায় আমি যেমন চেষ্টা করেছি আমার উচিৎ আরহামের চেষ্টাকেও সমর্থন করা। আসলে নিজের মেয়ের ব্যাপারে ভাবতে গিয়ে আমি অতীতের কথা গুলোই ভুলে গেছিলাম। যাইহোক, একজন প্রেমিক হিসেবে আরেকজন প্রেমিকের বেদনা আমার বোঝা উচিত। কোথায় আরহাম, ওকে ডেকে দাও। ওকে মেয়ে পটানোর কিছু টেকনিক শিখিয়ে দেই।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২২

“কি যে বলো না তুমি! এত বয়স হয়ে গেছে এত বড় মেয়ের বাবা হয়েছ তবুও আক্কেল হলো না। কখন কি বলতে হয় আজো জানো না।”
এভাবেই তাদের খুনশুটি চলতে থাকে। দূর থেকে তাদের হাসতে দেখে আরুশি ভীষণ খুশি হয় এবং বলে,”আম্মু আর পাপা যেন সবসময় এভাবেই সুখী থাকে। আল্লাহর কাছে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।”
এমন সময় আরহাম এগিয়ে এসে বলে,”আমি চাই, আমরাও ওনাদের মতো একটা সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাই! যেখানে সুখের কোন খামতি হবে না।”
আরহামের কথা শুনে আরুশি অবাক চোখে তার দিকে তাকায়।

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২৪