অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২৮
ইয়াসমিন খন্দকার
আরুশি আজ অনেক দিন পর ভার্সিটিতে এসেছে। তবে আগের মতো আর একা আসে নি। আজ আরহাম তাকে নিয়ে এসেছে। এত দিন পর ভার্সিটিতে এসে অনেকটাই স্বাভাবিক বোধ করছে আরুশি৷ আরহাম আরুশিকে ধরে নিয়ে একদম তার ক্লাসের সামনে এনে বলল,”যাও, পরীক্ষা দাও৷ তোমার পরীক্ষা শেষ হলে আমি আবার এসে তোমায় নিয়ে যাব।”
“তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি একাই…”
“আমি এই নিয়ে কোন কথা শুনতে চাই না আরুশি৷ তোমাকে এই অবস্থায় একা ছাড়ার ভরসা আমার নেই৷ তাই যা বলছি তাই শোনো। আর হ্যাঁ, পরীক্ষার জন্য বেস্ট অফ লাক।”
আরুশি সামান্য হাসে আরহামের কথা শুনে৷ আরহাম আরুশিকে ভেতরে যাওয়ার ইশারা করে নিজেও তার ক্লাসের দিকে চলে যায়।
আরুশি ক্লাস শেষে বিরস মুখে বেরিয়ে আসে। পরীক্ষাটা সে ততোটা ভালো ভাবে দেয় নি। ক্লাস থেকে বের হতেই আরুশি রাজীবের মুখোমুখি হয়। রাজীব আরুশির জন্যই অপেক্ষা করছিল। আরুশিকে দেখামাত্রই সে বলে ওঠে,”আরু..তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল।”
“রাজীব ভাই আপনি!”
“তোমাকে সমবেদনা জানানোর কোন ভাষা আমার জানা নেই। আঙ্কেল, আন্টি এভাবে চলে যাবেন সেটা আমার ভাবনাতেও ছিল না৷ আমি গিয়েছিলাম ওনাদের জানাজায়। কিন্তু তুমি এতটা বিমর্ষ অবস্থায় ছিলে যে তোমার সামনে দাঁড়ানোর সাহস করে উঠতে পারি নি।”
“জ্বি, আমি আরহামের থেকে শুনেছি যে আপনি গিয়েছিলেন..মনটা একটু খারাপ হয়ে গেছিল যে আপনি গিয়েও কেন আমার সাথে দেখা করলেন না৷ তবে এখন আপনার কথা শুনে ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। কোন ব্যাপার না, আপনি শুধু আমার আম্মু-পাপার জন্য দোয়া করবেন সেটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আর কিছু চাই না আমার। এখন আমি নিজের জীবন নিয়ে আশা হারিয়ে ফেলেছি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এমন কথা বলো না আরু। আঙ্কেল, আন্টি কিন্তু সবসময় তোমায় একটা সুন্দর জীবন দিতে চেয়েছিলাম। তাই তোমায় এখন শক্ত হয়ে ওনাদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। একজন বড় সাইকোলজিস্ট হতে হবে তোমায়। আন্টির স্বপ্ন ছিল, তোমার নিজের একটা চেম্বার হোক, তুমি সেটা ভুলে গেছ?”
আরুশির সব কথা মনে পড়ে গেক৷ সে বলল,
“আপনি ঠিক বলেছেন রাজীব ভাই। আমায় আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে৷ পাপাও তো চেয়েছিলেন যে আমি জীবনে সফল হই৷”
“সেটাই তো বলছি। আর তাছাড়া আমি দেখেছি আরহাম কিভাবে তোমায় সামলেছে। ছেলেটা সত্যি তোমায় অনেক ভালোবাসে।”
আরুশি এবার কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নামায়। রাজীব মলিন হেসে বলে,”আরহাম তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসে। এতটা ভালো হয়তো অন্য কেউ তোমায় বাসতে পারবে না। তুমি ওর সাথেই জীবনে সুখী হতে পারবে বলে আমার মনে হয়। আমার দোয়া তোমার জন্য সব সময় থাকবে৷ আমাকে নিজের বড় ভাই ভাবতে পারো তুমি৷ আজীবন বড় ভাইয়ের মতোই তোমাকে গার্ড দিয়ে যাব। আর জীবনে কখনো কোন বিপদে পড়লে এই ভাইকে মনে রেখো। আর কেউ তোমার বিপদে তোমার পাশে না থাকলেও এই রাজীব ভাই থাকবে।”
আরুশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে,”আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি ছোট করতে চাই না ভাইয়া। তবে আপনার এই সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।”
এরইমধ্যে আরহাম সেখানে চলে আসে। আরহাম এসেই আরুশির সামনে দাঁড়ায়। রাজীব আরহামকে দেখে বলে,”ঐ তো আরহাম এসে গেছে। যাও, নিজের স্ত্রীকে নিয়ে যাও। আর ওর খেয়াল রেখ।”
আরহাম হেসে বলে,”জ্বি,অবশ্যই। আমি ওর খেয়াল রাখবো। আর কোন দুঃখকে ওকে অতিক্রম করতে দেবো না।”
আরহামের কথা শুনে অবাক চোখে তার দিকে তাকায় আরুশি৷ অতঃপর আরহাম আরুশিকে নিয়ে নিজের সাথে বাড়িতে ফেরে।
৩ দিন পর,
আরুশি রুমে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে৷ একটু আগেই সে ভার্সিটি থেকে ফিরল। আজ আর আরহামের সাথে আসে নি সে। একপ্রকার রাগ করেই একা চলে এসেছে। আরুশি শুনেছে, আরহামের ক্লাসের ফারিয়া নামের একটা মেয়ে নাকি আজকাল সবসময় আরহামের পেছনে টিকটিকির মতো চিপকে আছে। আজ তো সে নিজের চোখে আরহামকে মেয়েটার সাথে কথা বলতে দেখেছে৷ যা দেখে আরুশির মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে। আরুশি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,”এই লোকটা কখনো শোধরাবে না..স্কুলেও এভাবে মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি করত আর এখনো…”
কথাগুলো ভাবতেই আরুশির মাথা কেমন জানি ঘুরতে লাগল৷ একে একে চোখের সামনে অতীতের সব স্মৃতি মনে পড়ে যেতে লাগলো। স্কুলজীবনে আরহামের পাশে অন্য কোন মেয়েকে দেখলে আরুশি একদম সহ্যই করতে পারত না। যদিও সে ভাবত হয়তো আরহামকে সহ্য করতে পারে না জন্যই এমন লাগে কিন্তু আসলেই কি তাই? আরুশির তার মায়ের বলা কথাগুলোও মনে পড়ল৷ আরিশা খন্দকারও তো বলেছিলেন আরুশি হয়তো নিজের অজান্তেই অনেক আগে থেকে আরহামকে ভালোবাসে। আসলেই কি তাই?
আরুশি বিড়বিড় করে বলে,”আমি কি সত্যিই আরহামকে…”
এরমধ্যেই আরহাম চলে আসে। সে আরুশির উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,”আরুশি..তুমি হঠাৎ এভাবে আমাকে না বলে একা একা বাসায় চলে এলে কেন? আমি তো তোমায় বলেছিলাম আমি তোমাকে নিয়ে আসব। তাহলে তুমি আসার সময় আমায় বললে না কেন?”
“আপনার কি আমাকে নিয়ে আসার মতো এত সময় আছে নাকি? তাই আমি একাই চলে এলাম।”
“মানে? এসব কি বলছ তুমি? আমার সময় কেন থাকবেনা? অবশ্যই সময় আছে৷ তোমাকে তো আমি বলেও ছিলাম যে নিয়ে আসব।”
“কিন্তু আমি তো ভাবলাম আপনি ঐ ফারিয়া নাকি টারিয়া ওর সাথে এত ব্যস্ত আছেন যে আমার কথা ভুলেই গেছেন।”
আরহাম কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। অতঃপর দুষ্টু হেসে বলে,”কেন? তুমি কি জেলাস নাকি?”
আরুশি আমতাআমতা করে বলে,”কেন? আমি জেলাস হতে যাব কেন? আপনার বান্ধবীর সাথে আপনি ঘুরতেই পারেন। আমার কি তাতে?”
আরহাম এবার হঠাৎ করে আরুশির হাতটা ধরে তাকে নিজের অনেক কাছে টেনে নেয়। অতঃপর বলে,”তোমার এই জেলাসি তো নতুন নয়। সেই স্কুল লাইফ থেকেই দেখে আসছি আমার পাশে অন্য কোন মেয়ে দেখলে আরু দা জেলাস গার্ল তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।”
আরুশি রেগে বলে,”কি বললেন? আমি জেলাস গার্ল? আমি জেলাস গার্ল হলে আপনি একটা প্লেবয়, ক্যারেক্টারলেস প্লাম্বার। লজ্জা করে না ঘরে স্ত্রী থাকতে অন্য মেয়ের সাথে এত ঢলাঢলি করতে? আগে নাহয় স্কুলে ছিলেন বয়স কম ছিল, অবিবাহিত ছিলেন কিন্তু এখন তো বোঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে আপনার।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২৭
“মানে তুমি স্বীকার করছ যে তুমি আমার স্ত্রী? তুমি তাহলে এই বিয়েটা মন থেকে মেনে নিচ্ছ?”
“না মানে..”
“থাক..আর কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই। আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি। এখন শুধু তোমার মুখ থেকে সবটা শোনার অপেক্ষায় আছি। বলবে তো নাকি?”
বলেই সে আরুশির থেকে দূরে সরে যায়। আরুশি বলে,”কি বলব?”
“এটাই বলবে যে, ইউ লাভ মি!”
কথাটা শোনামাত্রই আরুশির শরীর দিয়ে শীতল স্রোতের আবেশ বয়ে যায়। হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়।