অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২৯
ইয়াসমিন খন্দকার
আরুশি আরহামের বলা কথা গুলোই ভাবছে। তার মাথায় হঠাৎ করে ছোটবেলা থেকে শুরু করে এখনকার সমস্ত স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে৷ বিশেষ করে আরুশির মা-বাবার মৃত্যুর পর আরহাম যেভাবে তাকে সামলেছে তার জন্য যত যাই বলুক কমই বলা হবে। আরুশি ভাবে,”আমি তাহলে সত্যিই আরহামের প্রতি অনুভূতি ধারণ করে চলেছি এত গুলো বছর কিন্তু আমি এতোটাই বোকা যে কখনো নিজের মনের অনুভূতি বুঝতেই পারি নি৷ তবে এবার আমি সবটা বুঝতে পেরে গেছি। এখন আর কোন লুকোচুরি হবে না; আমি আরহামকে এবার নিজের মনের কথা জানাবো।”
আরুশি নিজের একটা সুন্দর শাড়ি বের করে পড়ে নেয়। যদিও সে খুব একটা বেশি শাড়ি পড়ে না তবে গত বছর ঈদে আরিশা তাকে এই শাড়িটা কিনে দিয়েছিল। তাই আজ এই শাড়িতেই নিজেকে রাঙিয়ে নিলো সে। শাড়িটা পড়ার সময় মায়ের কথা মনে পড়ে গেল তার। আরুশি ইমোশনাল হয়ে গেল৷ কারণ আরিশা তাকে শাড়ি পড়তে দেখে অনেক খুশি হতো। আরুশি বলে,”আম্মু, জানি না তুমি কোথায়। আমার কথা কি আদৌ তোমার কান অব্দি পৌঁছাতে পারবে? তুমি তো চেয়েছিলে যে আমার আর আরহামের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাক। অবশেষে দেখো, তোমার চাওয়াটাই পূরণ হতে চলেছে। তুমি যদি আজ বেঁচে থাকতে তাহলে কতই না খুশি হতে..তবে তুমি যেখানেই থাকো আমার জন্য দোয়া করে যেও। যেন আমি তোমার মতো হতে পারি। তুমি যেভাবে পাপার সাথে সুখী জীবন কাটাতে পেরেছ তেমনি ভাবে আমিও যেন আরহামের সাথে মিলে বাকি জীবনটা সুখে কাটাতে পারি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বলেই আরুশি নিজের সাজগোছও শেষ করে নেয়। এমন সময় আমান তার রুমে চলে আসে। আরুশিই আমানকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমান এসেই বলে,”আরু আপাই…আমাকে ডেকেছিলে তুমি?”
“হ্যাঁ, আসলে আমার তোমার কিছু সাহায্যের প্রয়োজন।”
“কি সাহায্য?”
অতঃপর আরুশি আমানকে কিছু কথা বলে। সেসব শুনে আমান হালকা হেসে বলে,”কোন চিন্তা করো না আপাই। তোমার এই ভাই থুরি দেবর আমান থাকতে তোমার কোন চিন্তা নেই। আমি সব কাজ ঠিকভাবে করবো।”
“ধন্যবাদ, আমান।”
আরহাম কিছু জরুরি কাজে বাইরে এসেছিল। কাজ শেষেই আবার নিজের মতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ করে আরহামের ফোন বেজে উঠতেই সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আমান ফোন করেছে। আরহাম ফোনটা রিসিভ করেই বলে,”হ্যাঁ, ভাই। বল কি বলবি।”
“ভাইয়া, আসলে একটা সমস্যা হয়ে গেছে আরু আপাই….”
“আরুশি! কি হয়েছে ওর। কি হলো চুপ করে আছিস কেন বল কি হয়েছে আমার আরুশির।”
“তেমন কিছু না। আসলে আরু আপাই একটু অসুস্থ বোধ করছে। বলছে তার কিছুই ভালো লাগছে না তোকে যেন ফোন করি।”
“ওহ আচ্ছা। ওকে চিন্তা করতে বারণ কর। আমি এক্ষুনি আসছি।”
বলেই আরহাম হন্তদন্ত হয়ে তার বন্ধুদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোরা থাক আমায় এখন বাসায় যেতে হবে। আরুশি অনেক অসুস্থ।”
আরহামের বন্ধু মুন্না বলে ওঠে,”বাহ, আরহাম তুই তো দেখছি বিয়ে হতে না হতেই বউয়ের হাতের পুতুল হয়ে গেছিস। বউয়ের অসুস্থতার কথা শুনেই ছুটে যাচ্ছিস!”
“এটা হাতের পুতুল হওয়া নয়। এটা বউয়ের প্রতি ভালোবাসা। তুই আগে বিয়ে কর তারপর তুইও বুঝতে পারবি।”
বলেই আরহাম দ্রুত স্থান ত্যাগ করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।
বাড়িতে পৌঁছেই আরহাম ছুটতে ছুটতে নিজের রুমের দিকে যায়। রুমে প্রবেশ করে দেখতে পায় রুমের লাইট অফ৷ আরহাম কিছুটা ভীত স্বরে বলে,”আরুশি কোথায় তুমি? তুমি ঠিক আছ তো?”
কিন্তু বিপরীত দিক থেকে কোন উত্তর আসে না। আরহামের ভয়টা আরো বেড়ে যায়। সে বলে ওঠে,”আরুশি..ভয় পেও না আমি এসে গেছি৷ তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।”
এমন সময় হঠাৎ করে আরুশি হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে আরহামের সামনে এসে দাঁড়ায়। আরহাম অবাক হয়ে আরুশির দিকে তাকায়। আরুশি হালকা হেসে বলে,”কি অবাক হলেন তো মিস্টার আরহাম? কেমন লাগল আমার দেয়া সারপ্রাইজ?”
“এসবের মানে কি আরুশি? আমান যে আমায় বলল তুমি অসুস্থ।”
“উহুম, এটা তো একটা চাল ছিল৷ আসলে কি বলুন তো, এতগুলো দিন পর আমি নিজের মনের গোপন অনুভূতি গুলো বুঝতে পেরেছি তাই কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবো বুঝে উঠতে পারি নি৷ আর তাই…আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই আরহাম”
“হুম বলো। তোমার কথা শোনার জন্যই তো আমি এতদিন থেকে অপেক্ষা করছি।”
“আমি আপনাকে..”
“আমাকে?”
“ভালোবাসি..ভীষণ ভালোবাসি..সেই ছোটবেলা থেকে…”
কথাটা শোনার পর আরহাম আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা করল না। আরুশিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আরুশিও আরহামের সাথে সমান প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকে। তাদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচে যায়। ধীরে ধীরে আরহামের স্পর্শ আরো গভীর হয়৷ সে নিজের পরণের টি-শার্ট খুলে ছুড়ে মারে। আরুশির শাড়ির আচলটাও সরিয়ে দেয়। আরুশির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,”এত দিন পর যখন আমাদের মধ্যকার সকল ভুল বোঝাবুঝি, দ্বন্দ মিটে গিয়ে ভালোবাসার রঙ এসেছে তখন আমি চাই এই রঙে ভেসে যেতে। তুমি আমার সাথে এই ভালোবাসার রঙে ভেসে যেতে প্রস্তুত তো আরুশি?”
আরুশি কাতর স্বরে বলে,”হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত..”
আরহাম এবার আর অপেক্ষা করে না। আরুশিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ফেলে। অতঃপর আরুশির উপর শুয়ে পড়ে৷ আরুশির শরীর থেকে আবরণ সরাতে থাকে এবং নিজেও সম্পূর্ণ আবরণহীন হয়। অতঃপর তারা দুজনে হারিয়ে যায় ভালোবাসার এক অতল সাগরে। পূর্ণতা পায় তাদের সম্পর্ক!
আরহাম আরুশিকে যত্ন সহকারে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখে। তাদের দুই আত্মা ইতিমধ্যেই মিলিত হয়েছে। আরহাম আরুশির কপালে একটা চুমু খেয়ে বলে,”আই লাভ ইউ আ লট আরুশি খন্দকার। আই লাভ ইউ।”
“আমিও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি আরহাম।”
“বেশ, এতই যখন ভালোবাসো তখন আজ থেকে আর আপনি নয় শুধু তুমি..বুঝলে?”
“আচ্ছা, চেষ্টা করব। তবে একটু সময় লাগবে।”
“হুম, লাগুক। তবে আমি চাই, আমাদের মাঝে যেন একটুও দূরত্ব না থাকে।”
বলেই সে আরুশির হাত নিজের কব্জায় নিয়ে তার আঙুলে আঙুল মেলায়। আরুশি বলে ওঠে,”জানো, ছোট বেলা থেকে আমার ভাগ্যটা বেশ খারাপ। আমি যাকেই ভালোবেসেছি সেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তুমি কখনো আমায় ছেড়ে যাবে নাতো?”
“কখনোই না। নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি তোমার পাশে থাকব।”
আরুশি নিজের হাতের কনিষ্ঠ আঙুল এগিয়ে দিয়ে বলে,”পিংকি প্রমিস?”
“আচ্ছা, পিংকি প্রমিস।”
বলে দুজনেই হেসে ওঠে। একে অপরের মুগ্ধতায় এভাবেই হারিয়ে যায় তারা।
১ বছর পর,
সময় আর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। ধীরে ধীরে ৩৬৫ দিন তথা এক বছর পেরিয়ে গেছে। এই এক বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আরহাম ইঞ্জিনিয়ারে নিজের গ্রাজুয়েশন শেষ করে এখন স্নাতকোত্তরের জন্য পড়ছে। আরুশিও এবার গ্রাজুয়েট হতে চলেছে। আজকেই তার গ্রাজুয়েশনের দিন। দুজনের সম্পর্ক এখন ভীষণ সুন্দর। আরুশির স্বপ্ন এখন একজন সাইকোলজিস্ট হওয়া, আরহাম তার স্বপ্নপূরণে পাশে থাকতে চায়।
এদিকে নির্ঝর খান এখন আরুশিকে মেনে নিয়েছেন পুত্রবধূ হিসেবে। আফিফা খানও সবমিলিয়ে ভীষণ খুশি। নির্ঝর খান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খুব শীঘ্রই সায়ন-সায়রার সাথেও সম্পর্ক মেরামত করবে। এজন্য তাদের অনুরোধ করে লন্ডন থেকে ডেকেও পাঠিয়েছে। তারা শীঘ্রই আসবে জানিয়েছে।
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ২৮
আফিফার সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করে নির্ঝর। সব শুনে আফিফা বলে,”যাক, সবকিছু ভালোর দিকেই এগোচ্ছে। এতদিন পর আমাদের পরিবারের সবকিছু ঠিক হতে চলেছে। আল্লাহর কাছে এখন আমার একটাই প্রার্থনা আমাদের পরিবারে যেন আর নতুন কোন অশান্তি না আসে।”