অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৩৯
ইয়াসমিন খন্দকার
আরুশি নিজের রুমে এসে বসে নিজের আর আরহামের একসাথে একটা ছবি দেখছিল৷ আরুশির শক্ত মনোবল আজ ভেঙে পড়েছে৷ জাঈদের বলা কথাগুলো তাকে ভাবাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই সে নিজের ছেলেকে তার বাবার পরিচয় দেয় নি। তার থেকে লুকিয়ে রেখেছে তার বাবা কে। জাঈদ একটু বড় হওয়ার পর যখন এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছে তখন বারবার এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? একদিন না একদিন তো তাকে সমস্ত সত্যটা জাঈদকে জানাতেই হবে। তখন জাঈদ কেমন ব্যবহার করবে? সে কি স্বাভাবিক ভাবেই সবটা মেনে নেবে? তার কি আরুশিকে দোষী মনে হবে যে আরুশি তাকে তার বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে?
আরুশির মনে এসব ভাবনা আসতেই সে বলে,”নাহ, আমি কোন ভুল করিনি৷ আমি যা করেছি তা আমার যায়গায় থাকলে অন্য যে কেউ থাকত৷ তাছাড়া ঐ টক্সিক পরিবেশে আমার ছেলে ভালো থাকত না। ওর একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের জন্য এটা যথেষ্ট ছিল।”
বলেই আরুশি নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করায়।
আমিনা ও আফিফা খান মিলে একসাথে আমিনার জন্মদিনের কেক কাটতে নিচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ করে তাদের রুমের লাইটটা নিভে যায়। দুজনেই ভীষণ অবাক হয়। এরপর আবারো হঠাৎ করেই ঘরের লাইটটা জ্বলে ওঠে। আর সাথে সাথেই দুজনে অবাক হয়ে তাকায়। কারণ সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আমান, সায়রা এবং আরহাম। তাদের তিন জনের মুখেই হাসি এবং হাতে গিফট। তিন জনেই এক সাথে বলে ওঠে,”হ্যাপি বার্থডে আমিনা বুড়ি..”
আমিনা আনন্দে নেচে উঠে বলে,’তাহলে তোমাদের আমার বাতদে মনে চিল? তাহলে আগে বলো নি কেন?’
আরহাম এগিয়ে এসে আমিনার কপালে চুমু খেয়ে বলে,”আগে বললে কি এই পাকা বুড়ি টাকে এভাবে চমকে দিতে পারতাম?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তোমরা চবাই কুব ভালো। আই লাভ ইউ অল।”
বলেই সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। সবাই কেক কাটতে উদ্যত হয় এর মাঝে নির্ঝর খানও সেখানে চলে আসেন। তাকে দেখেই সায়রা এগিয়ে গিয়ে বলে,”আরে মামা আপনিও আসুন আমাদের সাথে। আপনার নাতনীর জন্মদিন আজ। ওর জন্য দোয়া করুন।”
নির্ঝর খান গম্ভীর মুখে এগিয়ে এসে আফিফা খানের পাশে দাঁড়ান। কিন্তু তিনি আফিফা খান এর পাশে দাড়াতেই আফিফা খান সরে আসেন একটু দূরে। যা দেখে নির্ঝর খান দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। এরপর সবাই মিলে কেক কেটে আমিনার জন্মদিন পালন করে।
আমিনা কেক কাটার পর সবাইকে বলে,”এবার তোমরা চবাই আমার দন্য(জন্য) যা গিপট এনেচ আমায় দাও।”
সবাই একে একে আমিনার হাতে গিফট তুলে দেয়। আরহাম সবার শেষে আমিনার হাতে একটা বার্বি সেট তুলে দিয়ে বলে,”এই দেখো তো এটা তোমার পছন্দ হয় কিনা।”
আমিনা বলে,”ওয়াও বড় আব্বু আই লাভ ইউ। আমার খুব পচন্দ হয়েছে। এটাকে আমি আমার মেয়ে বানাবো।”
আফিফা খান হেসে বলেন,”তা তুমি তোমার মেয়ের নাম কি রাখবে?”
আমিনা হেসে বলে,”আমার মেয়ের নাম আমি রাকবো আরু।”
নামটা শোনামাত্রই উপস্থিত সবার মুখের ভাবভঙ্গি বদলে যায়। নির্ঝর খান ও সায়রার মুখভঙ্গি শক্ত হয়। যখন আমান ও আফিফা খানের মুখে হতাশা ও দুঃখের ছাপ ফুটে ওঠে। আরহাম অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আমিনা একদম হতভম্ব হয়ে পড়ে৷ আফিফা খান নির্ঝর খানের দিকে তাকিয়ে বলেন,”আজ শুধুমাত্র তোমার জেদের কারণে আমার পরিবার টার আজ এই অবস্থা। এসবের জন্য আমি তোমায় কখনো ক্ষমা করবো না।”
বলেই তিনিও আরহামের পেছন পেছন যায়। এদিকে হতভম্ভ আমিনা তার বাবা আমানের কাছে গিয়ে বলে,”আমার দেয়া নামটা কি চুন্দর হয়নি বাবা? চবাই এভাবে রাগ করচে কেন?”
আমান নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”না, মা তোমার দেয়া নামটা অনেক সুন্দর হয়েছে। কিন্তু..তুমি জানো এই নামটা কার?”
“কার?”
“আমাদের সবার খুব প্রিয় একজনের।”
এমন সময় নির্ঝর বলে ওঠে,”ওকে ভুলভাল কেন শেখাচ্ছ আমান? নিজের মেয়েকে একটা খু*নির মেয়ের সম্পর্কে বলতে তোমার কি দ্বিধা? ওর তো জানা দরকার এই নামটা কার। দিদিভাই,তুমি নিজের পুতুলের এই নাম রাখবে না। কারণ এই নামটা এমন একজনের যার বাবার কারণে তোমার নানি আজ আমাদের মাঝে নেই।”
আমান রাগী স্বরে বলে,”ড্যাড, প্লিজ। একটা ছোট বাচ্চার মনে এভাবে বিষ ঢুকিও না”
সায়রা আমিনাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,”দুঃখিত, তোমাদের কথা কাটাকাটি করতে হলে একান্তে করো আমার মেয়ের সামনে না। আমার সন্তানের সামনে এসব টক্সিসিটি আমি মেনে নিতে পারব না৷ এসব একটা বাচ্চার মানসিকতার ওপর বাজে প্রভাব পড়ে সেটা তোমরা জানো না?”
বলেই সে আমিনার দিকে তাকায়। আমিনা সায়রাকে জিজ্ঞেস করে,”গ্রান্ডপা এসব কি বলছ মা? সত্যিই কি আরু নামটা পচা কারো?”
“এসব তোমায় জানতে হবে না আমিনা। তুমি এখন আমার সাথে চলো। তোমার স্কুলের তো অনেক পড়া আছে সেসব কমপ্লিট করতে হবে।”
বলেই সায়রা নিজের মেয়েকে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
আরহাম নিজের রুমে বসে নিজের সাথে আরুশির একত্রে তোলা একটি ছবি দেখে আরুশির ছবির উপর হাত বুলিয়ে গুণগুণ করে বলে ওঠে,
“ওহে কি করিলে বলো পাইব তোমারে?
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে কি করিলে বল পাইব তোমারে?
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ
এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে
আমার সাধ্য কিবা তোমারে
দয়া না করিলে কে পারে?
তুমি আপনি না এলে
কে পারে হৃদয়ে রাখিতে?
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাইনা?”
অতঃপর হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,”কেন বারবার না চাইতেও তোমার কথা আমার মনে পড়ে যায় আরুশি? তুমি তো আমায় ছেড়ে চলে গেছ কিন্তু তোমার স্মৃতিগুলো যে আমায় সুন্দর ভাবে বাঁচতে দিচ্ছে না। আমি নিজের জীবনে একটুও শান্তি খুঁজে পাচ্ছ না? আচ্ছা, তুমি কেমন আছ আমায় ছাড়া? আমার কথা কি তোমার একটুও মনে পড়ে না? এই ৫ বছরেও কি তোমার অভিমান একটুও কমে নি? একবারো তোমার মনে হয় নি যে তোমার আমার সাথে দেখা করা উচিত?”
বলেই আরহাম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এদিকে আফিফা খান বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের ছেলেকে এভাবে তড়পাতে দেখে কষ্ট পান। এর মাঝেই হঠাৎ করে আরহামের ফোন বেজে ওঠে। আরহাম ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে বলে,”কি খুলনায়?”
“বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসে..
” জ্বি, আপনাকে একটা সফটওয়্যার সেমিনারে অংশ নিতে খুলনায় যেতে হবে৷ ওখানে সুন্দরবনকে ঘিরে একটা নতুন প্রজেক্ট উদ্ভাবনের জন্যই এই সেমিনারের আয়োজন।”
“কবে যেতে হবে?”
“২ দিন পরই সেমিনার। তাই ভালো হয় যদি আপনি আজকেই রওনা দেন।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে ”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৩৮
আফিফা খান রুমে এসে বলেন,”কার সাথে কথা বললে আরহাম?”
“আমার এক কলিগ। নতুন একটা প্রজেক্টের সেমিনারের জন্য আমায় খুলনা যেতে হবে।”
“ওহ আচ্ছা।”
আরহাম তার ঘরে টাঙানো বাংলাদেশের একটা মানচিত্রে খুলনার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আসছি..”