অশ্রুবন্দি পর্ব ২৪

অশ্রুবন্দি পর্ব ২৪
ইসরাত জাহান ফারিয়া

সন্ধ্যা নামতে না নামতেই সৃজাকে কাছে পাওয়া দায় হয়ে গেল। একবার রান্নাঘরে, একবার ছাদে, আবার কখনো শয্যাশায়ী বাবার ঘরে ছুটোছুটি চলছে মেয়েটার। ইহসান এলিজার সাথে বসে টিভি দেখার বাহানায় চুপচাপ বসে এসব দেখল। সবার খেয়াল রাখছে রাখুক না, কিন্তু তাই বলে ওকে ভুলে যাবে? একবারও এসে দেখা দেবে না? জিজ্ঞেস করবে না ওর কিছু প্রয়োজন আছে কিনা?
অন্তত আছে না গেছে সেটা তো দেখবে! সে বেশ অসন্তুষ্ট হলো, আকাঙ্খা নিয়ে কাতর চোখে মেয়েটাকে একবার কাছে পাওয়ার প্রত্যাশা করল। কিন্তু এক পর্যায়ে, যখন দেখল ওর অস্তিত্বই মেয়েটা মনে রাখছে না, তখন চুপচাপ উঠে শোবার ঘরে চলে গেল। পকেটে ভ্রাইবেট হতেই ফোন বের করে দেখল, মেসেজ এসেছে কয়েকটা। আননোন নাম্বারে। ম্যাসেজগুলো পড়ার পর ইহসানের বুকে কম্পন আর ঠোঁটে বিচিত্র হাসি খেলে গেল। পরক্ষণেই কঠিন
হলো চেহারা। ফিরতি ম্যাসেজে সে লিখল,

“তোর সবই আমার জানা। কিন্তু ভুলে যাস না, তুই যা
চাস— তা আমার। আর যা আমার, তা আমারই থাকবে। আর যদি তাতে হাত বাড়াস, হাতটাই থাকবে না। সে তুই যে-ই হোস না কেন!”
সেন্ড এ ক্লিক করে ম্যাসেজটা পাঠিয়ে দেয়ালে একটা ঘুষি বসাল ইহসান। তখনি চোখ চলে গেল দরজার দিকে। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখল, সৃজা নীলু ফুপির সাথে পরোটা বেলতে বেলতে দুষ্টুমি করছে, হাসছে। পড়াশোনায় মগ্ন থাকা এলিজাকে ময়দা মাখিয়ে জ্বালাচ্ছে ইচ্ছে করে। ইহসানের বুক পিত্তি জ্বলতে জ্বলতে কয়লা হয়ে গেল। ইচ্ছে করল হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে শাসন করে জিজ্ঞেস করে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি এখানে হাঁদার মতো বসে আছি, আর তুই ডানা মেলে সারা ঘরময় ঘুরছিস! তোর যে একটা বর আছে, তার কোনো খবর আছে? বেঁচে আছে না ভোগে গেছে তা জানিস?”
কিন্তু এই প্রশ্নটা সে করতে পারবে না৷ বউয়ের মন খারাপ হয়ে যাবে। সে তো সৃজার মন ভালো করতেই নিয়ে এসেছে, তাই এসব বলা ঠিক হবে না। একবার সুযোগ পাক, এই মেয়েকে হাড়েহাড়ে বুঝিয়ে দেবে বরের প্রতি কেমন আচরণ করতে হয়! মনে মনে বিড়বিড় করল ইহসান। রাতের খাবারের সময়েও সৃজার ব্যস্ততা কমল না।

এলিজা, নীলু ফুপির সাথে গল্প করছিল, রান্নার প্রশংসা করছিল আর একগাদা পোলাও, মাংস ইহসানের পাতে তুলে দিয়ে ওর পেটের বারোটা বাজানোর ধান্ধা করছিল। শ্বশুরবাড়িতে প্রথম জামাই আদর খেতে আসা ইহসান বিগলিত চিত্তে নীলু ফুপি আর এলিজার কথার জবাব দিলেও সৃজার কোনো কথার জবাব দিলো না, এড়িয়ে গেল। বিষয়টা
সৃজা কয়েকবার খেয়াল করল বটে, কিন্তু বিশেষ পাত্তা
দিল না। এলিজাই কয়েকবার আড়চোখে দেখল ইহসানকে। ইশারায় বোনকে কয়েকবার বোঝালও,
কিন্তু সৃজার বোধগম্য হলো না।
খাওয়া-দাওয়া, আড্ডার পর ঘুমোনোর সময় ইহসান নিজের মতো উঠে গিয়ে শোবার ঘরের বারান্দায় দাঁড়াল। ঠান্ডা বাতাস বইছে, শহরের কোলাহল কিছুটা কমে এসেছে। আকাশে উজ্জ্বল থালার মতো চাঁদ উঠেছে, চারপাশ মোহময় হয়ে উঠেছে। এমন সময় ঘর থেকে সৃজার
বিচলিত গলা শোনা গেল,

“ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন, বাইরে ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। ঘরে এসো।”
ইহসান ঘরে আসা তো দূর জবাবই দিলো না। উল্টো চেয়ারে বসে বাইরে দূরদৃষ্টি দিলো। যেন চন্দ্রসুধা উপভোগ করবে। সৃজা বিছানা গোছাতে গোছাতে আরো কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু প্রতুত্তরে নীরবতা ছাড়া কিছুই উপহার পেল না। এবারে সৃজা অবাক হলো ওর আচরণ দেখে। বুঝল না কেন ইহসান ওমন আচরণ করছে! কোনো কারণে কি রাগ? সৃজা ইতস্তত করতে করতে ওড়না ঠিকঠাক করে বারান্দার দরজায় এসে দাঁড়াল। এরপর ধীরপায়ে হেঁটে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে চুলে বিলি কাটলো। নরম হাতের মুঠোয় নিয়ে টেনে দিলো, কপালে আঙুল বুলাল, টিপে দিলো। এরপরেও প্রতিক্রিয়া না পেয়ে সৃজা অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে মাথাটা পেছনে ঝুঁকিয়ে অভিমানী গলায় জিজ্ঞেস করল,

“রাগ করেছ?”
ইহসান চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘাড় না ঘুরিয়েই বলল,
“না।”
“তাহলে এভাবে চুপচাপ হয়ে গেলে কেন?”
“তোর তো সময় নেই আমার জন্য, তাই চুপ থাকাই ভালো!”
সৃজা জিভ কেটে অপ্রস্তুত হাসল,
“আচ্ছা বাবা, এজন্য মহাশয়ের রাগ? আসলে আমি
ভুলেই গেছিলাম যে….”
ইহসান ওর কথা শেষ করতে না দিয়েই এবার সরাসরি চোখে চোখ রেখে কঠিন স্বরে বলল,
“তুই ভুলে গেছিলি আমার উপস্থিতি, সিরিয়াসলি?তোর থেকে এমন আচরণ আশা করিনি আমি ”
সৃজা থেমে গেল, এ কথা কখন বলল সে? কোন কথাকে
কী বানিয়ে দেয় এই লোক, কথা বলাই দুষ্কর ওর পক্ষে। ইহসানের চোখে একধরনের অভিমান স্পষ্ট। ওর বুকটা ধক করে উঠল। বুঝল লোকটার রুক্ষ আচরণের মানে। আসার পর থেকে ফুপি, এলিজার পেছনে ছুটতে ছুটতে ইহসানকে সময়ই দিতে পারেনি সে, আগামীকাল চলে যাবে তার আগে বউয়ের থেকে এমন অনীহা মূলক আচরণ পাওয়ায় মানুষটা ক্ষেপে আছে, ক্ষ্যাপাটা অবশ্য স্বাভাবিক।

হুট করে কী যে হলো! ঘুরে এসে ইহসানের কোলের উপর বসে পড়ল সৃজা। এরপর গলা জড়িয়ে কপালের উপর থেকে চুল সরিয়ে টুপ করে চুমু বসিয়ে দিলো ওখানে। ইহসানের রাগ তখনো কমেনি। সে সরিয়ে দিতে চাইলো ওকে। সৃজা নাছোড়বান্দার মতো ওর বুকে মুখ গুঁজে
কাতর স্বরে বলল,
“হে পরম শ্রদ্ধেয় স্বামী মহাশয়! আপনার প্রতি আমার
চরম অবহেলা ও বেখেয়ালিপনায় আমি অপরাধী। স্ত্রী
হয়ে আপনার যত্ন না নেওয়া, সময় না দেওয়া—এ যে ঘোর অন্যায়! দয়া করে এই অধম হতভাগীকে ক্ষমা করুন। আপনি চাইলে যেকোনো শাস্তি দিতে পারেন, আমি হাসিমুখে গ্রহণ করব। তবে দূরে ঠেলে দেবেন না, নইলে আমি প্রতিবাদস্বরূপ এখানে বসে অনশন, ধর্মঘট করব!”
ইহসান সৃজার নাটক দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। কিছু একটা ভাবল ভ্রু উঁচিয়ে। শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়। হঠাৎ করেই সৃজাকে দস্যুর ন্যায় চেপে ধরল একহাতে, শক্ত করে। অন্য আরেকটা হাত ঢুকিয়ে দিলো কামিজ গলিয়ে উষ্ণ উদরে। ঠাণ্ডা পুরুষালি রুক্ষ হাতের ছোঁয়া পড়তেই সৃজা কেঁপে উঠল। ইহসান বাঁকা হেসে নিচু স্বরে বলে,

“তবে কঠিন শাস্তির জন্য প্রস্তত হ।”
“ক কীসের কঠিন শাস্তি…”
ভীতি নিয়ে শুধাল সৃজা। ইহসানের ওর কণ্ঠের কাঁপুনিটা টের পেল। ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল সৃজাকে,
“নিশ্চয় বুঝেছ, কিন্তু নাটক করছ, তাই না? আর যদি সত্যিই খুকি তুমি না বুঝে থাকো, তাহলে খুলেই বলি, এইযে তুমি, আমার বিবাহিত, কাগজে-কলমে লিখে নেওয়া বউ, আমার এখন তোমাকে প্রয়োজন।”
সৃজা বিষম খেক৷ মুডে থাকলে এই লোক ‘তুই’ থেকে ‘তুমিতে’ চলে আসে। উঠে দাঁড়াল বিপদ বুঝে। ঢোক গিলে আমতাআমতা করে বলে,
“প্রয়োজন মানে…”
“মানে তোমার নরম-তুলতুলে শরীরটাকে পিষ্ট করতে চাচ্ছি, আদর দিতে চাচ্ছি। তোমার চোখের গভীরে ডুবে তোর নিঃশ্বাসের উষ্ণতায় হারিয়ে যেতে চাচ্ছি, তোমাকে ছুঁয়ে মরে যেতে চাইছি…আরো ভালো করে বুঝতে চাইলে, বিছানায় চলো।”
চটে যাওয়া কণ্ঠে কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়াল ইহসান।

সৃজা নার্ভাস ভঙ্গিতে বলে,
“অনেক রাত হয়েছে, ঘুমাবে চলো।”
“শাস্তি বাকি আছে, সোনা৷ রাত তো সবে শুরু হলো।
ছয়দিন রেখে যাব, শোধ নেব না?”
একপাক ঘুরে এসে কোলে তুলে নিলো হতভম্ব সৃজাকে। এরপর সেভাবেই বারান্দার দরজা আটকে, আলো নিভিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো ওকে। অস্থির হয়ে পরণের টি-শার্ট আর প্যান্টের বেল্ট খুলতে খুলতে গভীর চোখে সৃজাকে দেখল সে স্ট্রিট লাইটের হলদে আলোয়। গোলাপ জোড়া ওষ্ঠে ডুবে গিয়ে মাতাল মাতাল কণ্ঠে বলতে লাগল,
“তোকে ছুঁয়ে, আঁকড়ে ধরে, তোর শ্বাসের গরম পরশ গায়ে মেখে আমি তোর কাছে হারিয়ে যেতে চাই, তোর ভেতরে বিলীন হয়ে যেতে চাই! তুই আমার—শুধুই আমার! তোর গায়ের গন্ধ, ত্বকের নরম উষ্ণতা, তোর ভেজা ঠোঁট—সব আমার অধিকারে রাখতে চাই জান, সারাজীবন।”
সেই রাতে ইহসান চূড়ান্ত পাগলামি করল। সৃজার মনে হলো সেদিনের লাউঞ্জের মাতাল ইহসানের থেকেও বেশি অস্থির, অবাধ্য, উচ্ছৃঙ্খল আজকের এই ইহসান। শেষরাতের দিকে ইহসানের ফোনে টুং করে নোটিফিকেশনের শব্দ হলো।

সৃজা হকচকিয়ে উঠতেই ইহসান কৌশলে ফোনটা হাতে তুলে দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেয়,
“আমি যা চাই, তা কেড়ে নিতে জানি। কাড়তে না পারলেও, ধ্বংস করতে জানি।”
ইহসানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে৷ পরক্ষণেই বিদ্রুপাত্মক হাসি ফুটে উঠে। সৃজা অস্ফুটস্বরে জিজ্ঞেস করতেই সে ফোন সুইচড অফ করে দেয়। ঘুমজড়ানো স্বরে বলে,
“শোধবোধ করতে চেয়েছিলাম, দুইদিনেরও হলো না, ধুর…”
লজ্জা কাতুরে সৃজা বেফাঁস লোকটার ঠোঁট চেপে ধরল দুই হাতে। গরম নিঃশ্বাসে তপ্ততা ওকে ছুঁয়ে গেল শিরশির করে। সৃজা ভেবে পেল না, এতটা সুখ পাওয়ার মতো যোগ্য কি-না সে!

সূর্যের প্রথম রশ্মি খুঁটে খুঁটে রুমের ভেতরে ঢোকে, কিন্তু ইজহান এবং ইস্মির ঘরে অন্ধকারই যেন সঙ্গী হয়ে থাকে। ইজহান মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে। তার চোখ দুটো টকটকে লাল, পলক পর্যন্ত পড়ছে না। গলার মধ্যে যেন গুমোট একটা ভারী অনুভূতি আটকে আছে, কোনো শব্দ তার পেটে জমে থাকে, কোনো আওয়াজ বের হয় না। পাশেই পড়ে আছে দুটো খালি কাচের বোতল—তরলের কিছুই বাকি নেই। সবটাই গ্রোগাসে গিলে নিয়েছে ইজহান।
ইস্মি বিছানায় শুয়ে, ঘুমোয়নি সারারাত।একবুক যন্ত্রণা ওকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। কিন্তু চোখ বন্ধ করে চুপচাপ অন্ধকার জগতে বিচরণ করছে। অশ্রু শুকিয়ে গালে লেপ্টে আছে। মেঝেতে বসা ইজহান হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়, ভারী পায়ে চলে আসে বিছানার কাছে। ইস্মিকে এলোমেলো, আদর স্বরে ডাকে। মেয়েটা শোনে তবুও হেলদোল করে না। ইজহানের রাগ হয়, চেষ্টা করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ব্যর্থ হয় সে। ইস্মির নতুন রুপ তাকে গর্জন করতে বাধ্য করে। হতাশ শ্বাস ফেলে ইস্মি চোখ খুলে তাকায়।
উঠে বসে শাড়ি কাপড় ঠিক করে। মৃদুস্বরে বলে,

“জি বলুন।”
“অ্যাঁইই, তুই দাসীবাঁদি? এমন আচরণ করবি না আমার সাথে।”
“দুঃখিত, করব না।”
এ কথা শোনার পর, ইজহান যেন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তার হাতের মুঠি শক্ত হয়, কিন্তু ইস্মির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে ওর গাল চেপে বলে,
“অবাধ্য হোস না, মেরে ফেলব।”
“মৃত মানুষকে মরার ভয় দেখাবেন না, আমার হারানোরও তেমন কিছুই নেই।”
ইস্মি চোখের কোণ দিয়ে গাঢ় এক দৃষ্টি দেয়।
এ কথা শোনার পর ইজহানের বুকে যন্ত্রণা হয়। সে
পুরোটা জীবন নিজের কাছে, আগলে রাখতে চেয়েছে ইস্মিতাকে। এটা কী তার ভুল? ইস্মিতা কেন ওকে বুঝতে চাইছে না, বারবার বুক চিঁড়ে ফেলা কথা বলছে? ও বোঝে না ইজহানের কতটা ব্যথা লাগছে? কেন বোঝে না ওকে ইস্মিতা, কেন? ইজহান তার লম্বা-চওড়া দেহটার ভর
রাখতে না পেরে ইস্মির উপর ঢলে পড়ে। ইস্মি চিৎকার
দিতে গিয়েও পারে না, তবে জেদ দেখায়,

“লিভার-কিডনি যখন অকেঁজো হয়ে যাবে তখন যন্ত্রণা কাকে বলে টের পাবেন। মৃত্যু যখন হাতছানি দিবে,
আপনার এসব দুর্গতি সৃষ্টিকারী পানীয়
বাঁচাতে পারবে না আপনাকে।”
“আমায় তো ভালোবাসিস না, মরে গেলে তুই বাঁচবি। দোয়া কর, যাতে দ্রুত মরে যাই।”
ইস্মি বিরক্ত হয়,
“অলক্ষুণে সব কথা, নিজের ভাবনাকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করুন।”
ইজহান তীব্র হাসি দিয়ে বলল,
“ধোঁকাবাজ! সারারাত আমার হৃদপিণ্ডে ছুরিকাঘাত করলি, আর এখন মিথ্যে ভালোবাসার নাটক শুরু করেছিস? ঠকবাজ মহিলা! যদি সত্যিই ভালোবাসিস, তাহলে চিতায় ঝাঁপ দেওয়ার মতো আমার সঙ্গে কবরে চলে আসিস, দেখব তোর ভালোবাসার শক্তি কতটা!”

ইস্মির মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় না, সব যেন গলার ভেতর আটকে গেছে। অদ্ভুত এক অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ চলছে তার মনে। ইজহান ওর সাড়া না পেয়ে আবারো ব্যাকুল হয়ে বলে,
“তোর আগে অতোটা ভালো আমি কাউকে বাসিনি৷ ওহ না, বেসেছি একজনকে৷ আমার মাকে— জন্মদাত্রীকে। কিন্তু সে থাকতে আমায় কখনো ভালোবাসেনি।”
ইজহান নিজের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। তার কণ্ঠে বিষণ্ণতা, ক্ষোভ আর কষ্ট মিশে। একটু থেমে আবারো বলে,

অশ্রুবন্দি পর্ব ২৩

“এখন তোকে ভালোবাসি, কিন্তু তুই আমায় মন থেকে ভালোবাসছিস না। দেখ, আমার বুকটা ছিঁড়ে, সব কিছুই ছাই হয়ে যাচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না, কিচ্ছু না। মা আমাকে ভালোবাসেনি, তুইও বাসছিস না৷ তোরা কেন মুখ ফিরিয়ে নিস, আমার থেকে বল তো! ইস্মিতা, স্বাভাবিক হও না…তোমার এই অচেনা রূপে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে!”

অশ্রুবন্দি পর্ব ২৫