অশ্রুবন্দি পর্ব ২৫
ইসরাত জাহান ফারিয়া
ইজহান নিজের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না।
তার কণ্ঠে বিষণ্ণতা, ক্ষোভ আর কষ্ট মিশে। একটু থেমে আবারো বলে,
“এখন তোকে ভালোবাসি, কিন্তু তুই আমায় মন থেকে ভালোবাসছিস না। দেখ, আমার বুকটা ছিঁড়ে, সব কিছুই ছাই হয়ে যাচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না, কিচ্ছু না। মা আমাকে ভালোবাসেনি, তুইও বাসছিস না। তোরা কেন
মুখ ফিরিয়ে নিস, আমার থেকে বল তো! ইস্মিতা,
স্বাভাবিক হও না…তোমার এই অচেনা রূপে আমার
দম বন্ধ হয়ে আসছে!”
ইজহানের ব্যাকুল কণ্ঠস্বর শুনে ইস্মির বুক কাঁপে।ঠোঁট টেনে হাসি আনার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে বলে,
“আমি স্বাভাবিকই আছি ইজহান শেখ।”
ইজহানের রগে রগে ছেয়ে গেল বিতৃষ্ণা। ইস্মিতা
কি সত্যিই এতটা কঠিন হয়ে গেছে একদিনের ব্যবধানে যে ওর সাথে এভাবে কথা বলতে একটুও বাঁধছে না? মেয়েটার চোখের ভেতর একটুও ভয় নেই, কোনো উষ্ণতাও নেই। বরং একধরনের মৃত কাঠিন্য ঝিলিক দিচ্ছে। ইজহান আঙুলের চাপ বাড়িয়ে ওর মুখটা আরো কাছে টেনে আনল, ঠোঁটের ওপর দাঁত চেপে বলল,
“তোর সাহস এত কেন বাড়ছে?”
ইস্মি নিস্তেজভাবে হাসল,
“সাহস বাড়লে কি আমি আজ এখানে থাকতাম, বলুন? আমি ভঙ্গুর মানুষ, ভঙ্গুর মানুষদের সাহস থাকতে নেই।
তবে ভেঙ্গেচুরে গেছি বলেই হয়তো কেন জানি কিছু নিয়ে ভয় হচ্ছে না।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দীর্ঘশ্বাস বুকে চাপা দিয়েই ইস্মি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। রোদে চকচক করছে চারিদিকে। বেলা অনেক হয়েছে, খাওয়া হয়নি ইজহানের। ক্ষিধে সহ্যের ক্ষমতা শূন্য এই লোকের, জানে সে। ঝামেলা শুরু করতে দু’মিনিটও নেয় না৷ তবে আজ ভিন্ন। হয়তো ইস্মির কঠিন আচরণটাকেই হজম করতে পারছে না, তাই পেটের কথা মুখে আনছে না। ইস্মি উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো, এরপর চেঞ্জ করে আরেকটা শাড়ি পরল। ইজহান অস্পষ্ট চোখে ওর শাড়ি পাল্টানো দেখে ঢোক গিলল দু’বার। তৃষিত হলো কিন্তু কাছে ডাকল না ইস্মিকে। অভিমানে যেন তার মন অবরুদ্ধ হয়ে আছে। চেঞ্জ করে ইস্মি দরজার দিকে যেতেই হুড়মুড় করে সে উঠে দাঁড়াল। ইস্মিকে পেছন থেকে ফিসফিস করে ডাকল,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
পা উঁচু করে দরজার সিঁটকিনিতে হাত দিতে দিতে ইস্মি উত্তর দিলো,
“কোথায় আবার যাব? বেলা কত হয়েছে খেয়াল আছে? নাস্তা তো করেননি, আপনার তো এসময়ে গরম কফি চাই। সেটাই বানাতে রান্নাঘরে যাচ্ছি, পালাচ্ছি না…”
এই অবজ্ঞা, এই শীতলতা ইজহানের মস্তিষ্কে বাজের মতো আঘাত করল। রাতে দু-বোতল ড্রিংক নিয়েছে সে, তারই প্রভাবে বা ইস্মির আচরণের ধাক্কা না নিতে পেরে তার আচমকা মাথা চক্কর দিল, পা পিছলে গেল। ইস্মি প্রায় ছুটে এসে ধরতেই টলতে টলতে সে মেঝেতে বসে পড়ল। বৌয়ের প্রতি জমা অভিমানটা হুট করে পালিয়ে গেল কোথায় যেন! ইজহান হাত বাড়িয়ে ইস্মির শাড়ির আঁচল টেনে ধরল, কণ্ঠস্বর কাঁপল,
“আমাকে আদর দিয়ে যাও…”
ইস্মি থেমে গেল। এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল,
“খাবেন না? ক্ষিধেয় তো চোখমুখ শুকিয়ে আছে।”
ইজহানের হাতের মুঠো শিথিল হয়ে এলো,
“আমার সবকিছুই খরা হয়ে আছে। খরা কাটাতেই আদর ভিক্ষে চাইছি, এখন কি এটা নিতেও তোর পায়ে ধরতে হবে? ভিখিরি বানিয়ে শিক্ষা দিবি আমায়? সারারাত তো শিক্ষা দিলি, দে আরো দে…”
ইস্মি সত্যিই শিক্ষা দিলো ওকে, মেঝেতে ওভাবে বসিয়ে রেখেই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে। ফিরলো আধঘন্টা পর সকালের নাস্তা নিয়ে। ইজহান ওর সাহস দেখে হতভম্ব, ইচ্ছে করল বৌয়ের দাঁতকপাটি এক চড়ে ফেলে দিতে। সে দু’গাল চেপে ধরে চিড়বিড়িয়ে বলে উঠল,
“অবাধ্য মানবী, তুই আমাকে এই প্রথম উপেক্ষা করলি। এর শাস্তি কী হতে পারে বল তো?”
ইস্মি ওভাবেই রুটি ছিঁড়ে ওর মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“সারাদিন আদর চাই, আদর চাই, আর আজ আদর ভিক্ষে চাই? যান, মাসনা-সুলাসা-রুবাইয়া নিয়ে আসুন। একা কেন এত ভোগ করব? এটুকু শাস্তি আমার প্রাপ্য! তাই নয় কী?”
বিস্ময় ঝড়ে ঝড়ে পড়ল ইজহানের চোখ থেকে। অস্ফুটস্বরে বলল,
“আরো তিনটে বিয়ে করতে বলছিস? আমাকে ভাগাভাগি করবি, এতটা পাথর হয়ে গেছিস তুই ইস্মিতা?”
ইস্মি আগের মতোই কিছু যায়-আসে না ভঙ্গিতে ওর মুখে রুটি-তরকারি ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলল,
“উহু, বাধ্য বউ হওয়ার চেষ্টা করছি!”
“আমি আরো তিনটে বিয়ে করলে তুই বাধ্য বউ হয়ে যাবি?”
ইস্মি জবাবে বলল,
“সব প্যারা যদি চারজনকে সমানভাবে ভাগ করে দিতে পারেন তাহলে আমি ইস্মিতা পুরোপুরি
আপনার বাধ্য বউ হয়ে যাব।”
ইজহান কাষ্ঠ হাসলো,
“আমি তোমাকে প্যারা দিই, বলোনি তো কখনো!”
“বলার সুযোগ হয়নি, আজ হলো তা-ই বললাম।”
“কেন এত অবহেলা করছো, আমার কষ্ট হচ্ছে।”
ইস্মি খাওয়া থামিয়ে অভিযোগের দৃষ্টি ছুঁড়ে তাকায় ওর দিকে। গাঢ় স্বরে প্রশ্ন করে,
“নিজের সব স্বপ্ন কুরবানি দিয়ে, নিজেকে কাঠেরপুতুল বানিয়ে, সর্বোচ্চ আত্মসম্মানহীন হয়েও কেন পাঁচটা বছরেও বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি আমি আপনার? কেন এত অবিশ্বাস আমার প্রতি?”
ইজহান চুপ করে থাকে বরাবরের মতো। কথা এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে কারণ খুঁজতে থাকে। ইস্মিতা নাস্তার প্লেটটা সরিয়ে রেখে ইজহানের গা ঘেঁষে বসে। মুখটা দু’হাতে নিজের দিকে ফেরায় জোর করে। চোখঠোঁটে চুমু বসায় নিজে থেকে। ইজহান আঁকড়ে ধরে ইস্মির বুকে মুখ গুঁজে। রুক্ষ হাতে কোমড় চেপে ধরে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। ইস্মিতা ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে থাকে। ইজহানের ভালো লাগে। মনটা হঠাৎ করেই বিদ্রোহী হয়ে উঠে। ভেতর থেকে কে যেন বলে, ‘এই মেয়ে অবিশ্বাসের যোগ্য নয়। তুই ওকে বিশ্বাস করিস, সেটা কেন বলছিস না?’
ইজহান নিজের ভেতরের সত্তাটাকে উত্তর দিতে গিয়ে মুখ ফসকেই বলে ফেলে,
“কারণ আমি ভয় পাই। ভীতুর ডিম আমি। ভয় হয়, ও যদি ভেতরের আমাকে জেনে ফেলে তাহলে আর আমাকে ভয় পাবে না। ভয় না পেলে ও আমার মাথায় চড়ে বসবে। চড়তে চড়তে যদি ও আমায় ছেড়ে চলে যায়? মরে যাব আমি।”
ইস্মি চুপ করে শোনে। এরপর বলে,
“আর আপনাকে ভয় পেতে পেতে ইস্মিতাই যদি মরে যায় তাহলে?”
“এটা হবেই না।”
“কেন?”
কণ্ঠস্বর তীক্ষ্ণ হলো অবুঝ মানবের,
“কারণ— আমার ভালোবাসার জোর বেশি।”
“তাহলে কেন ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিচ্ছেন? ভালোবাসাকে ভালো রাখতে পারলেই না বুঝতাম, আপনি তাকে ভালোবাসেন। ভালো যদি রাখতে না-ই পারেন, তাহলে আবার ভালোবাসা হলো কী করে?”
“আমি ওকে ভালো রাখছি না?”
“রাখছেন?”
ইজহান দ্বিধায় পড়ে যায়,
“তাহলে কীভাবে রাখলে ভালো রাখি প্রমাণ হবে?”
“বউকে বুঝলে!”
দৃঢ়স্বরে বলে ইজহান,
“আমি ওকে বুঝি।”
ইস্মির গলা ভার হয়ে আসে,
“তাহলে কেন বোঝেননি, আপনার ইস্মিতা মা হতে গিয়ে এক পৃথিবী জয় করে ফেলেছিল, রাণী হয়ে গেছিল? তাকে সেই রাণীর পদ থেকে টেনে-হিঁচড়ে
ঝি কুড়ানির পদে নামিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং আপনিই?”
ইজহানের কষ্টে বুকটা ছারখার লাগে। তার কাছে ইস্মিতা সবসময় রাণী, কোনো ঝি কুড়ানি নয়। এটা কীভাবে বললে বুঝবে এই মেয়ে? সে আরো শক্ত করে ইস্মিকে আঁকড়ে ধরে। পেটে মুখ গুঁজে, গাল ঘষে। আবেগ্লাপুত হয়ে যায় হুট করে। পরক্ষণেই কঠিন গলায় বলতে থাকে,
“বাচ্চাটা পেটে আসার পর থেকেই ইস্মিতা সারাদিন ওর কথা বলতো, ওকে নিয়ে ভাবতো। রাতে আমি ওকে বুকে করে ঘুমাতে চাইলেও ও জেদ করতো। আমি কিছু করতে না চাইলেও ও আমার থেকে দূরে দূরে শুতো। আমাকে নাকি তখন ওর অসহ্য লাগতো। আমার মাথা নষ্ট হয়ে যেত ওর ব্যবহার দেখে। যেদিন হসপিটালে ওকে লাস্ট চেকাপে নিয়ে গেলাম, দেখলাম একটা মহিলা বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মরে গেল। আমার মনে ভয় ঢুকে গেল, ইস্মিতা যদি বাচ্চা আনতে গিয়ে মরে যেত, আমার কী হতো?”
ইস্মির শূন্য মনটা হাহাকার করে উঠে,
“তাই বলে কেউ নিজের বাচ্চা আসবে জেনেও বউকে ওভাবে ধাক্কা দেয়? ইস্মিতা যদি তখনি মরে যেত?”
“সেদিন আমি ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দিইনি তো!”
ইস্মি বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইল। আজকের আগে কখনো এই প্রসঙ্গে এই কথাটা বলেনি ইজহান। সবসময়ই এড়িয়ে গেছে নয়তো দুর্ব্যবহার করেছে। ইস্মিও সবসময় ভেবে গেছে ইজহান সেদিন ঝগড়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়েছে। তিনটা বছর ধরে সে এটাই জানতো এবং মানতো। এটা অবশ্য ঠিক যে, বাচ্চাটা পেটে আসার পর থেকেই হরমোন চেঞ্জের কারণে ভীতু ইস্মিতার প্রচণ্ড মুড সুইং হতো। বাচ্চাটাকেই সব ভাবতো, ইজহানের পজেসিভনেসকে ওর নাটক মনে হতো, অসহ্য লাগতো ওকে৷ কখনোসখনো নিজে থেকে আবদার করে ইজহান ওর পেট ছুঁয়ে বাচ্চাটাকে অনুভব করতে চাইলে ও দিতো না। সবসময় দূরে দূরে রাখতো, ভাবতো ইজহান বোধহয় ক্ষতি করে দেবে বাচ্চাটার। তাই ওকে ছুঁতে না দিয়ে কষ্ট দিতো। ইজহান রেগে গেলেও পরোয়া করতো না তখন! স্মৃতিগুলো মানসপটে ভাসতেই ইস্মির বুকের ভেতরে কান্নার দলা ভাঙচুর হলো৷ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,
“বাবা হতে চেয়েছেন কখনো?”
ইজহান উত্তর দেয় অনেকক্ষণ পর,
“না।”
“কেন?”
“বৌ ভাগাভাগি আমার ধাতে নেই। ঐ একরত্তি শিশুর সাথেও না। আর বাচ্চা দুনিয়াতে আসার আগেই ইস্মিতা যেভাবে আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল,
আমি নিশ্চিত বাচ্চাটা এলে এই মহিলা আমাকে ঘরেই জায়গা দিতো না৷”
ইস্মি হুট করেই আশা জাগানিয়া সুরে বলে,
“কিন্তু যদি আর দূরে না ঠেলে, যদি ইস্মিতা আপনাকে ঐ বাচ্চাটার জন্য আরো কাছে টানে, তাহলে?”
এ পর্যায়ে এসে ইজহান মুখ তুলে তাকায়। বিস্মিত নয়নে বোঝার চেষ্টা করে কথাটা। সত্যিই কী বাচ্চা এলে ইস্মি তাকে আরো কাছে টানবে? আগের মতো দূরছাই করবে না? ইজহান বিস্ময় নিয়ে বলে,
“ঐ বাচ্চাটার জন্য কেন কাছে টানবে? কেন নিজে থেকে টানবে না? বাচ্চাটাকে কেন ইউজ করবে?”
ইস্মি ওকে বোঝানোর জন্য বলে,
“এটাকে ইউজ করা বলে না।”
“তাহলে কী বলে?”
“ভালোবাসার সেতু বলে।”
“সেতু?”
“হুঁ, এই সেতুর কারণে দুটো মানুষ একে-অপরের সাথে চিরদিনের জন্য আটকা পড়ে যায়। ছেড়ে যেতে চাইলেও ছাড়তে পারে না এই সেতুর জন্য।”
ইজহান চেয়ে রয় প্রফুল্লচিত্তে কথা বলা ইস্মির দিকে। এগুলো তো সে জানে না, ভাবেইনি কখনো। ইস্মিও বলেনি, কেউ বলেনি। আচ্ছা, বাবা কী এইজন্যই মাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল? তারা দুই ভাই সেতু ছিল বাবার কাছে? তাই মা চিরজীবন মুখ ফিরিয়ে থাকলেও তাদের দু-ভাইয়ের জন্যই ফিরতে বাধ্য ছিল? সে অবাক হয়ে বলে,
“কিন্তু যদি সেতুটাকেই তুই বেশি ভালোবাসিস?”
“সেতু হয়ে একটা ছোট্ট ইজহান আসবে, ছোট্ট ইজহানকে ভালোবাসলে আপনার তো বরং আনন্দ হওয়ার কথা!”
ইজহান ভাবুক চিত্তে বলে,
“ছোট্ট ইজহান? যদি ছোট্ট ইস্মিতা আসে?”
“তাহলে আপনি তাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসবেন, আর আমি আপনাকে বেশি ভালোবাসব। আপনি কী চান না, একটা ছোট্ট ইস্মি আসুক, যে পাপা বলে ডাকবে আপনাকে? ছোট্ট ফ্রক পরে ঘুরে বেড়াবে ঘরময়। মায়ের আদর দেবে আপনাকে, চান না?”
মায়ের প্রসঙ্গ আসতেই ইজহান বাকরুদ্ধ বনে যায়,
“মায়ের আদর দেবে?”
“হু, মেয়ে সন্তান তো মা-ই হয়। মা হিসেবে ভালোবাসবেন ওকে। তাছাড়া পৃথিবীতে বহু ধরনের ভালোবাসা আছে। প্রেমিক-প্রেমিকার এক ধরনের, স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আরেক ধরনের, আর মা-বাবার সাথে সন্তান-সন্ততিদের ভালোবাসা। সবগুলোর অনুভূতি আলাদা। কোনোটার সাথেই কোনোটা মেলে না। ভালোবাসার এই ধরণগুলোর সাথে আপনি পরিচিত হতে চান না?”
ইস্মির বলা কথা শুনে, ওর ব্যাকুলতা দেখে ইজহান জুলজুল চোখ করে চেয়ে থাকে। লোভী হয়ে উঠে মনটা। দ্বিধাবোধ নিয়েই মাথা নাড়ে আলতো করে।
সে চায়, চায় ভালোবাসার সব অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে। ইস্মি হঠাৎ ওর মাথা নাড়ানো দেখে প্রচন্ড এক ধাক্কা খায়। মুখ হা হয়ে যায়। এত সহজ? এত সহজে ইজহান রাজি হয়ে গেল? এটুকু সম্মতি দিয়ে দিলো? সে তো স্বপ্নেও আশা করেনি। ইস্মির চোখ অশ্রুতে টলমল করে উঠল। ঠোঁটজোড়া আপনাআপনি হাসিতে চওড়া হয়ে গেল। চোখভর্তি পানি আর ঠোঁটের হাসি নিয়ে সে আছড়ে পড়ল ইজহানের বুকে। বহুদিন পর মন খুলে কাঁদলো সে। নাকের পানি, চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে দিলো ইজহানের। অপ্রস্তুত হয়ে ওকে বুকে চেপে ধরে ইজহান মৃদুস্বরে বলল,
“বাবু নিতে চেয়েছি তো…”
অশ্রুবন্দি পর্ব ২৪
“আপনি কী সবসময় এমন অবুঝই হয়ে থাকবেন? কেন বুঝেন না এটা খুশির কান্না?”
ইজহান আরো শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে ইস্মিকে। তার একটু একটু নয়, অনেকখানিই ভালো বোধ হচ্ছে। বলে,
“বাবুকে আমি ভালোবাসব না, শুধু মায়ের আদর নেব। এরজন্য তুই আমাকে আরো বেশি ভালোবাসবি এই মর্মে স্বাক্ষর দিবি…”
ইস্মি এসব শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। অবাক ভঙ্গিতে শুধাল,
“কোথায়?”
“ষ্ট্যাম্পে, দলিল করে রাখব।”