অশ্রুবন্দি পর্ব ৩০

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩০
ইসরাত জাহান ফারিয়া

লিথু যে বাড়িতে নেই সেটা টের পেল প্রথমে মিতু। সচরাচর এগারোটার আগে ঘুম থেকে উঠে না লিথু। যদি কোনোদিন এর আগে উঠে তাহলে সেটা নিজের মন-মর্জিতে ধরলে। তাই প্রথমে এতকিছু ভাবেনি মিতু। কিন্তু সাড়ে এগারোটার পরেও যখন লিথুর কোনো সাড়াশব্দ, আনাগোনা পেল না, তখন ডাকতে এলো ওর ঘরে। কড়া নাড়তেই দরজাটা একটু দুলে উঠায় মিতু ঠেলল সেটা, দেখল দরজা খোলা। কিন্তু ঘরে কোথাও লিথু নেই৷ মিতু অবশ্য এতকিছু ভাবল না, হয়তো ছাদে বা নিচে গেছে। নয়তো পুকুর পাড়ে হাঁটতে বেরিয়েছে ভেবে চলে গেল। আধঘন্টা পরেও যখন লিথুর দেখা নেই তখন একটু খটকা লাগ ছাদে, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করল। পেল না। সালেহা বেগম রান্নাঘরে ভাতের পাত্রে খুন্তি নাড়ছিলেন। তার শরীর আজকাল বিশেষ ভালো যায় না। অবশ্য এ বাড়িতে তাকে কারোরই বিশেষ প্রয়োজন হয় না৷ দেখভালের দরকার হয় না।

বেশিরভাগ সময় ঘরেই ইবাদত-বন্দেগি করে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। মিতুকে হন্তদন্ত হয়ে সারাবাড়ি খোঁজ করতে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন কিছু হয়েছে কি-না! মিতু আর্ত আর বিরক্ত গলায় জানাল সে লিথুকে খুঁজছে। কোথাও দেখেছে কি-না! সালেহা বেগম মাথা নাড়লেন, লিথুকে তিনি দেখেননি, সকাল থেকেই। মিতু চিন্তায় পড়ে গেল, কোথায় গেল লিথু? সে আবারো লিথুর ঘরে এলো। ফোন বের করে কল করল কয়েকবার, কিন্তু ফোন বন্ধ! মিতু কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। হঠাৎ তার চোখে পড়ল বালিশের তলায়, একটা কাগজ, ভাঁজ করে রাখা। মিতু হন্তদন্ত হয়ে কাগজটা হাতে তুলে নিল। খুলে লেখাটা পড়ল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ইহসান শেখকে চাইছিলাম। কিন্তু তোমরা আমারে দিতে পারতেছ না, চোখের সামনে তার সংসার দেখা আমার
পক্ষে অসম্ভব। তাই চইলা যাইতে। সময় হলে ফিরে আসমু। আমার কিছুদিন একলা থাকনের দরকার। খবরদার
আমায় খুঁজবা না। আব্বারে বইলা দিও।”
লেখা পড়ে মিতু হতভম্ব! গতদিনও যে মেয়েকে উৎফুল্ল, হাসিখুশি দেখাচ্ছিল একরাতেই তার মনে কি এমন পরিবর্তন হলো যে বোনটা তাকে কিছু না জানিয়েই কাগজে চিঠি লিখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল? মিতু রমিজ আলীকে ফোন করে সব খুলে বলল। ছোট মেয়ের লাপাত্তা হবার খবরে তিনিও বেজায় চমকে গেলেন। যে মেয়ে ইহসান, ইহসান করে মাথা পাগল করে দেয়, গোপনে ইহসান শেখের বউকে তাড়ানোর জন্য ফন্দিফিকির আঁটে এমনকি পরশুদিনও যে মেয়ে বাবার কাছে ইহসানকে আবদার করল, সে হঠাৎ সব ছেড়েছুড়ে কোথায় গেল? অবশ্য লিথুর এমন লাপাত্তা হওয়া নতুন ঘটনা নয়। এর আগে বহুবার এমন করেছে। বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে পালিয়েছে, কখনোবা ট্যুর দিয়েছে। আবার নিজে থেকেই পাঁচ-সাতদিন পরে ফিরে এসেছে। এবারো হয়তো তেমন কিছুই। আদরের মেয়ে বলে কথা! কিছু বলতেও পারেন না রমিজ শেখ!

আজিজ শেখ এসব শুনলে কী ভাববেন কে জানে! কথার খোঁচা দিতে ছাড়বেন না। রমিজ আলী মিতুকে বলে দিলেন লিথুর লাপাত্তা হবার খবর যেন কাউকে না বলে। তাহলে আজিজ শেখ কথা শুনাতে ছাড়বেন না তাকে। মিতুও বাবার কথায় সম্মত হলো। এসব জানাজানি হলে সবাই গসিপ করার মালমশলা পেয়ে যাবে, ইহসানও হয়তো
আরো কঠোর হয়ে যাবে। শেষে দেখা গেল, সৃজাকে তাড়িয়েও বিশেষ কোনো লাভ হলো না। তাই, লিথুর
লাপাত্তা হবার খবরটা ওরা বাবা-মেয়ে চেপে গেল।
মিতু ব্যপারটা সামলালো এটা বলে যে, বাবার জন্য মন পুড়ছিল বলে লিথু সকাল সকালই বাড়িতে চলে গেছে। যদিও কেউ জানার আগ্রহবোধ দেখায়নি, তবুও মিতু
বলে রাখল যাতে কারোর সন্দেহ না হয়!

অফিসে আজ কাজের বেশ চাপ গেছে ইজহানের। সব গুছিয়ে, এর-ওর উপর চাপিয়ে দিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। সবই ঝুলে আছে। মাথা হ্যাং হয়ে যাওয়ায় সব ছেড়েছুঁড়ে বাড়ির পথ ধরল আটটায়। পথে সিগন্যালে গাড়ি থামলে ভীষণ ত্যক্ত হয়ে গেল সে।ক্লান্ত হয়ে চোখ বুজে শরীরটা সিটে হেলিয়ে দিলো সে। বেলিফুলের গাজরা নিয়ে দশ-বারো বছরের একটা মেয়ে তার গাড়ির জানালায় মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
“ফুল লইবেন স্যার?”
ইজহান পেছনের সিটে তখন শরীর তুলে দিয়ে মাথা হেলিয়ে দিয়ে ক্লান্তি কাটানোর চেষ্টায় রত। সে জবাব দিলো না। মিজু একবার নিজের স্যারকে দেখে নিয়ে ফুলওয়ালিকে ইশারায় ডাকল। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,

“কত করে?”
“বিশ ট্যাকা কইরা, লইবেন?”
“দশ কইরা রাখ।”
“হইব না, বানাইতে পরিশ্রম হয়।”
“পনেরো করে দিই, দুইটা দাও।”
মেয়েটা হেড়ে গলায় বলল,
“একদাম বিশ ট্যাকা, দামাদামি নাই।”
মিজু বুঝল দামাদামি করলে তেমন একটা লাভ হবে না।
এই মেয়ে বেশ চতুর। ব্যবসা করতে করতে পাকাপোক্ত। কথা শুনলেই বোঝা যায়। সে বার্গেনিং করতে ব্যর্থ হয়ে পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ বের করল। দুটো বেলিফুলের গাজরা নিলো। ফুলওয়ালি দাঁত বের করে হেসে জোরালো গলায় বলল,
“বউয়ের লাগি লইছেন?”
“হুম!”
“নেন নেন, ভাবি খুশি হইয়া যাইব।”

মিজু আলতো হেসে টাকা পরিশোধ করে দিলো। ফুল নেওয়ার কারণ তার বউ। দু’দিন ধরে ঘুরতে যাওয়ার বায়না ধরেছে। কিন্তু ইজহান স্যারের কাছে ছুটি চেয়েও লাভ হয়নি। দেয়নি ব্যাটা নিরামিষ। উল্টো কটমট করে তাকিয়েছে, কাজ বাড়িয়ে দিয়েছে। ছুটি না পাওয়ায় বউকে কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি। সে বেচারি তাই রাগ। জানে না তো, কোন খচ্চরের পাল্লায় পড়েছে তার স্বামী। জানলে নিজেই কপাল চাপড়াত। তাই বউকে খুশি করার জন্য গাজরা দুটো নিলো, তার বউয়ের পছন্দের ফুল বেলি। ফেরার পথে কিছু চিপস, চকলেটও নেবে। মল খোলা
পেলে একটা শাড়ি নেবারও ইচ্ছে আছে তার। লাল শাড়িতে তার বউটাকে টকটকে লাল গোলাপ লাগে! বউয়ের মুখটা মনে করে তার প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। তখনি পেছন থেকে বাঁকা গলার স্বর ভেসে এলো,
“কী নিলে?”
মিজুর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। স্যার উঠে গেছে ঘুম থেকে? উফ! এখন না জানি কি বলে! সে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে রাখার চেষ্টা করে বলল,

“বেলিফুল।”
“বেলিফুল? কার জন্য?”
ততক্ষণে সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে। ড্রাইভিং করতে করতে মিজু ধমক খাবার ভয় নিয়ে ধীর স্বরে বলল,
“ইয়ে…সায়মা মানে আমার বউয়ের জন্য নিলাম স্যার।”
ইজহান অবাক গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ল তৎক্ষনাৎ,
“বউয়ের জন্য ফুল? এসব পথের ফুল দিয়ে তোর
বউ কী করবে?”
মিজু কিছুটা লাজুক গলায় বলল,
“ওর খুব পছন্দ, খোঁপায় দিবে।”
ইজহানের চক্ষু কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। প্রায়ই সে দেখে মানুষ রাস্তা থেকে এসব ফুলটুল নিয়ে যায়। বউকে দেয়, প্রেমিকাকে দেয়। ওসব সস্তার ন্যাকামি দেখলে তার রাগ লাগে। বউকে ফুলের মতো সস্তার জিনিস কেউ দেয়? তোর টাকা নেই তো দিবি না, দিলেও অন্যকিছু দে। কিন্তু ওসব পচা-বাসি ফুল দিবি কেন? যত্তসব টোকাইয়ের দল। এসব ভেবে গালি দিতো মনে মনে। ইহসানকেও একদিন ফুল নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেছিল, আজ মিজুটাও নিচ্ছে। ব্যাপারটা কী? আসলেই কি বউরা ফুল পেলে খুশি হয়ে যায়? ইজহান নিজের বিস্মিত গলা নিয়ে প্রশ্নে জর্জরিত করে মিজুকে,

“আসলেই?”
“জী স্যার?”
“আসলেই তোর বউ খোঁপায় এই ফুল দিবে?”
“অবশ্যই স্যার। মেয়েমানুষরে ফুলটুল দিয়া আপনি
যে খুশি করতে পারবেন, হীরা দিয়েও পারবেন না।”
এ কথা শুনে ইজহান আরো বিস্মিত হলো। হীরার চেয়েও ফুল দামী? এটা নেহাৎই ঢপ! তার মনে আরো অনেক প্রশ্ন জাগলো। মিজুকে জেঁকে ধরল। বেচারা মিজু পড়ল বিপাকে। বিরস মুখে উত্তর দিতে লাগল। ইজহান ওর থেকে জানতে পারল এসব সস্তার জিনিসই বরং মেয়েদের কাছে বেশি প্রিয়। ফুল, চকলেট, ফুচকা এসব ছোটখাটো জিনিসে মেয়েরা অতি আনন্দিত হয়। আর যদি সেটা স্বামীর হাত থেকে পায় তাহলে তো কথাই নেই৷ ইজহান এসব গালগল্প কখনোই বিশ্বাস করতে পারেনি। সে কখনো ইস্মিতাকে ফুল দেয়নি। আজ তাই ও ভাবল একটু ট্রাই করে দেখার। এমনিতে ইস্মি আগের চেয়ে একটুখানি স্বাভাবিক হয়েছে, তবে পুরোপুরি হয়নি। বউটাকে একটু খুশি করার চেষ্টা করার ইচ্ছে জাগলো তার। বাড়ির সামনে গাড়ি থামার পর নামার সময় ইজহান একটু থেমে ওয়ালেট থেকে হাজার টাকার নোট বের করে মিজুকে দিয়ে গমগমে গলায় বলল,

“ফুলগুলো আমি নেব, তোর বউকে অন্যদিন
খুশি করিস।”
বেচারা মিজু আপত্তি জানাল,
“কিন্তু স্যার…”
ইজহান চোখ গরম করে তাকাল,
“মেরে পুতে ফেলব, বুঝলি! দু-টাকার ফুল চাওয়ায় আপত্তি জানাস?”
মিজু ওর চোখে দেখেই আর কিছু বলার সাহস পেল না। গোমড়া মুখে গাজরার প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। তার এই বজ্জাত স্যার যে কখন মানুষ হবে বা আদৌ হবে কি-না, কে জানে!

সময় নিয়ে গোসল নিয়ে বেরুনোর পর মেজাজটা ঠিকঠাক লাগল ইজহানের। ইস্মিতাকে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখে অবশ্য আরো ভালো লাগল ইজহানের। ভেতরটা গদগদ ঠেকলেও সে চোখেমুখে নিজস্ব গম্ভীরতা ধরে রাখল৷ তোয়ালে কাঁধে ঝুলিয়ে গিয়ে বসল ইস্মির সামনে। মুখ হা করল। ইস্মি ভাত মেখে রেখেছিলল, ইজহান হা করতেই সে মুখে পুরে দিলো একটা লোকমা। খাবার মুখে নিয়ে ইজহান আপাদমস্তক ইস্মিতে চোখ বুলিয়ে নিলো। এরপর
জিজ্ঞেস করল,
“খেয়েছ?”
“খাব, আপনি আগে খেয়ে নিন।”
বলে পরবর্তী লোকমাটা এগিয়ে দিলো ওর দিকে। কিন্তু ইজহান সেটা ঘুরিয়ে ইস্মির মুখেই ঢুকিয়ে দিলো জোর করে, হতবাক ইস্মি বলল,
“এটা কী?”
“ভাগাভাগি।”
এর আগে এমন কখনো করেনি ইজহান। তাই ইস্মি অবাকই হয়েছে বটে। ভাগাভাগি কথাটা শুনে বিস্ময় নিয়ে এবার শুধাল,
“কী?”
“ভালোবাসা।”

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করার পর ইজহান ইস্মিকে সাজাতে বসাল। আলমারি থেকে পছন্দমতো শাড়ি, চুড়ি বের করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখল। আর ইজহানের এমন অদ্ভুত আচরণে ইস্মি পুরোই হতভম্ব!
কৌতূহল মন নিয়ে তাই জিজ্ঞেস করল,
“এসব কী করছেন?”
ইজহান ফুরফুরে গলায় বলল,
“তোমাকে সাজাব।”
ইস্মি হতভম্ব গলায় প্রশ্ন করল,
“হঠাৎ, কেন?”
পছন্দ হলো না প্রশ্নটা। গমগমে কণ্ঠে জবাবটা দিল ইজহান,
“ইচ্ছে, তাই।”
ইস্মি ফুঁস করে শ্বাস ছাড়ল, এই লোকের হলোটা কী আজ? এত আদর, এত ইচ্ছে! বিয়ে পরবর্তী কোনোদিন তো এমন আচরণ করেনি। ইস্মির হজম হচ্ছে না এসব! তাই জোরালো গলায় বলল,
“এসব রাখুন। আপনার না হাঁটু ব্যথা করছে, আসুন মালিশ করে দিই।”
ইজহান উত্তেজিত ভঙ্গিতে সবকিছু একসাথে গোছাচ্ছিল; গয়নাগাটি, এটাসেটা! কিন্তু ইস্মির মুখে এ কথা শুনে ও রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাল। গয়নার বাক্সটা হাতে ছিল, ওটা চেপে ধরল দু’হাতে। ছুঁড়ে মারবে এমন একটা ভাব। বুঝে ইস্মি আতঙ্কিত চেহারায় তড়িঘড়ি করে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা, যা খুশি করুন। আমি কিছু বলব না। এই চুপ, চুপ আছি!”

সাদা রঙের শাড়ি, যার কুচি গুলো গোছানো নয়। কোনোমতে গুঁজে দেওয়া হয়েছে। হাতে সোনার চিকন দুটো চুড়ি, কানে সোনার দুল আর আদুরে গলাটা চেইনের কারণে জ্বলজ্বল করছিল। ইজহান চুল আঁচড়াতে পারে না তেমন, দশ-বারোবার চেষ্টা করার পর মাঝখানে আঁকাবাঁকা সিঁথি করে কোনোমতে একটা খোঁপা বেঁধে নিলো। ইস্মি বারবার ওকে সাহায্য করতে চাইছিল, কিন্তু ইজহান তার গরম চোখ দিয়েই ওকে ঠান্ডা করে দিয়েছে। নিজের মতো করে সাজিয়ে সে দেখল কোনোকিছুই ঠিকঠাক হয়নি, ভেতরে ভেতরে মনটা খারাপ হয়ে গেল তার। ইস্মি বোধহয় সেটা বুঝল। আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে নিয়ে বলল,

“দারুণ তো!”
“তোর কচু।”
ইস্মি অবশ্য মানল না,
“উহু, প্রথমবারের হিসেবে দারুণ হয়েছে। অনেকে তো এতটুকুও পারে না। সেই হিসেব করলে আপনারটা অন্য সবার চেয়ে ভালো হয়েছে। পরেরবার আরো ভালো হবে।”
ইজহানের মন ভালো হয়ে গেল প্রশংসা শুনে। শাড়ি, চুল ঠিকঠাকভাবে করতে না পারলেও ইজহানের চোখে তার ইস্মিতাকে অনিন্দ্য সুন্দর লাগছে। এভাবে এলোমেলো অবস্থায়ও মেয়েটা কত মোহনীয়! ইজহান ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ খোঁপাটায় চোখ পড়তেই বেলির গাজরার কথা মনে পড়ল। দ্রুত সে ওগুলো নিয়ে এসে প্যাকেট থেকে বের করে ইস্মির খোঁপায় আটকে দিলো দুটো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে। এরপর সে নিজেই চমকে গেল। এত সুন্দর লাগছে তার ইস্মিতার খোঁপাটাকে! ইজহান হা হয়ে দেখল। মন ভরে দেখল। তার বুক রকেটের গতিতে ছুটল। আয়নায় তাকিয়ে ইজহানের এই অভাবনীয় কান্ডটা দেখে ইস্মির চোখজোড়া টলমল করে উঠল৷ এই লোককে কে বলল এসব? কে শেখালো? ইস্মি প্রশ্নচোখে তাকাল ইজহানের দিকে। ইজহান আমতা-আমতা করল। মানে কী? মিজু বদমাইশটা তো বলেছিল, বউ খুশি হবে। কিন্তু তার বউ কাঁদে কেন? ইজহান অসন্তোষ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই ইস্মি নিজেই বলল,

“আমার জন্য ফুল?”
“হু, আসলে মিজু হাঁদাটা বলল যে…”
ইস্মি পা উঁচু করে ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে গলা জড়িয়ে ধরল,
“আজকের মতো খুশি আমার কখনো লাগেনি।”
বউ খুশি হবে কী, ইজহান নিজেরই তো পাগল পাগল লাগছে।
ইজহান মন ভরে দেখল তার ইস্মিতার হাসিমাখা মুখ। কপালে চুমু আঁকল। ইস্মির অশ্রুসিক্ত গালে ঠোঁট বসাল। কোলে তুলে বারান্দায় গিয়ে বসল। বেলির সুগন্ধে বারান্দা মাতোয়ারা হয়ে গেল। ইস্মি তখনো গুণগুণ করে ওর বুকে মুখ গুঁজে কাঁদছে। ইজহান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কাঁদে না বউ।”
হিঁচকি তুলে ফিসফিস করে ইস্মি বলে,

অশ্রুবন্দি পর্ব ২৯

“এমন ইজহান শেখকে চেয়েছি আমি প্রার্থনায়, যে
সবসময় আমায় আজকের মতো, এভাবে ভালোবাসবে।”
ইজহানের বুকের ভেতরটা শীতল হয়ে যায়। ইস্মি মন খুলে কিছু বললেই তার এমন লাগে। ইজহান ওর চুলে ঠোঁট বসিয়ে রাখে। এমন জানলে সে বহু আগেই ফুলের বাগান করে ফেলতো। আঁধার রাতকে সৌন্দর্যের পাতায় মুড়িয়ে দেওয়ার জন্য হুট করেই মেঘ সরে গিয়ে থালার মতো গোলাকার চাঁদটা দ্যুতি ছড়ানোর উদ্যোগ নিলো।

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩১