অশ্রুবন্দি পর্ব ৩১

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩১
ইসরাত জাহান ফারিয়া

সেদিন শ্বশুরবাড়িতেস আদর আদর সকাল
কাটানোর পর দুপুরের দিকে বিদায় নিয়েছিল ইহসান। এরমধ্যেই দুটো দিন পেরিয়ে গেছে। লাস্ট ডেইটে সৃজা ইহসানকে না জানিয়েই ভার্সিটিতে এলো এসাইনমেন্ট জমা দিতে। কাজ শেষ করে রিকশা নিয়ে ভার্সিটি থেকে সোজা অরবিট টাওয়ারে চলে গেল। ‘Le Cœur de Maman’ এ তখন একটা ফ্যামিলি গেট ট্যুগেদারের পার্টি চলছে। ভেতরে ছোটখাটো স্টেজের মতো বানানো হয়েছে, সেখানে বাচ্চাদের নাচ-গানের ফাংশন চলছে। হৈ-হুল্লোড় আর গানে মাতোয়ারা পরিবেশটা সৃজা বাইরে থেকে ঠাহর করতে পারেনি। সাজানো-গোছানো, রঙিন আলোয় ঝলমল করা রেস্তোরাঁর প্রবেশমুখে ইংরেজি অক্ষরে ‘বুকড’ লেখা।

কিন্তু সেটা দৃষ্টিগোচর হলো না সৃজার। সে হুট করেই কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে সৃজা ঢুকে পড়ল। আর তাতে করে দরজার পাশে সেট করে রাখা মিউজিক বক্সের তার ছুটে লাইন অফ হয়ে চারপাশ শুনশান হয়ে গেল। হঠাৎ করে অনুষ্ঠানের মাঝখানে মিউজিক বন্ধ হয়ে যেতেই গেস্টরা কী হয়েছে না হয়েছে দেখতে সকলেই একযোগে ফিরে চাইল। কিন্তু দরজায় অনাকাঙ্খিত এক মেয়েকে দেখে কেউ কেউ কৌতূহল নিয়ে তো কেউ কেউ বিরক্ত চোখে তাকাল। সৃজা আড়ষ্টবোধ করল তাদের চাহনি দেখে। বোকা বোকা হাসলো। সামনে এগুবে নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে বুঝে উঠল না। মস্তিষ্ক কাজ করা শুরু করতেই নিজেকে নিজেই বলল, স্টাফদের দরজা দিয়ে ঢুকলেই তো হতো। তাহলে আর এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। সৃজা গেস্টদের দিকে তাকিয়ে বিব্রত কণ্ঠে বলল, “আসলে…”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটা শেষ হলো না, তার আগেই ক্ষ্যাপামতো একজন লোক চেঁচিয়ে উঠল, “আসলে নকলে রাখেন তো ম্যাডাম। কী এক রেস্তোরাঁয় আসলাম, কোনো প্রাইভেসি নেই। যখনতখন মানুষ ঢুকে যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে এসেও শান্তি নেই।”
পাশ থেকে একটা ব্লন্ড চুলের মেয়ে গলায় লোকটাকে বলল, “ইনিই প্রথম ঢুকেছে আব্বু, আর কেউ নয়। এরকম মিস্টেক হতেই পারে। তুমি শান্ত হয়ে বসো।”
সৃজা তড়িঘড়ি করে বলল, “আসলে আমার জানা ছিল না রেস্তোরাঁ বুকড, ভুল করে ঢুকে পড়েছি।”
ব্লন্ড চুলের মেয়েটা দেখতে দারুণ সুন্দরী, কথাবার্তা বলে দারুণ। পরণে ওয়েস্টার্ন, অনাবৃত পেট বেরিয়ে আছে। সে সৃজাকে মিষ্টি হেসে বলল, “ইট’স ওকে আপু। আমরা কিছু মনে করিনি।”

সৃজা কোনোমতে বলল, “আপনাদের অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য আমি দুঃখিত। প্লিজ বি কন্টিনিউ।”
কেউ কেউ ইট’স ওকে বলল তো কেউ বিরক্তি প্রকাশ করল। সৃজা দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুত ওখান থেকে সরে পড়ল। উত্তেজনায় কী বিব্রতকর পরিস্থিতিতেই পড়তে হলো। ধীরে সৃজা, ধীরে। নিজেকে ধাতস্থ করে বেরিয়ে এসে স্টাফদের দরজায় বেল বাজিয়ে ওখান দিয়ে ঢুকল। সৃজাকে স্টাফরা চেনে-জানে স্যারের বউ হিসেবে, তাই সবাই হাসিমুখেই কথাটথা বলল। কিন্তু ইহসানের খোঁজ করতেই তারা জানাল, ইহসান মাত্রই বেরিয়ে গেছে। সৃজা হতভম্ব মুখে একজন স্টাফকে বলল, “কোথায়?”
“জানা নেই। তবে একটা কথা বলি ভাবি মানে ম্যাম…”
“দয়া করে ভাবিই ডাকুন, ম্যামট্যাম পোষায় না আমার ভাই। তাছাড়া আমি আপনার অনেক ছোট।”
স্টাফটা খুশিই হলো সৃজার সহজ ব্যবহারে। বলল, “আমার মনে হলো, স্যার আসলে আপনাকে দেখেই বেরিয়ে গেছে।”

“মানে?”
“আপনি যখন সামনের দরজা দিয়ে ঢুকেছিলেন, স্যার তখন ওখানেই ছিলেন।”
অবাক হলো সৃজা, “আমি তো দেখিনি।”
“কিন্তু স্যার দেখেছে৷ এরপরই তো বেরিয়ে গেল।”
চমকে দিতে এসে নিজেই চমকে গেল সৃজা। ইহসান ওকে দেখল, অথচ ডাকলো না? আবার কিছু না বলে বেরিয়েও গেল? ওর অনেক রাগ হলো ইহসানের উপর। স্টাফদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। এলিভেটরে উঠতেই ফোনে ম্যাসেজ এল, “পাখিটার বেশ ডানা গজিয়েছে— কেটে দেব কী?”
না জানিয়ে এসেছে বলে ইচ্ছে করে এরকম করল
ইহসান! রাগে-দুঃখে সৃজা উত্তর না দিয়ে ফোনটাই বন্ধ
করে দিলো। কথাই বলবে না এই নির্দয় লোকের সাথে।
নিচে নামতেই সাঁ করে কালো রঙের বাইকটা নিয়ে সৃজার সামনে এসে দাঁড়ালো ইহসান। প্রথমে চমক উঠলেও পরে নিজেকে সামলে নিলো সৃজা। ভারমুখে, অভিমানী কণ্ঠে বলল, “সরো।”

“উঠ।”
“পারব না।”
“পারতে হবে। উঠে বস।”
সৃজা শক্ত গলায় বলল, “বললাম তো পারব না, উঠব না আমি। একা এসেছি, একাই যেতে পারব। হাত-পা এখনো অক্ষত আছে আমার।”
“তোমার ওসব ছোট পরিসরের অভিমানের চেয়ে আমার রাগের মাত্রা সেকেন্ডে সেকেন্ডে বাড়ছে। শেষবার বলছি, আদর করে বলছি, উঠে বসো সোনা। নয়তো হাত-পায়ে গজানো সুন্দর, নরম ডানাগুলো বেশিক্ষণ অক্ষত থাকবে না।”
ঠান্ডা হুমকি শুনে সৃজা বাধ্য হয়ে উঠে বসল। বাইকে বসতে এখনো দ্বিধা, ভয় চোখেমুখে স্পষ্ট। ইহসান মিররে ওর মুখ দেখে বাঁকা হাসল। সৃজা ভয় নিয়ে বাইকের পেছনে বসেই একহাতে পিঠ খামচে ধরে অন্যহাতে ইহসানের কাঁধ আঁকড়ে অভিমান নিয়ে বলল, “তুমি খুব খারাপ।”
বাইক স্টার্ট দিতে দিতে ইহসান বলল, “হু জানি, কোথায় যাবি?”

“কোথাও যাব না।”
“তাহলে এসেছিস কেন?”
বাইক সাঁই করে রাস্তা ধরে ছুটতে লাগল। সৃজা ভয়ে চোখ বন্ধ করে মুখ গুঁজল ওর পিঠে, “অ্যাসাইমেন্ট জমা দেওয়ার লাস্ট ডেইট আজ। তোমাকে চমকে দিতে চেয়েছিলাম, তাই বলিনি।”
ইহসান শীতল ও রাগান্বিত স্বরে বলল, “বাহ! আমার বউ তো ভালোই সারপ্রাইজ দিতে শিখেছে! তবে সত্যি বলতে আমি যতটা না চমকেছি ততটাই রাগ হচ্ছে তোমার উপর বউ! ইচ্ছে করছে প্রথমদিনের মতো গালে দুটো বসিয়ে দিই মিথ্যে বলার জন্য।”
সৃজা ওর ঘাড়ে নখ বসিয়ে দিয়ে বলল, “আমারও!”
“কী?”
“তোমাকে পুলিশে দিতে ইচ্ছে করছে।”
“তাই, কেন?”
“আমার সারপ্রাইজে বাজে ফিডব্যাক দেওয়ায়,
অবশ্য ওয়েস্টার্ন পরা মেয়েলোক দেখলে বেহেনজি বউকে চড়-থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে সব পুরুষেরই।”
ভীষণ অবাক হয়ে ইহসান বলল, “ওয়েস্টার্ন পরা মেয়েলোক মানে?”
সৃজা হিংসুক কণ্ঠে বলল, “ব্লন্ড চুলের সুন্দরীকে,
ভুলে গেছ এত তাড়াতাড়ি? সব নাটক। বুঝি না ভেবেছ?”

ক্রুদ্ধ আর অভিমানী গলা সৃজার। ইহসানের কপালে ভাঁজ পড়ল। তার বউ আবার উল্টাপাল্টা ভেবে বসছে নাকি? উহু! তা হতে দেওয়া যায় না। ইহসান হালকা নিভলো, “সে আমার গেস্ট সৃজা।”
সৃজার রাগ এবার বিস্ময় হয়ে ফুটে উঠল, “সে?”
“শাকচুন্নি, শান্তি?”
অতিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতুত্তর এলো। সৃজা হাসি লুকালো বহু কষ্টে, “কিঞ্চিৎ।”
তবে তখনি বাইকের গতি কমিয়ে গলার স্বর খাদে নামিয়ে ইহসান বলল, “ব্লন্ড চুলের অথবা বারগেন্ডি চুলের শাকচুন্নি হোক। আমার মরণ বহু আগেই হয়ে গেছে কালো চুলের, ক্রন্দসী সৃজা রেহমানেই।”

বাইক হঠাৎ থামতেই ঠান্ডা হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে গেল সৃজাকে। শিরশিরে, ঠান্ডা অনুভূতি গ্রাস করতেই ইহসানের পিঠ থেকে মাথা তুলল সৃজা। চারিদিকে তাকাতেই চমকে গেল। আরে এটা তো সেই নদীর পাড়টা, যেখানে এর আগেও একবার নিয়ে এসেছিল ইহসান ওকে। সেদিন ভিড়ভাট্টা বেশি থাকায় অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি। তবে আজ একদম জনশূন্য জায়গাটা, কেউ নেই। শতবর্ষী বটগাছ,
মাটির রাস্তা, ঝোপঝাড়ে অজানা ফুলের সমারোহ, বহমান শান্ত নদী, তীরে বাঁধা ছোট ছোট ডিঙি নৌকো দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল ওর। চোখমুখে খুশিটা ফুটে উঠল, “কী দারুণ! আগের থেকে চমৎকার হয়েছে জায়গাটা, তাই না?”
ওর মুখে হাসি দেখে চিত্ত শিহরিত হলো ইহসানের। বাইক থেকে নামতে নামতে বলল, “হু।”
এরপর নেমে ওর গাল টেনে দিলো, “সব চমৎকার হচ্ছে কিন্তু তুই দিনদিন অবুঝ-অবাধ্য হচ্ছিস।”
“আমি, কীভাবে?”

“এইযে, আমাকে সারপ্রাইজ দিবি বলে একা একা চলে এলি, না করিনি আমি এভাবে না বলে কোথাও না যেতে? রাস্তাঘাটে কোনো বিপদ হলে তখন কী করতাম আমি? তোর এলাকাটা তো ভালো নয়। সেখানে কত শত্রু আছে তোর ভুলে গেছিস? যদি তারা এই সুযোগে তোর আবারো কোনো ক্ষতি করে দেয়? আমি এমনিতেই ওখানে পাঠিয়ে তোকে নিয়ে কত দুশ্চিন্তায় আছি, জানিস না! অথচ তুই গুরুত্বই দিস না সৃজা।”

ইহসানের চিন্তার কারণ শুনে সৃজার মন খারাপ হয়ে গেল। আসলেই ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল এলাকার ষন্ডা-পাণ্ডাগুলোর কথা! যারা কুৎসা রটিয়েছিল, শ্লীলতাহানি করে ভিডিয়ো পর্যন্ত করেছিল ওর। মাত্র দু-মাস আগের কাহিনী। অথচ সৃজা ইহসানের বারবার মানা স্বত্তেও কে না বলে হুজুগের বশে বেরিয়ে পড়েছে। যেটা একদম ঠিক হয়নি। সারপ্রাইজ অন্যভাবেও দেওয়া যেত। না হোক কোনো বিপদ, মানুষটার কথার দাম দেওয়া উচিৎ ছিল, মান্য করা উচিৎ ছিল। মানুষটা মনে মনে হয়তো নারাজ হয়েছে। সৃজার সবকিছু শূন্য শূন্য ঠেকল ওর চোখের দিকে চেয়ে। বুক ভারী হলো। অপরাধবোধ জাগ্রত হলো। ধুর, এই মানুষটার কথা কীভাবে অমান্য করে ও? কেন গুরুত্ব দেয়নি? সৃজা চোখে চোখ মিলাতে পারল না ওর। ইহসান চুপ করে ওকে দেখছে,
হিজাব ভেদ করে বেরিয়ে আসা চুলগুলো হাওয়ায় এদিক-ওদিক উড়ছে। সে চুলগুলো দেখছে একদৃষ্টে। সৃজা আড়ষ্টতা কমাতে আশপাশটা একপলক দেখে নিয়ে ম্লানস্বরে বলল, “আর কখনো তোমাকে না
বলে কোথাও যাব না, প্রমিজ।”
“মনে থাকবে?”
“হু।”

ডিঙি নৌকোর কিনারে বালিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে সৃজা। আর ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ইহসান। তার চোখ বোজা। সৃজা ওর লম্বা চুলের ভাঁজে আঙুল ডুবিয়ে বিলি কাটছে চুপচাপ। ওর ভালো লাগছে। তবে তার চেয়ে বড় ব্যাপার এই বিশাল আকাশের ছাউনির নিচে, মিষ্টি রোদ পড়া সুদর্শনের ঠোঁটে উত্তপ্ত একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। ব্যাপারটা একান্তই ওর ইচ্ছে, কিছুটা লজ্জাবোধও হচ্ছে। তাই মুখে প্রকাশ করল না সেটা। অপারগ নীরব পরিবেশের নিঃস্তবদ্ধতা বাড়িয়ে দিতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরক্ষণেই মনে হলো, কী এমন হবে একটা চুমু খেলে, বরটা তো ওরই! আশেপাশে মানুষ দূর কাকপক্ষীও নেই। আর এই অভদ্র লোকটাও ঘুমিয়ে আছে। এই সুযোগে একটা চুমু খেয়ে নিলে বুঝতেই পারবে না। যেই ভাবা সেই কাজ! সৃজা চট করে একটা চুমু খেল ইহসানের কপালে, এরপর নাকে। নড়চড় করল না ইহসান। সাহস বাড়ল মেয়েটার। নিজের ওষ্ঠাধর ছুঁইয়ে দিলো পুরুষালি শুকনো ঠোঁটে। ওমনি খপ করে ওর মাথা ধরে ফেলল ইহসান। ছটফট করেও শেষরক্ষা করতে পারল না সৃজা। সময় নিয়ে পরবর্তী কাজটা শেষ করল ইহসান। সৃজা ধরা পড়ে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলল। সুবোধ বালিকার ন্যায় অন্যপাশে আকাশ দেখার ভান করল। ইহসান কিছুই বলল না। আবারো ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। সৃজা এবার আর পারল না। ওর খোঁচাখোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলল, “এখানে ঘুমাতে এসেছ, এটা ঘুমানোর জায়গা? চুল দাঁড়ি কাটো না কেন?”

ইহসান হাই তোলার ভান করে উঠে বসল এবার। গলায় নাটকীয়তা এনে জবাব দিলো, “দু-রাত ঘুম হয়নি, তাই ঘুমাতে এসেছি। আর চুলদাঁড়ির কথা, সে তো বউ এতদিন খেয়াল করে বলে দেয়নি, তাই কাটিনি। তবে আজ যখন করেছে কালই কেটে ফেলব। পরশু বাড়ি ফিরছিস তো তুই, দেখবি তোর বর সেজেগুজে খাটে বসে আছে।”
সৃজা প্রথমে চোখ পাকিয়ে তাকাল, এরপর হেসে ফেলল। ইহসান ওর হাসির দিকে তাকিয়ে নিজেও আনমনে হেসে ফেলল। এরপর ছোট্ট শ্বাস ফেলে প্যান্ট গুঁজতে শুরু করল। সৃজা জিজ্ঞেস করল কী কারণ— বলল না সে। তীরের হাঁটু সমান পানিতে নেমে পড়ল। খানিক দূরে পাড়ের মধ্যে কলমি ডগা, সেখানে ফুটে আছে হালকা বেগুনি রঙে আবৃত
মিষ্টি কলমি ফুল। ইহসান পকেট ভর্তি করে ফুল নিলো, অধিকাংশই চ্যাপ্টা হয়ে গেল। তবুও নিলো। ফুলে তেমন গন্ধ নেই৷ ইহসান ফিরে এসে ফুলের গন্ধ শুঁকে মুখ কুঁচকে ফেলল। সৃজা ওর মুখ দেখে ভ্রু উঁচিয়ে বলল, “কী?”
ইহসান ঠোঁট উল্টে ফেলল, “সুগন্ধহীন।”

“এমনি হয়।”
“আগে দেখেছিস?”
“খুব ছোটবেলায়, মা ছিল তখন।”
হঠাৎ মায়ের কথা বলে হাসি ম্লান হলো সৃজার
ঠোঁটের। ইহসান অবশ্য বেশিক্ষণ ওকে সেভাবে বসে থাকতে দিলো না। ওর হিজাব সরিয়ে চুলগুলো নিয়ে বেণীগাঁথতে বসল। বেণী গেঁথে সেগুলোর ভাঁজে ভাঁজে গুঁজে দিলো কলমি ফুল। কালো চুলের ভাঁজে ফুলগুলো আকর্ষণ বাড়াচ্ছিল এই শান্ত নদীর দেশে। ইহসান ঘনঘন নাক ডুবাল সৃজার চুলে। ওর কান্ড দেখে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল সৃজা, ইহসান ধমকে ওকে চুপ করাল। ফিসফিস করে বলল,
“তোর হাসিটা পুরো ফাঁসির মতোন।”
পকেটে ভ্রাইবেশন মুডে রাখা ফোনটা তখনি কম্পিত হলো। ইহসান বিরক্ত ভঙ্গিতে সেটা বের করে ম্যাসেজ সিন করল, “ল্যাভেন্ডারের সিমিলার, তাই না?”

চোখমুখ শক্ত করে রিপ্লাই করল ইহসান—
বড়ভাবী মায়ের মতো হয়। তাই কিছু মনে করিনি।
ফোনটা বন্ধ করে ইহসান সৃজার চুলের বেণী খুলে
ফেলল, সব ফুল এক এক করে ছাড়িয়ে ফেলে দিলো।
সৃজা এই আচরণের মানে বুঝল না। ফিরে দেখল চোখমুখ লাল হয়ে আছে ইহসানের। সৃজা বিচলিত হয়ে ত্বরিত বলল, “চোখমুখ এমন লাগছে কেন তোমার?”
“আর কখনো এই রঙের বা এর সিমিলার কোনোকিছু
পরবি না। না জামাকাপড়, না ফুল। সব নিষিদ্ধ তোর জন্য।”
“কিন্তু কেন?”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩০

সৃজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। ইহসান চোখমুখে বিরক্তি এনে বলল, “আমি বলেছি তাই। এই রঙ বিচ্ছিরি দেখায় তোকে, একদম যায় না।”
বলে পরক্ষণেই বিড়বিড় করল, “তোর ল্যাভেন্ডারের আগুনে আমি না, আমার ভাইও ছাই হয়ে যাচ্ছে।”
সৃজা শুনে ফেলল কথাটা, ”তোমার ভাই?”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩২