অশ্রুবন্দি পর্ব ৩৫

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩৫
ইসরাত জাহান ফারিয়া

সেই দুপুরে ঝামেলা করে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইহসান বাড়ি ফিরলো না। সৃজা ভাবল হয়তো রাগারাগি করে বেরিয়েছে তাই রাতে দেরি করছে ফিরতে। কয়েকিবার ফোন দিলো, তবে রিসিভ হলো না। এরপর সকাল অবধি অপেক্ষা করেও যখন দেখল ইহসান ফেরেনি, সৃজা পুরোপুরি আহাম্মক হয়ে গেল ওর আচরণে। অস্থির হয়ে একেরপর এক ফোন করল ওর নাম্বারে। কিন্তু সৃজার ফোন কোনোবারই রিসিভ হলো না। উল্টো একসময় বন্ধ দেখাল ফোনটা। সারাটাদিন সৃজার অস্থিরতায় কাটলো।

ইহসান না সৃজাকে কোনো ফোন করল, না অন্য কোনো মাধ্যমে যোগাযোগ করল। বাধ্য হয়ে সৃজা ওর রেস্তোরাঁয় যোগাযোগ করল, কিন্তু ওখান থেকেও কিছু জানা গেল না। স্টাফরা জানাল ইহসান ওখানে যায়নি, রশিদের উপর সব চাপিয়ে দিয়ে নিজে হাওয়া। স্যার কোথায় সে ব্যাপারে ওরা কিছুই জানে না। ইহসান এরকম ব্যবহার করতে পারে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি সৃজা। ও ভীষণ কষ্ট পেল। চিন্তায়ও পড়ে গেল। কোথায় আছে, কী করছে, কী খাচ্ছে, কেন অহেতুক এই রাগ এসবের মানে বুঝল না। ও না-হয় না জেনে অতি কৌতূহল দেখিয়েছে, না বলে ওর জিনিসে হাত দিয়েছে; কিন্তু সৃজা তো জেনেবুঝে, ইচ্ছে করে হাত দেয়নি। বরং ছবিটা ওর হাতে এসে গেছিল! ইহসান এমন রিয়্যাক্ট করবে জানলে সৃজা তো কোনোদিনও ওর জিনিসে হাত দিতো না, না কিছু জিজ্ঞেস করতো!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পরপর দু’দিন ইহসান বাড়ি ফিরলো না। চিন্তায় সৃজার নাওয়া-খাওয়া উবে গেল। রাতে না ঘুমানোর দরুণ চোখের নিচে কালি পড়ে গেল। সামান্য একটা কারণে এত রাগ? একেবারে লাপাত্তা হয়ে গেল মানুষটা? সৃজা কী করবে,কাকে বলবে বুঝে উঠল না। ইজহান-আজিজ শেখকে বলবে বলে ঠিক করল।সেদিন রাতেই আজিজ শেখ ফিরলে সৃজা গেল তার কাছে। আজিজ শেখ তখন ইজহানের সাথে বসে ব্যবসায়িক আলাপ করছিলেন। সৃজাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করলেন তিনি। বাবাকে একনজর দেখে ইজহান বাঁকা গলায় বলল, “কিছু বলতে চাও নাকি?”
সৃজা কান্না চাপা গলায় নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল, “আপনার ভাই তিনদিন যাবৎ বাড়ি ফিরছে না, ফোনেও পাচ্ছি না।”

সৃজার মুখে এ কথা শুনে ইজহানের চোখ থেকে কোটর বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। ভীষণ বিস্মিত হলো সে। ভেড়াটা বাড়ি নেই তিনদিন যাবৎ, লাপাত্তা? এজন্যই দেখা পাচ্ছিল না! ও তো ভেবেছিল কোথাও বুঝি কাজে গেছে, বউটাকে হয়তো বলেটলে গেছে। কিন্তু এই মেয়ে এখন এসে বলছে তিনদিন যাবৎ ভেড়াটার কোনো খোঁজই পাচ্ছে না? অদ্ভুত! কোথায় গেল তাহলে? ইজহানের মনে মনে চিন্তা হলো ঠিকই। কিন্তু ভাব-ভঙ্গিতে প্রকাশ করল না। গলা খাকারি দিয়ে সৃজার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা গলায় বলল, “খেয়ে খেয়ে তো এতবড় হাতি হয়েছে, অতবড় হাতিকে নিশ্চয় কেউ কিডন্যাপ করেনি। চিন্তার কারণ দেখছি না বাপু। হয়তো ট্যুর দিতে গেছে! ট্যুরে তোমায় নিবে না বলে যোগাযোগ করছে না…”

ইস্মি সৃজার পাশেই দাঁড়ানো ছিল। ও ইজহানের অবান্তর কথা শুনে কপালে ভাঁজ ফেলে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। চাহনিতে বোঝাল এসব কথাবার্তা না বলতে। ইজহান বউয়ের ইশারা বুঝে চুপ মেরে গেল। সে আজকাল বউয়ের কথা খুব মানে, অবাধ্য হয় না৷ এদিকে পুত্রের নিঁখোজ হওয়ার সংবাদে আজিজ শেখ ফিরে তাকালেন সঙ্গে সঙ্গেই। ভ্রু দুটো কুঁচকে তড়াক গলায় বললেন “কীহ?”
সৃজা ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “আমি সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, কিন্তু কোথাও ওর হদিস পাচ্ছি না।”
“আর এই খবর তুমি এদ্দিন পর আইসা দিতেসো? অদ্ভুত, বেক্কল মেয়েমানুষ তো তুমি!”
আজিজ শেখ গলা চড়ালেন। তার ছেলে বাড়ি নেই, খোঁজ নেই এটা এই মেয়ে তিনদিন পর এসে বলছে? আক্কেল কী সব গিলে খেয়েছে নাকি? তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, “এমনি এমনি নিশ্চয় এমন করে নাই, কী হইসে সেইটা কও…”

সৃজা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অস্বস্তি নিয়ে বলল, “ঐ একটু রাগারাগি.. মানে ঝগড়া নয় ঠিক।”
আজিজ শেখ শাণিত গলায় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চাইলেন, “কী নিয়া?”
“তেমন কিছু না।”
“এরপরেও জানতে চাইতেসি কী নিয়া, খোলাখুলি কও।”
সৃজা হতবিহ্বল হয়ে গেল। আজিজ শেখ সূক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছেন ওর দিকে। যেন জেনেই ছাড়বেন কী নিয়ে ঝামেলা! সৃজা এটা-সেটা বলে সুবিধা করতে পারলেন না, আজিজ শেখ বিশ্বাস করলেন না। প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেন ওকে। সৃজা ভড়কে গিয়ে গাইগুই করে বলল, “একটা ছবি।”
“ছবি মানে? ছবি নিয়া ঝগড়া হওনের কী আছে? আনো দেখি ছবিটা!”
“ছবি তো আমার কাছে নেই।”
আজিজ শেখ তীক্ষ্ণ স্বরে জানতে চাইলেন এবার, “ঐডা কী এমন বিশেষ ছবি যে একেবারে বাড়ি ছাড়ল পোলাডা? কী ছিল ছবিতে?”

সৃজার হাসফাঁস লাগল। কী বলবে ও? যে ওটা ওদের মায়ের ছবি? আমি না জেনে ধরে ফেলেছি, জেনে ফেলেছি কিছু অপ্রিয় সত্য? না, এমনিতেই ওটা নিয়ে ঝামেলা বেঁধে আছে৷ ইহসান যখন চায় না তখন ওটা নিয়ে জলঘোলা করতে রাজি না ও। সৃজা কোনোভাবে কথা কাটানোর চেষ্টা করল। কিন্তু আজিজ শেখ জহুরি চোখে ওকে পরখ করতে লাগলেন। তিনি এত সহজে ছড়ালেন না ওকে। আবারো কথার মারপ্যাঁচে ফেলে জানতে চাইল কী এমন ছবি ওটা, যারজন্য তার ছেলে রাগারাগি করে বেরিয়ে গেছে! সৃজা কিছুতেই বলতে চাইছিল না, কিন্তু আজিজ শেখ বাধ্য করলেন ওকে ছবিটার ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে। সৃজা হার মানলো তার কথার জালে। তবে সরাসরি কিছু বলল না। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলল ছবিটা একটা মহিলা আর দুটো বাচ্চার! শুনেই আজিজ শেখ বিস্মিত হয়ে গেলেন। বুঝে গেলেন ওটা কী ছবি হতে পারে। তিনি ক্ষ্যাপাটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন সৃজার দিকে। গলা দিয়ে কতক্ষণ শব্দ বেরুলো না তার। নিজেকে ধাতস্থ করলেন সময় নিয়ে। এরপর কাঠিন্য নিয়ে বললেন, “তুমি যে একটা বেয়াদ্দব মেয়ে তা এইবার ওর বুঝা উচিৎ। ওর জিনিসে ধরবা ক্যান ওরে না বইলা?”

সৃজা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। ওর ভীষণ কান্না পাচ্ছে, কিন্তু এদের সামনে কাঁদা যাবে না। কাঁদার সময়ও নয় এটা। একটা ছবির জন্য এতকিছু কাহিনী হবে জানলে ও ছুঁয়েও দেখতো না। তবে একটা জিনিস বুঝল যে, আজিজ শেখ ভীষণ চতুর ও ধূর্ত একটা লোক। ঠিকই এ কথা, সে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে ওর থেকে জেনে নিয়েছে ছবির বিষয়টা। ওর ভীষণ খারাপ লাগল ব্যাপারটাতে। তবুও আজিজ শেখকে বিনীত স্বরে বলল, “আংকেল আপনি একটু দেখুন না, যদি কোনো খোঁজ পান।”
আজিজ শেখ তিরিক্ষি গলায় বললেন, “পোলা আমার, আমি ওর বাপ। তুমি না বললেও আমি ওর খোঁজ করব। তবে তুমি যে ওর কেমন জীবনসঙ্গী হইয়া আসছো সেইটা ওর বুঝনের দরকার আছে! আমি যে বাপ হই, ওর ভালো চাই এইডা পোলাডা বুঝল না, চিরকাল আমারে ভুলই বুঝল। কোথা থেইকা হাভাতে ধইরা নিয়া আসছে। যার সংসারে নজর নাই! লাই দিয়া মাথায় তুলছে…”
সৃজার চোখে পানি এসে গেল কটুক্তি শুনে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো ও। ওদিকে ইজহানও থম মেরে বসে আছে৷ ওর বুঝতে বাকি নেই কোন ছবিটার কথা বলেছে সৃজা!

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ৷ গায়ে কোনো কাপড় নেই ইহসানের। কাচের জানালা ভেদ করে আসা রোদ্দুর চোখেমুখে পড়ছে ওর। সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পর ভোরের দিকে চোখ লেগে আসা ইহসান ঘুমের ঘোরেই বিরক্তিতে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে উঠল। গলা খাকারি দিয়ে বলল, “অ্যাই সৃজু, ঘুমাতে পারছি না তো। রোদ এসে লাগছে, পর্দাটা টেনে দে।”

কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পরেও যখন সৃজার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না, জানালার পর্দা টেনে দেওয়া হলো না তখনি কপাল কুঁচকে গেল ইহসানের৷ বিরক্তি নিয়ে বন্ধ চোখদুটো খুলল সে। প্রথমে বুঝে উঠতে পারল না সে কোথায় আছে। কিন্তু মস্তিষ্কটা কাজ শুরু করতে ধরফড়িয়ে উঠে বসল ও। মনে পড়ল তিনদিন যাবৎ সে এখানে, এই ফ্ল্যাটে অবস্থান করছে! সৃজার উপর অভিমান না রাগ জন্মেছে ও জানে না। কিন্তু ও কিছুতেই চায়নি সৃজার হাতে পড়ুক ছবিটা। বাড়িতেও ফিরছে না সে এই ভয়ে, জবাবদিহি করতে হবে এই ছবিটা নিয়ে। ফোন ধরারও সাহস হচ্ছে না, যদি আবার জিজ্ঞেস করে ছবির মহিলা কে? সে কী জবাব দেবে? এটা আমার মা অথচ আমি তোর থেকে লুকিয়ে গেছি? বলিনি তোকে? ইহসান ভাবতে পারে না এমন কিছু! আজ পর্যন্ত মেয়েটা ওর ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি, না জানতে চেয়েছে কিছু!

সৃজাকে সে সারাক্ষণ ক্ষেপালেও ভীষণ আদরে রাখে, ওর গায়ে হাত তোলার কথা ভাবতেই পারে না। অথচ সেদিন কী বিশ্রি ব্যাপার হয়ে গেল! ছবিটা নিয়ে রাগের মাথায় মেয়েটাকে সে আঘাত করে বসেছে। যেটা একদম উচিৎ হয়নি। তিনদিন ধরে অনুশোচনা হচ্ছে ওর ভীষণ। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। বুক পুড়ছে, যন্ত্রণা হচ্ছে ভেতরে। সৃজাটা নিশ্চয় অভিমান করেছে ওর উপর! নাকি অস্থির হয়ে আছে, রাগ করে বসে আছে? মাফ চাইলে ওকে মাফ করবে মেয়েটা? ইহসান দ্বিধান্বিত হয়ে নিজের উপর ত্যক্ত হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। ঠান্ডা লাগছে ভীষণ। রিমোটটা খুঁজে নিয়ে এসিটা বন্ধ করে সে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রান্নাঘর থেকে দু’কাপ চা বানিয়ে পাশের রুমটাতে গেল সে। দরজার নব ঘুরিয়ে খুলল সে, এরপর ভিড়ানো দরজার কপাট লাথি দিয়ে সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। প্রবেশ করেই ভেতরের দৃশ্য দেখে ওর মেজাজটা বিগড়ে গেল। বিশ্রি একটা গালি দিলো হুইল চেয়ারে বসে থাকা যুবককে। ঝাঁঝালো গলায় বলল, “সারারাত গিলেছিস এরপরেও কলিজা শান্ত হয়নি? সকাল সকালই শুরু করেছিস!”

যুবক তাকালো ওর দিকে। এরপর বিগলিত স্বরে বলল, “মর্নিংয়ে গলাটা না ভেজালে দিনটা ঠিকঠাক শুরু হয় না। দু’ পেগ নিতেই হয় ব্রো। তুমি কী নিয়ে এসেছ? কফি? উহু! তুমি তো আবার চা খোর…”
বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলল ইহসান, “খাবি চা?”
“তোমার আদা চা অবশ্যই খাব।”
ইহসান কাপদুটো বেড সাইডের উপর রেখে বিরক্তি নিয়ে বলল, “বোতল ফেল, ফ্রেশ হয়ে আয়।”
যুবক এবার বাঁকা হাসল, “ঠ্যাংদুটো ভেঙ্গে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছ, উড়ে উড়ে যাব যে আমার তো ডানা নেই ব্রো।”
“নজর ঠিক না করলে হাতদুটোও যাবে।”

লেভেল লাগানো কাচের বোতলটা মেঝেতে রেখে যুবক কপাল চেপে হেসে উঠল, “লাইফে সিরিয়াস একটা প্রেমেই পড়েছি, নজর তো ঠিক হবে না ব্রো। আমার নজর ঠিক যদি করতেই চাও, তাহলে হয়তো আমাকে তোমার মেরে ফেলতে হবে। আমি জানি সেটা তোমার পক্ষে সম্ভব না।”
ইহসান তীক্ষ্ণ নজরে তাকাল এ কথা শুনে। রক্তাভ হয়ে উঠল চোখজোড়া। নিশপিশ করে উঠল হাত। গমগমে কণ্ঠস্বরে বলল, “অসম্ভবও না।”
ব্যান্ডেজে আবৃত পা নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে থাকা ইনজান শয়তানি হাসি দিয়ে একবার ওর হাতের দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে ভাইয়ের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়ে সে বলল, “আমার তো প্রথম প্রেম তাই না? উহু! অত সহজে ছাড়ছি না।”

তেড়ে এসে ঘুষি বসাল ইহসান ওর চোয়ালে। কঁকিয়ে উঠে পরক্ষণেই হেসে ফেলল ইনজান। ইহসান ওর চোয়াল চেপে ধরে রাগত স্বরে বলল, “এই তুই প্রেম-ভালোবাসার কী বুঝিস? প্রথম প্রেম আবার কী? তোর কাছে মেয়েরা হলো খেলার জিনিস, টিস্যুর মতো একবার ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলার জিনিস। কিন্তু আমার সৃজা কোনো খেলার জিনিস না, না কোনো টিস্যু আর সস্তার মেয়েমানুষ! তাই ওকে ছাড়তে বাধ্য তুই। ভাই বলে, নয়তো কবেই তোকে কিছু একটা করে ফেলতাম আর তিনহাত মাটির নিচে রেখে দিতাম।”
ফিসফিসিয়ে বলল ইনজান, “তুমি হলে তোমাকেও আমি কিন্তু সেই সুযোগটাও দিতাম না। ব্যাপার কী? ল্যাভেন্ডারের চেয়ে আমাকে একটু বেশি ভালোবাসো নাকি? উফ ব্রো! বে-ইনসাফি হয়ে যাচ্ছে তো! ভেরি স্যাড!”
ইহসান রুক্ষ স্বরে বলল, “তোর মতো নষ্টকে যে এখনো সুযোগ দিয়ে যাচ্ছি এই তোর সাত কপালের ভাগ্য! নেহাৎ মায়ের পেটের সন্তান তুই, দায়িত্ব আছে আমার তোকে শুধরানোর। কিন্তু তাই বলে আমার সর্বস্ব তোকে দিয়ে দেব, অত মহান নই আমি। ইহসান শেখ জীবনে দু’জন মানুষকে প্রায়োরিটি দিয়ে এসেছে, এদেরকে সে ভাগ করতে শেখেনি ; এক তার মা, দুই তার স্ত্রী!”

ইনজান বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে চোখমুখ কুঁচকে ফেলল, “স্ত্রী….উফ ব্রো! বুকে লাগে তো।”
“কু*ত্তার বাচ্চা, নাটক করবি না।’’
ইনজান মুখ গোঁজ করে ফেলল, “এই দেখো, সত্য বললেও রাগ করে ফেলো তুমি! জানোই তো, মিথ্যে বলে আমি কাউকে খুশি করতে পারি না আমি। আমার কিন্তু মনে যা মুখেও তা-ই।”
“ফটকাবাজি বন্ধ কর! মেরে মুখ ভেঙে দেব।”
“ওকেহ, বন্ধ করলাম। দয়া করে এবার আমাকে ওয়াশরুমে যেতে হেল্প করো, পি পেয়েছে!”
ইহসান রাগ চেপে হুইল চেয়ারের হ্যান্ডেল মুঠো করে ধরল। এরপর সেটা ঠেলে ওয়াশরুম অবধি নিয়ে যেতেই যুবক তেড়ছা গলায় ওকে বলল, “ভেতরে আসবে একটু?”
“তুই কীভাবে পি করিস সেটা আমাকে দেখতে হবে?”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩৪

ইনজান আবারো কপালে আঙুল বুলাল, “চার মাসের আগে তো উঠে দাঁড়াতে পারব না। প্যান্ট খুলতে সাহায্য করবে তো নাকি!”
ইহসান চোয়াল শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “তোয়ালে পরে আছিস নির্লজ্জ!”
“উপস সরি।”
“ভন্ড।”
ইনজান কথাটা ফিরিয়ে দিয়ে বক্র হাসি ঠোঁটে ঝুলাল, “ভন্ড…আমার ল্যাভেন্ডারের একমাত্র বরটা।”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৩৬