অশ্রুবন্দি পর্ব ৪১
ইসরাত জাহান ফারিয়া
প্রথমদিকে কোনো লক্ষণ টের না পেলেও ইদানীং সৃজা লক্ষ্য করেছে, সে ইহসান ছাড়া অন্য কারও গায়ের ঘ্রাণ সহ্য করতে পারছে না। কোনো পারফিউমেরও নয়। এর মধ্যে ঘুমেও সমস্যা হচ্ছে, ছোটখাটো বিষয়ে রাগ জন্মাচ্ছে, কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, বহুবছর আগে কে, কী বলেছিল, ঠাট্টা করেছিল, আঘাত করে কথা বলেছিল—সে সমস্ত কথা স্মৃতিতে জেগে উঠছে আর তাদের প্রতি ভয়ানক রাগ জন্মাচ্ছে। মুড সুইংয়ের এ যন্ত্রণা ওকে বড্ড ভোগাচ্ছে! ইস্মি বলেছে, এগুলোও প্রেগন্যান্সির লক্ষণ, একটু অন্য ধাঁচের, তবে খুব স্বাভাবিক।
সৃজার গর্ভধারণের খবরটা এ বাড়িতে ইস্মি বাদে সালেহা বেগম জানেন। এলিজা, নীলু ফুপিও জানে। মা হওয়ার মতো নিদারুণ সুখের খবরটা সৃজা পেয়েছিল অসময়ে, অদ্ভুতভাবে। ইহসান যখন রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, ঠিক সেই সময়টাতে!
নিখোঁজ ইহসান কোথায় আছে, রশিদ জানে কি-না কিছু—এটুকু তথ্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার রেস্তোরাঁয় যাওয়া হয়েছিল সৃজার। তেমনি একদিন রিকশা করে ফেরার সময় পেছন থেকে আরেকটি রিকশার ধাক্কায় সৃজা পড়ে গিয়ে পা মচকে বেশ ব্যথা পেয়েছিল। উঠেই দাঁড়াতে পারছিল না। হাতেও চোট পেয়েছিল বেশ! এদিকে দুই রিকশাওয়ালা তখন একে অপরের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়ায় কারও নজর ছিল না আহত সৃজার দিকে। রাস্তায় অতি উৎসাহী কিছু মানুষ তাদের ঝগড়া উপভোগ করতে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসেনি সৃজাকে। তবে অনেক পরে ভিড় ঠেলে একজন মাঝবয়সী মহিলা এসে সৃজাকে উঠতে সাহায্য করে আর ওর চোট দেখে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেল। সৃজা যদিও না করছিল, তবুও মহিলা শোনেননি। অনেকটা জোর করেই নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পা কিছুটা ঠিক হলেও ডাক্তার ওর নরমাল চেকআপ করার পর কিছু প্রশ্ন করে, কী মনে করে ওকে একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট দিয়েছিলেন। ফলাফল পজিটিভ!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
অপ্রত্যাশিত এ খবরটা পাবার পর সৃজা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে তার মধ্যে কেউ আছে, সে মা হতে চলেছে! কারণ—শরীরে প্রেগন্যান্সির কোনো লক্ষণ বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক অনুভূতি, বমি-দুর্বলতা এসব কোনো লক্ষণই ওর নেই। তাহলে? কী করে ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে? ইসমির বেলায় তো সে দেখেছে, মেয়েটা কীভাবে নাজুক হয়ে পড়েছিল! সৃজা ডাক্তারকে বলেও ছিল সেসব কথা। ওকে বিশ্বাস করাতে, সন্দেহ দূর করাতে ডাক্তার ওকে দ্বিতীয়বার টেস্ট করান, এবং সেবারও একই ফলাফল আসে। যুক্তিতর্কে হেরে গিয়ে সৃজাও একসময় বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় সত্যিটা! কী আশ্চর্য! পায়ের সমস্যা নিয়ে সে ডাক্তারের কাছে এসে কী-না জানতে পারল সে মা হতে চলেছে, এটা কোনো কথা? ইহসানের খোঁজ না পাওয়া দুঃখের সময়টাতেও তখন এক পৃথিবী আনন্দ ঘিরে ধরেছিল ওকে। তাই পরপর কয়েক দিন হন্যে হয়ে ইহসানকে খুঁজেছিল বাবা হওয়ার খবরটা জানানোর জন্য। কিন্তু ইহসান নিজেই সব পথ এমনভাবে বন্ধ করে সৃজাকে অসহায় করে তুলেছিল যে একপর্যায়ে কষ্টের অনুভূতিতে ঝাঁঝরা হয়ে সৃজা ঠিক করেছিল, বাবা হওয়ার খবর সেই নিষ্ঠুর লোককে সে দেবে না, কিছুতেই না! নিজ
মুখে সৃজা কখনোই বলবে না সন্তান আসার সুখবরটা!
এর জন্য ইহসান যদি রাগ করে বাড়ি না ফিরে, না ফিরুক! অনেক হয়েছে, আর নয়!
ইহসান ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষণ হলো! সৃজার ঘুম আসছে না, সাফোকেটিং লাগছে। সে ঘুমন্ত ইহসানের চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে অভিমান প্রকাশ করল মনে মনে, বকলও খুব! এরপর সন্তর্পণে ওর বাহুডোর থেকে অতি সাবধানে বেরিয়ে বারান্দায় দরজা খুলে মোড়ায় এসে বসল। বাইরে তখন মাঝরাতের ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারপাশ নীরব-নিঃস্তব্ধ! হাওয়ায় দোদুল্যমান টবের গাছগুলো। শীতল বাতাস গায়ে লাগতেই আরামে সৃজার চোখদুটো বুজে এলো। ও রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে বসে স্বস্তির শ্বাস ফেলে দূরে দৃষ্টি দিলো। আজকাল অন্ধকারে বসে আকাশ পানে তাকিয়ে জ্বলজ্বল নক্ষত্র দেখতে ওর ভালো লাগে।
সোডিয়াম আলোতে পুকুরে মাছের লাফালাফি দেখতে ভালো লাগে। নির্জনতা ভালো লাগে। আর ভালো লাগে ইহসানকে উচিত শাস্তি দিতে…হুহ! কয়েক দিন পর যখন সৃজার পেটটা একটু উঁচু হবে, মা হওয়ার ভাব ফুটে উঠবে ওর মধ্যে, তখন বুঝুক আর আফসোস করুক। এটাই এই লোকের যোগ্য শাস্তি! ভাবা যায়, ইহসান যখন ওর গায়ে হাত তুলেছিল, তখন বাচ্চাটা ওর পেটেই ছিল! কী ভয়ানক! নাহ! ও কিছুতেই জানাবে না, ‘তুমি বাবা হতে চলেছ।’ সৃজা অশ্রুসিক্ত চোখে রাগ-অভিমান গিলে ঘরের ভেতর তাকায়। বিছানায় উলঙ্গ হয়ে ঘুমিয়ে থাকা পুরুষকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে বলল, ‘অনুশোচনা, অপরাধবোধ লুকিয়ে রাখার জিনিস নয়, প্রকাশ করার জিনিস। একবারও মুখ খুললে না, মায়ের কথা তুলতে ভয় হয়, তাই না? আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য একবারও ভুল প্রকাশ করলে না, বড্ড খারাপ হয়ে গেছ তুমি, ইহসান শেখ।’
নাইমুর সাহেবের শরীর খারাপ, মারাত্মক খারাপ। খিঁচুনি হচ্ছে সকাল থেকে। প্রেশারটাও ঠিকঠাক না। ওষুধেও কাজ করছে না। হঠাৎ করে কেন এমন হচ্ছে, বুঝতে পারছে না কেউই। এলিজার থেকে খবরটুকু শুনে সৃজা ভড়কে গেল খুব। ধপ করে বসে পড়ল বিছানায়। হাত-পা অসাড় হয়ে গেল। কিছু জিজ্ঞেস না করেই ফোন কেটে দিলো। কী হলো আব্বুর? কেন আবার অসুস্থ হলো? গতকালই না ভিডিয়ো কলে দেখল মানুষটা ভালো। হুইলচেয়ারে বারান্দায় বসে আছে। একটু একটু হাসলো ওকে দেখে! সেদিনও না আসার সময় আব্বু চেষ্টা করল ওর মাথায় হাত রাখতে! কী হলো হঠাৎ করে আবার? বিছানায় পড়া এই মানুষটা ছাড়া আপন কেউ নেই তো ওদের দু-বোনের! সৃজার সবকিছু আঁধার আঁধার ঠেকল। কান্নায় গলা রোধ হয়ে আসতে চাইল। বিস্তারিত কিছু বলার মতো অবস্থায় রইল না ও, শুধু কম্পিত কণ্ঠে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি চেয়ে বসল ইহসানের থেকে।
ইহসান সবে চায়ের কাপে চুমুক বসিয়েছিল। সৃজার এই আকস্মিক অনুমতির আবেদন চমকে দিলো ওকে কিছুটা। এক মুহূর্তেই ওর চোখের তাপ বেড়ে গেল, চায়ের কাপটি শব্দ করে টেবিলের উপর রেখে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “আমি মরে গেলে, আমাকে মাটির নিচে দিবি নাকি উপরেই রেখে দিবি, জিজ্ঞেস করবি না? মরে গেলে তো আর অনুমতি নিতে পারবি না। নে, জিজ্ঞেস কর তো দেখি!”
সৃজার বুকে ঢেউ আছড়ে পড়ার মতো তীব্র যন্ত্রণা
সৃষ্টি হলো। আব্বুর অসুস্থতার খবর, তার উপর ইহসানের অশুভ কথা—কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। তবে প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারল না, মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল ওর। তর্ক করার মতো শক্তি হলো না। ভঙ্গুর ও ধরে আসা এলোমেলো কণ্ঠে বলল, “এলিজা ফোন করেছিল, আমার যেতে হবে, এক্ষুনি!”
ইহসান ওর কথা কিছুই বুঝতে পারল না। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এক্ষুনি?
কিছু হয়েছে?”
“হ্যাঁ, এক্ষুনি। আব্বুর শরীর খুব খারাপ, ওষুধে কোনো কাজ হচ্ছে না। কী হয়েছে ওরা বুঝতে পারছে না। হাসপাতালে নিতে হবে…”
এটুকু বলে সৃজা আবেগ সংবরণ করতে পারল না। হঠাৎ কেঁদে উঠল দু’হাতে মুখ ঢেকে। ইহসান তখনো বিস্ময় কাটাতে পারেনি। এবারে ওর কান্না দেখে স্থবির হয়ে গেল। নাইমুর আংকেলের শরীর খারাপ এটা না বলে মেয়েটা ওর থেকে অনুমতি চাইছে যাওয়ার? সে ভুল করে, মুখ ফসকে একটা কথা বলেছিল, তার রেশ ধরে মেয়েটা ওকে এই মুহূর্তে এসেও এভাবে পর কেউ ভাবছে? অনুশোচনায় ওর কপালে রগ ভেসে উঠে, হাত-পায়ের তালু গরম হয়ে ওঠে। নিজের কর্মের কথা মনে করে ভেতরে ক্রোধ জন্মে ওর। কিন্তু সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে নিজেকে। ধীরে ধীরে ভেতরের ক্রোধ ঠান্ডা করে ধাতস্থ হয়ে, স্নেহভরা ভঙ্গিতে, ইহসান সৃজার পাশে এসে বসে, ধীরে ধীরে ওকে বুকে টেনে নেয়। অনুশোচনা ভরা ঠান্ডা কণ্ঠে বলে, “কী ভাবতে শুধু করেছিস আমাকে তুই বল তো? আমি খুব খারাপ, নিষ্ঠুর-নির্দয়? তোকে আটকে রাখব ঘরে? এতটা দোষী কবে হয়ে গেলাম তোর চোখে যে, আংকেলের অসুস্থতার খবরটাও জানানোর প্রয়োজন মনে করছিস না?”
সৃজা এর উত্তর দিতে পারে না, ওর কণ্ঠে আর শব্দ নেই। একমাত্র— “আব্বুর কাছে যাব।” তিনটি শব্দ ছাড়া!
নাইমুর সাহেবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর শরীরের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। খিঁচুনি শুরু হয়েছে, শরীর কাঁপছে। রক্তচাপ একবার ২০০, একবার ৮০—তে উঠানামা করছে। শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে, হাঁপানি রোগের মতো। তাঁর মুখমণ্ডল নিস্তেজ, তীক্ষ্ণ কনুইয়ে ঘামে ভিজে গেছে সাদা বিছানাপত্র। একজন নার্স তড়িঘড়ি করে আইভি লাইন লাগাচ্ছেন, অন্যজন অক্সিজেন মাস্ক ঠিক করছেন। ডাক্তার তার পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে পরিস্থিতি কিছুতেই স্থিতিশীল হচ্ছে না। মাঝে মাঝে কাঁপুনির কারণে শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে নাইমুর সাহেব। মনিটর স্ক্রিনে রক্তচাপের ওঠানামা আরও তীব্র হতে থাকে। ডাক্তাররা দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। তারা পরিস্থিতি অনুকূলে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। একে অপরকে দ্রুত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আশা রাখতে পারছেন না। নীলু বেগম করিডোরের বেঞ্চিতে বসে আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছেন। সৃজা-এলিজা নিস্পৃহ আর শূন্য চোখে কাচের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আব্বুকে দেখছে চুপচাপ। অশ্রু শুকিয়ে দু’জনের গালে লেগে আছে। যে ই কেবিন থেকে বেরুচ্ছে তাকেই বারবার আব্বুর কথা জিজ্ঞেস করছে দুই বোন। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাচ্ছে না ওরা। ইহসানকেই নাইমুর সাহেবের কন্ডিশন সম্পর্কে আপডেট জানানো হচ্ছে, সেই থেকে ও দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। সে রশিদকে নিয়ে সবদিক সামলাচ্ছে, ও একটুও ফুরসত পাচ্ছে না সৃজাকে বুকে টেনে একটুখানি মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার, সান্ত্বনা দেওয়ার।
বিকেল পর্যন্ত নাইমুর সাহেবের পরিস্থিতি অবজার্ভ করে সন্ধ্যার পর ডাক্তার ইহসানকে জানালো, “পেশেন্টের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব। তবে আশা দিতে পারছি না। আপনারা যেকোনো খবর শোনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন। বাকিটা আল্লাহর হাতে!”
খুব ক্ষীণ আশাই দিতে পারল ডাক্তার ওকে। ইহসান ডাক্তারের কথার মানে বুঝতে পারল। ভেবে পেল না বাইরে অপেক্ষমাণ তিনটি নারীকে সে কী জবাব দেবে! কথা গোছাতে গোছাতে সে কেবিন থেকে বেরুনোর পর সৃজাকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। মেয়েটা ওকে দেখে একটু হেসে ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস করল, “আব্বু বাঁচবে তো?”
প্রশ্ন শুনে ইহসানের সবকিছু উলটপালট হয়ে গেল। কী বলবে সে? সত্যি না মিথ্যে? কোনটা বললে ঠিক হবে? মেয়ে দুটো তো অসুস্থ বাবাকে অবলম্বন করেই বেড়ে উঠেছে। ও কোনোমতে মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বোধক সায় জানিয়ে সৃজাকে বুকে টেনে নিয়ে সান্ত্বনাসূচক বলল, “সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই কাঁদিস না।”
সৃজা মলিন হাসলো, “কাঁদব না।”
বলে একটু থেমে আবারো বলল,
“আমি তোমার থেকে একটা কথা লুকিয়েছি…এখন শুনবে তুমি?’’
“অনুমতি চাওয়ার খেলাটা এবার বন্ধ কর, দয়া কর আমায়। আমি আর কখনো তোকে এ বিষয়ে কিছু বলব না। প্লিজ, আমি কী করলে মাফ পাব বল তো? পায়ে ধরব তোর? কী করব সৃজা…”
অশ্রুবন্দি পর্ব ৪০
ইহসানের চোখে অনুশোচনা, ব্যথার মিশ্রণ দেখতে পেল সৃজা। ও কিছুক্ষণ সেই ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে ঢোক গিলল। একটু হাসলো। ভেজা চোখ মুছে নিলো ওড়নায়। একটু থেমে, ইহসানের বুকে মিশে গিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল, “ভেবেছিলাম খবরটা তোমাকে বলব না, কিন্তু আজ, এ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বলে দেওয়াটাই ঠিক মনে হলো। আমি কিন্তু এরজন্য ক্ষমাপ্রার্থী নই, শুধু তুমি বাবা হচ্ছ, জানার অধিকার আছে, তাই অধিকারের মান বজায় রাখলাম।”
এমন একটা অসময়ে একথা শুনে, পুরোপুরি আহাম্মক বনে গেল ইহসান। কপালে ভাঁজ পড়ল ওর। ধরে এলো গলা, এলোমেলো হয়ে এলো শব্দগুচ্ছ। তীব্র বিস্ময়ে ও কম্পিত দু’হাতে সৃজার মুখটা আগলে নিয়ে বিচলিত চোখে তাকাল। বিস্মিত, অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল, “বা বাচ্চা—আমার? আমি বাবা হচ্ছি?”