অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৪

অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৪
ইসরাত জাহান ফারিয়া

নাইমুর সাহেবের তেমন কোনো আত্মীয় নেই, যারা আছে তারা সবাই দূরসম্পর্কের। বহুবছর তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। সৃজাদের নানা বাড়ির পরিবারের দিক থেকেও কেউ নেই, সৃজার মা অনিতা রহমানের একজন চাচাতো ভাই ছাড়া। তিনি বেঁচে থাকাকালীন মাঝেমধ্যে যাওয়া-আসা করতো। সৃজারা তখন ছোটো। সপরিবারে তিনি কানাডায় আছেন আজ বারো বছর। দুই ঈদে সৃজাদের জন্য ঈদি পাঠান। এতটুকুই শুধু সম্পর্ক! তাই নাইমুর সাহেবের মৃত্যুতে দেখা গেল দুটো মেয়ে আর একটা বোন ছাড়া তিনি আর কোনো পরিজনই রেখে যাননি, যারা তার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলবে। তবে কোথা থেকে খবর শুনে নাইমুর সাহেবের পুরাতন অফিস কলিগরা এসেছে, আরো এসেছে তাঁর গ্রামের কিছু মানুষ। যাদেরকে সৃজা-এলিজা চেনে না। নীলু বেগম জানালেন তারা গ্রামেরই চেনাজানা। এদের মধ্যে গ্রামের চেয়ারম্যান তার দুই পুত্র নিয়ে জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন। অনকক্ষণ যাবৎ ব্যাপারগুলো পর্যবেক্ষণ করে ইজহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিজুকে ফোন করে বলল,

“এই তুই, আমার ডিসেন্ট ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি চলে আয়। ওর শ্বশুরটা ইহলোক ত্যাগ করেছে। কিন্তু আত্মীয়স্বজন তেমন কেউ নেই। তুই এলে একজন বাড়বে, আয়, দেখে যা!”
ফোনের ওপাশে মিজু বিস্ময় নিয়ে বলল, “ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! কী বলেন স্যার! কখন, কেমনে হলো?”
“ডিটেইলস বলার জন্য ফোন দিয়েছি?”
“না মানে…”
“শোন, অত কথা বলার মতো মুডে নেই আমি। চাকরির ভয় থাকলে চলে আয়, নয়তো থালাবাটি নিয়ে কাল থেকে ভিক্ষে করিস।”
গমগমে স্বরে কথাগুলো বলেই ইজহান ফোন রেখে দিলো। আর স্যারের ফোন পেয়ে ঘন্টাখানিকের মধ্যেই ছুটে এলো মিজু।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলায় সৃজা শেষবারের মতো আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেও এলিজা এক বুক শূন্যতা আর অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল শুধু। বোনকে সামলেছিল নিজে না কেঁদে। তবে বলার মতো কিছুই ছিল না দু’জনের, ছেড়ে যাওয়ার মর্মান্তিক প্রশ্ন ছাড়া! তবে জবাব পায়নি তারা।
মসজিদ থেকে কাঠের খাটিয়া এসেছে। কয়েকজন হুজুর আর এলাকার গণ্যমান্য কিছু ব্যক্তিবর্গও এসেছে। নাইমুর সাহেবকে কাজ বাসার নিচে খোলা এক টুকরো জায়গায় রাখা হয়েছে। শেষ গোসলের পর দাফন-কাফন আর বিদায়ের ব্যপার নিয়ে কথা বলার জন্য ইমাম সাহেব ইহসানকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ইহসানের সুযোগ হচ্ছে না সেখানে যাওয়ার। বাবার নিথর দেহের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার পর থেকে সৃজা ওকে ধরে অসহায় শিশুর মতো কাঁদছে। এ কারণে ওর গলা বসে গেছে, মাথার তালু অসম্ভব গরম হয়ে উঠছে। কান্নাকাটি করে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। ইহসান কোনোমতেই ওকে একটু স্থিতিশীল করতে পারছে না। আদর করে, বকে, ধমকে কিছুতেই না। মেয়েটার মুখে শুধু আব্বুকে নিয়েই কথা।

মর্মান্তিক দৃশ্য, মর্মান্তিক পরিবেশ! ইস্মির মুখ লাল। চোখদুটো ভারী হয়ে এসেছে। জল গড়িয়ে পড়ছে। বাবাহারা মেয়েটিকে কীভাবে সান্ত্বনা দেয়া যায়, সে বুঝে পেল না, তবুও সৃজাকে বোনের মতো করে বোঝানোর চেষ্টা করল। অনাগত বাচ্চাদের কথা ভেবে তাকে একটু স্বাভাবিক হতে বলল, কিন্তু সৃজার কানে কিছুই ঢুকলো না। শেফালি বুয়া পর্যন্ত সান্ত্বনা দিয়ে অনেক বোঝালো, তবে সেসবেও মনোযোগ নেই সৃজার। একপর্যায়ে মানসিক ধকল নিতে না পেরে আবারো অজ্ঞান হয়ে পড়ল। ইহসানের এত অসহায় লাগল যে, বাধ্য হয়ে ইজহান আর রশিদকে ডেকে বলল, সব কিছু সামলাতে। সৃজার দুরবস্থা দেখে ইজহান ভ্রু বাঁকিয়ে বলল, “মাস্টারি কম করে নিজের বউ সামলাও।”

বলে এরপর সে নিজে মিজু, রশিদকে নিয়ে দাফন-কাফনের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কথা বলতে গেল। এদিকে ইজহানকে নিজে থেকেই সাহায্য করতে যেতে দেখে ইস্মি খানিকটা স্বস্তি পেল। যাক! মানুষটার বিবেকবোধ আছে তাহলে!
ইমাম সাহেবের সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরে ইজহান উপরতলায় বউয়ের খোঁজ নিতে এলো। এসে দেখলো ইস্মি এখনো বসে আছে সৃজার কাছে, জ্ঞান ফিরেছে ওর। খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এই ত্যাদড় মেয়ে কিছুই মুখে তুলছে না। শোকে পাথর বনে গেছে। চেহারা এতটুকু হয়ে গেছে, যেন রক্ত নেই! গর্ভাবস্থায় এই বুদ্ধিমতি মেয়ে এখন অবোধ আচরণ করছে? ইজহান রেগে একটা ধমক দিলো সৃজাকে, সঙ্গে সঙ্গেই কেঁদে উঠল সৃজা। ইজহান তা দেখে ঝাঁঝালো স্বরে বলল ওকে, “পেটে টুনটুনির ডিম ছাড়া আরকিছু বড় হবে না। অসভ্য মেয়ে, না খেয়ে কান্নাকাটি জুড়াচ্ছে! এতে কি তোমার আব্বু ফিরে আসবে? মানুষটার এখনো বিদায়ই হয়নি, রুহটাকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে শেষ করে ফেলছ তুমি!”

ওর এই আচানক ব্যবহারে সৃজা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এরপর আবারো ফুঁপিয়ে উঠল। ইহসান রাগে কাঁপতে কাঁপতে ইজহানকে ঘাড় ধরে বের করে বাইরে এনে বলল, “তোর কী মাথা গেছে হারামজাদা? ওকে এভাবে ধমক দেওয়ার সাহস পেলি কোথায়?”
“তো কী করব? এভাবে কান্নাকাটি করলে টুনটুনির ডিম ছাড়া আর কিছু দিতে পারবে না তোকে…”
“টুনটুনি মানে…”
ইজহান ক্ষ্যাপাটে গলায় বলল, “তুই ফোনে বললি না, তোর ডাবল টুনটুনি আসছে…তো ওরা কি না খেয়ে থাকবে নাকি তোর বউয়ের জন্য! যত্তসব…বউকে শাসন কর, আমাকে না ধরে!”
ইহসান রক্তবর্ণ চোখে তাকাল, “নষ্ট কোথাকার!”
“তুই নষ্ট, ছাড় আমাকে! সাধু চেহারা নিয়ে ঘুরিস, ওদিকে বাপও হয়ে যাস! সবই কপি…”
“কার কপি?”
“আমার—আমি বাবা হচ্ছি শুনেই তো লোভে পড়ে গেলি!”

ইহসান ওর লাগামহীন কথায় রেগে গিয়ে চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দিয়ে বলল, “আমি চেয়েছি, আল্লাহ দিয়েছে৷ তোর থেকে দেখে আমার বাপ হতে হবে, এমন দুর্দিন আমার আসেনি। তাই লজিকলেস কথাবার্তা বলে সিনক্রিয়েট করবি না। ইস্মিতা অনেকক্ষণ যাবৎ না খেয়ে আছে, খেয়াল রাখ গিয়ে। ফালতু যত্তসব…”
বলে ইহসান ওকে ছেড়ে দিলো। ইস্মিতা এতক্ষণ না খেয়ে আছে! ওহ মাই গড! ইজহান শেফালি বুয়াকে ডেকে খাবার রেডি করে দিতে বলে, ইস্মিকে নিয়ে এলো। রুমে ঢুকে দরজা আটকে ফ্রুটসের বাটি সামনে রেখে রাগান্বিত স্বরে বলল, “একজন তো না খেয়ে শুকিয়ে মরছে, আপনিও কী তেমন হবার মতলব কষছেন নাকি?”
একজন বলতে যে ‘সৃজাকে’ বোঝাচ্ছে তা বুঝে বিষম খেল ইস্মি। ও মাথা নেড়ে না না করতেই ইজহান বলল, “একগ্লাস পানিও তো আসার পর থেকে খাওনি, আমি কিন্তু ফিরিয়ে নিয়ে যাব, কথা না শুনলে।”
ইস্মি মিনমিন করে বলল, “খেতে ইচ্ছে করছে না।”

ইজহান চোখ লাল করল, “আমি কিন্তু টুনটুনির ডিম চাই না, হৃষ্টপুষ্ট বাচ্চা চাই!”
সৃজাকে এ অবস্থায় দেখে বা ওকে রেখে যদিও কিছুই খাওয়ার ইচ্ছে বা রুচি নেই ইস্মির তবুও হুমকি শুনে অবাধ্য হওয়ার সাহস করল না। কারণ ইজহানের কথা না শুনলে দেখা যাবে, লোকটা রেগে সিনক্রিয়েট শুরু করবে। যার কোনো মানেই হয় না। ইস্মি তাই অনিচ্ছা নিয়েই খাবার মুখে তুলল! ইজহান তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল, কিছুক্ষণ পর চিন্তিত মুখে ভ্রু কুঁচকে বলল, “এই বউটার পেটে দুই বাচ্চা, খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক না করলে তো…”
ইস্মি বিরক্ত চোখে তাকাল, “ছিহ! আপনি ওর ভাসুর হোন। কথাবার্তা সংযত করুন!”
ইজহানের মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল, পরক্ষণেই মুখ কালো করে সে বলল, “আমি কী অসংযত কিছু বলেছি নাকি?”
“কোথায় কি বলতে হয়, এই সেন্স কাজ করে না আপনার?”
ক্ষোভ নিয়ে বলল ইস্মি। ইজহান রেগে গেল, “আশ্চর্য! তুমি এভাবে নিচ্ছ কেন ব্যাপারটা? আমি তো ভেড়ার বউ, পেটে দুইবাচ্চা নিয়ে এত কান্নাকাটি করছে তাই ভাবছি ওর কথা, শত হলেও আমার বিবেক আছে! তুমি আমাকে এখনো এত খারাপ ভাবো!”

রাগে-দুঃখে ইজহানের মাথা খারাপ হয়ে যেতে লাগল। ও এত চেষ্টা করছে, টুকটাক সবার কথাই ভাবছে আর ওর নিজের বউই কি-না ব্যপারটাকে খারাপভাবে নিচ্ছে? এইযে, সে ভেড়ার কথা শুনে, বউয়ের কান্নাকাটি নিতে না পেরে সৃজাদের বাড়িতে ওকে নিয়ে চলে এসেছে এর কোনো মূল্যই নেই? ভালো হয়ে লাভ কি তাহলে? হাত-পা গুটিয়ে ইজহান মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল খাটে। বিছানাটা খুব নরম আর আরামদায়ক। ইজহান চাদর টেনে নিলো গায়ে।
ইস্মি তা দেখে বিস্ময় নিয়ে বলল, “একী, শুয়ে পড়ছেন যে? জানাযায় যাবেন না?”
“কেন যাব? আমি খারাপ, খারাপের নামাজ কবুল হয় না। অহেতুক ভালো মানুষের জানাযায় গিয়ে আমি পাপিষ্ঠ আর তার আযাবের কারণ হতে চাই না।”

ক্ষোভ নিয়ে বলল ইজহান। ইস্মি বাকরুদ্ধ বনে গেল।
সে কী এমন বলেছে যে ফোঁসফোঁস করছে? তখনকার কথার প্রভাবই এটা নাকি? ইস্মি অস্বস্তি নিয়ে উঠে গিয়ে পাশ ঘেঁষে বসলো, আমতা-আমতা করে বলল, “এসব কী অযৌক্তিক কথাবার্তা! খারাপ হলে কি আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসতেন? এত কাজ করতেন আঙ্কেলের জন্য?”
ইজহান তবুও কথা বলল না। সে চোখবুঁজে লম্বা হয়ে শুয়ে রইল। ইস্মি ভয়ে ভয়ে ওর পিঠ ঠেলে বলল, “উঠুন না।”
“ধাক্কাবে না।”
ইস্মি বিচলিত কণ্ঠে বলল, “মৃত বাড়ি এসে তার জন্য নামাজই পড়লেন না এটা কেমন বিশ্রি ব্যাপার! লোকে কী বলবে!”
গর্জে উঠল ইজহান, “যা বলার বলুক, আমার কারো কথায় কিছু যায়-আসে না। তোমার যায়-আসে, তুমিই ওসব নিয়ে পড়ে থাকো।”

এই লোক বুঝদার নয়, বোঝনোই বৃথা! ইস্মি হতাশ গলায় বলল, “আচ্ছা আমি ক্ষমাপ্রার্থী!”
তীক্ষ্ণ স্বরে বলল ইজহান, “নাটক করো না, তোমার মুখে এক মনে আরেক আজ পরিষ্কার হয়ে গেল।”
“নাটক করছি না, আমি সত্যিই ওভাবে বলতে চাইনি আপনাকে।”
গোমড়ামুখে বলল ইজহান, “ভালো।”
“উঠুন না।”
“সরো।”
ইস্মি এবার অসহায় গলায় বলল, “আপনি কিন্তু আমাকে আবার কষ্ট দিচ্ছেন।”
ইজহান তাও উঠল না, কিছুক্ষণ মূর্তির মতো শুয়ে রইল এরপর একটানে ইস্মিকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। ওভাবেই চুপচাপ শুয়ে রইল কিছুক্ষণ। এক পর্যায়ে ইস্মির হাত টেনে নিয়ে বুকের বা-পাশে চেপে ধরে রেখে বলল, “তোমার ওসব কথা শুনলে আমার কেমন হয় দেখো!”
ওর হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক গতি অনুভব করে ইস্মি মুখ তুলে চাইল, “আপনি এমন কেন?”

“কেমন?”
“পাগল।”
“সত্যিই নাকি?”
“হুঁ।”
সিরিয়াস দেখাল ইজহানকে, “তাহলে তোমার পেটের ভেতরেরটাও তো পাগল বের হবে।”
“সেটা ভেবেই তো ভয় হচ্ছে, দুই পাগলকে আমি সামলাব কেমন করে!”
দ্রুত স্বরে বলল ইজহান, “ওটাকে পাবনায় পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়?”
“ছিহ! আপনি এত হিংসুটে!”
চোখ পাকিয়ে ফেলল ইস্মি, দেখে ইজহান কাঁচুমাচু করল, “হিংসার কী দেখলে এখানে? দুই পাগলকে সামলাতে কষ্ট হবে, তাই সমাধান দিলাম।”
“তাহলে আপনাকে রেখে আসলেই হবে৷”

ইজহান বিস্মিত ও রুষ্ট, “আমাকে কেন?”
“কারণ আপনি বড়ো। আর যে আসবে সে ছোটো!”
“আমি তাহলে ছোটো হয়ে যাই ইস্মিতা?”
“তাহলে তো আপনাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে।”
“ছিহ!”
“একটা কাজ অবশ্য করা যায়, আপনি আর আপনার পাগল বাচ্চা, দু’জনকে দু’জনকে নিয়ে থাকবেন, আমি কোথাও চলে যাব। এত পাগল সামলানো আমার কাজ না।”

ইজহান মুখ গোঁজ করে ফেলল, “পা ভেঙ্গে রেখে দেব। কোথাও যাওয়া চলবে না।”
ইস্মি এবার হাসলো, “রাগ কমলো?”
“হুম।”
“ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে এসেও আপনার এমন করতে হয়? একটু বুঝদার হতে পারেন না? কীভাবে এতবড় অফিস সামলান আপনি?”
ভ্রু কুঁচকে ফেলল ইজহান, “ডাউট আছে নাকি তোমার?”
“থাকার কথা নয়?”
বৌয়ের বলার ধরণ দেখে ইজহান হুট করেই হেসে ফেলল। ইস্মি তাকিয়ে দেখল সেই হাসি–এত মনোমুগ্ধকর! এভাবে হাসে কেন লোকটা? জানে না, এভাবে হাসতে দেখলে ভয় হয় ইস্মির,
বড্ড বুক পুড়ে! ইস্মির হঠাৎ করেই চোখের কোণে পানি জমলো। ইজহানের বুকে মুখ ঢুকিয়ে লুকিয়েও ফেলল তা। বলল, “উঠুন এবার, দেরি হয়ে যাচ্ছে। নামাজে যেতে হবে।”
“জানাজা পড়তে যাওয়ার আগে একটা চুমু চাইলে কি পাপ হবে?”
ইস্মি ঠোঁটদুটো ওর কপালে চেপে ধরে অস্ফুটস্বরে বলল, “এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলে পাপ হবে না।”
.
জানাযা পড়াতে লা’শ নিয়ে বেরুতে হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ইহসান ইস্মি আর শেফালি বুয়াকে সৃজার ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেল। এলিজাকে ডাকতে গেল, কিন্তু মেয়েটা ফুপির কাছেই বসে রইল। বাবাকে বিদায় দিতে গেল না। নিচ তলার ভাড়াটিয়া মহিলাকে এলিজার কাছে থাকার অনুরোধ করে ইহসান হতাশ হয়ে চলে এলো। সিঁড়িঘর দিয়ে নামার সময় ইজহান খোঁচা দেওয়া কণ্ঠে বলল,“এই বাড়িতে একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে!”
ইহসান ওর দিকে রক্তবর্ণ চোখ করে তাকাল,
“তাহলে চলে যা!”
মুখ ঝামটা দিয়ে ইহসান নেমে গেল। ইজহান সেদিকে কটমট করে তাকাল। ভেড়াটা এখানে এসেও তাকে অপমান করেই যাচ্ছে! এর শোধ সে সুযোগ পেলেই নেবে। সে রাগ সামলে পকেট থেকে টুপিটা মাথায় পরলো, জানাজার নামাজে গিয়ে সে দাঁড়ালো ইহসানের ঠিক পাশেই। আশেপাশে যারা ছিল তারা অবাক হয়ে কানাঘুষা শুরু করল, একই চেহারার দুটো ছেলে, এতক্ষণ তাহলে তারা কে, কার সাথে আলাপ করেছে? নাইমুরের মেয়ের জামাইয়ের সাথে, নাকি মেয়ের ভাসুরের সাথে? আশ্চর্য!
.
শেষ বিকেল! দাফনকাজ সম্পন্ন করে ইজহানের উপর একটা দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে রশিদকে নিয়ে ইহসান কোথায় একটা কাজে গেছে। আর খতিবের সাথে কথা বলতে ইজহান এসেছে মসজিদে। এখানে আরো কয়েকজন মুরুব্বি গোছের লোক, তারা বারবারই ওকে ইহসানের সাথে গুলিয়ে ফেলছে। জামাই ডাকছে। ইজহান কয়েকবার ভুল শুধরে দিয়েছে, তবুও কাজ হচ্ছে না। নাইমুর সাহেবের গ্রামের চেয়ারম্যান লোকটা তো এসে রীতিমতো ওকে আড়ালে নিয়ে জিজ্ঞেসই করে ফেলেছে, “জামাই বাবাজি! নাইমুরের সব মেয়েদেরই কী বিয়ে হয়ে গেছে?”
“না। একজনের হয়েছে শুধু!”
“তো আর একজন বাকি?”
“জি।”
বিরক্তি নিয়ে কথাটুকুর উত্তর দিয়েই সে চলে এসেছিল ওখান থেকে। কিন্তু খতিবের সাথে কথা বলে মসজিদের বাইরে এসে জুতো পায়ে দেওয়ার সময় গাড়ির চেয়ারম্যানের একটা ছেলে এসে ওর সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিলো। এক কথা, দুই কথা বলার পর লাজুক হেসে বলল, “জানি এসময় কথাটা বলা ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু আপনিই তো এখন ওদের অভিভাবক, তাই বলছি, আপনার ছোট শালির হাত যদি দিতেন…কথা দিচ্ছি খুব ভালো রাখব।”
“ছোট শালির হাত দেব মানে?”
“মানে বিয়ে!”
ইজহান তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রইল ছেলেটার দিকে।
ছোট শালি বলতে যে, সৃজার বোন এলিজাকে বোঝাচ্ছে সেটা বুঝতে বেগ পেতে হলো ইজহানের। সে ছেলেটার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে এরপর আগাগোড়া জহুরি চোখে পরখ করে জিজ্ঞেস করল, “যোগ্যতা?”
“লন্ডনে এমবি-এ করছি!”
“বউ নিয়ে রাখবে কোথায়?”
“লন্ডনে।”
ইজহান প্রশ্ন করল, “বয়স কতো?”
“আঠাশ।”
“সরি, হবে না।”
“কেন? আমার বয়স বেশি?”
ইজহান শক্ত গলায় বলল, “হু, সাথে বিবেক বুদ্ধিও কম, হাঁটুর নিচে।”
ছেলেটা থতমত খেয়ে বলল, “কেন এমন মনে হলো?”
তীক্ষ্ণ গলায় বলল ইজহান, “মুর্দা বাড়িতে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয় না।”
“কিন্তু… ”
“তাছাড়া এ বাড়ির মেয়েরা খুব দামী, তোমার মতো যে, সে এসে ভিক্ষে চেয়ে বেড়ায়, কতক্ষণ আগেও একজন চেয়ে গেল। সেটাকেও রিজেক্ট করেছে আমার ভাই!”
“আপনার ভাই, সে কেন?”

ইজহান কিড়মিড় করে বলল, “কারণ শালিটা আমার না, আমার ভাইয়ের। তবে যেরই হোক না কেন, মেয়ে বিয়ে দেওয়া হবে না। আর এসব অবান্তর কথাবার্তা বলে পরিস্থিতিটাকে জলঘোলা করবে না। ওয়ার্ন করে দিলাম।”
ছেলেটা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কতক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে রইল। এরপর লজ্জিত ভঙ্গিতে চলে গেল। ইজহান সেদিকে তাকিয়ে গালি ছুঁড়ল কয়েকটা। সুযোগসন্ধানী গুলা সব জায়গায়ই স্বার্থ খুঁজে বেড়ায়, মরা বাড়িটাকেও ছাড়ল না, এখানে এসেও মেয়ে দেখাদেখি করছে ইতরের দল! ইজহান থু থু ফেলল ঘৃণায়! তবে সৃজাদের বাড়ি ফেরার পর, আবারো, সেই ছেলেটাই এদিকওদিক ঘুরঘুর করতে করতে এক পর্যায়ে ইজহানের কাছে এলো। ইজহান তখন গেইটের কাছে মিজুর সাথে দাঁড়িয়ে পরদিন লোক খাওয়ানোর কাজ নিয়ে কথা বলায় ব্যস্ত! ছেলেটা পেছন থেকে ডেকে বলল, “একটু কথা বলা যাবে ভাইয়া?”

ইজহান পেছনে ফিরে তখনকার সে চেংড়া টাকে
দেখে ভ্রু উঁচিয়ে চাইল। ভেতরের বিরক্তিটা বুঝতে দিলো না। বলল, “হুঁ।”
আগের মতোই গাঁইগুই করে বলল, “ইয়ে মানে কীভাবে যে বলি, মানে এ পরিস্থিতিতে… জানি এখন বলা ঠিক হবে না, কিন্তু না বললে পরে আর সুযোগ পাব না তাই এখনি বলছি…”
ইজহান রাগান্বিত গলায় বলল, “দেশ-বিদেশ না ঘুরিয়ে এনে সোজাসাপটা বলে ফেলো!”
ছেলেটা ভদ্রতাসূচক হেসে একটু আগে যা যা বলেছিল, সেগুলোই আবার বলল ইজহানকে। শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেল ওর। মানে কী, একবার না করে দিলো এরপরেও এই ছোকরা শালি চাই, শালি চাই করছে? নষ্ট ছেলে কোথাকার! ইজহান ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো ওর গালে। মিজু আঁৎকে উঠে বলল, “স্যার কী করেন? লোকজন আছে তো!”

ইজহান রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “এই শালা ইতরটার মরা বাড়িতে এসে বিয়ে শখ জাগছে! একে গেইটের বাইরে বের করে দিয়ে আয়। তখন থেকে আমার মাথা খাচ্ছে! গরুবলদ কোথাকার!”
ছেলেটা আকস্মিক চড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল স্টাক হয়ে। ইজহানের তুচ্ছতাচ্ছিল্য শুনে, এবার সে অপমানিত বোধ করল! তেজদীপ্ত গলায় সে বলল, “আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন!”
“তোর অপমানবোধও আছে?”
ইজহান দ্বিগুণ তেজ নিয়ে তাকাল ছেলেটার দিকে। ওর চোখ দেখেই গলা শুকিয়ে গেল ছেলেটার, আমতাআমতা করতে করতে বলল, “আমি শুধু
বিয়ের প্রস্তাব দিব, তাই ফোন নাম্বারটা চাইতে এসেছিলাম…”

“শালা ইতর! সাহস তো কম না, আবার ফোন নাম্বার চাইছিস, একবার বলার পরেও কানে যায় না কথা? বাংলা বুঝিস না? তোকে রিজেক্ট করলাম তখনও, এখনও৷ এরজন্য আমার ভাইয়ের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই…”
ইজহান খ্যাঁকিয়ে উঠে ছেলেটার শার্টের কলার ধরে গেইটের বাইরে বেরিয়ে এলো, পরপর কয়েকটা ঘুষি বসালো পেটে। অশ্রাব্য গালিতে কান ঝালাপালা করে দিলো। কঁকিয়ে উঠে ছেলেটা বলল, “আর প্রস্তাব দিব না ভাই, আর বলছি না, এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাচ্ছি…”

মিজু হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল স্যারের দিকে। তার পল্টিবাজ স্যার নিজের কীর্তি ভুলে গেছে কী, যে এত নীতিবান মানুষের মতো কথা বলছে? নিজেই তো জোর করে ম্যাডামকে তুলে এনে বিয়ে করেছে, কত অত্যাচার করেছে, এখনো করছে…অথচ এখন দেখো, বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় কীভাবে মারল ছেলেটাকে! সে ছুটে এসে থামালো ইজহানকে, “স্যার, ছেড়ে দেন! অহেতুক একটা ঝামেলা হয়ে যাবে!”
ইজহান শেষমেশ ছেলেটার পশ্চাৎদেশে একটা লাথি মেরে সেখান থেকে চলে এলো রাগে গজগজ করতে। নাইমুর সাহেবের জানাজাতে যারা এসেছিল তারা তখন বিদায় নিচ্ছে, অনেকেই তাকে জিজ্ঞেস করল কেন সে এভাবে রেগে আছে। সব প্রশ্নের উত্তর মিজু কৌশলে সামাল দিলো।

মাগরিবের নামাজ শেষ করে এলিজা বসে আছে।
তার পাশেই ইস্মি বসা। বসে কথা বলছে। এলিজাও টুকটাক জবাব দিচ্ছে। তবে ইস্মি লক্ষ্য করল, এলিজা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। তবে উপরে উপরে নিজেকে শক্ত দেখালেও, বাবার জন্য ভেতরে ভেতরে সে গলে যাচ্ছে, কিছু প্রকাশ করছে না সেটাও ধরতে পারল ইস্মি। ওর বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো!

ফ্ল্যাটে এসে ইজহান ইস্মিকে খুঁজে পেল ভেতরের একটা ঘরে। ইজহানের রাগ শান্ত হলো ইস্মিতাকে দেখেই। কী সুন্দর, বুঝদারের মতো বুঝাচ্ছে ভেড়ার শালিটাকে! ইজহান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলো কিছুক্ষণ! বাঁকা চোখে দেখল এলিজাকে। মেয়েটা দেখতে সুন্দরী, মিষ্টি হলেও চোখদুটো খুব তীক্ষ্ণ। কপালের কাছে, গালের বা-দিকে দুটো কাটা দাগ, অথচ কী নিঁখুত! এই মেয়ের জন্যই আজ এত এত বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, এই মেয়ের জন্যই সে একটু আগে একটা বদমাইশকে পিটিয়ে এসেছে, অথচ আসার পর এলিজার সাথে তেমনভাবে কথা বলা হয়নি। সে আসলে তেমন সহজও নয় যে হুটহাট কোনো মেয়ের সাথে মিশে যাবে! এলিজাকে পরখ করে ছোটবোন পুনমের কথা মনে পড়লো ইজহানের, সালেহা বেগমের একমাত্র মেয়ে, তার সৎবোন! কিন্তু ভীষণ আদর করতো সে! অথচ বাবা এমন একটা কাজ করল—অল্প বয়সে মেয়রের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো! সবই ঐ ফুপুর ছেলে অনিক কুত্তাটার জন্য! আর পুনমও! বাবার উপর রাগ, অভিমান নিয়ে মেয়েটা এখন তাদের সাথে কথাই বলে না। ইজহান মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হঠাৎ এলিজার মুখটা বড্ড পরিচিত ঠেকল ইজহানের। কিন্তু মনে করতে পারল না এই মেয়েকে সে কোথায় দেখেছে! ইস্মির ডাকে ওর ঘোর কাটলো, “কখন ফিরলেন? এখানে আসুন! মিষ্টি মেয়েটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।”

ইজহান বাধ্য স্বামীর মতো এগিয়ে গেল, অস্বস্তি নিয়ে টুকটাক কথা বলল, পরিচিত হলো এলিজার সাথে। কষ্টে থাকলেও বাড়ির মেহমান, হাজার হোক ইহসান ভাইয়ার ভাই-ভাবি! দুঃখে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে! ইস্মি ভাবি ওকে বোনের মতো বোঝাচ্ছে, এলিজা ইজহানের দিকে তাকিয়ে বিনীত ভঙ্গিতে বলল, “আপনি আসলেই ঠিক দেখতে ভাইয়ার মতো, কিন্তু কথা বলার সময় বা-হাতটা বেশি নাড়ান। এটাই আপনাদেরকে আলাদা করার চিহ্ন, তাই না!”
ইস্মির সাথে সাথে ইজহানও আশ্চর্য হয়ে গেল৷ এটুকু সময়েই মেয়েটা পরখ করে ফেলল, বাহ! সে অপ্রস্তুত গলায় বলল, “তুমি..তুমিও দেখতে আমার এক পরিচিতজনের মতো… ”
“পরিচিত জনটা কী আপনাদের ম্যাম, অনিতা রহমানের মতো? তাহলে ঠিক আছে, আমি দেখতে আমার মায়ের মতোই অনেকটা!”

বলে এলিজা মিষ্টি করে হাসলো। ইজহান তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। অবাক, বিস্মিত সে। অনিতা মিস! হ্যাঁ, তাদের কলেজের ফিজিক্স টিচার অনিতা মিসের মতোই দেখতে এই এলিজা! কিন্তু… তার মানে? তার মানে ইহসান ভেড়াটার শ্বাশুড়ি অনিতা মিস! আর মিসের বড় মেয়ে সৃজা? ইজহানের কাছে সব গোলমেলে লাগল! ভেড়াটার এত সাহস! ঝামেলা কাঁধে নিয়ে ঘুরছে? আর বাবা— আজিজ শেখ জানে কী! অবশ্যই জানে! ইজহান ঘর থেকে বেরিয়ে এসে অস্থির ভঙ্গিতে ইহসানের অপেক্ষা করতে লাগল! ফোনও করল কয়েকবার। আধঘন্টার মাথায় ইহসান ফিরতেই ইজহান শক্তমুখ করে ওর সামনে দাঁড়াল, “তুই অনিতা মিসের মেয়ের জামাই? অনিতা মিসের মেয়েকে বিয়ে করেছিস?”

ফিরেই ভাইয়ের অবান্তর প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হলো ইহসান, “তাতে তোর এত ফাটছে কেন?”
বলে ওকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকল, ইজহান ওর পিছু পিছু এসে বলল, “ফাটবে না কেন? ঐ মহিলা আমাকে মেরেছিল, ক্লাস বাঙ্ক দিয়েছিলাম বলে। ভুলে গেছিস তুই?”
“বেশ করেছিল!”
“হারামি!”
মেজাজ খারাপ করে বলল ইহসান, “দেখ মাথা গরম করবি না, বাচ্চাদের মতোন বিহেভ করা বন্ধ কর!”
ইজহান ঠোঁট উল্টালো, “করলাম না হয়! কিন্তু ঐ ব্যাপারটা? এক্সিডেন্ট! তোর বউ যখন জানবে তোর ভাই এ কান্ডে জড়িত, আর তুই এটা জানিস, তোকে
ও ছেড়ে দেবে? তোর টনা-মনাকে নিয়ে, ডিভোর্স
দিয়ে চলে আসবে।”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৩

কথাগুলো শুনে তৎক্ষনাৎ ইহসানের মাথা গরম হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে পেছনে ফিরে ওর পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে পাশের বারান্দায় নিয়ে এসে পেটে ঘুষি বসিয়ে দিয়ে রক্তচক্ষু মেলে, গর্জে উঠল চাপা গলায়, “একজনের পা’পের শাস্তির ভাগীদার আমি কেন হব? আমি হব না।”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৫