অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৫

অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৫
ইসরাত জাহান ফারিয়া

সৃজার মা অনিতা রহমান ছিল ইহসান আর ইজহানের টিচার। সেবার ওদের কলেজে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ফিজিক্স পড়াতেন। প্রথমদিনই ব্রেক টাইমের পর ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে, সি’গারেট ফুঁকার অপরাধে ইজহানকে তিনি ক্লাসে শাস্তি দিয়েছিলেন। যেইসেই শাস্তি নয়। একপায়ে দাঁড়িয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখানোর মতো শাস্তি৷ তবে শাস্তি মানবে না বলে ইজহান সেদিন অনিতা রহমানের সাথে বেশ দুর্ব্যবহারও করে। তাই তিনিও বেতের বারি দিয়ে হাতের তালুর বারোটা বাজিয়ে দেন ইজহানের। সেদিন কোনো এক কারণে কলেজে যাওয়া হয়নি ইহসানের। পরে সাঙ্গপাঙ্গদের থেকে জেনেছিল সে, নতুন এক ম্যাডাম এসে তার ভাইকে বেধড়ক মেরেছে। যদিও বনিবনা হতো না দু-ভাইয়ের মধ্যে, দা-কুমড়া সম্পর্ক ছিল, তবুও এ খবর শুনেই ক্ষুদ্ধ হয়ে গেছিল বেপরোয়া ইহসান৷ মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল, সুযোগ পেলে এর শোধ সে নিয়ে নিবে।

তবে এর দু-তিনদিন টিচার্স রুমে ডাক পড়লে ইজহানের বদলে ভুলক্রমে ওকে ডেকে নিয়ে আসে পিয়ন। ইহসান যখন যায়, তখন দেখে শাড়ি আর চোখে চশমা পরা এক মহিলা মিষ্টি হেসে ওকে বলছে, “এসো বসো। আসলে তোমাকে ডেকে পাঠানোর একটা কারণ আছে—সেদিনের ব্যাপারটা নিয়ে আমি একটু ডিস্টার্ব আছি। আমার আরেকটু সহনশীল হওয়া উচিৎ ছিল। প্রথমদিন এসেই তোমাকে ওভাবে শাস্তি দেওয়াটা উচিৎ হয়নি। তুমি আমার ছেলের মতো, মা তোমাকে শাসন করেছে ভেবে ব্যাপারটা ভুলে যাও বাবা!”
ইহসান বিস্মিত হয়েছিল, “ভুলে যাব?”
“চেষ্টা করবে। তবে তাই বলে পড়াশোনা আর ক্লাসে ফাঁকিবাজি দিয়ে বটতলায় বসে সি’গারেট ফুঁকবে এটা কিন্তু মেনে নেব না৷”
“আবারও শাস্তি দিবেন তাহলে?’’
“অবশ্যই!”
ইহসান তক্ষণি হাত পেতে দিয়েছিল, “স্কেল মারুন
তো মিস।”
অনিতা রহমান বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আসলে আপনি যাকে ভাবছেন সে আমি নই, আমি তার ভাই। তবে সেদিনের ঘটনায় আমিও আপনার উপর একটু ক্ষুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, আমার ইনটেনশনও অতোটা ন্যায্য ছিল না!”
অনিতা রহমান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আচমকা বুঝে ফেলেন তার সামনে বসা ছেলেটা কোন ইনটেনশনের ব্যাপারটা। কলেজ পড়ুয়া বেপরোয়া ছেলেপেলে এরকম হয় তা তিনি এক-আধটু জানেন। আর এ তো তার ভাইয়ের জন্য ম্যাডামের সাথে চতুরতা করতে চেয়েছিল। তিনি হেসে ফেলেন, “ইনটেনশন বুঝতে পারছি, তবে স্বীকার করেছ বলে শাস্তি থেকে রেহাই দিলাম!”
ইহসানের এতো মিষ্টি লাগল মিসকে, সে বলেই ফেলল, “আপনি কী আমার মাথায় একবার হাত রাখবেন মিস?”
অনিতা রহমান বড্ড অবাক হলেও ইহসানের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, “আচ্ছা পাগল তো তুমি!”
“আসলে মাথায় হাত রাখার মতো আমার কাছে মা নেই।”

বলার সময় গলা কাঁপছি ইহসানের। অনিতা রহমান অবাক হয়েছিলেন! এই অদ্ভুত ছেলেটার প্রতি সেদিন তিনি মমত্ববোধ অনুভব করেছিলেন কি-না জানা নেই, তবে এরপর দু’জনের মধ্যে বেশ ভালো একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে গেল। মা-ছেলের মতোই খুব সহজ একটা সম্পর্ক অথচ অনেককিছু পেয়ে যাওয়ার মতো। এরই সুবাদে মিসের বাসায় ও আসা-যাওয়া করতো মাঝেমধ্যে ইহসান। সৃজা তখন ছোট, এলিজা বাচ্চা একটা মেয়ে। ওদের সঙ্গেও বেশ ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল এই সুযোগে, নাইমুর সাহেবও প্রশংসা করে ভাসাতেন ওকে। বিকেলের খেলাধুলা আর ফাঁকিবাজি আড্ডাটা বাদ দিয়ে বইপত্র নিয়ে মিসের কাছে পড়তেও শুরু করল, সৃজা-এলিজাকে মাঝেমধ্যে ম্যাথ বুঝিয়ে দিতো। নিজের ভাঙাচোরা পরিবারের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এদের সাথে মিশে গিয়ে ইহসান উপলব্ধি করতে পেরেছিল, জীবনে একটা সুস্থ পরিবেশ কতটুকু দরকার! মা-বাবার ভালোবাসাটা কতটা দরকার! সন্তানের জন্য তাদের ভালোবাসাটা কেমন যেন নিঃস্বার্থ আর বড্ড মজবুত হয়।

ওর কাছে তখন অনিতা মিস. নিজের মা না হলেও তার এমন একজন বড় মেন্টর, যার মধ্যে সে মা মা অনুভূতি খুঁজে পেতো। তবে ইজহান এ ব্যাপারটা মোটেও নিতে পারতো না। তাকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা, শাস্তি দেয়া অনিতা মিসের সাথে নিজের ভাইয়ের এখন গদগদ সম্পর্ক তার গায়ে জ্বালা ধরাতো। ব্যাপারটাতে সে প্রচন্ড বিরক্ত ছিল! অনিতা মিস তাকেও স্নেহ করতেন, কিন্তু ইগোতে লাগতো ইজহানের। তার এক ফুফু, অনিকের মা। তার নামও অনিতা বেগম। বড্ড কুচুটে মহিলা। সবসময় মায়াকান্না আর নাটক করে স্বার্থ হাসিলে যিনি নিমগ্ন থাকেন। দু-চক্ষে দেখতে পারে না ইজহান তাকে, নামটাও শুনতে পারে না। তাই অনিতা রহমানকেও তার পছন্দ হলো না, অবশ্য ঠিক পছন্দ যে হয়নি তা নয়; তাকে শাস্তি দিয়েছে এবং এই মিসের নাম তার ফুফুর সাথে মিল!

এটাই মূলত মিসের কাছে না ঘেঁষার অন্যতম কারণ। তাই সে একপ্রকার এড়িয়েই চলতো অনিত রহমানকে। আবার মাঝেমধ্যে হিংসায়ও জ্বলতো ভাইকে মিসের সাথে দেখে। তার তো ওমন একটা মা মা টাইপের কেউ নেই, মাথায় হাত রাখার মতো কেউ নেই। ইহসানটাই কেন এত সহজে সব পেয়ে যায়! হুহ! সে বেশ বিরক্ত ছিল এবং সেকশন পাল্টে ফেলেছিল। তবে সেই মায়ের মতো মিসের ছত্রছায়া দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারেনি ইহসান, হঠাৎ এক ঝাপটা ঘূর্ণিঝড়ে ইহসান হারিয়ে ফেলেছিল তার মিসকে, সেই সাথে জানতে পেরেছিল ভয়াবহ এক সত্যি! যে এক্সিডেন্টে, যে গাড়ির ধাক্কায় অনিতা মিসকে সে হারিয়েছে, সেই গাড়িটা আর কারো নয়, তারই বেপরোয়া, বখাটে, উচ্ছৃঙ্খল ছোটো ভাইয়ের!

এসব জানে না সৃজা! জানার মতো বয়স, অবস্থা, পরিস্থিতি তখন ছিল না। কিন্তু দিন বদলের সাথে সাথে যখন নিজের অনুভূতিও পরিবর্তন হচ্ছিলো সৃজার প্রতি ; অমানিশার ঘোর অন্ধকার ঘিরে ধরেছিল ইহসানের হৃদপিণ্ডটাকে। তাই ভালোবেসে ফেললেও সে কখনো ভাবেইনি, চায়ওনি তার
প্রেয়সী, তার গোপন চাওয়া অনিতা মিসের বড়ো
মেয়ে সৃজা রেহমানকে নিজের করে পেতে! তবে
পেয়ে যাওয়ার পর থেকেই সে সংশয়ে আছে, ইনজান দেশে ফেরার পর থেকে তো আরো অস্থিরতায় আছে, যদি কোনোভাবে সৃজা এসব সত্যি জেনে যায়, তাহলে? ওকে কী ভুল বুঝবে না, দূরে ঠেলে দেবে না? ইহসানের অস্থির লাগে খুব, ভার ঠেকে বুকের ভেতরটা। অমোঘ সত্যিগুলো সে চেপে রেখেছে এই বুকটাতে, কত আর লুকোবে সে? সৃজার ঘরের দরজার সামনে সে দাঁড়িয়ে থাকে আনমনা হয়ে। ভেতরে ঢুকে না। ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়েই থাকে, একবার ভেতরে ঢুকে, দেখে এলিজার পাশে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে সৃজা। ইহসান গিয়ে ওর পাশে একটু বসে, হাত বাড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করে দেয়। চাদর টেনে দেয় গায়ে। মলিন মুখটার দিকে সে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে ওর মনে হয়, ঠকাচ্ছে সে এই মেয়েকে। যদিও ইচ্ছেকৃত নয়, তবুও ঠকানো হচ্ছে! ইহসান চোখ বুজে কপাল চেপে ধরে। কঠিন এক দ্বন্দ্বে পড়ে গেছে সে। ইজহানটা কেন মনে করিয়ে দিলো ওকে তিক্ত স্মৃতিটা? ডেকে কি আরো দুটো ঘুষি বসিয়ে দেবে চোয়ালে? তাতে কি শান্তি পাবে? ইহসান সটান বেরিয়ে গিয়ে ডেকে বের করে আনে ওকে ঘর থেকে। ইজহান ঘুমঘুম চোখে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী সমস্যা?”

“ছাদে চল, কথা আছে।”
গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে ইজহান সন্দেহ নিয়ে তাকায়। সন্ধ্যার দিকেই তার পেটে-পিঠে ঘুষি বসিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে এই ভেড়া। ব্যথায় রগে টান পড়েছে ওর। ইস্মি মালিশ করে দিচ্ছিল, তার মধ্যেই বাগড়া দেওয়া! কালপ্রিট এসে বলছে কি-না তার সঙ্গে ছাদে যেতে? আরো মারধর করার ধান্ধা কষছে নাকি সুযোগ পেয়ে? সে বাঁকা স্বরে বলে, “আমার সাথে কথা? সিরিয়াসলি? তোর সাথে আমার তো তেমন কোনো সম্পর্ক নেই যে, গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকতে পারে। ধান্ধাবাজিটা খুলে বল তো!”
“ধান্ধাবাজি নয়।”
অবিশ্বাস নিয়ে বলে ইজহান, “তোকে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না একটুও! তোর শ্বশুরবাড়িতে এসে ঘাঁটি গেড়েছি, বউ নিয়ে রাত কাটাচ্ছি, নিশ্চয় আমাকে দুর্বল ভাবছিস? ভাবছিস আমাকে মেরে গুম করে দিবি, সাবধান! আমার সৈন্য কিন্তু তক্কেতক্কে আছে। পাহা…”
সৈন্য বলতে মিজুকে বোঝাচ্ছে লুফারটা। ওকে আজ যেতে দেয়নি ইজহান। এখানেই থেকে যেতে বলেছে। ইহসানও না করেনি। রশিদ নেই, গেছে ইনজানের কাছে। রাতে যদি কোনো প্রয়োজন লাগে, তাহলে মিজু সাহায্য করতে পারে। এটাকেই রঙচঙ মিশিয়ে কত কী বলছে! ইহসান মেজাজ হারিয়ে ঘাড় চেপে ধরলো ভাইয়ের। ইজহান ছটফট করে উঠল। ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু ইহসান ওকে ছাদের দিকে নিয়ে যেতে যেতে শাসালো, “লাত্থি মেরে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেব।”

”খু-নি কোথাকার!”
“হ্যাঁ, তাই।”
“কবে থেকে নাম লেখালি?”
“যেদিন তুই বিয়ে করে বউ আনলি, সেদিন থেকে।”
ইজহান তাজ্জব চোখে চায়। ছাদে এসে ইহসান ওকে জোর করে চেপে ধরে বসিয়ে দিয়ে নিজে ওর উরুতে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। হাতগুলো টেনে নিয়ে নিজের মাথায় রেখে গমগমে স্বরে বলে, “নে, চুলগুলো টেনে দে, বড্ড যন্ত্রণা করছে ভেতরটা।”
আকস্মিক এ কান্ড দেখে ইজহানের স্ট্রোক করার মতো অবস্থা! একী দেখছে সে? এই ভেড়া, তার ভাই, তার শত্রু, যার সাথেই তার আজন্মের লাগালাগি! সে আজ, এই নিশীথে, এই নির্জন ছাদে নিয়ে এসে ওর কোলে শুয়েছে? ইজহানের কণ্ঠস্বর রোধ হয়ে আসে। বিস্ময়ে সে কিছু বলতেই পারে না। হাতদুটো ওভাবেই থাকে ইহসানের মাথায়, শক্ত হয়ে। ইহসান জিজ্ঞেস করে, “মরে গেছিস নাকি?”
বিস্মিত ইজহান কাঁপা গলায় বলে, “আগে বল, তুই বেঁচে আছিস নাকি শ্বশুরের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিয়েছিস? তুই ভেড়ার আত্মা?”

“জলজ্যান্ত মানুষ আমি।”
“তাহলে কি মাথা গেছে? মিজুকে বলব হসপিটালে নিয়ে যেতে?”
ইহসান বিরক্তিকর স্বরে বলল, “মাথাটা কিন্তু টগবগ করে ফুটছে, নাটক করলে লাত্থিতে চাপা খুলে ফেলব।”
ইজহান চুপ করে গেল। হলো কী এই ভেড়াটার? সে বিচলিত ভঙ্গিতেই নিজের হাতদুটো ভাইয়ের মাথায় চালনা করল। ইহসান আরামে চোখ বুজে দেখিয়ে দেখিয়ে দিতে লাগল কোথায় কোথায় বিলি কাটতে হবে। ইজহান একরাশ বিস্ময় নিয়ে আলো-আঁধারিতে সেভাবেই বিলি কেটে দিলো। ইহসান অনেকক্ষণ পর
মৃদুস্বরে বলল, “তুই কি আমার জীবনে মীরজাফর হবি?”
ইজহান আবারো অবাক হয়। তবে বলে, “তুই হলে আমি কেন নয়?”
“শুনি?”
“আমার বউকে সবসময় ফুঁসলাস, ছেড়ে যেতে বলিস আমাকে। মীরজাফরগিরি আমার পেছনে কম করিসনি তুই!”
“তো তুই অত্যাচার করিস, বলব না ওকে? আর তুই ভুলভাল মেয়েমানুষের প্রেমে পড়বি, মারা খাবি আর দোষ দিবি আমার?”

ইজহান মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। এই টপিকে সে কথা বলতে চায় না। ঐ হাবলির কথা মনে পড়লেই রাগে গা কিড়কিড় করে ওর, ছিহ! আবার চুমুও খেয়েছিল! সে গমগমে স্বরে ইহসানকে বলে, “তুই কখনো ইস্মিতাকে কালনাগিনীর কথা বলবি না।”
যদিও ইজহানের অতীত প্রেমের কথা জানে ইস্মি, বহু আগেই বলে দিয়েছিল ইহসান ওকে। তবুও সে ভাইকে সান্ত্বনাসূচক ভরসা দেয়, “চল একটা ডিল করে ফেলি।”
”কী ডিল?”
“আমি কখনো ইস্মিতাকে তোর কুকীর্তি বলব না, তুইও কখনো ইনজানের এক্সিডেন্টের সত্যিটা সৃজার সামনে তুলবি না।”
ইজহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবে, ভেবে এরপর ঠোঁট উল্টায়, “বললাম না টনা-মনার মাকে। কিন্তু আমি না বললেও কী, আরসালান যদি নিজেই নিজের কুকীর্তি স্বীকার করে? বলে দেয় যে, তোর শ্বাশুড়িকে ও নিজেই গাড়ির তলায় চাপা মেরেছিল? তুই পুরোটা জেনেও গোপন করেছিস! তখন?”

“তখন তুই আমার পক্ষ নিবি। এটাই ডিল।”
ফট করে কথাটুকু বলে ইহসান কাত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে। ইজহান পেছনে দু’হাতের উপর ভর রেখে চুপ করে ভাইকে দেখে। ইচ্ছে করে গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিতে, কিন্তু বিবেকে বাঁধা দেয়! বেচারা আজকেই শ্বশুর হারিয়েছে, বহুৎ কাজও করেছে, মানসিকভাবে ভুগছে, এরমধ্যে ঠাটিয়ে চড় দেওয়াটা উচিৎ হবে না। তবে খোঁচা তো সে অবশ্যই দেবে৷ হঠাৎ মনে পড়তেই ইজহান তড়াক করে বলে, “একটা ছাগল তোর শালির হাত চেয়েছিল…”
“হাত চেয়েছিল মানে?”
“বিবাহের প্রস্তাব—”
ইহসান কান খাড়া করে শোনে, “কে দিয়েছিল?”
“নেভি ব্লু পাঞ্জাবি পরা ইতরটা, বাপটা যে চেয়ারম্যান। আমি অবশ্য রিজেক্ট করে দিয়েছি।”
“ভালো করেছিস।”

ভেড়ার মুখ থেকে প্রশংসা আদায় করে ইজহান বক্র হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে ফুঁস করে শ্বাস ছাড়ে ঊর্ধাকাশে তাকিয়ে। চারপাশের অন্ধকার ম্লান করে আকাশে উজ্জ্বল চন্দ্ররাজ তার কোটি কোটি নক্ষত্র সৈন্য নিয়ে মেলা বসিয়েছে। সেই আদুরে চন্দ্ররাজের মায়াবী আলো এসে পড়ছে ছাদের কার্নিশে, মেঝেতে, ফুলগাছের উপরে। ড্রামে লাগানো মাঝারি আকারের বাঁশগাছ আর নারকেল গাছের ফাঁক গলিয়ে আদুরে চাঁদ এসে পড়ছে তাদের দু’ভাইয়ের উপর! ইজহানের হঠাৎ মন খারাপ লাগে। উপলব্ধি হয়, অনেকগুলো বছর পর, তারা দু’ভাই একত্রে অন্ধকারের নিচে বসে চুপচাপ রাত কাটাচ্ছে! এমন হয়েছিল তাদের নিজের মায়ের মৃত্যুদিন, ছাদে বসে রাত কাটিয়ে দিয়েছিল তারা। মা-হীন পৃথিবীর নতুন ভোর হওয়া দেখেছিল, বড্ড অসুন্দর ছিল সেই ভোরটা!

বিষন্নতা নিয়ে তিনদিন কেটে গেছে। ইস্মি-ইজহান, শেফালি বুয়া রয়ে গেছে। আজ এতিম আর গরিব-দুঃখীদের দানখয়রাতের ব্যবস্থা ক করা হয়েছিল। বেশ ব্যস্ত ছিল সবাই আজকে। শুধু সৃজাই একমাত্র যে, সারাদিন ঘরে বসে চোখের জল ফেলেছে। বেরই হয়নি। রাত দশটা৷ মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। নিস্তব্ধতার চাদরে মোড়া প্রকৃতি বা পরিবেশে শব্দটা কেমন নিষ্ঠুর শোনাচ্ছে। খটমটে শব্দ তুলে চর্তুদিকে ঘূর্ণি তোলা ফ্যানের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে থেকে সৃজা চোখদুটো বুজে ফেল। সে নিজ ঘরে শুয়ে আছে। আর ওর মাথার কাছে ম্লান চেহারা নিয়ে এলিজা বসা। ওর একটা হাত এলিজার মুঠোবন্দি। দুপুরের পর বোনকে এভাবে কাছেই পায়নি সৃজা। এতক্ষণে ডেকে আনা গেছে। ইস্মি ওদের দু বোনকে বসিয়ে দিয়ে গেছে, তবে কান্নাকাটি করতে মানা করে গেছে। মৃতব্যক্তির রুহের নাকি তাতে খুব কষ্ট হয়! তারা দুই বোন আব্বুর আত্মাকে আর কষ্ট দিতে চায় না। এলিজকে মলিন মুখে পাশে বসে থাকতে দেখে সৃজা উঠে বসতে চাইল, এলিজা তা দেখে হন্তদন্ত হয়ে কাঁধ জড়িয়ে ধরল ওর, “শুয়ে থাকো, উত্তেজিত হয়ো না আপু।”

সৃজা শুনলো না ওর কথা। পেট চেপে ধরে আস্তেধীরে উঠে বসল। এলিজাকে কাছে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে বসে রইল। এলিজা কোনো কথা বলল না। আড়ালে চোখ মুছে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, “মন খারাপ করো না।”
সৃজা বোনের কথায় চাপা শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করে, “ফুপি কোথায়?”
“নামাজে বসা।”
“কাঁদে খুব?”
“হু।”
“সেদিন আব্বুকে বিদায় দিতে গেছিলি?”
তিনদিনে এ নিয়ে একটা প্রশ্নও করেনি সৃজা, এখন করেছে। এলিজা গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “সাময়িক বিদায়, দেওয়ার কিছু নেই। আমাদের আবার দেখা হবে, একসঙ্গে থাকব আমরা। ততদিন পর্যন্ত মনে আর মস্তিষ্কে আব্বু চিরঞ্জীব থেকে যাবে। তাই ওসব লোকদেখানো বিদায়, গেইট অবধি পার করে দেওয়ার রীতি অযৌক্তিক বৈ কিছু না। আমি যাইনি ওসবে।”

এ পর্যায়ে আবারো সৃজা ডুকরে কেঁদে উঠল, “আব্বুর এখন খেয়ে, ঔষধ নেওয়ার কথা! একটু পর ঘুমানোর সময়!”
এলিজা জবাব দিলো না। বোনকে ছেড়ে বসলো। এরপর শূন্য, আহত চোখে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল, “এখনও ঘুমাচ্ছে, তবে পার্থক্য এটাই যে, আব্বু আমাদের কাছে শান্তির ঘুমে ছিল না, এখন তিনি চিরশান্তির ঘুমে আছেন।”
কেমন যেন ক্ষোভ মেশানো শোনাল কথাটা। অদ্ভুত! এলিজা এভাবে বলে না। সৃজা বিস্ময় নিয়ে তাকাল কথাটা শুনে, “নির্মম না?”

এলিজার কণ্ঠস্বর অত্যাধিক শান্ত, “সত্য তো এটাই যে, আব্বুর এত দ্রুত চলে যাওয়ার কথা ছিল না। তবুও সে গেছে। আমাদের এতিম করে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। আর কখনোই আমরা তাঁকে পাব না। যেভাবে পাইনি আম্মুকে। আচ্ছা, আর ক’দিন পর যখন ইউনিভার্সিটি যাব, আব্বু দেখবে না? সেখানে আমি টপ করব, আব্বু হেসে বলবে না আজ বাসায় ভালোমন্দ রান্না হোক? রাতে আমরা আব্বুর ঘরের মেঝেতে বসে সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া, গল্প করব না আর? মাথায় অসাড় হাতটা রেখে দোয়া করবে না আর তাঁর দোয়াকে? আচ্ছা, ভালোই তো ছিলাম আমরা, হোক না অসুস্থ দু’দিন পরপর! আমরা তো কোনোদিনও অভিযোগ করিনি। তাহলে? আমাদের এত দ্রুত শান্তি দেওয়ার তাড়া ছিল কেন আব্বুর? আপু, আমার কী ঐ মানুষটার প্রতি অভিমান করা উচিৎ? নাকি রাগ করা উচিৎ?”
সৃজা চোখ ভরা পানি নিয়ে, থরথর করে কেঁপে উঠল। এই মুহূর্তে এলিজাকে থামানো উচিৎ, ওর সহ্য হচ্ছে না এ কথাগুলো। এলিজা ছোট, ও কেন এত কথা বলবে? এভাবে বলব? ও এলিজার মুখ চেপে ধরে বলল, “চুপ কর।”
“আমি একটু কাঁদি আপু? তোমার জন্য কাঁদতেও পারিনি। আব্বুর জন্য শেষবার কাঁদব!”

সৃজা দু’হাতে আগলে নিলো এলিজার মুখখানি, “তুই কাঁদিস না এলিজ!”
“ভাইয়াও বলে গেল কান্না চোখে আমাকে নাকি
মানায় না! বোকা বোকা লাগে! আমি কী খুব বুদ্ধিমান? তাহলে কেন আগে থেকে টের পেলাম না আব্বুর চলে যাওয়ার খবর?”

এলিজা বিদ্রুপাত্মক হাসলো। সৃজা নিরুত্তর। ব্যথিত নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। এলিজা উঠে বারান্দায় চলে গেল। ডাকলো না সৃজা ওকে। তীব্র অবসাদে ওর শরীর ভেঙ্গে আসছে। পুরো পৃথিবীটা মনে হচ্ছে ঘুরছে। আচ্ছা আব্বু কী সত্যিই চলে গেছে? সৃজার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ওর মস্তিষ্ক কাজ করছে না। হুট করে এত দুর্বল হয়ে গেল ও, এমন তো আগে লাগেনি। এইযে বমি পাচ্ছে, মাথা ঘুরছে, এক পৃথিবী ঘুমে অক্ষিকোটর জড়িয়ে আসছে! কই! এতদিন তো কিছু অনুভব করেনি সে! সৃজার তখনি সম্পূর্ণভাবে মাথা কাজ করা শুরু করল। বাচ্চাদের কথা মনে পড়ল৷ আশ্চর্য! সে দুটো দিন একটা দানাও পেটে দেয়নি, তরল যা খেয়েছে বমিতে সেটুকুও বেরিয়ে গেছে। স্যালাইন আর ঔষধের উপর রয়েছে সে। বাচ্চাদের উপর তাহলে কম ধকল যায়নি। ওয়েট, ওয়েট! সেডেটিভও নেওয়া হয়েছে এরমধ্যে, ভীষণ রিস্কি! সৃজা অস্থির হয়ে উঠল, ভয়ে ঘাম ছাড়ল। মাথার ভেতরের নার্ভগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে যেন। পেটে হাত চেপে কেঁদে ফেলল। ওরা ঠিক আছে তো? নাকি, কিছু হয়ে যায়নি তো…

এলিজা বারান্দায়ই ছিল, শূন্যতা নিয়ে। তাঁকে দোয়া বলে ডাকা আব্বুর জন্য সে অবশ্যই কাঁদবে, কিন্তু সেই কান্নাটুকু কাউকে দেখানোর জন্য না। শুধু নিজেকে একটু হালকা করার জন্য। সব কান্না জমিয়ে রাখা ঠিক হচ্ছে না। সবকিছু ভারী ভারী ঠেকছে। এত ভার বইবার মতো শক্তি-সামর্থ্য এলিজের নেই৷ অথচ সবাই তাকে কতকিছু ভাবে! চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই ঘর থেকে সৃজার কান্নার শব্দ শোনা গেল। এলিজা কোনোমতে চোখ মুছে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ছুটে এলো। অভিযোগের স্বরে বলল, “তুমি আমাকে কাঁদতে দিবেই না আপু, বলো তো আবার, কী হয়েছে?”
সৃজা করুণ চোখে তাকাল। ভগ্ন গলায় ঢোক গিলল, “আমার বাচ্চারা! ওরা…ওরা কেমন আছে? আমি তো খেয়ালই রাখতে পারছি না এদের…”
এলিজা ওর পাশে বসলো। বোনকে শান্ত হতে বলে ভরসা দিলো, “অল ওকে।”
“তোর ভাইয়া কোথায়?”
“বসার ঘরে। ডাকব?”

“খুব ধকল যাচ্ছে না? ব্যস্ততা শেষ হলে বলিস আসতে।”
ভাঙা কণ্ঠে বলল সৃজা। তবে এলিজা গিয়ে বলতেই ইহসান প্রায় ছুটেই এলো ঘরে। বিছানায় সৃজাকে চুপচাপ বস থাকতে দেখে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে দরজা আটকে ওর কাছে এলো। টেনে সৃজাকে বুকে নিয়ে বসে রইল৷ গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “কাঁদ, আজকেই কেঁদে চোখের পানি শেষ কর। আর কখনো এভাবে কাঁদতে পারবি না।”
সৃজা ওর বুকে মিশে গেল। ভার গলায় অস্ফুটস্বরে বলল, “আব্বু চলে গেল, আমাদের আর কেউ নেই। ফুপিকে, এলিজটাকে কে দেখবে?”
“আমি তো আছি, মরে যাইনি।”
সৃজার বুক কেঁপে উঠল। ভয়ে ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল, বুক খামচে একাকার করল৷ এলোমেলো স্বরে বলল, “আমার হারানোর মতো কিছু নেই, এলিজ আর তুমি ছাড়া…”

বলতে বলতে মেয়েটা আবার চুপ হয়ে গেল৷ ইহসানের বুকে জলোচ্ছ্বাসের মতো উদ্দাম সৃষ্টি হয়, অদ্ভুত এক যন্ত্রণা হয়। কেন, সে জানে না! রুক্ষ হাতদুটো বাড়িয়ে সৃজাকে আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে ধীর স্বরে বলে, “ভরসা করিস তো আমাকে? একদম ভাববি না তোর কেউ নেই, আর কেউ না থাকুক আমি আছি। এইযে দেখ, আমারও কেউ নেই তোরা ছাড়া… আমারও মা চলে গেছে সেই কবে, একবুক অভিমান নিয়ে! এতিম হওয়ার যন্ত্রণা, জানি তো এই যন্ত্রণা কেমন…”
মুখ ফসকে মায়ের কথাটা বলে দিয়েই থেমে গেল ইহসান। কী থেকে কী বলে ফেলেছে সে! শিট, শিট, শিট…ইহসান আড়ষ্টতায় জমে গিয়ে সৃজার মুখের দিকে তাকালো। কিন্তু তারপরই চমকে উঠল। আশ্চর্য! জ্ঞান হারিয়ে বসে আছে এই মেয়ে, আবারো!
“সৃজা! সৃজা! শুনছিস?”

কোনো সাড়া নেই। মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে ওর বাহুর মধ্যে পড়ে আছে। ইহসান দ্রুত ওর কপালে হাত
রাখল—একদম আগুন! সে তড়াক করে ওকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে বেডসাইড থেকে পানির ছিঁটা দিতে দিতে অন্যহাতে ফোন নিয়ে ডাক্তারকে কল করতে উদ্যত হলো।
একটু একটু জ্ঞান ফিরলে সৃজা টের পেল হাতে
সূক্ষ্ম কিছু একটা বিঁধছে। সৃজা নড়েচড়ে উঠে বসতে চাইল, কিন্তু ইহসান জোর করে ওকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিচলিত মুখে ভরসা দিলো, “কিচ্ছু হবে না তোর, একটু ঘুমা!”
ঘুমিয়ে পড়তে সময় লাগল না সৃজার। ইহসান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওর হাত ধরে বসে রইল। মেয়েটার মুখ ফ্যাকাশে, চোখের পাতায় এখনো কিছু শুকনো অশ্রু জমে আছে। ছোট্ট শিশুর মতো দেখাচ্ছে ওকে।

ইহসান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। গত দু’দিনে আজ, এক্ষণ
সে একটুখানি ফুরসত পেয়েছে, সব কাজ ফেলে, সৃজাটার পাশে একটা রাত বসে কাটানোর। সে ক্লান্ত চিত্তে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে তার সন্তান ধারণ করা মানবীটির দিকে, বাবা হবার মতো নিদারুণ একটা সুখ চেয়ে এসেছে আসঙ্গের প্রথম দিন থেকেই। মন থেকে চেয়েছে তার অপবিত্র রক্ত পায়ে মাড়িয়ে পবিত্র রক্ত ধারণ করে পৃথিবীতে আসবে তার ভবিষ্যত প্রজন্ম। তারা আসছে…অথচ, সে এই সুখটুকু উপভোগ করতে পারছে না। চারপাশ থেকে দায়িত্ব-কর্তব্য আর সৃজার সাথে করা খামখেয়ালিপনার বেড়াজালে নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়তে দেখছে সে! ক্লান্ত লাগে খুব ইহসানের। দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে সে ধীরস্থিরে সরে আসে, মুখ নামিয়ে আনে সৃজার পেটের কাছে।

অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৪

আলতো হাতে কাপড় সরিয়ে ধবধবে ফর্সা উদরখানিতে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে পলকহীন চোখে। উঁচু হয়ে উঠার প্রক্রিয়াধীন থাকা উদরে ঠোঁটদুটো ঠেসে সে চুমু খায় গভীরভাবে, বলে, “খুব রাগ, খুব অভিমান, খুব আক্রোশ জন্মেছে আব্বার প্রতি? ভাবছ, এতদিন পর কেন এসেছি তোমাদের সঙ্গে পরিচিত হতে, তোমাদের অনুভব করতে, আদর করতে? সোনারা, আব্বা জানতো না তোমরা আসছ, সে খেয়ালই করেনি, ভাবেওনি তোমরা আসতে পার! তোমাদের আম্মাও বলেনি, অবশ্য তার দোষ দেওয়া বে-ইনসাফি হবে। সে আমাকে শাস্তি দিচ্ছিল—অবশ্য আমি যোগ্যই! তার গায়ে হাত তুলেছি, শাস্তি বিহীন সব পেয়ে যাব কেন? এরকম অধম পিতা তোমরা আসলে ডিজার্ভ করো না! তবুও আমি এক লোভী, স্বার্থপর পিতা, তোমাদের মায়ের মতো তোমাদেরও চাই, তোমাদের থেকেও চাই—ক্ষমা পাব কি আব্বারা? প্রথমবার এবং শেষবার আব্বার ভুলগুলোকে ফুল ভেবে মাফ দিবে তো তোমরা? নাকি মায়ের মতোই কঠোর হবে? আচ্ছা, হও তোমরা মায়ের মতো, মাফ না দিলেও আব্বাকে একটু ভালোবাসা দিও, কাঙাল ভেবে হলেও দিও।”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৪৬