অশ্রুবন্দি পর্ব ৫১

অশ্রুবন্দি পর্ব ৫১
ইসরাত জাহান ফারিয়া

সৃজা রেহমান। ইহসান শেখের অর্ধাঙ্গিনী, ইনজানের ল্যাভেন্ডার! ল্যাভেন্ডারকে দেখেছিল সে ইহসানের সাথে, স্টেশনারি দোকানে। খাতা-কলম কিনছিলো সে, ইহসান পাশে দাঁড়িয়ে ঠিক করে দিচ্ছিল কোনটা নেবে। হঠাৎ ভাইকে এক মেয়ের সাথে দোকানে দেখে রাস্তার ওপাশে গাড়িটা থামিয়ে রাখে ইনজান। সিগারেটে টান দিতে দিতে সে দেখে তার ইহসান কেনাকাটা শেষ করে মেয়েটার হাত ধরে দোকান থেকে বের হচ্ছে। ইহসানের চোখেমুখে তখন রাস্তা পার হওয়ার ব্যস্ততা। একহাতে কেনাকাটার ব্যাগ অন্যহাতটার মুঠোয় ঐ মেয়েটির হাত। তার ভাইয়ের পরণে পাঞ্জাবি। মেয়েটার পরণে একটা জামা পরা, হালকা নীলাভ-গাঢ় বেগুনি রঙের। গলায় জড়ানো সাদা ওড়না। এলোমেলো একটা হাত বেণি করা। তাতে ছোট্ট একটা সাদা ফুল। শেষ বিকেলের রোদে ঝলমল করা কিশোরী মেয়েটাকে দেখে তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল রোদ ছোঁয়া ল্যাভেন্ডার ফুলের বিস্তৃত এক বাগান। ইনজান একগুচ্ছ ফুলের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়েটার নাম দিয়েছিল— ‘ল্যাভেন্ডার।’

সেইরাতে ক্লাবে আড্ডাবাজি না করে বাড়ি ফিরেছিল সে। খোঁচানো মন নিয়ে ভাইয়ের ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “আজকাল অতো মেয়ে নিয়ে ঘুরঘুর করছ কেন ব্রো? আমার মতো চরিত্রটা তোমারও নষ্ট হয়ে গেল?”
ইহসান বিছানায় অর্ধশোয়া হয়ে বিক্ষিপ্ত মেজাজে বলেছিল, “তোর মতো ঠুনকো চরিত্র না আমার, না মানুষ খু-ন করে বেড়াই। গতরাতেও তো ক্লাব থেকে তিনটার সময় ফিরলি। আমি কী জিজ্ঞেস করেছি একবারও, কেন এতো দেরি করে ফিরেছিস? তুই আমার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করবি না। কৈফিয়ত দেওয়ার মতো অভিভাবক হয়ে যাসনি আমার।”
“তা অবশ্য ঠিক। বাট ওই মেয়েটা কে? দু’দিন দেখলাম, তোমার গার্লফ্রেন্ড?”
“এখনো হয়নি, হয়ে যাবে। বড় হোক।”
ইনজান লাফিয়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তুমি ওকে বিয়ে করবে? অবশ্য বিয়ে করার কী দরকার—গার্লফ্রেন্ডেই সীমাবদ্ধ রাখো না। খাও-দাও, ফুর্তি করো! বিয়ের মানে বন্দিত্ব! স্বাধীনতা হরণ, পরাজয় বরণ, নিজস্বতা হারানো। বাচ্চা পয়দা করা। সবকিছু পার্টনারকে ঘিরে করতে হয়, লাইফে কোনো আনন্দ থাকে না। তুমি বিয়ে করো না।”
ইহসান রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়েছিল, “হেইট ইউ, আই জাস্ট হেইট ইউ ইনজান! তুই তোর বাপের চরিত্র ধারণ করছিস দিনদিন, তার ছায়া আমি তোর মধ্যে দেখি। লাইক ফাদার লাইক সন। আর আমি ঘৃণা করি, আজিজ শেখকে, তার চরিত্রের ফটোকপিকে, সবগুলো ন্যাওটাকে।”
“আমি আমার মতোই।”
ইহসান তাচ্ছিল্য করেছিল, “কাক কখনো নিজেকে কালো বলে না। একটা কথা বলি শোন, মানুষ হিসেবে তুই খুব একটা সুবিধার না। বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষে পরিণত হচ্ছিস দিনদিন। তোর চেয়ে বড় সিক পার্সন আমার মনে হয় না আর কেউ আছে।”

ইহসানের চোখে ব্যাকুলতা দেখেছিল সে।।অগোচরে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছিল, এই মেয়েটা অনিতা রেহমানের মেয়ে। অনিতা রেহমান। তার বড় ভাইয়ের প্রিয় মিস! ছয়মাস আগে যাকে গাড়িচাপা দিয়ে মেরেছিল! ইনজানের মাথায় চট করে চিন্তাটা আসে, ভাইয়ের পছন্দের মেয়েটা তার দেখা অন্য সব মেয়ের মতো না। একটু অন্যরকম। যদিও সে প্রেম-ভালোবাসার মতো দামী অনুভূতির সঙ্গে সে পরিচিত নয়। জানেই না এসব অনুভূতি কেমন হয়। সম্পূর্ণ অজ্ঞ সে। তবুও বড়ো ভাই এই মেয়েটাকে চায়, ভালোবাসে। তাই সেও চাইল সৃজাকে। কারণ ছোটবেলা থেকেই বড় ভাইয়ের জিনিসে ভাগ বসানো তার স্বভাবের প্রবৃত্তি। ইনজান না হয় তার মাকে মেরে ফেলেছে! একটা স্ক্র‍্যান্ডেল হয়েই গেছে! কিন্তু তাই বলে যে, ল্যাভেন্ডারের সুবাসে সুবাসিত হবে না, এটা তো তামাম পৃথিবীর কোনো সংবিধানে লেখা নেই।

পরদিনই মুখে কাপড়চোপড় বেঁধে সে সৃজার সামনে এসেছিল। রাস্তা আটকে ওকে নিজের গার্লফ্রেন্ড হবার অফার দিয়েছিল! এটাও বলেছিল, রাজি না হলে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে, তার বাবার অনেক পাওয়ার! সৃজা ভয়ে একছুটে বাসায় চলে গেছিল। ইনজান রাস্তায় মোড়েই দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিল সেদিন! মজা পেয়েছিল সৃজার ভীতু মুখ দেখে, গর্ববোধ হচ্ছিলো নিজের উপর। এরপর তৃতীয়বার ল্যাভেন্ডারকে দেখেছিল, একহাতে বাজারের ব্যাগ বয়ে নিয়ে বাসায় ফেরা অবস্থায়। অন্য হাতে ধরে রেখেছিল আরেকটা ছোটো হাতকে! সবুজ রঙের ফ্রক পরা আট-দশ বছর বয়েসী একটা মেয়ে! গালে কাটা দাগ, তার মতোই। ইনজান চিনতে পেরেছিল মেয়েটাকে, অনিতা ইয়াসমিনের ছোটো মেয়ে। অনিতা ইয়াসমিনের সঙ্গে এই মেয়েটাও ছিল এক্সিডেন্টের সময়। অনেকদিন আই.সি.ইউতে ছিল! কেবিনে শিফট করার পর ইনজান কৌতূহল সারাতে চুপিসারে একদিন দেখতে গেছিল মেয়েটাকে! আশেপাশে কেউ ছিল না, সে মাস্ক পরে চট করে কেবিনে ঢুকে পড়েছিল। একটা ক্যাটবেরি বাচ্চা মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘ভালো আছ বেবি?’
ব্যথাকাতুর চোখমুখ করে মেয়েটা ‘না’ বোধক জবাব দিয়ে বলেছিল, ‘পায়ে খুব ব্যথা।’

‘ডাক্তার ডেকে দেব?’
‘ওরা ইনজেকশন দেয়।’
‘তাহলে কী ডাকব না?’
‘না।’
‘সেটাই বরং ভালো। অহেতুক কেন সূচ ফুটিয়ে ব্যথা নেবে!’
‘তুমি কে?’
‘তোমার অশুভাকাঙ্খী।’
মাস্কটা একটু খুলে ইনজান রহস্যময় ভাবে হেসেছিল। অনিতা রেহমানের ছোটো মেয়ে এলিজা সেদিন বুঝতেই পারেনি তাদের পরিবারটাকে একেবারে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সামনে দাঁড়ানো এই ছেলেটাই দায়ী। সে অচেনাদের মতো করে দেখে যাচ্ছিল লম্বা-চওড়া দেহাবয়ব, বলিষ্ঠ শরীর আর অতি সুদর্শন চেহারার ডান ভ্রু’র মাঝখান থেকে ডান চোখ আর গালের ঠিক নিচ অবধি গভীর কাটা দাগের ছেলেটাকে।

স্যালিলান টি এসেস্ট থেকে খুব একটা দূরে নয়। জঙ্গলাকীর্ণ, নির্জন, লোকালয় থেকে একটু ভেতরে ‘অরণ্যবীথি’ বাংলোটা। বাংলোর পেছনের দিকটা পুরোটাই জঙ্গলে ঘেরা। সেখানেই অকেশিয়া গাছের নিচে বসে আছে ইনজান। হাতে তার ফোন। ইনজান ক্যাম্প ফায়ারের জ্বলজ্বলে আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে এরপর সময় দেখে। ঘড়ির কাঁটা বারোটা পার হয়েছে অনেকক্ষণ। অথচ ইহসান তার ম্যাসেজের রিপ্লাই দিলো না? পরক্ষণেই ভাবল সে, ভুয়া নাম্বার থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে সে। সেজন্যই হয়তো কন্ট্র‍্যাক্টে সমস্যা হচ্ছে! ইনজান মাথা ঝাঁকাল।
আবার ফোনটা হাতে নিয়ে ঠোঁটে বক্র হাসি ঝুলিয়ে ধীরেধীরে হেমকে উঠল। এতদিন হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করলেও এখন হাঁটতে পারে ইনজান। তবে বেশিক্ষণ পারে না। পায়ে ভর দিয়ে রাখলেই অসহনীয় যন্ত্রণায় পা দুটো অসাড় হয়ে আসে। ব্যথার দরুণ পা ফেলা যায় না মেঝেতে। দু’কদম এগুতে বেগ পোহাতে হয়। পুরোপুরি ঠিক হতে কয়েকটা দিন সময় লাগবে আরো। হেমকে শুয়ে দোল খেতে খেতে সে নীতিনকে ডাকলো, ড্রিংকসের গ্লাস সাজিয়ে দিতে। নীতিন!

আজিজ শেখের অধীনে কাজ করা এক পুরোনো কর্মচারীর ছেলে। ইনজান দেশে থাকাকালীন ছোট থেকেই নীতিন ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকতো, ওর বিশ্বস্ত লোক। কুচকুচে কালো, চোখদুটো সবসময় নেশার প্রভাবে লাল হয়ে থাকে, ডাকু টাইপের চেহারা, শক্তিশালী! নীতিনের চেহারার এই বৈশিষ্ট্যের জন্য ইনজান তাকে আরো বেশি পছন্দ করে। আরে, ভাইব থাকা লাগে তো গুন্ডা-মাস্তানদের চেহারায়! নীতিনের সেটা আছে! দেখলেই লোকে দশহাত দূরে থাকবে, ওকে ডাকু ভেবে! নীতিনকে পুষছে সে বহুদিন যাবৎ! একদেশে বসে অন্যদেশে থাকা অনিতা রেহমানের
বড় মেয়ে সৃজা রেহমানের খোঁজখবর সে ঠিকঠাক পাচ্ছিল না, তাই গত বসন্তের পর সে নীতিনকে বলেছিল সৃজার উপর নজর রাখতে। সপ্তাহান্তে নীতিনের থেকে সে সৃজার মোটামুটি আপডেট পেয়ে যেত! কিন্তু ইহসান-সৃজার বিয়ের খবরটা পেয়েছিল ওদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে! বলা নেই, কওয়া নেই ল্যাভেন্ডারকে তারই ভাই তারই অজ্ঞাতে নিজের করে নিয়েছে; বেশ বিরক্ত হয়েছিল ইনজান। কাউকে কিছু না জানিয়েই অনেকগুলো বছর পর দেশে ফিরেছে সে। ইঁদুর-বিড়ালের খেলা খেলতে, মজা নিতে তার বড়োই ভালো লাগে। বহুদিন পর ভাইয়ের দৌলতে একটু খেলার সুযোগ পেয়েছে, খেলুক; ক্ষতি কী! খেলতে খেলতে বড়ো ভাইকে একটু নাকানিচুবানি খাওয়াবে, হালকা করে প্রতিশোধ নেবে। নেওয়াটাই তো ন্যায্য! জীবনে প্রথমবার সে চেয়েছিল ল্যাভেন্ডারকে ; ভাই জানতো! অথচ ছেড়ে দেয়নি ওর জন্য! এটা কী হয়? সে তো সবসময় যা চেয়েছে তা-ই পেয়ে এসেছে, ব্যক্তিক্রম এবার কেন হবে?

তবে বাংলাদেশে ফিরছে এই খবরটা কাউকেই সে জানায়নি, একমাত্র নীতিন ছাড়া। বাড়িতে না গিয়ে উঠেছিল একটা পাঁচতারকা হোটেলে। কিছুদিন এদিক-ওদিক কাটিয়ে ফুল, চিঠি পাঠিয়ে দু’য়েকবার সৃজাকে ভড়কে দিয়ে সে বেশ মজাই পাচ্ছিল। লুকোচুরি খেলাটা হয়তো আরো কিছুদিন চলতো যতদিন না সে ইহসানের হাতে ধরা পড়তো! ধরা অবশ্য সে পড়তো না। কিন্তু সৃজাদের শ্যাওড়াপাড়ার বাড়িতে ফুল-চিঠি পাঠানোর দিন বিশেক পরে সে পরপর আরো কয়েকটা পার্সেল পাঠায়, যেগুলো সব এলিজার হাতে পড়ে। অজানা ঠিকানা থেকে আসা সবগুলো পার্সেল বেশ সন্দেহ উদ্রেক করে একজনের মনে! সেই একজনই পার্সেলের সময় ডেলিভারি ম্যান তথা নীতিনকে বাড়ির ভাড়াটিয়া দিয়ে আটকে এরপর ইহসানের হাতে ধরিয়ে দেয়! এরপর নীতিনকে ধরে ইনজান অবধি পৌঁছাতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না ইহসানের। এটা যদি না হতো তাহলে ইনজান তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতো, আর সহজেই উদ্দেশ্য হাসিল করে নিতো! কিন্তু ল্যাভেন্ডার যে পার্সেল পাঠানোকালীন শ্যাওড়াপাড়ার বাড়িতে ছিলই না, এ ছোট্ট খবরটা মিস করে যাওয়ার কারণেই এসব হয়েছে। ডেলিভারি ম্যানের ছদ্মরুপে থাকা নীতিন যখন পার্সেল দেওয়ার নাম করে জিজ্ঞেস করত, ‘এটা কী সৃজা রেহমানের বাসা? উনি কী এখানেই আছেন? উনার নামে একটা পার্সেল আছে।’

এর জবাবে ‘আপু এখানেই আছে। আপনি পার্সেলটা আমাকে দিন। আমি ওকে দিয়ে দেব।’
এ ভুল খবরটা নীতিনকে কে বলতো? ডটার অফ অনিতা-নাইমুর রহমান, সিস্টার অফ সৃজা রেহমানের ছোট বোন এলিজা! এলিজা…নো নো…দোয়া রেহমানের চতুরতা দায়ী। পার্সেল রহস্য উদঘাটন করবে বলে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছিল সে নীতিন আর ইনজানকে! তাই এই এলিজা তথা দোয়া রেহমানই ইহসানের হাতে ওর ধরা পড়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে দায়ী! এ ছোট্ট ভুলটার জন্যই ইনজান ধরা পড়েছে, তার সব গোছানো পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে গেছে। অ্যাডভেঞ্চার, ফান কিচ্ছু নেই জীবনে। উপরন্তু বেদম মার খেয়ে পঙ্গুবস্থায় বসে বসে ঢেঁকি গিলছে! কে? আরসালান ইনজান শেখ!

ইহসান প্রথমে ভেবেছিল ইনজান প্রাইভেট নাম্বার থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। কিন্তু ভালো করে লক্ষ করতেই বুঝে গেল থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করে সে ম্যাসেজ করেছে। ইহসান ওর ম্যাসেজের রিপ্লাই করতে পারল না কোনো কারণে৷ তবে সে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ফোনের ডিটেইলস পাঠাল ওর ক্রাইম ডিপার্টমেন্টে কর্মরত এক বন্ধুকে। যেন কালকের মধ্যেই সে ট্রেস করার চেষ্টা করে ইনজানকে। যদিও ভুয়া নাম্বার, লোকেশন ব্যবহার করায় ওকে ট্রেস করা সহজ নয়, ইহসান তবুও হাল ছাড়ল না। ঘুমিয়ে যাওয়ার পায়তারা করা সৃজাকে বুকের উপর নিয়ে সে নিঃশব্দে চোখদুটো বুজল। ফোনটাও নিজের কাছে রাখলো। রিপ্লাই না পেলে ইনজান হয়তো অন্যভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করতে পারে, ধারণা করল সে। আর ধারণাটা বাস্তবে রুপান্তরিত হয়ে ইনজানের ফিরতি ফোনটা এলো পরদিন। ইহসান তখন রেঁস্তোরায়। এক মন্ত্রীপুত্রের পার্টি অ্যারেঞ্জ করছে। ইহসান কলটা রিসিভ করল নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে। ফোন কানে ঠেকাতেই ইনজানের মাদক মাদক কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, “ম্যাসেজের রিপ্লাই করোনি তাই কলই করলাম। আজকাল ড্রিংক করার সময় কারো সাথে বিরোধী সংলাপে না জড়ালে কেন যেন জমে না…”
“কই গা ঢাকা দিয়েছিস তু হারা*? রশিদের কী অবস্থা করেছিস? ও তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিল? কু* বাচ্চা তুই এসব বা* আলাপ পাড়তে ফোন দিয়েছিস? এক্ষুনি বল, কোথায় আছিস…”

“গত রাতে প্রশ্নটার উত্তর জানতে ফোন দিয়েছি। না জানলে স্বস্তি মিলছে না…”
ইহসান বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করে বলল, “তুই জীবনে কোন পথে হাঁটছিস, কীভাবে চলছিস—সেসব নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, যতক্ষণ না তুই আমার জীবনে কাঁটার মতো বিঁধে ঢুকে পড়িস। তোকে আমি বহুদিন আগেই ভাই হিসেবে মানা বন্ধ করে দিয়েছি। তাই ‘আমি তোকে ভালোবাসি কি না’—এই প্রশ্নটাই আমার কাছে অর্থহীন। শোন, আজিজ শেখের কলুষিত রক্ত তোর শিরায় প্রবাহিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি এমিলি ইয়াসমিনের নিষ্পঙ্ক্ষ রক্তও তোর মধ্যে বয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তোকে অনেকবার শুধরানোর সুযোগ দিয়েছি, সংশোধিত করার পথ দেখিয়েছি। তুই চাইলেই একেবারে নিষ্পাপ, শুদ্ধ এক চরিত্র হয়ে উঠতে পারিস, পবিত্র পুরুষ হতে পারিস। তাই আমার হাতে মরবার আগে ভালোমানুষ হয়ে যা, তোকে আরো একটা সুযোগ দেব।”

এক সিপ পানীয়তে চুমুক দিয়ে ইনজান বলল, “আমি পুরোপুরি ভালো মানুষ, শুদ্ধ পুরুষ হয়ে গেলাম, তোমাদের পবিত্র আদর্শে পা রাখলাম। ড্রা গ স থেকে একদম দূরে। ম দ? ভাবতেও পারি না৷ নারীর প্রতি কামনা? একদম ত্যাগ করলাম। এবং, তোমার মতো এক নারীতে মন ভরালাম, নিজেকে শুদ্ধ পুরুষ হিসেবে প্রমাণ করতে গিয়ে। এখন, প্রশ্ন হলো— এইসব ‘শুদ্ধতার’ বিনিময়ে তোমার কোন মূল্যবান সম্পদের ভাগীদার হবো?”
“আমার সন্তানরা যে স্নেহ নামক অমূল্য সম্পদ পাবে, তার ভাগীদার হতে পারিস। কিন্তু যদি তুই পাপের কালো ছায়ার মধ্যেই নিজের মধ্যে ধারণ করে রাখিস, আমি হয়ে যাব ঘৃণার আগুন। তোর চোখে যদি থাকে চোরাগোপ্তা ছলনা, আমি তোর প্রতি ঘৃণা পুষে রাখব আজীবন। ভেবে দেখ—তুই কোথা থেকে এসেছিস, তোর পরিচয় কী? ঠিক কর, অন্যায়ের মাশুল কীভাবে দিবি! পাপের প্রেত হয়ে, নাকি নিষ্পাপতার প্রার্থনা হয়ে? একটা কথা জেনে রাখিস, যদি তুই নিষ্পাপতার জলধারা বইয়ে দিস, তাহলে তোর জন্য ভালোবাসা হবে শুদ্ধতম অভিশাপ। এবং এটাই ভালোবাসার বিশেষত্ব, যা তুই উপলব্ধি করতে পারিসনি কখনো।”

গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছিলো ইনজানের গলার স্বর,
“আমি তোমার ভাই, রক্তের ভাই। জানোই তো, এই রক্তটা দূষিত! আর দূষিত রক্ত কখনো পরিশুদ্ধ হয় না, যেমন আমাদের পিতা মহাশয়ের হয়নি, তেমনিভাবে আমারও হবে না, ওই কী, উপলব্ধির
কথা বলছিলাম।”
“তোর শাস্তি চূড়ান্ত।”
“ভাগ পাবে।”
“তোর ভাই হওয়ার শাস্তির ভাগটাই না হয় পাব।”
“অনেককিছু হারাবে তুমি।”
“তুই একেবারে নিঃস্ব হবি!”
“অতঃপর দুই নিঃস্ব ভাই মিলে জড়াজড়ি করে আফসোস করব!”

ইহসান দু’বার গাঢ় শ্বাস ফেলল। রাগে লাল হয়ে গেছে তার চোখ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “কাপুরুষের মতো লুকোচুরি না করে সামনে আয়। কোন গর্তে লুকিয়ে আছিস হারামি? কী চাস তুই? আই উইল কিল ইয়্যু!
ওর রাগ বুঝেই যেন ইনজান বিমোহিত কণ্ঠে বলল, “লিলাক শেডের জামা পরে, আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে, তোমার হাত ধরে রাস্তা পা হওয়া মেয়েটিকে চাই, যার মা’কে আমি অনিচ্ছাবশত উপরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, যাকে তুমি পবিত্র বিবাহের নামে, ভালোবাসার নামে শুদ্ধতার সিন্দুরে বেঁধেছ, তাকে চাই। আমি কখনোই মেয়েদের কাছে আসতে জোর করিনি, বা তাদের সিডিউস করার চেষ্টা করিনি। বরং, তারা নিজেই আমাকে দেখে আকৃষ্ট হয়ে কাছে আসতো। আর যখন তারা আসতো, আমি কখনো তাদের ফিরিয়ে দিতাম না। কারণ আমি জানি, আমি ভালো দেখতে। মেয়েরা আমার প্রতি আকৃষ্ট হবে, আমাকে চাইবেই। যেমন আমরা সুন্দর ফুল দেখলে গাছ থেকে তুলে নেই, ঠিক তেমনি। কিন্তু মনে হচ্ছে, ল্যাভেন্ডারের কাছে আমারই নতি স্বীকার করতে হবে। আমি সুদর্শন হতে পারি, তবে তুমি তো কম কিছু নও, একদম আগুন। তোমার মধ্যে একটা অন্যরকম ব্যাপারস্যাপার আছে। ল্যাভেন্ডার তোমাকে ছেড়ে আমার কাছে আসবে না। বাঙালি নারীদের তো জানি, স্বামী-সন্তানই তাদের কাছে সব। তাছাড়া তুমি তো আছোই পথের কাঁটা হয়ে! যাকে ভ্রাতৃত্বের টানে ফুলের টোকা দেওয়ার সাধ্যিও আমার নেই!”

নোংরা, বিকৃত, কুৎসিত চিন্তাধারা। গা গুলিয়ে উঠে ইহসানের। এসব কুরুচিপূর্ণ কথা সে শুনতে চায় না, এসব শোনাও পাপ। ইনজানকে সামনে পেলে সে মেরে ফেলবে এটাও নিশ্চিত। চরমমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে ইহসান গর্জে উঠতে গিয়েও নিজেকে আটকালো অতি কষ্টে। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্য ফুটল ঠিক সেসময়। বজ্রকণ্ঠে সে বলল, “যাতনায় ছিন্নভিন্ন হয়েছি কতবার— অথচ বাস্তবিকভাবে নিজের করে ওকে পাব, সেই স্বপ্ন কখনো দেখিনি। ওর ভালোর জন্যই দেখিনি। আবার এতো ভালোও চাইনি যে, ওর জীবনে অন্য কেউ আসবে, ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকাবে, ওকে নিজের করে নেবে। সেই সুযোগ কোনোদিনই দেইনি। অথচ সেদিন যখন ওকে সমাজের লোকেরা অপদস্ত করল, কলঙ্কিত করতে চাইল, আমি এক মুহূর্তও কিচ্ছু ভাবিনি। ওকে জীবনে জড়িয়ে ফেলেছি! আর জড়িয়ে যখন ফেলেছিই, তখন ওকে বিরক্ত কর‍তে আসা সব কু* বাচ্চার মরণ আমার হাতে হবে, এটাও দলিলে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। আজ তোর অপবিত্র মুখে যেসব কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছিস আর যা বলছিস তাতে এই শাস্তি তোর
উপরও ফরজ হয়ে গেছে, এই মুহূর্তে।”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিলো ইহসান। যাতে ইনজানের কোনো নোংরা কথা না শুনতে হয় ওর। কল, ম্যাসেজ করে ওকে বিগড়ে দিতে না পারে, হারামিটা সত্যিই ছাঁইপাশ গিলছে সেটা ফোনে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল। তাতে নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গেছে সেটাও ধারণা করছে ইহসান। নয়তো ফোন করতো না। ইহসান তিতিবিরক্ত হয়ে তার বন্ধুকে কল করল, সে জানাল এইমাত্র যে নাম্বারটা থেকে ফোন এসেছে সেটা ট্রেস করা গেছে। ইহসান নিশ্চিত হলো খবরটা শুনে। যাক! শ য় তানটার খোঁজ পাওয়া গেছে, নোংরামির শেষ দেখে ছাড়বে এবার সে!

অবৈধ সম্পদ কামানোর জন্য আলাদা টিক্স, আলাদা পথ ব্যবহার করেন আজিজ শেখ। সেই পথে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন তিনি। সবই জমান তার পুত্রদের জন্য। কিন্তু বাবার এই অবৈধ উপায়ে গড়া অর্থসম্পদের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি তেমন কেউই।ইহসান যদিও স্পষ্ট স্বরে ঘৃণা প্রকাশ করে তবে ইজহান মাথা ঘামায় না এসব বিষয়ে কখনো।দায়িত্ব নেবার পর থেকে অফিসের কারবার সামলালেও সে নিজে অবৈধ পথে কখনো কিছু অর্জন করার চেষ্টা করেনি। তবে বাবার কাজেও কখনো বাধা প্রদান করেনি। যা খুশি সে করুক, এসব বিষয় নিয়ে দু’আনা ভাবনার সময়ও তার নেই। তবে প্রশ্ন যখন ইস্মিতা আর তাঁর সন্তানের মঙ্গলার্থে, তখন এসমস্ত অশুভ সম্পদের ছায়া ভালো কিছু বয়ে আনতে পারবে না বিশ্বাস তার।

বিলাসিতায় সে বড় হয়েছে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। হাজার টাকার নোটও তার কাছে কম। ধন-সম্পদে তার বিন্দু পরিমাণ লোভও নেই। অথচ বাবা তার সন্তানকে অবৈধ সম্পদ উপঢৌকন হিসেবে দিলো? এ আচরণটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। কেন অবৈধ সম্পদ দিবে তার অনাগত আম্মাজানকে? তার কী এতই দুর্দশা চলছে যে এসব নিতে হবে? তার নিজের যা আছে সব বৈধ, এসবেই আরো কয়েক পুরুষ সাচ্ছন্দ্যে খেয়েপড়ে যেতে পারবে। তাই ইস্মিকে দেওয়া উইল ছিঁড়ে না ফেললেও ফেরত দিলো সে আজিজ শেখকে। আগেই দিতো, কিন্তু কাজের চাপে আর পরিস্থিতির বিরুপতায় ব্যাপারটা ভুলেই গেছিল সে। ইহসানের স্বভাব আজিজ শেখের জানা ছিলো তাই তিনি বিশেষ একটা অবাক হননি। কিন্তু ইজহানের কান্ডে হয়েছেন। বাবাকে এমন বিস্মিত হয়ে যেতে দেখে ইজহান ঠান্ডা গলায় বলে, “রেখে দাও, আমার, ইস্মিতার বা আমার সন্তানের লাগবে না এসব।”

“কেন লাগব না?”
“তুমি হয়তো তোমার অবৈধ ইনকাম দিয়ে আমাদের বড় করেছ, কিন্তু আমি আমার সন্তানকে অবৈধ সম্পদে বড় করতে চাই না।”
এসব বিষয়ে জীবনে ‘টু’ শব্দ না করা নিজের অস্থির, পাগল, হিসেবে পাকা ছেলের কথা শুনে চমকে উঠেন আজিজ শেখ, “আব্বাজান তুমি ইহসানের মতো কথা কইতেছ ক্যান? এইসব তো তুমি বলো না আমায় কখনো।”
“আজ বললাম।”
আজিজ শেখ হতাশ হোন, “আব্বাজান, আমি কালই উকিলরে ধরতেছি। সাভারের বড় জমিডা আমি আমার নাতিরেই লিখে দিমু। তুমি একটা দিন সময় দেও আমারে, তবুও এইডা ফেরত দিও না।”
“ভুল, নাতি না। নাতনি। আমার মেয়ে হবে।”
কাঠকাঠ গলায় মেয়ে হবে শুনে আকাশ থেকে পড়েন আজিজ শেখ, “অ্যাঁ!!! মেয়ে হইব? ক্যামনে জানলা? ডাক্তার বলছে নাকি? আজকাল তো বলা নিষেধ, বলে না।”
“বলেনি, কিন্তু আমি মেয়ে চাই!”
আজিজ শেখ অবাক হোন, “মেয়ে চাও? মেয়েই লাগব?”
“হু, মেয়ে দিয়ে মা হয়।”

আজিজ শেখ রুষ্ট হোন, “হোক মেয়ে। নাতি-নাতনি যেটাই হোক সমস্যা নাই। কিন্তু তুমি প্রসঙ্গটা এইভাবে বলতাছ ক্যান? সবসময় মা মা করো! তোমাদের কী আমি ভালোবাসি নাই? ঐ মহিলা তোমাদের জীবনে ভালোবাসা দিসে? আমার রক্ত বইলা সে তোমাদের ঘৃণা কইরাই গেসে। অথচ তোমরা এহনো তার কথাই বলো। তুমিও তো তাও আমায় দাম দেও, কিন্তু আমার আরেকটা বড় পোলা? কলিজার টুকরো ইহসান, সে, একটু দামও দেয় না। এই আফসোস কেমনে রাখি? মরলেও তো কমবে না।”

আজিজ শেখ আবেগী হোন। আরো অনেকক্ষণ বসে বসে নিজের আফসোসের গল্প শোনান ইজহানকে। ইহসানের প্রতি নিজের পিতার এমন উচাটন বাক্যসমূহ ভালো লাগে না ইজহানের। সে আর এক মুহূর্ত সেখানে বসে থাকে না। উঠে চলে আসে ছাদে।আজিজ শেখ তাঁর থেকে ইহসানকে কিঞ্চিৎ বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছে। এটা ভেবেই ইজহানের রাগ লাগছে। তার ভাইয়ের ভাগ্য দেখো, নিজে থেকে কিছুতে ভাগ বসাক আর না বসাক পরিস্থিতি বেশিরভাগ সময় তার ভাইয়ের পক্ষপাতিত্বই করে। যেমন সে চাওয়া স্বত্তেও; জবরদস্তি করে মায়ের ঘর, তাঁর আসবাবপত্র, ব্যবহৃত জিনিসপত্র এমনকি চুলের কাঁটা পর্যন্ত নিজের দখলে নিয়ে নিয়ে রেখেছে ইহসান। একটা গার্লফ্রেন্ড বানিয়েছিল সে, ঐ নাগিনী আবার নিজে থেকেই চলে গেছিল তার ভাইকে পটাতে। ভ্যগ্য দেখো! ছোটবেলায় মায়ের স্নেহ পাবার জন্য তারা দু’জনেই সমান ব্যাকুল হলে, মা দূরছাই করতো ওদের! মার খেয়ে চলে আসতো ইজহান, একা বসে কাঁদতো। কিন্তু ইহসানটা মার খেয়েও মা’কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে রাখতো, ছাড়ত না।

মায়ের মনে কিঞ্চিৎ মায়া জাগলে হয়তো মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো, নরম সুরে দু-একটা কথা বলতো! সেটাও দুর্লভ। হয়তো হাতে গোণা কয়েকবার এমন হয়েছিল! ওটুকু নিয়েই বড়াই করে বেড়াতো ইহসান। জেদ আর হিংসায় জ্বলতো তখন ইজহান। মা’কে অভিযোগ জানাতো। কিন্তু মা ফিরেও তাকাত না, গুণগুণ করে কাঁদতো, দোতলার ঐ ঘরটায় একা বসে ছবি আঁকতো। বাবাই একমাত্র যে ইজহানকে তখন এসে সান্ত্বনা দিতো, আগলে নিতো। কাঁধে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তো। সেজন্য চাইলেও বাবাকে না ভালোবাসলেও তার প্র‍তি পুরোপুরি বিদ্বেষমূলক আচরণ করতে পারে না। কোথাও একটা আটকে যায় সে, অথচ ইহসান যায় না।

অশ্রুবন্দি পর্ব ৫০

ইজহানের মন অশান্ত হয়ে উঠে, বহুদিন পর চোখদুটোও ঝাপসা হয়, রাগান্বিত স্বরে সে অভিযোগ জানায়, “তুমি আমাদের পার্থক্য বুঝতে পারতে, তাই না? কখনো কাছেই টানোনি। এরপরেও বুঝতে কে ইহসান, কে ইজহান! আর তাই ভুলক্রমেও আমার প্রতি মাতৃত্ব দেখাওনি। যেটুকু দেখিয়েছ সেটাও ইহসানকে! ও বাবাকে দেখতে পারত না, কাছে ঘেঁষত না তাই? আরসালানকে যদিও আগে মারতাম, তবে আজ ওর মতো আমারও বলতে ইচ্ছে করছে, তুমি খুব স্বার্থপর একজন নারী। যে শুধু নিজেকে বাঁচিয়েছ, আমাদের দিয়েছ বাবার কৃতকর্মের শাস্তি।”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৫২