অশ্রুবন্দি পর্ব ৭২ (৩)
ইসরাত জাহান ফারিয়া
সেদিন রাতের ঘটনা শোনার পর থেকে এলিজার উপর নীলু বেগম রাগ। তার এক কথা, বাড়িতে এতগুলো লোক থাকতে এলিজাই কেন গেল ঐ নে শা খোর ছেলেটাকে পানি দিতে? যদি কিছু করে বসতো? কথাই বলছেন না তিনি এলিজার সাথে। ফুপিকে অনেক বুঝিয়েছে এলিজা। কিন্তু মান ভাঙাতে পারেননি। এরকম একটা বিষয়ে ফুপির এতো রাগ দেখে সৃজাও বিস্মিত। মনে পড়ল, তার সরল ফুপি প্রথম থেকেই ইনজান শেখের নামটিও শুনতে পারে না। তার সাথে পরিচিতও হতে যায়নি। কেমন এক অদৃশ্য, চাপা রাগ বহন করে মানুষটির প্রতি। অথচ আগে কখনো দেখেননি তিনি এই লোকটাকে। তাহলে এতো ক্রোধের কারণ কী? সৃজা ও এলিজা দু’জনেই চিন্তিত! তবে এলিজা ফুপির কথা মেনে আর একবারের জন্যও ইনজান শেখের সামনে পড়েনি। তার বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি।
শেখ বাড়িতে এখন অস্থিরতা। ডাক্তারের পরামর্শে আরসালানকে সব ধরণের নে শা দ্রব্য থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে ইহসান। কিন্তু আরসালানের শরীর আর মন সেই অভ্যস্ত চাহিদার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছে না। যন্ত্রণায় পাগলপারা হয়ে গেছে সে। সারাবাড়ি তার চিৎকার, চেঁচামেচি আর হুমকিতে মুখর। অথচ সবাই যেন বধির হয়ে গেছে। কেউ দিচ্ছে না একটুখানি পাউডার, একটা ট্যাবলেট। মাত্র দু’দিনেই তার হাল বেহাল। শারীরিক অস্থিরতা এতটাই প্রবল যে মনে হয়, যেন বিকৃত কিছু ঘৃণ্য পোকা তার হাড়-মাংস ছিঁড়ে খাচ্ছে।রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিচ্ছে বিষ। সে বিষে তার সারা শরীর জ্বলছে, ছটফট করছে সে নিজের ভেতরেই। আরসালান চেষ্টা করেছে—রাগ দেখিয়েছে, ঘরের জিনিসপত্র ভেঙেছে একের পর এক। কিন্তু ইহসান নীরব, অনড়। প্রয়োজনীয় সব নে শার জিনিস সে নষ্ট করে ফেলেছে, আর চোখের দিকে তাকিয়ে সোজা বলেছে, “তুই মরেও গেলে তোকে এসব নিতে দেব না।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আরসালান শেষমেশ আজিজ শেখকেও বলেছে, তার ওসব জিনিসগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। যেকোনো মূল্যে আনতে হবে। সে আর পারছে না যন্ত্রণা সহ্য করতে। শত হলেও বাবা। ছেলের কষ্টটা সহ্য হচ্ছিল না আজিজ শেখের। তাই একফাঁকে প্রদীপ বড়ুয়াকে ডেকে বলেছিলেন, ব্যবস্থা করতে। কিন্তু যত গোপনেই হোক, কোনোভাবে খবরটা চলে যায় ইহসানের কানে। সে রাগে যেন উন্মাদ হয়ে যায়।
বিকেলে রেস্তোরাঁ থেকে ফিরেই নিজের ঘরে না গিয়ে সোজা চলে আসে আজিজ শেখের ঘরে।
সালেহা বেগম একপাশে চুপচাপ বসে টুকটাক কাজ করছেন, সম্ভবত পাঞ্জাবির বোতাম সেলাই করছেন।
আজিজ শেখ আধশোয়া হয়ে টেলিভিশনে খবর দেখছিলেন। হাতে চায়ের কাপ, কোলে পত্রিকা।
খবর দেখছেন, আবার পত্রিকার পাতাও উল্টাচ্ছেন।কে জানে কোনোটায় মন! ঘরে ঢুকেই ইহসান আজিজ শেখের এই নিশ্চিন্ত অবস্থা দেখে আরও চটে গেল। ধুপধাপ করে এগিয়ে গিয়ে টিভির সুইচ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল, “আপনি কি চান ছেলে মরুক? মরুক ভালো। অন্তত মরে গেলে আর এই বি ষের জন্য কাতরাবে না।”
এক মুহূর্তের জন্য ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে এল।
সালেহা বেগমের সুঁই, সুতোটা আধা টানা, আঙুলে আটকে রইল। চোখ নামিয়ে ফেললেন। বাপ-ছেলের দ্বন্দে আড়ষ্টতায় আটখানা। বলার মতো মুখ খোলেন না কখনোই। তবে প্রতিবারই নিঃশ্বাসটুকু ভারী হয়ে ওঠে। আজিজ শেখ চায়ের কাপটা নামিয়ে রাখলেন টেবিলে। তার অবাধ্য ছেলে ইহসান সাধারণত এ ঘরে আসে না, আজ এলো রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে ছিলেন তিনি। ছেলের কথাগুলো শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। কিন্তু গলা নরম রাখার চেষ্টা করে বললেন, “ছেলে মারতে চাই মানে? কী হইছে ঠিকমতো বলো। এত রাগারাগি করে কিইবা হবে? বসো এইখানে, কথা বলি।”
বিছানাটা একটু গুছিয়ে জায়গা করে দিলেন। পত্রিকাটা গুটিয়ে পাশে রাখলেন। একফাঁকে সিগারেটের অ্যাশট্রেটাও সরিয়ে ফেললেন, যেন বোঝাতে চান, পুরো মনোযোগ এখন তার ছেলের দিকেই। কোণা চোখে সেটা দেখে ইহসান একটা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। নিজেকে সামলে গলা নিচু করল, কিন্তু রাগটা আর চেপে রাখতে পারল না।
“পরিষ্কার করে মানা করে দেওয়ার পরেও আপনি লুকিয়ে ছাইপাঁশ এনে দিতে চাচ্ছেন জানকে। দু’দিন আগে কী হাল হয়েছিল দেখেননি? ওর শরীরে আর কিছু আছে? সবকিছুর একটা সীমা আছে, একটা জায়গায় গিয়ে থামা দরকার। আপনি সেটা বোঝেন না। আপনি বোঝেন, ওকে খুশি রাখা মানে, যা চায় তাই দেওয়া। সব ভালোবাসা না, পাগলামো। আচ্ছা, আপনি কী আসলেই চান না, ইনজান আপনার থেকেও কয়টা দিন বেশি বাঁচুক?”
টাকা দিয়ে নেশা জাতীয় পদার্থ আনতে বলেছেন এটা ইহসান কীভাবে জানল? প্রদীপ বড়ুয়া বলে দিয়েছে নিশ্চয়। হারামিটাও আজকাল ভালোই তার পেছন মারছে! আজিজ শেখের রাগ হয় কিন্তু পরক্ষণেই ছেলের চোখের আগুনে তার দৃষ্টি হালকা হয়ে আসে।আমতা-আমতা করে বলেন, “কেমন করতেছে, দু’দিন ধরে দেখতেছই তো। কিচ্ছু খাইতেছেও না। আমি বাবা হইয়া কীভাবে ওরে এমন কষ্টে থাকতে দেখি!”
“দেখতে না পারলে চোখ বন্ধ করে রাখুন। সেটা না পারলে বৃন্দাবনে যান। তবু এসব বি ষ এনে নিজের ছেলের ক্ষতি করবেন না।”
“আমি ওর ক্ষতি চাই না, আব্বাজান। কিন্তু বিষয়টা এমন পর্যায়ে গেছে, এখন এসব ছাড়া থাকতে পারছে না।”
“পারছে না তো পারতে হবে! তার জন্য সময় দিতে হবে। ধৈর্য রাখতে হবে। আসক্তি ছাড়ানোর একটাই উপায়, ওকে এসব থেকে যেকোনোভাবে দূরে রাখা।
আর আপনি করছেন একদম উল্টোটা! শয়তান বানাতে চাইছেন।”
চোখ রাঙিয়ে আজিজ শেখ গর্জে উঠলেন, “শয়তান বলবা না আব্বাজান। ফেরেশতা বাচ্চা আমার!”
“আচ্ছা, সুফী সাধক বলব।”
ইহসানের কণ্ঠে খোঁচাধরা তাচ্ছিল্য। আজিজ শেখ মুখ কালো করে ফেলেন, “তো বাড়িতে রাইখা আসক্তি ছাড়াবা? এত সহজ?”
ইহসানের কণ্ঠ এবার কাঠখোট্টা, জ্বালা জড়ানো,
“সেসব নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না। আপনি শুধু অতিরিক্ত আহ্লাদ দেখানো বন্ধ করুন।
আর একটা কথা মাথায় রাখবেন, আমি যেন না শুনি আপনি কূটনীতি করে আবার কিছু এনে ওর হাতে তুলে দিয়েছেন। তাহলে… একেবারে মেরে ফেলব!”
আজিজ শেখ আবারও রাগে ফেটে পড়েন, “রাগাইও না পুত!”
সেই মুহূর্তে সালেহা বেগম মিনমিন করে বললেন,
“আপনি একটু চুপ থাকেন। ও তো ভালোর জন্যই কইছে। পোলার কীসে ভালো হয়, বুঝেন না বাপ হইয়াও?”
আজিজ শেখ হা হয়ে গেলেন। তার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। এ কী শুনছেন তিনি? সালেহা? এই বোবা সালেহা—যে জীবনে তার মুখের উপর ‘টু’ শব্দটি করার সাহস পায় না সে আজ তাকে চুপ থাকতে বলছে? একটা চড় মেরে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে করল আজিজ শেখের।
কিন্তু ইহসান সামনে থাকায় কিছু বলতে পারলেন না।
বরং ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলেন সালেহা বেগমের দিকে। ইহসান সেই দৃশ্য দেখে একটুও পেছনে না তাকিয়ে, দরজার দিকেই হাঁটা দিল।
আজিজ শেখ পড়েলেন মাঝনদীতে। আরসালানের যা অবস্থা, বেশিদিন এসব ছাইপাঁশ গ্রহণ করলে আসলেই কিছু একটা হয়ে যাবে। ডাক্তারও সাফ বারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্নেহান্ধ তিনি এতকিছু কানে তুলেননি। তবে এবার ইহসানের কথা শুনে মনের মাঝে একটা চাপা ভয় দানা বাঁধছে। অকালে ছেলের প্রাণনাশ হোক এমনটা তিনি চান না। তাই কষ্ট হলেও এবারে বুকে পাথর চাপা দিয়ে ইহসানের হুমকিতেই তিনি দমে যাবেন বলে মনোস্থির করলেন।
বলা যায়, একপ্রকার বন্দী করেই রাখা হয়েছে আরসালানকে তার নিজের ঘরে। ইহসান কেমিকে ঘেঁষতেও দেয়নি। দোটানা ছিল, যদি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কিছু করে বসে! ফার্স্ট এইড বক্স আর কয়েকটা দরকারি জিনিস হাতে নিয়ে ইহসান লক খুলে ঘরে ঢুকতেই দেখে মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে আরসালান। ধারালো কিছু না পেয়ে বোধহয় নিব জাতীয় কিছু দিয়ে নিজের শরীরে খুঁচিয়েছে।
অনেক জায়গা থেকেই ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত ঝরছে।
এসব করে কি সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে?
এতেই কি স্বস্তি পায়? দেশে ফিরে আত্মগোপনে থাকার সময় দিনের পর দিন তাহলে এইসব করেই কেটেছে ওর? দরজায় দাঁড়িয়ে ইহসান স্থির চোখে দেখে ভাইকে। একটুখানি ভালোবাসার লোভে, তাকে অহেতুক হিংসা করেছে নিজের জীবনটাই শেষ করে দিচ্ছে চুপচাপ। বুঝতে চায় না, ভালোবাসার জন্য কেউ না কেউ ঠিকই থাকে। সময় তাকে এনে দেয়।
ইহসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হাতের জিনিসগুলো পাশে রাখে। তারপর ফোনটা বের করে ইজহানকে ডাকে। মেয়ের কাঁথা পরিষ্কার করে একটুখানি জিরিয়ে নেওয়া ইজহান প্রথমে আসতে চায় না।
কিন্তু যখন শুনে আরসালানের মাথার চুল কাটা হবে
তখনই কেমন উৎসাহী হয়ে আসে। ইহসানের সাথে মিলে আরসালানকে মেঝে থেকে তুলে বালিশে শুইয়ে দিয়ে ইজহান আরসালানের মাংসপেশি টিপেটুপে ফিসফিস করে ইহসানকে বলে, “কী বডি বানিয়েছে দেখেছিস? জিমটিমও করে না কি? এসবে আগ্রহ আছে ওর?”
“জানি না।”
“তা বটে। তুই শুধু আমার পেছনে লাগতে জানিস।”
ইহসান ওর কথায় পাত্তা দেয় না। চুপচাপ ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে বসে পড়ে। আরসালানের কাটা হাত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয় ধীরে ধীরে। তারপর ইজহানের উরুতে আরসালানের মাথাটা তুলে দিয়ে বলে, “এবার চুল কাটা হবে। ঠিক করে ধরবি। নয়তো ছিঁড়ে যাবে। আমি সুইচটা অন করছি।”
ইজহান ঠোঁট উল্টায়। খোঁচা মেরে বলে, “শুনলাম মেরে ফেলতেও গেছিলি? হঠাৎ এত্ত দরদ!
বাচ্চাদের মতো যত্নআত্তি করছিস। টনা-মনাকে এভাবে যত্ন করিস তো? দেখলাম তো, মশার কামড়ে পিঠে রক্ত জমে লাল হয়ে আছে টনার।”
ছেলেকে মশা কামড়েছে এটা জানত না ইহসান।
সকালে বের হওয়ার আগে তো সব ঠিকঠাক দেখে গেছে। কবে কীভাবে হলো বুঝতে পারল না।
কপালে ভাঁজ ফেলে বিচলিত গলায় বলে,
“আমার ঘরে মশা নেই। তাও রাতে স্প্রে করে মশারির নিচে রাখি ওদেরকে। বারান্দা আর আশপাশও পরিষ্কার করে স্প্রে করে দিয়েছিলাম। সেই দিক থেকে আসার সম্ভাবনা কম। তোর ঘরের ওদিকেই তো গাছগাছালির জংলা। নিশ্চয় ওখান থেকেই এসে আমার ছেলেটাকে কামড়েছে।”
ইজহান শেখের ঘরে মশা? এতো বড় অপবাদ দিলো ভেড়াটা? কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল, আসলেই তার ঘরের পাশের দিকটা জংলা হয়ে গেছে। অনেকদিন আগাছাও কাটা হয়নি। মশা থাকাই স্বাভাবিক। মুখটা কালো হয়ে গেল ইজহানের। তাহলে কি সত্যিই ওই মশাই কামড়েছে টনাকে? মনেই মনেই একটু দুঃখ হলো, কিন্তু মুখে সে কিছু মানবে না। তর্কে হারতে রাজি না, তাই গলা চড়িয়ে বলে, “আমার ওদিকটাও পরিষ্কার। মশা নেই ওখানে। তুই আমার চেয়ে বেশি জানিস না কি!”
ইহসান ঠান্ডা স্বরে, বাঁকা হেসে বলল, “কম কম জানি। তাও জেনে গেছি। এবার সবাইকে জানাব।”
সেই সূঁচালো হাসি দেখে ইজহান খেঁকিয়ে উঠল,
“আমার দুধের শিশুটাকে মা হারা করার রাজনীতি এখনো করছিস? ভালো হবে না তোর, দেখিস!”
ইহসান ঠোঁট চেপে হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“না হোক। যে কাজ দিয়েছি সেটা কর।
ওকে ভালোভাবে ধরে রাখ। চেতনা ফেরার আগেই কাজটা শেষ করতে হবে।”
ইজহান সিরিয়াস হয়। সতর্ক কণ্ঠে বলে, “চুল কিন্তু ওর খুব প্রিয় জিনিস। কাটার আগে ভাবিস। পরে কিন্তু খুব ঝামেলা করবে। কী কাট দিবি?”
“ঘেঁষে ছেঁটে দেব।”
“মানে?”
“নাম্বার জিরো হেয়ার কাট দিয়ে দেব।”
ইজহান চোখ কুঁচকে বলল, “এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি।”
ইহসান শান্ত গলায় বলল,
“হোক।”
অতঃপর চেতনা ফেরার আগেই দুই ভাই মিলে ট্রিমার চালিয়ে দিল ওর মাথায়। বেড়ে উঠা ওয়েভি লং হেয়ারগুলো একেবারে জিরো কাট দিলো। একটা চুলও রাখল না। একদম মুন্ডিত মস্তকের মতো করে দিলো। অযত্নে বেড়ে ওঠা দাঁড়ি-গোঁফেও ট্রিমার চালিয়ে দেওয়া হলো। যেন পুরনো মুখটা ভেঙে নতুন কোনো ছাঁচে গড়া হচ্ছে ধীরে ধীরে। তারপর ঘর্মাক্ত শরীরটা ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছে, পাতলা একটা স্যান্ডো গেঞ্জি পরিয়ে দেওয়ার পর ইহসানের মনে হলো, এখন অন্তত কিছুটা মানুষ লাগছে ওকে।
এতদিন দেখে মনে হতো, যেন কোনো বনে থাকা উন্মাদ কেউ। অবশ্য আরসালান অর্ধউন্মাদই।
পোশাকও সব দুই রঙের, সাদা-কালো। দুই রঙে সীমাবদ্ধ এক জগৎ, যেখানে অন্য রঙের প্রবেশাধিকার নেই।
ইহসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর ঘরটা গুছাতে শুরু করে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখে, ভাঙা কাচের টুকরোগুলো সাবধানে এক জায়গায় করে সরিয়ে নেয়। পর্দা নামিয়েবিছানার চাদর তুলে ফেলে। ইজহান একপাশে বসে এসব দেখে। কিন্তু কোনো কাজে হাত লাগায় না। উল্টো ভাগে পড়া দায়িত্বটা মকবুলের উপর চাপিয়ে
বালতি, মগ, নোংরা কাপড় সব এক জায়গায় করে এনে ঘরটা মুছিয়ে নেয়। সবশেষে মকবুল চুপচাপ বেরিয়ে যায়। তাকে অনুসরণ করে ইজহানও নিঃশব্দে পগার পার হয়। বাচ্চাদের কান্নাকাটির সুর কানে এসেছে তার।
তবে ইহসান ঘরটা পরিষ্কার করেও আরসালানের পাশে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। তার চোখে একধরনের অদৃশ্য ক্লান্তি। ভেতরে অস্থির এক উপলব্ধি। একবার অন্তত চেষ্টা করা দরকার এই গভীর আসক্তির গহ্বর থেকে ছোটো ভাইটাকে টেনে তোলার। একটা জীবন, কেন হেলায় নষ্ট হবে, যখন এখনো ফেরার পথ খোলা? জীবন মানেই তো উত্থান আর পতনের মিলেমিশে থাকা। কখনো আলো, কখনো অন্ধকার। অন্ধকার থেকে বেরুতে ওকে একটু সাহায্য করা যায় না? যায় তো।।
অশ্রুবন্দি পর্ব ৭২ (২)
তাই না হয় একটু চেষ্টা করাই যাক। একটা জীবন, একটা অস্তিত্ব হয়তো শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে তোলা যাবে। সৃজার বলা কথাগুলো ভেবে ইহসান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আদৌ মেয়েটার কথাগুলো ফলবে তো? কে জানে। এসির তাপমাত্রা তেইশে নামিয়ে ইহসান বেরিয়ে আসে। কে জানে, উঠে আবার নিজের বন মানুষের বদলে ভদ্রসভ্য চেহারা সুরত দেখে কী কান্ড করে বসে ছেলেটা।