অশ্রুবন্দি পর্ব ৭৮

অশ্রুবন্দি পর্ব ৭৮
ইসরাত জাহান ফারিয়া

আজিজ শেখের একমাত্র দুর্বলতা তার সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা। বাড়িতে যতক্ষণ থাকেন ততক্ষণ তাদের চোখে হারান। দাদা হিসেবে কতকিছু যে করেন তাদের জন্য! কিন্তু ছেলেরা তা পছন্দ করে না। বাচ্চাদের কাছে ঘেঁষলে, ওদেরকে আদর বা আহ্লাদ সবটাই মেকি মনে হয় তাদের। এসব বুঝতে রকেট সায়েন্স জানা লাগেনি আজিজ শেখের। বুঝেই তিনি নিজে থেকেই একটু দূরত্ব বজায় রাখেন। তাতে যদি তার ছেলেরা স্বস্তিতে থাকে, তো থাকুক।
তাই আজিজ শেখ যখন দুর্ঘটনার ব্যাপারটা জানতে পারলেন, হিংস্র বাঘের ন্যায় গর্জে উঠেন।

কার এতো বড়ো কলিজা যে তার ছেলের গাড়িতে হামলা করার সাহস করে? তাকে মারার চেষ্টা করে? আজিজ শেখ ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় উঠেপড়ে লাগলেন এসবের পেছনে কার হাত আছে তা জানার জন্য। ধরতে পারলে নিজ হাতে জ বাই করবেন তিনি। ইহসান বেরিয়ে যাওয়ার পর তিনি নিজেও ইমরানকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন পরণের লুঙিটার উপর ঘিয়ে রঙা একটা ফতুয়া চাপিয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হসপিটালের এসে আজিজ শেখের মাথা বিগড়ে গেল তার অস্থির ইজহান আর তার কলিজার টুকরা ইজহানজাদী, ফুলের মতো নাতনির অবস্থা দেখে। বেশ কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারলেন না তিনি। এই বাচ্চাটা তার ছেলের স্বস্তি। নিজে দেখেন, কতো পাগলামি তার এই নাতনিটাকে নিয়ে। অথচ তার নাতনিটার এই দশা করে দিয়েছে শত্রুরা? আজিজ শেখের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। তিনি এর বিহিত করবেন। ভয়ংকর বিহিত।

ইজহান শেখ আর ইস্মিতার ভালোবাসার একমাত্র সেতু; যে প্রাণটা এসে তাদের জীবনকে অনেকটা পরিবর্তন করে দিয়েছে, আগের থেকেও কাছাকাছি এনে দিয়েছে দু’জনকে। সেই প্রাণটাকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে তার। বিশ্বাসই করতে পারছে না তার সামান্য অসাবধানতা এতো বড়ো সর্বনাশ ডেকে আনবে। তার প্রাণভোমরাটা তারই হাত থেকে ছুটে যাবে। ইস্মিতার শরীর থেকে রক্ত ঝরবে! না না, সে যেমন ভালো
স্বামী না, তেমন ভালো বাবাও হতে পারেনি। হলে আরো সাবধান থাকতো। বুকে চেপে রাখতো ইস্মিতাকে, শরীরে মিশিয়ে নিতো তার ছোট্ট মা-টাকে। একটুও কাছ ছাড়া করতো না দু’জনের একজনকেও।

ইজহান তার বিধস্ত অবস্থা নিয়ে মেয়ের জন্য নাজেহাল করে তুলছে একেকজনকে। গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছে দু’জনের। কোনো ডাক্তারই সাহস করে না তাকে এখান থেকে সরতে বলতে। সিনিয়র ডক্টর পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন ওকে কেবিনের বাইরে বের করতে। এদিকে বাচ্চাটার ক্রিটিক্যাল অবস্থা; তাই ঝামেলা নিয়েই চিকিৎসা শুরু করতে হয়েছে। তাছাড়া এই লোকটার বাবার সাথে উপর মহলের ডানহাত। তাই আরো বলার সাহস হচ্ছে না তাদের। এদিকে মাথায় ব্যান্ডেজ, হাতে স্যালাইন নিয়েও মিজু উদগ্রীব হয়ে নার্সদের বলছে, তাকে একটু ইজহান স্যারের কাছে নিয়ে যেতে। সে এক পলক দেখেই চলে আসবে, এ সময় পাশে থাকাটা দরকার ঐ অস্থির মত্ত লোকটার। এতো কথা, অনুরোধ করার পরেও নার্সদের একজনও তার কথা শুনছে না।

বরং বিরক্ত হচ্ছে তার কান্ডে। একজন তো ধমকে একাকার করছে। বলেছে, একদিন ফুল বেড রেস্ট। পা টাকে বিশ্রাম দিতে হবে। নয়তো ফ্র‍্যাকচার ভালো হবে না। পরাভূতের ন্যায় মেঝেতে নির্নিমেষ দৃষ্টি ফেলে হতাস শ্বাস ফেলে মিজু। এক্সিডেন্টে তার পায়ে ক্ষতি হয়নি, ক্ষতিটা হয়েছে হাসপাতালের আসার পর। মাথা চক্কর দিচ্ছিল তার, ব্যালেন্স হারিয়ে দোতলার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে একদম নিচে। ফ্র‍্যাকচার না হলে কক্ষণ এই স্যালাইন-ফ্যালাইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্যারের কাছে চলে যেতো, থোরাই কেয়ার করতো এদের। মনে মনে শত সহস্র গালি দিতে লাগল সে সবাইকে।

ডাক্তারদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষ করে তপ্ত একটা শ্বাস ফেলে ইহসান যখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষটাতে পা বাড়াল, প্রথমেই তার চোখ খুঁজে নিলো মাটিতে উবু হয়ে বসে থাকা তার সহোদরকে।
একজন ডাক্তার ধমকে উঠতেই যাচ্ছিল আবারও অযাচিত কাউকে প্রবেশ করতে দেখে। কিন্তু তার মুখের কথা আটকে গেল দরজায় দাঁড়ানো পুরুষ আর মেঝেতে বসা পুরুষের চেহারার মধ্যে অসম্ভব মিলটুকু পেয়ে। বিস্ময়ে হা হয়ে গেলেন তিনি। অস্ফুটস্বরে বললেন, “এতো মিল? কপাল কুঁচকানোটাও? গড রিয়্যালি মেইকস দ্যা মোস্ট আনবিলিভেবল থিংকস!”
ইহসান তার বিড়বিড়িয়ে বলা কথা শোনেনি। ইশারায় অনুমতি চেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে নিঃশব্দে গিয়ে বেডটার ওখানে। দৃষ্টি স্থির হলো আইরাহ ইজহানজাদীর উপর। ছোট্ট একটা শরীর, বুকটা উঠানামা করছে ধীরধীরে কিন্তু জ্ঞানশূন্য।

ইহসান চোখ বুজে। যথাসম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করে নিচু স্বরে বলল, “আপনি তো আমার ভালো মেয়ে, ভালো মেয়েরা কাউকে কষ্ট দেয় না। খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে মা। পাপা কতো কষ্ট পাচ্ছে দেখুন একবার!”
চার মাসও পুরোপুরি হয়নি, খুব ছোট্ট একটা শিশু আইরাহ। আজওয়ারও ছোটো। কী পরিমাণ অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তার সহোজাত, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে ইহসানের। এখানে থাকলে আরো বেশি ভেঙ্গে পড়বে। তাই বেরিয়ে আসার সময়
ইজহানকে ডাকল সে গম্ভীর কণ্ঠে, “উঠে আয়।”
মাথার ভেতর সব ঘোট পাকিয়ে যাওয়া ইজহান হাঁটু থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে ভাইকে দেখল। ক্ষ্যাপাটে স্বরে বলল, “ওকে রেখে কোত্থাও যাব না।”

“ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তোর জন্য ওরা ফোকাস হারাচ্ছে, প্রোপার ট্রিটমেন্ট দিতে অসুবিধায় পড়ছে। চাইছিস টা কি, মেয়েকে রেখে সবাই তোকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুক? মেয়ের ভালোটা বুঝিস না তুই?”
“বুঝি বলেই থাকতে চাইছি। নয়তো কী না কী দেবে আমার বাচ্চাটাকে। কাউকে বিশ্বাস করি না আমি।”
“তুই কি ডাক্তার? ওদের চেয়ে তুই ভালো বুঝিস? সারা শরীরে রক্ত মেখে তিনি আসছেন মেয়েকে পাহারা দিতে। ইনফেকশন কিছু হয়ে গেলে না…উফ, কীভাবে যে বোঝাই…” ইহসান কপাল চেপে ধরে অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে, “এখানে সবাই ট্রাস্টেড। কেউ উল্টাপাল্টা কিছু করলে জান নিয়ে নেব না। কেউ কিছু করার আগে একবার অন্তত ভাববে। ”
একপ্রকার টেনেটুনে, ধাক্কিয়ে ওকে বাইরে নিয়ে এলো ইহসান। ডাক্তার-নার্স সবার কাছে মাফও চেয়ে নিলো তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটানোয়। ইজহান শেখ অবশ্য মাফ চাইল না। বরং ভেতরের সবাইকে হুমকি ছুঁড়ে দিলো, “এক ঘন্টার মধ্যে আমার বাচ্চাকে সুস্থ দেখতে চাই। নয়তো এই হসপিটাল…বালের হসপিটালের সব ক’টা জোকারকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেব।”

বাবার উদ্বিগ্নতা কেমন হয় তা জানা নেই ইজহানের। কিন্তু এই মুহূর্তে যে বুক পোড়া অনুভূতি তাকে ছারখার করে দিচ্ছে তাতে এক সমুদ্র পানি দিয়েও নেভানো যাবে না৷ ইজহান চোখ বুঁজল। শরীরের সব রক্ত বোধহয় গাল কেটে বেরিয়ে গেছে ইস্মিতার। যন্ত্রণায় কীভাবে কাতরাচ্ছিল, মেয়ের জন্য পাগলামো করছিল। ডাক্তার সিডেটিভের প্রভাবে না রাখলে ঐ মহিলা এতক্ষণে নিশ্চয় তাকে খু ন করে ফেলতো। নাহ ভুল, তার আগে নিজেই মরে যেতো মেয়ের কিছু হলে। অজান্তেই সে শক্ত করে ইহসানের হাত ধরে রাখল। আড়চোখে তা দেখে ইহসান ভারী শ্বাস ফেলল। টেনে নিয়ে গেল ক্যাজুয়াল্টি ডিপার্টমেন্টের দিকে। ইজহান তখনো ঘোরে, সে ভেবেছিল ইস্মিতার কাছেই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। টের পায়নি তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো।

যখন একজন ডাক্তার তার পিঠের দিকের লাল তরলে ভেজা শার্টটা তুলে ক্ষততে সল্যুশন জাতীয় কিছু লাগালেন, তখনি তার বোধ ফিরল। আর এক ঝটকায় ফেলে দিলো সার্জিক্যাল ট্রে। ওটা মেঝেতে পড়ে ঝনঝন শব্দ তোলার সঙ্গে সঙ্গে ইজহান শেখও ঝাঁঝিয়ে উঠল এমনভাবে যেন নিজেকেই ঘেন্না করছে। অবশ্য করেও বটে! সে অমানুষ। সৃষ্টিকর্তা তাকে কৃতকর্মের ফল দিচ্ছে। কৃতকর্মের ফল সে মেনে নেবে, নিচ্ছেও৷ কিন্তু যারা তার প্রাণ ভোমরাদের গায়ে আঁচড় কেটেছে; শরীরে একবিন্দু র ক্ত থাকতেও তাদেরকে সে ছাড়বে না। ইহসানই থামাল ওকে। ড্রেসিং কাপড়ের টুকরোটা তার কাটা আঙুলে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে শান্ত স্বরে বলল, এখন উত্তেজিত হবার সময় না। যা হবে পরে দেখা যাবে৷ আপাতত তাকে সুস্থ হতে হবে। নয়তো কিছুই করা তার দ্বারা সম্ভব হবে না। এককথায়, ম্যানুপুলেট করতে বাধ্য হলো ইহসান তার ভাইকে। ইজহানও তার কথায় প্রভাবিত হয়ে ভাবল, সবটা একটু সামলে আসুক। তার মা-টা ভালো হয়ে যাক, একটুখানি হাসুক তার বোকা বোকা কথা শুনে, তখন সে…

ভাবনাটা সম্পূর্ণ করার আগেই ইজহান তীব্র কাঁপন অনুভব করল, টের পেল সূঁচালো কিছু ঘাড়ের ত্বক ভেদ করে ঠান্ডা বিষের মতো এক ধরনের তরল তার শরীরের ভেতর ছড়িয়ে পড়ছে, চোখের পাতা পাথরের মতো ভারী হয়ে আসছে। ইহসানের বুকের কাছে মাথা ঠেকিয়ে, দাঁত চেপে সে বলল, “আমার বাচ্চাটার কিছু হলে কাউকে ছাড়ব না। জাস্ট মেরে ফেলব!”
ইহসান নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। এরপর ঝুঁকে এলো ওর কানের কাছে। ভরসা দেওয়া অদ্ভুত ধারালো কণ্ঠে বলল, “আমি আছি। আমি ওর বাবা না?”
“পিচ্চিগুলোকে কীভাবে কোলে নিতে হয়, সেটা এখনো আয়ত্বে আনতে পারিসনি, বাবা দাবি করিস কোন দুঃখে? তুই কারোরই বাবা না। সেই যোগ্যতাই নেই তোর৷ আজকে ভুলক্রমে একটা ইনসিডেন্ট হয়ে গেছে, তবুও ওরা শুধু আমার ভাগ।”

ইজহানের রক্তিম চোখেমুখে রাগ-জেদ মিলেমিশে কঠোরতা লেপন করে দিয়েছে, বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে চাইছে কণ্ঠস্বর। কিন্তু ঔষধের প্রভাব তার তেজকে মিইয়ে দিচ্ছে, তাকে সিঙ্গেল বেডটা থেকে উঠতে দিচ্ছে না, চোখের পাতাদুটো ভারী করে দিচ্ছে ক্রমশই। এই অবস্থাতেও একপাক্ষিক অধিকারবোধের তীব্র জেদ খেলা করছে তার চোখেমুখে। জেদি স্বরে বলতেই থাকল, “শুধু আমার…একারই।”
ইহসান মুচকি হাসলো। ব্যঙ্গাত্মক নাকি বোঝা গেল না। ধুলো পড়ে কিচকিচ করা ইজহানের চুলের ভাঁজে হাত চালিয়ে সে বলল, “যাহ! মেনে নিলাম, তোর একারই। কিন্তু আমার ভাগের যেটুকুকে তুই নিজের বলে দাবি করছিস, তোর ওই সবটুকুর ভেতর আমিও আছি… যতই তুই অস্বীকার করিস।”

খিটখিট করতে থাকা ইজহান অস্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখল, তার মতো একই মুখ, চোখে একই রাগ, একই জেদ আর একই অদ্ভুত ভালোবাসা ইহসান শেখের কঠোর মুখাবয়বে। রাগে যেনো পিত্তি জ্বলে গেল তার। অজস্র গালাগাল দিতে দিতেই ঔষধের প্রভাবে সে কাবু হতে লাগল ধীরেধীরে। ইহসান ঠিক করে বেডে শুইয়ে দিয়ে কপালে আঙুল চেপে ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। এরপর জরুরি একটা কল করল রশিদকে। আবার এসে চুপচাপ বসে রইল ইজহানের পাশে। সারাক্ষণ উদ্ভট কিছু করার তালে থাকা তার মারাত্মক অপছন্দের ভাইটাকে অতো বড়ো শরীরটা নিয়ে নির্জীব হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তার ভীষণ অস্থির লাগল। ব্লাড ব্যাগের সরু নল বেয়ে এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে রক্ত প্রবেশ করা হাতটার দিকে চোখমুখ কুঁচকে রইল অনেকটা সময়। অন্য হাতটা উল্টেপাল্টে দেখে নিজের হাত মাপজোক করে দেখল, রঙ মেলাল, চোখদুটো টেনে দেখল, মাথার চুলগুলো টেনে দেখল। এরপর আকস্মিক বাচ্চাদের মতো একটা কান্ড করল, ইজহান শেখের দু’চোখের পাতা আর কপালে তিনটে চুমু খেয়ে সটকে পড়ল।

আইরাহ ইজহানজাদী ইন্ট্রাক্র্যানিয়াল হেমারেজের শিকার। তবে দুর্ঘটনার পর তার নিউরোলজিক্যাল রেসপন্স ছিল বিধায় বেঁচে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ওর বয়স যেহেতু কম, স্নায়ু খুবই নাজুক, তাই তাকে ইনফ্যান্ট কেয়ার ইউনিটে রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু রিকভারি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হলেও আঘাত ব্রেইনের ভিজ্যুয়াল অংশে প্রভাব ফেলার কারণে ভবিষ্যতে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি অত্যধিক বেশি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিঃস্তব্ধ কক্ষ থেকে হিম হয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে বেরিয়ে আসার পরেও ইমরানের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ আর আজিজ শেখের হাঁকডাক কানে আসছিল না ইহসানের। তার মাথায় খুব পুরোনো একটা কথা ঘূর্ণির মতো চক্কর খেতে থাকল বারবার, ‘শেখ বাড়ির পুরুষের স্পর্শে নারী যেমন হয় যেমন অপবিত্র, তেমনি তাদের ছায়া মাড়ালেও হয় অভিশপ্ত!’ কে যেন বলেছিল কথাটা? মা বলেছিল। আর ইহসান শেখের মা কখনো ভুল
বলে না।

অশ্রুবন্দি পর্ব ৭৭

আট ঘন্টা পর ইজহানজাদী যখন রেসপন্স করল, চোখ খুলে তাকাল, ইহসান শেখ টের পেল তার
পুরো শরীরটা ঝিম মেরে হুট করেই শান্ত হয়ে গেছে।
শান্ত একটা নদী। তবে তার চোখদুটো থেকে শ্রাবণের ঝুম ধারার মতো অঝোরে জল গড়িয়ে তার পুরুষালি গাল ভিজিয়ে দিয়ে বারবার বোঝাতে চাইছিল সে কতোটা দুর্বল চিত্তের একজন পুরুষ। সে ইজহানজাদীর পাদু’টো নিজের চোখের পাতায় ছুঁইয়ে বিড়বিড় করে শুধু একটা কথাই বলতে পারল, ‘আমার আয়ুর ভাগীদার আপনিও, আপনিও।’

অশ্রুবন্দি পর্ব ৭৮ (২)