অশ্রুবন্দি পর্ব ৭৮ (২)
ইসরাত জাহান ফারিয়া
রশিদ দীর্ঘদিন শয্যা ভোগের পর সুস্থ হয়েছে। সুস্থ হয়ে ইহসানের রেস্তোরাঁ, টেক বিজনেসটাও দেখছে, সামলাচ্ছে। কাজে যোগ দিয়েছে মাসও পেরুয়নি৷ এরমধ্যেই আবার নতুন বিপদ হাজির। ইজহান শেখের গাড়িতে হা মলা হয়েছে, তাকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। এসবের পেছনে
কে কলকাঠি নাড়ছে সেটা জানার জন্য মরিয়া ইহসান স্যারকে সাহায্য করছে সে। রশিদকে ইনজান যে অবস্থা করেছিল তারপর থেকে ইহসান চায়নি তাকে কোনোকিছুতে জড়াতে। বেশ কাঠিন্যতা নিয়ে রশিদকে সে এসব থেকে দূরে থাকতে বলেছিল। কিন্তু রশিদ থাকেনি, অবাধ্য হয়েছে।
তার স্যারের সঙ্গ দিচ্ছে। নিজে থেকে লোক লাগিয়েছে মূল হোতা কারীকে ধরতে। কিন্তু চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো স্ট্রং ক্লু পাওয়া যায়নি সিসিটিভি ফুটেজ ছাড়া। পঞ্চমদিন স্বস্তিদায়ক খবর এলো যে, মালবাহি ভ্যানের চালকের সহকারী বুলেট শফিক ধরা পড়েছে।
ত্রিশের কোঠা ছাড়ানো বুলেট শফিকের চেহারা বিদঘুটে। কেমন যেন সহিংস! হাড়ের সঙ্গে চামড়া লেগে শরীর, মুখ সবই মলিন, ঢ্যামনার মতো দেখায়। চোখ দুটো রক্তাভ, নেশার প্রভাবে শরীর সবসময় অস্থির। গায়ে ময়লা জামা, পায়ে বেল্টের ছেঁড়া জুতা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রশিদের লোকেরা তাকে নদীর ওপাড়ের বস্তি থেকে ধরে এনেছে। গতকাল থেকে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। জেরা করা হচ্ছে, ভ্যানের চালক কোথায়, হামলার মূল হোতাকারী কে, কিন্তু সে কিছুই বলছে না বানোয়াট কথা ছাড়া। একেকবার একেক কথায় বিভ্রান্ত করে পরক্ষণেই বিশ্রি হেসে বলে, ‘সে কিছু জানে না।’
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রাত আড়াইটা। পরিত্যক্ত কেমিক্যাল ফ্যাক্টরীর গোডাউনে, খালি পেটে, পানি ছাড়া বুলেট শফিককে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। শরীর থেকে অঝোরে র ক্ত ঝরছে। কিন্তু তারপরেও তার মুখ বন্ধ। ইহসান শেখ জানতে মরিয়া, হামলার পেছনে ষড়যন্ত্রকারী কে? ইজহানের ব্যবসায়িক শত্রুর কাজ নাকি অন্য কেউ! তবে তার প্রকাশভঙ্গি এবার শান্ত, ধৈর্যশীল কিন্তু প্রতিশোধপরায়ণ। নিজ হাতে কারো প্রাণ নিয়ে নিজেকে কলুষিত করতে ইচ্ছুক নয়। বরং দোষীদের বেঁচে থাকাকে সে জাহান্নামে পরিণত করতে ইচ্ছুক। এবং আজ পর্যন্ত এটাই করে এসেছে সে। ইতোপূর্বের কিছু ঘটনাই তার প্রমাণ। সৃজাকে যারা অপমান, অপদস্ত করেছিল, শ্লীলতাহানি করেছিল তাদের কাউকে প্রাণে মারেনি সে।
তবে এমন অবস্থা করেছে যে তারা আর কখনো নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে না। যে হাত ওর ওড়না ছিনিয়ে নিয়েছিল সেই হাত ব্যবহার করে নিজের খাবারটুকু পর্যন্ত খেতে পারবে না। যে চোখ দিয়ে সৃজাকে লোলুপ দৃষ্টিতে দেখেছিল আর কখনো সেই চোখ পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে না। সর্বোপরি, তারা বেঁচে থাকবে মৃতের ন্যায়। একেবারে না মরে তিল তিল করে মরবে, এটাতেই তার স্বস্তি। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। শফিককে সে প্রাণে মারল না। বীভৎস ভাবে পাজরের হাড়গোড় ভেঙে দিলো। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা শফিকের আর্তনাদ কানে এলেও ইজহানজাদীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠায় শফিকের আকুতি ইহসানকে বিন্দু পরিমাণও ছুঁতে পারল না।
শফিক নোংরা মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছে।
মনে হচ্ছে তার অন্তিম সময় এসে গেছে। এ মুহূর্তে তার প্রাণ বেরিয়ে যাবে। এতো নিষ্ঠুর, নির্মমভাবে কেউ কারো পাজরের হাড় ভেঙে দিতে পারে জানা ছিল না শফিকের। মরণাপন্ন অবস্থায় এসেও শফিকের চোখজোড়া ইহসানের উপর নিবদ্ধ। তার চোখেমুখ গ্রাস করেছে একরাশ ভয়, আতঙ্ক। কপাল বেয়ে পড়া ঘামের ফোঁটা বুঝিয়ে দিচ্ছে তার যন্ত্রণার প্রতিফলন। শফিক নড়তে পারছে না। তার ডান হাতটি ইহসান শেখের জুতার নিচে। পিষে দেওয়ার চেষ্টা করছে যেন! কাতরাতে কাতরাতে, ভয়ার্ত চোখে বুলেট শফিক ইহসান শেখকে দেখল! অতি সুদর্শন লোকটার চোখদুটো রক্তবর্ণ। কপালে বিছিয়ে আছে কিছু এলোমেলো চুল, ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে ফর্সা চামড়ায়। অথচ ঠোঁটে তার অদ্ভুত তৃপ্তি। প্রাণ জুড়াচ্ছে শফিকের একেকটি আর্তনাদে। দৃশ্যটা গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোন। শফিক গোঙাতে গোঙাতে দুর্বল, হীন
কণ্ঠে বলার চেষ্টা করল, “আমি কিছু জানি না, আমি এসবে জড়িত না…”
ইহসান শেখের পা এবার তাকে পিষতে ব্যস্ত হলো না।
বরংচ অসংখ্য আঘাতে জর্জরিত করল তাকে। শেষবারে একটা চকচকে, ধারালো ছুরি নিয়ে সে যখন শফিকের পেটের উপর উঠে বসে গলায় ধরল, শফিক আর পারল
না। মৃত্যু ভয়ে আর্তচিৎকার করে উঠল৷ গোডাউনের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ল তার কণ্ঠস্বর ভেদ করে
আসা একেকটি ধ্বনি। আতঙ্ক মিশ্রিত কণ্ঠে বলতে লাগল, “সবার আগে ইনজান শেখরে খালাস করা কথা আছিল, তার বাপেরে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার লাগি। ক…কিন্তু
কিন্তু সেদিন আমাগো কাছে খবর আইলো যাতে তার বড়ো পোলাটারেও শেষ কইরা দেই, তাইলে ট্যাকার অঙ্ক বাড়বে। আমাগো ট্যাকার দরকার ভীষণ, তাই চাইতেছিলাম কাজটা তাড়াতাড়ি সারতে। নজরে নজরে রাখতেছিলাম…. সেদিন সুযোগ আইসা হাতে ধরা দিলো। শুরু থেইকাই তক্কে তক্কে রাখছিলাম ওগো গাড়িডা। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকবার কারণে ঠিকঠাক সুবিধা করবার পারতেছিলাম না। ফেরবার পথে আমিনবাজারে বেশ ভালা সুযোগ পায়া, এক চান্সেই…আমার ওস্তাদ চালাইতেছিল গাড়িডা!”
হড়বড় করে সেদিন রাতের ঘটনার বিবরণ দিতে থাকে শফিক। ইহসানের চোখ জ্বলে উঠে। তার হাতের নীরব ক্রূরতা শফিকের গলা চেপে ধরে। কণ্ঠস্বর অত্যাধিক শীতল করে জিজ্ঞেস করে, “কার নির্দেশে কাজ করছিস?”
বুলেট শফিকের চোখ উলটে যায়। তড়পাতে তড়পাতে, অস্থির কণ্ঠে না চাইতেও সে নামটা উচ্চারণ করে,
“কে হেইডা জানি না। এরবেশি আমি কিছু সত্যিই জানি না। যা জানার, করার আমার ওস্তাদ করছে। আমি শুধু তারে সাহায্য করছি নেশাপানির ট্যাকা আর মায়ের ওষুধের ট্যাকা জোগাড়ের লাগি। আমারে ছাইড়া দেন। আমার মায়ে বেমারি… ”
মায়ের ব্যাপারটা যে পুরোটাই বানোয়াট এটা ইহসান শেখের অজানা নেই। কারণ শফিকের মা-বাবা কেউই বেঁচে নেই। আদৌ ছিলই না। কে তার মা, কে তার বাবা এসব শফিক নিজেও জানে না। অথচ এই মুমূর্ষু অবস্থায়ও ছেলেটা মায়ের নাম নিয়ে বাঁচতে চাইছে? ইহসান সচকিত চোখে তাকাল ওর রক্তাক্ত মুখপানে। এমনিতে যা জানার ছিল সে জেনে নিয়েছে এবং তার ধারণা গুলোও ঠিকই ছিল। শফিককে আর তার প্রয়োজন নেই। আবার একে প্রাণে মেরেও লাভ নেই। যা দশা হয়েছে তাতে আর কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবে না। পঙ্গু হয়েই বাঁচবে সারাজীবন। বেঁচে থেকে তিল তিল করে প্রতিদিন মরবে শরীরী যন্ত্রণায়। তাতে অবশ্য ইজহানজাদীর যন্ত্রণার বিন্দুমাত্র উপশম হবে না! ইহসান শফিককে ছেড়ে দিলো। কয়েকজন ধরাধরি করে শফিককে তুলে বেরিয়ে গেল।
ইহসান দীর্ঘসময় এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে রইল। কারো সাথে কথা বলল না। রশিদের কথারও জবাব দিলো না। শেষ রাতে বৃষ্টি হলো। অক্টোবরের সেই ভোরে বৃষ্টিতে ভিজে ইহসান শেখ বাড়ি ফিরল। চুপচুপে ভেজা গা নিয়ে রাত ভোর করে বাড়ি ফেরা মানুষটাকে আলুথালু বেশে দেখে সৃজা চমকে উঠল ভেতরে ভেতরে। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এগিয়ে দিয়ে কেমন মলিন, নিষ্প্রাণের মতো খাটের কিনারে বসে দেখল তাকে। দেখতে দেখতেই আকস্মিক তার চোখজোড়া স্থির হলো ইহসানের পরণের পোশাকটার পিঠের উপর। এক খাবলা
র ক্তের দাগ। তাজা, শুকিয়ে লেগে যাওয়ার উপক্রম। সৃজা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করতেই যাবে সেই মুহূর্তে ইহসান একটানে তার শরীর থেকে ভেজা পোশাকটা খুলে উদোম হতেই সৃজা বুঝল, এটা তার স্বামী ইহসান শেখের গা কেটে বেরুনো র ক্ত নয়। আর এটা বুঝতেই সে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে দেখল ইহসানকে! এতোটা র ক্ত! কাউকে কি মেরে এসেছে?
ইহসান সৃজার পেলব মুখখানি নির্নিমেষ চোখে
দেখল, তবে চাহনির প্রগাঢ়তা বুঝল না। ভাবল, রাতে না ফেরায়, মেয়েটা তার উপর রেগে আছে। বুঝিয়ে বললেই হবে। সৃজা রেহমান খুব বোঝে তাকে, অভিমান করলেও কখনো ঝামেলা করে না। কোনো কথা না বলে ওর ঘাড়ে হাত রেখে মুখটা এগিয়ে এনে কপালে একটা চুমু বসিয়ে সে পা বাড়াল ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য। তার শীতল, ঠান্ডা শরীরের স্পর্শে সৃজা কেঁপে উঠল, তার পরণের জামার খানিক অংশ ভিজে গেল। কিন্তু সেদিকে মনোযোগ দিলো না সৃজা। ওভাবে বসে থেকেই আজওয়ার পিঠের তলে চাপা পড়া ফোনটা তুলে ম্যাসেজ অপশনে ঢুকল। ছয়ঘন্টা আগে আননোন একটা নাম্বার থেকে আসা ছোট্ট ম্যাসেজটা সে আবার পড়ল, ‘এনজয় ইয়োর লিটল প্যারাডাইজ অফ লাইস—সুন ইনাফ, হেল উইল গ্রীট ইউ।’
ম্যাসেজটা কে, কেন পাঠিয়েছে? এই হুমকির মানেই বা কী? আর এটা ইহসানকেই বা কেন সে জানাল না, সৃজা জানে না। ভোর সকালের নীরব সময়টাতে তাত শুধু মনে হলো, সে একটা বিভ্রান্তির গভীর অরণ্যে পথ হারিয়েছে, কষ্ট করে পথ খুঁজে বের করতে পারলেও শেষটাতে চিরতরে কিছু একটা হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু হারানোর মতো কিছু কি আছে ওর?
ইহসানের জানা হলো না, ঘন্টাখানিক আগে বুলেট শফিক নামে যে সহিংসতাকারীর পাজর ভেঙে চিরজীবনের মতো তাকে শয্যাশায়ী হওয়ার বন্দোবস্ত করে এসেছে, তাকে তার বাবা আজিজ শেখ ইতোমধ্যেই নিজের অধীনে নিয়ে গেছে! বুলেট শফিকের মুখ থেকে আজিজ শেখ অবশ্য কিছুই শুনলেন না। সব তার জানা হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। তার ইহসান এই কুলাঙ্গার শফিককে ছেড়ে দিয়েছে ঠিক, কিন্তু তিনি তো ছেলের মতো এতো কোমল হৃদয়ের নন। কঠিন হৃদয়ের একজন পিতা। যে হৃদয়ে তার সন্তান ও তাদের মা ছাড়া আর কেউ, কখনো জায়গা পায়নি!
ইজহান শেখের শরীরের যেখানে যেখানে আঘাত লেগেছে তিনি ঠিক ঠিক সেই জায়গায় প্রহার করলেন বুলেট শফিককে, ইজহানজাদীকে ভবিষ্যতে যে দুর্বলতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দিয়েছেন ডক্টররা; তার জন্য তিনি বুলেট শফিকের চোখদুটো তুলে নিলেন। এরপর অবশ্য খুব বেশি নিষ্ঠুর হলেন না তিনি, গলাটা মাথা থেকে আলাদা করে বসে বসে কাটা একটা দেহের ছটফটানি দেখলেন।
ঝিম ধরা অক্টোবরের দুপুর। রোদের চাদরে মোড়া শেখ বাড়ি ঘুমঘুম অলসতায় ভাসে। দূরে ট্রেনের হর্ণ, গাছা গাছালির উদ্দামতা, বাতাসের গান সবকিছু যেন থেমে আছ। শুধু সময় হেঁটে যাচ্ছে কৃষ্ণাভ আকাশ ধরে। বুকের কাছে মেয়েকে ধরে রাখা ইস্মিতার ভঙ্গুর দৃষ্টিজোড়া দেখে ইজহান শেখের বুকে ব্যথা হয়, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে। কিন্তু কিছুই বলতে পারে না সে। মেয়েকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে আসার পর থেকে ইস্মিতা আজ দু’দিন যাবৎ তার সঙ্গে কথা বলে না। কেন বলে না, তা ধারণা করেছে ইজহান। মেয়ের
এ অবস্থার জন্য সে দায়ী। ইস্মিতা এমনটাই ভাবে হয়তো। ইজহানের মনে হয় সে অপয়া। অপয়া পিতারা সন্তানকে ছুঁলে সেই সন্তানের কপাল পুড়ে, কক্ষণো ভালো হয় না।
এটা গতদিন এক ভিক্ষুকের থেকে জেনে এসেছে সে। তাই মেয়েকে একটুখানি ধরার, ছোঁয়ার সাহস করে না। যদি ইস্মিতা তাকে ধরতে না দেয়, অপমান করে এই ভেবে। তবে সারাক্ষণ কাছে কাছেই থাকে, দু’চোখ মেলে মেয়েকে দেখে। হাত-পা নেড়ে ছটফট করা মা’টার দিকে তাকালেই সে শান্তি অনুভব করে। এই শান্তি সে বিনষ্ট করতে চায় না। এমনকি সে তার অতি আদরের টনা-মনাকেও নিজের কাছে নিচ্ছে না। ইহসান ব্যাপারটা খেয়াল করে তাকে ধমক দিয়ে বলেছে ভিক্ষুকের এসব বানোয়াট কথা, কিন্তু ইজহান তাকে বিশ্বাস করেনি। ব্যাপারটা জানার পর ইস্মি হতবাক। দুপুরের পর সে ঘুমন্ত ইজহানকে হুট করে ডেকে তুলে বলল, “আপনার সমস্যাটা কী?”
থতমত খেল ইজহান, “সমস্যা মানে?”
“আজকাল নাকি পীর, ফকিরদের কথা শুনে চলছেন? তাদের কথা শুনেই নাকি মেয়ের কাছে ঘেঁষেন না, ছোঁন না, কথা বলেন না, কোলে নেন না? এসব কোন ধরণের ব্যবহার? মেয়েটা আপনার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করে দেখেই বোঝেন না? নাকি ভান করেন? মেয়ের প্রতি দরদ শেষ?”
ইজহান কী বলবে বুঝতে পারে না। তার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। ইস্মিতার উচ্চ কণ্ঠে তার বুকের ভেতর কাঁপছে। হাত-পা ঠান্ডা লাগছে। সে অদ্ভুত, বিষণ্ণ চোখে ইস্মির দিকে তাকিয়ে কোনোমতে বলল, “তুমিই তো চাও না আমি মেয়ের কাছে ঘেঁষি।”
ইস্মি অবাক, বিরক্ত, “এ কথা আমি বলেছি?”
“ব্যবহারে বুঝিয়েছ।”
ইস্মি তাচ্ছিল্যভরে হাসলো, “আমার ব্যবহারে বুঝিয়েছি?”
“তুমিই না সেদিন বললে আমি যদি ভালো করে ওকে ধরে রাখতাম তাহলে মেয়েটার এ অবস্থা হতো না। বলোনি?”
“এখন দুঃখ করে আমি একটা কথার কথাও বলতে পারব না?”
“পারবে অবশ্যই৷ আমি না করেছি নাকি? কিন্তু মেয়েকে ধরতে বলবে না।”
ইস্মি হঠাৎ সাপের মতো ফুঁসে উঠে বলল,
“আপনাকে একটা থাপ্পড় দেই, ইজহান শেখ?”
অশ্রুবন্দি পর্ব ৭৮
ওর স্পর্ধা দেখে ইজহান হতবাক, বিস্ময় নিয়ে বলল, “থাপ্পড় দেবে আমাকে?”
ইস্মি জবাব দিলো না। ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ইজহানের বা গালে। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ইজহান নিজের গালে হাত বোলাল, এটা থাপ্পড়? তাকে থাপ্পড় খেতে হলো ইস্মিতার হাতে? কিন্তু ব্যথা অনুভব হলো না কেন? ইজহান লক্ষ্য করল, তার পায়ের কাছে পা ঘষছে তার মেয়ে। মুখ দিয়ে অদ্ভুত গো গো শব্দ করছে। ইজহানের বুক ভার হয়ে এলো, দ্রুত হাতে মেয়েকে কোলে নিয়ে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বলল, “আপনার পা ছুঁয়ে মাফ চাইতে হবে?”
ছোট্ট ব্যান্ডেজ লাগানো হাতটা তার চোখমুখ আঁকিবুঁকি করে কীভাবে যেন বুঝিয়ে দিলো, একদম ক্ষমা চাইতে হবে না।