অশ্রুবন্দি পর্ব ৮১
ইসরাত জাহান ফারিয়া
ইজহানের গাড়িতে হামলার পেছনে সৈয়দ পরিবারই জড়িত ছিল। ন’বছর আগে ইনজান শেখের দ্বারা ছোটো ছেলেকে হারানোর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন আজিজ শেখের ছেলেদের দিয়ে। কিন্তু পরিকল্পনা সফল হয়নি। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে আগের চেয়েও বেশি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠা সৈয়দ মোজতবার মনোজ ও তার ছেলে এমপি সৈয়দ মুনতাসিম মনোজ দুজনেই ক্ষেপে গেছিলেন। যে কোনো সময় তারা আক্রমণ করতে পারত—কিন্তু ইহসান সামলে নিয়েছিল সবটা।
সৈয়দ মোজতবার মনোজের মতো হিংস্র কুকুরদের ভাঙতে ইহসানের অস্ত্র হয়েছিল তাদের নিজস্ব জঘন্য অতীত। বাপ-ছেলেকে সে চুপ করিয়ে রেখেছিল, তাদের গোপন পাপের ভয়ংকর প্রমান দিয়ে সজ্জিত একটি ফাইল দিয়ে। সেই ফাইলে তাদের বাপ-ছেলের অতীত ও বর্তমানের অন্ধকার ইতিহাস গচ্ছিত। জনগণের সামনে ভদ্রলোক সাজার আড়ালে তারা নারী ও শিশু পাচারের সাথে জড়িত। সীমান্ত পেরিয়ে কিশোরী পাঠানোর রেকর্ড, গোপনে চালানো ফোন কল, এমনকি হাতেনাতে ধরা পড়া দালালদের জবানবন্দি, জমি দখলের এফআইআর, বিদেশে শতকোটি টাকা পাচারের রিসিট, দুটো খু নের অডিও রেকর্ড। এবং এগুলোর একটিও যে ফেইক না, সম্পূর্ণ সত্যি! সেই প্রমাণও ইহসানের হাতে এসে গেছিল। যেদিন প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল তারা, মুনতাসিম মনোজ ক্ষেপে ওর উপর আক্রমণ করতে গেলে রেকর্ডিংটা প্লে করে ইহসান নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলেছিল, “তোর হাতে অনেক ক্ষমতা আছে, তাই না? কিন্তু এই ছোট্ট একটা রেকর্ডই যদি মিডিয়ায় যায়… মানুষ তখন কী দেখবে জানিস? জনপ্রতিনিধি না, এমপি না, তুই একজন খু নি, অপরাধী, মানবপাচারকারী মুনতাসিম।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাপ-ছেলের গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। কপালে তাদের ঘাম জমেছিল। অন্য যে কেউ হলে হয়তো তর্ক করত, হুমকি দিত, কিন্তু ইহসানের চোখের দৃষ্টি তাদেরকে স্থির করে দিয়েছিল। ক্রোধে উন্মত্ত বাপ-ছেলে অনেকটা বাধ্য হয়ে ইহসানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন, প্রতিশোধ প্রতিশোধ নামক খেলার এখানেই সমাপ্তি। চুক্তি সেরে টেবিলের উপর রাখা ফাইলটা দেখিয়ে ইহসান বলেছিল, “এমপি সাহেব, এই ফাইলটা তোর জীবনের একমাত্র বর্ম, আবার সবচেয়ে বড়ো বিষও। তুই বা তোর বাবা চুক্তি ভাঙলে প্রথমেই এই অডিও যাবে মিডিয়ার হাতে, তারপর বিদেশি দূতাবাসে। তোদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হবে, ভিসা ক্যান্সেল হবে। নামের পাশে বসবে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’ শব্দটা। আর যদি আমি চুক্তি ভাঙি, যা খুশি করিস।
আমার জান নিয়ে খেলিস। প্রস্তুত আছি তোর ভাইয়ের র ক্তের বিনিময়ে র ক্ত দিতে। শুধু ওই একটা অপরাধেই, আমি নতি স্বীকার করতে পারি। কিন্তু একটা প্রাণের বিনিময়ে তোরা আমার পুরো পরিবার নিঃশেষ করতে চাইবি, এটা আমি ইহসান শেখ হতে দিতে পারি না। তাই ভুলবি না, আমি থাকি আর না থাকি, তোরা যদি চুক্তি লঙ্ঘন করিস, আমি না থাকলেও, তোরা রক্ষা পাবি না।”
তারা চুক্তি মেনেছিল, তাই ঝামেলা করতে চায়নি। কারণ ঝামেলা করলেই সব সত্যি ফাঁস হয়ে যেতো। রিদ্বান হারিয়ে যাওয়ার পর তাদের সন্দেহ হয়েছিল ঠিকই, তবে এতো গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি যে ওকে আসলেই শেখ বাড়ির কেউ কিছু করতে পারে। কিন্তু এখন যখন জানবে, আজিজ শেখ তাদের ছেলেটাকে মে রে ফেলেছে তখন কী এমনি এমনি ছেড়ে দেবে? ইহসানের শ্বাস গাঢ় হয়। সে এতো
বোকা কেন? কেন ভুলে যায়, তার বাবা আজিজ শেখ? হঠাৎ করে জীবনের প্রতি ইহসানের সব আগ্রহ যেন মরে যায়। সে বিড়বিড় করে প্রার্থনা করে, এমনিভাবে ম রে যাক সেও! আবার মনে পড়ে, তার তো সৃজা আছে! সে মরে গেলে এই মেয়ের কী হবে? তার আযরান, তার আজওয়া, ইজহানজাদী! তাদের বড়ো হওয়া কে দেখবে? তাদের মুখে ‘পাপা’ ডাক না শুনে সে কীভাবে মরণ কামনা করে? সে এতো সেল্ফ ডিসট্রাকটিভ কেন? তারচেয়ে বাবা নামক এই জা নোয়ার লোকটাকে মে রে ফেলতে পারলে ভালো হতো। সব চুকেবুকে যেতো। কিন্তু এটাও তো সে পারবে না। আযরান, আজওয়ার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাবার স্বীকৃতি তো চায় সে! অর্থব ইহসান নিশ্চল চোখে মেঝের দিকে চেয়ে থাকে। শুনেও না ইজহান আর আজিজ শেখের কথোপকথন!
যখন থেকে ইজহান শেখে বোধগম্য হয়েছে বাবা হওয়ার মাহাত্ম্য, গুরুত্ব; তখন থেকেই অপরাধবোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। তার করা সমস্ত অন্যায় কেউ মিথ্যে প্রমাণ করে দিলেও এটা তো সত্যি যে, সে তার প্রথম সন্তানের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী? মাঝরাতে হুট করে ঘুম ভেঙে গেলে সেই সন্তানের ছিন্নাংশ মনে করে কতো রাত সে নির্ঘুম কাটায়, হাহাকার করে কাটায় এগুলো তো সে কাউকে দেখাতে পারে না। প্রতিনিয়ত বুকের ভেতর যন্ত্রণা দেয়া এই অকাট্য সত্যির কারণে সে তার গচ্ছিত ভালোবাসার সবটুকুই তার তিন বাচ্চদের উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করে। ইস্মিতা আর্শির পরে অহংকারী, আত্মকেন্দ্রিক ইজহান শেখের দুর্বলতাও যেন ঠিক এখানেই৷ অথচ বাবা হয়ে, বাবা হয়ে তাকে কীভাবে এতো বড়ো একটা খোঁচা দিতে পারল আজিজ শেখ? ইজহান যেন প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেল। প্রতিবাদস্বরূপ একটা কথাও বলতে পারল না। আজিজ শেখের কলারে ধরে রাখা হাতটা খসে পড়ল তার। চোখজোড়া জ্বলে উঠল। সেই জ্বলে উঠা চোখের দিকে তাকিয়ে আজিজ শেখের হুঁশ ফিরল। একী বলে ফেললেন তিনি? তার কোমল মনের পাগল ছেলেটার এতো বড়ো দুঃখের জায়গাটাতে আঘাত দিয়ে বসলেন? কিছুক্ষণের জন্য থম মেরে এরপর তিনি গলা ঝাড়লেন। বসা থেকে উঠে ছেলের কাছে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রাখতে রাখতে অপ্রস্তুত গলায় বললেন, “রাগের মাথায়, রাগের মাথায় বলছি আব্বাজান, মনে ধইরো না।”
ইজহান এক ঝাড়া দিয়ে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার চোখে চোখ রেখে তাকাল। পৃথিবীর সবটুকু ঘৃণা তার ঐ চোখের ভাষায়। আজিজ শেখ একটু ভড়কে গেলেন। বুঝলেন তিনি খুব বেঁফাস কথা বলে ফেলেছেন। ছেলেকে মানানোর উদ্দেশ্যে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, “তুমি দায়ী না, একটুও দায়ী না। আমার পোলা দায়ী হইতেই পারে না। আমি আমার ভুল কথা ফিরাই নিলাম। আর কক্ষণো বলব না।”
স্বার্থপর একটা লোক! বাবা হয় কী করে? পৃথিবীতে তো এতো এতো বাবা আছে, তারা সবাই কি ইজহান শেখের বাবার মতো? যে নিজেরটা ছাড়া আরকিছু বোঝে না? এমন স্বার্থপর বাবা তাদেরই কেন জুটল? কী অপরাধ তাদের? ভস্ম করা দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকাল ইজহান। গমগমে গলায় তাচ্ছিল্য সরুপ বলল, “বলাতেই বা কী আসে যায়? কিচ্ছু না, জাস্ট কিচ্ছু না। সত্যি এটাই যে, আজিজ শেখের কুলাঙ্গার ছেলে ইজহান শেখ তার সন্তানকে মেরে ফেলেছে। তার বংশধর মেরে ফেলেছে। তার জায়গা হবে জাহান্নামে।”
আজিজ শেখ এবার ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে রাগী দৃষ্টি ছুঁড়লেন, “এসব কথা বলবা না। আমার পছন্দ না।”
ইহসান এতক্ষণ চুপ করে দেখছিল, শুনছিল। লিডি সোফায় হেলান দিয়ে, উদাসীন ভঙ্গিতে। ঘনঘন শ্বাস পড়ছে তার। রিদ্বান! ঐটুকু একটা নিষ্পাপ, বাচ্চা ছেলে। শত্রুতা ওর সঙ্গে ছিল কী? না তো। তাহলে ওকে কেন মেরে ফেলল লোকটা? কীভাবে পারল? ইহসান অনেকটা বিভ্রান্ত ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করল আজিজ শেখকে, “আপনার হাত সত্যিই কাঁপেনি বাচ্চাটাকে মারার সময়?”
আজিজ শেখ ঘাড় ফিরিয়ে ওকে দেখলেন। ধীর কণ্ঠে বললেন, “কাউরে মারার সময়েই আমার হাত কাঁপে না।”
“কিন্তু নিজের ছেলেদের মরতে দেখলে তো আপনার হাত কাঁপবে, বুকও, তাই না? নাকি তাও কাঁপবে না?”
আজিজ শেখের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, “আবার আজেবাজে বকতেছ তুমি?”
ইহসান সরল-স্বাভাবিক, ভনিতা বিহীন কণ্ঠে বলল, “না, বাজে বকছি না। আমার জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি যখন আপনার কোনো ছেলের প্রাণহীন, নিথর
দেহ দেখবেন তখনো কি আপনার বুক আসলেই কাঁপবে না? পুরোপুরি নরপশু হয়ে গেছে ভেতরটা?”
আজিজ শেখের কপালে ভাঁজ পড়ল। কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল। হাতদুটো মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে আকস্মিক উঠে এসে ইহসানের গালে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। ঘরময় সেই থাপ্পড়ের শব্দ ভেসে বেড়াতে লাগল। অবিশ্বাস্য চোখে ইজহান তার পিতার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই ভাইয়ের দিকে তাকাল। তন্মধ্যে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িযুক্ত ফর্সা গালটায় রক্ত জমে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল। অথচ ইহসানের একটুও ব্যথা লাগল না অথচ তার চোখ চিকচিক করে উঠল। নমনীয়তা না ক্রোধের কেউই বুঝল না। দু-পা ফাঁক করে একটু ঝুঁকে বসল ইহসান। এক হাতের ভাঁজে আরেক হাতের আঙুলের ভাঁজে ঢুকিয়ে আচমকা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই ভেজা চোখে এক পৃথিবী রোষানল নিয়ে বলল, “আমি না ঠিক জানি না, কতটুকু নীচে নামলে একজন মানুষ নরপশু হয়। তবে আপনাকে দেখে একটুআকটু ধারণা করতে পারছি আজ। কপাল! কী দুর্ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি! এতো দুর্ভাগ্য নিয়ে কেন এলাম? কাপুরুষের মতো বাঁচতে? মাথা নিচু করে বাঁচতে? আরে বাল! আমি তো আমার ছেলেকে কোনোদিন শিষ্টাচার, নৈতিকতার শিক্ষাই দিতে পারব না, লোকে হাসবে। আমি কেন হাসির খোরাক হব লোকের?
এতো লম্বা, দীর্ঘ আয়ুর একটা জীবন পেলাম! অথচ কোনোদিন কারো সামনে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে একবারও বলতে পারলাম না, আমার বাবা আমার চোখে পৃথিবীর সেরা বাবাদের একজন।
অথচ হাজারো বার আমাকে এটা শুনতে হয়েছে, মেনে নিতে হয়েছে আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য, নিকৃষ্ট একজন বাবা। যুবক বয়সে যে নিজের কামনা চরিতার্থে একটা সতেরো বছরের কিশোরীকে ধ র্ষ ণ করে, বুড়ো বয়সে একটা চার বছরের বাচ্চার প্রাণও নিয়ে নেয়। উফ! আমার একটা জীবন এভাবে গেল? মুখ লুকিয়ে? চোরের মতো? অপরাধীর মতো? কেন, অপরাধ কে করে যে সাজা পাব আমি?”
চিৎকার বেরিয়ে আসে ওর কণ্ঠে। আজিজ শেখের বৃহৎ অফিস কক্ষের লাউঞ্জটা গমগম করতে থাকে। ইজহান টের পায় তার কানদুটো জ্বলছে, বুক পুড়ছে। ভেড়াটার চোখের কোণে ক্রোধে চলে আসা অশ্রুধারাগুলো এবার তার চোখ দিয়েও বর্ষিয় হতে চাইছে। অথচ এমনটা হলে লোকে হাসবে, বলবে তারা কাপুরুষ! কিন্তু ইজহান তো জানে, সে, তার ভেড়া তারা কেউই কাপুরুষ না। হতেও চায় না। বিশেষ করে বাবা নামক লোকটার সামনে তো একদমই না। এ পর্যায়ে উঠে এসে ইহসানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে হনহন করে হাঁটা ধরে দরজার দিকে।
যেন এই নরক পুরী থেকে বেরুতে চায় সে, তার ইহসানকে নিয়ে। নয়তো দমবন্ধ হয়ে দু’জনেই মারা যাবে! ইহসান ওকে বাঁধা দিলো না, দিতে পারলও না। হুঁশেই নেয় সে। ছোটো থেকে আজ পর্যন্ত তার মনে জমা সমস্ত ক্ষোভ, ঘৃণা সে উগড়ে দিতে চাইছে।
অথচ সবটা যদি সে উগড়ে দেয়…দিন, মাস, বছর ফুরিয়ে যাবে! তার অভিযোগ, ক্ষোভ শেষ হবে না। ডিজিটাল ডোরটা পেরিয়ে যাওয়ার পথে ইহসানের ক্রোধিত কণ্ঠটা শেষবারের মতো ভেসে এলো আজিজ শেখের বৃহৎ কক্ষটাতে, “উহ, আচ্ছা! আপনি তো একটা পাপী। আপনার করা সব পাপের সাজা আমাদের দেবেন বলেই আমাদের এতো আগলে আগলে রাখেন, তাই না? গিনিপিগ? গিনিপিগ
আমরা আব্বাজান? এই এই, ভাই দেখ! এই সাইকো লোকটা গিনিপিগ বানিয়ে রেখেছে আমাদের…”
পুরুষালি ক্রোধান্বিত কণ্ঠটা মিলিয়ে যায় দরজাটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যেতেই। বিশাল অফিস ঘরটা হঠাৎ গুমোট হয়ে উঠে তাতে। দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দটা অস্বাভাবিক জোরে কানে বাজতে লাগল আজিজ শেখের। তিনি চেয়ারটায় বসে পড়লেন। তার হাত কাঁপছে সামান্য, সেই কাঁপা হাতেই পেপার ওয়েটটা ঘুরাতে থাকেন তিনি। চোখে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা নিয়ে।বিড়বিড় করে বলেন, “এই ছেলেগুলা কেবল মুখের জোর পায়। আসল খেলাটা ওরা
বোঝে না…”
বলে তিনি প্রশান্তির হাসি হাসেন। এই ছেলের মুখে ‘আব্বা’ ডাক শোনার জন্য কতো অধীর আগ্রহে দিন কাটান, কতদিনের স্বপ্ন আজিজ শেখের! আজ শুনে তার মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেল। নিজেকে স্বার্থক মনে হলো। আবার কিঞ্চিৎ দুঃখও লাগল, ডাকটাতে ঘৃণা মেশানো ছিল বলে! বুকের ভেতর মেঘ পাকানো একদলা কষ্ট জমিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাসের সাথে ছুঁড়ে। নিজের ডেস্কের ড্রয়ার থেকে মোটা এক ফাইল বের করলেন তিনি। সেই ফাইলের ভেতর নাম, ছবি আর লাল কালিতে টানা দাগে—মৃতদের তালিকা করা।
সেই তালিকার ভেতর থেকে তিনি একটা ছবি বের করেন। হাসিখুশি ছোট্ট এক ছেলের ছবি৷ ইটালিক হরফে নাম লিখা: Sayed Samahan Ridwan.
অশ্রুবন্দি পর্ব ৮০
ক’দিন আগেই যাকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে শেষ বিদায় দিয়েছেন তিনি। শেষ মুহূর্তে ছেলেটা তাকে ‘দাদু’ সম্বোধন করে চির জীবনের জন্য তার মনে জায়গা করে নিয়েছে। আজিজ শেখ ছবিটার উপরে জমা একটুখানি ধুলো মুছে নিয়ে বলেন, “ছোট্ট সোনা, অনেক আদর! তোমার জন্যই তো আমার বড়ো বাচ্চাটা আমায় বাবা ডাকলো!”
তিনি হেসে উঠেন। মলিন, বিকৃত হাসি। আশ্চর্য!
বাবা হিসেবে এ পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা বাবাটাই তিনি, অথচ ছেলেগুলো তা স্বীকার করতেই চায় না। উচ্ছন্নে গেছে সবগুলো।