অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৩ (৩)

অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৩ (৩)
ইসরাত জাহান ফারিয়া

ইহসান জ্বলন্ত চোখে চাইল। কী বলে এই মেয়ে? তার সঙ্গে জীবন কাটাতে পারবে না? বাচ্চারাও পারবে না? তাহলে সেটা অভিশপ্ত হবে? কতো বড়ো স্বার্থপর এই মেয়ে! মায়ের রক্তের দাম দিতে সব কেড়ে নিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত করার পায়তারা করছে! অকস্মাৎ বাজ পড়ার মতো বিদ্যুৎ চমকে উঠল তার চোখে। হিসহিসে গলায়, একাগ্রচিত্তে তাকায় ইহসান, “কী বললি আবার বল তো?”
সৃজার মুখে কাঠিন্যতা ঝিলিক খেয়ে গেল। হাতের মুঠোয় থাকা ওড়নাটা শক্ত করে ধরে দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “আমি চাই না মানুষের প্রাণ নেওয়ায় যারা তৎপর, র ক্তে যাদের হাত ভেজানো, সেই হাত আমার সন্তানদের মাথার উপর থাকুক। ওদের উপর কুপ্রভাব পড়ুক। ওরা তোমাদের মতো নষ্ট চিত্তের হোক। আমি চাই আমার সন্তানেরা মানুষ হোক, অমানুষ না হোক।”

ইহসানের বুকটা ধুকধুক করছে, হৃৎপিণ্ড যেন ছিঁড়ে বেরোতে চায়। চোখে অবিশ্বাস, মুখে জ্বলন্ত ক্রোধের ছাপ। বাচ্চারা ওর সংস্পর্শে থাকলে তারা অমানুষ হয়ে যাবে? ওদের উপর কুপ্রভাব পড়বে? সৃজা কি তাই বোঝাতে চেয়েছে? কিন্তু এতোদিন তো পড়েনি। বাচ্চাদেরকে সে নিজের বাপের কাছেই ঘেঁষতে দেয়নি। ইনজান শেখের আশেপাশে রাখেনি। নিজে যতটুকু পেরেছে সামলেছে, কই তখন তো সৃজার মনে হয়নি সে তার বাচ্চাদের অমানুষ বানাচ্ছে! আজ কিছু অপ্রিয় সত্যি সামনে এসে পড়ায় তার প্রতি মেয়েটার সব বিশ্বাস হারিয়ে গেল? ভেতরটা ছারখার হতে থাকে ইহসানের। সে অস্থির হয়ে সৃজার গালে হাত রাখল। কম্পমান কণ্ঠে বলে, “আমি তোদেরকে ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতেই পারি না। থাকতে পারব না। অমানুষ বল, কাপুরুষ বল, আর যা-ই বল… আমার ভালোবাসা একটুও মিথ্যা নয়। তোদেরকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তাই আমাকে
এসব বলিস না, বললে… খুব মারব তোকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইহসান ওর হাত দুটো মুঠো করে ধরে, কপাল ঠেকিয়ে রাখল। বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে, গরম নিঃশ্বাসের তাপ ছুঁয়ে দিল সৃজাকে। ও কেঁপে উঠল। ব্যাকুলচিত্তে চেষ্টা করল একনাগাড়ে কথা বলা ইহসানকে ঠেলে সরাতে চাইল। পারল না। হাল ছেড়ে দিয়ে সৃজা আবারও কাঁদল, খুব কাঁদল। কাঁদতে কাঁদতেই ব্যগ্র গলায় বলল, “আমি একটা সংসার চেয়েছিলাম তোমার কাছে। সুস্থ-স্বাভাবিক সংসার। কপটতা, মিথ্যাচারিতা বিহীন। কিন্তু আমি বুঝতেই পারিনি তোমাদের আগাগোড়া সবটাই মিথ্যের জালে বন্দী। আচ্ছা, তুমি পারতে? আমার সঙ্গে যা হয়েছে, নিজের সঙ্গে সেটা হলে মানতে পারতে?” একটু থেমে বুক ভরে শ্বাস ফেলে বলল, “শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি নিজের ধৈর্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষা দিয়ে হলেও এ বাড়িতে থেকে যেতাম, তোমার সঙ্গে সংসার করার চিন্তা করতাম।

কিন্তু পারছি না, সত্যিই পারছি না। সারাক্ষণ তোমাদের চোখের সামনে দেখছি। যতবার দেখছি ততবার আম্মু-আব্বুকে মনে পড়ছে। তখন ইচ্ছে করছে, সবকিছু শেষ করে দিই। তোমাদের কঠিন শাস্তি দিই। কিন্তু আমি তো সেসব পারছি না, শিক্ষাই পাইনি এমন। পারব না বোধহয় কখনো। আর যারা আমার মতো, যারা কিচ্ছু পারে না, কিচ্ছু করার ক্ষমতা যাদের নেই, তাদের কেবল সহ্য করে যেতে হয়। কিন্তু আমি সেটাও পারছি না। যা ঘটেছে, যা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছ; সেসব সহ্য করার মতোনই নয়। তাই জোর করে আমাকে ধরে রাখার চেষ্টা করলে, আমাকে হয়তো রাখতে পারবে কিন্তু আমার মনে এখনো তোমার জন্য যতটুকু সম্মান অবশিষ্ট আছে সেটুকুও চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তুমি তো আমার তিন কবুল করে স্বীকার করে নেওয়া স্বামী, একটু হলেও চিনি। অসম্মান নিয়ে থাকতে পারবে? আমার চোখে ঘৃণা দেখে বাঁচতে পারবে, বলো?”

পারবে না। ইহসান শেখ পারবে না সৃজার চোখে ঘৃণা দেখে বাঁচতে। ভালোবাসার চোখে কেই-বা ঘৃণা দেখতে ভালোবাসে? সে ঝট করে মুখ চেপে ধরে ওর। কঠোর গলায় বলে, “চুপ। কথা বলিস না। আমার তোর কোনো কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না। আমি তোর একটা কথাও শুনতে চাই না। কোনোভাবেই আমি তোকে ছাড়ছি না।”
“কী করবে তুমি?”
“কী করব না তা-ই বল! তোকে নিজের সঙ্গে রাখতে যা যা করতে হয়, যে যে পাপ করিনি, প্রয়োজন হলে তা-ই তা-ই করব। যদি দরকার হয়, এই পৃথিবীর সমস্ত নিয়ম, সমস্ত নীতি ভেঙে হলেও তোকে আমার কাছে রেখে দেব। কিন্তু আমি চাই না তুই আমাকে ততোটা খারাপ হতে বাধ্য করিস, যেনো আমি তোর চোখে ঘৃণা দেখি!”
সৃজা জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে। ইহসানের কথা ও ধারাল দৃষ্টির গভীরতায় আজ যেন ও আজিজ শেখের একটা ছায়া দেখতে পেল। ওর দৃষ্টিতে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য! মাথাটা খানিক নামিয়ে এনে সূক্ষ্ম কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, “তোমাদের এই ভোগ-বিলাস, এই দাপট…

সবই অন্যদের রক্তের দামে কেনা। মা কিন্তু তোমরাও হারিয়েছ। এরজন্য যে দায়ী, সে তোমাদের নিজের বাবা। আজ পর্যন্ত যাকে তুমি ক্ষমা করতে পারোনি। তাহলে ভাবলে কী করে আমার ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব? নাকি ব্যাপারটা এমন যে, মা হারানোর যন্ত্রণা হয়তো কখনো তোমাদের কাউকে সেভাবে ছুঁয়েই দেখেনি? সবটাই লোক দেখানো!” অস্থির হয় না সৃজা। নিরাভরণ কণ্ঠে বলতে লাগে, “তোমরা বাপ-ভাই মিলে ফ্যামিলি ম্যান সাজছ! কত সুন্দর করে জীবন কাটাচ্ছ, ব্যবসা করছ, হাসছ-খেলছ, ঘুরছ-ফিরছ! অথচ তোমাদের হাতে লেগে আছে দুষ্কর্মের রক্ত। অপরাধের বোঝা। তোমাদের বিকৃত খায়েশ মেটাতে কত কত ঘর ভেঙে ছাই হয়ে গেছে, কত প্রাণ থেমে গেছে চিরকালের জন্য। কারও বাবা নেই, কারও সন্তান নেই শুধু তোমাদের মতো দুষ্কৃতির লালসার জন্য। জানো তো, হারানোর হাহাকার, যন্ত্রণা খুব ভয়ংকর হয়! দুঃখে মানুষের রক্ত জমে যায়, নিঃশ্বাস আটকে যায়৷ এই যন্ত্রণা তোমরা হয়তো কোনোদিন বোঝোনি, বুঝবেও না!”

“এইযে, এতো বড়ো বড়ো কথা বলছিস, একবারও ভেবে দেখছিস না আমি কোন পরিস্থিতিতে, কী করেছিলাম?”
“যে পরিস্থিতিতেই থাকো না কেন, মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের রক্তে হাত ভেজানোটাকে জাস্টিফাই করতে পারলাম না৷ সরি, দেশে প্রশাসন আছে, আইন-আদালত আছে।”
“আমার বা–লের আইন। এই আইনের উপর এতোই যখন ভরসা, তখন তুই জানতেও কেন পারলি না অনিতা মিস কোনো দুর্ঘটনায় মারা যাননি? বল, কেন পারিসনি? এতো বছর লেগে কেন তোর সত্যটা জানতে? পাগলেও বুঝতে পারবে, এতো বছর পর এসবকিছু ইচ্ছেকৃত তোর সামনে আনা হয়েছে। তোর আর আমার দূরত্ব সৃষ্টি করার জন্য। আমাকে শেষ করার জন্য।”

“কেউ তোমাকে কেন শেষ করতে চাইবে? ভাইয়ের মতো তেমন কোনো পাপ তুমিও করেছ নাকি? মে রে ফেলেছ কাউকে?”
“আমি কাউকে মারিনি। কারোর প্রাণ আমার হাতে যায়নি। আমি শুধু কয়েকজনকে শাস্তিই দিয়েছি, যেটা তাদের প্রাপ্য ছিল।”
সৃজা টের পেল ওর শরীরটা টলছে ভীষণ। পাদু’টো ঝিমঝিম করছে। আর কিছুক্ষণ ইহসান সামনে বসে থাকলে ভারসাম্য হারাবে নিজের। মেয়েটা দুর্বল শরীরটা নিয়ে গুটিশুটি মেরে বসল। অবজ্ঞাসূচক কণ্ঠে ওকে বলল, “এতো মানুষের অভিশাপে যে অভিশপ্ত তোমাদের জীবন; সেসব কি জানো তোমরা? না, জানো না। তবে আজ না জানলেও কাল জানবে। কাল না জানলে পরশু। একে একে সবই জানবে, বিচক্ষণ হলে হয়তো বুঝতেও পারবে যে, সব পাপের হিসাব একদিন না একদিন ঠিকই মিলে যায়। আর সব পাপের হিসাব মিলে গেলে কী হয় জানো তো? ধ্বংস, ধ্বংস আর ধ্বংস!”

ইহসান তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করছিল ওকে। অনাহারে থাকা ফ্যাকাশে মুখ, ফেটে যাওয়া সুন্দর দুটো ঠোঁট নেড়ে নেড়ে কঠিন কঠিন সব কথা বলছে। একটুও বাঁধছে না মেয়েটার। অথচ ইহসানের পাপ লঘু। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল লঘু পাপে তাকে গুরুদণ্ডে দণ্ডিত করতে চাওয়া সৃজার দিকে। সে তো ভালোবেসে মেয়েটাকে পাওয়ার লোভ
করেছে, বিয়ে করেছে। জঘন্য অতীতটা শুধু লুকিয়েছে, এটা তার দোষ। হ্যাঁ, সে স্বীকার করছে। মাথা পেতে নিচ্ছে। কিন্তু তার ভালোবাসা, সেটা তো মিথ্যে নয়। একেবারে স্বচ্ছ, নিখুঁত। ইহসান চুলগুলো খামচে ধরে বসে রইল। শব্দ খুঁজে পেল না। শুধু তার ভারী নিঃশ্বাস ঘরের নীরবতা ভেঙে খানখান করে দিতে লাগল। আকস্মিক সৃজা উঠে ওকে দু’হাতে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো। ইহসান প্রতিরোধ করতে চেয়েও পারল না। সারারাত দরজার বাইরে বসে কাটিয়ে দিলো। শেষরাতের
দিকে ইজহান মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে পায়চারি করতে এসে দেখল, ইহসান দরজার বাইরে চুপচাপ বসে আছে। চোখেমুখের হাল বেহাল। দেখেই মনে হলো, কিছু খাওয়া হয়নি। বউটা বোধহয় ঘাড় ধাক্কা দিয়েছে। ইজহানের একটু অস্বস্তি হলো, সে কী করবে? পাশে বসবে? নাকি তুলে নিয়ে ভাত খাওয়াবে? নিজের হাতে তো খাবে না ভেড়াটা, সে কি লোকমা তুলে খাইয়ে দেবে? এসব নানা ভাবনায় চিন্তিত সে ইতস্তত করতে করতে ডাকল ইহসানকে, “সারারাত বসে ছিলি এখানে?”

একের পর এক নির্ঘুম রাত কাটছে। যার ফলে চোখদুটো টকটকে লালবর্ণ ধারণ করেছে। ইহসান মুখ তুলে তাকাতেই ইজহান তিরিক্ষি মেজাজে বলল, “চোখদুটো দিয়ে তো রক্ত ঝরছে! একটু পর তো কিছুই দেখবি না। দেখি প্রেশারটা ফল করল কি-না!”
ইজহান দু’পায়ে ভর দিয়ে বসে ওর পালস দেখল, চোখ টেনে টেনে দেখল। এরপর কপাল কুঁচকে চোয়ালে হাত রেখে মুখটা এদিকওদিক ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বলল, “কষ্ট কি খুব বেশি হচ্ছে? চল খাবি।”
“আমি কিছু খাব না।”
“সেসব তো আমি শুনছি না, উঠ তুই।”
“জোরজবরদস্তি করে খাওয়াতে পারবি ভেবেছিস?”
“তা পারব না। সমস্যা কী? মিসেস খায়নি? অনিতা মিসের মেয়ে তো, তেজ এতটুকু না থাকলে চলে?”

ইহসানের উত্তেজিত, ব্যাকুল কণ্ঠ, “ও কেন আমাকে বুঝতে চাইছে না বল তো, আমি তো কাউকে প্রাণে মারিনি, বল! মেরেছি? বলে কি-না আযরান-আজওয়া অমানুষ হবে আমার কাছে থাকলে! ও আমাকে আজিজ শেখের সাথে তুলনা করে, জানের সাথে তুলনা করে…. বল, আমি কি এতটাই খারাপ? এতটাই পশু?”
ওর কথাগুলো বুকের ভেতর ধাক্কা দেয় ইজহানকে। তার কথা কাকে বলবে? ইস্মিতা তার বাপ-ভাইয়ের কুকীর্তি জানার পর থেকে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আগের চেয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছে।বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। আজিজ শেখকে, ইনজানকে ভয় পাচ্ছে। এমনকি তার থেকেও দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে, কিন্তু ইজহান হতে দিচ্ছে না তা। হতে দেবেও না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে ইহসানকে বলল, “তুই পশু না।”
“কিন্তু ও এসব কিছু বুঝতে চায় না। আমি বোঝাতে গেলেও শুনছে না। শক্ত শক্ত কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছে। আমিও রেগে গিয়ে উল্টাপাল্টা বকছি। সৃজা…আমার সৃজা, বাচ্চাদের নিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে বলছে, আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য!”

ইজহান ক্ষেপে গেল তৎক্ষণাৎ, “বললেই হলো? ছেড়ে যাবে? বাচ্চাদের নিয়ে যাবে? মগের মুল্লুক না। ও তোর বউ হতে পারে, তোর বাচ্চার মা হতে পারে কিন্তু সেই বাচ্চারা আমার। কারো ক্ষমতা নেই ওদের নিয়ে যাওয়ার৷ আমার থেকে দূরে সরানোর। ওদের উপর আমার অধিকার আছে, আর সেটা তোর চেয়ে বেশি আমার… ”
ইহসান চুপ করে ওর কথা শোনে। এইযে, তার বাচ্চাদের বড়ো বাবা! এতো ব্যাকুল ওদের জন্য, সৃজার চোখে কি পড়েনি সেসব? বোঝেনি, ইজহান শেখ পাগল তার টনা-মনার জন্য? কীভাবে বলল মেয়েটা, তাদের কাছে থাকলে ওরা অমানুষ হবে? তারা দু’ভাই কস্মিনকালেও আজিজ শেখের মতো নষ্ট মানসিকতা ধারণ করেনি। বুঝল না মেয়েটা, হয়তো ভালোইবাসেনি তাকে। উদাসীনতা মুড়িয়ে নেয় ওকে, বিষণ্ণ কণ্ঠে ইজহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমার নিয়তিটা কেন এমন? এত ভালোবাসার পরে আবার এত কষ্ট? কেন দেয় ওরা আমাকে? সৃজার কাছে আমি খুব বেশি অসহায়! ও একটুখানি বিশ্বাস করলেও পারে বল, আমার সমস্ত ক্লান্তির সমাপ্তি টেনে নিতাম, বুক ব্যথা সেরে যেতো। আমি যে এই ব্যথার কথা ওকে বলব
সেই সুযোগ ও নেই…”
এলোমেলো কথাগুলো শুনে ইজহানের খুব রাগ হয় সৃজার প্রতি। সে থাবা বসাতে যায় দু’বার। ইহসান আটকে ফেলে ওকে। বলে, “ও ঘুমায়নি। কাঁদছে ভেতরে। এখন বিরক্ত করিস না।”
বিরক্ত হয়ে মুখ বাঁকায় ইজহান, “দরদ উথলে পড়ছে!”

“পড়বে না? ভালোবাসি তো ওকে।”
“তোকে তো বাসে না।”
“বাসে, ভালোবাসে। কিন্তু ওর মা-বাবার থেকে বেশি নয় বোধহয়!”
হেসে ফেলল ইহসান। পিত্তি জ্বলে উঠল ইজহানের। রেগে তাই ওর মুখে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয়। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে ওর হাত চেপে ধরে ইহসান। অবশ্য পাল্টা আঘাত করে না। চুপচাপ বসে থাকে। ইজহানও আরকিছু বলে না। সেও নিশ্চুপতা মেনে বসে থাকে। ভোরের দিকে আজিজ শেখ দাঁত ব্রাশ করেন ছাদের এদিকওদিক হেঁটে হেঁটে। কিন্তু আজ ছাদে উঠার উদ্দেশ্যে দোতলায় উঠে আসতেই তার চোখে পড়ল দুই ছেলেকে। দরজার সামনে বসে বসে কী করছে দু’জন, জানতে কৌতূহল হয় তার। এগিয়ে এসে চমকে উঠেন অজান্তেই ইহসানের অবস্থা দেখে। গলা খাকারি দিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠেন তিনি, “আব্বাজান, কী হইছে তোমার? জ্বর আসছে? না মাথাব্যথা? চুল টাইনা দিমু? কোথায় কষ্ট হইতেছে?”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৩ (২)

গম্ভীরমুখে তার দিকে তাকায় ইহসান, শীতল কণ্ঠে বলে, “গলায় ছু রি চালিয়ে দিন, সব ব্যথা একেবারে সেরে যাবে।”
আজিজ শেখ ক্ষিপ্ত হয়ে ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে গটগট পায়ে হেঁটে চলে যান ছাদের সিঁড়ির দিকে। ইজহান পেছন থেকে ক্ষিপ্ত গলায় বলতে থাকে, “কবে শিক্ষা হবে আপনার?”
“কখনো না।”

অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৪