অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৬
ইসরাত জাহান ফারিয়া
ঝুমঝুম বৃষ্টি, শীতল বাতাস, অন্ধকার ঘর। জ্বর নিয়ে ঘুমিয়ে ছিল সৃজা। বিছানার একপাশে তার নাজুক দেহটা পড়ে আছে। কী এক অদ্ভুত অস্বস্তিতে সারাদিন পর একটু একটু হুঁশ ফিরছে তার। চোখ ঠেলে আসা ঘুমের রাজত্ব আঁকড়ে ধরে তাকে ডুবাতে চাইছে অন্ধকার গহব্বরে। কিন্তু দমবন্ধ করে দেওয়া অনুভূতিতে আড়ষ্ট হয়ে নড়চড় করতে পারছে না সৃজা। গায়ের উপর ভীষণ ভারী কিছু একটা পড়ে আছে বলে বোধ হচ্ছে। নাকে ঠেকছে পরিচিত এক ঘ্রাণ। ঔষধের প্রভাবে থাকা মস্তিষ্কটা ঠিক ধরতে পারছে না তার সঙ্গে হচ্ছেটা কী! বহুকষ্টে চোখ মেলে যখন তাকানোর চেষ্টা করল, রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের একফালি আলোয় গায়ের উপর থাকা মানুষটাকে দেখে ওর বুক ধ্বক করে উঠল। এই লোক এখানে কেন? কীভাবে এলো? ভ্রু কুঁচকে ফেলল ও।
পরক্ষণে অবশ্য নিজের মনকে বিদ্রুপ করল, অসুখের ঘোরে পড়ে গেছে সে। ইহসানের থাকার কথা নয় এখানে। ওর অনুমতি ছাড়া এলিজ আসতে দেবে না ওর কাছে। কথা দিয়েছে ওকে। এসব তার অলীক কল্পনা। ইহসানকে নিয়ে বেশি বেশি ভাবার ফল এটা। লোকটাকে সে ত্যাগ করে এসেছে। তেমন গুরুতর কোনো দোষ না থাকা স্বত্তেও তার মন দেখছে, সে আজিজ শেখের মতো বিকারগস্ত একটা লোকের সন্তান। যার পাল্লায় পড়ে সৃজা জীবনের সবথেকে দামী মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেলেছে, তার ছোটোবেলাটা নষ্ট হয়ে গেছে। ভাবনার সময়টা হয়তো আরো বিস্তৃত হতো সৃজার, কিন্তু অবাঞ্চনীয় কণ্ঠটা কানে বাজতেই বুকের আলোড়ন বেড়ে গেল ওর। সচকিত চোখে চাইতেই ইহসান গলা ঝেড়ে বলল, “খুব চোখে হারান, না? ভালোবাসেনও বোধহয় আপনার স্বামীকে! দেখুন, তার স্পর্শ পেতেই কেমন জ্ঞানশক্তি, বোধশক্তি ফিরে পেলেন। ইট’স আ ম্যাজিক্যাল বন্ডিং, তাই না?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বোকার মতো এদিকওদিক তাকিয়ে দেয়ালঘড়ি দেখার অনেকক্ষণ পর বোধগম্য হলো সৃজার, এখন বাজে রাত আটটা। তার মানে শেষরাত পেরিয়ে, আজ সারাটা দিন সে ঘুমিয়েছিল! ফুপি, এলিজা তাকে একবারও ডাকেনি? তার বাচ্চারা একবারও মায়ের কাছে আসেনি? এতোটাই অসুস্থ হয়ে গেছিল সৃজা? ওর জ্বর দেখে এলিজ নিশ্চয় ইহসানকে আসতে দিয়েছে ওর কাছে! হতভম্ব সৃজা চেঁচিয়ে কিছু বলতে চাইল। ইহসান সেই সুযোগ না দিয়ে ওর ঠোঁটে আঙুল রেখে থামিয়ে দিয়ে বলল, “থার্মোমিটার বলছে এখনো জ্বর কমেনি আপনার। চেঁচামেচি করে হাঙ্গামা না করলেই নয়? খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না এবার? ভুল, অন্যায় যা করেছি তার তুলনায় শাস্তিটা এবার খুব বেশি হয়ে যাছে না? এতকিছু ডিজার্ভ করি না আমি। সীমার বাইরে গিয়ে সবসময় কঠিন হতে নেই।”
হাত ঝাড়া দিয়ে ওর হাতটা সরিয়ে দিলো সৃজা, “সীমার ভেতরে থেকে যতটুকু করতে সাধ্য ততটুকুই করেছি। আমার তো মাথার উপর বাবার ছায়া নেই, টাকা নেই, ক্ষমতা নেই। কোনোভাবেই পারব না নিজেকে প্রটেক্ট করতে, না অন্যকে। নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের জন্যও যে ন্যায্য শাস্তি চাইব সেইটুকু ক্ষমতাও আমার নেই। পালিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না বলেই চলে এলাম।
খুশি এবার? যা জানার ছিল, বলে দিয়েছি। এটাই কারণ৷ তোমাকে ছেড়ে আসার।”
ইহসান বিছানায় মিশিয়ে চেপে ধরল ওর দু’হাত। এরপর বহুদিন ধরে না দেখে প্রিয় মুখটা দেখল অনেকটা সময় নিয়ে। মলিন, ক্লান্ত, রুগ্ন! পাপড়ি ভেজা, চোখের নিচে কালসিটে দাগ। তাকে দেখছে। চকচকে মুখশ্রীটা এই ক’দিনের ব্যবধানে বড্ড অপরিচিত হয়ে গেছে ওর কাছে। বুক চিড়ে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসটা আড়াল করে সে রুক্ষ হাতে মেয়েটার চুলের ভাঁজে আঙুল চালাল। যত্নভরা হাতের ছোঁয়ায় পুরোনো স্মৃতিসমূহ একের পর এক মানসপটে ভেসে উঠল সৃজার। ও ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাল। তারপরেও একটু শব্দ হয়ে গেল। ইহসান ওর এই ব্যর্থ প্রচেষ্টা দেখে গম্ভীর গলায় বলল, “কান্না আটকে রাখার চেয়ে কেঁদে ফেলা ভালো। নয়তো জমে জমে সমুদ্র হয়ে যায়। একফোঁটা জল ছুঁয়ে দেখার সাধ্যি আমার, সমুদ্র পাড়ি দেব কী করে? ভেবেছিলাম সব কষ্ট আমাকে দিয়ে নিজেকে নিয়ে ভালোই আছিস, কিন্তু তোর তো আমার থেকেও খারাপ অবস্থা! এত অভিমান কার উপর? আমার, না নিজের উপর?”
“কারো উপর না। আমার কারো উপর অভিমান নেই।”
ডার্ক সার্কেলের দাগগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে দেখতে ওর গলদেশে নেমে এলো ইহসান। আকস্মিক সেখানটায় মুখ গুঁজে শীতল কণ্ঠে বলল, “কী অবস্থা করেছিস নিজের? পাগল তুই? একটা থাপ্পড় দিয়ে কান ফাটিয়ে ফেলব! আমার থাপড়া-থাপড়ি নিয়ে তোর এক্সপেরিয়েন্স কিন্তু খুব একটা ভালো না। আজ বিষের বোতল সাথে করে নিয়ে এসেছি! তোকে একটু খাইয়ে নিজেও খেয়ে মরে যাব। এরপর সব ভুল বোঝাবুঝি, পাপ-প্রায়শ্চিত্তের নাটকের অবসান…”
প্রশ্নোক্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে সৃজা, “তোমার অপমানবোধ নেই? বারবার তাড়িয়ে দেওয়ার পরেও কেন আসো?”
ইহসান জোর করে ওকে নিজের দিকে ফেরাল। ওর চোখে নিজের চোখ রেখে বলল, “তোর সঙ্গে আমার তাড়িয়ে দেওয়ার সম্পর্ক না। আত্মার সম্পর্ক। ঠুনকো না, শক্ত খুব। তাই তুই শত কিংবা হাজারো বার তাড়িয়ে দিলেও আমি তোকে গুণব না। ঠিক ঠিক এসে হাজির হব তোর নিকটে। মরে গেলে অবশ্য এভাবে আর আসব না। তখন তো তোর মাঝেই বাস করব। আর তুই সৃজা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করবি এই আমিটা, তোর সঙ্গে অন্যায় করা এই ইহসান শেখটা তোকে কতো ভালোবাসে!’’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ওর পেলব দেহের উপর থেকে সরে গেল ইহসান। ঘর থেকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। বাইরে তখন ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামছে। ঠান্ডা বাতাস গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। অতি রাশভারি গলাটা ভেসে এলো বদ্ধ কক্ষে, “এই শেষবার, আর বোঝাব না তোকে। আর কোনো দায় নিয়ে নত হতে রাজি না আমি। বড্ড ক্লান্ত আমি!”
ইহসানের কণ্ঠে কিছু ছিল। অজান্তেই গা’টা শিউরে উঠল সৃজার। খুব অস্বস্তি আর বুক ধড়ফড় করতে লাগল ওর। নিঃশ্বাসে আগুনের তাপ। ও উঠে বসল এবার। মাথাটা কেমন চক্কর দিচ্ছে! ধাতস্থ হতে মিনিটখানেক লাগল ওর। এরপর বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। হাওয়ায় মিশে বৃষ্টির ছাঁট এসে পড়ছে মেঝেতে। কিছুটা পড়ছে গায়েও। রজনীগন্ধার ঘ্রাণে ভুরভুর করছে আশপাশটা। সৃজা ইহসানকে ক্লান্ত স্বরে ডাকল, “ভেতরে এসো, বৃষ্টি লাগছে গায়ে।”
ইহসান ফিরে তাকাল ওর ডাক শুনে। বৃষ্টিতে ততক্ষণে অবশ্য আধভেজা। সৃজা চমকে উঠল ওর অবস্থা দেখে! পরণের বাদামি শার্টটাতে লাল রঙের কিছু লেগে আছে। বৃষ্টির পানি লেগে ধুয়েমুছে মেঝে গড়িয়ে যাচ্ছে সেই লাল রং। বুঝতে সময় লাগে না সৃজার, এটা রক্ত! ও বাকরুদ্ধ বনে যায়। হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে গিয়ে শার্টটা হাতড়াতে হাতড়াতে বলে, “কোথায় লেগেছে তোমার? আশ্চর্য! এতক্ষণ চুপ করে ছিলে এত রক্ত নিয়ে? একবার বলা যেতো না? এক্সিডেন্ট করেছে? রিকশা থেকে পড়েছ? কীভাবে কেটেছে…”
ততক্ষণে ঘরে এসে খাটের কিনারায় বসেছে ইহসান। শার্টের বোতামগুলো খোলার চেষ্টায় উদ্ভ্রান্ত সৃজাকে থামিয়ে দিলো সে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “কাটেনি, কেটেছি।”
আঁৎকে উঠল সৃজা, “কী কেটেছ? আশ্চর্য!”
মুখ বিকৃত করে ঘৃণাভরে বলল ইহসান, “কী নয়, কাকে বল! আজিজ শেখকে কেটেছি। তবে আফসোসের বিষয় এটাই যে, তোর গলা চেপে ধরার মতো যে দুঃসাহস দেখিয়েছে তার বিনিময়ে আমি
তার গলা কাটতে পারিনি। কোপটা জায়গামতো পড়েনি। বেঁচে আছে কি-না কে জানে! অবশ্য কই মাছের প্রাণ অমানুষটার!”
বিরক্তিতে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করল ইহসান। যেন জন্মদাতার প্রাণ থাকলেও থাকতে পারে এটা নিশ্চিত না হওয়ায় খুব ভুল হয়ে গেছে তার। সৃজা বিস্মিত ও আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর দিকে। কত সহজভাবে বলছে ওকে! লোকটা সত্যি সত্যিই তার বাবাকে মেরে এসেছে? শুধু ওর গলা চেপে ধরেছিল বলে? এলিজ ওকে জানিয়ে দিয়েছে সেদিনের ঘটনাটা? সৃজা কী বলবে বা করবে বুঝে উঠছে না। বাজেভাবে বুক কাঁপছে ওর। ইহসান টের পেয়ে নিজের বুকে চেপে ধরল, “ভয় নেই তোর। আমি আছি তো৷ কেউ আমার স্ত্রীকে ভয় দেখাবে, হুমকি দেবে আর আমি বসে বসে আঙুল চুষব? না না। এমনটা করতে পারবে না ইহসান শেখ।”
সৃজা ওর অদ্ভুত ভাবাবেগে পূর্ণ মুখটায় কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে করতে বলল, “তোমার বাবা মরে গেছে?”
“থু! কী বলিস বাবা-টাবা? ওটা বাবা কীভাবে হয়?
লোকটা খুনী। তোর চোখে যেমন, আমার চোখেও। জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে পারলে শান্তি লাগতো বুঝলি?”
“চুপ করো। তোমাকে কেউ খু নী হতে বলেনি।”
“সাধে কেউ খু নী হয় না। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে যাদের, তারাই কোনো উপায় না পেয়ে খু ন করে। তুই আবার বাচ্চাদের বলিস না ওদের বাবা কাউকে খু ন করতে গেছিল। মুখ দেখাতে পারব না আমি। এ পৃথিবীতে ভালো মানুষের মূল্য নেই। আঘাতের বিনিময়ে পাল্টা আঘাত না করতে পারলে খারাপ লোকেরা কাউকে বাঁচতে দেয় না। তাই ক্ষেত্রবিশেষে খারাপ হয়ে যাওয়াটাই ভালো। অন্তত টিকে তো থাকা যায়! যায় না, বল?”
ইহসান উল্টাপাল্টা বকতেই থাকে। সৃজাকে বলে, বুকের ভেতর ধুকপুক করছে যে একঘেয়ে শব্দটা সেটা সারিয়ে দিতে। ওর অসহ্য লাগে। সৃজা ওর মুখে হাতচাপা দিয়ে থামাল ওকে, “থামো তুমি।”
“আচ্ছাহ থামলাম, নীতি কথা মানায় না আমার মুখে।”
সৃজা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ওকে। কেন দেখছে জানা নেই ওর। তবে লোকটাকে প্রাণভরে দেখতে ইচ্ছে করছে ওর। ইহসানের চোখে ঘোর লেগে আসছে। গলা শুকিয়ে আসছে। তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টায় সে সৃজার মুখটা তুলে কপাল থেকে চুল সরিয়ে নাকে নাক ঠেকিয়ে নরম ওষ্ঠ যুগলের দখলে নিয়ে নেয়। ঠোঁটে ঠোঁট মিলনের মধ্যেই ঝাপসা চোখে সৃজা দেখে, ইহসান শেখের চোখ থেকে টুপটুপ করে ঝরছে অশ্রুধারা। আর তা বৃষ্টিধারায় মিলেমিশে যাচ্ছে। অপ্রত্যাশিত কোনো আতঙ্কে মুচড়ে মুচড়ে উঠে
পেটের ভেতরে পাক জড়িয়ে আসে সৃজার। বহুকষ্টে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কাঁদছ?”
শক্ত গলায় বলল ইহসান, “না, কাঁদছি না। তবে আমি কাঁদছি না বলে এখন এটা বলিস না যে, পুরুষ মানুষ কাঁদে না। তাঁরাও কাঁদে। কিন্তু তাদের কান্না দেখার মতো, শোনার মতো কেউ থাকে না৷ তবে তোর এতকিছু ভাবার দরকার নেই৷ এবার বল! ভালো থাকার জন্যই তো পালিয়ে আসা, আমাকে বারবার ফিরিয়ে দেওয়া। তাহলে ভালো থাকা হচ্ছে না কেন তোর?”
এই প্রশ্নের জবাব নিজেরই জানা নেই সৃজার। ব্যাপারটা দুর্বোধ্যও ওর কাছে। পাগল হয়ে যাচ্ছে রীতিমতো। জবাব দিতে না পেরে সৃজা এবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইহসান ওকে দৃঢ়চিত্তে দেখল। ওর চোখের তারা জ্বলজ্বল করে উঠল। এই যে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া, চুপ থাকা, না বলা কথা…সবকিছু বুঝে নিয়ে ও ম্লান হাসলো। সেই হাসিতে গভীর
বিষাদ লেপ্টে আছে। টের পেতেই অস্বস্তি হয়
সৃজার। বলেও সেভাবে, “আমার ভালো থাকার পুরোটা জুড়েই তুমি। তোমাকে বাদ দিয়ে ভালো থাকতে পারব না।”
“যাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবি না তাকেই অবিশ্বাস করলি? সেদিন একবার কেন বললি না তোর সাথে কী ঘটেছে? আমি বিশ্বাস করতাম না তোকে?”
অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৫
“আংকে…মানে উনি আমাকে বলল, এসব যদি কাউকে মানে তোমাকে বলি তাহলে নাকি তিনি আমার খুব বড়ো ক্ষতি করে দেবে। আমার কাছের মানুষের ক্ষতি করে দেবে। স্পষ্ট করে যদিও বলেনি, তবে ফুপি আর এলিজ ছাড়া আর কে আছে আমার…”
“আমি আছি।”
“তোমাকে অন্ধের মতো ভালোবাসে।”
“ভালোবাসা মাই ফুট!”