অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৬ (৩)
ইসরাত জাহান ফারিয়া
শান্তশিষ্ট, মাথাভর্তি চুল নিয়ে পরীর মতো দেখতে মেয়ে কোলে নিয়ে ইজহান অপ্রস্তুত হেসে জিজ্ঞেস করল ওকে, “অনিতা মিসের বেশি বোঝা মেয়েটা কি আজ আমাকে ঢুকতে দেবে?”
এলিজ একটুখানি ম্লান হেসে ঢোকার জায়গা করে দিয়ে বলল, “অবশ্যই।”
ইস্মিতাকে নিয়ে ইজহান ঢুকল, ঢুকে বসার ঘর অবধি আসতেই চোখ পড়ল সৃজার উপর। শুকিয়ে চেহারার বেহাল দশা হওয়া মেয়েটাকে দেখে সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে
গেল। কিছু বলতে নেবে, তখনই দেখল ওয়াশরুম থেকে ন্যাংটো ছেলেকে কোলে নিয়ে বেরুচ্ছে ইহসান। ইজহান তার টনার অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি করে মেয়ের চোখ ঢেকে ফেলে বিড়বিড় করে বলল, “আমার পরীর মতো মেয়ে এই ন্যাংটোকে বিয়ে করবে? খোদা!”
ইস্মিতাকে নিয়েই এ বাড়িতে এসেছে ইজহান। তাই রাতটা থাকবেও। নীলু ফুপি টুকটাক রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। এলিজ ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে, ইস্মিতা তাকে সাহায্য করছে। সৃজার শরীর দুর্বল, তাই ওকে কাজে হাত লাগাতে দেয়া হয়নি। ঘন্টাখানিকের মধ্যে খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হলো। নিস্তরঙ্গভাবে, অস্বস্তিদায়ক পরিবেশে। এরপর ইজহানজাদী কাঁদছিল বলে ইস্মিতাকে নিয়ে সৃজা চলে গেল শোয়ার ঘরে। এলিজ ফুপিকে সব গোছাতে সাহায্য করল। আর বাচ্চাদের নিয়ে দুই ভাই গিয়ে বসল বসার ঘরে। তবে ইজহানের পাশে বসে থাকলেও ইহসান কোনো কথা বলছে না। তাকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। ইজহান কতক্ষণ চুপচাপ থাকার পর ওকে একটা খোঁচা দিলো। ধ্যান ভাঙার পর ইহসানকে বিরক্ত দেখাল। ইজহান গমগমে স্বরে বলল, “কাটাকাটিতে, গুলাগুলি কিছুইতেই এক্সপার্ট না তুই। কোপ জায়গামতো পড়েনি। বেঁচে আছে। এর আগেও তোর করা গুলিতে জানের কিছুই হয়নি।”
“আমি জানতে চেয়েছি সেসব? বেঁচে আছে কি মরে গেছে ওসব দিয়ে আমি কী করব? আমি শুধু শাস্তি দিয়েছি লোকটাকে, ওরকম দুঃসাহস দেখানোর ফল কেমন হতে পারে, সেটার। আফটার অল, তারই তো ছেলে। জানো*রের ঘরে আরেক জানো*য়ার…”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“একটা না দুটো।”
“তুই না?”
ইজহান ভাবুক হলো, “বোধহয় আমিও, তিনজন।”
“সৃজা বলল, ভালো বাবা ডিজার্ভ করতাম আমরা। মাকেও। অথচ কিছুই পাইনি।” ওকে বিরক্ত দেখাল, “বা–ল! যেটা পেয়েছি, সেটাও কেড়ে নেওয়ার পায়তারা। আমি খুব বিরক্ত, বুঝলি?”
ইজহান কী বলবে ভেবে পেল না। ঠেস দিয়ে বসল সোফাটায়। হাত-পা ছড়িয়ে। ইহসানের পরণের টি-শার্টটার ঘাড়ের দিকে আঙুল বুলাতে বুলাতে বলল, “শুকিয়ে গেছিস।”
“কিন্তু তুই না। দিনদিন পাঠার মতো হচ্ছিস। জবাই করলে পাক্কা আড়াই মণ গোশত পাওয়া যাবে।”
ইজহানের তীক্ষ্ণ স্বর, “ঝগড়া করতে চাইছিস?”
ইহসান ব্যগ্র দৃষ্টি ছুঁড়ল ওর দিকে। এরপর বলল, “এনার্জি নেই। আমার ঘুম দরকার। দুটোকে নিয়ে ঘুমাব একটু।”
ইহসান উঠে গেল। সঙ্গে আজওয়াকেও তুলে নিল। ইজহান খুব করে আদর দিয়ে দিলো মেয়েটাকে। আযরানটা অবশ্য পাপার সঙ্গে গেল না। বড়ো আব্বার পা ধরে ঝুলে রইল। ইজহান ওকে উরুতে উঠিয়ে ভালোভাবে দেখতে লাগল। নানাবাড়ি এসে বড্ড চঞ্চল হয়েছে এই ছেলে। বালি ঘাঁটছে, মেঝেতে হামাগুড়ি দিচ্ছে। একদম পছন্দ হচ্ছে না তার। কিন্তু কী আর করার, বাঁধা দিতে গেলেই চিৎকার করে বলে সে সব মেনে নিচ্ছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত, তাই বেশিকিছু বলার মুড নেই ওর। এমনিতেই টনাটাকে কতদিন পর বুকে পেয়েছে সে। ইজহান ওকে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে
মিস করেছিলে জামাইবাবা?”
কী যেন বলে, আ আ শব্দ তুলে আযরান ওর মুখ বরাবর চাপড় দিলো। ইজহানের মনে হলো এই ছেলে তাকে থাপ্পড় মেরেছে। শ্বশুরের গায়ে হাত তুলে, এই ছেলে তো মহা আশ্চর্য!
হাসপাতালে আজিজ শেখের আজ চতুর্থ দিন। দু’দিন যাবৎ তার কথা বলা বন্ধ থাকলেও আজ একটু একটু কথা বলতে পারছেন তিনি। অপারেশনের পর আজই তার অবস্থা একটু উন্নতির দিকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ে তিনি ভাবছেন না। তার সমগ্র ভাবনা জুড়ে ইহসান। ছোট্ট সেই ইহসান, যাকে কাঁথায় মুড়িয়ে রাখলে পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্পাপ বাচ্চাটি মনে হতো, যার প্রতি তিনি একটু বেশিই দুর্বল, যার সব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অপমান নির্দ্বিধায় তিনি মেনে নেন,
সেই ছেলের এমন রুপ তাকে হতবাক করে দিয়েছে একদম। একবারও ছেলেটার হাত কাঁপল না তাকে আঘাত করতে গিয়ে? কীভাবে সম্ভব? সব কি অনিতা রেহমানের মেয়ের জাদু? আচ্ছন্ন করে রেখেছে তার ছেলেকে? যাতে নিজের বাবাকেও সে গোণায় ধরেনি? ছেলে তার, অথচ তার প্রতিই অস্ত্র তোলা? আজিজ শেখের ক্রোধের মাত্রা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়াতে থাকে। মস্তিষ্কে কিলবিল করতে থাকে অসুস্থ পোকার দল। এ থেকে নিস্তার কী? তার উপর, দিন চারেক হাসপাতালে পড়ে থাকার পরেও বাড়ি থেকে একটা লোকও একবারের জন্য দেখতে আসেনি তাকে। এই বিষয়টাও তার ঠিক হজম হচ্ছে না। অবিশ্বাস্য লাগছে তার কাছে। ইমরানকে ডেকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কাউকে দেখলাম না যে এখনো? কেউ আসে নাই নাকি? ইহসান তো আসবে না জানি, ইজহানও না?”
“কেউ না। তোমার উপর রাগ। আর কেন আসবে বলো তো? কারো সঙ্গে তোমার স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই, ভাইয়া তো পছন্দই করে না তোমায়। তারপরেও ওর বউয়ের গায়ে হাত তুলেছ। শ্বশুর হয়ে এ কাজ করাটা তোমায় মানিয়েছে? ভালো হয়নি এটা।”
ইমরান! সাতেপাঁচে থাকেও না যে, হিসাবে ভুল করে গন্ডগোল লাগায় যে, এই ছেলেটাও আজ তাকে জ্ঞান দিচ্ছে? আজিজ শেখ হতভম্ব! তবে বেশিক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন না। তেজদীপ্ত স্বরে ছেলেকে বললেন, “আব্বাজান, তোমার মুখে দেখি খই ফুটতেছে। ভাইদের গায়ে লাগা বাতাস তোমারও লাগল নাকি? তুমি কিন্তু ওদের মতো না, আমি মানব না তুমি আমায় অসম্মান করলে, জ্ঞান দিতে আসলে। মাথায় রাইখো।”
চারটা দিন একা হাতে বাবা নামক মানুষটাকে নিয়ে হাসপাতালে পড়ে রয়েছে সে। এদিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও ওদিকটার অবস্থা ভালো নয়। আজিজ শেখের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আরো কীসব গুঞ্জনও উঠেছে, সেসবের সত্যতা না থাকলেও ওদিকের অবস্থা উত্থালপাতাল। থানার নতুন ইনচার্জ এসে হাসপাতালে ঘুরে গেছে, শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে আপাতত ছাড় পাওয়া গেলেও উকিলের সঙ্গে কথা হয়েছে ইমরানের, বিশেষ কোনো সুবিধা নাকি করা যাচ্ছে না। অবস্থা এমন যে, সুস্থ হওয়ামাত্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে। আর এসবের পেছনে আছে তার ব্যবসায়িক শত্রুরা। যারা এতদিন সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিজেদের খুইয়ে এসেছে, তারা। এসব নিয়েই ঝক্কিঝামেলা পোহাতে পোহাতে ইমরানের অবস্থা নাজেহাল। আজিজ শেখকে এখনো এসব জানানো হয়নি। আরেকটু সুস্থ হলেই বলবে। এত এত চাপের মধ্যে থেকেও বাবা এমন কঠোর হয়ে কথাগুলো বলল যে, সে নিরাশ হলো অনেকটা। গোমড়ামুখে বলল, “সেই বাতাসটা লাগলে তো আমাকেও পেতে না তুমি।
ওদের মতোই পাষাণ হতাম। কিন্তু অতোটাও পারি না কেন যেন, বাবা হও বলেই বোধহয়।”
আজিজ শেখ চোখ তুলে তাকালেন ওর কথা শুনে। খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললেন,“তোমার বউ কোথায়? আর তার শ্বাশুড়ি? তারা আসে নাই?”
ইমরান হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল, “দু’জনের কেউই আসেনি। ইনফেক্ট কেউই আসেনি, অফিসের লোকজন ছাড়া।”
আজিজ শেখের মাথায় রক্ত উঠে গেল। কেউ আসেনি? সালেহাটাও না? মা*টার বড্ড বাড় বেড়েছে। দাসী বান্দিদের ছাড় দিলে এমনই হয়। নিজেকে হনু ভাবতে শুরু করে। কয়েকমাস লাথি-উষ্ঠা না খাওয়ায় গায়ে চর্বি জমেছে, চর্বি কীভাবে গলাতে হয় আজিজ শেখের জানা আছে। একবার ফিরুক, সব ক’টাকে ধরে পিষে ফেলবেন তিনি। অনিতা রেহমানের মেয়েটাকেও। মনের ভাবনা গোপন কুঠুরিতে বদ্ধ করে ছেলেকে এবার জিজ্ঞেস করলেন, “মিতু কেন আসে নাই? আর ওর আব্বা? সেও না?”
“বাচ্চা, বাচ্চা করি বলে মিতু তালাক চাইল, আমিও সহমত জানালাম। ওকে তালাক দেব। সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে, তাই আসেনি। আর ওর বাবার কথা জানি না, বোধহয় নতুন প্রজেক্টের কাজটা তাকে দাওনি, তাই রেগে আছে।”
বিচলিত দেখাল না ইমরানকে। সাবলীল গলায় কথাগুলো বলল সে। নিশ্চুপ থেকে শুনল আজিজ শেখ। তাকেও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। যেন সবই স্বাভাবিক। বললেন, “দাও তালাক। বাচ্চা দিতে পারে না ঐসব রঙঢঙের মাইয়া মানুষ আমার বাড়ির ত্রি-সীমানায় না আসাই ভালো। আর ওর জোচ্চোর বাপটা? ওই শালার মুখে লাথি। হারামির বাচ্চা…আঁতে ঘা লাগছে তাই আসল রুপ দেখায়া দিলো৷ এমনিতে তো পায়ে থাকারও যোগ্য না। নেহাৎ তোমার শ্বশুর লাগতো, তাই পাত্তা পাইতো…”এরপর হঠাৎ মনে পড়ায় নরম সুরে বলেন, “কিন্তু তুমি আবার রাগের মাথায় তালাকের সিদ্ধান্ত নাও নাই তো? মিতুরে ভালোটালো বাসো না? ওর আঁচল ধইরাই তো ঘুরঘুর করতা, বউপাগল বলতো। পারবা ওরে ছাড়তে?”
“ভালো যে বাসি না এটা বললেও ভুল হবে, তবে ভালোবাসি বলেই যে ওকে ধরে রাখতে হবে তার কোনো মানে নাই। ও একটু অন্য ধাঁচের, মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, পারা যাচ্ছে না। ও বাচ্চার ঝামেলা নিতেই চাচ্ছে না। সম্পর্কে তিক্ততাটা এসেছে ওর ব্যবহারের কারণেই। কোনো সম্পর্কে তিক্ততা আসলে সেটাতে জড়িয়ে থাকার তো মানে নেই। এভাবে কেউই ভালো থাকতে পারব না। তাই ছেড়ে দিয়ে ভালো থাকাটাই ভালো না?”
ওতসব ভুগিচুগি কথা বোঝেন না আজিজ শেখ। ছেলে যখন চাইছে, তা-ই হোক। এত নাটকের কথা নিয়ে ভাবার সময় নেই। বললেন, “তোমার যা ইচ্ছা তা-ই করো।”
ইমরান রা করল না কোনো। তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ি গিয়ে ঘুম দিতে ইচ্ছে করছে। দুটো দিন টানা ঘুমালে শরীরটা ঝরঝরে হতো। কিন্তু এতসব ঝক্কিঝামেলা মাথায় নিয়ে কীভাবে ঘুম হবে? ভাইয়েরা সব তো গা, হাত-পা ছাড়া হয়ে আছে! সে পড়েছে ফ্যাসাদে। আকস্মিক মনে পড়তেই আজিজ শেখকে জিজ্ঞেস করল সে, “সবার কথাই তো জানতে চাইলে। জান কোথায়, সেটা তো জানতে চাইলে না?”
“আগে থেইকাই যেটা জানি সেটা জিজ্ঞেস করার তো কোনো মানে নাই।”
ইমরানের চোয়াল ঝুলে পড়ল, “জানো? তাহলে আসতে বলো ওকে। কিছু কাজবাজ তো করে না, এসে অফিসের দিকটা দেখুক একটু। ক’টা দিনের জন্য হলেও। আমি তাহলে এদিকটা ভালোভাবে দেখতে পারি…”
“ইমরান, আব্বাজান! তোমার মাথায় বুদ্ধি কম। বুদ্ধি কম মানুষের জন্য আমার মায়া নেই, কিন্তু তুমি আমার ছেলে, তাই অসম্ভব টান আছে তোমার প্রতি। এখন সামনে থেকে যাও। খাওয়াদাওয়া করে আসো, মাথা ঠান্ডা করো। জানরে নিয়ে তোমার ভাবতে হইবো না। আমি ওর বাপ, ওরে নিয়া আমিই ভাবব। আর কেউ না।”
মুখ কালো হয়ে গেল ইমরানের, “আমার বুদ্ধি কম তাই আমি ভাবতেও পারব না?”
“তুমি হইছ তোমার নানাজানের মতো। বোকার হদ্দ। কাজে ঠনঠন, কথায় বাড়াবাড়ি, ফাল পারো বেশি। যাও সামনে থেইকা।”
দুর্বল গলায় ধমকে উঠলেন আজিজ শেখ। ইমরান বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। এতকিছু করার পরেও তাকে এতসব কথা শুনতে হলো? ভালো হয়েও কোনো দাম নেই। বড় ভাইদের মতো নয়তো আরসালানের মতো হওয়া উচিৎ ছিল তার। সে ত্যক্তবিরক্ত!
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর সৃজা অনুভব করল ইহসান তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। ওর মুখ থমথমে হয়ে গেল। এই লোক এতদিন কীভাবে থেকেছে, আর সে-ই বা কীভাবে ছিল? সৃজা উলটো ঘুরে ওর দিকে ফিরে
খেয়াল করল, ইহসান ঘুমায়নি। জেগে আছে। টকটকে লাল ওর চোখ। বিধস্ত দেখাচ্ছে ওকে। সৃজাকে জাগ্রত দেখে ওর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল, “আমরা একটা নতুন বাসা নিই, এখান থেকেই কাছাকাছি? ও বাড়িতে আর ফিরব না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।”
সৃজা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মাথা নাড়ল, “আচ্ছা।”
“তোর ঘুম কেটে গেছে?”
“হু।”
“তোকে কিছু সত্যি কথা বলব। ইনজানকে নিয়ে৷
রেগে যাবি না আবার।”
“বলো।”
“ও আসলে মিসকে মারতে চায়নি, মিসকে ও আমাদের মা বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু মিস রাজি না হওয়ায় ও তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল, সেজন্য থাপ্পড় খেয়েছিল একটা। ওই রাগ থেকেই, বুঝতে পারছিস? এতবড়ো কান্ড করেছিল। আমাকে ও নিজের মুখেই বলছিল কথাগুলো। ওই সময়টায় আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছিল। মেরে আধমরা করে ফেলেছিলাম ওকে। সেজন্য আজিজ শেখ আমাকে কী করেছিল জানিস, ড্রাগ এডিক্টেড বানিয়ে আমাকেই একরাত জেলে আটকে ব্রেন ওয়াশ করতে চেয়েছিল। লোকটা আমাকে ভালোবাসে, ঘৃণায় আমার গা জ্বলে এই কথাটা শুনলে।”
এই সত্যিটা জানা ছিল না সৃজার। ও বাক্যহীন হয়ে গেল। বিস্মিত ও ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ওর হতভম্ব অবস্থা দেখে হাসলো ইহসান, এরপরই বলল ওকে, “মিস মারা যাওয়ার মাস ছয়েক পরে রাস্তায় তোকে আমার সঙ্গে দেখে খুব কৌতূহল জেগেছিল জানের। সেই শুরু তোকে স্টক করার! তুই ভদ্রসভ্য, ল্যাভেন্ডার রঙে তোকে ল্যাভেন্ডার বাগান মনে হয় ওর কাছে, তোকে নাকি পছন্দ হয়েছিল ওর…ব্লা ব্লা…ব্লাডি বিচ কোথাকার! কিন্তু সীমা অতিক্রম করতে পারেনি, তার আগেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাই।
অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৬ (২)
তবে সেখানে থেকেও তোকে নিয়ে অনেককিছু বলে আমাকে জ্বালাতো। তোর প্রতি অনেকদিন অবসেসড ছিল। কিন্তু এবার দেশে ফেরার পর, তোর উপর থেকে ওর নজর সরেছে। ঐ যে, চরিত্রহীনদের মন পাল্টাতে থাকে! ওরও পাল্টেছে। এবার কার পেছনে লেগেছে জানিস? এলিজের! আজিজ শেখকে উষ্কেছে এটা বলে যে, এলিজকে ওর লাগবে।”
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল সৃজা। ঠিক কি শুনল ও?
এলিজকে লাগবে? ইনজান শেখের এলিজকে লাগবে?