আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ২
অরাত্রিকা রহমান
১০ বছর পর…
আমেরিকায়~
ট্রেডমিলে দৌড়াচ্ছে রায়ান । মনে হচ্ছে যেন সূর্যের আলো ছুঁয়ে গেছে শরীরটাকে। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা—দেখলেই চোখ আটকে যায়। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রং যেন মেঘলা দিনের মাঝে হঠাৎ ঝলসে ওঠা এক টুকরো রোদ। কাঁধজোড়া চওড়া, যেন নিরাপত্তার এক বিশাল দেয়াল। বুকের গঠন যেন ঘন পেশিতে মোড়া, বুকের মাঝখানে হালকা ফাঁক দিয়ে দেখা যায় টোনড বুকে তীব্র পুরুষালি আকর্ষণ।
তার পেট ছয়-প্যাক এবস দিয়ে সুস্পষ্টভাবে খোদাই করা—একটা নিখুঁত ভাস্কর্যের মতো। শরীরের প্রতিটি রেখা আর পেশি যেন শক্তি আর সৌন্দর্যের নিখুঁত মিলন। গায়ের ঘামে ভেজা মাংসপেশি আরও বেশি আবেদনময় করে তোলে তাকে।
চোখে একধরনের আত্মবিশ্বাস, ঠোঁটে অলস অথচ রহস্যময় হাসি—যেটা মেয়েদের বুকের ভিতরটা কাঁপিয়ে দিতে পারে। হাঁটার ধরণ যেন ছন্দবদ্ধ- কর্তৃত্বপূর্ণ। একটা মেয়ের পক্ষে তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া সত্যিই অসম্ভব।
হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠলো তার। অতি স্বাভাবিক ভাবেই i-phone 16 por হাতে তুলে কলটা রিসিভ করে উওর করে-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“Hello, who’s this?”
অপর পাশ থেকে একজন অচেনা লোক বললেন-
“Hello, this is David Jackson. Am I talking to Mr.Rivan chowdhury Rayan?”
রায়ান- “Yes, you are. Is there anything I can help you with Mr. Jackson?”
ডেভিড- “Mr. Chowdhury I’m thrilled to inform you that you have been officially nominated for ‘the Most Successful Businessman’ of the Year award. This recognition reflects your outstanding achievements, leadership, and impact in the business world.
Congratulations on this well-deserved honor!”
রায়ান ঠোঁট প্রসারিত করে সামান্য হেসে ট্রেডমিল থেকে নেমে পাশে ঝুলিয়ে রাখা টাওয়ালটা হাতে নিয়ে শরীরের ঘাম মুছতে মুছতে বলল-
“Thank you so much, for the information. I appreciate it.”
ডেভিড- ” Mr. Chowdhury we will inform your manager about the date and place.We hope your presence in the award show. Please, make time for us if it’s possible.”
রায়ান- “Sure, I would try my best to come.”
ডেভিড- ” Thank you for your valuable time Mr.
Chowdhury. Have a good day. See you.”
রায়ান- “It’s alright.”
কথাটা বলেই রায়ান জিম থেকে বের হয়ে নিচে সোজা তার বেড রুমে চলে গেল ফ্রেস হতে। রায়ান তার স্বপ্নের বাড়িতে একাই থাকে। তবে তার ডুপ্লেক্স বাড়ি যেন তার সৌখিনতা প্রকাশ করে।
এটা এক আধুনিক রাজপ্রাসাদের মতো – চারপাশে সবুজ ও রঙিন ফুলের বাগানে ঘেরা। বাড়িটা অনেক বড়, বিশাল ফটক পেরিয়ে ঢুকতেই প্রথম চোখে পড়ে মার্বেল পাথরে মোড়া ওপেন ড্রাইভওয়ে, যেখানে একসাথে বেশ কয়েকটি গাড়ি পার্ক করা যায়।
বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই সামনে পড়ে বিশাল ড্রয়িং রুম — উচ্চ ছাদ, ঝাড়বাতি ঝুলছে উপরে, দেয়ালজুড়ে আধুনিক আর্টের ছোঁয়া, আর বসার জন্য লেদার সোফার আরামদায়ক সেট।
এর পাশেই রয়েছে একটি সম্পূর্ণ মডার্ন, হাই-এন্ড কিচেন। বিল্ট-ইন ওভেন, আইল্যান্ড কাউন্টার, স্মার্ট ফ্রিজ থেকে শুরু করে সব ধরনের কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স — সবই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের। কিচেনের সঙ্গে রয়েছে একটি রুচিশীল ডাইনিং স্পেস।
বাড়ির উপরের দিকে আছে এক্সক্লুসিভ ইনডোর জিম — আধুনিক সব ফিটনেস যন্ত্রে সুসজ্জিত, দেয়ালে বিশাল আয়না আর একপাশে স্পিকার সিস্টেমে চলছে রিল্যাক্সিং মিউজিক। শরীরচর্চার জন্য আদর্শ। যেখানে এতোটা সময় রায়ান শরীর চর্চা করছিল।
মাস্টার বেডরুম এককথায় স্বপ্নের ঘর — বিশাল বিছানা, উষ্ণ আলো, ওয়াক-ইন ক্লোজেট, আর একটি ব্যক্তিগত ব্যালকনি যেখান থেকে দেখা যায় পুরো সুইমিং পুল এলাকা। এটাচড বাথরুমটাও বিলাসবহুল — মার্বেল ফ্লোর, জ্যাকুজি, রেইন শাওয়ার আর আলাদা ড্রেসিং এরিয়া।
আর বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি ব্লু-টাইল্ড সুইমিং পুল — পাশে সানবেড, আর নরম বাতাসে দুলছে পাতাগুলো। রাতে পুলের আলোগুলো জ্বলে উঠলে পুরো এলাকা যেন সিনেমার সেটের মতো মনে হয়।
রায়ান বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজের ওয়ার্ডরোবে ঢুকে পরিপাটি করে একটি চারকোল ব্ল্যাক স্যুট, সাদা শার্ট আর স্লিম টাই পরে নিল। নিখুঁতভাবে চুল সেট করে, ঘড়ি পরে সে আজকের দিনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
ড্রেস-আপ হয়ে নিচে নেমে আসে কিচেনে। আধুনিক কিচেনের পরিচ্ছন্নতা আর নীরবতা যেন সকালে একটা শান্ত পরিবেশ এনে দেয়। সে নিজেই হালকা কিছু রান্না করে—স্ক্র্যাম্বলড এগস, টোস্ট আর কফি। রান্নার পর দ্রুত নিজের খাবারটা শেষ করে।
খাওয়া শেষে সে বেরিয়ে যায় গ্যারেজে। কয়েকটা গাড়ির ভেতর থেকে বেছে নেয় তার প্রিয় ব্ল্যাক মার্সিডিজটা। গাড়িতে উঠে, মিউজিক অন করে, গাড়িটা বেরিয়ে যায় মূল রাস্তার দিকে।
আজকের গন্তব্য—Rayan Industries। নিজের হাতে গড়ে তোলা কোম্পানি, যেটা এখন অনেক মানুষের কর্মজীবনের কেন্দ্র আর তার নিজের জীবনের গর্ব।
বাংলাদেশ~
সকালটা একটু থমথমে। ঘুম ভাঙার পর মিরায়া কিছুক্ষণ বিছানায় চুপচাপ বসে থাকে। চোখে-মুখে এখনও ঘুমের ছাপ, কিন্তু আজ তার মনে এক অজানা উত্তেজনা। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে একবার তাকায়-
মেয়েটির মধ্যে এমন এক সৌন্দর্য আছে, যা চোখে পড়ার মতো নয়—চোখ আটকে রাখার মতো। তার ত্বকটা যেন দুধে-আলতা মেশানো, একদম কোমল আর উজ্জ্বল। গালের দুপাশে হালকা লালাভ আভা, আর ডান গালে হাসলে যেটুকু টোল পড়ে—তা যেন মিষ্টতার চূড়ান্ত প্রকাশ।
তার ঠোঁট দুইটা ঠিক গোলাপের পাঁপড়ির মতো—প্রাকৃতিকভাবে হালকা গোলাপি, কোনো সাজ ছাড়াই নজরকাড়া। ঠোঁটের নিচে ডান পাশে একটি ছোট তিল—অন্য কারো হলে হয়তো সাদামাটা মনে হতো, কিন্তু তার ক্ষেত্রে সেটা যেন এক বিশেষ পরিচয়ের ছাপ, চোখ না ফেরানোর এক কারণ।
চোখগুলো বড় ও গভীর, ব্রাউন রং আর দৃষ্টিতে এক অদ্ভুত মায়া। ঘন পাপড়ি তার চোখকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। চোখের কোণায় হালকা ঘুম জড়িয়ে থাকলেও, সেই চোখে চাপা দুশ্চিন্তার ছায়া স্পষ্ট।
চুলগুলো ঘন, কোমল, কোমর ছোঁয়া—সকালের এলোমেলোভাবেই আরও স্বাভাবিক লাগছে তাকে। কোনো সাজগোজ ছাড়াই, স্রেফ হালকা ঘুম ঘুম চেহারায়ও যেন একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে, যা তাকে ভীষণ আপন করে তোলে। সে সৌন্দর্য চোখ ধাঁধায় না, বরং মন জুড়িয়ে দেয়।
আজ তার এইচএসসি রেজাল্ট দিবে—সেই ভেবে ভিতরে ভিতরে বেশ দুশ্চিন্তায় ভুগছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে বারবার স্ক্রিনের দিকে তাকায়, একটু পরপর চেক করে ওয়েবসাইট খোলা যাচ্ছে কিনা।
রেজাল্ট নিয়ে তার মনের ভিতর চলতেছে নানা ভাবনা—কি হবে? যদি আশানুরূপ না হয়? সবাই কী বলবে? কিন্তু বাইরের দিক থেকে সে চুপচাপ, সংযত। এটাই তার স্বভাব—ভেতরের ঝড় সে কারও সামনে সহজে প্রকাশ করে না।
কিন্তু আজকের দিনটা তার জীবনে একটা মোড় ঘোরানো দিন হতে পারে—সে জানে না, আজকের এই সকাল তাকে কোন দিকে নিয়ে যাবে।
মিরায়া ফ্রেশ হয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে এলো ড্রয়িং রুম। সোফায় রোকেয়া বেগম বসে আছেন। মিরায়াকে দেখেই সোফায় তার পাশের খালি জায়গায় ইঙ্গিত করে বললেন-
“মিরা, এই দিকে এসে বস।”
মিরায়াকে সবাই ছোট করে মিরা ডাকে। মিরায়া চাচির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে এগিয়ে গিয়ে সোফায় ঠিক রোকেয়া বেগমের পাশের খালি জায়গায় বসতে বসতে বলল-
“Good morning, চাচি। কি করছো?”
রোকেয়া- “কিছু নারে মা তোদের জন্য নাস্তা তৈরি করে সবে মাত্র বসলাম।”
মিরায়া- “ওহ আচ্ছা। চাচা কোথায় দেখছি না যে।”
রোকেয়া- “তোর না আজ রেজাল্ট দেওয়ার কথা তাই তো তোর চাচা সকাল সকাল বাজারে গেছে।”
মিরায়া-“রেজাল্ট দেবে তাই বাজারে যেতে হবে?”
রোকেয়া-“তো কি হবে না! তোর চাচা যাওয়ার সময় বলে গেছে তুই ভালো রেজাল্ট করবি এটা তার বিশ্বাস তোর উপর। তাই তো মিষ্টি কিনতে গেছে আগেই।”
কথা গুলো রোকেয়া বেগম মিরায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়ে বললেন।
এদিকে মিরায়ার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। যদিও সে জানে সে পরীক্ষা ভালো দিয়েছে রেজাল্টও ভালো হওয়ার কথা। তবু মনে কিসের যেন একটা ভয় কাজ করছিল যদি আশানুরূপ ফলাফল না হয়। তবে মিরায়া তার ভয় চাচির সামনে প্রকাশ করল না। শুধু মুচকি একটু হাসি দিয়ে বলল-
“আমার রেজাল্টের দিনে আমার থেকে তোমরা দুজন বেশি উৎসাহিত।”
মিরায়ার কথা শুনে রোকেয়া বেগম মৃদু হেসে উঠলেন। পরক্ষণেই দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামতে নামতে সোরায়া (মিরায়ার ছোট বোন) খানিকটা মুখ ফুলিয়ে বলল-
“তোমাদের সাথে আমি আর কথাই বলবো না। আমাকে ছাড়া কি নিয়ে তো হাসাহাসি করছো।”
মিরায়া-“এই যে চলে আসেছে, হিংসুটে বুড়ি টা।”
মিরায়া কথাটা বলেই ফিক করে হেঁসে দেয় মুখে হাত চেপে। সাথে সাথে চাচি মিরায়ার মাথায় গাট্টা মেরে সোরায়ার উদ্দেশ্যে বলেন-
“ওরে আমার ছোট্ট বুড়ি। আমরা তোকে ছাড়া মজা করব এটা তুই ভাবতে পারলি। এদিকে আয় এদিকে এসে আমার পাশে বস।”
মিরায়া ওমনি হাসি থামিয়ে দিলো। আর চাচিকে মিরায়ার মাথায় মারতে দেখে সোরায়া তৃপ্তির হাসি হেসে সোফায় এসে বসলো চাচির অন্য পাশে আর বলল-
“আরেকটু জোরে মারতে চাচি। লাগেনি তেমন মনে হয়।”
কথাটা বলে মিরায়ার উদ্দেশ্যে ভেঞ্চি কেটে হওয়ায় একটা চুমু দিয়ে মিরায়াকে সোরায়া আবার বলল-
“তোমরা চিন্তা করো না তো। মিরা আপু বিলাই মার্কা স্টুডেন্ট ভালোই রেসাল্ট আসবে।”
মিরায়া সোরায়ার কথা শুনে বললো-
“এই শয়তান, বিলাই মার্কা স্টুডেন্ট কি আবার?”
সোরায়া হেঁসে উত্তর দেয়-
” আরে বিলাই মার্কা স্টুডেন্ট মানে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট 🥱।”
দুজনের খুনসুটি দেখি চাচি হেঁসে উঠলেন। এমন সময় শফিক রহমান (মিরায়ার চাচা) বাড়িতে প্রবেশ করলেন। চাচা কে দেখেই মিরায়া সোরায়া দৌড়ে চাচাকে জড়িয়ে ধরল। শফিক রহমান ও দুই মেয়ে (ভাতিজী কে) জড়িয়ে নিলেন বুকে। আর বললেন-
“আস্তে কি দেরি হলো আমার নাকি? কিছু কি মিস করলাম? আমাকে ছাড়া সবাই এত খুশি যে।”
রোকেয়া-“মোটেও না। একদম ঠিক সময় এসেছো। দুজন আর একটু হলেই তর্ক জুড়ে দিতো।”
রোকেয়া বেগমের কথা শুনে শফিক রহমান মিরায়া আর সোরায়ার দিকে চোখ ছোট করে তাকাতেই দুজন চোখাচোখি করে কি যেন একটা ভেবেই চাচাকে ছেড়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে বললো-
“আরে আমরা তো মজা করছিলাম না, চাচা তেমন কিছু না।”
দুজনের এমন হঠাৎ পরিবর্তনে রোকেয়া বেগম ও শফিক রহমান দুজন আর শব্দ করে হেঁসে উঠলেন। চাচা-চাচি কে তাদের উপর হাসতে দেখে মিরায়া সোরায়া ও হেঁসে ফেলল। হাসি মুখে নিয়েই রোকেয়া বেগম বললেন –
“অনেক হাসাহাসি হয়েছে এবার চলো নাস্তা করতে হবে তো নাকি।”
কথাগুলো বলে রোকেয়া বেগম শফিক রহমানের হাত থেকে বাজার ভর্তি ব্যাগ নিয়ে রান্না ঘরে রাখতে চাইলেন তবে শফিক রহমান তাকে বাজারের ব্যাগ না দিয়ে । রোকেয়া বেগমের কাছে এসে বললেন-
“আমি থাকতে আমার স্ত্রী কেন বোঝা বইবে, হুম?”
রোকেয়া বেগম শফিক রহমানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে সোরায়া মিরায়ার দিকে তাকিয়ে একটু লজ্জা পেয়ে বললেন –
“মেয়েদের সামনে কি শুরু করেছো?”
চাচা চাচি খুনসুটি দেখে সোরায়া মিরায়া দুজন দুজনকে দেখে মুচকি হেসে একসাথে গেয়ে উঠলো-
“Ab to Mera Dil,
Jage na sota hey..
Kiya karu hayyye,
Kuch Kuch hota hea…”
রোকেয়া বেগম আরো লজ্জা পেয়ে মৃদু চেঁচিয়ে উঠে বললেন –
“তবে রে! খুব পেকে গেছিস। তাড়াতাড়ি গিয়ে খেতে বস। এক্ষুনি।”
এই বলে তিনি রান্না ঘর চলে গেলেন। তার পিছন পিছন শফিক রহমান ও বাজার ভরা ব্যাগ নিয়ে রান্নাঘরে গেলেন। তারপর সবাই একসাথে বসে সকালের নাস্তা শেষ করলো।
ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১১টা ছুঁতেই মিরায়ার বুকের ধুকপুকানি আরও বেড়ে গেল। মোবাইলের স্ক্রিনে আঙুল কাঁপছে হালকা। চোখে-মুখে এক ধরনের টেনশন আর আশার মিশেল—এইচএসসি রেজাল্ট, যার জন্য এতদিন অপেক্ষা।
সার্ভার ভীষণ স্লো। বারবার “Reload” দিতে দিতে অবশেষে স্ক্রিনে ভেসে উঠল তার রেজাল্ট…
GPA: 5.00
সে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিল না। চোখে পানি চলে এলো, কিন্তু হাসি থামাতে পারল না। মোবাইলটা হাতে নিয়েই দৌড়ে চলে গেল চাচির কাছে।
— “চাচি… আমি ৫ পেয়েছি!
রোকেয়া বেগম চুপ করে তাকিয়ে রইল কয়েক সেকেন্ড, তারপর যেন হঠাৎ আবেগে আটকে গেলেন। চোখে পানি, মুখে প্রশান্তির হাসি। বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন মিরায়াকে—”আল্লাহ্র রহমতরে মা… আমার মেয়ে পেরেছে!”
শফিক রহমান পাশের ঘর থেকে ছুটে এলেন, হাতে ছিল চোখের চশমা। রেজাল্ট শুনে তিনি এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন, তারপর গর্বভরা গলায় বললেন,
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ১
— “তুই আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছিস মা, আজ তোর জন্য বুকটা গর্বে ভরে গেছে।”
ছোট বোন সোরায়রা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলো,
— “তুই তো দেখি একদম বিলাই মার্কা, -না , I mean ব্রিলিয়ান্ট আপু!”
পুরো ঘরে তখন এক আনন্দের আবেশ, এক হালকা কান্না, হাসি আর গর্বের মিশ্র অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছে।
মেয়েটা চুপচাপ একবার জানালার বাইরে তাকালো—আজকের সকালটা আর দশটা দিনের মতো না। আজ সে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে গর্ব করতে পারছে, নিজের ওপর বিশ্বাস করতে পারছে। সামনে আরো অনেক পথ এখনো পেরোনো বাকি। তার স্বপ্ন যে এর চেয়ে অনেক বড় – যা তাকে ভীষণ করে টানে।