আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ২১
অরাত্রিকা রহমান
মিরায়া হঠাৎ একটু বাঁকা চোখে তাকাল রায়ানের দিকে।
রায়ান নির্বিকার, কেবল মৃদু হেসে ফিসফিস করে বলল—
—“এভাবে তাকিও না হৃদপাখি… নইলে আমি ভুলে যাব আমরা পাবলিক প্লেসে বসে আছি।”
মিরায়ার বুক কেঁপে উঠল। চোখ নামিয়ে ফেলল তাড়াতাড়ি। আত্মসচেতনতার দেয়াল আরও শক্ত করে দাঁড় করাল নিজের ভেতরে। মিরায়ার বুকের ভেতর কেমন ঝড় উঠল। মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল সে। চোখ গেল ঝাড়বাতির দিকে, টেবিলের ফুলের দিকে—যেন নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু রায়ানের একেকটা আচরণ, একেকটা শব্দ, যেন সেই দেয়ালটাকে একটু একটু করে ভাঙছে…
রেস্টুরেন্টের ভেতরের পরিবেশটা আরও অদ্ভুত করে তুলছিল এই নীরবতা। বিশাল ঝাড়বাতির আলো নরম সোনালি আভা ছড়াচ্ছে চারদিকে। টেবিলের মাঝখানে রাখা গোলাপের সুবাস যেন ভারী করে তুলছে নিঃশ্বাসের গতি। মেঝেতে মোমবাতির আলো নাচছে, আর কাঁচের দেওয়াল দিয়ে ঢুকে আসা সূর্যের শেষ আলো তাদের চারপাশে একটা উষ্ণ ছায়া এঁকে দিচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই পরিবেশের ভেতরে বসে মিরায়া আরও বেশি আত্মসচেতন হয়ে উঠল। তার চোখ ঘুরে ঘুরে টেবিলের সাজানো গ্লাস, ফুল, আলো সবকিছু দেখছিল—কেবল পাশের লোকটার দিকে তাকাতে চাইছিল না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই অনুভব করছিল—রায়ানের চোখ একদম তার দিকেই স্থির হয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সেই একই চিরচেনা কণ্ঠস্বর শোনা গেল, শান্ত অথচ গভীর—
—“এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছো কেন? সাবধান, মিরা। তোমার ওই চোখে ডুবে গেলে আমি হয়তো আজ এখানেই আমার নিয়ন্ত্রণ হারাব। এটা একটা রেস্টুরেন্ট আমাকে ভুলতে বাধ্য কোরো না জান।”
মিরায়ার বুক ধক করে উঠল। তার গাল হালকা লাল হয়ে উঠল, চোখ নামিয়ে ফেলল সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু মাথার ভেতর চিন্তার স্রোত বয়ে গেল—
“সে কি বলতে চাইছে? সত্যিই… সে কি আমাকে পছন্দ করে? নাকি শুধু মজা করছে? কিন্তু শুধুই পছন্দ হলে এমন পাগলামি… পুরো রেস্টুরেন্ট রিজার্ভ করা… এভাবে এত কাছে বসা… কেউ কি শুধু পছন্দের জন্য এতটা করে?”
তার বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত ব্যথা মিশ্রিত ধকধকানি। ঠোঁট নড়ল, কিন্তু কোনো প্রতিবাদ বের হলো না।
রায়ান পাশে বসে মৃদু হাসল, চোখ একদম সোজা রেখে বলল—
—“তুমি ভেবো না আমি অন্যদের মতো তোমার দিকে তাকাই। তোমাকে দেখে আমি সব ভুলে যাই, এমনকি সময়কেও , নিজেকেও।”
মিরায়া হতবাক হয়ে গেল। তার চোখ বড় হয়ে রায়ানের দিকে উঠল, কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নির্বাক। মনে হচ্ছিল এই লোকের প্রতিটি কথা তার ভেতরের স্থিরতাকে ভেঙে দিচ্ছে।
রেস্টুরেন্টের চারপাশে তখন নিস্তব্ধতার মাঝেই এক অদ্ভুত শব্দ বাজছিল—দুজনের নিঃশ্বাস। গোলাপের সুবাস আর মোমবাতির আলো সেই নিঃশ্বাসকেই আরও ভারী করে তুলছিল।
মিরায়া ভেতরে ভেতরে গলে যাচ্ছিল, অথচ বাহিরে কঠিন মুখ রাখার চেষ্টা করছিল।
রায়ান হঠাৎ আবার ঝুঁকে এসে ধীরে ফিসফিস করল—
—“জানো, তোমার এই নীরবতা আমাকে আরও পাগল করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, এক্ষুনি তোমার হাত ধরে আমার বুকের ওপর রেখে দিই, যেন তুমি শুনতে পাও সেটা আমার হৃদপাখির জন্য কেমন ধকধক করছে।”
মিরায়ার চোখ বিস্ফারিত। বুকের ভেতরের ধ্যান ভেঙে গেল। অবাক হয়ে তাকাল রায়ানের দিকে—ঠোঁট কাঁপছে, কিন্তু কিছুই বলতে পারল না।
তার মুখে এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি—অবিশ্বাস, লজ্জা, আবার টেনে রাখা অনুভূতির ঝড়। চারপাশের নরম আলোয় মিরায়ার চোখ দুটো আরও উজ্জ্বল লাগছিল, আর সেই চোখের ভেতর তাকিয়েই রায়ান ঠোঁটে অল্প বাঁকা হাসি টেনে দিলে।
মিরায়া অজান্তেই নিজের বাম হাত দিয়ে নিজ ইচ্ছায় রায়ানের বুকের বাঁ পাশে স্পর্শ করল। সে রায়ানের কথায় নয় বরং নিজে বুঝতে চাইছিল রায়ান কি সত্যি বলছে।
রায়ান হতবাক- সে আশা করে নি মিরায়া এমন কিছু সত্যি সত্যি করবে। রায়ান অবাক চোখে মিরায়ার গতিধারা দেখে চলেছে। তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি তা জানার জন্য মুখিয়ে আছে।
অন্যদিকে মিরায়া রায়ানের পেশিতে মোড়া, টোনড বুকে নিজের হাত রেখে স্পষ্ট বুঝতে পারলো এক অবাধ্য হৃদয়ের উঠা নামা । রায়ানের কথার সত্যতা যাচাইয়ের পর এক তীব্র পুরুষালি আকর্ষণে পরে গেল মিরায়া।
রায়ানের শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা থাকায় এমন দৃশ্য অবলোকন হতেই মিরায়া এক অদম্য অসক্তিতে ডুবে যেতে থাকলো। মিরায়ার হাত যেন অপ্রত্যাশিত ভাবে একাই চলাচল করতে শুরু করল রায়ানের বুকের উপর।
রায়ান মিরায়ার এহেন স্পর্শে উত্তেজিত হতে থাকলো যেন আর কিছু সময় এভাবে অতি বাহিত হলে সে নিজের তার তার হৃদপাখির মাঝে কোনো দূরত্ব রাখবে না। শ্বাস প্রশ্বাস এর গতি আরো বাড়তে লাগলো রায়ানের তবে সে একই ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে মিরায়ার হাতের গতিশীলতা বুঝতে চাইছে।
মিরায়া হাতটা তার নিজের মধ্যে একটু সঙ্কুচিত করল, কিন্তু ভেতরে অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করল। তার চোখে রায়ানের প্রতি আকর্ষণ, হৃদয়ের টানে ভরা অস্থিরতা—সব মিলিয়ে রেস্টুরেন্টের নরম আলো, লাল গোলাপের সুবাস, ক্রিস্টাল গ্লাসের ঝলক—সবকিছু যেন এই মুহূর্তকে আরও গভীর ও রোমান্টিক করে তুলেছে।
শার্টের খোলা বোতামের মাঝখানে হালকা ফাঁক দিয়ে দেখা যায় রায়ানের পেশিতে মোড়া, টোনড বুক। মিরায়া নিজের হাত সেই বুকটা ছুঁয়ে দিতে অগ্রসর হতেই রায়ান তখন পরিবেশের গভীরতা বুঝতে পেরে মিরায়ার হাত ধরে ফেলে।
রায়ানের মিরায়ার হাত ধরার সাথে সাথে মিরায়া নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। সে অবাক হয় আর একটু হলেই সে খুব লজ্জাকর কিছু করে বসতো। রায়ানের হাতে তার নিজের হাতের উপস্থিতি বুঝতেই তার হৃদয় অস্থিরভাবে ধকধক করতে শুরু করল আর রায়ানের দৃষ্টিতে সে অনুভব করল তার আবেগের গভীরতা।
মিরায়া কিছু বলতে পারছে না সম্পূর্ণ সময়টা যেন তার জন্য থেমে গেছে- মনে মনে- “এটা আমি কি করতে যাচ্ছিলাম। কেন? কেন আমি সামলাতে পারছি না নিজেকে! এই মানুষটার মাঝে এমন কি আছে যার জন্য আমি বারবার অক্ষম হচ্ছি!”
রায়ান ভারী নিঃশ্বাস ছাড়ছে যেন নিজেকে কন্ট্রোল করার এক অবাধ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে পারছে না। রায়ান মিরায়া হাত আরো শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো বুকের সাথে মিশিয়ে।
মিরায়া রায়ানের হঠাৎ টানাতে আছড়ে পড়ল রায়ানের বুক। রায়ান মিরায়ার মুখে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে আদুরে গলায় বলল –
“হার্ট-বার্ড, ডোন্ট গো ছো ফার। আমি রেস্টুরেন্ট বুক করেছি হোটেল না। টেবিল চেয়ার ছাড়া এখানে কিছু নেই। খাট ছাড়া তোমার কষ্ট হবে। প্রথম প্রনয়ে আমি ডিসকমফোর্ট চাই না। তুমি আর এগোলে আমার দ্বারা কন্ট্রোল হবে না।”
রায়ানের কথায় মিরায়ার বুকে হঠাৎ দোলা বয়ে গেল। সে প্রতিটা শব্দ শুনতে পেল তবে অর্থের গভীরতা বুঝার সযময় হয়ে উঠছে না।
রায়ান মিরায়ার কান থেকে সড়ে এসে মিরায়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল। একটা গভীর স্নেহে ভরা চুমু। যেন নিজের সব কামনা বাসনার বিসর্জন দিচ্ছে এই চুমুর মাধ্যমে। মিরায়া চুপচাপ নিজের চোখ জোরা বন্ধ করে নিলো । তার বলার মতো কোনো ভাষা গলায় আসছে না। নীরবতায় ভারি হয়ে উঠলো পরিবেশ টা।
মিরায়ার কপালে চুমু খেয়ে রায়ান মিরায়াকে এবার নিজের দিকে এনে জড়িয়ে ধরলো। একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলে মিরায়াকে । মিরায়া ছোট বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে রইল রায়ানের বুকে কোনো প্রকার সাড়াশব্দ নেই।
রায়ান মিরায়ার মাথায় ছোট চুমু দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বলল-
“আমাকে কিছু সময় দেও বেইবি আমি সব ঠিক করে নেব ।তোমার মনে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। আমি আজই আম্মুর সাথে কথা বলব। ইউ উইল বি মাইন, ওনলি মাইন। আর নিজেকেও একটু সময় নিয়ে তৈরি করো আমাকে সহ্য করার জন্য।”
মিরায়া রায়ানের বুকে থাকা অবস্থায় হালকা কেঁপে উঠলো। শরীরে অন্যরকম শিহরণ বইছে। মিরায়া নিজের মনে দ্বন্দ্বে ভুগছে – “উনি কি সত্যিই আমায় পছন্দ করেন? কেন করেন? এমন পাগলামিই বা কেন করছে আমার জন্য? আমি কেন নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। আমি কি ওনার প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছি? না না এটা ঠিক নয়। আমি উনাকে চাইতে পারি না এটা অন্যায়।”
মিরায়া রায়ানের বুক থেকে সড়ে আসে এবং হকচকিয়ে বলতে শুরু করে –
“না না…!”
তবে সে কথা বলে শেষ করতে পারল না নিজের কথা। এর মাঝেই হলঘরের নিস্তব্ধতার মাঝখানে হঠাৎ এক নরম সুর বাজতে শুরু করল। কোথা থেকে যেন পিয়ানোর মেলোডি ভেসে আসছে, যেন পুরো রেস্টুরেন্টটা তাদের দুজনের জন্য এক মঞ্চ হয়ে উঠেছে।
কয়েকজন স্যুট পরা ওয়েটার সারি করে এগিয়ে এলো। হাতে চকচকে ট্রে, সোনালি ধাতুর ঢাকনা দিয়ে ঢাকা সুগন্ধি ভরা খাবার। একে একে তারা টেবিল সাজিয়ে দিতে লাগল—সাদা সিরামিক প্লেটে ধোঁয়া ওঠা স্যুপ, ক্রিস্টাল বাটিতে ফলের সালাদ, সোনালি চামচকাঁটা, রূপালি ঝিলমিল ওয়াইনের গ্লাস। টেবিলের প্রতিটি কোণ যেন আলো আর সুবাসে ভরে উঠল।
রায়ান শান্তভাবে মিরায়ার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছিলেন। আর মিরায়া—তার চোখ বড় বড় হয়ে চারদিকে তাকাচ্ছিল।
এত রাজকীয় পরিবেশ, এত খাবার, এত আয়োজন—এক মুহূর্তের জন্য সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। নিজের না বলা কথাও গিলে ফেলল।
অবশেষে চাপা গলায় প্রশ্ন করল—
—“এ… এ সব কী? এত খাবার! আমরা দু’জন মিলে এগুলো খাব কিভাবে?”
রায়ান হালকা বাঁকা হাসি দিয়ে এক গ্লাস পানির দিকে হাত বাড়ালেন, গ্লাসটা হাতে তুলে নিলেন যেন সেটাও তার আত্মবিশ্বাসের অংশ। তারপর শান্ত গলায় উত্তর দিলেন—
—“যতটা খেতে পারবে, খাবে। বাকিটা থাকবে। শরীর এর যে অবস্থা- কোলে নিলে তো বুঝতেই পারি না কিছু নিয়েছি। ফিল না পেলে কোলে নিতে ভালো লাগে না বুঝেছ পাখি? তাই বেশি বেশি খাবে এখন থেকে। আমাকে শান্ত করতে অনেক এনার্জির প্রয়োজন হবে তোমার।”
মিরায়া হতবাক হয়ে গেল। তার ঠোঁট সামান্য কাঁপল, আবার থেমে গেল। মনের ভেতর আবার সেই প্রশ্ন—“কেন? আমি তো তাকে চিনি না… মাত্র দু’দিন হলো পরিচয়। কেউ কি এতটুকু সময়ে এতটা পাগল হতে পারে? আমি কি সত্যিই…”
হঠাৎ রায়ান চেয়ার থেকে সামান্য ঝুঁকে তার কানে ফিসফিস করে বললেন—
—“এমন অবাক চোখে তাকিও না, হৃদপাখি বুকে লাগে তো। খাবারগুলো তোমার জন্য, কিন্তু তুমি আমার জন্য—আমার চোখের খিদে মেটাতে। তোমাকে খেতে দেখাই হবে আমার ভোজ।”
মিরায়ার বুক কেঁপে উঠল। টেবিলের উপরে রাখা স্যুপের ধোঁয়া মিশে যেন তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। সে চোখ সরিয়ে নিতে চাইল, কিন্তু পারল না। রায়ানের দৃঢ় দৃষ্টি তাকে আটকে রাখল।
মিরায়া মৃদু গলায় ফিসফিস করে বলল—
—“আপনি লোকটা… সত্যিই পাগল।”
রায়ান মনে হয় অল্প আভাস পেল মিরায়ার বলা উক্তির । তারই উত্তরে মৃদু আওয়াজে এক গ্লাস পানি মিরায়ার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল-
“জাস্ট ফর ইউ, মাই ফাকিং লিটল হার্ট-বার্ড।”
রায়ান ঠোঁটে নির্লজ্জ আত্মবিশ্বাসী হাসি ফুটে উঠল। যমিরায়া আবারও বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।
টেবিলের উপরে খাবারের সারি শেষ হলো। একে একে ঢাকনা সরিয়ে দেওয়া মাত্রই চারদিকে ভেসে এল অচেনা সুবাসের ঢেউ। কখনো নরম মাখনের গন্ধ, কখনো ধোঁয়া ওঠা সিজলারের টান, আবার কোথাও লেবু-গোলাপ মিশ্রিত সালাদের ঘ্রাণ। চারপাশটা যেন রাজকীয় ভোজের মঞ্চ—অভিজাত, অভূতপূর্ব।
মিরায়া বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল খাবারের সারির দিকে। সোনালি আলোয় প্লেটগুলো চকচক করছে। তার কণ্ঠে কেঁপে ওঠা অবিশ্বাস—
—“এত খাবার! দু’জন মানুষে এগুলো কখনোই শেষ করা সম্ভব নয়। এত আয়োজনের মানে কী? প্রয়োজন ছিল না।”
রায়ান কোনো তাড়াহুড়ো করল না। সে সোজা হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল, ঠোঁটে সেই অনড়, আত্মবিশ্বাসী বাঁকা হাসি। তার চোখে সরল দৃঢ়তা—
—“প্রয়োজনের জন্য করিনি, হৃদপাখি। তোমার জন্য করেছি। প্রয়োজন বোঝে কাজ করবে এমন হিসেবি মানুষ, এই রায়ান চৌধুরী নয়।”
কথাগুলো ছুরি কেটে যাওয়ার মতো মিরায়ার ভেতরে ঢুকে গেল। সে চোখ নামিয়ে নিল, কিন্তু পরক্ষণেই রায়ান সামান্য ঝুঁকে তার দিকে এগিয়ে এল।
সামনের প্লেট থেকে চামচ তুলে নিয়ে মিরায়ার জন্য একটা সু্প বোলে সুপ ভরলো। ধোঁয়া ওঠা সেই চামচ আলতো করে মিরায়ার ঠোঁটের কাছে ধরল।
—“খাও।”
মিরায়া মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। তার বুকের ভেতর শ্বাস গুলিয়ে যাচ্ছে। এতজন স্টাফ হয়তো দূরে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ এই দৃশ্যটা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যক্তিগত মুহূর্ত।
সে ফিসফিস করে বলল—
—“আমি নিজে খেতে পারব।”
রায়ানের কণ্ঠ আরও নিচু, আরও স্থির, আরও কর্তৃত্বপূর্ণ হয়ে উঠল—
—“আমি জানি তুমি পারবে। কিন্তু আমি চাই না তুমি পারো, আজ তুমি আমার হাত থেকে খাও কেমন।”
মিরায়া নাসূচক মাথা নেড়ার রায়ানের কথায় বিরোধীতা করতে যাবে তখনি রায়ান মিরায়ার কাছে এসে দুষ্টু হাসি হেসে বলল-
“এখন তোমার মুখ থেকে বের হওয়া একটা শব্দ ইকুয়ালস টু আমার ঠোঁটের তোমার ঠোঁটে একটা স্পর্শ। নাউ ইউ ক্যান টক বেইবি। আই এম ওল রেডি।”
মিরায়া রায়ানের ধমকে চুপ হয়ে গেল। আর কিছু বলার সাহস করলো না। মিরায়া মনে মনে- “এই লোকের কোনো বিশ্বাস নেই যা বলেছে তা করতেই পারে ।”
রায়ানের ঠোঁটের কোণে নির্লজ্জ হাসি, চোখেমুখে অচঞ্চল দৃঢ়তা। যেন প্রতিবাদ করলে পরের মুহূর্তেই তাকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে ফেলবে এমন অনুভূতিতে ডুবে আছে।
মিরায়ার গাল লাল হয়ে উঠল। সে আর কিছু বলার চেষ্টা করল না। অনিচ্ছায় ঠোঁট খুলল, চামচের স্যুপ ঠোঁট ছুঁতেই তার বুকের ভেতর হঠাৎ এক অজানা শিহরণ বয়ে গেল।
রায়ান গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে।
বলল—
—“ভালো না? হাউ ইজ দ্যা টেইস্ট। ইজ ইট বেড। ইফ ইউ ডোন্ট লাইক ইট ট্রাই সামথিং এলস। এখানে অনেক অপশন আছে হৃদপাখি । যা ভালো লাগে সেটা খাও।”
মিরায়া এক ঝটকায় তার দিকে তাকাল—চোখে লজ্জা, রাগ আর অজানা টান একসাথে মিশে আছে।
তার মনে হলো—“এই লোক সত্যিই পাগল! কিন্তু কেন জানি না, এই পাগলামিই আমাকে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখছে।”
মিরায়া ব্যস্ত ভঙ্গিতে –
“খেয়ে শেষ তো করতে দেবেন! ভালো লাগবে না কেন টেইস্ট? মজা আছে ।”
রায়ানের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল সে একই চামচে বোল থেকে সুপ তুলতে তুলতে বলল-
“রিয়ালি? লেট মি ট্রাই টু।”
রায়ান চামচটা মুখে নিতে যাবে সে সময় মিরায়া বাধা দিয়ে বলে-
“এটা আমার এঁটো চামচ তো।”
রায়ান চামচের যে পাশে মিরায়া ঠোঁট ছুয়েছিল একই দিকে ঠোঁট ছুয়িয়ে সুপটুকু মুখে নিয়ে বলল-
“উমম্! ইট টেইস্টস সুইট। টু গুড।”
মিরায়া অবাক হয়ে-
“সুইট? ইটস সোল্টি এন্ড স্পাইসি। আপনার কি মুখের স্বাদ ও চলে গেছে?”
রায়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মিরায়ার দিকে আবার একই চামচে সুপ তুলে এগিয়ে দিয়ে বলল-
“সবই ঠিক আছে । ইট টেইস্টেড সুইট, মেইবি বিকজ অফ ইউর লিপস টাচড দ্যা স্পুন।”
মিরায়া অবাক দৃষ্টিতে রায়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ খুলে আবার খাবার মুখে নিল।
রায়ান আর কোনো প্রতিক্রিয়া দিল না। আবার চামচ ভরে এগিয়ে দিল, যেন মিরায়ার জন্য পুরো পৃথিবীর ধৈর্য নিয়ে বসে আছে।
হলঘরের ঝাড়বাতি, চারপাশের নরম আলো, খাবারের সুবাস, আর দু’জনের টানটান নিঃশ্বাস—সব মিলিয়ে পুরো পরিবেশটা যেন প্রেম আর উত্তেজনায় ঘন হয়ে উঠল।
বিকেল বেলা। সূর্যের আলো এখনও পুরোপুরি নেমে যায়নি, আকাশের কোনায় হালকা গোলাপী ছোঁয়া, আর শহরের রাস্তাগুলোতে হালকা সোনালি আভা ভেসে বেড়াচ্ছে। রিমি ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ করে একা বাড়ির পথে হাঁটছিল। পা ধীরে ধীরে রাস্তায় ছাপ ফেলছিল, আর বাতাসে মৃদু শীতলতা মেশা সূর্যের উষ্ণ আলো তাকে অজান্তে শান্তি দিচ্ছিল। কিন্তু রিমির মনে এক ধরনের অস্থিরতা ভর করেছে—মিরায়া এখন ঠিক কী অবস্থায় আছে, সে কি নিরাপদ, এমন চিন্তায় তার মনে ঘূর্ণিঝড় তুলছে।
সকাল থেকে ক্যাম্পাসে যা ঘটেছে তার প্রতিটি মুহূর্ত যেন রিমির চোখের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। রায়ান রাগের মাথায় মিরায়াকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়ার সেই দৃশ্য বারবার তার মনে ভেসে উঠছে। রিমির বুক ধুকধুক করছে, হৃৎপিণ্ড যেন থেমে থেমে চলছে। সে নিজেই বুঝতে পারছিল না, কোন পথে হাঁটবে—কেননা পথটা দীর্ঘ মনে হচ্ছিল, আর মনে হচ্ছে প্রতিটি ধাপ নিয়ে তার চিন্তাগুলো আরও শক্ত হয়ে উঠছে।
হঠাৎ, রিমির মাথায় আসে—তার কাছে তো রায়ানের ছোট ভাই, আর মিরায়ার বড় ভাই রুদ্রের নাম্বার আছে। যদি সে রুদ্রকে ফোন করে ঘটনাটা জানায়, হয়তো রুদ্র মিরায়াকে সাহায্য করতে পারবে।
সেই ধারণা মনে আসতেই রিমির ভেতর দ্বন্দ্বের ছোঁয়া জেগে ওঠে—কল করবে নাকি করবে না? কতক্ষণ সে পথ ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল, ঠিক তখনই তার চোখে পড়ে এক অবাক করা দৃশ্য।
রাস্তার মোড়ে, রিমির চোখে পড়ে একটি কালো গাড়ি। বিকেলের আলোয় গাড়ির চকচকে কালো পেইন্ট যেন সোনালি আলোকে প্রতিফলিত করছে। গাড়িটা বেশ চেনা চেনা লাগছে। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষ। তার কালো শার্টে সূর্যের আলো একটু ঝলসে উঠছে, আর হাতের শার্ট ভাঁজ করে উপরে তুলেছে, যেন সে মৃদু বাতাসের দিকে চোখ রাখছে। সে ফোন হাতে ধরে সামান্য এগিয়ে গেল, চোখে এক অদ্ভুত একাগ্রতা।
রিমির চোখে মুহূর্তের জন্য জ্বালাময়ী বিস্ময়—তার মনে হয়, এই মানুষটির মুখমণ্ডল আর ভঙ্গি পরিচিত। ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারে, গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো এই সুদর্শন পুরুষই রুদ্র। রুদ্রের কণ্ঠ বা ভঙ্গি তার আগের স্মৃতির সাথে মেলায়, এবং রিমির মনে এক অদ্ভুত স্বস্তি আসে।
রাস্তায় বাতাস হালকা দোল খাচ্ছে। গাছের পাতাগুলো বাতাসে হালকা নরম শব্দ করছে, আর দূরে কোথাও ছোট্ট পাখি নিজের মৃদু ডাক শোনাচ্ছে। রিমির চারপাশের সবকিছুই যেন স্থির—শুধু সে আর রুদ্র। সেই স্থিরতায়ও যেন বিকেলের আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। রাস্তায় পড়ে থাকা ছায়াগুলো আর গাড়ির চকচকে পেইন্ট মিশে এক নিখুঁত রঙিন পরিবেশ তৈরি করেছে।
রিমি ধীরে ধীরে তার ফোন হাতে নিয়ে এগোচ্ছে, রুদ্রর উপস্থিতি রিমিকে মনে করিয়ে দেয় যে, এই মুহূর্তেই সে রুদ্রের কাছে মিরায়ার খোঁজ জানাতে পারবে। হৃদয় ব্যাকুল, মনে অস্থিরতা, কিন্তু চোখে রুদ্রের উপস্থিতি এক অদ্ভুত নিরাপত্তার ছোঁয়া এনে দেয়।
গাড়ির পাশে রুদ্রের হাতের ভঙ্গি, মাথার হালকা নড়াচড়া, আর চোখে তার নিঃশ্বাসের ছাপ—সবকিছুই রিমির মনে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। রিমির মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, কিন্তু সঙ্গে রয়েছে একটুকু তীব্র উত্তেজনা—যা তার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজনকে আরও জোরালো করে তোলে।
রিমি ধীরে ধীরে রুদ্রের দিকে এগিয়ে গেল। বিকেলের নরম আলো তাদের দুজনের চেহারায় মৃদু ছায়া ফেলছে। বাতাসে হালকা শীতলতা, গাছের পাতা আর দূরের পাখির ডাক—সবই যেন এই মুহূর্তকে শান্ত, কিন্তু একদিকে তীব্র করে তুলছে।
“রুদ্র,” রিমি স্বাভাবিক স্বরে বলল,
তার চোখে লুকানো চিন্তাভাবনা আর অস্থিরতা রুদ্ধশ্বাসভাবে ফুটে উঠছে।
রুদ্র সামান্য হেসে ফোনের বদলে চোখের দিকে তাকাল, হাতের ভঙ্গি একটু আরামদায়ক করে নিল। রিমিকে হঠাৎ সামনে দেখে সে অবাক হলো। এক প্রকার হকচকিয়ে বলল-
“রিমি আপনি ঠিক আছেন? সব ঠিক তো?” তার স্বর শিথিল, কিন্তু চোখে সতর্কতা মিশে আছে।
“হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। আপনি এখানে?” রিমি উত্তর দিল, ভয় বা অস্থিরতার কোনো ছাপ রাখল না। ধীরে ধীরে সে রুদ্রের সঙ্গে কথা বাড়িয়ে নিয়ে গেল—
রুদ্র-” এখানে আসা শুধু আপনি সম্পূর্ণ ভাবে ঠিক আছেন কিনা নিশ্চিত হতে। আপনার ভাই কোনো সমস্যা করে নি সেটা দেখতে।”
রিমি খানিকটা বিব্রত হলো। সে একটু মাথা নিচু করে বলল-
“আমি খুব দুঃখিত কালকের ঘটনায় জন্য । আসলে এমন কিছু হবে আমার ধারনা ছিল না তাই আমি আপনাকে কাল চলে যেতে বলছিলাম। আই এম ছো সরি।”
রুদ্র -“এভাবে বলবেন না প্লিজ। আপনার এখানে কোনো দোষ নেই । আপনার ভাইয়ের খারাপ ব্যবহারের জন্য আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন।”
এর পর স্বাভাবিক ভাবেই কথা এগোলো- সাধারণ ভার্সিটি লাইফ নিয়ে। কথোপকথন চলার সঙ্গে সঙ্গে রিমির মন কিছুটা শান্তি পেল।
কিন্তু সুযোগ পেয়ে, রিমি হালকা করে রুদ্রকে সেই দুপুরের ঘটনার কথা বলল—যে ঘটনা মিরায়া এবং রায়ানের মধ্যে ঘটেছিল। রিমি প্রথমে কিছুটা দ্বিধা করছিল, কিন্তু তারপর এক মুহূর্তে সব খুলে বলল—কীভাবে রায়ান রাগের মাথায় মিরায়াকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়, কেমন করে মিরায়া অবাক হয়ে ঘটনাটি সামলাচ্ছিল।
রুদ্রের চোখ বড় হয়ে গেল, মুখমণ্ডলে বিস্ময়ের ছাপ। তার হাত যেন মুহূর্তের জন্য থমকে গেল, আর স্বরটা একটু উচু হয়ে বলল—“কি? আপনি বলছেন… রায়ান ভাইয়া এমন করেছে? ভাইয়া কি সত্যিই এমন করেছে?”
রিমি শান্তভাবে মাথা নাড়ালো, কিন্তু চোখে একটি অদ্ভুত সতর্কতা। “হ্যাঁ, আমি সাথেই ছিলাম। সত্যিই এমন হয়েছে। আর মিরা… ও খুব ভয় পেয়েছিল।”
রুদ্র ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে নিঃশ্বাস ফেলে। বিকেলের হালকা আলো তার মুখে প্রতিফলিত হচ্ছে, চোখে মিশ্র অনুভূতি—আশ্চর্য, চিন্তিত, আর কিছুটা রেগে। সে নিজেকে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে, কিন্তু রিমির কণ্ঠের সরলতা ও সততার কারণে অবস্থা আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
“ঠিক আছে,” রুদ্র শেষে বলল, ভয় আর চিন্তাভাবনা মিশ্রিত স্বরে, “আমি দেখছি আপনি ভাববেন না। কিন্তু… রায়ান ভাইয়া এতটা রাগ ?”
রিমি কেবল হালকা করে মাথা নেড়ে উত্তর দিল—“সত্যিই রাগের মাথায়… কিন্তু আমি নিশ্চিত, সে নিজের মতো করে মিরার প্রতি যত্ন দেখাচ্ছেন।”
রুদ্র কিছুটা চুপ থেকে রিমিকে এক দীর্ঘ নীরব দৃষ্টিতে দেখল। বিকেলের আলোতে তার চোখে ভাবনার ছাপ, কিন্তু সেই সঙ্গে রয়েছে এক অদ্ভুত শিথিলতা—মনে হচ্ছে, রিমির কথার কারণে তার ধ্যান আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
বাতাস হালকা দোল খাচ্ছে, গাছের পাতা ধীরে ধীরে দুলছে, দূরের পাখির ডাক যেন তাদের নীরবতা আর বিস্ময়কে আরও গভীর করছে। রিমি ও রুদ্র দুজনই বুঝতে পারছে, এই বিকেলের আলো শুধু তাদের মধ্যে কথা বলার সুযোগই দেয়নি—একটি নতুন আবহ তৈরি করেছে, যেখানে সত্যি ঘটনা, বিস্ময় এবং অপেক্ষার মিশ্রণ স্পষ্ট।
রিমি রুদ্রের পাশে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল। বিকেলের হালকা সোনালি আলো তাদের কাধে পড়ছে, রাস্তায় পড়া ছায়াগুলো যেন তাদের সঙ্গে খেলছে। গাছের পাতার মধ্যে হালকা হাওয়া বইছে, যা রিমির চুলের কিছুকে অদ্ভুতভাবে নড়াচড়া করছে।
“রুদ্র,” রিমি ধীরে ধীরে শুরু করল, “আমি… শুধু আপনাকে সবটা জানালাম মিরার জন্য টেনশন হচ্ছিল তাই। দুপুরে যা হয়েছে, সেটা… মিরার জন্য খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল। রায়ান ভাইয়া—সে রাগে ভরে—মিরাকে ক্যাম্পাস থেকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিল। কি হলো কিছুই বুঝার সাধ্য ছিল না আমার।”
রিমি চোখে সতর্কতার ছাপ দিয়ে বলল, “না, রুদ্র। ভাইয়া ক্ষতি করবে না মিরার তা আমি জানি। কিন্তু… মিরা নিজের জেদ ধরে রাখবে।”
রুদ্র একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। বাতাস হালকা দুলছে, রাস্তায় পড়া ছায়া তাদের চলাচলকে আরও নাটকীয় করে তুলছে। তার চোখে অদ্ভুত মিলন—বিস্ময়, চিন্তা আর কিছুটা রাগের মিশ্রণ।
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ২০
“ঠিক আছে,” রুদ্র শেষমেশ বলল,
রিমি হালকা হেসে মাথা নেড়ে উত্তর দিল।
-“তবে আপনি এখন যান। দেখুন সামলাতে পারেন কিনা ।”
রুদ্র তার চোখে গভীর ভাবনা নিয়ে রিমির দিকে তাকাল। বিকেলের হালকা আলো তার মুখে প্রতিফলিত হচ্ছে, আর সেই মুহূর্তে যেন সবকিছু স্থির। রাস্তার দিক থেকে আসা দূরের পাখির ডাক, হাওয়ার নরম স্পর্শ, আর গাছের পাতার স্নিগ্ধ দোল—সবই যেন তাদের কথোপকথনের ভার এবং ভাবমূর্তিকে আরও গভীর করছে।
রিমি আর রুদ্র দুজনেই অনুভব করল, বিকেলটা শুধু আলোয় নয়—অভিজ্ঞতা, চিন্তা আর আবেগের আলোয়ও ভরা।
রেস্টুরেন্ট..