আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ২৮
অরাত্রিকা রহমান
১২টায়~
দুপুর ঠিক বারোটায় ছুটির ঘন্টা বাজতেই সারা কলেজ যেন একসাথে জেগে উঠল। করিডোরগুলো হঠাৎ গমগম করতে শুরু করল—পায়ের শব্দ, ছেলেমেয়েদের হাসাহাসি, গল্পগুজব। রোদের আলো খোলা জানালা দিয়ে ঢুকে চকচক করে উঠছিল সাদা দেওয়ালগুলো।
সবাই মেন গেটের দিকে এগোচ্ছে, কেউ দল বেঁধে হাসাহাসি করছে, কেউবা একা হেডফোন কানে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে। সেই ভিড়ের মাঝখানেই সোরায়া নিজের ক্লাসরুম থেকে বের হলো। সোরায়া জুঁইয়ের হাত ধরে আছে। তবে সোরায়ার চোখে কেমন যেন অস্থিরতা, একরকম অচেনা তাড়াহুড়ো। জুঁইয়ের হাত শক্ত করে ধরে সোজা চলে গেল অফিস রুমের সামনে।
জুঁই বিরক্ত ও ভয় মিশ্রিত কন্ঠে-
-“কিরে ছুটি হয়েছে বাড়ি যাবো। এখানে কেন আনলি তুই। অফিস রুমের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে বকা দেবে দপ্তরি মামা।”
সোরায়া জুঁইয়ের কথায় পাত্তা দিয়ে-
-“উফ্! চুপ থাকতে পারিস না একটু নাকি। দাঁড়া এখানে আমার কাজ আছে ওইটা করে তবেই বাড়ি যাবো।”
জুঁই- “তোর কাজ তুই কর না, আমি কি কিছু বলেছি? মাঝখানে আমাকে টানাটানি করছিস কেন?”
সোরায়া হেঁসে জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“কারণ, তুই আমার জান। তোকে ছাড়া একা সাহস পাই না।”
কথাটা বলে হাওয়াতে শুকনো চুমু দিল জুঁইয়ের উদ্দেশ্যে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অফিস রুম তখন প্রায় ফাঁকা, কেবল মাহির নিজের টেবিলের সামনে বসে ফাইল গোছাচ্ছিল। চোখ মনোযোগী, কলমটা একবার গলায় রেখে আবার নামিয়ে কাগজের উপর নামিয়ে কি যেন আঁকিবুকি করছিল। টেবিলের ওপর সারি সারি খাতা, নোটিশ ফাইল, আর পাশে রাখা পানির বোতল—সব মিলিয়ে দৃশ্যটা একেবারে পরিপাটি।
সোরায়া অফিস রুমের দরজার কাঁচের ভেতর দিয়ে তাকিয়ে রইল। তার দৃষ্টি অদ্ভুতভাবে আটকে গেল মাহিরের অঙ্গ-সঞ্চালনে—কলম ধরার ভঙ্গি, ফাইল বন্ধ করে রাখা, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের স্ট্র্যাপ ঠিক করা। যেন প্রতিটি ক্ষুদ্র আন্দোলন তার চোখে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
শেষমেশ মাহির সব কাগজপত্র একসাথে গুছিয়ে রেখে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দরজার দিকে এগোল। দরজা ঠেলে বাইরে বের হতেই দুপুরের আলো তার মুখে এসে পড়ল। সেই মুহূর্তে সোরায়া যেন কোনো দ্বিধা না করে জুঁইয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
অপ্রস্তুত মাহির প্রথমে সোরায়াকে এত কাছে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তার চোখে এক মুহূর্তের চমক, শরীরের ভঙ্গিতে অস্বস্তি। যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু তার সামনে এসে হাজির হয়েছে। সে তাড়াহুড়ো করে দুই পা পিছিয়ে গেল, যেন হঠাৎ এতটা ঘনিষ্ঠ অবস্থান তাকে থমকে দিয়েছে।
সোরায়া নীরবে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে কোনো শব্দ নেই, কেবল দৃষ্টিটা স্থির—কঠিন অথচ গভীর। চারপাশের ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ের শব্দ ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে তাদের কানে। যেন মুহূর্তটা পুরো করিডোর থেকে কেটে নিয়ে শুধু তাদের দু’জনের মাঝেই থেমে গেছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জুঁই অস্বস্তিতে পড়ে রইল তবে তার অস্বস্তির কেউ ধার ধারছে না।
মাহির সোরায়াকে উদ্দেশ্যে করে-
“কিছু বলবে? কোনো সমস্যা তোমাদের?”
মাহির কথাটা বলে জুঁই সোরায়া দুজনের দিকেই পরপর তাকায়। সাথে সাথে জুঁই নাসূচক মাথা নাড়ে আর সোরায়া হ্যাঁসূচক। জুঁই আর মাহির দুজনই সোরায়ার দিকে আড়চোখে তাকায়।
মাহির-” কি সমস্যা বলো শুনি। পা বা কোমরে বেশি লেগেছে তখন?”
সোরায়া নিচু মাথা নেড়ে বলে- “উঁহু না লাগে নি। সরি স্যার, তখনকার জন্য। ”
মাহির হালকা হেঁসে বলে- “নেভার মাইন্ড। ইটস ওকে। বাড়ি যাও।”
এই বলে মাহির সোরায়ার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে সোরায়া আবার মাহিরে সামনে এসে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে একটানে বলতে থাকে-
“স্যার আমার আইডির নাম- ‘Jannatul Rahman Soraya’ আপনাকে কাল ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছি। হয়তো ব্যস্ত থাকার কারণে দেখেন নি, তাই বললাম। বাড়ি ফিরে রিকুয়েস্টটা একসেপ্ট করলে খুশি হব।আসসালামুয়ালাইকুম।”
নিজের কথা শেষ করে সোরায়া আর মাহিরের দিকে তাকালো না জুঁইয়ের হাত ধরে সোজা কলেজের গেট ধরে বের হয়ে গেল। এইদিকে মাহির সম্পূর্ণ অবাক অবস্থায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। মাথা কাজ করছে না সে কি শুনলো। মাহির নিজের জ্ঞানে ফিরে বিরবির করলো-
“স্কুল জীবনে কত ম্যাম কে ভালো লাগলো তবু কখনো সাহস হয় নি ‘কেমন আছেন?’ এইটাও জিজ্ঞেস করি আর এখনকার বাচ্চারা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন যে বলে গেল বাড়ি গিয়ে যদি রিকয়েস্ট টা একসেপ্ট না করি, তাহলে কি খুব স্ট্রিক্ট দেখাবে আমায়।”
মাহির নিজের মাথা চুলকে কলেজ থেকে বের হলো। নিজের গাড়িটা পার্কিং থেকে বের করে রায়ানের মেইন অফিস বিল্ডিং এর দিকে রওনা দিলো আজ তাদের একসাথে বাইক কিনতে যাওয়ার কথা।
রায়ানের অফিস রুমটা ছিল নিস্তব্ধ, কেবলমাত্র এসির হালকা গুঞ্জন আর কীবোর্ড চাপার শব্দ ভেসে আসছিল। ঘরের বিশাল কাচের জানালা দিয়ে দুপুরের আলো ঢুকে চকচক করে উঠছিল কাঁচের টেবিলের উপর রাখা কাগজপত্র আর স্টেইনলেস স্টিলের পেন হোল্ডার। দেয়ালে ঝোলানো ঘড়ির টিকটিক শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল।
রায়ান আরামদায়ক অফিস চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ আগেই আমেরিকার মেইন ব্রাঞ্চের ম্যানেজারদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স শেষ করেছে। মিটিং চলাকালীন তার চোখে মুখে ছিল মনোযোগ আর প্রফেশনাল দৃঢ়তা—প্রতিটি কথোপকথন, প্রতিটি নোট সে নিখুঁতভাবে ধরেছিল। এখন মিটিং শেষ হওয়ার পর আমেরিকা থেকে পাঠানো ইমেলগুলো চেক করছে। ইনবক্সে আসা একের পর এক ফাইল, রিপোর্ট আর প্রেজেন্টেশন সে মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিল। যেগুলো প্রয়োজনীয়, সেগুলো পিডিএফ আকারে আলাদা করে সেভ করল, আবার কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ মেইলের উত্তরও দিয়ে দিল।
অফিসের গম্ভীর পরিবেশের মাঝেই হঠাৎ সে হাত বাড়িয়ে টেবিলের কোণায় রাখা ফোনটা তুলে নিল। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কন্টাক্ট ওপেন করল, আঙুল থামল—“Mahir” এর নামের উপর। এক মুহূর্ত নিঃশ্বাস নিয়ে সে কল বাটন চাপল। যেন এখন বেশ এনার্জি দরকার।
অন্যদিকে মাহির তখন গাড়ি চালাচ্ছে। দুপুরের ব্যস্ত রাস্তায় ট্রাফিকের শব্দ, হর্নের আওয়াজ আর জানালার বাইরে ভেসে আসা রোদ মিশ্রিত বাতাসে গাড়ির ভেতরটা গরম হয়ে উঠেছে। মাহির এক হাত স্টিয়ারিং-এ রেখে অন্য হাত বাড়িয়ে ফোনটা ড্যাশবোর্ডের উপর থেকে তুলে নিল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল নাম—“Rayan”।
সেহেঁসে তাকাল, তারপর ইয়ারপিস কানেই ছিল, তাতে কানেক্ট বাটন চাপল।
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে রায়ানের গম্ভীর, দৃঢ় কণ্ঠস্বর ভেসে এলো—
“কোথায় তুই? কলেজ থেকে বের হোস নি? আই এম ডান উইথ মাই ওয়ার্ক।”
গাড়ি চালাতে চালাতে মাহিরের চোখ সামনের রাস্তায় স্থির, কণ্ঠে হালকা নিঃশ্বাস মেশানো শব্দ—
“ড্রাইভ করছি, রাস্তায় আছি। অনলি 5 মিনিটস। আই এম কামিং।”
রায়ান নিশ্চিত গলায় বলল-
“আমি নিচে আসছি। তাড়াতাড়ি আয়।”
মাহির- “ওকে।” বলে কলটা কেটে দ্রুত গাড়ি ছুটালো গন্তব্যে। রাস্তায় জ্যাম না থাকায় তাড়াতাড়ি পৌঁছেও গেল। গাড়ি বিশাল বড়ো বিল্ডিংটার সামনে দাড়াতেই রায়ান গাড়ির দরজা খুলে সামনের সিটে বসে বলল-
“দ্যাট ওয়াজ ফাস্ট। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে ড্রাইভ করলি?”
মাহির একটু আলাদা ভাবে নিয়ে বলল-
“স্টেয়ারিং আমার হাতে থাকলে গাড়ি উড়োজাহাজ হয়ে যায়। এইটা কোনো ব্যাপার হলো নাকি।”
রায়ান তুচ্ছ হেঁসে বলল-
“আমারই ভুল হয়েছে তোর ড্রাইভিং এর প্রশংসা করা। ভুলে গেছিলাম তুই যে নাটুকে বাজ।”
মাহিরও রায়ানের কথায় হাসে। রায়ান একটু পরই পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে বারবার মিরায়ার নাম্বারটা ডায়েল করায় জন্য আনছিল স্ক্রিনে তবে নিজের প্লেন সাকসেসফুল করার জন্যই আর ডায়েল করছে না। মন আর মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বতে পড়ে গেছে সে। মাহির রায়ানের এই হাস্যকর দিকটা খেয়াল করে শব্দ করে হেসে উঠলো।
রায়ান মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“কিরে হাসিস কেন?”
মাহির রায়ানের ফোনের দিকে ইশারা দিয়ে বলে-
“কার নাম্বার ওটা? বউয়ের?”
রায়ান ফোনটা উল্টো করে ফেলে বলে-
“প্রফেসর হয়ে তোর নিজেরই ম্যানার নাই, যে অন্যের ফোন দেখতে নাই। স্টুডেন্টদের কি শিক্ষা দিস তুই?”
মাহির একটু বিগড়ে-
“বড়ো বড়ো করে ‘হৃদপাখি’ লিখে পাশে আবার ঢং করে এটা রেড হার্ট দিয়ে বার বার ফোন ঘেটে এক নাম ডায়েলের জন্য সামনে এনলে যে কেউ খেয়াল করবে। আর এমন বারবার চেষ্টা করেও ডায়েল না করলে যে কেউ হাসবে। এর জন্য আলাদা ম্যানার শিখার প্রয়োজন পড়ে না।”
রায়ান রেগে গিয়ে বলল-
“আমি আমার বউয়ের নাম্বার ‘হৃদপাখি’ লিখে সেভ করবো না ‘হৃদপিন্ড’ লিখে সেভ করবো তাতে তোর কি । একশো টা রেড হার্ট লাগাবো অন্য রংয়ের ও লাগাবো তোর সমস্যা?”
মাহির ঠোঁট কামড়ে হাসলো-
“আমার কেন সমস্যা হবে।”
রায়ান এবার দাঁত কিরমির করে বলে-
“বুঝি তো জ্বলেছে তোর। আমার তো বউ আছে তাও আবার সুন্দরী তোর তো আর নাই।”
মাহির রায়ানের রাগ আরো বাড়াতে বলে-
“তোর বউ কেমন দেখিই তো নি। দেখা ভাবিকে দেখি।”
রায়ান মুখ বাঁকিয়ে বললো –
“হাহ্! তোকে আমি আমার বউকে কেন দেখাবো। বিয়ে করে নিজের বউ দেখ।”
মাহির- “কেন? আমি দেখলে কি তোর বউয়ের শরীরে ফোস্কা পড়বে নাকি?”
রায়ান-” হ্যাঁ, সেটাই। আর তোর বউ তোর বউ করিস কেন ভাবি হয় তোর ভাবি মায়ের সমান আম্মা ডাকবি আমার বউরে। বুঝছিস?”
মাহিরও একই সুরে বললো-
“যাহ্, ভাবি ই ঠিক আছে। তা ভাবি তো সুন্দরী তাই না? তুই তো এক দেখাতেই ফিদা। অনেক সুন্দর হয়তো , তাই না বল?”
রায়ানের সামনে যেন সেই বৃষ্টির দিনে ঝলক দেখা দিলো। রায়ান একটু হেঁসে বলল-
“হুম, অনেক অনেক বেশি সুন্দর। মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ, পরীর চেয়েও অনেক বেশি। তবে একটু বড়ো করা লাগবে বউটাকে। অনেক ছোটো, বাচ্চা মেয়ে।”
মাহির মনে মনে-
“ভার্সিটির ছাত্রী আবার বাচ্চা মেয়ে। হুহ্! যত্তসব নেকামি।”
মাহির মনের কথা মনেই রাখলো মুখে এলে গাড়ির ড্রাইভারকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরে মাহির আবার নিজের মতোই বলল-
“আচ্ছা ভাই, এইটা বল। ভাবি আর তার বোন মানে চড়ুই পাখি সেও তো তাহলে একই রকম সুন্দর তাই না?”
মাহিরের কথায় রায়ান বিরক্ত ড়য়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয়-
“হুম, চড়ুই পাখিও সুন্দর, আমার মিসেস এর লিটল ভার্শন।”
মাহির উৎসাহ নিয়ে বলল-
“বাহ্! তাহলে ওকেই দেখা আমাকে। আমার ভাবিকে দেখার ইচ্ছা নাই। ভাবিকে তুই দেখ। আমি চড়ুই পাখিতেই খুশি।”
রায়ান বিরক্তি নিয়ে তবে সিরিয়াসলি বলল-
“মাহির এই মজা আর ভালো লাগে না। বারবার চড়ুই পাখির দিকে নজর দিবি না। ও বাচ্চা মেয়ে। কেবল কলেজে উঠেছে, চঞ্চল স্বভাবের,দেখেও মনে হয় ছোট্ট একটা মেয়ে। দেখ ও আমার বোনের মতো ওরে নিয়ে বাজে কথা আমি সহ্য করবো না।”
মাহির ও একই সিরিয়াস কন্ঠে বলল-
“আরে আরে সেন্টি খাস কেন! আমি মজা করছি সেটা ঠিক তবে এমন না কোনো ইন্টারেস্ট নাই তোদের চড়ুই পাখির প্রতি। আচ্ছা চিল, সমস্যা নেই বড়ো হক তারপরই নাহয়..।”
রায়ান আবার রাগি গলায়-
“শালা তোরে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলেও দেখি লাভ হয় না। তোর হাঁটুর বয়সী হবে ও।”
মাহির হেঁসে বলল-
” নিজে দশ বছরের ছোট মেয়ে কে বিয়ে করে বসে আছে তার খবর নাই। অন্যের বেলায় এইজ গ্যাপ দেখে। শোন ভাই, এইজ ইস জাস্ট আ নাম্বার।”
রায়ান আর মাহির সাথে তর্ক যেতে চাইলো না চুপ করে মিরায়ার নাম্বার টাকে দেখতে লাগলো তার খুব ইচ্ছে করছে তার হৃপাখিকে কল করতে একটু দেখতে, একটু ছুঁয়ে দিতে। রায়ান মনের চাহিদার ভারে মাথায় হাত দেয়।
মাহির-“কলটা করতে কি যাচ্ছে তোর? থাকতে পারছিস না তো কল করে ফেললেই তো হয়।”
রায়ান হতাশায় -” না, কল করা যাবে না।”
মাহির-“ওমা তোর বউ। কল করা যাবে না কেন?”
রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহির কে মিরায়ার বিয়ের ব্যাপারে জানা, তাদের মধ্যে কার ভুল বুঝাবুঝি, হলে সিফ্ট করার জন্য জেদ সব কিছু খুলে বলে। মাহির রায়ানের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনার পর রায়ানের মুখের উপর সজোরে হাসতে থাকলো রায়ান চোখে আগুন নিয়ে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে তবে কিছু বলছেও না, করছেও না।
এইদিকে মাহিরের হাসি থামাবার নাম নেই সে হেসেই যাচ্ছে যেন রায়ানের এমন বিপাকে পড়া অবস্থা তাকে বেশ মজা দিচ্ছে।
মাহির রায়ানের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল-
“আহা রে! বেচারা আমার ভাইটা। যৌবনের তেজে বউ মানে না বলে আমেরিকায় চলে গিয়ে, এখন ২৭ বছরে অর্ধেক যৌবন শেষ করে দেশে ফিরে বউ চাইছে। আবার উপর দিয়ে বউ পাত্তা দিচ্ছে না তাকে- তার জন্যেই। বাহ্ বাহ্! জোস জোস। ভরপুর এন্টারটেইনমেন্টে ভরা কমেডি ফিল্ম।”
রায়ান মাহিরের কথাতে তুচ্ছ হেঁসে বলল-
“হেঁসে নে হেঁসে নে, এক মাঘে শীত যায় না। সময় আমারও আসবে। আমি রায়ান চৌধুরী তোকে বদ-দোয়া দিচ্ছি তুইও এমন ফেশাদে পড়বি একদিন আর আমি তোর জায়গায় থেকে এইভাবেই হাসবো। মিলিয়ে নিস আমার কথাটা।”
মাহির রায়ানের রাগের গভীরতা বুঝে আর ওই বদ-দোয়ার কথাটা মাথায় নিল না। মাহির রায়ানের মুড ঠিক করতে বলল-
“দাঁড়া ভাই তোর মুড ঠিক করতে আমি আমার ফেভারিট গানের প্লেলিস্ট থেকে কিছু গান বাজাই। এই বলে মাহির গাড়ির স্পিকার অন করতেই হঠাৎ একটা গান বেজে উঠে-
“আমি ফাইসা গেছি, আমি ফাইসা গেছি,
আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়।
ও আমি ফাইসা গেছি, ওওও আমি ফাইসা গেছি..
আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়।”
গানটা বাজতেই মাহির হড়বড় করতে শুরু করে গানটা পাল্টানোর জন্য আর রায়ান আরো রেগে মাহিরের দিকে তাকায়।
-“ওয়েট ওয়েট, এইটা ভুলে শুরু হইছে চেঞ্জ করছি ওয়েট।”
রায়ান নিজেকে শান্ত করে ধৈর্য ধরে। তার পর মাহির ওই গানটা বন্ধ করে গানটা চেঞ্জ করতে করতে বলল-
“এবার ভালো গান বাজবে দোস্ত।”
এরপরই আরেকটা গান বাজে-
“ও রে মনা….
যৌবনটা বৃথা গেল, চাইয়া দেখলি না রে,,
পাকর তোলা, রসের গোল্লা- খাইয়া দেখলি না…
আমার কাছে আইলে রে তোর ঠকা হবে না। গো…
আমার কাছে আইলে রে তোর ঠকা হবে না।”
রায়ান বাঁকা চোখে মাহিরের দিকে তাকাতেই দেখে মাহিরও আজব ভাবে তার দিকে তাকিয়ে গালি থেকে বাঁচার জন্য হাসছে।
মাহির -“সরি ভাই। অফ করে দেই আর গান শুনতে হবে না। সব গানের লিরিক্স বেশি রিলেটেবল হয়ে যাচ্ছে তোর সাথে।”
মাহির স্পিকার টা অফ করে দিল সাথে সাথে।
রায়ান ব্যঙ্গ করে জিজ্ঞেস করল-
“মাহির ভাই আমার, একটা কথা বল- তোর ফেভারিট সিঙ্গার কি নার্গিস?”
মাহির রায়ানের দিকে একটু হেঁসে তাকিয়ে হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ে। রায়ান সাথে সাথে মুখ গম্ভীর করে বলল-
“শালা লুচ্চা।”
মাহিরও গাড়ি চালানোর দিকে মন দিয়ে বলল-
“তোর চেয়ে কম। স্বভাবে স্বভাব না মিললে বন্ধুত্ব হয় না।”
তারপর তারা স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে বলতে বাইক শোরুমের উদ্দ্যেশ্য যেতে লাগলো।
দুপুর-২টার পর~
দুপুর প্রায় দুইটা পেরিয়ে গেছে। মিরায়া রিকশায় উঠে সোজা রওনা দিয়ে ছিল বিআরটিএ অফিসের দিকে। তার চোখেমুখে এক ধরনের দৃঢ়তা—আজকে তার রাইডিং এর প্র্যাকটিক্যাল টেস্ট।
রিকশা অফিস বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামল। নামতেই চারপাশে ভিড়ের শব্দ—কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র জমা দিচ্ছে, কেউ টেস্ট দিয়ে ফেরত আসছে। মিরায়া নিজের ব্যাগ ঠিক করে ভেতরে ঢুকল। অফিসের ভিতরে ঢুকতেই সে সরাসরি গেল রিসেপশন ডেস্কে।
রিসেপশনিস্ট মাঝবয়সী এক মহিলা, টেবিলের উপর ছড়ানো ফাইল আর কম্পিউটারের দিকে মনোযোগী ছিলেন। মিরায়া সামনে গিয়ে ভদ্রভাবে বলল,
— “আসসালামু আলাইকুম, আমাকে কল করে বলা হয়েছিল আজ প্র্যাকটিক্যাল টেস্ট দিতে আসতে। একটু চেক করে বলবেন কখন দিতে পারবো।”
রিসেপশনিস্ট মাথা তুলে হাসিমুখে তাকালেন,
— “ওহ আচ্ছা, আপনার নাম কী? সব ডকুমেন্টস সঙ্গে এনেছেন তো? আমাদের কাছে যে কাগজ গুলো এর আগে জমা দিয়েছেন তার সাথে মিলাতে হবে।”
মিরায়া ব্যাগ থেকে আইডি কার্ড, ফর্ম আর অন্য কাগজপত্র বের করে টেবিলের উপর রাখল। রিসেপশনিস্ট একে একে সবকিছু যাচাই করলেন। কম্পিউটারে ডেটা এন্ট্রি করে আবার মিরায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— “সব ঠিক আছে। এখন আপনাকে অন্যদের সাথে যেতে হবে। আগে কস্টিউম চেঞ্জ করতে হবে—বাইক রাইডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সেফটি ড্রেস পড়ে নেবেন।”
মিরায়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। রিসেপশনিস্ট পাশের একটি রুমের দিকে ইশারা করলেন যেখানে আরও কয়েকজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। তারা সবাই টেস্ট দেওয়ার অপেক্ষায়।
মিরায়া তাদের সাথে গিয়ে রুমে প্রবেশ করল। ভেতরে হেলমেট, গ্লাভস, সুরক্ষিত জ্যাকেট আর জিন্স টাইপের ড্রেস দেওয়া হচ্ছিল। সে তাড়াতাড়ি নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে টেস্টের উপযোগী ড্রেস পরে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হেলমেট ঠিক করল, গ্লাভস পড়ে হাত শক্ত করে মুঠো বানাল।
বাইরে বের হতেই প্রশিক্ষক তাদেরকে মাঠের দিকে নিয়ে গেলেন যেখানে প্র্যাকটিক্যাল টেস্টের জন্য বাইকগুলো সারি দিয়ে সাজানো। হালকা রোদ, চারপাশে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের কোলাহল, আর মিরায়ার মুখে তখন একরকম আত্মবিশ্বাসের ছাপ।
আজকের টেস্ট তার জন্য শুধু একটি পরীক্ষা নয়, বরং নিজের স্বপ্নের দিকে আরেকটি দৃঢ় পদক্ষেপ। এই লাইসেন্স টা তার রেসে একজন প্রকৃত প্রতিযোগী হিসেবে পরিচিতি দেবে।
বিআরটিএ’র প্র্যাকটিক্যাল টেস্টের মাঠে বাইকগুলো সারি দিয়ে রাখা। চারপাশে ভিড় জমেছে—পরীক্ষক, পরীক্ষার্থী আর কৌতূহলী দর্শক। বেশিরভাগই ছেলেরা, কেউ দাঁড়িয়ে হাত গুটিয়ে দেখছে, কেউবা হেসে হেসে চাপা মন্তব্য করছে।
মিরায়া যখন হেলমেট পরে বাইকের দিকে এগোল, অনেকের চোখে একরকম সংশয় ভেসে উঠল। কেউ ঠোঁট চেপে বলল,
— “মেয়েটা পারবে তো?”
পরীক্ষক গম্ভীর মুখে নাম ডেকে উঠলেন—
— “মিরায়া রহমান, শুরু করুন।”
সে বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বাইকে উঠে বসল। এক ঝটকায় হ্যান্ডেল ধরে গিয়ার পরিবর্তন করল, পা দিয়ে স্ট্যান্ড তুলেই ইঞ্জিন স্টার্ট দিল। ইঞ্জিনের গর্জন যেন তার বুকের ভেতর জমে থাকা উত্তেজনাকে জাগিয়ে তুলল বহুদিন পর নিজ স্বত্তাকে ফিরে পেতে এমন মনে হলো।
প্রথমেই সোজা ট্র্যাক—কিন্তু মিরায়া একেবারে নিখুঁত গতিতে বাইক চালাতে লাগল। তার চোখ সামনে স্থির, শরীরের ভঙ্গিতে আত্মবিশ্বাস। গতি বাড়িয়ে যখন প্রথম বাঁক এলো, সে একদম পেশাদারের মতো বাইককে হালকা কাত করে ঘুরিয়ে নিল—যেন বাইক আর চালক একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে।
দর্শকদের মধ্যে ফিসফিস শুরু হলো। কেউ বিস্ময়ে তাকাল, কেউ আবার চুপ করে গেল।
এরপর এল স্লো রাইড টেস্ট, যেখানে সাধারণত অনেকেই হোঁচট খায়। মিরায়া বাইক একেবারে ধীর গতিতে চালাতে লাগল, যেন সময় থেমে গেছে। প্রতিটি কনের মাঝ দিয়ে যখন সে এগোল, তার হাতের মুঠো এত দৃঢ় আর নিখুঁত ছিল যে বাইক একবারও দুলল না। পরীক্ষক বিস্ময়ে মাথা নাড়লেন।
শেষ অংশে গতি বাড়ানোর ট্র্যাক। মিরায়া বাইককে এক ধাক্কায় দ্রুত চালাল, বাতাস তার চুলের পাশে আছড়ে পড়ল। সেই মুহূর্তে তার চোখে অদ্ভুত এক আলো—অনেকদিন পর বাইক চালানোর যে স্বাধীনতা, সেই হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি ফিরে এল।
তার বুকের ভেতর একরকম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল—যেন সে আর বাইক মিলে একাকার হয়ে গেছে। গতির সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হচ্ছিল, সে কেবল ট্র্যাকেই নয়, বরং নিজের ভেতরের বাঁধাগুলোও ভেঙে বেরিয়ে আসছে।
ফিনিশিং লাইন পার হতেই সে বাইক ধীরে থামাল। হেলমেট খুলে মুখ তুলতেই কপালে ঘাম চিকচিক করছে, কিন্তু ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি। চারপাশে দাঁড়ানো কয়েকজন ছেলে হঠাৎ করেই হাততালি দিয়ে উঠল—
— “ওফ, দারুণ চালায়! ছেলেদের থেকেও স্মার্ট।”
পরীক্ষক গম্ভীর ভঙ্গি সামলে নোটপ্যাড বন্ধ করে মুচকি হেসে বললেন,
— “একেবারে ফার্স্ট ক্লাস পারফরম্যান্স। তুমি শুধু পাশ করোনি, সবার নজর কেড়েছ।”
মিরায়া তখন গভীর শ্বাস নিয়ে বলল—
“উফ্! খোদা এবার লাইসেন্স টা করিয়ে দেও শুধু।”
মিরায়ার চোখে এখনও উত্তেজনার ঝলক, বুকের ভেতর ধাকধাক করছে। পরীক্ষক সামনের দিকে এগিয়ে এসে লেজার পয়েন্টার দিয়ে কিছু কাগজের দিকে দেখালেন।
— “দারুণ, মিরায়া। আজকের পারফরম্যান্স সত্যিই নজর কেড়েছে। লাইসেন্স প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।”
মিরায়া ভিড় কাটিয়ে এগিয়ে দাঁড়াল, চোখে এক ধরনের অনুরোধের ঝিলিক।
— “স্যার, আমি এতদিন পরে এসেছি বাড়িতে একটু চাপ বুঝতেই তো পারছেন মেয়ে হয়ে বাইক চালাই। আমি এখানে বারবার আসতে পারব না। লাইসেন্সটা কি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যায়?”
প্রশিক্ষক চেয়ারে বসে নোটপ্যাড ঘেঁষে হালকা হাসি দিলেন,
— “হ্যাঁ, সম্ভব। তবে একবারে বাসায় পৌঁছে দিতে আমাদের ছোটখাটো সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। সেটা দেওয়া হলে আমরা লাইসেন্স হোম ডেলিভারি করতে পারি।”
মিরায়া কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর মাথা নাড়ল,
— “ঠিক আছে, আমি রাজি। যত দ্রুত সম্ভব, এক সপ্তাহের মধ্যে পৌঁছে দিলে ভালো হয়।”
প্রশিক্ষক মোবাইলে কিছু এন্ট্রি করলেন,
— “দেখো, এক সপ্তাহের মধ্যে হবে কি না বলা মুশকিল আগেও হয়ে যেতে পারে , আবার দেরিও হতে পারে। তবে তোমার যা রেকর্ড সেই অনুযায়ী তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়ার কথা। কাজ শেষ হলে প্যাকেজ হয়ে তোমার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। তোমাকে আর এখানে আসতে হবে না।”
মিরায়া চোখে স্বস্তির হাসি ফুটিয়ে বলল,
— “ধন্যবাদ, স্যার। এত দ্রুত ব্যবস্থা করা যাবে সেটা ভাবতেও পারিনি।”
প্রশিক্ষক হালকা মাথা নাড়লেন,
— “বাইক চালানোতে দক্ষতা দেখিয়েছো, তাই আমরা নিশ্চিত করেছি যে তুমি নিজে হাতে এটা পেতে সক্ষম। সার্ভিস চার্জটা তোমার জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগ মাত্র।”
মিরায়া হাসিমুখে হালকা ব্যাগ টানল, বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবল—“এবার শুধু অপেক্ষা, তার পর আমি আমার স্বাধীনতা পেয়ে যাবো?”
প্র্যাকটিক্যাল টেস্ট শেষ হতেই মিরায়া বাইকটি ঠিক করে স্ট্যান্ডে রাখল। চেঞ্জিং রুমে গিয়ে কপালে ঘামে লেপটে থাকা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে নিল, গ্লাভস আর কালো লেদার জ্যাকেট টা খুলে আবার নিজের লাল কুর্তি পরল। তার চোখে হালকা প্রশান্তি আর ঠোঁটে সামান্য হাসি—আজকের দিনটা তার জন্য সফলতা আর স্বস্তির দিন।
অফিসের বাইরে রিকশা ভাড়া করে মিরায়া আবার ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিল। সে ভেবে ছিল হয়তো সময় লাগবে তবে ৩০ মিনিট এর মধেই সব কাজ শেষ হয়েছে বলে আবার ক্যাম্পাসে যাচ্ছে একবারে সব নোটস রিমির থেকে নিয়ে বাড়ি চলে যাবে।
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ২৭
রিকশা চালক সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে রিকশা চালাচ্ছেন, মিরায়া বসে হালকা বাতাসে চুল উড়তে দেওয়া অবস্থায় মানসিকভাবে শান্তি অনুভব করছিল। চারপাশে শহরের দুপুরের রোদ, রাস্তার কোলাহল, চলন্ত মানুষ—সব মিলিয়ে তার মনে একটা স্বাভাবিক, শান্তি ভরা পরিবেশ তৈরি করেছিল।
রিকশার ধীর গতিতে চলতে চলতে মিরায়া ভাবল, আজকের দিনটা শুধু লাইসেন্সের পরীক্ষা নয়, বরং তার নিজের আত্মবিশ্বাস আর স্বাধীনতার একটি ছোট্ট বিজয়।