আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩১

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩১
অরাত্রিকা রহমান

রুদ্র রিমির হাত ধরে একসাথে বাইরে আসার পর সোজা গাড়িটা বের করে রিমির বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সন্ধ্যার পরিবেশটা যেন একদম মনভুলানো। রুদ্র কিছুটা শান্ত ভঙ্গিতে গাড়ি চালাচ্ছে তবু কপালে চিন্তার রেখা দৃশ্যমান। অন্যদিকে রিমির মনে এখনো মিরায়াকে রুদ্রর ভাবি সম্বোধন করার বিষয়টা ঘুরছে।
রিমির মনে হাজারো প্রশ্ন- “মিরার বিয়ে কবে হলো? আমাকে বলেনি কেন? আবার রুদ্র বললেন মিরা নিজেও জানে না। এটা কিভাবে সম্ভব? উফ্!”

অস্থিরতায় রিমির মুখদিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হতেই রুদ্র চিন্তিত হয়ে রিমিকে প্রশ্ন করে-
“রিমি আপনার কি খারাপ লাগছে? পানি খাবেন?”
রিমি একটু উৎসুক নজরে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে রইল। রুদ্র রিমির দিকে পানির বোতল টা এগিয়ে দিল আর রিমিও পানির বোতলটা নিয়ে একটু পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিল। সে পানির বোতলটা গাড়ির ডেস্কে রেখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো-“আমার কি জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে তাদের পারিবারিক জীবন নিয়ে?”
রুদ্র রিমিকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র নিজেই বলে উঠলো-“রিমি আপনার কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন আপনি যেমন আমার প্রশ্নের উত্তর নির্দ্বিধায় দিয়েছেন আমিও তাই করার চেষ্টা করবো।”
রিমি একটু চিন্তা করার পর রুদ্র কে জিজ্ঞেস করল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আচ্ছা মিরা কি সত্যিই বিবাহিত?”
রুদ্র চোখ শান্ত ও সামনে স্থির রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো –
“হ্যাঁ।”
রিমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে পুনরায় জিজ্ঞেস করল-
“কার সাথে বিয়ে হয়েছে ওর?”
রুদ্র আবার স্বাভাবিক ভাবেই বলল-
“আমার ভাইয়া ‘রায়ান চৌধুরীর’ সাথে।”
রিমি একটু শান্ত হয়ে গাড়ির সিটে হেলে বলল-

“আমার বোনোর মতো বান্ধবী বিবাহিত অথচ আমাকেই বলে নি। কেন লুকালো মিরা আমার থেকে এই কথা?”
রুদ্র রিমিকে শান্ত করতে আর মিরায়াকে ভুল বুঝার থেকে ফিরাতে বলল-
“আপনি প্লিজ মিরাকে, আই মিন আমার ভাবিকে ভুল বুঝবেন না। আসলে এই সম্পর্কে মিরা ভাবি কিছু জানে না। এমনকি তার বিবাহিত হওয়ার ব্যাপারটাও তার অজানা।”
রিমি আশ্চর্য হয়ে আবার গাড়ির সিট থেকে উঠে বসে বলল-
“কিহ্! বিয়ে হয়েছে অথচ বউ জানে না! এটা কি করে সম্ভব?”
রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিমিকে ব্যাখ্যা দেওয়া শুরু করে –

“আসলে কিভাবে বুঝালে বুঝানো সহজ হবে আমার জানা নেই তবে চেষ্টা করি। আমার ভাইয়া আর ভাবির বিয়ে হয়েছে তাদের ছোটবেলাতেই তখন বিয়ের ব্যাপারে দুজনের কেউ জানতো না। আমার ভাইয়া প্রথমে জানতে পেরে তাকে না জানিয়ে বিয়ে দেওয়ার নিয়ে রাগারাগী করে আমেরিকায় চলে যায়।”
রিমি হা করে রুদ্রর কথা শুনে যাচ্ছে গলায় কোনো আওয়াজ আসছে না তার। তার মনে হচ্ছে সে কোনো মুভির কাহিনী শুনছে।
রুদ্র তার কথা সামনে আগাতে থাকে-

“এই ব্যাপারে ভাবিকে কিছু জানানো হয়নি, ভাইয়া ওকে অস্বীকার করেছিল দশ বছর আগে তাই। আমাদের আম্মু আব্বু দুজনই ভাবিকে খুব পছন্দ করেন তাই ভাবির বাবা-মা না থাকার কারণে আম্মু আব্বু ভাবিকে মেয়ের মতো আদর করেন আর ভাবিও আম্মু আব্বু কে মামণি আর বাবা ডাকে ছোটবেলা থেকেই। এভাবেই সম্পর্কে আমার ভাবি হলেও ওকে আমি আমার ছোট বোনের মতো দেখি। আর ভাবিও আমাকে বড় ভাইয়ের মতো দেখে।”
রুদ্র নিজের মতো সব কথা বলে একবার হাফ ছেড়ে রিমির দিকে তাকাতেই দেখলো রিমি হা হয়ে আছে। যেন এইমাত্র শুনা কথা গুলো তার বোঝার ঊর্ধ্বে ছিল। রিমি একটু ঢোঁক গিলে নিল সাথে সাথে রুদ্রর কথা গুলো ও হজম করে নিল।
রিমি একটু ঝুঁকে পরে রুদ্র কে বলল-

“আমি কি আর একটা প্রশ্ন করতে পারি?”
রুদ্র একটু হাসলো রিমি প্রতিক্রিয়া দেখে-
“জ্বি বলুন, কি প্রশ্ন?”
রিমি একটু আমতা আমতা করে বলল-
“ভাইয়া যদি মিরাকে অস্বীকারই করে থাকেন তাহলে এখন এমন কেন আচরণ করছেন? না মানে, এই কয়দিন মিরার প্রতি উনার ব্যবহারে মনে হয়েছে উনি একপ্রকার আসক্ত মিরার প্রতি। তাহলে বিয়ে অস্বীকার কেন করেছেন?”
রুদ্র এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে ভেবে না পেয়ে তার ভাইয়ের বলা কথাই আওড়ালো –
“বউ মানতো না সেটা তো আগের কথা। আগের দিন বাঘে খাইছে, আমার ভাইয়া বলছে ওই নাকি ভাবির প্রেমে পড়ছে।”
রিমি রুদ্রর বলা লাইন শুনে হেঁসে উঠলো। রুদ্রর শেষের বলা কথাটা তাকে বেশ মজা দিয়েছে। রিমি হাসতে হাসতে বলল –

“বাহ্! দশ বছর আগে ছেড়ে যাওয়া বউয়ের প্রেমেই পড়েছেন ভাইয়া। মিরা জানতে পারলে কি হবে রুদ্র? আপনার কি মনে হয়?”
রুদ্র গাড়ি চালাতে চালাতে মুখটা ছোট করে বলল-
“আমি জানি না, সত্যিই জানি। একদিকে ভাইয়া আরেক দিকে ছোট বোনের মতো ভাবি। কি আজব একটা পরিস্থিতিতে ফেঁসে আছি আপনাকে কি আর বলব।”
রিমির রুদ্রর অসহায় মুখটা দেখে মজা পেয়ে হেঁসে উঠলো। রুদ্র রিমির হাঁসি মাখা মুখটার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে যে মেয়েটাকে এত দুঃখ নিয়ে তাকাতে দেখেছে অবাক ভাবে এখন একই মুখে আনন্দের হাসি ফুটে আছে- ঠিক যেমন বিলে ফুটে থাকা সদ্য পদ্ম ফুল। রুদ্র রিমির হাসি মুখটা দেখে নিজেও হেঁসে উঠলো। এরপর দুইজনেই হাসতে থাকে।
রুদ্র একটানে গাড়িটা রিমির বাড়ির মোড়ে নিয়ে যায়। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই রিমি রুদ্র কে বলে উঠে-
“রুদ্র, আপনি এখানেই গাড়িটা দাঁড় করান। আমি না হয় এখানেই নেমে যাই।”
রুদ্র অবাক চোখে বলল-

“ওমা কেন? আপনার বাড়ির সামনে যেতে আমার কোনো সমস্যা নাই। যদি আপনি অন্য কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে বাদ দিন সেসব। আমার যায় আসে না।”
রিমির রুদ্রর দিকে ঘুরে বলল-
“আমার যায় আসে।”
রুদ্র গাড়ি হঠাৎ থামিয়ে রিমিকে প্রশ্ন করল-
“জ্বি?”
রিমি আবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলল-
“জ্বি, আমার যায় আসে আপনাকে কে, কি বলল তা নিয়ে। আপনি আমার জন্য কোনো খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তা আমি চাই না। নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধে কাজ করে।”

রুদ্র রিমির কথা বুঝলো তাই আর জোর করল না। সে রিমির বলা জায়গায় গাড়ি থামালো। গাড়ি থামতেই রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে রিমির সাইডের দরজা খুলে রিমির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। রিমি রুদ্রর বাড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে রুদ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল, তবে রুদ্র নিজের হাত গুটিয়ে নিতে যাবে এমন সময়ে- আসলে রুদ্র হাত বাড়িয়ে দেবার পর রিমিকে একটু সময় নিতে দেখে ভেবেছিল রিমির বিষয়টা হয়তো অদ্ভুত লাগবে। রিমি হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পর রুদ্রর হাত সরে যেতে দেখেই রুদ্র দিকে তাকিয়ে একবার দেখলো রুদ্রও তার দিকেই তাকিয়ে আছে‌‌। রিমি আবার নিজের হাত নামিয়ে নেবে তখনি রুদ্র তাড়াহুড়োতে রিমির হাত নিজের দখলে নিয়ে নেয়। রিমি একটু চমকে উঠলো রুদ্রর দিকে তাকিয়ে।

রিমি গাড়ি থেকে বের হয়ে রুদ্রর মুখমুখি দাড়াতেই রুদ্র রিমির হাত চট করে ছেড়ে দিল। রিমিও নিজের হাতটা নিজের দিকে নিয়ে নিল অস্বস্তিতে। রুদ্র রিমির মনোভাব বুঝতে পেরে পরিবেশ ঠিক করতে বলল-
“রিমি একটা সেকেন্ড একটু অপেক্ষা করুন।”
এই বলে রুদ্র গাড়ির পিছনের দরজাটা খুলে একটা ব্যাগ বের করল। ব্যাগটা সেই রেস্টুরেন্টের রিমি দেখেই চিনল। রুদ্র ব্যাগটা নিয়ে রিমির সামনে এসে রিমির দিকে ব্যাগটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
“এটা নিন, প্লিজ।”
রিমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো-
“এটা কি রুদ্র?”
রুদ্র ব্যাগটা হাতে রেখেই বলল-

“তখন রেস্টুরেন্টে তো ঠিক মতো খেতে পারলেন না। খিদে পেয়েছে নিশ্চই। আর তাছাড়া আপনি পাস্তাটা পছন্দও করেছিলেন। তাই আমি খাবার পার্সেল করে নিয়েছিলাম। এখনো গরম আছে হয়তো আর না থাকলে একটু কষ্ট করে গরম করে নিয়েন প্লিজ।”
রিমি অবাক হয়ে রুদ্র কে দেখলো। মনে মনে ভাবলো-“উনি এতো তাড়াহুড়োতে খাবার কখন নিলেন আমার জন্য। আমি এই খাবার পছন্দ করেছি সেটাও খেয়াল করেছে।”
রিমি রুদ্র কে খাবারটা নিতে বলার উত্তরে না বলার চেষ্টা করার আগেই রুদ্র বলে উঠে-
“রিমি প্লিজ, না করবেন না। সামান্য একটা জিনিস। প্লিজ।”
রুদ্রর অনুরোধে রিমি আর না করতে পারলো না। রিমি হাফ ছেড়ে খাবারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে রুদ্রর দিকে হাঁসি মুখে তাকিয়ে বলল-

“আজকের দিনটার জন্য ধন্যবাদ রুদ্র। আর এটার জন্যও থেঙ্কস (খাবারের ব্যাগটা উঁচু করে)।”
রুদ্র হেঁসে ঘাড়ে হাত দিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে বলল-
“ইউ আর ওয়েলকাম।”
রিমি বাড়ির দিকে ফিরে পা বাড়ালেই রুদ্র আবার রিমি কে ডাকলো-
“রিমি…!”
রিমি রুদ্রর ডাকে পিছন ফিরতেই রুদ্র বলল-
“একটা রিকুয়েস্ট, প্লিজ মিরা ভাবিকে ওই সব অতীত সম্পর্কে কিছু বলবেন না।”
রিমি হেঁসে বলল- “নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। ইউর সিক্রেট ইজ সিকিউর উইথ মি‌। এবার আসি কেমন।”
রিমি রুদ্রর দিকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। সাথে রুদ্র ও হাত নেড়ে রিমির উদ্দেশ্যে বলল-
“সাবধানে যাবেন। আর বাড়ি গিয়ে আমাকে জানাতে ভুলবেন না।”
রিমি আবার হেসে মাথা নাড়লো হ্যাঁসূচক। রিমি রাস্তা মোড় পেরিয়ে বাড়ির দিকে চলে যেতেই রুদ্র গাড়িতে উঠে বাড়ির রাস্তায় গাড়ি ছটালো।

সন্ধ্যার সময় মার্কেটপ্লেসটা একেবারেই জমজমাট। চারপাশে মানুষের কোলাহল, শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে সবাই হাঁটাহাঁটি করছে। দোকানের সামনে ঝলমলে লাইটগুলো চারপাশকে এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা দিচ্ছে।
মিরায়া দুই হাতে দুটো সেভয়-এর নতুন ফ্লেভারের আইসক্রিম নিয়ে হাঁটছে। একবার ডানহাতেরটা খাচ্ছে, আবার বামহাতেরটা খাচ্ছে। মুখভরা সিরিয়াস ভাব, যেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় কাজ করছে এখন—আইসক্রিম খেয়ে শেষ করা।
অন্যদিকে রায়ান দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে মিরায়ার একদম পেছনে হাঁটছে। চোখ সরাতেই পারছে না। ওর ঠোঁটে মুচকি হাসি লেগে আছে। মনে হচ্ছে, যেন বাচ্চার রাগ ভাঙাতে খেলনা দেওয়া হয়েছে, আর সেই বাচ্চা এখন খুশি হয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে খেলছে।
রায়ান নিজের মনে বলতে থাকে—

“এত্ত কিউট মানুষ হয় নাকি? অসহ্য লাগছে। মনে হচ্ছে এখনি ধরে আদর করতে থাকি। পিছনে একটা মানুষ যে তার আইসক্রিম খাওয়া দেখে মরে যাচ্ছে প্রেম জ্বালায় তার কি কোন খোঁজ খবর রাখে সে?”
তারপর নিজের মনের ভেতরে ঝড় তোলে—
“ধুর শালা! জীবনে তখন কি এক শয়তান লাড়া দিসিল কে জানে, তাই আমেরিকা চলে গেছিলাম। এখন এই অসহ্যকর সুন্দর হার্টবার্ডকে শুধু দেখে যাচ্ছি…আর জ্বলে যাচ্ছি।”
এ কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নিজের কপালে থাপ্পড় মারল রায়ান। চুল মুঠি করে খামচে ধরে বিড়বিড় করে বলল—
“নিজেকেই দোষ দে, আহাম্মক।”

এদিকে মিরায়া নিজের দুনিয়াতেই ব্যস্ত। দুই হাতে আইসক্রিম পালা করে খেতে খেতে হাঁটছে, একবারও পেছনে তাকাচ্ছে না। ঠোঁটের কোণায় আইসক্রিমের দাগ জমে গেছে, কিন্তু সে খেয়ালই করছে না।
চারপাশে দোকানের আলো, প্যাকেট হাতে ঘুরে বেড়ানো ক্রেতারা—সব মিলিয়ে জমজমাট পরিবেশ। কিন্তু সেই ভিড়ের মাঝেও রায়ানের চোখ কেবল মিরায়ার উপর আটকে আছে।
মিরায়া দুই হাতে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে হাঁটছে, আর খাচ্ছে তার হাঁটাতে একটা শিশুসুলভ আনন্দ—যেন পুরো পৃথিবীর সমস্যা ভুলে গেছে এই দুইটা আইসক্রিমের স্বাদেই।
হঠাৎ মিরায়ার কাঁধে ঝোলানো টোট ব্যাগটা কাঁধ থেকে পিছলে গিয়ে হাতে চলে এলো। কিন্তু দুই হাতে দুই আইসক্রিম—এখন ব্যাগটা সামলাবে কিভাবে, বুঝতেই পারছে না। একবার কনুই দিয়ে কাঁধে তোলার চেষ্টা করল, আবার হেলে ঝুঁকে ব্যাগটা ঠেলতে লাগলো। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ।
মিরায়া বিরক্ত মুখে বিড়বিড় করে উঠল—

“ধুর… সব সময় ঝামেলা করবেই এই ব্যাগটা। এইটা আর ব্যবহারই করবো না।”
রায়ান দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। চোখে দুষ্টু হাসি নিয়ে এগিয়ে এলো সামনে। কিছু না বলে হঠাৎ মিরায়ার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিল।
রায়ান হালকা ঠোঁট বাঁকিয়ে মিরায়ার দিকে তাকিয়ে বলল:
“আমি আছি তো, হার্টবার্ড। দুই হাতে আইসক্রিম সামলানোই এখন অনেক বড় বিষয় তোমার জন্য। এই ব্যাগের টেনশন না হয় আমি নিয়ে নেই।”

মিরায়া একটু থমকে রইল। অবাক চোখে রায়ানের দিকে তাকাল। রায়ান ও মিরায়ার দিকে অটল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বলা ভুল হবে যে মিরায়ার দিকে- রায়ান মিরায়ার ঠোঁটে দিকে তাকিয়ে ছিল। গোলাপি রংয়ের ঠোঁট জোড়া যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ঠোঁটের একপাশে আবার আইসক্রিম লেগে আছে। রায়ানের মনে অস্বাভাবিক ইচ্ছা জেগে উঠলো। তার খুব করে ইচ্ছা করছে মিরায়ার মিষ্টি ঠোঁট গুলো নিজের ঠোঁটের ভিতরে নিয়ে তার ঠোঁটের রাজত্ব চালাতে। রায়ান কোনোভাবেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।
মিরায়া রায়ানের এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকাতে রায়ানকে দুষ্টু মিষ্টি ভঙ্গিতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল—
“কি হলো? এত করে তাকাচ্ছেন কেন? আমার আইসক্রিম দেখে লোভ হচ্ছে বুঝি? নিজের জন্য নিলেন না কেন? তখন তো আমি বলেছিলাম নিতে।”

মিরায়ার প্রশ্ন শুনে রায়ান হঠাৎ যেন চুপ হয়ে গেল। রায়ান নিজের চোখ হালকা সরিয়ে আনলো মিরায়ার ঠোঁটের থেকে। ভেতরে ভেতরে তার মনে অদ্ভুত একটা টান কাজ করছে। রায়ান মনে মনে মিরায়াকে বলল-
“তোর ঠোঁটের আইসক্রিমের লোভ হচ্ছে রে হৃদপাখি… খুব লোভ হচ্ছে।”
কিন্তু মুখে কিছুই বের হলো না।
মিরায়া রায়ানকে কোনো উত্তর করতে না দেখে ভ্রু কুঁচকে আবার জিজ্ঞেস করল—
“কি হলো? কিছু বলছেন না কেন?”
তখন রায়ান নিজের কল্পনার জগত থেকে ফিরে এসে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল। চোখ স্থির মিরায়ার ঠোঁটে এখনো। ঠোঁটের কোণে গলে যাওয়া সামান্য আইসক্রিম লেগে আছে। রায়ান হালকা গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল—

“তোমার প্রতি লোভ সামলে রেখেছি, হার্টবার্ড…
আইসক্রিমের লোভ না হয় ছেড়েই দিলাম।”
বলতে বলতেই রায়ান নিজের ডান হাত বাড়িয়ে মিরায়ার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা আইসক্রিম বুড়ো আঙুল দিয়ে আস্তে করে মুছে দিল। মিরায়ার শরীর হঠাৎ কেঁপে উঠল। চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। বুকের ভেতর যেন হৃৎপিণ্ডের ধাক্কায় এক লাফে বেড়ে গেল।
এরপর রায়ান সেই আঙুলটা নিজের মুখে নিয়ে চেটে খেয়ে নিল। ধীর কণ্ঠে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল—
“একবার নিজের করে পেতে দাও, শোধ সমেত সব উশুল করবো, পাখি।”
মিরায়া নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে আছে শুধু। যেন মুহূর্তটা থেমে গেছে। তার গাল লালচে হয়ে উঠেছে, চোখে লাজ-অভিমান মেশানো বিস্ময়। ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, কিন্তু কথা বেরোচ্ছে না।
রায়ান তখন সোজা হয়ে দাঁড়াল। হালকা হাসি দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে আবার বলল—

“উম্… আইসক্রিমটা অনেক সুইট। জাস্ট লাইক ইউ।”
মিরায়া এক ঝটকায় চোখ ফিরিয়ে নিল, যেন আর তাকাতে পারছে না। মনে মনে অস্থিরভাবে গুনগুন করতে লাগল—
“এ কেমন মানুষ! এত সহজে এমন কথা বলে ফেলে… কেন আমার বুক ধড়ফড় করছে? কেন চোখ ফিরিয়ে রাখলেও মনটা ওনার দিকেই টানছে?”
মুখে যদিও অভিমানী ভঙ্গি রাখল, তবুও ঠোঁটের কোণে অজান্তে একফোঁটা লাজুক হাসি খেলে গেল।
রায়ান সেই হাসিটাই ধরে ফেলল। বুক ভরে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল—
“একদিন তোমার ঠোঁট থেকে এই লাজুক হাসিটাকে আমি আমার করে নেবো। আই প্রমিস, মাই ফাকিং লিটল হার্ট-বার্ড।”

মার্কেটের ভেতর সন্ধ্যার নরম আলোয় মানুষের ভিড় একটু কমে এসেছে। চারপাশে হালকা কোলাহল, দোকানিদের ডাকাডাকি, বাচ্চাদের খিলখিল হাসি—সব মিলিয়ে এক চেনা ব্যস্ত পরিবেশ।
আইসক্রিম শেষ করেই মিরায়া দু’হাত মুছে, হালকা বিরক্ত কিন্তু মুখে টুকটুক করা হাসি নিয়ে চারপাশ দেখতে থাকে। হঠাৎ এক সফ্ট টয়ের দোকান চোখে পড়তেই সে ভেতরে ঢুকে পড়ে। রায়ান বাইরে দাঁড়িয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে ভেতরে ঢোকে।
মিরায়া ভেতরে ঢুকে নানা রঙের, নানা আকারের সফ্ট টয় দেখতে শুরু করে। চোখগুলো চকচক করছে, যেন আসলেই তার ভেতরের ছোট্ট মেয়েটা জেগে উঠেছে। রায়ান সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে, হাত গুটিয়ে শুধু মিরায়ার চোখের দিকেই তাকিয়ে। ওর দৃষ্টি যেন বারবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে—মিরায়া চোখ আসলে কোনটার দিকে বেশি টানছে।
মিরায়া হঠাৎ দুটো টয় হাতে তুলে বলল,

— “দেখুন তো, কি কিউট না দুটোই?”
রায়ান হাসি চাপতে চাপতে তাকালো, চোখ সরাসরি মিরায়ার দিকে রায়ান মিষ্টি হেঁসে বলল-
— “হুম, অনেক কিউট।”
মিরায়া ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত মুখে বলল,
— “আমি টয়ের কথা বলেছি। আমার দিকে তাকিয়ে বলছেন কেন?”
রায়ান একটু হকচকিয়ে গেলেও হালকা গম্ভীর গলায় উত্তর দিল মিরায়ার দিকে তাকিয়েই ইশারা করে বলল,
— “আরে, আমি তো পুতুলের কথাই বললাম।”
মিরায়া ঠোঁট ফুলিয়ে ঘাড় কাত করে বলল,
— “থাক, বাদ দিন।”

তারপর নিজের হাতে দুটো সফ্ট টয় ধরে এগিয়ে এসে রায়ানের সামনে দাঁড়াল।
— “একটা তো নিতে হবে। বলুন তো, কোনটা বেশি কিউট? ডান দিকেরটা, না বাম দিকেরটা?”
রায়ান শান্তভাবে দুটোই তার হাত থেকে নিয়ে নিল। তারপর কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা কাউন্টারের দিকে হাঁটতে লাগল। মিরায়া পেছন থেকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল।
— “এই যে! আমি তো জিজ্ঞেস করলাম কোনটা বেশি কিউট। কোথায় যাচ্ছেন ?!”
কাউন্টারে গিয়ে বিল দেওয়ার সময় রায়ান হালকা ভঙ্গিতে পিছন ফিরে উত্তর দিল মিরায়ার প্রশ্নের-
— “মাঝখানেরটা বেশি কিউট।”

এই বলে ক্যাশ পে করে দুটো টয়-ই কিনে নিল। মিরায়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে ভেতরে ভেতরে লজ্জায় লাল হয়ে হাসলো আবার বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,
“এই মানুষটার সমস্যা কি! মাঝখানে আমি ছাড়া তো আর কেউ দাঁড়িয়ে ছিল না! মানে আমি-ই.. ধুর! আবারো নিজের মতো কথা বলে মাথা ঘুরিয়ে দিল।”
মিরায়ার ঠোঁটের কোণে অজান্তেই এক চিলতে লাজুক হাসি খেলে গেল। সে হাত গুটিয়ে একটু অভিমানী ভঙ্গিতে দাঁড়াল, কিন্তু চোখের কোণে জমে থাকা ঝিলিকটা রায়ান স্পষ্ট দেখল। দোকান থেকে বের হয়েই রায়ান দুই হাতে সফ্ট টয় ধরে মিরায়ার দিকে তাকাল। মিরায়া মুখ গম্ভীর করে সোজা সামনে হাঁটছে, যেন রাগে ভরা এক রাজকুমারী।
রায়ান হেঁটে গিয়ে তার পাশে দাঁড়াল, তারপর হঠাৎ করে একটা টয়কে মিরায়ার গায়ের সাথে ঠেসে ধরে বলল—

— “এইটা তোমার মতো, গোলগাল কিউট।”
মিরায়া একদম থমকে দাঁড়াল, তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল, চোখ দুটো বিস্ফারিত।
— “কি? আমি গোলগাল! কে যেন বলেছিল আমার শরীরে কিছু নেই।”
রায়ান ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল-
“সে তো আমি শরীর এর কথা বলেছি হৃদপাখি, (সেটা আমি ঠিক করে নেব) চেহারা তো তোমার রসগোল্লার মতো। দেখলেই লোভ হয় খাওয়া..।”
কথা শেষ করার আগেই মিরায়া চোখ বড় করাতে রায়ান আর নিজের কথা শেষ করতে পারলো না। মিরায়া বুকে হাত বেঁধে রায়ানকে গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করল-

“আমি একটা নিবো বলেছিলাম। আপনি দুটোই কেন কিনে নিলেন?”
রায়ান স্বাভাবিক ভাবেই মিরায়ার কাছে এসে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল-
” বিকজ ইউ টাচ্ড দেম, বেইব। মাই বেইবি উইল গেট হুয়াট শি টাচ ওর ইভেন লাইক। কোজ নো ওয়ান কেন গেট হুয়াট ইউ হেভ টাচ্ড ওর লাইক’ড। আন্ডারস্টেন্ড?”
মিরায়া অবাক হয়ে রায়ানের কথা শুনলো। কথা গুলো তার মনে অন্যরকমের অনুভুতির সৃষ্টি করছে। লজ্জা আর অস্বস্তি মিরায়াকে ঘিরে ধরলো। তখন ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকাতে পারল না মিরায়া মুচকি হেসে উঠলো। রাগ ধরে রাখার চেষ্টা করলেও মুখের কোণে হাসি বের হয়ে এল।
রায়ান একটুও থামল না। সে দুটো সফ্ট টয় একসাথে জোড়া লাগিয়ে দেখিয়ে বলল,

— “দেখছো? এভাবে পাশাপাশি থাকলে বেশি সুন্দর লাগে। ঠিক যেমন তুমি আর আমি।”
মিরায়ার মুখ গরম হয়ে উঠল, ঠোঁট সামান্য কেঁপে উঠল। লজ্জা লুকানোর জন্য দ্রুত সফ্ট টয়গুলো টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল।
— “ধুর, কথা বললেই… হেডেক হয়। চুপ থাকবেন আপনি।”
মুখে বিরক্তি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে বুকের ভেতর একরাশ উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল। সে হাঁটতে শুরু করল আবার, কিন্তু এবার ঠোঁটে অজান্তেই মিষ্টি হাসি খেলে রইল।
রায়ান সেটা দেখে হেসে ফেলে আবার মনে মনে বলে—
“আল্লাহ, এই বাচ্চাটাকে আমি একদিন পাই শুধু এক ফোঁটাও ছাড় দিবে না। হার্টবার্ড, নিজেকে তৈরি করেনে আমাকে সহ্যকরার জন্য। এই বাচ্চামি তখন করলে লাভ হবে না।”
তারপর মিরায়া আর রায়ান একটা গ্রোসারি শোপে যায়। রায়ান আবার অবাক হয় মনে মনে বলছে-

“মেয়ে মানুষ ঢুকবে বড়ো বড়ো ব্রেন্ডের শোপে। ড্রেসেস, শুজ মেকআপ এইসব বাদ দিয়ে আমার বউ গ্রোসারি শোপে আর টয় শোপে যায় কেন?”
রায়ান কিছু টা বিরক্ত হয়ে-
“মিরা? এখানে কেন এলে?”
মিরায়া রায়ানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
“আপনার খারাপ লাগছে বুঝি? চলুন তবে চলে যাই।”
আসলে মিরায়া ইচ্ছে করে এমন উদ্ভট জায়গায় যাচ্ছে যেন রায়ান বিরক্ত হয়ে উঠে। মিরায়া জানে ছেলে মানুষরা খুব একটা ধৈর্যশীল হয় না। তাই মিরায়া ভেবেছে আবল-তাবল অপ্রয়োজনীয় জায়গা ঘুরলে রায়ান বিরক্ত হয়ে যাবে আর তাড়াতাড়ি বাড়িও ফিরতে পারবে। রায়ানের অনুপস্থিতি যেমন খালি খালি ভাব এর জন্ম দেয় মিরায়ার মনে ঠিক তেমনি তার উপস্থিতি অস্বস্তি আ্র লজ্জা বোধ করায়।
রায়ান মিরায়ার কথায় মাথা নেড়ে বলল-

“একদম না হৃদপাখি। তোমার যেখানে ইচ্ছে ঘুরতে পারো আমার তোমার সাথে থাকতে পারলেই ভালো লাগবে।”
মিরায়া রায়ানের কথা শুনে সামনে ফিরে মুচকি হাসলো। তারপর গ্রোসারি শোপটা ঘুরে দেখতে লাগলো। কিছু খাওয়ার জন্য চিপস আর অন্য স্নেক্স নিলো যেগুলো সোরায়া পছন্দ করে। বড়ো বোনের দায়িত্ব পালন করছিল এই আর কি। রায়ান চুপচাপ মিরায়াকেই দেখে যাচ্ছে। তার শুধু মিরায়াকে দেখতেই ভালো লাগছে তবু যেন আশ মিটছে না। এদিকে মিরায়া রায়ানকে বিরক্ত করতে ব্যস্ত।
মিরায়া শোপের সম্পূর্ণ জায়গা ঘুরে রায়ানের দিকে উৎসাহ নিয়ে বলল-
“আমার শপিং শেষ, এখান থেকে বের হওয়া যাক?”

রায়ান মাথা ঝাকাতেই মিরায়া তার হাতের ট্রলার ঠেলে বিল পে করার লাইনে দাড়িয়ে রইল।
হঠাৎ রায়ানের চোখ পরলো শোপের একটা রেকে। যেখানে ছিলো জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পণ্য (কন’ডম) রায়ান সেটার দিকেই তাকিয়ে রইল কি ফ্লেভারের বুঝার জন্য। মিরায়া রায়ানকে ওই রেকে তাকাতে দেখে সেখানে নজর দিলো। একই সাথে রেকে সিগারেটের প্যাকেট ও ছিল। মিরায়া ভাবলো রায়ান হয়তো সেটাই দেখছে, হয়তো ধূমপান করে সেইজন্য কিন্তু মিরায়া সাথে থাকায় ইতস্তুত বোধ করছে।
মিরায়া নিজের মনে এমন কিছু আন্দাজ করে রায়ান কে বলল-
“কি দেখছেন ওখানে? শুধু কি দেখবেনই ওটা? কেনার ইচ্ছা হলে কিনে নিন।”
রায়ান অবাক হয়ে মিরায়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে-

“আর ইউ সিরিয়াস বেইবি।”
মিরায়া একটু ভাব নিয়ে বলল-
“আমি বুঝি। আমি এডাল্ট। আর লজ্জা পেতে হবে না। নিয়ে নিন। আমি কিছু মনে করবো না।”
রায়ান বড়ো বড়ো চোখ করে বলল-
“হৃদপাখি কি বলছো? ভেবে বলছো কি?”
মিরায়া বিরক্ত হয়ে ওই রেকের দিকে যেতে যেতে রায়ানকে বলল-
“সিগারেট খান এটা লুকতে হবে না আর। আমিই নিয়ে নিচ্ছি আপনার জন্য।”
রায়ান অবাক হয়ে বলল-

“আমি স্মোক করি না হৃদপাখি, কি বলছো।”
মিরায়া অবাক হয়ে রায়নার দিকে তাকিয়ে বলল-
“স্মোকিং করেন না তো কি দেখছিলেন এই দিকে এই রেকে তো শুধু সিগারেট আর..”- মিরায়া আবার ওই রেকটার দিকে তাকিয়ে দেখে পাশেই কন’ডম এর প্যাকেট দেখে বুঝতে পারল রায়ান ঠিক কোন দিকে তাকিয়ে ছিল।
মিরায়া চোখ বড়ো করে নিয়ে রায়ানের দিকে তাকাতেই রায়ান ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে নিজের হাত দিয়ে চুল চুলকাতে শুরু করে আর অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকে। কিভাবে নিজেকে ব্যাখ্যা করবে বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে শুধু বিলটা পে করে দিল। মিরায়া এখনো আশ্চর্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এরপর দুজনই বের হয়ে গেল মার্কেট প্লেস টা থেকে। রায়ান বের হয়ে জিজ্ঞেস করল-

“এভাবে বের হয়ে এলে যে? কিছুই তো কিনলে না।”
মিরায়া টয় গুলো রায়ানের হাতে দিয়ে বলল-
“তাহলে এই দুটো কি? ”
রায়ান টয়গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল-
“এগুলো কোনো জিনিস হলো? আরো কিছু নাও।”
মিরায়া নিজের হেলমেটটা পরতে পরতে বলতে থাকলো-
“এখন আর অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। বাড়ি থেকে আমার টয় গুলো আনা হয়নি তাই নিয়ে নিলাম।”
রায়ান মিরায়ার হাত থেকে হেলমেটটা নিয়ে সে নিজে মিরায়াকে পড়িয়ে দিতে দিতে বলল-
“আচ্ছা ঠিক আছে। এবার বল, এখন কোথায় যাবে?”

মিরায়া রায়ানের কথার মজা উড়িয়ে বলে-
“সারাদিন নিজের ইচ্ছে মতো জায়গায় ঘুরালেন এখনও নিজের যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যান, জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
রায়ান দুষ্টু হেসে বলল- “ওকে বেইব, লেট’স গো।”
মিরায়া চোখ বড়ো করে-“কোথায়?”
রায়ান হেলমেটটা পড়ে মিরায়ার দিকে ঝুঁকে বলল-
“কাজি অফিস।”
মিরায়া সামান্য চেঁচিয়ে উঠলো – “কিহ্!”
রায়ান মজার ছলে বলল-“তুমি না বললে যেখানে আমার ইচ্ছে সেখানে নিয়ে যেতে।”
মিরায়া চোখ বাঁকা করে জিজ্ঞেস করল-
“আপনারা ছেলেরা এত বউ বউ করেন কেন হ্যাঁ?”
রায়ান-“ওমা জানোনা তুমি? ছেলেরা বউ বউ কেন করে?”
মিরায়া সরল ভাবে মাথা নাড়ায়-“না তো।”
রায়ান মিরায়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল-

“কারণ, ‘রাতে ঘুমানোর সময় ঘুমপাড়ানি মাসি-পাসি’ is not enough for a man, baby.”
মিরায়ার চোখ কপালে উঠলো। রায়ানের কথার মানে বুঝতে তার কিছুক্ষণ সময় লাগলো তার পরই বুঝার সাথে সাথে আতকে উঠলো হঠাৎ। এত সহজে এতো নির্লজ্জের মতো কথা কিভাবে একটা মানুষ বলে মিরায়া সেটা উদঘাটন করতে ব্যস্ত নিজের মাথায়।
তবে দমে যাবে না বলে রায়ানকে সোজা ও স্পষ্ট করে বলল –
“আমাকে বিয়ে করলে, আপনার আমার ইশারায় উঠতে আর বুঝতে হবে, পারবেন?”
রায়ান আবার নির্লজ্জ সুরে উত্তর করল-
“হ্যাঁ পারবো, তবে শর্ত আছে- আমার ইশারায় তোমাকে শুয়ে পরতে হবে, পারবে?”
মিরায়া হতভম্ব হয়ে গেল। মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছে -“বেশরম লোক, নির্লজ্জ, বেহায়া…! এমনও মানুষ আছে নাকি কি পরিমান অসভ্য।”

মিরায়া চোখের পলোক ফেলে টানা তিন-চার বার। তার বুঝার বাইরে চলে যাচ্ছে রায়ান দিনকে দিন। মিরায়ার মনে একরকম ভয় কাজ করতে শুরু করলো।
রায়ান মিরায়ার হেলমেটে টোকা দিয়ে বলল-
-“কি ম্যাডাম, যাবেন আমার ইচ্ছা মতো…!”
রায়ান নিজের কথা শেষ করার আগেই মিরায়া চটজলদি বলে উঠলো-
“আমি বাড়ি ফিরব। বাড়ি নিয়ে চলুন।”
রায়ান মিরায়ার ভয় মাখা মুখ দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিয়ে দিতে বলল-
“উঠে বসো। বাড়িই নিয়ে যাবো, প্রমিস।”

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩০

মিরায়া মনের দ্বন্দ্ব নিয়েই বাইকে উঠলো রায়ানের কাঁধে হাত রেখে। কিন্তু রায়ান এবার আগের মতো আবার মিরায়ার হাত কাঁধের থেকে নামিয়ে পিছন থেকে ঘুরিয়ে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। মিরায়া রায়ানের পিঠের সাথে লেগে রইল। কিছু বলে প্রতিবাদ করবে তার সাহস বা ইচ্ছা কোনোটাই তার মাঝে দেখা গেলো না।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here