আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩২
অরাত্রিকা রহমান
ঢাকার সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসে রাতের রূপ নিচ্ছে ধীরে ধীরে। চারপাশের দোকানপাটে লাইট জ্বলে উঠেছে, বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ডগুলো রঙিন আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে রাস্তায়। মাঝেমধ্যে কোনো দোকানের সামনে ঝলমলে ফেয়ারিলাইট চোখে পড়ে, পুরো পরিবেশটা যেন উৎসবমুখর। রাস্তায় গাড়ির হর্নের শব্দ, মানুষের হাঁকডাক—সব মিলিয়ে একটা ব্যস্ত নগরীর কোলাহল।
কিন্তু সেই কোলাহলের মাঝেই রায়ানের বাইকটা ছুটে চলছে এক অন্যরকম ছন্দে। হাওয়ার তীব্র ঝাপটায় মিরায়া হেলমেটের কাঁচের ভেতর দিয়ে সে চারপাশের আলোঝলমল শহরটাকে নতুনভাবে দেখছে। বাইকের স্পিডে রাস্তার লাইটগুলো একটার পর একটা পিছিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আলোয় আঁকা কোনো পথের ভেতর দিয়ে তারা চলে যাচ্ছে।
রায়ান একহাতে হ্যান্ডেল ধরে আরেকহাতে হাওয়ার ধাক্কা সামলাতে সামান্য কাঁধ টেনে নেয়। পেছনে বসা মিরায়া নিঃশব্দে রায়ানের কোমর আঁকড়ে রেখেছে—না প্রতিবাদ করছে, না কোনো কথা বলছে। শুধু শহরের হট্টগোলের মাঝেও তার বুকের ধুকপুকানি রায়ানের পিঠে ভেসে আসছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রায়ান বুঝতে পারল মিরায়ার এই নীরবতা কোনো সাধারণ নীরবতা নয়। হয়তো একটু ভয় পাচ্ছে রাতের অন্ধকারে এতো আলোর মাঝেও। বাইকের গতি একটু বাড়িয়ে সে শুধু হালকা স্বরে বলল—
“হৃদপাখি, আর একটু… তারপরই বাড়ি। তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?”
মিরায়া রায়ানের কন্ঠের মিষ্টত্ব বুঝতে পেরে স্বাভাবিক আচরণ করল।
-“জ্বি, বলুন। কি প্রশ্ন?”
রায়ান মিরায়ার মন একটু শান্ত করতে মিরায়ার উৎসাহর জায়গা নিয়েই কথা বলা শুরু করলো-
“আচ্ছা তোমার বাইক পছন্দ নাকি বাইকার?”
মিরায়া একটু ভাবুক মুখ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো-
“কেন এমন প্রশ্ন করলেন জানতে পারি?”
রায়ান হেসে উত্তর দিল-
“এই বাইক দেখার পর তোমার চোখ জলজল করছিল যেন খুব পছন্দের কিছু দেখেছ। তাই আর কি মনে হলো হয়তো মনে মনে নিজের জন্য বাইকার বর কল্পনা করে রেখেছ। সেই কারণেই প্রশ্ন করলাম বাইক পছন্দ না বাইকার।”
মিরায়া রায়ানের কথা বুঝার ভাব নিয়ে উৎকণ্ঠায় জবাব দিল-
“দুটোই।”
রায়ান মনে মনে ভাবলো-
“যাক আলহামদুলিল্লাহ, বউ আমার একটা জিনিস তো নিজের বরের মাঝে কল্পনা করে। বাইক রাইডার হয়ে মন্দ করি নি। বউকে নিয়ে ঘুরা যাবে। উফ্! বাইক চালাব আর বউ এমনভাবে জাপটে ধরে থাকবে। কি একটা ফিল! ভাবতেই ভালো লাগছে”
রায়ান মনের ভাব প্রকাশ না করে মিরায়ার কাছেই জানতে চায়- “বাইকে ঘুরতে ভালো লাগে তাই বুঝি বাইক রাইডার বর চাও?” মনে মনে মিরায়াকে বলছে- “পাখি প্লিজ হ্যাঁ বলে দে।”
রায়ানের প্রশ্নে মিরায়া নিজের মনে হেসে উঠে বিরবির করলো- “ইস্! ঠেকা মনে হয় আমার, যে বাইকে ঘুরার জন্য বাইক রাইডার বর চাইবো। আমি বাইক রাইডার বর চাই তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাইক রাইড করে তাকে হারানোর জন্য।”
নিজের মনের ইচ্ছে আর মুখ দিয়ে বের না করে মিরায়া রায়ানের কথায় হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বলে- “হুম, সেটার জন্যই।”
রায়ান মিরায়ার উত্তরে বেশ খুশি হয়। তার মনে দোলা দিয়ে উঠে এটা ভেবেই যে তার শখ আর বউয়ের শখ মিলেছে। অথচ বউয়ের নিজের বরকে বাইক রাইডিং এ পিছনে ফেলার শখ তার অজানা রয়ে গেল। মিরায়া ও রায়ানের কিছু না বুঝে বোকার মতো খুশি হওয়া দেখে হেঁসে উঠলো। এখন ঝাড়া হাত পা লাগছে আর ভয় কাজ করছে না। রায়ান নিজের গতিতে বাইক চালাতে লাগলো বাড়ির দিকে।
শহরের আলো পেরিয়ে তারা ধীরে ধীরে শান্ত রাস্তার দিকে ঢুকল। রাতের আকাশে ফালি ফালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে, হাওয়াটা আরও ঠাণ্ডা আর আরামদায়ক লাগছে। মিরায়া সেই ঠাণ্ডা বাতাসে চোখ বন্ধ করলো এক মুহূর্তের জন্য, মনে হলো বাইকের এই রাইডটা যেন দিনের সব ক্লান্তি ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রায়ানের ঠোঁটে মুচকি হাসি খেলল। ভিড়ভাট্টার শহর পেছনে ফেলে, শুধু সে আর তার হৃদপাখি—বাড়ি ফেরার পথে রাতটাও যেন নিঃশব্দে তাদের জন্য গান গাইছে।
রাত হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা রাত আটটার কাছাকাছি। বাইক ছুটতে ছুটতে অবশেষে চৌধুরী বাড়ির উঁচু লোহার গেট সামনে এসে দাঁড়ালো। গেটের উপরে ঝুলে থাকা লাইটটা উজ্জ্বল হলুদ আভা ছড়াচ্ছে, চারপাশটা একেবারেই নিস্ত্ধ। রায়ান বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়াতেই। ইঞ্জিনের শব্দ থেমে গেল।
পেছন থেকে মিরায়া আস্তে আস্তে নামলো। দু’হাতের ভর দিয়ে ভারসাম্য রেখে পা বাড়ালো মাটিতে। সে হেলমেটটা মাথা থেকে খোলার চেষ্টা করছিল, কিন্তু স্ট্র্যাপ খুলতে একটু গণ্ডগোল করায় রায়ান বাইক থেকে নেমে এসে মিরায়ার সামনে দাঁড়াল। রায়ান একটু দুষ্টু হাসি দিয়ে মিরায়ার হেলমেটটা খুলতে খুলতে বলল—
“হার্টবার্ড, সব কিছুতেই কি আমাকে লাগবে?”
মিরায়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বিরক্তির ভান করলেও কিছু বলল না। রায়ান নিজ হাতে হেলমেটের স্ট্র্যাপ খুলে আলতো করে হেলমেটটা নামিয়ে দিল। মিরায়ার কপালে কয়েকটা চুল এসে পড়েছিল, রায়ান সেটা ঠিক করার জন্য হাত তুলল, তার আগেই মিরায়া নিজের হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নিল।রায়ান শেষমেশ থেমে শুধু হেলমেটটা নিজের হাতে ধরে রইল।
তারপর সে নিজের হেলমেটও খুলে বাইকের সিটে রাখল। দু’জনের চোখ এক মুহূর্তের জন্য আটকে গেল। মিরায়ার মুখে লজ্জা মাখা ক্লান্তি, আর রায়ানের মুখে অদ্ভুত তৃপ্তি।
রায়ান বাইকটাকে ধীরে পার্ক করল। মিরায়া তখন বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে—আলো-আঁধারি ভরা শান্ত পরিবেশ, জানালার ফাঁক দিয়ে কোথাও হালকা আলো আসছে।
বাইকটা লক করে রায়ান মিরায়ার পাশে এসে হেঁটে বাড়িতে প্রবেশ করে। রায়ান হেলমেট দুটো, কেনা স্নেক্সগুলো আর মিরায়ার টয় দুটোর ব্যাগ হাতে নিয়ে হাঁটছিল, আর তার পাশে মিরায়া নীরবে, কিন্তু একরকম নিশ্চিন্ত ভাবেই পা ফেলছিল। বাইক রাইডের সব ভয়, রাগ, লজ্জা মিলেমিশে যেন এক মধুর শান্তি তৈরি করেছিল সেই রাতের দৃশ্যে।
ড্রয়িং রুমে পা ফেলতেই জুলিয়েট সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে এলো মিরায়ার পায়ের কাছে। মিরায়া সারাদিন পর জুলিয়েটকে দেখতে পেয়ে আনন্দে জুলিয়েটকে নিজের কোলে নিয়ে নেয়। আর জুলিয়েটের সাদা, নরম ও ঘন লোম গুলোতে নিজের হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে আর জুলিয়েট ও তার মায়ের আদর খাতে থাকলো। অন্যদিকে রায়ান পিছন থেকে জুলিয়েটের উদ্দেশ্যে নিজের হাত নেড়ে ধীরে বলল-
“হাই, পাপা। মাম্মা পাপা ইজ ব্যাক।”
তখনই জুলিয়েট কি বুঝলো তা বলা মুশকিল সে রায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে মিরায়ার কোল থেকে নেমে সোজা রায়ানের পায়ের কাছে গিয়ে বসলো। মিরায়া অবাক চোখে জুলিয়েটকে দেখছে। রায়ান হাসিমুখে হাঁটু গেড়ে বসলো হাতের ব্যাগ গুলো মেঝেতে রেখে জুলিয়েটকে কোলে তুলে আদর করতে লাগলো জুলিয়েট চুপচাপ চোখ বন্ধ করে আবেশে আদর খাচ্ছে। মিরায়া হা করে দেখছে দৃশ্য টা মনে মনে হিংসুটে ভাব নিয়ে বিরবির করলো-
” সব মেয়ে জাত এক রকমের। হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই চাপকাই থাকে। তাই বলে তুইও মাম্মাকে ধোঁকা দিলি জুলি..(কাতর দৃষ্টিতে জুলিয়েটের দিকে তাকিয়ে)।”
হঠাৎ পিছন থেকে সোরায়া এসে মিরায়াকে জাপ্টে ধরলো। মিরায়া বুঝতে পারলো এটা সোরায়া তাই সোরায়ার হাতে ধরে তাকে ঘুরিয়ে সামনে আনলো-
-“আপু! কই ছিলে তুমি? জানো তোমাকে ছাড়া আমি বোর হয়ে মরেই যাচ্ছিলাম।” সোরায়া কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে বলল।
মিরায়া সোরায়ার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল- “ওই পাগল বোর হয়ে আবার কিভাবে মরে যায়?”
সোরায়া নিজের মাথা ডলতে ডলতে বলল- “উফ্! গাট্টা মারো কেন? ব্রেইনে সমস্যা হলে আমাকে কেউ বিয়ে করবে?”
মিরায়া রায়ানের দিকে এগিয়ে স্নেক্সগুলো তুলে নিল সোরায়াকে দেওয়ার জন্য। তারপর সোরায়ার কাছে এসে সেগুলো দিয়ে মজার ছলে হেঁসে বলল- “ও মা , তোর ব্রেইনও আছে? জানতাম না তো।”
রায়ান দুই বোনের খুনসুটি দেখে মজা পেয়ে হাসতে থাকে। মিরায়া আর সোরায়া রায়ানের দিকে একসাথে তাকিয়ে এক সাথেই বলে উঠলো- ” কি হলো, আপনি আসছেন কেন?”
রায়ান হাসি ততক্ষনাৎ লুকিয়ে ফেলে জুলিয়েটের গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে সোফায় বসে বলল-
“এমনি হাসছি। কেন বাড়ন আছে কোনো? নিজের বাড়িতে হাসাও যাবে না এখন?”
রায়ানের কথায় দুজনের কেউই উত্তর দিল না। সোরায়া চুপচাপ মিরায়ার হাত থেকে স্নেক্স এর ব্যাগটা নিয়ে সেখান থেকে একটা চিপস এর প্যাকেট বের করে ছিড়ে চিপস মুখে দিয়ে চিবতে লাগলো। তখনি রায়ান সোরায়ার উদ্দেশ্যে বলল-
“চড়ুই পাখি তুই চিন্তা করিস না। তোর জন্য আমি ডাক্তার আর নাহলে কোনো ইন্জিনিয়ার খুঁজে নিয়ে আসবো।”
সোরায়া চিপস খেতে খেতেই বলল- ” না, আমার ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বর চাই না। আমার সুন্দর বর চাই।”
মিরায়া সোরায়ার কথা কেটে বলে- “কেন রে? সৌন্দর্য ধুয়ে পানি খাবি?”
রায়ান হেঁসে উঠলো তবে সোরায়া মিরায়ার মজা নেওয়া যেতে এড়িয়ে বলল- “ধুয়ে না খাই অন্যভাবে খাবো। তবু খাবো তো!”
সোরায়া বলার আগে ভেবে দেখেনি কি বলল। বলার পর যে বুঝতে পেরেছে এমনও নয়। মিরায়া আর রায়ান দুজনই তাকে হা করে দেখে যাচ্ছে। সোরায়া রায়ান মিরায়াকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-
“কি হল তোমরা আমাকে এভাবে দেখছো কেন?”
মিরায়ার কথাটা গায়ে লাগলো বোনে বোনে তর্ক শুরু হলে এমনি কেউ কারো থেকে কম যায় না। আবার আদরেও কমতি নেই। মিরায়া সোরায়ার কথার টান ধরে রেখেই বলল-
“নিজের আয়নায় নজর দে। যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা। আবার সুন্দর বর চাই তার।”
তখন সোরায়া আরেকটা চিপস প্যাকেট থেকে বের করে নিজের মুখে ঢুকিয়ে চিবতে চিবতে বলল- “কেন? বর কি আমার সৌন্দর্য ধুয়ে পানি খাবে?”
মিরায়া বাঁকা হেসে সোরায়ার হাতে থাকে চিপসের প্যাকেট টা নিয়ে সেখান থেকে একটা চিপস মুখে ঢুকিয়ে খেতে খেতে উত্তর দিল – “ধুয়ে না খাক অন্যভাবে খাবে। তবু খাবো তো!”
মিরায়ার কথায় সোরায়া চুপ হয়ে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল রায়ানও হতবাক- যে মেয়ে এতো লাজুক, এখন শুধু
তর্ক জেতার জন্য বর বউয়ের খাওয়া খাওয়ি নিয়ে কথা বলছে! মিরায়া চিপসের প্যাকেট থেকে আরো কয়েকটা চিপস রেখে প্যাকেটটা সোরায়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো রায়ান তার দিকেই দেখছে। তবে সে পাত্তা না দিয়ে রায়ানের কোলে থাকা জুলিয়েটের উদ্দেশ্যে বলল-
“মাম্মা, লেট’স গো। কাম অন।”
জুলিয়েট মিরায়ার কথা অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ রায়ানের কোল থেকে লাফ দিয়ে নেমে মিরায়ার কাছে চলে গেল আর মিরায়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে গেল জুলিয়েট তাকে পিছন পিছন অনুসরণ করল। এদিকে সোরায়া রায়ান এখনো অবিশ্বাস্য নজরে দেখে যাচ্ছে একে অপরকে। তারপর সোরায়াও লজ্জা পেয়ে স্নেক্সগুলো তুলে নিয়ে রায়ানকে বলল-“থ্যাংক ইউ, ভাইয়া। আমি গেলাম।” আর এক মূহুর্ত দেরি না করে নিজের রুমে চলে গেল।
রায়ান সোরায়ার ধন্যবাদ এর উত্তর দিতে থাকলো আমতা আমতা করে সোরায়ার যাওয়ার সময়-“ওয়েলকাম চড়ুই পাখি। আস্তে ওঠ সিঁড়ি দিয়ে। তোর জন্য আমি সুন্দর বরই আনবো। আমি কিছু শুনি নি এতোক্ষণ, আই সুয়ের।”
সোরায়া সোজা ঘরে ঢুকেই দরজা শব্দ করে লাগিয়ে দিল। বাইরের আওয়াজ শুনে রামিলা চৌধুরী আর রায়হান চৌধুরী তাদের ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। রায়ানকে দেখেই রামিলা চৌধুরী প্রশ্ন করলেন-
“রায়ান তুই কখন এলি? আর রুদ্র বাড়ি এসে যে বলল মিরা তোর সাথে , তো আমার বউমা কোথায়?”
রায়ান-“এইতো কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। তোমার বউমা নিজের রুমে চলে গেছে আর এখন আমিও যাচ্ছি।”
এই বলে রায়ান সিঁড়ির দিকে যাবে তখনই হঠাৎ রায়হান চৌধুরী উঁচু গলায় বলে ওঠেন-
“মেঝেতে হেলমেট পড়ে আছে কেন? আর এগুলো কোত্থেকে নিয়ে এসেছো?”
রায়ান পিছন ফিরে তাকিয়ে মেঝেতে রাখা দুইটা হেলমেট আর মিরায়ার কেনা টয় এর ব্যাগটা দেখে সেগুলোর দিকে আবার গিয়ে তুলে নিয়ে বলল-
“আজ আমি বাইক কিনেছি। সামনে একটা বড়ো রেস আছে তাই। প্রথমে বউকে বাইকে উঠাবো বলে দুইটা হেলমেট কিনেছিলাম। আর এতক্ষণ বাইকেই ঘুরছিলাম।”
রামিলা চৌধুরী কৌতুহলে-“বাইক কিনেছো ভালো কথা, বউ নিয়ে ঘুরেছ সেটাও ভালো কথা কিন্তু রেস কেন?”
রায়ান কিছু বলতে যাবে তার মায়ের উদ্দেশ্যে তার আগেই রায়হান চৌধুরী রায়ানের হয়ে উত্তর দেয়-
“রামিলা রেস কেন এটা কেমন প্রশ্ন আবার। ছেলে আমার রেস করতেই পারে এটা আহা মরি কিছু না। রায়ান তুই ঘরে যাতো। রেস কবে? রেস না জিতে বাড়ি ফিরবি না বুঝেছিস?”
রায়ান দাঁত বের করে হেসে বাবার কাছে গিয়ে হাতের মুঠো পাকিয়ে বাবার দিকে দিয়ে বলল-
“ইয়েস আব্বু। কাউন্ট অন মি। আই উইল উইন।”
রায়হান চৌধুরীও হাতের মুঠো পাকিয়ে রায়ানের মুঠোতে মেরে বললেন-“দ্যাটস মাই বয়।”
তারপর রায়ান তার মায়ের মুখটা খেয়াল করল। রাগে ফেটে পড়ছে রামিলা চৌধুরীর চেহারা। রায়ান মায়ের রাগ বুঝতে পেরে বাবাকে ইশারা করে তা বুঝায়। আর নিজে মায়ের রাগে একটু পানি ঢালতে মায়ের কপালে একটা ছোট চুমু দিয়ে বলে-
“আম্মু আমি এখন অনেক ক্লান্ত। রুমে যাই এখন ফ্রেশ হয়ে নেই, রাতে খাওয়ার সময় কথা হবে।”
এই বলে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল সে।
এদিকে রায়ান চলে যেতেই রামিলা চৌধুরী রায়হান চৌধুরীর দিকে কড়া নজরে তাকায়। সাথে সাথে রায়হান চৌধুরী মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মন ভোলানো কথা বলতে শুরু করেন-
“আহ্ হা! মহারানি রাগ করছো কেন? ছেলে বড়ো হয়েছে তো।”
এই বলে স্ত্রীর কাঁধে হাত রাখবেন তখনই রামিলা চৌধুরী কাঁধ ঝাঁকিয়ে রায়হান চৌধুরীর হাত দূরে সরিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন-
“এক আপনাকে আমি কখনো বাইক চালানো থেকে আটকাতে পারিনি। এখন আপনার জন্য ছেলেটাকেও সামলাতে পারছিনা। বাইক রাইড করা কত বিপদজনক। ছেলেটার কিছু হলে? আপনি আমার কথা কখনোই শুনেন না আর না আমার মন বুঝেন।”
রামিলা চৌধুরীর চোখে জল ছলছল করতে লাগলো। রায়হান চৌধুরী রামিলা চৌধুরীর চিন্তার কারণটা বুঝতে পেরে তাকে সামলাতে জড়িয়ে ধরতে যাবেন এমন সময় রামিলা চৌধুরী আবার তার হাত ছড়িয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন-
“ধরবেন না আমাকে। আপনি আজকে গেস্ট রুমে শুনবেন। আর যদি ঘরে এসেছেন তো আমি বের হয়ে যাবো এই বলে দিলাম।”
এই বলে রামিলা চৌধুরী রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন রাতের খাবার তৈরি করতে। আর এইদিকে রায়হান চৌধুরী নিজের মাথার আধপাকা চুলগুলো চুলকে বলতে শুরু করল-
“ধুরু, ছেলের শখ দেখতে গিয়ে এখন শখের নারীর নারাজ। কি এমন বলেছি আমি ! শুধু তো রেস করার অনুমতিই দিয়েছি সেটা আমার ছেলে অনুমতি না পেলেও করতো। তোমার আমার ছেলে না জেদে ভরা। এই জন্য গেস্ট রুমে শুতে হবে?” কথা গুলো সামান্য চেঁচিয়ে বললেন যেন রামিলা চৌধুরী শুনতে পান। তবে রামিলা চৌধুরী কোনো প্রতিক্রিয়াই করলেন না নিজের মতোই কাজ করতে লাগলেন।
রাত~৯টা
রায়ান ফ্রেশ হয়ে সোজা রুদ্রর ঘরে গেছে। তখন রুদ্র নিজের ল্যাপটপে বসে কাজ করছে। রায়ানকে দেখেই রুদ্র ল্যাপটপটা বন্ধ করে রায়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করে। রায়ান অনুমতি প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করেই রুদ্ররুমে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে রুদ্রর কাছে এসে দাঁড়ালো।
-“ভাই… ভাইয়া, কিছু কি হয়েছে? কিছু বলবে?”
রুদ্র একটু ভয়ে আমতা আমতা করে বলল রায়ানের চোখে চোখ না রেখেই।
রায়ান ভালোই বুঝতে পারছে যে রুদ্র একটু ভয় আর চিন্তায় আছে। মিথ্যে বললে স্বাভাবিকভাবেই মনে খচখচ করতে থাকে রুদ্ররও তাই হচ্ছে। রায়ান হালকা হেঁসে মাথা নেড়ে বলল-
“কই না তো । কিছু বলার নেই। কারণ ছাড়া কি আমি আমার ভাইয়ের রুমে আসতে পারি না?”
রুদ্র ততক্ষণ আর রায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল-
“আরে ভাইয়া কি যে বল কারণ কেন লাগবে যখন ইচ্ছে তখন আসতে পারো।”
রায়ান রুদ্র দুই কাঁধে নিজের হাত রেখে বলল-
“তবে হ্যাঁ এখন কারণেই এসেছি। কিছু বলতে নয় বরং শুনতে। রুদ্র ভেবে বলতো তোর কি আমাকে কিছু বলার আছে?”
রায়ান ইচ্ছে করে রুদ্রকে পরীক্ষা করার জন্য এমন অদ্ভুত ভাবে জেরা করছে। এতে কাজও হচ্ছে বটে, রুদ্র খানিকটা ভয় পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল-
“ক…কি বলবো ভাইয়া?”
রায়ান আরো একটু হেঁয়ালি করে বলল-
“তুই যা আমাকে বলিসনি বা লুকিয়েছিস এমন কিছু।”
রুদ্র আবার ভাঙা ভাঙা শব্দে বলল-
“আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না ভাইয়া। কি বলতে চাইছো?”
রায়ান এবার অধৈর্য হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্র স্টাডি টেবিলের উপর লাফ দিয়ে উঠে বসে পা দোলাতে দোলাতে রুদ্রর উদ্দেশ্যে বলল-
“তুই যেহেতু নিজের ইচ্ছেতে বলবি না তাহলে আমি প্রশ্ন করি। আমার দূর সম্পর্কের শালীর সাথে তোর কি চলে?”
রুদ্র হা হয়ে যায় বিস্ময়ে। কি বলবে না বুঝে প্রশ্ন করে-
“তোমার দূর সম্পর্কের শালী আবার কে ? তার সাথে আমার কি চলবে?”
রায়ান হেসে নিজের কথার ব্যাখ্যা দিয়ে বলে-
“আমার বউয়ের মানে তোর ভাবীর বোনের মত বান্ধবী, রিমি, ধরতে গেলে আমার দূর সম্পর্কের শালী। তার কথা বলছি। রিমির সাথে কি চলছে তোর?”
রুদ্র একদম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল রায়ানের কথা শুনে এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে বা কি উত্তর দেওয়া উচিত তার কোন কিছুই মাথায় নেই কারন সে নিজেও জানে না তার আর রিমির মধ্যে কি সম্পর্ক বা তারা কেনই বা এতটা কাছে চলে এসেছে। তবুও নিজের অনুভূতি সামলে নিয়ে সে বলতে লাগলো-
“কি আবার চলবে! ভাবীর বান্ধবী যেমন হয় তেমনই। কিছুদিনের কথা হওয়ায় একটু বন্ধু সুলভ সম্পর্ক হয়েছে এই যা।”
রায়ান হেসে স্টাডি টেবিল থেকে নেমে রুদ্রর কাছে এসে মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে-
”তোর চেয়ে গুনে গুনে দুই বছর এর বড় আমি। বড় ভাইকে বন্ধুসুলভ সম্পর্কে বুঝাও? কি মনে হয় কিছু বুঝি না? (কানে ধরে) রেস্টুরেন্টে গিয়ে পাস্তা খেতে খেতে আবার মিথ্যে কথা বলিস যে তুই অফিসে কাজ করছিস।”
রুদ্র রেস্টুরেন্টের কথা শুনে হকচকে উঠে রায়ানের হাত নিজের কান থেকে ছুটিয়ে রায়ানের হাত ধরে বলে-
“ভাইয়া সরি সরি মিথ্যা বলার জন্য। কিন্তু তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না। সম্পূর্ণ বিষয়টাই অন্য এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি। আমি আসলে…।”
রায়ান রুদ্রকে নিজের হাতে মৃদু মারতে মারতে বলে-
“তুই আসলে কি হ্যাঁ? জানিস তোর ভাবী তোদের রেস্টুরেন্টে একসাথে খেতে দেখেছে। যদিও তোকে চিনতে পারিনি কিন্তু রিমিকে ঠিকই চিনেছে। আর রিমি তো মিথ্যা বলেছিল আমি নিশ্চিত তোর কথাতেই মিথ্যা বলেছে সেটাও ধরা পড়ে গেছে। এখন তোর ভাবি রিমির উপর রেগে আছে। ও ভাবছে রিমি কারো সাথে প্রেম করে আর সেটা মিরাকে বলেনি।”
রুদ্র রায়ানের মার থেকে বাঁচতে দৌড়াচ্ছিল তবে মিরায়ার তাদেরকে দেখে ফেলার বিষয়টা শুনেই হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরে বলে উঠলো-
“কিহ্! মিরা…(রায়ান চোখ ছোট করে তাকাতেই) মানে মিরা ভাবি দেখেছে? (রায়ান মাথা নাড়ায়) এখন কি হবে?”
রায়ান রুদ্রর পরিস্থিতি দেখে হেসে ফেললো। আর তখন রুদ্র রায়ানের কাছে এসে বলল- “ভাইয়া এই বারের মত বাঁচাই নাও। ভাবি যেন রিমিকে ভুল না বুঝে যেন কিছু না বলে, প্লিজ প্লিজ। কিছু করো।”
রায়ান হাসতেই থাকে যেটা নিয়ে রুদ্র বিরক্ত হয়। আর তার পর সেও রায়ানকে ব্ল্যাকমেইল করার সুরে বলে ওঠে-
“আজ যে তুমি আর ভাবি ওই মার্কেটে গিয়েছিলে সেটাও রিমি জানে। আর কথা বলতে বলতে তুমি আর ভাবি যে বিবাহিত সেসব অতীতও আমি বলে দিয়েছি উনাকে। এখন তুমি যদি এই দিকটা না সামলাও, তাহলে আমি রিমিকে বলবো উনি যেন সব ভাবি কে বলে দেয়।”
এই বলে রুদ্র মুচকি হেসে উঠলো আর রায়ান সাথে সাথে অবাক হয়ে রাগ মিশ্রিত অঙ্গভঙ্গিতে রুদ্রর দিকে তেড়ে আঙ্গুল উঠিয়ে বলে-
“কিহ্ বললি তুই? রিমিকে সব বলে দিয়েছিস?”
রুদ্র একটু ভয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল- “হুঁ। আমি বলতে চাইনি উনি প্রশ্ন করেছিলেন তারপর আর কথা আটকে রাখতে পারি নি। বলে দিয়েছি।”
রুদ্রর এমন কথা শুনে রায়ানের মনে হল রুদ্রর ঘরের দেয়ালে নিজের মাথা ঠুকে মরে যেতে। রায়ান বিরক্তির স্বরে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে বলতে শুরু করলো-
“হায় আল্লাহ! কি এক বোকা*চোদা ভাই দিসো। কোনো কথা পেটে রাখতে পারে না আগে মাহির কে তথ্য পাচার করতো এখন রিমিও এ্যাড হয়েছে। আমি কই যাব একে নিয়ে।”
রুদ্র রায়ানের গম্ভীর্যতা বুঝতে পেরে রায়ানের কাছে এসে তাকে শান্ত করার জন্য বলে- “ভাইয়া কসম খোদার রিমি ভাবিকে কিছু বলবেনা তুমি শুধু ভাবিকে ম্যানেজ করে নাও যেন রিমিকে ভুল না বুঝে।”
রায়ান রুদ্রর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল- “শালা নিজে সব রায়তা ফেলাই এখন আমাকে পরিষ্কার করতে বলিস কেন? লজ্জা নেই?”
রুদ্র তৎক্ষণাৎ উত্তর করল- “না নাই। এইবারের মতো সামলে নাও না প্লিজ।”
রায়ান নিজেকে শান্ত করে বলল-” আচ্ছা রিমিকে কল দিয়ে বল তোর ভাবিকে সব খুলে বলতে। ও যে মিথ্যা বলেছে তা শিকার করতে আর তার বদলে অন্য কীছু বলতে বল। যেমন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছিল হঠা্ৎ কল আসায় এমন কিছু। মিরাকে বলেনি কারণ মিরা চিন্তা করতো তাই। বুঝেছিস?”
রুদ্র কথা গুলো শুনে ২ মিনিট চুপ করে রইল আর মনে মনে ভাবলো- যে এখন যদি সে রিমিকে এটা করতে বলে রিমি কি আসলে রাজি হবে। কারণ মিথ্যে বলার থেকে সেটা স্বীকার করা আর স্বীকার করার পর আবার মিথ্যে কথা বলা অনেক বেশি পেঁচানো কাজ। রুদ্র রাস্তা না পেয়ে রিমিকে কল করলো।
রিমি তখন রাতের খাবার রান্না করছিল। রুদ্রর কল আসতেই সব কাজ ফেলে সে কলটা রিসিভ করে।
-“হ্যালো রুদ্র! বলুন।”
রুদ্র কিছু ইতস্তুত বোধ করতে করতে বলল-
“রিমি কিছু কথা ছিল একটা ঝামেলা হয়েছে আসলে…!”
রুদ্র নিজের কথা শেষ করতে পারে না তার গলার শব্দ আঁটকে যাচ্ছে। রায়ান বিরক্ত হয়ে রুদ্রর থেকে ফোনটা নিয়ে রিমির সাথে নিজের কথা বলতে থাকে।
রায়ান-“হ্যালো আমার দূর সম্পর্কের শালীকা। তোমার দুলাভাই বলছি। রুদ্রতো তোমাকে সব বলেই দিয়েছে। এখন কথা হচ্ছে তোমরা যে আজকে রেস্টুরেন্টে একসাথে ছিলে সেটা আমার বউ মানে তোমার বান্ধবী দেখতে পেয়েছে। সে রুদ্রকে চিনতে পারেনি তবে তোমাকে চিনতে পেরেছি আর তুমি যে মিথ্যা কথা বলেছ সেটা ধরে ফেলেছে। এখন কথা হচ্ছে, যদি চাও ভুল বুঝাবুঝি না বারুক তাহলে নিজের বান্ধবীকে কল দিয়ে বল তোমার বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথাটা মিথ্যে ছিল আর তুমি একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলে নিজের ব্যক্তিগত কোন কাজের জন্য সেটা হতে পারে নিজের চাকরির জন্য বা হতে পারে কোন জরুরী কারো সাথে দেখা করার জন্য। কারণ তোমার বান্ধবী ভেবে বসে আছে তুমি প্রেম করছো কারো সাথে আর সেটা তাকে এখনো বলনি।”
রায়ানের একটানা সব কথা কানে পৌঁছাল তবে বুঝতে কিছুক্ষণ লাগলো রিমির। তবে রিমি বিষয়টা বুঝতে পারে সোজা একলাইনে উত্তর দেয়-
“ঠিক আছে ভাইয়া আমি এখনি বলছি। ভালো থাকবেন।”
রিমি কলটা কেটে দিতেই রুদ্র রায়ানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলতে থাকে-“হ্যালো রিমি… হ্যালো..!”
রায়ান রুদ্রকে বলল-“কেটে দিয়েছে তো চুপ কর।”
রুদ্র হতাশায় বিছানায় বসে পরল। আর রায়ান তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলল-“যাক আলহামদুলিল্লাহ, বউয়ের পাশাপাশি শালি গুলো ও বুঝদার পেয়েছি। আসলে খোদা একদিকে না দিলে অন্য দিকে ঠিকই দেয়। ভাই বন্ধু গর্ধব হলেই কি শালি দুইটা মাশাআল্লাহ বুদ্ধিমতী।”
তারপর রায়ান রুদ্রর কাঁধে হাত রেখে বলে-“রিমির সাথেই কথা বলবি যদি একটু বুদ্ধি বাড়ে, বলা যায় না।”
এই বলেই রায়ান রুদ্রকে রুমে রেখে নিজে বের হয়ে গেল। যেন শান্তি লাগছে তার। আর রুদ্র নিজের ঘরেই চুপচাপ বসে রইল মন মরা হয়ে। মাথায় এক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে যে মিরায়া কিভাবে রিয়েক্ট করবে সব শুনে।
মিরায়া ঘরে ঢুকেই আগে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছে। এখন নিজের পড়ার টেবিলে বসে সব নোট’স পড়ছিল। এল.এল.বি. এর পড়াশোনা যথেষ্ট কঠিন সেখানে ঠিক মতো সময়ও দিতে পারছে না পড়ায়। তাই অনেক পড়া জমে গেছে। পড়ার সব গুছিয়ে শেষ করার মাঝামাঝি সময়ে রিমির কল আসে।
মিরায়া টেবিলের উপর রাখা নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে রিমির নাম দেখেই মনে মনে একটু বিড়বিড় করল-
“আমাকে মিথ্যা কথা বলে এখন আবার কল দেওয়া হচ্ছে। যাক গে ধরে দেখি এখন আবার কি বলবে।”
মিরায়া রিমির কল ধরতেই রিমি শুরু তেই বলল-
“মিরা জান পাখি আমি খুব সরি রে। আমি না তোকে মিথ্যা বলেছি আর এখন আর মিথ্যা বলে থাকতে পারছি না তাই সত্যি বলতে কল করেছি। একটু শান্ত মাথায় আমার কথাটা শুনবি?”
মিরায়ার রিমির কথায় অবাক হয় কিন্তু মনে মনে খুশি হয়ে হেসে বলল-
“কি মিথ্যা কথা বলেছিস তুই?”
রিমি তার পর রায়ানের বলা কথা মতো মিরায়াকে সব বুঝিয়ে বলল। মিরায়া সব শুনে বিশ্বাস করেও নিল এখন মনে মনে বেশ শান্তি অনুভব করছে সে যে রিমি তাকে মিথ্যে বলে নি। এই দিকে রিমি নিজের মনে বারবার খটখট করছে কারণ সে মিরায়াকে শুরু থেকেই মিথ্যা বলতে চাই নি প্রথমে রুদ্রর তারপর রায়ানের কথায় মিথ্যা বলতে বাধ্য হলো। আসলে মিথ্যা জিনিসটাই এমন প্রকৃতির নিয়মে একটা মিথ্যা ঢাকতে আরো হাজারটা মিথ্যা বলতে হয় তবুও লাভ নেই মানসিক শান্তি কখনো আসবে না। বাস্তবতা যেন রিমির পরিস্থিতির বহিঃপ্রকাশ।
তারপর দুজনে ভালোভাবে কথা বলে ফোনটা রেখে দেয়।
রাতের খাবার সময় সবাই খেতে বসেছে। নিজেদের মতোই সবাই খেয়ে যাচ্ছে। হাঠাৎই মিরায়া আবার খেয়াল করলো কেউই আজ কথা বলছে না। তার মাথায় আবার সকালের ঘটনা যেকে বসলো। সবাই তাকে এড়িয়ে চলছে। মিরায়া বিষয়টা আর মেনে নিতে না পেরে খাবার খাওয়া বন্ধ করে বলে উঠলো-
“আমার তোমাদের সবাইকে কিছু বলার আছে।”
সবাই খাবার খাওয়া বন্ধ করে মিরায়ার দিকে দৃষ্টিপাত করল। তখনই মিরায়া সবার উদ্দেশ্যে বলল-
“কালকে রাতের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত। আমার ওই ভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। তোমরা আমার উপরে আর রেগে থেকো না। প্লিজ আমার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বল আগের মত। আমি আর হলে সিফ্ট করার কথাও বলব না। এই বাড়িতেই থাকবো।”
সবাই মিরায়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো তখন রামিলা চৌধুরী মিরায়া দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন-
“এটা কোন কথা হলো নাকি। তুই আমাদের বাড়ির মেয়ে, হলে শিফট করবো বললেই কি করতে দিতাম নাকি। বেঁধে রাখতাম।”
রায়হান চৌধুরীও হেঁসে উঠে বললেন-
“যাক সুমতি হয়েছে মেয়ের। এই বাড়ির থেকে আর কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।”
মিরায়া আর বাকি সবাই ও হেঁসে উঠে। মিরায়া মিষ্টি হেঁসে রায়ানের দিকে তাকাতেই রায়ান মিরায়ার দিকে চোখ টিপে হাসলো। মিরায়া সামান্য লাজুক হেঁসে মাথা নামিয়ে খেতে থাকলো। বাকি সবাই ও নিজেদের খাবার খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে যাবে।
রায়ান নিজের রুমে যাওয়ার আগে বলল-
“মিরা আমার রুমে এসো একটু পরে এ কাপ কফি নিয়ে।”
মিরায়া, সোরায়া, রুদ্র, রামিলা চৌধুরী ও রায়হান চৌধুরীর সকলেই তাকালো মিরায়া একটু লজ্জায় পরে গিয়ে প্রশ্ন করল- “কেন?”
রায়ান মিরায়া এর প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল-
“তোমার টয়গুলো আমার রুমে। আমার কফি দিয়ে ওইগুলো নিয়ে যাও।”
মিরায়া একটু ভয়ে মাথা নাড়লো-
“আচ্ছা।”
রাতের খাওয়া শেষে যে যার ঘরে যাওয়ার পর মিরায়া রায়ানের কথা মত এক কাপ কফি বানিয়ে রায়ানের রুমে যায়। সে দরজায় দুইবার নক করার পরও ভেতর থেকে কোন আওয়াজ না পেয়ে এসে টুকটুক পায়ে ঘরে প্রবেশ করার পর দেখল রায়ান ঘরে নেই হয়তো ওয়াশরুমে গেছে ভাবল রায়ানের অনুপস্থিতিতে সে কফিটা রেখে নিজের টয় গুলো নিয়ে চলে যাবে।
মিরায়া নিজের চোখ ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগলো তার টয় গুলো। হঠাৎ তার নজর পড়ল রায়ানের বিছানার উপর। বিছানার উপরেই টয়গুলো রায়ান পরপর সাজিয়ে রেখেছে। মিরায়া বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে সাইট টেবিলের উপরে কফির কাপটা রেখে নিজের টয়গুলো হাতে নিয়ে নিল খুশি মনে।
পর মুহূর্তেই তার নজর গেল বিছানার উপরে খোলা অবস্থায় থাকা রায়ানের ল্যাপটপটার ওপর সে কৌতুহলী হয়ে ল্যাপটপটার স্ক্রিনের দিকে নজর দিল। একটা মুভির অপ্রীতিকর চুম্বন করতে থাকা দৃশ্য চলছে সেখানে। মিরায়া সেটা দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ল চোখ বড় বড় হয়ে গেল, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠলো। এমন সময়ই হঠাৎ সে টের পেল তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে মিরায়া ভয়ে ভয়ে নিজের ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখল রায়ান তার পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। রায়ান মিরায়ার লুকিয়ে কিসিং সিন দেখা দেখছিল আর হাসছিল।
মিরায়া হঠাৎ চমকে যায় যেন তার চুরি ধরা পরেছে। মিরায়া হঠাৎ আতকে উঠে দুই পা সরে যেতেই রায়ান মিরায়ার কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আর মিরায়াকে প্রশ্ন করে-
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩১
“কি দেখছিলে হার্ট-বার্ড? ডু ইউ ওয়ানা ট্রাই ইট?”
মিরায়া ভয়ে শিটিয়ে গিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল-
“আপনি এত অশ্লীল কেন? আমাকে একটু বলেন তো।”
রায়ান ঠোঁট কামড়ে হেসে মিরায়ার ভয়ের মজা নিতে বলে-
“হাসপাতালে ল্যাংটো হয়ে জন্ম নিয়েছিলাম তো তাই।”