আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪০ (৩)

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪০ (৩)
অরাত্রিকা রহমান

ড্রয়িং রুম~
মিরায়া রায়ান দুইজন পর পর নিচে নেমে আসার পর রামিলা চৌধুরী তাদেরকে দেখে বলেন-
“তোদের আসার সময় হলো! তাড়াতাড়ি এসে খেতে বসে যা। খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবে না।”
মাহির ডাইনিং টেবিলে বসেছিল। রায়ান মিরায়ার উপস্থিতিতে একনজরে তাদের কে দেখে আবার নিজের খাও আর দিকে মন দেয়। মিরায়া মাহির তাকানোতে হালকা ইতস্তত বোধ করলেও রায়ানের তাতে কোনো ফারাক পড়ল না। মিরায়া লজ্জায় মাথা ঝুঁকিয়ে নিল কিন্তু রায়ান গোট গোট করে হেঁটে খাবার টেবিলের কাছে দিয়ে নিজের চেয়ার টা টেনে বসে পড়ল স্বাভাবিক ও শান্ত মুখে যেন কিছুই হয় নি। মিরায়া রায়ানের হাবভাব দেখে যাচ্ছে এইদিকে মিরায়াকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রায়ান তার পাশের চেয়ার টা জোরে টেনে বের করে বলল-

“খেতে বসতে হলে চেয়ারের কাছে এসে বসতে হবে। চেয়ার নিজে কারো কাছে যাবে না।”
মিরায়া ভালোই বুঝতে পারলো রায়ান তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাটা বলেছে। সেও আর কিছু না বলে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো কিন্তু রায়ানের পাশে নয় বরং বিপরীতে। রায়ান মিরায়ার আচরণে বিরক্ত হয়ে কুটিল চোখে তাকালো মিরায়ার দিকে সাথে মিরায়াও ভাব নিয়ে রায়ানের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করলো-
“সবে তো শুরু মি.হাবি। আমি আমার ভালোবাসার পরীক্ষা এতগুলো বছর দিয়েছি, এবার আপনার পালা। আপনি এতো সহজে আমাকে পাবেন তা ভাবলে অনেক বড় ভুল করছেন। আপনার দূর্বলতা জানার পর, আপনাকে শাস্তি দিতে দূরত্বই যথেষ্ট। আমি মিসেস মিরায়া চৌধুরী যদি রায়ান চৌধুরী কে নিজের পায়ের সামনে না আনতে পারি নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে ফেলবো। আই সুয়ের‌।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রায়ান অদ্ভুত ভাবে মিরায়ার চোখ দেখছে। একটু আগেও যেই চোখ লজ্জা, অস্বস্তি, কামনার অনুভূতি ভারা ছিল, এখন সেই চোখে এতো দৃঢ় ভাব যেন আগুন জ্বলছে। রায়ান মাহিরের সামনে আর কিছু বলার ইচ্ছে প্রকাশ করলো না বরং নিজেকেও সামলে একই শক্ত খোলসে আবৃত করে নিল। মাহির মিরায়া রায়ান দুইজনের দিকেই পর পর তাকিয়ে বিড়বিড় করলো-

“এদের আবার কি হলো হঠাৎ, একটু আগেও তো একসাথে কাঠার মতো লেপ্টে ছিল। আর এখন মনে হচ্ছে দুইজন দুইজনকে কাঁচা খেয়ে ফেলবে চোখ দিয়েই।”
মাহির নিজের ভাবনা তে মোশগুল তখনি রামিলা চৌধুরী খাবার বাড়তে বাড়তে মিরায়াকে প্রশ্ন করলেন-
“হেরে মিরা, ওকে চিনিস তুই?” (মাহিরের দিকে ইশারা করে)
মিরায়া মাহিরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো-“না মামণি, আগে কখনো দেখা হয়নি, তাই চিনি না।”
রামিলা চৌধুরী মিরায়াকে মাহির পরিচয় দিয়ে বললেন-
“তাহলে পরিচয় করিয়ে দেই। ও হলো মাহির, রায়ানের ছোটবেলার বন্ধু। বলতে পারিস এই বাড়ির আরেক টা ছেলে।”

মাহির মুচকি হেঁসে মিরায়াকে গ্রিট করল-
“হাই, আই এম মাহির।”
মাহিরের হাই বলা শুনে রায়ান চোখ বাঁকা করে তাকালো মাহিরের দিকে। মাহির রায়ানের দিকে ফিরে ওর চোখের চাহনি বুঝে আবার মিরায়ার উদ্দেশ্যে নতুন করে বলল-
“আসসালামুয়ালাইকুম..ভা..(মাথা না সূচক নাড়িয়ে) আপু।”
মিরায়া রায়ান কে আবার শক্ত চোখে একবার দেখে ইচ্ছা করে আগ বাড়িয়ে বলল-
“হ্যালো, ওয়ালাইকুম আসসালাম, মাহির ভাইয়া। আমি মিরায়া। আর আমি আপনার অনেক ছোট আপনি চাইলে নাম ধরেও ডাকতে পারেন। সমস্যা নেই।”
মাহির মনে মনে আতকে উঠলো-“খেয়েছে রে, এইবার রায়ান এইটার জন্য ও আমাকে কথা শুনাবে। ভাবি আম্মা গো, আপনার বর খুব একটা সুবিধার না। আপনাকে নাম ধরে ডাকলে, আমার নিজের বউকে কখনো ডাকার সুযোগ নাও পেতে পারি। নো রিস্ক।”

মাহির রায়ানের দিকে দেখলো দ্বিধায় পড়ে। কিন্তু রায়ান চুপচাপ খাচ্ছে যেন কিছু শুনতে পায়নি। মাহির ভালোই জানে রায়ান আসলে মাহিরের জবাবের অপেক্ষায় আছে। মাহির একটু নকল হেঁসে মিরায়াকে বলল-
“বয়সে ছোট হয়েছেন তো কি হয়েছে, সম্পর্কের পরিধি টাই আসল।”
মাহিরের উত্তরে রায়ান একটু বাঁকা হেঁসে মাহির পাতে একা মুরগির লেগ পিস উঠিয়ে দিয়ে বলল- “শাব্বাশ..এই নে এইটা খাঁ।
মিরায়া মাহিরের উত্তর কি ইঙ্গিত করছে বুঝতে পারলো কিন্তু শুধু শুধু আর কথা বাড়াতে চাইলো না। সে কেবল হেঁসে মাহিরের কথায় সম্মতি দিয়ে দিল এমন মনে হলো। মাহির মিরায়াকে দেখে রায়ানের দিকে হালকা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল-

“মামা তুই জিতছোছ!”
রায়ান মনে মনে হালকা হেঁসে মুখে কঠোরতা রেখে বলল-
“হো মামা, আমি জানি। নজর কম দে। নিজের হাঁটুর বয়সী স্টুডেন্ট ক্রাশের কথা ভাব।”
মাহির টিটকারী করে বলল-“ইস্! তোর বউয়ের দিকে নজর দেওয়ার সময় নাই আমার। আর শোন আমাকে বুড়া বলা বন্ধ কর, আমার ক্রাশ অনেক সুন্দর। সময় করে তোকে দেখাবো নি।”
রায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল-“আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। বউ ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের অস্তিত্ব নেই আমার কাছে। তুই ই দেখ।”

মাহির কিছু বলবে তার আগের রায়ান হুমকি দিল-
” এখন চুপচাপ খাবার খা আর রেস হাড়ার জন্য প্রস্তুত হো।”
মাহির মুখ ভেংচে কেটে বলল-“হাহ! দেখা যাবে কে হাড়ে।”
রামিলা চৌধুরী রায়ান ও মাহিরকে খেতে বসে বিড় বিড় করতে দেখে জোরে আওয়াজ করে বললেন-
“তোরা কি ফুসুর ফুসুর লাগালি খাওয়ার মাঝে। চুপচাপ খাবার খেয়ে শেষ কর। পরে সব কথা।”
মাহির সাথে সাথে সোজা হয়ে বসে পড়ে খেতে থাকলো তখনি রামিলা চৌধুরী বললেন-
“সবাই নিচে তো রুদ্র কোথায়? খেতে নামে নি কেন ও।”
রায়ান জানে না এমন অঙ্গ ভঙ্গি করলো। রামিলা চৌধুরী রুদ্র কে ডাকতে থাকলেন-“রুদ্র.. এই রুদ্র…। খাবি না? নিচে আয়।”

রুদ্র উপর থেকে মায়ের আওয়াজ পেয়ে চেঁচিয়ে বলল-
“খিদে নেই খাবো না। তোমরা খেয়ে নাও‌।”
রামিলা চৌধুরী রুদ্রর উত্তরে বিরক্ত হয়ে আওড়ালেন-
“সন্তানরা বড় হয়ে গেলে মায়েদের কি আর বলার কিছু থাকে নাকি। যা ইচ্ছা কর।”
রায়ান মায়ের বিরক্ত হওয়া দেখে বলল-
“আহা আম্মু তুমি খেতে বসো তো। যার খিদে পাবে সে এমনি খেতে চলে আসবে।”
তারপর সবাই নিজেদের মতো খেতে লাগলো। রুদ্রর খিদে পেলেও সে খেতে নামলো না মন ভালো নেই তার। অভ্যাস খুব খারাপ জিনিস আর তা যদি হয় কোনো ব্যক্তি কে ঘিরে সেটা মরণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
রুদ্র নিজের ঘরে বিছানায় শুয়ে বারবার ফোন দেখছিল রিমির থেকে কোনো মেসেজ এলো কিনা তা দেখতে। কিন্তু এতোক্ষণেও ওই পাশ থেকে কোনো মেসেজ না আসায় রুদ্র হতাশ হয়ে বালিশে মুখ চাপা দিয়ে বিরক্তির সাথে বারবার বলতে থাকে-

“কেন করছেন আপনি এমন রিমি। হুয়াই ড্যামেট! কি হয়েছে আপনার।”
রুদ্র নিজে একা একা বিলাপ করতে থাকার মাঝেই তার ফোনে একটা মেসেজ আসার শব্দ হয় কিন্তু রুদ্র কোনো উৎসাহ দেখালো না। এর আগেও কয়েকবার শব্দ হওয়ার পর সে যখনি ফোন চেক করেছে তখনি সেটা অফিসের কোনো মেসেজ ছিল। রুদ্র এবার অনিচ্ছুক ভাবে মেসেজ টা দেখতে ফোনটা হাতে নিয়ে খুলতেই দেখলো রিমির নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। রুদ্র তড়িঘড়ি করে বিছানায় উঠে বসে মেসেজটা পড়লো-
“আমার সাথে দেখা করতে পারবেন রুদ্র? রাত ২টার পরে। প্লিজ কোনো প্রশ্ন করবেন না। আমি আপনার অপেক্ষায় থাকবো ঠিক আমার বাড়ির সামনের মোড়ে। আপনি আসবেন তো?”
রুদ্র মেসেজ পড়তেই আনন্দের উচ্ছাসে হেঁসে উঠলো যেন সে এটাই চাইছিল। রুদ্র মুখে বলতে বলতে রিমিকে কথার জবাব দিল-

“আসবো রিমি। অবশ্যই আসবো। আপনি আমার অপেক্ষা করবে প্লিজ।”
রুদ্র মেসেজ টা সেন্ড করেই চেঁচিয়ে উঠলো-“উউউহুহু…ইয়ে!”
রুদ্রর চেঁচানোর আওয়াজ নিচের ড্রয়িং রুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিল। রামিলা চৌধুরী নিচ থেকে চেঁচিয়ে প্রশ্ন করলেন-
“কি হয়েছে এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?”
রুদ্র হাসিমুখে নিজে ঘর থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল-
“আম্মু খিদে পেয়েছে খেতে দাও।”
টেবিলের সবাই রুদ্রর উচ্ছ্বোসিত মুখের দিকে তাকিয়ে রইল অবাক হয়ে। রামিলা চৌধুরী রুদ্র কে বিরক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলেন-

“তুই না একটু আগে বললে তোর খিদে নেই। এখন আবার খেতে চাইছিস কেন?”
রুদ্র চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল-“আহা ওটা তো একটু আগের কথা একটু আগে খিদে ছিল না এখন খিদে পেয়েছে, তাই খেতে চাইছি সিমপল।”
সামি কাবাবের সারভিং ডিস থেকে একটা কাবাব নিয়ে খেয়ে বলল-“উফ্! কাবাবটা তো জোশ হয়েছে খেতে। তাই না মাহির ভাই? (মাহিরের কাঁধে হাত রেখে)।”
মাহির হেসে বলল -“হুম, আন্টির রান্না বরাবরই বেস্ট। সব গুলো ডিস সেই মজা হয়েছে।”
রায়ান মাঝে ফোড়ন কেটে বললো-” দেখতে হবে না কার আম্মু।”
রুদ্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলল-“আম্মু তো আমারও আম্মু নাকি। নিজে ক্রেডিট নিচ্ছ কেন?”
রামিলা দুই ছেলে ঝগড়া দেখে হেসে মিরায়ার চোখে চোখ মিলালেন। মিরায়াও হাসতে লাগলো দুই ভাইয়ের ঝগড়া দেখে। মিরায়া কথা থামাতে বলল-
“রান্না যেমনি হক ঠান্ডা হলে ভালো লাগবে না রুদ্র ভাইয়া তাড়াতাড়ি বসে পর তার আগে।”
তারপর রুদ্র মিরায়ার কথায় খেতে বসে গেল। সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে যে যার যার ঘরে চলে গেল বিশ্রাম নিতে।

সন্ধ্যা ৭টা~
মাহির রায়ান রুদ্র এক সাথেই ছিল রায়ানের ঘরে। রুদ্র রেসের ব্যাপারে কিছু জানতো না তবে মাহির কিছুক্ষণ আগেই রেসের ব্যাপারে রুদ্র কে জানানোর পরে রুদ্র রাগ করে ছিল রায়ান আর মাহিরের উপর। রায়ান বিরক্ত হয়ে মাহির কে বলল-
“তোকে আমি ওকে রেসের ব্যাপারে বলতে না করেছিলাম না? তো জানলো কিভাবে?”
মাহির বোকা বোকা ভাব নিয়ে বলল-
“কথায় কথায় মুখ থেকে বের হয়ে গেছে দোস্ত। ইচ্ছে করে বলি নি। আর ও কি বাচ্চা মানুষ নাকি রাগ করে আছে কেন?”
রায়ান মাহির কে ঝাড়ি দিয়ে বলল-

“তুই গিয়ে জিজ্ঞেস কর ও বাচ্চা নাকি বুড়া। একটা কথা পেটে থাকে না তোর।”
রুদ্র মুখ গম্ভীর করে রায়ানের PS5 এ ভিডিও গেইম খেলছে। সে মূলত রাগ দেখাচ্ছে রায়ান মাহির নিজেরা নিজেরা রেসের প্লেন করেছে বলে। তাকে একবারও জিজ্ঞেস করেনি কেন সে রেস করবে কিনা- এটাই তার অভিযোগ ছিল। মাহির ধীর পায়ে রুদ্রর কাছে গিয়ে বলল-
“আরে ছোট ভাই প্যারা নেও কেন! এইটা তেমন বড়ো রেস না তো তাই তোকে বলি নি। এর পরের বার বড় রেস হলে তোকে বলবো।”
রুদ্র কুটিল হেঁসে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল-

“ডু আই লুক লাইক আ ফুল টু ইউ?”
মাহির চুপ হয়ে গেলেও পিছন থেকে রায়ান রেডি হতে হতে বলল-
“নো, বাট ইউ আর বিহেইবিং লাইক ওয়ান।”
রুদ্র পিছনে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে নিজের চোখ আবার সোজা করে নিল। রায়ান রুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল-

“শোন বাইক রেস অনেক স্কেয়ারি। বাড়ির এক ছেলে মরে গেলে সমস্যা নেই কিন্তু দুইজনেই মরে গেলে অনেক সমস্যা। সুতরাং, রিস্ক আজকে আমি নিচ্ছি পরে অন্য সময় তুই নিবি। কথা কি ঠিক না ভেজাল আছে।”
রুদ্র মরার কথা শুনে আরো রেগে গেল। তার খারাপ অনুভব হতে লাগলো এই ভেবে, রেসে যাচ্ছে তার আগে কি এইসব মরা বাঁচার কথা বলা খুব জরুরী? কিন্তু মাহির রায়ানের কথায় তাল দিয়ে বলল-
“ঠিক ঠিক। কোনো ভেজাল নাই।”

রুদ্র মাহিরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি তো তোমার বাড়ির একমাত্র ছেলে। তুমি হাসো কেন? তোমার তো আর ভাই বোন নেই।”
মাহির নিজের মতো একটু বোকা হেসে বলল-
“তোর ভাইয়ের মতোন বেপরোয়া না আমি। মরার চান্স আছে বুঝতে পারলে আর আগাবোও না। আমার ভাই বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছা।”
রায়ান বাঁকা হেসে বলল-
“জীবন একটাই, পরোয়া করে বাঁচলে আর বেঁচে লাভ কি।”

রুদ্র আর কিছু বলল না তাকে রেসে না নেওয়ার ব্যাপারে শুধু রায়ানকে সাবধান করে বলল-
” যাচ্ছো ভালো কথা, সাবধানে রাইড করো।”
রায়ান মুচকি হাসলো ছোট ভাইয়ের মুখে এমন চিন্তা ভরা কথা শুনে-
“হয়েছে হয়েছে আম্মু এমন কথা বলার জন্য ইনাফ। তুই আর সঙ্গো দিস না।”
মাহির হেসে রুদ্র পিঠ চাপড়ে বলল-
“আরে বেট্টা সাবধান করিস কেন উল্টে বল ভাইয়া কয়েকটা বাইক উড়িয়ে হাত পা ভেঙে বাড়ি ফিরো।”
রুদ্র আবারও বিরক্ত হলো কিন্তু রায়ান আর মাহির কথাগুলো হাওয়ার উড়িয়ে দিলো হেসে। রায়ান আয়নার সামনে নিজেকে একবার দেখে নিল। স্বাভাবিকভাবে সাদা শার্ট পড়ে ড্রেস আপ করেছে কারণ রেসের অর্গানাইজেশন থেকে রেস উপযোগী সুট প্রদান করা হয়।
মাহির রায়ানকে দেখে বলল-

“ওরে রাইডার মহাশয় কে তো হিরো লাগছে।”
রায়ান পয়েন্টের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে হাসলো মাহিরের দিকে-
“আই ওয়াজ অলয়েস লাইক দিস। হেন্ডসাম এ্যান্ড ড্যাসিং ।”
মাহির রায়ানকে তাড়া দিয়ে বলল-
“হয়েছে চল এবার। তোর বউকে দেখাস এই হেন্ডসাম আর ড্যাসিং লুকস। দেরি হয়ে যাবে, আমাকে আবার বাড়ি গিয়ে রেডি হতে হবে।”
রায়ান মাহিরের দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল-
“ওহ তাই তো, ভালো কথা মনে করিয়েছিস।”
মাহির চোখ বাকিয়ে তাকালো-“আমি আবার কি মনে করালাম?”

রায়ান হেঁসে বলল-“যাওয়ার আগে বউটাকে না দেখলে কি চলবে বল? তুই গাড়ি বের কর নিচে গিয়ে আমি মিরার থেকে গুড লাক নিয়ে আসছি।”
রায়ান কথাটা বলেই বের হয়ে মিরায়ার রুমের দিকে চলে গেল। মাহির রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওই তোর ভাই এতো বউ পাগলা কিভাবে হলো?”
রুদ্র গেম খেলতে খেলতে উত্তর দিলো-
“প্রেমে পড়ো, তারপর বিয়ে করো পড়ে বুঝবা। যেহেতু আমার বউ নাই আমি জানি না।”
রুদ্র মনে মনে রিমির কথা ভাবে বলল-“কিন্তু জানি কিছু মানুষ খুব স্পেশাল হয় যাদের না দেখলে নিজের মনটা ভারী ভারী লাগে।”

রুদ্রর কথায় মাহির চুপ করে গিয়ে একবার নিজের মনে সোরায়ার কথা ভেবে বিড়বিড় করলো-
“পাগলামি তো মন করছে আমার সাথে তাও এমন একজনের জন্য যাকে সেই পাগলামি দেখাতেও পারছি না। আদতেও কি পারবো দেখাতে বা বোঝাতে। ও কি কখনো আমার বউ হবে?”
মাহির নিজের মাথা নাড়িয়ে বলল-“উফ্! মাহির সমস্যা কি তোর। কিসের কি? ও তোর বউ কেন হবে। তোর স্টুডেন্ট ও। গেট আ গ্রিপ অন ইউর ফিলিংস।”
রুদ মাহির অজান্তেই আনমনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

মিরায়া রেসের জন্য সে কি পড়বে তাই চিন্তা করে কয়েকটা জামা বের করে ট্রায় করে করে দেখছিল আয়নায়, একটা কালো কুর্তি হাতে নিয়ে মিরায়া বিড়বিড় করলো-
“হুম, এইটা ভালো হবে আজকের জন্য।”
এই বলে কুর্তি টা ট্রায়েল দিতে নিজের পরনের কুর্তি টা খুলতে উদ্যত হতেই মিরায়ার ঘরে দরজায় নোক না করেই রায়ান ঢুকে পরলো-“হৃদপাখি…!”
মিরায়া নিজের জামা খুলতে শরীরের উপরের অর্ধেক অংশ অব্দি তুলে রায়ানের আওয়াজে দরজার দিকে চমকে তাকায়। রায়ান মিরায়ার খোলা পিঠের দিকে একবার তাকিয়ে মিরায়ার চমকে অবাক বনে যাওয়া চেহারাটার দিকে তাকায়।

মিরায়া বরফের মতো জমে গেছে ওইভাবেই। তার মাথা এক মুহূর্তের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। কি হচ্ছে বুঝে উঠার পরই মিরায়া নিজের জামাটা নিচে নামিয়ে চিৎকার করল‌-“আআআআআআআআ..”
রায়ান ও ভয় আচমকা কি দেখলো বা কি হচ্ছে না বুঝে- “আআআআআআআআ…!” চিৎকার করে দরজার দিকে ঘুরে গেল।
রায়ান মিরায়া হতভম্ব হয়ে গেছে দুইজনেই মনে মনে একসাথে আওড়ালো- “কি ছিল এটা?”
রায়ান কয়েকবার চোখ বন্ধ করলো আর খুললো তার মাথায় ধরছে না সে এক সেকেন্ড আগে নিজের বউকে ওইভাবে দেখলো! রায়ান মাথা ঝাঁকিয়ে দুইবার বাড়ি দিয়ে বিড়বিড় করলো-
“আমি ঠিক কি দেখেছি? মনে আসছে না কেন? উফ্! রায়ান মনে কর মনে কর কি দেখলি। এমন একটা দৃশ্য কিভাবে মনে থাকবে না তোর। বাল।”

রায়ান মিরায়াকে সেইভাবে কল্পনা করার চেষ্টা করতে থাকলো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ঘটনা প্রবাহ এতো কম সময়ে এতো দ্রুত হটকারীতায় ঘটেছে। মাথার মেমোরি তা ধারণ করতে অক্ষম।
এই দিকে মিরায়া রাগে ফুঁসছে। মিরায়া চেঁচিয়ে উঠে বলল-
“এটা কি করলেন আপনি..?”
রায়ান হঠাৎ নিজের ধ্যানে ফিরে নিজেকে বুঝালো-
“হায় রে বউকে একটু খালি গায়ে দেখেছি তাও হাঁফ আর এখন মনেও করতে পারছি না। এটার জন্যও জবাব দিহি করতে হবে আমার। বালের জীবন‌।”

রায়ান বুঝতে পারছিল মিরায়া এবার খুব রেগে গেছে এই সময় যদি সে আরো নরম ভাব দেখায় তাহলে আজ ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে। রায়ান নিজের দৃঢ় ভাব ধরে রেখে মিরায়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো তার দিকে তাকিয়ে। মিরায়া ছোট ছোট চোখ করে বাঘিনীর মতো তাকিয়ে আছে যেন পারলে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে। রায়ান মনে মনে একটু চমকে গেলেও তা প্রকাশ না করে মিরায়ার দিকে শান্ত ভাবে এগিয়ে গেল। মিরায়া তখনও কিছুই বলছে না রায়ানকে শুধু রায়ানের হাবভাব দেখছে।
রায়ান মিরায়ার সামনে এসে বলল-
“হৃদপাখি আমি আসলে…!”

রায়ান কে বাকিটুকু বলতে না দিয়ে মিরায়া রায়ানকে রেগে বলল-“আপনি আসলে কি? আপনার মতিগতি তো মোটেও সুবিধার না। কি নিয়তে এসেছেন আমার কাছে?”
রায়ান মিরায়ার চোখে চোখ রেখে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলল-
“নিয়ত খারাপ হতে যাবে কেন? নিয়ত তো ভালোই। তবে মতিগতির ঠিক নেই এইটা সত্য।”
মিরায়া এবার রায়ানের দিকে আঙুল উঁচু করে বলল-
“আপনি কিন্তু নিজের লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন।”
রায়ান মিরায়ার দিকে এক পা এগিয়ে গেল-
“ভুল বললে, আমার কোনো লিমিট নেই তোমার ক্ষেত্রে সুতরাং তা ক্রস করার কথা উঠছে না।”
মিরায়া এক পা পিছিয়ে গিয়ে বলল-
“লিমিট না থাকলে তৈরি করুন।”

রায়ান এবার দুই পা এগিয়ে মিরায়ার কথার মজা উড়িয়ে বলল-
“হাহ! লিমিট তৈরি মাই ফুট। তোমার আমার মধ্য লিমিটেশন এর ল এলেও তা মুছার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি বেইবি। তুমি চিল করো।”
মিরায়া আবার দুই পা পিছনে যেতেই বিছানার সাথে বাঁধা খেয়ে ব্যালেন্স রাখতে না পেরে বিছানার উপর পড়ে যেতে নিলে রায়ান তার হাত ধরার চেষ্টা করলে মিরায়া রায়ানের হাতের সাপোর্ট নিতে হাত ধরে টানতেই রায়ান ও ব্যালেন্স হাড়িয়ে বিছানায় মিরায়ার উপর পড়ে যায়। মিরায়া আতকে উঠলো-
“আহহ্!”
রায়ান মিরায়ার উপরে পড়ে সাথে সাথে তার শরীরের ভার মিরায়া উপর পড়তেই মিরায়া রায়ানকে তার উপর থেকে সড়তে বলে-
“আহ্! এতো ভারী কেন আপনি। উফ্! সড়ুন না.. দম আটকে মরে যাবো।”
রায়ান মিরায়ার কথা শুনে মাথায় চিন্তার ভীরে বিড়বিড় করলো-
“শুধু তো উপরে গায়ের ভার লেগেছে কিছু তো করিও নি এখনো। তাতেই এই অবস্থা করলে বাকি অন্য সব কিভাবে হবে!”

মিরায়া রায়ানের বুকে হাল্কা আঘাত করে বলল-
“কি হলো উঠছেন না কেন। আমি উঠতে বললাম তো।”
রায়ান মিরায়ার কথায় পাত্তা দিল না। বরং শুধু নিজের শরীর টা মিরায়ার উপর থেকে নামিয়ে নিয়ে মিরায়া মুখ বরাবর শুয়ে থেকে মিরায়ার মুখে পরে থাকা এলো মেলো চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলল-
“রেসের সময় হয়ে যাচ্ছে, এখন যেতে হবে। অনেক কিছু বলার আছে আমার রাতে বাড়িতে ফিরে তোমাকে সব বলবো। আমার জন্য অপেক্ষা করবে। ঠিক আছে?”
মিরায়া রায়ানের মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“যদি অপেক্ষা না করি? আমি যদি চলে যাই তখন?”
রায়ান মিরায়ার নাকে নাক ঘোষে হেঁসে জবাব দিল-
“তুমি যেখানে যাবে, আমি সেখানেই আসবো তোমাকে ফেরাতে হার্ট বার্ড । সেক্ষেত্রে ঠিকানা যদি পাতালপুরীও হয় আমার মনে কোনো দ্বিধা থাকবে না।”

মিরায়া রায়ানের কথায় তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো-“কেন?”
রায়ান মিরায়ার কপালে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিয়ে বলল-
“কারণ, তুমি আমার। আর যা আমার একান্ত নিজের তা ছাড়ার অভ্যাস আমার নেই।”
মিরায়া মুগ্ধ চোখে রায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। রায়ান এবার একটু উৎসাহ নিয়ে বলল-
“রেসের জন্য আমাকে গুড লাক উইস করবে না পাখি?”
মিরায়া মনে মনে হেসে বলল-“অপনেন্টকে আবার কে উইস করে।”
মিরায়া তবু রায়ানকে শুনিয়ে বলল-

“হুম, উইসিং ইউ আ ভেরি গুড লাক। এবার যান দেরি হয়ে যাবে নাহলে।”
রায়ান মিরায়ার উইস শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“জিতে ফিরবেন, এমনটা কেন বললে না? তুমি কি চাও না আমি জিতি?”
মিরায়া আনমনে বলল- “তা তো অবশ্যই। আমি জিতবো সুতরাং আপনাকে হারতেই হবে এই ক্ষেত্রে জেতার উইস করা তো বোকামি হবে।”
মিরায়া আবারো রায়ানকে শুধু মুখে কথা শুনিয়ে বলল-

“ভালো করে রাইড করলে আপনি ই জিতবেন তাই জেতার উইস করি নি। কেন আপনার নিজের উপর বিশ্বাস নেই?”
রায়ান হেসে মিরায়া উপর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মিরায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মিরায়াও রায়ানের হাত ধরে উঠে বসতেই রায়ান নিজের হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে মিরায়ার হাত আকড়ে ধরে বলল-
“ওয়েট ফর মি বেইব। আই উইল ব্রিং ইউ দ্যা ট্রফি।”
মিরায়া হেঁসে বলল -“আই উইল ওয়েট।”
মিরায়া নিজের মনে অন্য এক খিচুড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে-
“আই ক্যান ব্রিং দ্যা ট্রফি টু মি ডোন্ট ওয়ারি মি.হাবি। বাট ইয়োর ওয়াইফ উইল ওয়েট ফর ইউ পর সাম আদার রিজন।”

রায়ান মিরায়ার কপালে আরো একবার চুমু দিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলল-
“ওহ্! একটা কথা তো বলতে ভুলেই গেছি। তোমাকে কালোতে খুব সুন্দর লাগে বেইবি।”
মিরায়া তার কালো কুর্তির দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওটা তো এখনো পড়লামই না। সুন্দর কোথায় দেখলেন আপনি?”
রায়ান কুর্তিটার দিকে না তাকিয়ে ঠোঁট কমরে হেঁসে বলল –
“যা পড়ো নি সেটার কথা বলছি না যেটা পড়েছ সেটার কথাই বলেছি। বাই বেইব। সি ইউ।”
মিরায়া রায়ানের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না সে নিজের শরীরের তাকালো-“কই কিছুই তো কালো পরি নি। এটা তো সবুজ রংয়ের কুর্তি।”

তখনি মিরায়ার নজর গেল তার কুর্তির গলা হালকা সড়ে যাওয়ার কারণে দৃশ্য মান কালো ইনারের স্ট্রেপের দিকে। সাথে সাথে চোখ বড়বড় করে রায়ানকে বোকলো –
“অসভ্য, ইতর, অশ্লীল লোক। সব দেখেছে তখন। অথচ ভাব দেখালো কিছুই দেখে নি। আআআহাহা..”
মিরায়া কয়েকবার বিছানার উপর হাত আঘাত করলো বিরক্তিতে।
রায়ান বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় তার বাইক নিয়ে মিরায়ার থেকে বিদায় নেওয়ার পর। প্রথমে সোজা মাহিরের বাড়ি আর তার পর মাহির নিজের বাইক নিয়ে নেওয়ার পর সোজা রেসের ময়দানে।

মিরায়া ছাদে থেকে সেই ডিভোর্স এর পেপার টা নিয়ে এলো তার ঘরে। ডিভোর্স পেপার টা সামনে রেখে মিরায়া এক নাগাড়ে তা দেখে যাচ্ছে। তার কোলে জুলিয়েট গুটি শুটি মেরে বসে আছে। মিরায়া জুলিয়েটের গায়ে আদর করতে করতে প্রশ্ন করলো-
“জুলি? এই জুলি? তোর কি মনে হয় পাপা মাম্মা কে কতোটা ভালোবাসে?”
জুলিয়েট চুপ করে আছে কোনো শব্দ নেই তার। মিরায়া নিজেই বললো-
“তুই জানিস না। তাই না? মাম্মাও জানি না। কিন্তু জেনে যাবো।”
মিরায়া হাতে একটা কলম নিয়ে ডিভোর্স পেপারের তার সাইনের জায়গা তে কিছু লিখলো। মুখ উজ্জ্বল ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাঁসি। নিজেকে খুব সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে তার এখন। মিরায়া হাতের কলমটা রেখে জুলিয়েট কে হাতে তুলে সামনে এনে বলল-

“এবার দেখার পালা তোর পাপা নিজের কথা রাখবে কিনা। মাম্মা চলে যাচ্ছি সোনা। মাম্মার জন্য পাপা ঠিক কতো টা পাগল নাহলে যে বুঝতে পারবো না। তুই সবাইকে পাহারা দিয়ে রাখিস। পাপা মাম্মাকে নিয়ে এলে মাম্মা দ্রুত চলে আসবো।”
জুলিয়েট মিরায়ার কথা কি বুঝলো সে নিজেই জানে‌। মিরায়ার শরীরের সাথে চিপকে রইল কিছু সময়। হঠাৎ তখনি মিরায়ার কল বেজে উঠলো সোরায়া কল করেছে। মিরায়া সোরায়াকে রায়ান আর তার ব্যাপারে দেখা হলে বলবে এমনটা ভেবে রেখেছে। তাই খুশি মনে শুধু কলটা ধরে কথা বললো সেসব না বলে।
মিরায়া-“হ্যালো বনু.. কেমন আছিস? বাড়ির সবাই কেমন আছে?”

সোরায়া উৎসাহ নিয়ে বলল-“বাড়ির সবাই আর আমি অনেক ভালো আছি। তোমাকে খুব মিস করি। আজকে বাইক রেস তাই আমাদের বাইক কমিউনিটিতে এসেছি সবাই তোমার রেসের জন্য অনেক বেশি এক্সাইটেড।”
মিরায়া হেঁসে বলল-“আমিও তোকে খুব মিস করছি রে বনু। তবে ভাবিস না খুব শীঘ্রই দেখা হবে আমাদের। সবাইকে চিন্তা করতে না কর আমি জিতে ট্রফি নিয়ে ফিরবো।”

সোরায়া মিরায়াকে গুড লাক উইস করলো-“অল দ্যা বেস্ট আপু। গো এ্যান্ড কিল ইট।”
তখনই সোরায়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল আসিফ। সেও মিরায়াকে উইস করলো-
“হ্যালো মিরা? ওহ সরি এখন তো মিরা বললে হবে না। আমাদের বাইক রাইডার রায়ার সাথে কথা বলছি এখন। আল দ্যা বেস্ট। নিজের টেকনিক গুলো মাথায় রেখে শান্ত মনে রাইড করবি সাবধানে। ঠিক আছে?”
মিরায়া বুঝতে পারলো গলাটা আসিফের তাই মুচকি হেসে উত্তর করলো-
“জ্বি ভাইয়া সব মাথায় থাকবে চিন্তা করবেন না।”
আসিফ মিরায়াকে তাড়া দিয়ে বলল-

“তুই বের হবি কখন এখন না বের হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি রওনা দে। বাই। জিতে কল করবি।”
মিরায়া-“ওকে ভাই। বাই। বনুকে বলবেন যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যায় সন্ধ্যা হয়েছে।”
আসিফ-“আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাস।”
মিরায়া কলটা রেখে দিয়ে রেডি হতে শুরু করে। এই দিকে আসিফ তখনি সোরায়া কে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আসিফ সবার সাথে মিরায়ার প্রশংসায় যখন পঞ্চমুখ তখনি একজন আসিফ কে প্রশ্ন করলো-
“ভাই রেসটার অফার আপনাকে করা হয়েছিল তাহলে আপনি এই অপরচুনিটি রায়াকে কেন দিলেন?”
আসিফ মুচকি হেঁসে বলল-

“রেস রায়া করুক বা আমি আমার জন্য ওর জেতার খুশিটা একই। সেই ছোট থেকে ওর বাইকের প্রতি ডেডিকেশন দেখেছি। বাইক চালানো শিখিয়েছি আমি জানি ওর জন্য এই রেসটা কতটা ইম্পরট্যান্ট। এটা ওর প্রাপ্য। তাছাড়া ভালোবাসার মানুষের জন্য এতো টুকু করতে পেরে আমি ধন্য।”
ছেলেটি-“ভাই আপনি রায়াকে ভালোবাসেন? কবে থেকে?”
আসিফ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলল-“ঠিক যাবে থেকে ভালোবাসা কি বুঝেছি। রায়া আমার, একান্ত আমার তাই ওর খুশিও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

ছেলেটা কমিউনিটির বাকি সবাইকে খবরটা জানিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে সবার হাতে তালিতে খুশির রোল ছড়িয়ে পড়ল। আসিফ সবার খুশি দেখে নিজেও আনন্দ নিচ্ছে। আজ প্রথম সে নিজের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো সবার কাছে।
আসিফ মনে মনে বলল- “মিরা সবাই আমাদের জন্য কত খুশি। তুই আমার হলে আমি তোকে তোর সব খুশি এনে দেব। এবার তুই চট্টগ্রামে ফিরলেই তোকে সব মনের কথা বলবো। তুই আমার নিজে প্রশিক্ষণে তৈরি রায়া, তোর প্রতি অধিকার ও শুধু আমার।”

রেসের ময়দান~
রাতের রেসের ময়দান—একটা আলাদা জগৎ যেন।
চারদিক ঘেরা অন্ধকার, কিন্তু ট্র্যাকজুড়ে ছড়ানো হাজারো আলোয় ঝলমলে এক বিদ্যুতায়িত পরিবেশ।
স্পটলাইটের তীব্র সাদা আলো ট্র্যাকের উপর পড়ে চকচক করছে, বাইকের ধাতব গায়ে প্রতিফলিত হয়ে একধরনের আগুনের মতো ঝিলিক দিচ্ছে।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪০ (২)

চারপাশে বাতাস ভারী—পেট্রোল, ধোঁয়া আর উত্তেজনার গন্ধে মিশে থাকা গরম নিশ্বাসে।
দর্শক গ্যালারি গর্জে উঠছে—চিৎকার, বাঁশি, ঢাকঢোলের শব্দ মিলেমিশে এক অদ্ভুত তীব্র সুর তৈরি করেছে।
দূর থেকে মাইক্রোফোনে ঘোষকের কণ্ঠ ভেসে আসছে—

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here