আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১ (২)
অরাত্রিকা রহমান
লারা উত্তেজিত হাসিতে সবার উদ্দেশ্যে মাইকে বলতে শুরু করলো- “এবং এখন সময় এসেছে সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার—আজকের রাতের রেসের ধারাবাহিকতা!”
আদ্রিয়ান মজার গলায়- “ঠিক তাই! আজকের প্রতিযোগিতা একেবারে টানটান উত্তেজনায় সাজানো। প্রথমে মাঠে নামবে আমাদের দুর্দান্ত বয়েজ টিমের প্রতিদ্বন্দ্বীরা— ৫০ জন রাইডার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে শুধু একজন!”
লারা আদ্রিয়ানের কথা সম্পূর্ণ করে বলল- “আর তাঁদের মধ্য সেই একজনকে বেছে নেওয়া হবে বয়েজ টিমের আজকের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে! তারপরই মাঠ কাপাতে আসবে গার্লস টিমের প্রতিদ্বন্দ্বীরা—যেখানে দেখা যাবে কেমন হয় স্পিড, স্টাইল আর সাহসের আসল রাজত্ব!”
এবার আদ্রিয়ান চোখ টিপে হেসে লারার কথা সম্পূর্ণ করে বলল- “বাই দ্যা ওয়ে, সেখানেও কিন্তু একজনই টিকে থাকবে—গার্লসদের মধ্যে একমাত্র কুইন অব ট্র্যাক কে বেছে নেওয়া হবে গার্লস টিমের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে!”
লারা মঞ্চে হাঁটতে হাঁটতে-“তবে এখানেই শেষ নয় ভিউয়ার্স!
কারণ সেই দুই চ্যাম্পিয়ন—একজন ছেলে, আর একজন মেয়ে—তারা আবার মুখোমুখি হবে এক আল্টিমেট রেসে!”
আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে বলল-“ঠিক তাই! আজকের রাতের শেষ ধাপ—‘দ্য ব্যাটল অব রাইডার কিং অ্যান্ড কুইন!’যেখানে গতি আর বুদ্ধি, দুটোই হবে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লারা মাইক্রোফোন তুলে ধরে-“আর শেষে যে জিতবে—সে-ই হবে আজকের রাতের আল্টিমেট উইনার! যার নাম লেখা হবে এই বছরের রেসের ইতিহাসে—‘দ্যা আল্টিমেট রাইডার কিং অর কুইন অব দ্য ইয়ার!’”
দর্শকসারি তখন কাঁপছে উল্লাসে। ব্যানার উড়ছে, কেউ হাততালি দিচ্ছে, কেউ কেউ চিৎকার করছে — রেসারদের মনের মাঝেও ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। মিরায়া রায়ানের দিকে শক্ত নজরে তাকালো হেলমেটের আড়াল থেকে আর মনে মনে বলল -“মি. হাবি, বি রেডি টু লুজ দিস টাইম। আমি স্পেয়ার করবো না।”
রাত-৯টা~
রাতের ঘন অন্ধকারে নীলাভ আলোর ঝলকানি আর গর্জে ওঠা ইঞ্জিনের শব্দে রেস ট্র্যাকটা কাঁপছিল যেন। কয়েক মিনিট আগেও যেখানে ভিড় জমেছিল হাজারো দর্শকের, এখন সেখানে এক টুকরো নিস্তব্ধ উত্তেজনা। পুরো মাঠ ফাঁকা, শুধু স্টার্টিং পয়েন্টে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ৫০ জন বয়েজ রাইডার — প্রত্যেকের হেলমেটের ভেতরে জ্বলজ্বল করছে জয়ের আগুন। আর গার্লসরা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এক দূরদর্শী রেস দেখার অপেক্ষায়।
রেস ট্র্যাকের লাইটগুলো হঠাৎ একে একে জ্বলে উঠলো— চোখ ধাঁধানো আলোর সাথে ঝলসে উঠলো বাইকের চকচকে বডি, হেলমেটের প্রতিফলন, আর সবার চোখে সেই একটিমাত্র লক্ষ্য।
রায়ান আছে একদম মাঝ বরাবর। কালো জ্যাকেটের কলার একটু উঁচু করা, হেলমেটের ভিসর নামানো, বাইকের থ্রোটল টেনে টেনে সে যেন নিজের সীমানা ছুঁয়ে ফেলতে চাইছে। ওর চারপাশের সবকিছু নিস্তব্ধ— দর্শকের চিৎকার, লাইটের ঝলকানি, প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপস্থিতি— সব যেন মিলিয়ে গেছে। এখন শুধু সে আর তার বাইক। এইদিকে মিরায়া অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে কেবল রায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু বুঝার চেষ্টা করছে কি ভাবছে রায়ান। মিরায়া ফিঙ্গার ক্রস রেখে বলল-
“আল্লাহ, তুমি উনার সহায় হইয়ো। অল দ্যা বেস্ট হাবি। উইন দিস ফর লুজিং টু মি।” (ঠোঁটে এখনো বাঁকা হাঁসি বিদ্যমান)
লারা মাইক্রোফোনে গর্জে উঠলো—
“লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলমেন, গেট রেডি ফর দা নাইট অব স্পিড! কাউন্টডাউন শুরু হচ্ছে!”
আদ্রিয়ান-“দ্যা রেস স্টার্টস উইথ দ্যা কাউন্টডাউন অব
“থ্রি… টু… অ্যান্ড ওয়ান…”
“গো!”
একসাথে ৫০টা বাইক চিৎকার করে উঠলো! মিরায়ার বুকটা ধক করে উঠলো হঠাৎ। নিজের রেসের সময়ও কখনো এমন হয়নি তার। বরাবরই নার্ভ খুবই স্ট্রং তার তবে রায়ানের ক্ষেত্রে এমন কেন অনুভব করলো তা সে নিজেও ঠাওর করে উঠতে পারলো না। ট্রেকটা ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে গেল প্রথম প্রান্ত। সবাই সর্বোচ্চ গতিতে ছুটছে— কেউ বাইক কাতিয়ে কর্নার কাটছে, কেউ হুইলি করছে, কেউ নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ছিটকে পড়ছে। শুরুতেই ৪–৫টা বাইক একসাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল— মাটি থেকে স্ফুলিঙ্গ ছিটকে উঠলো। স্বাভাবিক ভাবেই ৫০টা বাইক এক স্পিডে আগে যেতে চাইলে জায়গার স্বল্পতার জন্য চাইলেও তারা ব্যালেন্স রাখতে সক্ষম হবে না।
প্রথমেই লিড নিচ্ছে জ্যাক। তার স্টাইল, স্পিড— দুই-ই নিখুঁত। কিন্তু বেশি সময় নয়। রায়ান এখনো ধৈর্য ধরে বাইক চালাচ্ছে— কারো ধাক্কা লাগলে হালকা এড়িয়ে যাচ্ছে, চোখের কোণ দিয়ে কেবল সামনে তাকিয়ে। অল্প কিছু পর থেকেই সে এক এক করে সবাইকে পাস করতে শুরু করলো।
তার বাইকের শব্দ অন্য সবার চেয়ে গভীর, যেন গর্জন করছে কোনো জন্তু। প্রতিবার গিয়ার চেঞ্জ করার সাথে সাথে বাইকের পেছন থেকে আগুনের মতো ধোঁয়া উড়ে আসছে।
সামনে এগিয়ে আছে পাঁচজন সবচেয়ে নামী রাইডার—
রোহান, জ্যাক, মাহির, আদনান আর তানভীর ।
এই পাঁচজনই সেরা। অন্যরা কেউ ভাবতেও পারেনি, নতুন একজন ছেলে — রায়ান — তাদের মধ্যে ঝড় তুলবে।
রোহান এগিয়ে ছিল প্রথম কর্নার থেকে। তার বাইকের হুইল চিৎকার করছে অ্যাসফল্টে। হঠাৎই পিছন থেকে একটা কালো ঝলক—রায়ানের বাইক, একটা নিখুঁত inside lean turn করে রোহানকে পেরিয়ে গেল, এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে যে দুজনের বাইকের পেছনের অংশ ঘষে গেল একে অপরের সাথে।
রোহান কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল-“হেই, আর ইউ মেড?! ধীরে চালাও!”
রায়ান তার দিকে পিছনে না তাকিয়ে মৃদু হাসল আর চিৎকার করলো— “রেসে ধীরে থাকা মানে, মৃত পরে থাকা হবে। সুট ইউর সেল্ফ ব্রাদার।”
রোহান কন্ট্রোল হারিয়ে এক মুহূর্তে ট্র্যাকের ধারে গিয়ে পড়লো। দর্শকদল শ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে রইলো। এর পর সামনে ছিল— আদনান ।
আদনান বাইকটা একদম হাই গিয়ারে তুলে রেখেছে, কিন্তু তার কর্নার নেওয়ার কৌশল দুর্বল। রায়ান দূর থেকেই সেটা বুঝে নিয়ে একটা fake move করল— বাম দিকে হঠাৎ কাত হলো, তারপর ডানদিকে বাইক টেনে তুলে আদনানের পাশ কেটে গেল সাপের মতো। আদনান দিকভ্রান্ত হয়ে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ফেলল— বাইকটা স্লাইড করে পিছনে রয়ে গেল।
দুইজন রাইডার- আদনান আর তানভীর বুঝলো, এই ছেলেটাকে যদি থামানো না যায়, তারা হেরে যাবে। তাই তারা নিজেরা ইশারায় কিছু প্ল্যান করলো রায়ানকে মাঝপথে ব্লক করতে। তারা দুজন দুই পাশ থেকে এসে রায়ানকে চেপে ধরলো। মিরায়া গ্যালারি থেকে ভালোই বুঝতে পারছে ইচ্ছা করে অন্য রাইডার রা রায়ানকে টার্গেট করছে। মিরায়া মনে মনে না পাত্তা দেওয়ার মতো করে বিড়বিড় করলো-
“হাহ্! হারামজাদা দের ফেয়ার খেলে জেতার মুরোদ নেই তাই এখন দলবেঁধে পিছনে পড়েছে একজনকে হাড়াতে, ছ্যাঁ!”
রায়ান তার দুই পাশে দুইজনকে দেখে তাদের প্লেনের আন্দাজ করতে পেরে শুধু ঠোঁটের কোণে একটুখানি তুচ্ছ হাসি ফুটিয়ে বলল নিজের মনে—
“ট্রায় হার্ড বয়েজ…কজ ইট’স গনা বি ফা*কিং হার্ড।”
এরপর হঠাৎ করেই রায়ান গিয়ার চেঞ্জ করে, বাইক হালকা বাঁকিয়ে নিয়ে সোজা এগিয়ে যেতেই, আদনান আর তানভীর বাইক একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধূলার মধ্যে ছিটকে পড়লো!
রায়ান পিছনে ফিরে একবার তাকিয়ে মিডল ফিংগার দেখিয়ে হেসে উঠলো-“Bye-bye, mother fu***er.”
দর্শকের গ্যালারি থেকে তখন চিৎকার—“রায়ান! রায়ান! রায়ান!”
মিরায়া মুচকি হেঁসে উঠলো বলতে বলতে-“বেশ হয়েছে, আরো পিছনে লাগ।”
রেসের শেষ দিকে মাহির রায়ান পাশাপাশি এগিয়ে ছিল। রায়ান ধীরে ধীরে মাহিরের কাছে গেল। দুই বন্ধুর মধ্যে তখন হালকা মজার প্রতিযোগিতা—
মাহির চিৎকার করে বলল-“ওই তুই কি মরতে চাইছিস? ধীরে চালা। এভাবে অন্য রাইডার দের ধুলো না খাওয়ালে ও জিততে পারবি।”
রায়ান হেঁসে উত্তর দিল-“এমনি এমনি জিতে গেলে আর মজা কোথায় থাকলো। বাকিরা তো তাও আমির শিকার হওয়ার সুযোগ পেয়েছে তুই আগে আমার বাইকের ধোঁয়াটা পেরিয়ে আয়। তারপর কথা বলি! বাই”
এক সেকেন্ডে গিয়ার চেঞ্জ, স্পিড মিটার ৩০০ পার করে, রায়ান এগিয়ে গেল মাহিরকে পেছনে ফেলে। মাহির ও কম না সেও বাইক ছুটালো স্পিডে।
চারপাশে তখন যেন বজ্রপাতের গর্জন। রেস ট্র্যাকের ধুলো বাতাসে উড়ে যাচ্ছে, লাইটগুলো কাঁপছে উত্তেজনায়। বাইকের ইঞ্জিনের আওয়াজে যেন পৃথিবী থেমে গেছে। সামনে মাত্র আর দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী— রায়ান আর জ্যাক।
বাকি সবাই পিছনে, আর গ্যালারির দর্শকদল নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে—এই রাতের রাজা কে হবে!
রায়ান জ্যাকের পাশে আসার পর পরই জ্যাক রায়ান কে উদ্দেশ্য করে গর্জে উঠল—
“হেই ইউ মি. বিলেত ফেরত রাইডার! এটা বাংলাদেশে আমেরিকা নয়, এখানে তোমার অনুযায়ী কিছু হবে না!”
রায়ান ঠোঁটে একপাশে হালকা হাসি টেনে উত্তর দিল—
“রেসে পতাকা দেখে নয়, স্পিড দেখে রাজা চেনা যায়, ব্রাদার। ট্রায় মি ওয়ান’স, আই সুয়ের ইউ উইল নেভার ডেয়ার টু সে সাচ থিংস।”
এমন একটা আত্মবিশ্বাসী কন্ঠ জ্যাককে আরও পাগল করে দিল।
এখন ট্র্যাকের শেষ অংশ — বাঁকানো, ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে একটুও ভুল মানে মৃত্যুর সম্ভাবনা। দুজনের বাইক পাশাপাশি চলছে। দর্শকেরা উঠে দাঁড়িয়েছে। গ্যালারির মেয়েরা, বিশেষ করে লেডিস বাইকার টিম, সবাই নিশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে রায়ানের দিকে। মিরায়ার হৎস্পন্দন অদ্ভুত গতিতে বেড়েই চলেছে। মিরায়া নিজের হাতে দুটোতে ফিঙ্গার ক্রস করে রেখেছে।
রায়ান হেলমেটের গ্লাস সামান্য তুলে এক মুহূর্তে জ্যাকের চোখে তাকাল। সে দৃষ্টিতে ছিল বিদ্যুতের মতো চ্যালেঞ্জ—
“লেট’স সি। কার কত দম।”
তারপর শুরু হলো রেসের সবচেয়ে ভয়ংকর অংশ— “ডেথ টার্ন”। জ্যাক বাইকটাকে একদম বাম দিকে কাতিয়ে রায়ানের সামনে গিয়ে ব্লক করলো। রায়ান এক মুহূর্তও থামল না।
সে বাইকের ক্লাচ ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ ব্রেক করে পেছন থেকে ড্রিফট করলো— বাইক ঘুরে গেল ১৮০ ডিগ্রি! ধুলো উড়ে গেল, দর্শক চিৎকার করে উঠল!
তারপর সে পেছন ঘুরে গিয়ার ঠেলে আবার সামনের দিকে ছুটে গেল— স্মোক ট্রেইল তার পেছনে সাপের মতো পাক খাচ্ছে। জ্যাক পিছন থেকে ধাওয়া করছে। দুই বাইক প্রায় পাশাপাশি। রায়ান এবার বাইকের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে স্ট্যান্ড হুইলি করলো— এক চাকার ওপর ভর দিয়ে এগিয়ে গেল কয়েক সেকেন্ড, দর্শকের চোখে শুধু আগুনের রেখা!
গ্যালারির মেয়েরা তখন পাগল প্রায়— “ওমাইগড! দেখ ওর ব্যালেন্স! রায়ান ইজ ইনসেইন! ওয়াও”
লেডিস ব্রেকারদের মধ্যে কয়েকজন তো দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে, কারো চোখে ঝিলিক, কারো ঠোঁটে একফোঁটা মুগ্ধ হাসি।
-“হুয়াট আ রকিং লিজেন্ড!”
মিরায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখলো তার পাশের মেয়ে গুলো কে, পারলে যেন এখনি খেয়ে ফেলবে। মিরায়া মনে মনে বিলাপ করলো-“এই পেতনি গুলো এখনো আমার বর টার দিকে নজর দিয়ে আছে। উফ্! ধুরু বাল, দেখার মতো বর থাকলেও তো দেখি খুব সমস্যা।”
পর মুহূর্তেই আবার ট্র্যাকে নজর ফেরালো। এখন রেসের একটা সেকেন্ড মিস করা মানেই সময় বরবাদ।
এদিকে জ্যাক হাল ছাড়েনি। রায়ানকে আক্রমণ করার জন্য সে হঠাৎ বাইক ঘুরিয়ে পাশ থেকে ধাক্কা দিল।
রায়ান হেলমেটের ভেতর হেসে ফেলল—“Nice try.”
সে বাইকের হ্যান্ডেল কাতিয়ে বাইকের পিছনের চাকা দিয়ে জ্যাকের বাইকের সামনে ধাক্কা ফিরিয়ে দিল—ঠাসসস!
জ্যাকের বাইক একদম ভারসাম্য হারিয়ে ট্র্যাকের বাইরে ছিটকে গেল, ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে ঘাসের মধ্যে পড়ল! ছোট লাগেনি কোনো সেফটি থাকায়।
রায়ান চোখের সামনের গ্লাস ভিসর নামিয়ে হালকা মাথা নাড়ল-“Game over, champ. অন্য দিন জেতার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নামবে যেদিন রায়ান রেসে নামবে না। বাই।”
মিরায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এতোক্ষণে।
তারপর গিয়ার ফাইভ, বাইকের রেভ ৩৫০ পার করল—
ফিনিশ লাইন কয়েক সেকেন্ড দূরে, গ্যালারি তখন সম্পূর্ণ উন্মাদ! সবাই দাঁড়িয়ে, কেউ মোবাইল তুলে ভিডিও করছে, কেউ রায়ানের নাম চিৎকার করছে— “রায়ান! রায়ান! রায়ান! রায়ান দ্যা চ্যাম্পিয়ন!”
সবার সাথে স্পোর্টস ম্যানশিপ দেখিয়ে মিরায়া ও মুখে হালকা হাঁসি নিয়ে হাতা তালি দিয়ে উঠলো। তবে চোখে মুখে গর্বিত অনুভূতি স্পষ্ট। মিরায়া বিড়বিড় করলো-
“ওয়েল ডান হাবি। নাও ওয়েট ফর ইয়র ওয়াইফ টু উইন।”
“রায়ান! রায়ান! রায়ান!!!” প্রতিধ্বনি চারপাশে এখনো বিদ্যমান। চিৎকারে যেন আকাশ ফেটে যাচ্ছিল। বাতাসে মিশে আছে টায়ারের ধোঁয়া, গরম ইঞ্জিনের গন্ধ আর মানুষের উত্তেজনার ঢেউ।
স্টেজের লারা মাইক্রোফোনে চিৎকার করে উঠল—“ওহ মাই গড! হোয়াট ওয়াজ দ্যাট! হুয়াট আ রাইড, ওয়াও!!
লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান, গিভ ইট আপ ফর দ্য কিং অব দ্য নাইট— রায়ান চৌধুরী!!! ”
পুরো মাঠ যেন রণক্ষেত্র— কেউ হাততালি দিচ্ছে, কেউ মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে ভিডিও করছে, আর মিরায়া…মিরায়াও দাঁড়িয়ে একপাশে থেকে রায়ান কে দেখছে। হেলমেট হাতে, বুকের ভেতর কেমন একটা গরম ঢেউ।
রায়ান মৃদু হাসল, হেলমেট খুলে ঘাড় ঝাঁকিয়ে ঘাম মুছে নিল।
দর্শকরা আবারও একসাথে চিৎকার—“রায়ান! রায়ান!”
আদ্রিয়ান মঞ্চে উঠে এবার ঘোষণা দিল- “এন্ড নাও, দ্যা মোমেন্ট ইউ হ্যাভ বিন ওয়েটিং ফর! গার্লস রেস— দ্য কুইন অব দ্য নাইট! চলো দেখি, আজকের ‘লেডিস অব স্পিড’ এর মধ্যে কে নিতে পারে রায়ানের পাশের চ্যাম্পিয়নের জায়গা!”
গ্যালারির সবাই আবার চিৎকারে ফেটে পড়লো। আলো বদলে গেল— এবার নীলের সঙ্গে মিশলো বেগুনি লাইট। ট্র্যাকের ধুলোয় যেন ঝলমলে পরীর ছায়া। জায়গায় তৈরি হলো এক চাপা, ভারি উত্তেজনা।
ঠিক ১৫ মিনিটের মধ্যেই দর্শকের চোখ ঘুরে গেল ট্র্যাকের দিকে— লেডি রাইডাররা তখন নিজেদের বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে। কেউ গ্লাভস পরছে, কেউ হেলমেট ঠিক করছে, কেউ বাইকের চেইন-গিয়ার চেক করছে।
মিরায়া হালকা নিঃশ্বাস নিয়ে—রায়ানের দিকে একবার তাকালো, কিন্তু কেন জানি রায়ানের মুখে বিজয়ের হাঁসি টুকু নেই। রায়ান ও একই সময় মিরায়ার দিকে তাকালো। চোখাচোখি হয়ে যেতেই মিরায়া চোখ সড়িয়ে নিল নিজের।
মাহির রায়ানের কাঁধে হাত রেখে উৎসাহ নিয়ে বলল-
“ভাই কি দিলি রে, চুম্মেসুয়েরি। মাজা আ গেয়া। কিন্তু এমন গোমড়া হয়ে আছিস কেন? জেতার খুশি হচ্ছে না?”
রায়ান সামনে ট্যাকে তাকিয়ে বলল-“এখনো জেতা বাকি।”
মাহির ভাবলো রায়ান বলছে এখনো তো আল্টিমেট রেস জেতার বাকি আছে। মাহির তুচ্ছ হেঁসে বলল-
“আরে যেখানে এতো গুলো ছেলে তোকে হারাতে পারে নি একটা মেয়ে কি হারাবে। চিল কর তখনও জিতে যাবি।”
রায়ান বিরক্ত হয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি বেট জেতার কথা বলছিলাম।”
মাহিরের তখন মনে পরলো সে আর রায়ান বেট ধরেছিল রাইডার রায়া (মিরায়া) জিতবে কিনা তা নিয়ে। মাহির রায়ানের কথায় একবার মিরায়ার দিকে তাকিয়ে রায়ানের উদ্দেশ্যে বলল-
“তুই সিয়র রায়া মেয়েটা জিতবে?”
রায়ান মাহিরের প্রশ্নের উত্তর দিতে শান্ত ভঙ্গিতে মাথা হ্যাঁ সূচক ঝাকালো ।
তখনি মাইক্রোফোনে হোস্টের কণ্ঠ ভেসে এলো—
“লেডিস, রেডি ইউর ইঞ্জিনস! ইন জাস্ট ফিউ সেকেন্ডস… দ্যা রেস বিগিনস!”
মিরায়ায হাত নিজে থেকেই বাইকের থ্রোটলে গিয়ে পড়ল।ইঞ্জিন গর্জে উঠলো ধীরে,আর ভেতরে কেবল একটাই কথা বাজছে—“ইট’স মাই টার্ন নাও। কিল ইট রায়া।”
লারা আর আদ্রিয়ানের ঘোষণা শেষ হতে না হতেই ট্র্যাকের লাইটগুলো এক এক করে জ্বলে উঠলো।
মেয়েদের সারি—৫০ জন রাইডার, ঝকঝকে গিয়ার পরে, হেলমেটের ভেতর থেকে জ্বলছে দৃষ্টির আগুন। ধোঁয়া, ঘাম আর উত্তেজনার মিশ্র গন্ধে ট্র্যাকটা যেন কাঁপছে।
লারা গর্জে উঠলো— “লেডিস, ইউ রেডি ফর দ্যা থ্রিল অব দ্যা নাইট?”
আদ্রিয়ান যোগ করলো- “অ্যান্ড দ্যা রেস স্টার্টস উইথ দ্যা কাউন্টডাউন অব…
থ্রি… টু… অ্যান্ড… ওয়ান—”
“গো!”
গো বলার সাথে সাথে একসাথে আবারো ৫০টা বাইকের ইঞ্জিন গর্জে উঠলো! বাতাসে ধোঁয়া আর গরম তাপ, ট্র্যাক যেন জ্বলে উঠলো আগুনে। বাইকগুলোর স্পিড এত তীব্র যে পেছনে বাতাসের স্রোত তৈরি হচ্ছে।
প্রথম ধাক্কাতেই কয়েকজন রাইডার ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে গেল ছেলেদের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল। মিরায়া অসাধারণ নিখুঁতভাবে স্টার্ট নেওয়ার পর। তার বাইকের সাউন্ড যেন সুরেলা কিন্তু ধারালো— R15 Yamaha এর কালো রঙে ঝলমল করছে। মিরায়া (রায়া) ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে বাইককে হালকা হেলে ডান পাশে এনে নিখুঁতভাবে স্পিড বজায় রাখলো—তার চোখে স্থির আগুন, মুখে কোনো ভাব নেই— যেন সে নিজের জগতে প্রবেশ করেছে। মিরায়ার পজিশন ছিল কর্ণারে, সে ভালোই বুঝতে পারছিল শুরু থেকেই অতিরিক্ত স্পিডে বাইক টানলে ব্যালেন্স রাখা সম্ভব হবে না যেখানে আরো অন্যান্য রাইডার নিজের স্পিড শুরু থেকেই বেশি রাখতে গিয়ে ডিসকুয়ালিফাইড হয়ে গেছে।
ছেলেদের রেসের সময় যারা শুরু তেই পড়ে গেছিল তারা সবার পজিশন কর্ণারে ছিল এটা মিরায়া খেয়াল করেছে।
মিরায়া একদম নিজ গতিতে একের পর এক বাইক পাস করে যাচ্ছিল। গ্যালারিতে সবাই সবাই চিয়ার করতে লাগলো-
“গো অনামিকা, উউউহুহু..উইন ইট গার্ল।” কারণ অনামিকার তখন লিড করছিল সবার থেকে তার পিছনেই ছিল নূর, আর নূরের পড়ে ছিল দুই রাইডার জান্নাত আর মেহের পাশাপাশি প্রায়। অন্যদিকে মিরায়া এখনো বেশ খানিকটা দূরে ছিল তাদের থেকে। মেহের আর জান্নাত দুইজন রাইড করতে করতে একটু গতি কমিয়ে কথা বলল একে অপরের সাথে-
মেহের-“কিরে তুই না বললি ওই মেয়ে আমাদের জন্য থ্রেট হবে? যেভাবে রাইড করছে মনেই তো হচ্ছে না রেস করতে নেমেছে।”
জান্নাত মেহেরের কথায় সম্মতি দিয়ে হেঁসে বলল-“আরে আমি কিভাবে বুঝবো এন্ট্রি তো নিয়েছিল ভালোই। রেসের ট্র্যাকে এই হাল হবে কে জানতো।”
দুইজনই একসাথে হেসে ফেলল।
তারপরই মেহের বলল-“যাক ভালো হলো রেস জেতা এতো ও টাফ হবে না যদি অপনেন্ট এমন হয়।”
মাহির ট্যাকের উপর চোখ বিঁধিয়ে রেখেছে। মিরায়ার রাইডিং দেখে রীতিমতো সে মর্মাহত, সে গ্যালারিতে রায়ানের কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা দিতে হালকা ব্যঙ্গ করে হেঁসে কাঁধ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল-“রেস হাড় বা না হাড়, বেট তুই হাড়বি ফর সিয়র। এই মেয়ে যেভাবে রাইড করছে।”
রায়ান মাহিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে সোজা চোখ রেখেই বিড়বিড় করলো-“স্লো এ্যান্ড স্মার্ট মুভ মিস.রায়া। (মাহিরের উদ্দেশ্যে বলল- তুই যদি এসব বুঝতি তাহলে রেস হারতে হতো না। শি নোউস হুয়েন টু এ্যাট্যাক।”
মাহির তুচ্ছ হাসলো এক গাল। হঠাৎ পর মুহূর্তেই গ্যালারির সবাই নিজেদের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। চোখের পলকে রেসের ট্র্যাকে দৃশ্য পরিবর্তন হয়ে গেল। প্রত্যেকটা মানুষ হতভম্ব হয়ে রইল কিছু সময় যেন কি হলো কিছুই বুঝলো না। রায়ান চোখ সোজা রেখে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে মাহির কে বলল-“সোজা তাকিয়ে দেখ। ওই মেয়ে কেন জিতবে বুঝতে আর কিছু বাকি থাকবে না তোর।”
মাহির তৎক্ষণাৎ সোজা তাকায়। হঠাৎ তার চোখ বড় বড় হয়ে রয়ে গেল যেন অবিশ্বাস্য কিছু দেখছে। গ্যালারির প্রত্যেকজনের নিঃশ্বাস যেন আটকে গেল সেই মুহূর্তে।
কারণ ব্যাখ্যা করা যাক-
মিরায়া চারপাশের হঠাৎ শান্ত হয়ে যাওয়া পরিবেশ বুঝতে পেরে কুটিল হেঁসে বাইকের হ্যান্ডেলে হালকা চাপ দিয়ে গিয়ার এক ধাপ নামিয়ে আনে—“ক্লিক!”
তারপর সেকেন্ডের মধ্যে গিয়ার টেনে তোলে একদম উপরে—
“ভ্রুউউম!”বাইকটা যেন পেছনে হেলে সামনে লাফিয়ে উঠলো—সামনের চাকা প্রায় আকাশে উঠে গেল! ধুলো, ধোঁয়া আর আগুনের ফুলকি— সব মিশে গেল একসাথে।
স্পিডমিটার: ৩০০ কিমি/ঘণ্টা! R15 এর ইঞ্জিন গর্জে উঠছে— যেন জন্তু গর্জন করছে। মিরায়ার হেলমেটের ভেতর নিঃশ্বাস ঘন হয়ে গেছে, কিন্তু চোখ স্থির, ঠান্ডা— যেন সে যুদ্ধের মধ্যে ধ্যান করছে। পর পর একসাথে কয়েক সেকেন্ডে সে সব বাইক ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলো অন্যান্য রাইডার রা সম্পূর্ণ হতভম্ব। কিছু বুঝে উঠার আগেই মিরায়া তাদের ক্রস করে সামনে এগিয়ে গেছে। এবার শুধু সামনে কয়েক জনই আছে।
রায়ান মুচকি হেঁসে মাহিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো – “কিরে কিছু বুঝলি?”
মাহির অবাক চোখে মাথা নাসূচক নেড়ে বলল-“উঁহু, কিছু বুঝলাম না।”
রায়ান মাহিরের কাধ চাপড়ে বলল-“ইট’স কলড লেজি রাইডিং ট্রিক। অপনেন্টকে বিভ্রান্ত করতে ইউজ করা হয়। তোর মাথায় ঢুকবে না। বাদ দে।”
মাহির ভ্রু কুঁচকে রায়ানের দিকে তাকাতেই রায়ান হেঁসে বলল-
“রেস দেখ, আমাকে দেখতে হবে না।”
রেস ট্র্যাক তখন অগ্নিপরীক্ষা—বাকি রাইডাররা নিজেদের ব্যালেন্স রাখতেই ব্যস্ত। তাদের মধ্যে কেউ হুইলি করে, কেউ কর্নার কাটতে গিয়ে বাইক স্লিপ করছে, কিন্তু মিরায়ার বাইক চলছে রেজারের ধার বরাবর, প্রতিটি কর্নারে নিখুঁত টার্ন নিচ্ছে—হালকা ব্রেক, বাম দিকে কাত, হ্যান্ডেল ঘোরানো, তারপর আবার গিয়ার তোলা।
মিরায়ার চোখে স্থির আগুন, ঠোঁটে একধরনের একটুখানি হালকা হাসি। বাইকটা একদম নিখুঁতভাবে স্টার্ট নিলো, ধোঁয়া ছুটছে পেছনে, স্পিডমিটার তখন ৩০০ কিমি/ঘণ্টা। মিরায়া জানে, শুরুতেই দারুণ স্টাইল দেখালেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনে ভয় ঢুকে যাবে ফলে সে অন্যদের টার্গেট এ পরিণত হতে পারে যেহেতু সে ঢাকার বাইক কমিউনিটির নয়।
তাই তার প্রথম ট্রিকটা ছিল— লেজি রাইডিং। শুরুর দিকে সে নিজে সরাসরি আক্রমণ না করে হালকা করে দূরে দূরে রেখেছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনে এমন ভাবনা তৈরি করতে, “এই বাইক আর কি করে দেবে?”
এই ট্রিক টা সম্পূর্ণ রিভার্স সাইকোলজি— প্রতিদ্বন্দ্বীরা একটু শান্ত, কম স্পিডে থাকা মেয়েটিকে হালকাভেবে ভুল করছে। মিরায়া জানে, এই দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সুযোগ দিচ্ছে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগের জন্য।
ঠিক তখনই— হঠাৎ সে গিয়ার শিফট করে সেকেন্ড উইলিতে যায়। সামনের চাকা এক মুহূর্তে আকাশে, পেছনের চাকা টায়ারের ঘর্ষণে আগুনের মতো ফুলকি ছিটকে যাচ্ছে।
সিগন্যাল কাটা, রিয়ার ব্রেকের এক মিনিটের নিখুঁত ছোঁয়া—
এতে করে বাইকটিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখে সে সামনে বেরিয়ে আসে।
সামনের চার রাইডার— অনামিকা, নূর, মেহের, আর জান্নাত— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। মিরায়ার হঠাৎ ভোল বদলে
তারা কেউই বুঝতে পারছে না, মিরায়ার ট্রিকটা কীভাবে এত নিখুঁত কাজ করল। মিরায়ার হাতের দখল, পায়ের চাপ, চোখের দৃষ্টি— সব মিলিয়ে বাইকের সাথে একাকার।
এক মুহূর্তের মধ্যে সে প্রত্যেকজনকে একে একে পেছনে ফেলে দেবে বাইকের এক টানে কেউ তা বুঝতে পারে নি রায়ান ছাড়া। রায়ানের বোঝা কোনো বড় ব্যাপার নয়, সে বাইরের দেশে এমন হাজারো অপনেন্টের চোখে ধুলো দেওয়ার ট্রিক দেখেছে। তবে আশা করেনি বাংলাদেশের রেসিং কমিউনিটিতে এমন বুদ্ধিমত্তার কেউ থাকবে এই ছোট খাটো ট্রিকস কাজে লাগানোর মতো।
রায়ান মনে যথেষ্ট সন্তুষ্টি নিয়ে মিরায়ার বাইক পর্যবেক্ষণ করে কুটিল হেঁসে বলল-“নাইস ওয়ান মিস.রায়া। উইন দিস ড্যাম রেস।কজ আই ওয়ানা মেক ইউ লুজ।”
গ্যালারিতে উত্তেজনার ঢেউ। সবার চোখ যেন মিরায়ার দিকে ঝাপসা হয়ে যায়—“রায়া! রায়া! রায়া!”
চিৎকার, হাততালি, ফোনে ভিডিও— সবাই একসাথে প্রতিধ্বনিত করছে।
মিরায়া জানে— এই মুহূর্তে বাইক শুধুই কন্ট্রোলের মধ্যে নয়, এটা তার অস্ত্র। কোণে হালকা ফেক ড্রিফট, কর্নারে হালকা লিজিং, হুইলি—সবকিছু নিখুঁত, প্রতিটা স্ট্রোক, প্রতিটি চাকা, প্রতিটি স্পার্ক পরিকল্পিত। প্রতিদ্বন্দ্বীরা হুড়মুড় করছে, কেউ নিজেকে সামলাতে পারছে না।
মিন্ডি রাগে গাল ফোলা, জান্নাত চোখ মেলে অবাক, মেহের হিংসেতে ঠোঁট কামড়ে—”শিট! ইট ওয়াজ আ ট্রেপ। আই কান্ট লুজ।”
জান্নাত মেহের কে উদ্দেশ্য করে একটা প্রোপজাল দিল-“ওই ব্লক করবি মেয়ে টাকে? আই হ্যাভ টু উইন এ্যাট এনি কস্ট।”
মেহের সন্দেহ ভাজন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-“এটা চিটিং হবে না? এমন করা তো রুলস এ নেই।”
জান্নাত মেহের কথার জবাবে ছেলেদের রেসের কথা টেনে বলল-“রুলস মাই ফুট। বয়েজের সময় তো রায়ানকে আটকাতে দুইজন রাইডার ব্লক করার ট্রাই করলো সেটা তো হাইলাইট হয়নি। সুতরাং, এমন কোনো রুলস নেই। তুই বা দিক থেকে আগা আমি ডান দিক থেকে যাচ্ছি।”
মেহের জান্নাতের কথা আত্মস্থ হয়ে জান্নাতের কথা মতো বা দিক থেকে আগালো আর জান্নাত ডান দিক থেকে।
দুই দিক থেকে দুটো বাইক সাপের মতো ঘুরে মিরায়ার দিকে ছুটে আসছে। গ্যালারিতে উত্তেজনা টগবগ করছে, মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। ধুলো, বাতাস, হেডলাইটের আলো—সব মিলিয়ে এক পাগল করা দৃশ্য।
রায়ান অন্য দুই বাইক কে একইভাবে মিরায়াকে ব্লক করতে আস্তে দেখে তুচ্ছ হেঁসে বিড়বিড় করলো-“আ বান্চ অব লুজারস।”
মিরায়ার বুঝতে আর বাকি থাকলো না—এরা তাকে ফাঁদে ফেলতে এসেছে। তার ঠোঁটের কোণে বিদ্রূপের ছায়া প্রতিফলিত হচ্ছে। মিরায়া হেলমেটের আড়ালে আওড়াল-
“ওয়ানা প্লে গার্লস? লেট’স ডু দ্যাট। ইট’স ফান টু প্লে সিলি গেমস উইথ সিলি প্লেয়ার্স।” (ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি)
তখনি রায়ান কে উদ্দেশ্য করে মাহির বলল-“পিছনের মেয়ে গুলো গ্যাং আপ করছে। বুঝতে পারছিস?”
রায়ান শান্ত গলায় বলল-“তোর কি মনে হয়?”
মাহির সামনে থেকে চোখ সড়িয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল- “তুই কি সোজা কথায় সোজা উত্তর দিতে পারিস না?”
রায়ান মাহিরের দিকে না দেখে উত্তর করলো-“না, আম্মু বলেছিল আমি নাকি আম্মুর পেটে উল্টো ছিলাম। সুতরাং, উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে এটা আমার জন্মগত মুদ্রা দোষ।”
মাহির রায়ানের কথায় তাজ্জব হয়ে গেল। রায়ান আবার সামনে চোখ রেখে বলল-“ক্লাইমেক্স আসছে রেসের আর তুই কই তাকাই আছিস। সোজা দেখ।”
মাহির রায়ানের কথায় সোজা তাকালো।
মিরায়া বাইকের ক্লাচ হালকা চাপলো, গিয়ার ঠেলে দিল চতুর্থ থেকে পঞ্চমে, ইঞ্জিনের গর্জনে ট্র্যাক কেঁপে উঠলো!
“ভ্রুমমমমমমমমম—!!!”
জান্নাত তার ডান পাশ কেটে যাওয়ার চেষ্টা করলো, মেহের বাঁ পাশ দিয়ে এগিয়ে এল। দুই বাইক যেন রাস্তাটা বন্ধ করে ফেললো, মাঝখানে মিরায়া আটকা! গ্যালারি একসাথে চিৎকার করে উঠল—
“ও মাই গড! এটা কি হচ্ছে! এমন তো রুলস এ নেই।”
পিছন থেকে কেউ বলল-“এই রেসে কোনো রুলস বোর্ড নেই। রাইডার ক্যান ডু এনিথিং টু উইন।”
পরবর্তী ২ সেকেন্ড এর ব্যবধানে যা ঘটলো তার আশা কেউ করে নি। হঠাৎ… মিরায়ার বাইক ঝটকা খেয়ে সামনের চাকা আকাশে উঠলো!-“Wheelie!”
ধোঁয়ার ঘূর্ণি আর গরম বাতাসে সবাই চোখ ঢাকলো। মিরায়া এক মুহূর্তে সামনের দুই বাইকের মাঝ দিয়ে বাইকটাকে হালকা কাত করে ৪৫ ডিগ্রিতে নামালো, তারপর কাউন্টার ব্রেক দিয়ে স্লাইড করল —
টায়ার আর ট্র্যাকের ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি ছিটকে উঠলো!
জান্নাতের মুখ হা হয়ে গেল—“অ্যা!—এইটা কেমনে করল?”
মিরায়া এক ঝলক পেছনে তাকিয়ে মুচকি হাসলো—
“নিজেদের গ্রিপ আরো টাইট করো বনু। এভাবে হবে না।”
তারপর জোরে হেঁসে গিয়ার টেনে দিল—সিক্সথে।স্পিডোমিটার ২৮০… ২৯০… ৩০৫… ৩১০! বাতাস আর বাইকের আওয়াজ মিশে এক হয়ে গেছে। তার হেলমেটের ভেতর নীল আলো ঝলকাচ্ছে, চোখ স্থির। মিরায়া নিজের মনে হেসে বলল-“লেট’স গো রায়া। ইট’স শো টাইম।”
Power Drift!- বাঁকটা আসতেই মিরায়া বাইকটাকে হঠাৎ সাইডে স্লাইড করলো। পুরো বাইক ৯০ ডিগ্রি কাত হয়ে গেল, ঘর্ষণের শব্দে ট্র্যাক প্রায় ফেটে যাচ্ছে। ধুলোয় অদৃশ্য তার চাকা—মনে হচ্ছে আগুনের ট্রেইল রেখে যাচ্ছে পেছনে।
জান্নাতের বাইক কাত হলো, ভারসাম্য হারিয়ে ঘাসে ছিটকে পড়ল! মেহেরও কন্ট্রোল রাখতে না পেরে গার্ড রেল ছুঁয়ে গেল—স্ফুলিঙ্গ উড়ে উঠল!
গ্যালারিতে হাজার মানুষের চিৎকার- “ওওওহহহহহহ….রায়া! রায়া! রায়া!”
রায়ান গ্যালারিতে বুকে দুই হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে দেখছে মিরায়ার প্রতিটা অঙ্গসঞ্চালন যেন নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাড়ানোর জন্য তথ্য যোগার করতে ব্যস্ত। রায়ান একটা জিনিস খেয়াল করলো মিরায়ার (রায়ার) উপস্থিত বুদ্ধি রেসে অনেক অ্যাক্টিভ আর স্পিড মেইনটেনেন্স খুব হাই। তবে সে তাদের মধ্যে কমোন যেটা দেখলো সেটা হলো বেপরোয়া ভাব।
মিরায়া পিছনে না তাকিয়ে চেঁচিয়ে জান্নাত আর মেহেরের উদ্দেশ্যে বলল- “গেম ওভার, সো কলড কুইন্স।”
মিরায়া তখন সামনের দিকে তৃতীয় স্থানে তারও সামনে আছে নূর আর অনামিকা। তারও সামনে দুজন — নূর আর অনামিকা-দুজনেই লেডি বাইকারদের রাজত্ব করা নাম।
নূর তার অদ্ভুত স্পিড কন্ট্রোল আর শরীরের ভারসাম্যের জন্য পরিচিত;
আর অনামিকা তার নির্ভুল কর্নার কাটের জন্য বিখ্যাত।
কিন্তু আজ ট্র্যাকে তারা দুজনেই একটাই চিন্তায় — একটা নতুন মেয়ে অন্য জায়গা থেকে এসে তাদের রাজত্বে রাজ করতে যেন না পারে।
ধোঁয়ায় ঢাকা ট্র্যাকের মাঝখানে তিনটি বাইক ছুটছে যেন বজ্রপাত। তাদের পেছনে বাতাসের ধাক্কায় পতাকা দুলছে,
গ্যালারিতে চিৎকার, বাঁশি, হর্ষধ্বনি — কিন্তু এখন কেউই শব্দ শুনছে না। সবাই নিঃশ্বাস রোধ করে তাকিয়ে আছে তিনটি ছায়ার দিকে।
নূর বাঁক নিচ্ছে। এটা সেই কর্নার যেটাতে একটু ভুল মানেই বাইক ছিটকে যাবে। মিরায়া দূর থেকেই লক্ষ্য করছে—
নূর বাইকটা অতিরিক্ত কাত করছে বাঁ দিকে, স্পিড অনেক বেশি, তাই পরের সেকেন্ডেই ভারসাম্য হারাতে পারে।
হেলমেটের আড়ালে মিরায়ার ঠোঁটে ঠান্ডা হাসি। সে নিজের হেলমেটের ভিসর টা ওপেন করে একটু হাওয়া নিয়ে বিড়বিড় করলো—
“স্পিড ইজ নট সামথিং ইউ ক্যান উইন দ্যা রেস উইথ, মাথাও লাগাতে হবে নূর। এই দিকে তো মার খেয়ে গেলে।”
মিরায়া গিয়ার নামালো, ক্লাচ ছেড়ে এক ঝটকায় বাইকটাকে পিছনে টেনে আনলো তীব্র শব্দে— “ভ্র্র্র্র্রুমমমমমমমমমম!”
চাকা অ্যাসফল্টে ঘষে আগুনের ফুলকি ছিটিয়ে দিল।
নূর ঠিক তখনই সামনের ব্রেকে চাপ দিল ব্যালেন্স ঠিক রাখতে—কিন্তু মিরায়া আগেই বুঝে ফেলেছিল! সে বাইকটা হঠাৎ ডানদিক দিয়ে ঘুরিয়ে নূরের বাইকের পাশ দিয়ে এমনভাবে বেরিয়ে গেল যেন হাওয়া কেটে বেরিয়ে গেল একটি তীর। একটুখানি ঘর্ষণ— ধোঁয়া— আর নূরের চোখ বড় হয়ে গেল। সে সাথে সাথে চেচালো – “হু দ্যা হেল…! WTF is going on, এতো কাছে কখন এল!”
গ্যালারির দর্শক চেঁচিয়ে উঠলো-“রায়া! রায়া! রায়া!”
মাহির রায়ানকে উদ্দেশ্যে করে প্রশ্ন করলো-“এটা কি ছিল? ও কি ফ্ল্যাশ নাকি! এতো ফাস্ট কিভাবে ক্রস করলো? তুই দেখলি?”
রায়ান ঠোঁটে কুটিল হাঁসি নিয়ে বলল-“আমি অনেক কিছু দেখছি যা তুই দেখছিস না। সুতরাং নিজে যা দেখছিস তাই দেখ।”
নূর পিছিয়ে গেল, এখন সামনে অনামিকা। অনামিকা জানে, মিরায়াকে যদি থামানো না যায়, তবে সে জিতবে না। তার চোখে জেদ, ঠোঁটে কামড়। সে গিয়ার ফুল করে বাইককে সরাসরি সামনে ঠেললো—স্পিড ২৯০!
মিরায়া ঠিক পিছনে, মাথা নিচু করে হেলমেটের ভেতর ফিসফিস করলো—“টাইম টু ফ্লাই, বেইবি।”
মিরায়া বাইকটাকে এমন এক নিখুঁত lean drift দিল— বাঁ দিকের চাকা প্রায় মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছে, হেলমেটের কাঁচে ট্র্যাকের আলো লাফাচ্ছে! ধোঁয়া, ঘর্ষণ, স্পার্কস— চারদিকে আগুনের ঘূর্ণি!
অনামিকা তার ডান পাশে তাকিয়ে দেখল— একটা কালো ঝলক তার পাশ দিয়ে বাতাস কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে!
মিরায়া! সে এক মুহূর্তের সুযোগে rebound clutch trick দিয়ে বাইকটাকে সামনের দিকে ছুড়ে দিল। অনামিকা গতি বাড়িয়ে তাকে ওভারটেক করতে গেল, কিন্তু মিরায়া হঠাৎ হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে সামনের বাইকটাকে “Snake Cut” ট্রিকে ঘিরে ফেলল। এমন এক কৌশল— যা কেবল ট্র্যাকের রাজারা জানে। বাম দিকে, তারপর ডান দিকে—
সেকেন্ডের ভগ্নাংশে—মিরায়া অনামিকাকে ফাঁদে ফেললো যেন দাবার কুইন চেকমেট দিচ্ছে।
মিরায়া-“ডানদিকে যেয়ো না, বেইবি, ওটা আমার রাস্তা,”
তার ঠান্ডা গলায় হাসি ঝরে পড়ল।
অনামিকা ভয় পেয়ে সামান্য ব্রেক দিল, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই মিরায়া সামনে উঠে গেল—ধুলো, আলো, আর ইঞ্জিনের গর্জনের সাথে সাথে—ফিনিশ লাইন সামনে!
দূরে কাউন্টডাউন বোর্ডে আলো ঝলকাচ্ছে— ৩০০ মিটার… ২০০ মিটার… ১০০ মিটার…
নূর আর অনামিকা মরিয়া হয়ে গিয়ার বাড়াচ্ছে, কিন্তু মিরায়া ইতিমধ্যেই অন্য লেভেলে চলে গেছে। তার স্পিড ৩১৫ কিমি/ঘণ্টা— বাতাস যেন তার সাথেই ছুটছে। শেষ ৫০ মিটার।
তার ঠোঁটের কোণে নিখুঁত এক হাসি—
মিরায়া বিড়বিড় করল-“লেডিস, তোমাদের জন্য একটাই উপদেশ— স্পিড ভালো জিনিস, কিন্তু ব্রেনের নিউরন উইক হলে তো সমস্যা।”
সে বাইকটাকে হঠাৎ Wheelspin Drift দিল, ফিনিশ লাইন পার হতেই বাইকের পিছনের চাকা আগুনের মতো জ্বলতে লাগলো!
গ্যালারি ফেটে পড়লো, সবাই উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে—
“রায়া! রায়া! রায়া!”
মিরায়ার বাইক ফিনিশ লাইন ছুঁতেই পুরো গ্যালারি যেন একসাথে বিস্ফোরিত হলো—চিৎকার, বাঁশি, হাততালি, ক্যামেরার ফ্ল্যাশে মুহূর্তটা আলোকিত হয়ে উঠলো।
“রায়া! রায়খ! রায়া!” —এই একটাই নাম গ্যালারিতে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। রেসের শেষ মুহূর্তের টানটান উত্তেজনা যেন এখনও বাতাসে কাঁপছিল। হেলমেট খুলে যখন মিরায়া মাস্ক পড়া গেটাপে দাঁড়ালো ঠিক তখনই চারপাশের স্পটলাইট তার উপর চকচক করে উঠল। তার চোখে সেই অদ্ভুত ঝিলিক—জেতার তৃপ্তি আর লড়াইয়ের উত্তাপ দুটোই যেন মিশে আছে।
দূর থেকে রায়ান তাকিয়ে আছে—তার চোখে অদ্ভুত প্রশান্ত গাম্ভীর্য। ঠোঁটের কোণটায় হালকা একটা হাসি ফুটে উঠল, কিন্তু সেটা কেবল মুহূর্তের জন্য।
সে ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল, চোখে দৃঢ় সম্মান—
“Well done, girl…advance sorry for next one” —চুপচাপ বলল নিজের মধ্যে। তার ভেতরের বাইকার সত্তা মিরায়াকে সম্মান জানাল নিঃশব্দে।
মাহির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল রায়ানের মুখটা অদ্ভুত ভাবে হা হয়ে আছে যেন এই মাত্র যা দেখলো তা কাল্পনিক। রায়ান মাহির কে ধাক্কা দিয়ে বলল-
“রেস হেঁড়ে ছিলি, এবার বেট টাও হেঁড়ে গেলি । আহ্ হা! মোয়ে মোয়ে! মোয়ে মোয়ে!” (গেয়ে উঠলো)
মাহির মুখটা হালকা বিরক্তিময় করলো প্রথমে কিন্তু তার পরই মিরায়ার প্রশংসায় স্বীকারক্তি দিল-
“ভাই যাই বলিস, মেয়েটা তো রিয়েল থান্ডারস্টর্ম রে!”
রায়ান শুধু একবার তাকাল, মৃদু গলায় বলল,
“হুম, শুধু রাইড করেনি… she owned it. এবার আমি একটু এক্সাইটেড আল্টিমেট রেসে নামার জন্য। এই রাইডার কে হাড়িয়ে জিততে পারলে ভালো লাগবে। ছেলেদের মধ্যে এসব সো কলড রাইডার দের সাথে রেস করে জিতে মজা নেই।”
মাহির বাঁকা হেঁসে বলল-“বেস্ট ভার্সেস বেস্ট। দেখার মতো কিছু হবে আই ক্যান বেট অন দ্যাট দো।”
গ্যালারির অপর পাশে তানভীর, আদনান আর জ্যাক একসাথে দাঁড়িয়ে পুরো দৃশ্যটা গিলে নিচ্ছে চোখ দিয়ে।
তানভীর হুইসেল বাজিয়ে উঠল-
“Brooo, that’s insane!
Did you see that last drift?”
আদনান হেসে বলল-“Man, she made those turns like she was dancing! What a pro!”
আর জ্যাক—চোখে ঠান্ডা আগুন, ঠোঁটের কোণ উঁচু হয়ে গেল। সে সামনে ঝুঁকে হালকা গলায় বলে উঠল,
“I like this girl….”
এক সেকেন্ড থেমে, চোখ মিরায়ার উপর স্থির রেখে বলল,
“I want her.”
চারপাশে তুমুল আওয়াজ—কিন্তু রায়ান তখনও স্থির, দাঁড়িয়ে আছে নিজের জায়গায়। তার চোখে কেবল একটাই ঝলক—
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১
যে ঝলক বলে দেয়, “গেমটা এখনো শেষ না।”
পাশাপাশি মিরায়াও নিজের জিৎ নিশ্চিত করে রায়ানের দিকে তাকালো। দুইজনের চোখাচোখি হলো ধোঁয়াশা পরিবেশে। নজর মিলেও মিলল না।