আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১ (৩)

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১ (৩)
অরাত্রিকা রহমান

“রায়া! রায়া! রায়া!!!” —এইবার আকাশ গর্জে উঠলো নতুন নামে। স্পটলাইট মিরায়ার উপর থেমে রইলো। গ্যালারির সবাই সেই হিজাব ও মাস্কের আবরণে থাকা চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে চাতকপাখির ন্যায়। অনেকেই ভীরের মধ্যে থেকে চেঁচিয়ে বলছিল ফেস রিভিল করতে কিন্তু মিরায়া তার শুনেও না শুনার ভান করছিল। তবে মিরায়ার জেতার সেই এক মুহূর্তে যেন সবাই ভুলে গেল একটু আগে কে ছিল রাইডার কিং—কারণ এখন সবার চোখে শুধুই কুইন বিরাজ করছিল।

লারা দৌড়ে মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন হাতে নিল, উত্তেজনায় গলা কাঁপছে—“ওহ মাই গড! ওয়াট আ পারফরমেন্স!!!
দ্যা রিয়াল—এই স্পিড কুইন, গিভ ইট আপ ফর – রায়া…!”
আদ্রিয়ানও লারার কথায় যোগ করে বলল-“লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান! আজকের রাতের বেস্ট রাইডার ফর্ম দ্যা গার্লস টিম… দ্যা ওয়ান অ্যান্ড অনলি—“কুউইইন অব দা নাইইট — রায়া রহমান!!!” যে আমাদের রাইডার কিং রায়ান চৌধুরীর পাশের ফাঁকা স্থান পূরণ করবেন।”
দর্শকরা পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগল। রায়ান সামনের দিকে এক পা বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকল— চোখে সেই আগের মতো গাম্ভীর্য, কিন্তু এবার ঠোঁটের কোণে একটু নরম হাসি। সে হাততালি দিল ধীরে, যেন কেবল মিরায়ার জন্যই।
দূর থেকে তার ঠোঁট নড়ল— “ওয়েলকাম টু দা থ্রোন, কুইন। নাউ উই হ্যাভ টু সি হু রুলস দা কিংডম।”
লারা- “রায়ান আর রায়া আপনাদের নিজেদেরকে ফাইনাল রাইডের প্রস্তুতি নিতে কিছু সময় দেওয়া হলো। আমরা কিছু সময়ের মধ্যেই রেস ট্র্যাকে আপনাদের দেখবো। গুড লাক।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রেস শেষ, বিজয়ের গর্জন এখনো বাতাসে ভাসছে। গ্যালারিতে হাজারো মানুষ এখনো দাড়িয়ে, চোখ রাখছে ট্র্যাকের দিকে—
দুই দিকের বিজয়ী, এক রাজা আর এক রাণীকে দেখার অপেক্ষায়। রায়ান মিরায়া নিজেদেরকে তাদের বেস্ট টা দিতে তৈরি করতে ব্যস্ত। দুইজনে এখনো অব্দি কোনো প্রকার বার্তালাপ করেনি চোখে চোখ রাখে নি। মিরায়া নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিল রায়ানকে এড়িয়ে চলতে তবে রায়ানও খুব যে ইচ্ছে দেখাচ্ছে রায়ার প্রতি এমন না।
মাহির রায়ানের পাশেই ছিল তখন, হঠাৎ রায়ানকে চিমটি কেটে বলল-“কিরে যার জেতার উপরে বাজি লাগালি এখন সে সামনে অথচ তাকিয়েই দেখছিস না, কথা বলা তো দূর, তোর মনে চলছে কি বলতো?”
রায়ান মাহিরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল- “মনে কি চলছে মানে? আমি রাইডার আর ভালো রাইডার চিনি যেটার একটাও তোর আয়ত্তে নেই তাই তুই রেস আর বেট দুটোই হেড়েছিস।”
মাহির বিরক্ত হয়ে রায়ানের পিঠে ঘুসি মেরে বলল-“ওই তোরে আমি কি বলি আর তুই কি বলিস? আমি জিজ্ঞেস করছি রায়ার সাথে একবারও হাই হ্যালো কিছু করলি না অথচ এই মেয়ে জিতবে বলে বেট ধরেছিলি। এর মাঝে আমার হাড়া জেতা কোথা থেকে এলো?”

রায়ান মেয়েদের টপিক ফ্রেন্ডশিপে পছন্দ করে না তার উপর সে বিবাহিত এটা তার করা উচিতও না, একজন পুরুষের তার সীমা বোঝা উচিত। রায়ান মাহিরকে বুঝিয়ে বলল-“শোন মেয়েটা ভালো রাইডার, এ্যান্ড দ্যাট’স ইট। এই কারণ যথেষ্ট বেট ধরার জন্য। আমি হাই হ্যালো কেন করতে যাব? বেট ধরেছিলাম জিতেও গেছি বেস হয়ে গেল। সম্পূর্ণ টাই স্পোর্টস ম্যানশিপ।”
মাহির মনে মনে ভাবতে লাগলো-“এটা আবার কেমন হলো মেয়েটা এতো ভালো বাইক চালায় অথচ রায়ানের একটুও ইন্টারেস্ট আসছে না মেয়েটার প্রতি!”
মাহির রায়ানকে মনের প্রশ্ন টা করেই ফেলল কৌতুহলে-
“রায়ান তোর মনে আছে তুই মাঝে মাঝেই বলতি তোর খুব ইচ্ছে তোর ঠিক তোর মতোই বাইক পাগল কাউকে লাগবে যে বাইক রাইডিং এ প্রো হবে তোর মতো?”
রায়ানের বুঝতে সময় লাগলো না মাহির ঠিক কোনো দিকে কথা নিচ্ছে। সে চোখে রাগ নিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিরমির কিরমির করতে করতে বলল-“মাহিরের বাচ্চা আর একটা ফালতু কথা বললে তোর মাথায় এই হেলমেটের বাড়ি পড়বে। আমার বউ আছে বাড়িতে, তাও অপ্সরার মতো দেখতে।”
(নিজের হেলমেটটা হাতে তুলে)

মাহির হালকা সড়ে গিয়ে বলল-“আজব আমি কি করেছি? তোর আগের কথাই তো বললাম। তুই বল বলিস নি তুই ওমন কথা কখনো?”
রায়ান বিরক্ত হয়ে বলল-“বলেছি হয়তো কোনো কালে, তো কি হয়েছে। শোন আমার বউ যথেষ্ট বাইক পাগল। আর বাইকে ঘুরতেও পছন্দ করে। সুতরাং আমার ইচ্ছে পূরণ হয়ে গেছে। সব বাদে মিরার যদি ইচ্ছা হয় প্রয়োজনে আমি আমার বউকে শিখিয়ে প্রো রাইডার হিসেবে গড়ে তুলবো। সব বাদে তুই এইটা বল, তোর মাথায় এসব ফাউল চিন্তা আসে কোথা থেকে?”

মাহির একটু নাটুকে ভাব নিয়ে বলল-“আরে আমি কি তোকে বিয়ে নিয়ে কিছু বলেছি? আমার ভাবি মা তো ‘মাশাআল্লাহ’। আমি তো শুধু রায়ার কথা বললাম, মেয়েটা ভালো রাইড করে একদম তোর মতো।”
রায়ানের হঠাৎ যেন মাহিরের করা ইনডিরেক্ট মিরায়া আর রায়ার মধ্যে তুলনা হজম হলো না। রায়ানের মাহিরের উপরের রাগ এবার রায়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিণত হলো। রায়ান মাহির কে বলল-“রায়ান চৌধুরী ইজ ওনলি ওয়ান। নো ওয়ান ক্যান বিট হিম। চাইলে বেট ধর ফাইনাল রেসে ওই মেয়ে হাড়বে আমার কাছে।”
মাহিরের বুঝতে আর বাকি নেই তার দ্বারা বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। মাহির শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে ভাবল-“হায় আল্লাহ, এই বউ পাগলের সামনে ওর বউয়ের জায়গায় অন্য মেয়ের কথা আমি কেন বলতে গেলাম!”
রায়ান হালকা গলায় আওয়াজ গম্ভীর রেখে জিজ্ঞেস করল-
“কিরে ধরবি বেট আবার?”

মাহির সাথে সাথে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল-“না না, আর কোনো বেট আমার ধরার ইচ্ছা নেই। তুই জিতে যা রেস ভাই।”
রায়ান আর কিছু বলল না। অন্যদিকে একটু দূরেই মিরায়া নিজের বাইক চেক করছিল। মিরায়া নিজের মুখে বিড়বিড় করছে-“আবেগে পড়ে বিবেক ভুলে যে ড্রিফট আর স্পিন মারছি আমার বাইক যে আস্তো আছে এখনো তাই অনেক। তোর লাগি নিতো সোনা। ( বাইক কে উদ্দেশ্য করে)”
মিরায়ার অনেক শখের আর পছন্দের তার এই বাইকটা। খুব যত্ন করে শুরু থেকেই। রায়ান আড় চোখে মিরায়াকে রেসের জন্য নিজেকে ঠিক না করে বাইক চেক করা আর মুছতে থাকা দেখে এক গাল হেসে বিড়বিড় করলো-
“ওয়াও, বাইকের জন্য এতো কেয়ার। এতো যত্ন পায় বলেই হয়তো বাইক রেসে ভালো পারফর্ম করে (ব্যঙ্গ করে)।”
মিরায়া বাইক চেক শেষ করে একবার নিজের সব কিছু দেখে নেওয়ার মাঝেই লারা এবার মাইক্রোফোন হাতে এগিয়ে এলো, কণ্ঠে এক চূড়ান্ত উত্তেজনা—

“লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন… দ্যা মোমেন্ট উই অল ওয়েটেড ফর! দ্যা কিং অ্যান্ড কুইন অব দ্য নাইট— রায়ান চৌধুরী, এ্যান্ড রায়া রহমান! “লেট্‌স ওয়েলকাম দেম টুগেদার অন দ্যা ট্র্যাক!”
চারদিক থেকে আলো ঝলসে উঠলো, দুই দিকের দরজা একসাথে খুলে গেল। রায়ান ও মিরায়া, দুইজনেই নিজের হেলমেট পরে, বাইকের ইঞ্জিন অন করলো একসাথে।
“ভ্র্র্ররর্ররর্রর্রমমম…” দুইটা ইঞ্জিনের গর্জন যেন যুদ্ধের ডাক।
রায়ানের বাইকটা কালো, আগুনে চকচক করছে; আর মিরায়ারটা কালো-নীলে ঝলমল করছে লাইটে।
দু’জনেই একসাথে বাইক সামনে এগিয়ে নিয়ে এল— চোখে চোখ হেলমেটে রং আড়াল থেকেই, কোনো হাসি নেই, শুধু নিঃশব্দ আগুন।
আদ্রিয়ান চিৎকার করে বলল—

“অলরাইট, লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন! দ্য কিং অ্যান্ড কুইন আর হিয়ার! অ্যান্ড ইট’স টাইম ফর আ রয়্যাল শোডাউন!”
গ্যালারি গর্জে উঠল—
“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া!!”
রায়ান ধীরে বাইকের থ্রোটল টেনে তুলল, হালকা ঝুঁকে সামনে চাকা তুললো প্রায় দুই ফুট উপরে—
এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা হিংস্র পশুর ন্যয়! বাইকটা সামনে আগাতে লাগলো হুইলি করে, পিছনের টায়ার ঘর্ষণে আগুন ফুলকি ছিটিয়ে দিচ্ছে।
এক মুহূর্তেই তার পাশেই মিরায়া—
ওও একইভাবে সামনে চাকা তুললো, কিন্তু তার ভারসাম্য এত নিখুঁত যে মনে হচ্ছে বাইকটা তার আঙুলের ইশারায় নাচছে!
দু’জনের বাইক পাশাপাশি, দুই চাকা আকাশে, আর নিচে ধোঁয়া আর আলোর আগুন।
দর্শকরা চিৎকারে ফেটে পড়ছে—

“ওওওওহহহুউউউ! — দু’জনই একসাথে হুইলি করছে! ওয়াও!”
রায়ান মিরায়ার দিকে তাকায় এবং প্রথম বারের মতো মিরায়ার উদ্দেশ্যে মৃদু গলায়, ভেতরের মাইকে প্রশ্ন করলো—
“স্টিল থিংক ইউ ক্যান বিট মি, কুইন?”
মিরায়া অবাক হলো রায়ান রায়ার সাথে কথা বলল! তাও এতোটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভাব নিয়ে! মিরায়া এক মুহূর্ত রায়ানের দিকে মুখ ঘুরিয়ে ভাবলো যদি সে নিজের স্বাভাবিক গলায় কথা বলে তাহলে রায়ানের তাকে চিনতে সময় লাগবে না তবে মাইকে একটু ভারি গলায় কথা বললে সেটা অনেক অংশেই ভিন্ন শোনাবে তাই ঠোঁট বাঁকিয়ে হেঁসে মিরায়া গলার আওয়াজ একটু ভারি করে, গর্জন ভেদ করে উত্তর দিল—
“বিটিং ইউ ইজ গোনাবি মাই প্লেজার, ইয়োর ম্যাজেস্টি (কিং)।”

রায়ান মিরায়ার গলার আওয়াজ ঠিক ঠাওর করতে পারলো না তারপরই তারা দুইজন চোখ তীক্ষ্ণ ভাবে সোজা তাকিয়ে বাইক নামিয়ে একে অপরের বিপরীতে মুখোমুখি হলো।
দুইজনের বাইক কয়েক ফুট দূরত্বে— আর শুরু হলো স্টান্ট শোডাউন!
রায়ান বাইকের থ্রোটল টেনে এক জায়গায় ঘূর্ণায়মান হলো—
বাইকটা ঘুরছে আগুনের বৃত্ত তৈরি করে, ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আশপাশ। মিরায়া সামান্য ঝুঁকে, বিপরীত দিকে ঘুরে গেল—
দু’জনের বাইক একে অপরের ঘূর্ণনের কেন্দ্রে এসে ঠাসস! শব্দে সামান্য টাচ করে আবার ঘুরে গেল।
লারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে-
“ওয়াওওও!!! দ্যাট’স ইনসেইন! দে আর অন ফায়ার!!!”
আদ্রিয়ান মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
রায়ান ঘূর্ণন থামিয়ে বাইক সোজা করে, তার চাকা দিয়ে সামনের দিকে ব্রেক ঘর্ষণ করল—টায়ারের নিচ থেকে আবারও আগুনের রেখা! মিরায়া তার প্রতিক্রিয়ায় বাইক উল্টোদিকে টিল্ট করল, শুধু পিছনের চাকা ঘুরিয়ে হালকা করে রায়ানের বাইকের সামনে এসে থামলো, হেলমেট ভেদ করা চুহুনি, একদম চোখে চোখ রেখে। দুজনের মধ্যে নিঃশব্দ চ্যালেঞ্জ। দর্শকরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে।
রায়ান নিচু স্বরে বলে—

“ইউ’ভ গট ফায়ার…মিস.”
আর মিরায়া ঠোঁট কামড়ে মুচকি হেসে ভারি কন্ঠে উত্তর দিল—“ফায়ার ডাজ়ন’ট ফিয়ার ফায়ার, মিস্টার।”
ঠিক তখনই দু’জন একসাথে বাইকের গিয়ার চেঞ্জ করে সোজা এগিয়ে গেল ট্র্যাকের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত— প্রথমে হুইলি, তারপর স্লাইড, তারপর একসাথে cross-spin করে মাঝ আকাশে বাইক ঘুরিয়ে পুনরায় নামালো!
পুরো গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে গেছে— কেউ কাঁদছে উত্তেজনায়, কেউ মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করছে, কেউ সিটি বাজাচ্ছে।
“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া!!!”
স্টেজে লারা ও আদ্রিয়ান উচ্ছ্বাসে মাইক্রোফোনে চিৎকার—
“লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন, দিস ইজ়ন’ট জাস্ট রেসিং —
দিস ইজ় হিস্টরি!”
দু’জনেই বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে একে অপরের দিকে তাকালো—চোখে ক্লান্তি নেই, শুধু জয়ের এক নিঃশব্দ গর্ব।
মিরায়ার ঠোঁটে ছোট্ট হাসি—রায়ানের চোখে এক ফোঁটা প্রশংসার ঝলক। বাতাসে এখনো ধোঁয়া ভাসছে, আগুনের ঘ্রাণ, আর চারদিক জুড়ে প্রতিধ্বনি—“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া!!!”

রেস ট্র্যাকের চারপাশে আলো নিভে গেছে। শুধু মাঝখানে এক লম্বা সাদা রেখা— যেন যুদ্ধের সীমান্ত। রায়ান এক পাশে, কালো বাইক—আর মিরায়া অন্য পাশে, কালো বাইক।
দু’জনেই হেলমেট পরে নিল। দু’জনের মুখ ঢেকে গেল ভিসর গ্লাসে, কিন্তু চোখের আগুন গ্লাসের ভেতরেও জ্বলছে। গ্যালারি কাঁপছে চিৎকারে— “KING vs QUEEN!! KING vs QUEEN!!”
লারা গর্জে উঠল মাইকে—

“ ভিউয়ার্স…! আর ইউ রেডি ফর দিস ওয়ান? Ride or Die রেস শুরু হচ্ছে..!”
আদ্রিয়ান-“ইউথ দ্যা কাউন্ট ডাউন অব Three… two… one… !!!”
ইঞ্জিন একসাথে গর্জে উঠলো—ভূউউউউউউম!! ট্র্যাকের ওপর টায়ারের ঘর্ষণে ধোঁয়া ছিটকে আকাশ ছুঁয়ে গেল। দু’জন একসাথে ছুটে বেরোল, বাতাস ফুঁড়ে—!
প্রথম কর্নারে দু’জন পাশাপাশি—রায়ান একটু এগিয়ে গেল, কিন্তু মিরায়া সঙ্গে সঙ্গে বাইকটা হঠাৎ ঝুঁকিয়ে corner drift করল, চাকার ঘর্ষণে আগুন ছিটকে উঠলো—এক মুহূর্তে সে রায়ানকে পেছনে ফেলে সামনের লেনে চলে গেল!

রায়ান হেসে ফেলল হেলমেটের ভেতর—“ইউ ওয়ানা প্লে ডার্টি, হা?”
মিরায়া হেলমেটের নিচে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল— “গেম জাস্ট স্টার্টেড!”
এরপরই রায়ান বাইকটা সামনে ঠেলে wheelie করল—
সামনের চাকা উঠিয়ে রাস্তায় পেছনের টায়ার জ্বালিয়ে দিল আগুনের রেখা! দর্শকেরা পাগলপ্রায়- “ওওওওও!!! রায়ান!! রায়ান!!”
মিরায়া এক চিলতে হাসি দিয়ে বাইকটা ঘুরিয়ে reverse lift দিল—পিছনের চাকা বাতাসে, বাইকটা এক মুহূর্তে উল্টে গিয়ে আবার সোজা হলো, যেন আগুনে নাচছে! তার হেলমেটের ভেতর গর্জে উঠল তার কণ্ঠ—“স্টর্ম নেভার ওয়েটস ফর থান্ডার।”

রেস ট্র্যাকের মাঝ বরাবর তারা মুখোমুখি—রায়ান হঠাৎ থেমে বাইকটাকে ঘুরিয়ে spin drift করল, বাইকটা এক জায়গায় ঘুরছে আগুনের চাকতির মতো, টায়ারের ধোঁয়া সাদা কুয়াশা বানিয়ে ফেলছে। আর একই মুহূর্তে মিরায়া অন্যদিক থেকে counter spin করল— দু’জনের বাইক ঘুরে এসে মুখোমুখি থামল, তাদের হেলমেট প্রায় ছুঁয়ে যাচ্ছে একে অপরকে।
এক মুহূর্তের নীরবতা, শুধু দুটো বাইকের ইঞ্জিনের গর্জন, আর চোখে আগুনের প্রতিযোগিতা।
রায়ান মৃদু হেসে বলল—“Not bad.”
মিরায়া নিচু গলায়, যেন কামড়ে কামড়ে উচ্চারণ করল—

“Try to keep up.”
তারপরই তারা দু’জনেই হঠাৎ একসাথে গিয়ার টানল—
ভূউউমমমম!!! দু’জনের বাইক একসাথে সামনে ছুটে গেল,
বাতাসের চাপ এতটাই তীব্র যে দর্শকের চুল উড়ে যাচ্ছে, ব্যানার ছিঁড়ে যাচ্ছে!
বাতাস কাঁপছে, ট্র্যাকের ওপর ধোঁয়া জমে আছে মেঘের মতো। মিরায়া আর রায়ান মুখোমুখি থেকে হঠাৎই গিয়ার টেনে ছুটে গেল—ভূউউউউমমম!!
প্রথম বাঁকে রায়ান বাইকটা হালকা কাত করে corner dive দিল, বাইক প্রায় মাটিতে সমান হয়ে গেল— টায়ারের নিচে আগুনের রেখা! মিরায়া সামান্য পেছনে, কিন্তু হঠাৎই সে বাইকটা বাম দিকে ঝুঁকিয়ে counter drift দিয়ে কেটে গেল—

রায়ানের সামনে এসে বাইকটা ঘুরিয়ে তার সামনে cross block!
রায়ান হেসে ফেলল— “নাইস ট্রাই… বাট আই’ম নট ডান ইয়েট।”
তার বাইকের সামনের চাকা উঁচু হলো, সে wheel-hop দিয়ে মিরায়ার বাইককে সামান্য এড়িয়ে গেল, দু’জনের বাইক কিঞ্চিত পরিমাণে একে অপরকে ছুঁয়ে গেল— ঠাসসস!! ধোঁয়া উড়ে গেল বাতাসে।
দর্শকেরা চেঁচিয়ে উঠল—“ওওওও!! ওভারটেক!!! ওভারটেক!!!”
মিরায়া পেছনে না থেকে আবার গিয়ার দিল। তার বাইকের ইঞ্জিন যেন গর্জন করে বলছে— “আই’ম কামিং ফর ইউ!”

সে রায়ানের ঠিক পেছনে এসে বাইকের লাইট অফ করল—
এক মুহূর্তের জন্য রায়ান বুঝতেই পারল না সে কোথায়!
“What the hell—?”
হঠাৎই মিরায়া পাশের লেনে ঝাঁপিয়ে পড়ে সামনে চলে এলো—“Surprise!”
রায়ান হেসে চোয়াল শক্ত করল— “স্মার্ট… বাট নট ইনাফ।”
তারপরই বাইকটা ঘুরিয়ে side drift দিয়ে বাঁক নিল, এক হাত দিয়ে গিয়ার, অন্য হাতে থ্রটল টেনে সে বাইকটা ঘুরিয়ে snake slide চালাল। বাঁক পেরোতেই আবার সামনে চলে এল, মিরায়ার একদম কাঁধ ঘেঁষে!
বাইকদুটো প্রায় পাশাপাশি, দু’জনের কাঁধ একে অপরের হেলমেটে ছুঁয়ে যাচ্ছে। টায়ার ঘর্ষণে ধোঁয়া, কানে শুধু গর্জন,

মিরায়া ঠোঁট বাঁকিয়ে নিচু গলায় বলল—“ইচ্ছে করে ধাক্কা খাওয়ার শখ হয়েছে নাকি?”
রায়ান কুটিল হেঁসে নিচু স্বরে উত্তর দিল—“কুইনের কি ক্রাউন পড়ার আগেই তা হাড়ানোর শখ হয়েছে নাকি?”
মিরায়া মনে মনে-“এই বেডা তো মহাবজ্জাত বউ ছাড়া কোনো মেয়েকে মেয়ে বলে মানে না নাকি? এতো কম্প্যাটেটিভ? যাক ভালো, মানে এখনো আমাকে চিনতে পারে নি। আসলে কি চেনার কথা? একবার তো দেখেওনি আমার দিকে! আমার কি খুশি ড়ওয়া উচিত যে আমার বর অন্য মেয়েকে দেখতে না ? কিন্তু মেয়েটা তো আমি!” তবে আর বেশি না ভেবে সে তখন রেসে মন দিল।

দু’জনের বাইক আবার সামনের দিকে ছুটে গেল—এবার zigzag lane chase শুরু হলো। রায়ান ডান দিকে, মিরায়া বাম দিকে, দু’জনেই একে অপরকে ছেড়ে দিচ্ছে না এক ইঞ্চিও! রায়ান বাইকটা হঠাৎ slide turn করে পিছন ঘুরে reverse ride শুরু করল—বাইক পিছন দিকে চলছে ২৫০ কিমি স্পিডে, রায়ান তাকিয়ে আছে মিরায়ার দিকে, ঠোঁটে এক টুকরো হাসি। মিরায়া তার পিছনে ছিল বলে ব্যঙ্গ করে বলল- “Still following me?”

মিরায়া কোনো জবাব দিল না। শুধু বাইকটা এক চোট ঘুরিয়ে front flip wheelie দিল—সামনের চাকা বাতাসে, পিছনের টায়ার রাস্তায় ঘষে আগুনের রেখা টেনে সামনে চলে এলো।
ভূউউউমমম!! এক মুহূর্তেই সে রায়ানের ঠিক সামনে এসে পড়ল!
দর্শকেরা উঠে দাঁড়িয়েছে—মোবাইলের ফ্ল্যাশে আলো ঝলমল করছে।
-“রায়া! রায়া!”-“রায়ান! রায়ান!” দুই নামই একসাথে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে!
রেসের মাঝখানে speed trap zone— ওখানে সেন্সর মাপছে স্পিড। রায়ান পেরোল ২৯২ কিমি/ঘণ্টা,
মিরায়া ২৯৮ কিমি/ঘণ্টা!!! ঘোষক চেঁচিয়ে উঠল— “আনবিলিভেবল!! শি’জ ব্রেকিং দ্য লিমিট!!”
রায়ান এবার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিল। তার বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ বদলে গেল— একেবারে গভীর, ভারি, গম্ভীর।
সে বলল নিজের সঙ্গে—“নো মোর হোল্ডিং ব্যাক।”

তার বাইক এবার nitro burst চালু করল—নীল আগুনের রেখা ছুঁয়ে গেল ট্র্যাকের মাটি। রায়ান এগিয়ে যাচ্ছে! মিরায়া চোখ ছোট করে, ঠোঁট কামড়ে গিয়ার শিফট করল আর নিজের বাইকের উদ্দেশ্যে বলল—”লেট’স ফ্লাই বেইবি। আর ইউ রেডি?” বাইক গিয়ারে গর্জে উঠলো- “ভ্রুররররমমম!”
সে বাইকটা dual brake slide করে এক পাশে ঝুঁকিয়ে নিল, তারপর হঠাৎ আবার সোজা। দু’টো বাইক পাশাপাশি এসে পৌঁছাল শেষ লেনের আগে S-turn এ! রায়ান আগে ঢুকল, কিন্তু মিরায়া বাইকটা ৪৫° অ্যাঙ্গেলে কাত করে inside lane trick দিয়ে কোণ ঘুরে বেরিয়ে এলো। দু’জনের বাইক প্রায় ঠুকে গেল একে অপরের সঙ্গে- ঠাসসস!! ধোঁয়া আর স্ফুলিঙ্গ উড়ে গেল আকাশে!
দর্শকরা পাগলপ্রায়—কেউ চেঁচাচ্ছে, কেউ নিশ্বাস নিতে পারছে না! এক মুহূর্তে রায়ান সামনে, পরের মুহূর্তেই মিরায়া
যেন বজ্র আর আগুনের দৌড় চলছে একসাথে! রেস এখন শেষ পর্যায়ে ঢুকছে, বাতাসে টায়ারের গন্ধ, ইঞ্জিনের গর্জন আর মানুষের গলার চিৎকার একসাথে মিশে গেছে। দু’জনেই এখন শুধু একে অপরকে দেখছে হেলমেটের আড়াল থেকে। চারপাশে কিছু নেই, নেই দর্শক, নেই আলো, নেই শব্দ—

শুধু রেস…শুধু তারা দুজন…আর একটাই লক্ষ্য — ফিনিশ লাইন।
রেসের ট্র্যাক একেবারে শেষ বাঁকে পৌঁছেছে। বাতাস কাঁপছে, ধুলো ও আগুনের লেগেছে স্রোত। রায়ান আর মিরায়া একে অপরের ঠিক পাশে—প্রায় কাঁধ ঘেঁষে। দু’জনের বাইক ২৯৫–৩০০ কিমি/ঘণ্টার স্পিডে, চাকা পিচ্ছে পিচ্ছে আগুন ফাটাচ্ছে। মিরায়া হঠাৎ সামনের চাকা উঁচু করে সোজা সামনের দিকে ছোটাল— front wheel hop, ঠিক রায়ানের লাইন কেটে সামনে চলে যাওয়ার মতো। রায়ান মৃদু হাসল, এক হাত দিয়ে হ্যান্ডেল ধরে, অন্য হাতে quick throttle twist—পিছনের চাকা উঁচু করে rear wheel hop, ঠিক মিরায়ার সামনে এসে দাঁড়াল।
দর্শকেরা চেঁচিয়ে উঠল—“ওওওওওওও!! এটা কি হলো?!”

লারা মাইকে চিৎকার করলো-“বাইকস আর লিভিং দ্যা গ্রাউন্ড!!”
মিরায়া ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে হালকা বলল—“ট্রাই টু ক্যাচ মি।”
রায়ান চোখের কোনে মুচকি হেসে বলল— “ক্যাচ? নাহ… আই’ল লিড। ফোলো মি।”
দুই বাইক প্রায় একসাথে side-to-side drift দিল। মিরায়া হঠাৎ zigzag lane cut করল, হালকা বাঁক দিয়ে রায়ানের বাইকের পাশে এসে পড়ল। রায়ান lean-turn করে তাকে এড়াল, এক চোটে snake-slide—দু’জনের বাইক যেন একসাথে নাচছে, প্রতিটা চাকা, প্রতিটা স্পিড, প্রতিটা মুহূর্তে ঝুঁকি! হঠাৎ মিরায়া গিয়ার শিফট করল, এক মুহূর্তে double wheelie—সামনের চাকা বাতাসে, পেছনের চাকা ঘষে আগুনের রেখা টেনে এগিয়ে গেল।

রায়ান হাসল, চোখে আগুন—“নট ব্যাড… বাট ক্যান ইউ হ্যান্ডেল দিস?”
হঠাৎ সে হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে সামনের চাকা ঠাসস করে মাটিতে,
একটি power slide দিয়ে মিরায়ার পাশ দিয়ে আগুনের রেখা ছুঁয়ে সামনে চলে গেল। মিরায়া এক মুহূর্তের জন্য ধ্বংসপ্রায় মনে হলেও, তার বাইক আবার হঠাৎ tight spin করল, সামনের চাকা উঁচু করে সোজা সামনের দিকে ছোটাল,

পিছনের চাকা হালকা চাকা-পিচ্ছিল করে রায়ানের ঠিক আগে এসে দাঁড়াল—দু’জন মুখোমুখি, বাইকের কাছে বাইক, হেলমেটের মিসর ভেদ করে চোখে চোখ।
দর্শকরা চেঁচিয়ে উঠল—“রায়া! রায়া! রায়ান! রায়ান! কি চলছে!? মাই গোড ইনসেইন!!”
রায়ান ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি, মনের মধ্যে—“ওওহহ ওয়াও! শি’জ টাফ… আই লাইক দ্যাট। ইট’স ফান!”
মিরায়া চোখ বড় করে, মনে মনে বলল—“ডিস ইজ মাইন। ডোন’ট ইভেন থিংক অ্যাবাউট ইট হাবি। লেইটার দেন আই উইল হ্যাভ ইউ অ্যা ওয়েল।”

দু’জন একসাথে wheel hop spin, সামনের চাকা বাতাসে, পেছনের চাকা আগুন ছুঁড়ে, এক মুহূর্তে পাশের লেনে কেটে গেল। হঠাৎ এক চোটে রায়ান reverse drift করল, মিরায়ার দিকে মুখ ঘুরিয়ে smack-tap দিচ্ছে।
মিরায়া হেসে উত্তর দিল- “ইস দ্যাট অল ইউ গট, কিং?”
বলেই এক হাত দিয়ে হ্যান্ডেল ধরে, অন্য হাত দিয়ে counter slide, পেছনের চাকা দিয়ে সামনের চাকা ছুঁয়ে রায়ানের বাইককে সামান্য ঠেলে দিল।
দর্শকরা পাগলপ্রায়, কেউ চিৎকার করছে, কেউ মোবাইল তুলে ভিডিও করছে—“ওওওওও!! ওভারটেক!! হ্যাড্ডাহ্যাড্ডি স্টান্ট!!”
রায়ান আবার সামনের চাকা ঘুরিয়ে mini jump, মিরায়া সঙ্গে সঙ্গে dual wheel hop, এক চোখে চোখ রেখে, সামনের চাকা উঁচু করে ঠিক পাশে এসে দাঁড়াল। দু’জনের মধ্যে যেন দুই আগুনের রেখা, ধোঁয়া উড়ছে, ট্র্যাক কেঁপে উঠছে।

মিরায়া ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে মনে মনে বলল— “লেটস ফিনিশ দিস উইথ স্টাইল, মাই কিং।”
রায়ান ধীরে এক হাত দিয়ে হেলমেটের ভিসর উপরে টেনে হালকা হাসল সেও মনে মনে আওড়ালো-“আমি আমার রাইডিং লাইফে এমন রেস করি নি। সো মাচ ইন্টারেস্টিং।”
দু’জন আবার গিয়ার ফাইভে ঢুকল, চাকা ঘর্ষণ, আগুনের রেখা, ট্র্যাকের ধুলো। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, চোখে চোখ।
সবাই মনে করছে— “এভাবে আর কেউ রেস করে! দু’জনেই দেখার মতো চিজ।”
রেসের শেষ লুপে বাতাস কাঁপছে। ট্র্যাকের ধুলো, আগুনের রেখা, চাকা ঘর্ষণের শব্দ—সব মিলিয়ে যেন একটি ঝড়।
রায়ান আর মিরায়া রেস ট্র্যাকে চোখে চোখ রেখে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালাচ্ছে। মিরায়া সামনের চাকা উঁচু করে সামনের দিকে ছোটাচ্ছে, তারপর quick spin, সামনের চাকা দিয়ে হালকা জাম্প, পেছনের চাকা আগুনের রেখা। রায়ান সঙ্গে সঙ্গে counter drift, সামনের চাকা দিয়ে সামান্য হালকা স্পিন, wheel hop, মিরায়ার বাইকের ঠিক পাশ দিয়ে কেটে যায়। দু’জন একসাথে tight zigzag, হ্যান্ডেল-চালনা একটুও ভুল হয় না। মিরায়া হঠাৎ reverse lean turn, সামনের চাকা উঁচু, রায়ানের বাইকের ধুলো পেরিয়ে সামনের লেনে ফিরে আসে। রায়ান হেসে হ্যান্ডেল ঠিক রেখে mini jump slide, আবার সামনের চাকা দিয়ে হালকা spin, মিরায়ার মুখোমুখি এসে touch tap—দু’জনের চোখে আগুন।

দর্শকরা পুরো গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে—
“ওওওওওও! ওভারটেক!! ডুয়েল অব দ্যা নাইট!!”
“রায়া রায়া! রায়ান রায়ান!”
মিরায়া হঠাৎ এক high speed front wheel pop দিয়ে সামনের চাকা উঁচু করে ট্র্যাকের ধুলো ছুঁড়ে, সামনের লেনে কেটে যায়। রায়ান সঙ্গে সঙ্গে lean-slide-spin, সামনের চাকা উঁচু করে হালকা হাওয়ায়, পেছনের চাকা আগুন ছুঁড়ে, ঠিক মিরায়ার পাশে এসে দাঁড়ায়। দুই বাইকের dual hop-spin, সামনের চাকা উঁচু, পিছনের চাকা আগুন ছুঁড়ছে।

মিরায়া ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলল— “ইউ’র গোনা হ্যাভ টু ডু বেটার দ্যান দ্যাট।”
রায়ান চোখের কোনে হালকা হাসি—”ব্রিং ইট অন।”
দু’জন একে অপরকে চেপে ধরছে, ট্র্যাক কেঁপে উঠছে। হঠাৎ, মিরায়া সামনের চাকা উঁচু করে হালকা 360° spin, আগুনের রেখা, পেছনের চাকা ধুলো ছুঁড়ছে। রায়ান হঠাৎ reverse lean jump, সামনের চাকা উঁচু, বাইকের ধুলো মিশে আগুনের রেখা ছড়ায়, ঠিক মিরায়ার পাশ দিয়ে এসে সামনের লেনে কেটে যায়।
দর্শকরা একসাথে চেঁচিয়ে উঠছে—”ইস শিট! ক্যান রায়া হ্যান্ডেল দিস??”

মিরায়া হঠাৎ triple hop-wheel, সামনের চাকা বাতাসে, পেছনের চাকা আগুনের রেখা, পুরো গ্যালারিতে ধুলো আর আগুনের ঝলক। রায়ান সঙ্গে সঙ্গে counter hop-spin, সামনের চাকা উঁচু, সামান্য ধাক্কা দিয়ে আগেরর লেনে ফিরে আসে। দু’জনের মধ্যে হঠাৎ একটা গ্যাপ চলে আসে। সেই মুহূর্তে মিরায়া অনেক টা এগিয়ে যায় রায়ানের থেকে তবে রায়ান নিজ গতিতে ঠিক পিছনৈই আছে স্পিড অনেক টা কমে গেছিল তাই গিয়ার চেন্জের পর খুব দ্রুত এগোতে থাকে রায়ান।

হঠাৎ—মিরায়া সামনের চাকা উঁচু করে হালকা লাফ, ঠিক তখনই পেছন থেকে মার্বেল আঘাতের ঝুঁকি আসে।
মার্বেলগুলো রাস্তায় পড়তে শুরু করে, ট্র্যাকের উপর।
দর্শকরা চিৎকার করছে, কেউ মোবাইল তুলে ভিডিও করছে, কেউ হ্যান্ডস তুলে কাঁপছে—“ওওও! শিট, মার্বেল! এগুলো কোথা থেকে এলো!”
মাহির-“হুয়াট দ্যা হেল ইজ গোয়িং অন উইথ দ্যা গার্লস। মেয়েটার লেগে যাবে তো।”
মাহিরের এমন কথার কারণ ব্যাখ্যা করা যাক!

( ফ্ল্যাশ ব্যাক~
গ্যালারি তে অন্যান্য রাইডার রা ও রেস টা দেখছিল। যতক্ষণ মিরায়া রায়ানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল বা রায়ান মিরায়ার আগে ছিল ততক্ষণ সব ঠিক ছিল। তবে মিরায়া রায়ানকে কয়েক মুহূর্তের জন্য ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছে দেখতে পেয়ে বাকি লেডি বাইকার রা জ্বলে যাচ্ছিল। সবার মধ্যে হঠাৎ জান্নাত সোজা ট্যাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“একটা বাইরের মেয়ে রাইডার কুইনের ট্যাগ নিয়ে যাবে তা হতে পারে না।”
বাকিরা আড় চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-“তো কি করবো? জেতার পর তালি দেওয়া ছাড়া আর কিছু তো কার মতো ও নেই।”
নূর হঠাৎ অনামিকা কে ইশারায় কিছু বলল অনামিকা সেটা ঠিক বুঝে নিয়ে একটা ব্যাগ বের করলো- ব্যাগ ভর্তি ছিল মার্বেল। রেস জিনিস টা রাইডার দের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ আর তা জিততে নোংরা ট্রিক্স ব্যবহার করা রেসিং ওয়ার্ল্ডে খুব অজনপ্রিয় নয়। সেই মার্বেল গুলো ও আনা হয়েছিল নিজের জয় নিশ্চিত করতে। যদিও সেই ক্ষেত্রে কাজে নি তবে অন্য কে হাড়াতে ঠিক লাগবে। অনামিকা আর নূর ইচ্ছা করে মিরায়ার দিকে সেই মার্বেল গুলো ছুঁড়ে দেয়।)

বর্তমান ~
মিরায়ার চোখ কান বরাবরই খোলা থাকে রেস করা কালীন সে মার্বেলের গতিবিধি বুঝতে পেরেছিল তবে বাইকের স্পিড এতো বেশি ছিল সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও ব্যালেন্স হাড়ানো নিশ্চিত শুধু ক্ষতি এড়ানো সম্ভব তবে হবে। মিরায়া নিজের বিচুক্ষনতায় চাকা উঁচু করে লক্ষ্য বুঝতে পেরেছে, চোখের কোনে ঝলক নিয়ে স্পিড সঙ্গে সঙ্গে কমিয়ে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করল। কিন্তু বাইকের গতি এত বেশি, মার্বেলের আঘাত এড়াতে পারলেও ব্যালেন্স রাখা সম্ভব হয় নি। মিরায়া বাইকটার উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, আর সাথে সাথে ট্র্যাকের উপর পড়ে যায় ছিটকে। আঘাত বেশি লাগেনি সেফটি ছিল তাই তবে হাতে সামান্য চাপ পড়েছে এটা তার জন্য আহামরি কিছু না। আকস্মিক ঘটনায় সে সামান্য অবাক তাই পরিবেশ বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো।

রায়ান পিছন থেকে সোজা তাকিয়ে, পুরো ঘটনাটা চোখে ধরল। অন্য রাইডাররা যে ইচ্ছা করে এটা করেছে তাও রায়ানের চোখ এড়ায়নি। রায়ান দূর থেকে এসব দেখে মনে মনে দাঁত কিরমির করে বলল-“হাউ ন্যারো মাইন্ডেড পিপল। হাহ্! মেয়ে হয়ে মেয়ে জিতবে তা সহ্য করতে পারে না। কি হিংসুটে এক জাতি ভাবা যায়!”
রায়ান মার্বেল থেকে দূরে বাইকের পাশে হালকা জাম্প, বাইক সাইড কাটিয়ে, ঠিক মিরায়ার পাশ দিয়ে নিরাপদে এগিয়ে গেল সে। মনে মনে বলল—“স্মল মাইন্ডস আই নো … বাট আই ক্যান্ট স্টপ। নট টুডে।”
রায়ানের বাইকের স্পিড খুব হয়ে গেছে এখন না চাইতেও বাইকটা সঙ্গ দিচ্ছে না আর চলতে। রায়ান নিজের মনকে মানাতে পারছে না-“রায়ান হুয়াটস রোং উইথ ইউ? মেয়েটার হেল্প লাগবে। গো এ্যান্ড হেল্প হার ড্যামেট।”
রায়ান বিড়বিড় করলো-“আই ক্যান’ট উইন লাইক দিস! ওহ গোড! শিট!”

ফিনিশ লাইনের দিকে এগিয়ে গেল রায়ান, তবে ক্রস করলো না বরং ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ফিনিশের ঠিক এক ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁকা রেখে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল, একবার পিছনে তাকাল—মিরায়ার বাইক ট্র্যাকে পড়ে আছে, সে নিজেই উঠে দাঁড়িয়েছে তবে হাতে লাগার কারণে বাইকটা তুলতে হিমসিম খাচ্ছে। তবুও চেষ্টা করছে।”
মিরায়া হঠাৎ সবকিছু ঘটাতে তে ব্যাথা বুঝছে না কোনো শুধু মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তার হাড় মানলে চলবে না। মিরায়া নিজেকে সাহস দিল-“কাম অন রায়া। ইউ ক্যান্ট লুজ লাইক দিস।”

রায়ান হাঁফ ছেড়ে সাথে সাথে বাইক ইউ টার্ন নিয়ে মিরায়ার দিকে যায়। গ্যালারি তে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে দেখছে সেই মুহূর্তে। হোস্ট দুইজন ও মাইক অফ করে দাঁড়িয়ে গেলেন কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবার দুই চোখ এখন রায়ান আর মিরায়ার উপর। পিনড্রপ সাইলেন্স সম্পূর্ণ গ্যালারি তে। মনে হচ্ছে শুধু রায়ান আর মিরায়া দুইজনই ট্র্যাকের উপর। রায়ানকে ফিনিশ লাইনের এতো কাছে থেকে নিজের দিকে আসতে দেখে মিরায়া ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। রায়ান কিছু সময়ের মধ্যেই মিরায়ার কাছে এসে বাইক থেকে নেমে মিরায়ার বাইকটা তুলতে যাবে কিন্তু মিরায়া তার মাঝে। রায়ান মিরায়ার দিকে তাকিয়ে বলল-“মিস.রায়া প্লিজ গিভ আ সাইড।”

মিরায়া হুসে ফিরে সাথে সাথে সড়ে দাঁড়ালে রায়ান মিরায়ার বাইকটা তুলে দিয়ে একবার স্টার্ট দিয়ে দেখলো। বাইক ঠিক মতোই চলছে। রায়ান এবার বাইকটা ট্র্যাকে সোজা দাঁড়া করিয়ে বলল-“বাইকটা আপনার তার প্রতি করা যত্ন খুব ভালো রিটার্ন করছে। নাও ইট’স ইউর টার্ন , রাইড ইট লাইক ইট’স দ্যা লাস্ট টাইম।”
মিরায়া এক চিলতে হাসলো হেলমেটের আড়ালে। তার হঠাৎ খুব ইচ্ছে করল রায়ানকে জড়িয়ে ধরতে তবে হাত পা বাঁধা। মিরায়া মনে মনে বলল-“খুব ইচ্ছে করছে আপনাকে কাছে পেতে। তবে এখন না, আদর্শ স্বামী হওয়ার পরীক্ষায় পাস করলে আপনাকে খুব কাছে টানবো, প্রমিস। আর কখনো যেতে দেব না। আপনি চাইলেও না।”
রায়ান মিরায়াকে কিছু বলতে না দেখে মিরায়াকে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল-“হ্যালো মিস.? আপনি ঠিক আছেন? কোথাও চোট লেগেছে?”

মিরায়া মাথা না সূচক বাড়ালো মুখে কিছু বলল না। রায়ান মিরায়াকে বাইক টা দিয়ে বলল-“গো এ্যান্ড উইন ইট।”
মিরায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ভারি গলায়-“আপনি ফিনিশ লাইন থেকে ঘুরে এসে এখন আমাকে জিততে বলছেন। আদতেও কি এটা আমার জিৎ হবে?”
রায়ান গ্যালারিতে মার্বেল ছুড়ে দেওয়া মেয়েগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে মিরায়াকে বলল-“যারা হাড়াতে চায় তাদের কাছে হেড়ে গেলে সেটা অসম্মান জনক। তার চেয়ে নাহয় এইবারের মতো এভাবেই দিতে গেলেন।”
মিরায়া গম্ভীর গলায় বলল-“রায়া এভাবে কখনো জেতেনি আর না জিতবে। ওইসব ছোট মন মানসিকতার মানুষের আমাকে হাড়াতে চাওয়ায় আমি হেঁড়ে গেলেও আমার অসম্মান হবে বলে আমার মনে হয় না। ইউ ক্যান উইন ইট। গো।”

রায়ান বুঝতে পারলো রায়ার (মিরায়ার) আত্মসম্মান রেসের ট্রফির থেকেও বড়। সে স্বাভাবিক ভাবে মিরায়াকে আবার বলল-“আমি এখন জিতলে সেটা বাই ডিফল্ট জেতা হবে। আপনার কাছে অযুহাত থাকবে বলার জন্য- আপনি জিততে পারেন নি চিটিং হয়েছিল তাই‌। রায়ান চৌধুরী এমন জিতার ধার ধারে না। সো ইউ গো এ্যান্ড উইন।”
মিরায়ার এবার আরো জেদ চেপে বসলো-“ইদার ইউ উইন অর ফরগেট ইট।” দুই হাত আড়াআড়ি করে বুকে বেঁধে।
রায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এভাবে হঠাৎ রেস থেমে যাওয়ায় গ্যালারির সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো-
“আরে কি হলো হঠাৎ দুইজন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কেন আছে!‌?”

-“রেস কি আর হবে না!”
লারা আর আদ্রিয়ান দুইজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। তারপর ই এ্যানাউন্স করল রায়ান মিরায়ার উদ্দেশ্যে -“ইজ দ্যায়ার এনি প্রবলেম?”
রায়ান চারপাশে একবার দেখে উত্তেজিত গ্যালারিতে সবার কথা শুনে মিরায়ার দিকে দেখলো। মিরায়া এখনো নিজের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। রায়ান নিজের হেলমেটটা দুই হাতে ধরে মাথা ঝাঁকিয়ে অবশেষে প্রস্তাব দিল-“ওয়ানা উইন টুগেদার?”
মিরায়া অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। রায়ান আবার বলল-“হারি আপ, সে সামথিং! হুঁ ইউ ওয়ানা শেয়ার দ্যা উইনিং?”

মিরায়া-“হাও ক্যান উই উইন টুগেদার? শেয়ার কিভাবে করে আবার উইনিং?”
রায়ান মিরায়া কে সোজা বলল-“আই ওয়ান্ট দ্যাট ট্রফি সো ইউ ক্যান হেভ দ্যা প্রাইজ মানি।”
মিরায়া হেলমেটের ভিতরে চোখে ছোট ছোট করে বলল-“আপনার ট্রফি কেন লাগবে?”
রায়ান আবারো শান্ত স্বাভাবিক ভাবে বলল-“আই প্রমিসড মাই ওয়াইফ টু ব্রিং হার দ্যা ট্রফি। ওভারে দ্যাট আই ডোন্ট নিড দ্যা মানি।”
মিরায়া হালকা বিরক্ত হয়ে মনে মনে বিড়বিড় করলো-“ওই একই তো হলো ট্রফি তো আমি আর পাচ্ছি। যেই লাউ সেই কোডু।”
মিরায়া চার পাশটা একবার দেখলো সবাই মুখিয়ে আছে রেস শেষ হওয়ার জন্য। মিরায়ার মনে শান্ত করে রায়ানের প্রস্তাব মেনে নিয়ে বলল-“ওকে, রিচ কিং। হ্যাভ দ্যা ট্রফি।”
মিরায়া টাকা টা নিলো কারণ এটা তার চট্টগ্রামে বাইক কমিউনিটির প্রাপ্য তার জন্য ট্রফি টুকুই বরাদ্দ যা সে এমনটিও পাবে রায়ানের থেকে। রায়ান এবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল-“গেট অন দ্যা বাইক ফাস্ট।”
দুইজন একসাথে হেলমেট ঠিক করে, গ্লাভস ঠিক করে, বাইকের পাশে দাঁড়াল। গ্যালারি আবার মেতে উঠল চিৎকারে

“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া!”
শব্দগুলো যেন বাতাসের সঙ্গে মিশে রেসট্র্যাকের প্রতিটি কোণায় পৌঁছাচ্ছে।
হোস্টরা আবার অ্যাক্টিভ হয়ে মাইকে ঘোষণা করল—
“লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলমেন! দ্য কিং অ্যান্ড কুইন আর অন ট্র্যাক-! ওয়াচ দেম কংকিউর স্পিড, স্কিল অ্যান্ড স্টাইল—টুগেদার!”

মার্বেল ছোড়া অনামিকা, নূর, জান্নাত, মেহের—সবাই হিংসায় জ্বলে উঠল। রায়ান মিরায়া দুইজন একসাথে বাইকের উপর চড়ল, দুইজনে একে অপরকে হেলমেটের ভিসর দিয়ে দেখলো। ইঞ্জিনের গভীর গর্জন যেন পুরো ট্র্যাককে কম্পিত করে তুলল। বাতাস কেটে যাচ্ছিল, রেসট্র্যাক যেন একসাথে শ্বাস নিতে শুরু করল।
রায়ান-মিরায়ার চোখে আগুন, ধমনিতে উত্তেজনার রক্ত উথলাপাথল। গ্যালারি ইতিমধ্যেই পূর্ণ, চিৎকার আর উত্তেজনা বাতাসে মিশে রেসট্র্যাকের প্রতিটি ইঞ্চি স্পন্দিত করছে। প্রত্যেক দর্শক যেন নিজের হৃদয়কে বাইকের সঙ্গে মেলাচ্ছে—একটি অদ্ভুত উত্তেজনার সমুদ্র।

ইঞ্জিন আবারও গভীর গর্জন করল, ধুলো এবং ধোঁয়ার সাথে বাতাস কেটে এগোতে লাগল। বাইকের শব্দ, চাকা ঘূর্ণনের আওয়াজ, ধোঁয়ার সাথে মিশে এক ধরনের মহা সিম্ফনি তৈরি করল।
মিরায়া সামনের চাকা উঁচু করে হালকা লাফ, পিছনের চাকা স্পিনিং করে আগ্রাসী ধোঁয়া ছড়াল। প্রতিটি লাফে সে যেন রেসট্র্যাকের বায়ুকে নিজের মতো নাচাচ্ছে। সে সামনের দিকে ঝাপ দিয়ে, হঠাৎ সাইড সুইভ করে, ব্যালেন্স ধরে রেখেই micro-lift নিল। রায়ান পেছনের চাকা উঁচু করে narrow jump নিল। প্রতিটি চাকা, প্রতিটি লাফ নিখুঁত, যেন বাতাসও তাদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছে। দুইজন এক মুহূর্তের জন্য মুখোমুখি, চোখে চোখ—কোনও চ্যালেঞ্জ নেই, শুধুই অদ্ভুত মিলন এবং পারফেকশন। বাইকের সাউন্ড, ধোঁয়া, আগুনের রেখা—সব মিলিয়ে যেন সিনেমার একটি অবিশ্বাস্য দৃশ্য।

দর্শকরা পুরোপুরি মুগ্ধ। মোবাইলের ফ্ল্যাশ, চিৎকার, হাততালি—সব মিলিয়ে একটি উত্তেজনার সিলসিলা, যা হৃদয় স্পন্দনকে থামাতে বাধ্য করছে। কেউ হাঁটতে পারছে না, কেউ শ্বাস নিতে ভুলে গেছে, কেউ নিজের চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে—মাঝখানে একটা গরম অনুভূতি, যে অনুভূতি কেবল বাইকের স্টান্ট আর দক্ষতা দেখে আসে।
দুইজন একসাথে লাইনে এগোতে লাগল। সামনের চাকা হালকা উঠানো, পিছনের চাকা উড়ানো, সাইড সুইভ, হালকা জাম্প—সব মিলিয়ে যেন একটি নাচ, এক একটি রিদমে হৃদয় স্পন্দন।
গ্যালারি চিৎকার করছে, সবাই একসাথে—
“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া! কিং এ্যান্ড কুইন !”

বাতাসে ধোঁয়া, বাইকের আগুনের রেখা, প্রতিটি চাকা ঘূর্ণন—সব মিলিয়ে সিনেমাটিক মুহূর্ত। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে রেসট্র্যাকের প্রতিটি ইঞ্চি এক জ্বালাময়ী উত্তেজনার সঙ্গে আগুনে ঝলসে যাচ্ছে। দুইজন শুধু এগোচ্ছে, প্রতিটি মুহূর্তে নতুন উত্তেজনা, নতুন স্টান্ট, নতুন ধোঁয়া, দর্শকদের হৃদয়স্পন্দন নিয়ে খেলা করছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, শুধুই প্রদর্শনী, দক্ষতা, এবং রাইডারের পূর্ণ আত্মার প্রকাশ। দর্শকরা এমন উত্তেজনায় জেগে আছে যে, মনে হচ্ছে কেউ এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করলে, পুরো ঘটনা মিস হয়ে যাবে।
মিরায়া সামনের চাকা হালকা তুলে সামনের লেনে নাড়াচাড়া করছে, পিছনের চাকা স্পিনিং করে আগ্রাসী ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। রায়ান সামনের চাকা সামান্য তুলে সামনের লাইন ধরে রাখছে, সামনের লেনের বাঁকগুলো নিখুঁতভাবে কাটছে।

প্রতিটি স্টান্ট—front wheel lift, micro-jump, slight drift control—সবই তাদের হাতের স্পর্শে নিখুঁত। দর্শকেরা যেন শ্বাস আটকে ধরে দেখছে, বাইকের চাকা যেন বাতাসের সঙ্গে লড়াই করছে, ধুলো এবং ধোঁয়া যেন বাতাসে আগুনের রেখা আঁকছে।
মিরায়া হালকা হেলমেটের ভেতর মুখের কোণায় এক ছোট্ট হাসি, তার চোখে একধরনের আত্মবিশ্বাসী আগুন। রায়ান চোখে এক স্থিরতা, মুখে শান্তি—তবু চোখের কোণায় ফুটছে উত্তেজনা, পুরো ট্র্যাককে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দক্ষতা।

দুইজন perfect synchronization-এ বাইকের স্টিয়ারিং, লেগ আর হ্যান্ডেল নিয়ন্ত্রণ করছে। সামনের চাকা উঁচু, পেছনের চাকা স্পিনিং, হালকা drift—সব মিলিয়ে যেন একটি সিনিমাটিক ডুয়েট।
ফিনিশ লাইনের কাছে পৌঁছতেই—মিরায়া সামনের চাকা সামান্য হেলিয়ে টান দিয়ে সামনের লেনে রাখে, আর রায়ান একই মুহূর্তে সামনের চাকা সামান্য তুলে সামনের লেন ধরে রাখে।
দুইজন একসাথে, perfectly balanced, ফিনিশ লাইন ক্রস করে। ধুলো উড়ে যায়, ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, ইঞ্জিনের শব্দ যেন ধীরে ধীরে fade out হচ্ছে। বাইকের লেগ হালকা করে তাদের weight shift ঠিক রেখে দাঁড়ায়—প্রফেশনাল লেভেলের control, নিখুঁত execution।
গ্যালারির প্রতিটি চোখ বিস্ময়ে উন্মুখ, চিৎকার এবং মোবাইলের ফ্ল্যাশ—সব মিলিয়ে যেন রেসট্র্যাকের প্রতিটি কোণ আলোকিত।

দুইজন বাইকের উপর দাঁড়িয়ে আছে, হেলমেট হাতে, বুকের ভেতর উত্তেজনার ঢেউ, কিন্তু ব্যালেন্স, কন্ট্রোল এবং স্টাইল একেবারে প্রফেশনাল লেভেলে।
দর্শকরা একসাথে চিৎকার করছে—

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১ (২)

“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া! কিং এ্যান্ড কুইন ওন দ্যাট রেস!! ইয়েয়য়য়য়!!”
লারা আর আদ্রিয়ান একসাথে মাইকে আওয়াজ করে চেচালো-
“লেডিস এ্যান্ড জেন্টালম্যান প্রেজেন্টিং দ্যা আল্টিমেট উইনাস
The rider King and Queen of the Night— Ryan chowdhury & Raya Rahman!!!”
রায়ান মিরায়া শুধু একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের জিৎ নিশ্চিত করলো।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১ (৪)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here