আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪২
অরাত্রিকা রহমান
রেস শেষ। ধুলো মিশ্রিত বাতাসে এখনো টায়ারের গন্ধ, গরম ইঞ্জিনের ধোঁয়া, আর উল্লাসে গলা ফাটা মানুষের চিৎকার। গ্যালারির আলো এক এক করে জ্বলতে শুরু করেছে, লেজারের আলো ট্র্যাকের ওপর নেচে উঠছে।
হঠাৎ লারা মাইক হাতে তুলে নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে জোর গলায় উত্তেজিত ভাব নিয়ে ঘোষণা দিলো—
“Ladies and gentlemen… please welcome our winners— the rider King and Queen of the year! Rayan Chowdhury and Raya Rahman!!!”
দর্শকরা একযোগে চেঁচিয়ে উঠল—
“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া!”
ফ্ল্যাশলাইটে স্টেজ আলোকিত। দুজনের ছায়া আলোর মাঝে বড় হয়ে পড়েছে। রায়ান হেলমেট হাতে, গ্লাভস খুলে কোমরে ঝুলিয়ে রেখেছে। মিরায়া মাথায় হেলমেট খুলেও খুলতে চাইছিল না তবে হেলমেট পড়ে স্টেজে উইঠা সম্ভব না। তাই, চোখ আড়াল করণে চোখে কালো গগলস পড়ে নেয়, আর মুখে মাস্ক তো ছিলোই—পুরোপুরি আবৃত এক রহস্যময় উপস্থিতি ছিল তার।
যখন তারা স্টেজে উঠল, সবার হাত তালির মাঝে গ্যালারি থেকে হালকা গুঞ্জন শুরু হলো—
“রায়া এভাবে মুখ ঢেকে রেখেছে কেন?”
“লুকানোর কী আছে?”
“কেউ কী জানে এই মেয়েটা আসলে কেমন দেখতে?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সেই আওয়াজে বাতাস যেন একটু ভারি হয়ে গেল। মিরায়া স্থির মুখে, কোনো কথা না বলে, শুধু গ্লাভসের নিচে আঙুল মুঠো করে দাঁড়িয়ে রইল। রায়ান একবার তাকালো পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা মিরায়ার দিকে—চেনার চেষ্টা নয়, শুধু সম্মান মেশানো এক দৃষ্টি। তার মনে অদ্ভুত কোনো প্রশ্নের উদয় ও হচ্ছে না মিরায়ার এমন আশ্চর্যকর বহিঃপ্রকাশের। রায়ান আবার নিজের মতো সোজা হয়ে দাড়ায়।
আদ্রিয়ান ও লারা স্টেজে এগিয়ে এলেন ট্রফি হাতে রায়ান আর মিরায়ার হাতে দেবার উদ্দেশ্যে। আদ্রিয়ান ঘোষণা দিলেন—
“They have not just won the race… they’ve won hearts tonight! Presenting the Ultimate Riders of the year with their trophy—Ryan Chowdhury and Raya Rahman! make some noise everyone!”
দুজনের হাতে একসাথে ট্রফি তুলে দেওয়া হলো। রায়ান মিরায়া একসাথে ট্রফি দুই পাশ থেকে ধরে হালকা লিফ্ট করে উপরে করলো। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে আলো ঝলমল করছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে থিম মিউজিক, দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে ও চিয়ার করছে-“রায়ান! রায়া! রায়ান! রায়া!”
মিরায়ার হাতে অল্প লেগেছিল এবং ট্রফিটা হালকা ভারি হওয়ায় মিরায়ার উপর বেশি ভার না দিয়ে, রায়ান ট্রফিটা সামলে নিল। রায়ান মাথা সামান্য নিচু করে বিনম্রভাবে হাসলো। নিজের মনে এখন জিততে পেরে যে শান্তি পাচ্ছে, হয়তো এটা তখন মিরায়াকে ঐ অবস্থায় রেখে কাপুরুষের মতো একা জিতে গেলে পেতো না। এই ভেবে বেশ খুশি লাগছে তার যে- সে তার ডিগনিটি হাড়ায়নি নিজের কাছে। মিরায়া ট্রফি হাতে নিয়ে এক মুহূর্ত থেমে, আলতো করে সেটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিল—মনে হচ্ছিল, এই ট্রফিটা কেবল জয়ের নয়, একটা স্বপ্নের প্রতীক। ট্রফির পরে প্রাইজ মানির চেক টোটাল ১০০০০০টাকা বিজয়ীদের দেওয়া হলো। তবে এই সময় চেকটাতে রায়ান হাত রাখলো না। মিরায়া একাই চেক টা গ্রহণ করলো। তাদের ডিল অনুযায়ী রায়ান ট্রফি আর মিরায়া প্রাইজ মানি নিলো।
এরপর লারা রায়ানের দিকে মাইক্রোফোন বাড়িয়ে দিলেন—
“Rayan, tonight you ruled the track again. How does it feel to take the crown back home?”
রায়ান মাইক নিল, কণ্ঠে সেই পরিচিত স্থিরতা—
“Winning never gets easy or old, no matter how many times you do it. Every race teaches you something new… tonight, it taught me respect. Respect for every rider who fights their own battle on this track. Today it’s also gave a different kind of experience.” (শেষের লাইনটা মিরায়ার দিকে তাকিয়ে আওড়ালো)
দর্শকরা হাততালি দিল। কেউ চিৎকার করে উঠল—“That’s our King! he is so fine.”
ভীরের মধ্যে কেউ চেঁচিয়ে উঠলো-” রায়ান..! প্লিজ ম্যারি মি। আই ওয়ানা ম্যারি ইউ।”
মিরায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো ভীরের দিকে। মনে মনে বিলাপ করছে-“কোন শাকচুন্নী বললি রে এইটা? তোরে যদি আমি হাতের কাছে পাইতাম রে! অন্যের বরকে ম্যারি করার শখ মিটিয়ে দিতাম।”
লারা দর্শকের কারো এমন ধারার কথা শুনে রায়হানকে প্রশ্ন করলো-“তো রায়ান কি বলতে চান আপনার ফ্যানকে এই প্রপোজাল এর পর?”
রায়ান হালকা হেঁসে বলল-“Nothing much, just wanna say that I have a beautiful wife who is waiting for me at home. And I wish she would be happy after seeing me with the trophy.”
গ্যালারির সবাই হতাশ হয়ে পড়লো। রায়ানের কথায় মিরায়া সাথে সাথে রায়ানের দিকে চাতকপাখির ন্যায় তাকিয়ে দেখলো। সবার সামনে এভাবে তার কথা রায়ান সবাইকে বলবে আশা করে নি। মুখে উজ্জ্বলতা আর ঠোঁটের কোণে মুচকি একটা হাসি ফুটে উঠলো তার।
লারা অবাক হয়ে রায়ানকে প্রশ্ন করলো-“what? really! you are married?”
রায়ান সন্তুষ্টি নিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল-“yes, happily married, with the most beautiful girl… She is the best life partner I could ever have.. I love my wife!”
মিরায়া এক সেকেন্ড এর জন্য বরফের মতো জমে গেল-
“কি বললেন উনি? লাভ!? উনি আমাকে ভালো বাসেন? আমি কি ঠিক শুনলাম?”
মিরায়া সেই মুহূর্তে পারছে না ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে তার বরকে। এই প্রথম রায়ান তার ভালোবাসা শিকার করলো মিরায়ার জন্য তাও এতো মানুষের মাঝে, না জেনেই যে তার বউও সেখানে উপস্থিত। হয়তো জানে না বলেই মনের কথা মুখে আনতে আর নিজের দূর্বলতা স্বীকার করতে সময় লাগলো না। মিরায়ার উপস্থিতি টের পেলে এভাবে নির্দ্বিধায় ভালোবাসি বলা রায়ানের পক্ষে সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ – সাহস নেই তা নয় বরং নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ততা কাজ করতো তখন।
রায়ানের কথা শেষে লারা মিরায়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল—
“And now, the Queen of the Night—Raya Rahman! Tell us, how does it feel to make history tonight?”
মিরায়া কয়েক সেকেন্ড চুপ রইল। রায়ানের স্বীকারোক্তি তার মনে যেই ঝড় তুলেছে এখন তা শান্ত করা খুব কঠিন মনে হলো তার। তবে স্বাভাবিক দেখালো নিজেকে সবার উদ্দেশ্যে। বাতাসে হালকা সিটি বাজছিল। তারপর গগলসের নিচে মাইক্রোফোন এগিয়ে নিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল—
“princess or queen tomboy or king you have heard a lot, but you have never seen, I am just a divine feminine.. প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে এতো টুকুই বলার—স্পিড আর সাহসের কোনো জেন্ডার নেই। Do what you like.”
গ্যালারি এক মুহূর্তে নিস্তব্ধ, তারপর একসাথে বিস্ফোরিত করতালিতে ফেটে পড়ল।
কিন্তু হঠাৎই কেউ চিৎকার করে উঠল—
“Show your face, Raya!”
আরেকজন—“Yes, we wanna see the real Queen!”
দেখতে দেখতে পুরো গ্যালারিতে এক সুরে গর্জন—
“Show your face! Show your face!!”
ক্যামেরাগুলোর লেন্স মিরায়ার মুখের দিকে ঘুরে গেল।
স্টেজের আলো আরও উজ্জ্বল হলো। মিরায়া একটু পিছিয়ে এল, হাতের মুঠো শক্ত করে ফেলল। তার নিশ্বাস ভারী।
আদ্রিয়ান হেসে মাইকে বলল—“Raya, is there any reason you’re hiding your face tonight?”
সবাই নিঃশব্দ। মিরায়া কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে শান্ত স্বরে বলল—
“Creating curiosity is the best marketing. I prefer my identity to stay hidden. It’s not like just for today but always.”
একটা মুহূর্তের জন্য পুরো স্টেডিয়াম নিস্তব্ধ। তারপর গ্যালারি থেকে একটা কণ্ঠ—আদনান, জ্যাকের পাশে দাঁড়িয়ে—
“চেহারা দেখাতে চায় না, হয়তো সুন্দরী না তাই!”
হাসির রোল উঠল চারদিকে। জ্যাক ঠোঁট কামড়ে হেসে কুটিল স্বরে বলল—
“সুন্দরী হোক বা না হোক, এই মেয়েটাকে আমি চাই… সেটা এক রাতের জন্য হলেও। আদনান ব্যবস্থা কর।”
তার চোখে একধরনের বিকৃত আগ্রহ।
আদনান জ্যাককে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো-“কিভাবে ব্যবস্থা করবো রেস তো শেষ।”
জ্যাক আদনানের দিকে ঘুরে বলল-“রেসের পর আমাদের আফ্টার পার্টি আছে না? সেটা রেসের প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত করতে বল হোস্ট কে। আর কিছু বললে বলবি এমপি কিবরিয়া সরকারের ছেলে জ্যাকসন বলেছে করতে। সামনের ইয়ার এর রেসের ইনভেস্টার এর চিন্তা করতে হবে না তাদের আর।”
আদনান জ্যাককে বলল-“কিন্তু ওই পার্টি তো স্মাগেলিং এর জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। কতো বড় ডিলার আসবে ড্রাগস নিতে।”
জ্যাক উগ্রতা নিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলল-“মাদার চো**! কথা কম, যা বলেছি তা কর। ব্যবসার কাজে পিছনে করবি। রেসের সাকসেস পার্টি সামনের দিকে হবে।”
আদনান আর কিছু বলার সাহস পেলো না সোজা গেল আথোরিটির সাথে কথা বলতে।
এইদিকে দর্শক সবাই এক নিবেদন করে যাচ্ছে মিরায়ার কাছে- তার চেহারা দেখার জন্য। রায়ান সবার এমন অদ্ভুত আবদারে বেশ বিরক্ত হয় মনে মনে সে নিজে বলতে থাকলো-“অদ্ভুত তো একটা মানুষ চেহারা শো করবে না এটা তার ইচ্ছা, জোর করছে কেন সবাই।”
রায়ান হেলমেট হাতে নিল, চোখ একবার গ্যালারির দিকে, তারপর মিরায়ার দিকে। সে চুপ না থেকে মাইক হাতে নিল
তার কণ্ঠে গম্ভীরতা, কিন্তু প্রতিটা শব্দ যেন ধারালো—
“Everyone, please be silent.”
দর্শকেরা থেমে গেল। শুধু মাইক্রোফোনের হালকা ফিডব্যাক শব্দ। রায়ান ধীরে ধীরে বলল—
“She doesn’t want to be seen. That’s her personal choice. We all should respect that. Don’t force her. It’s a basic manner.”
গ্যালারির শব্দ যেন মুহূর্তে গিলে নিল বাতাস। সব আলো নিস্তব্ধতার মতো নরম হয়ে এল। মিরায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রায়ানের দিকে। তার চোখে এক সেকেন্ডের জন্য একরকম নরম আলো—কৃতজ্ঞতা, বিস্ময়, আর কোথাও গভীরে চাপা আবেগ। রায়ান কথা শেষ করতেই চোখ ফিরিয়ে নিল।
মিরায়া মাইক্রোফোন নামিয়ে ফিসফিস করে নিজের মনেই বলল—
“এই দিকটা সবাই দেখতে চাইছে আমি কে… শুধু আমার বরটাই চাইছে না। ধুর।”
তারপর নিজের মনে নিজেকেই ধমকালো—
“না না মিরা, কেন চাইবে উনি? তুই এখন রায়া। রায়ান আসলে কে…এটা কেন তোর বর দেখতে চাইবে! না দেখতে চাওয়া তো ভালো। আলহামদুলিল্লাহ বল।”
মিরায়া নিজের মনে শান্ত করে নিল। স্টেজের বাতাস যেন ভারী হয়ে এল। তারপর আদ্রিয়ান মাইক্রোফোন তুলে হেসে বলল—
“Well, that’s what makes this night even more mysterious and special. Let’s thank our champions for giving us the most thrilling race of the season!”
গ্যালারিতে আবার হাততালি। আরো একবার রায়ান ও মিরায়া একসাথে ট্রফি তুলে ধরল—একই আলো, একই মুহূর্তে দুই ভিন্ন মানুষ, কিন্তু একে অপরের পাশে। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে আলো ছড়িয়ে পড়ছে, লেজারের আলোয় তাদের ছায়া একসাথে মিশে যাচ্ছে। রেসট্র্যাকের সেই রাত—স্পিড, আবেগ, গোপনীয়তা আর এক নিঃশব্দ সংযোগে পরিণত হলো একটি কিংবদন্তির সূচনায়।
হঠাৎ স্টেজে ব্যাকস্টেজের একজন স্টাফ এসে লারা আর আদ্রিয়ান কে কানে কানে ফিসফিস করে কিছু বলতে লাগলো। রায়ান আর না দাঁড়িয়ে মিরায়ার উদ্দেশ্যে শুধু ছোট করে বলল-“Miss. Raya, let’s leave the stage.”
মিরায়া রায়ানের কথায় মাথা নাড়িয়ে। নিজেদের মতো স্টেজ থেকে নামতে উদ্যত হতেই লারা তাদের বাঁধা দেয়-
“Excuse me, Mr. Rayan and Miss.Raya”
রায়ান মিরায়া দুইজন দাঁড়িয়ে যায়। তখনি আদ্রিয়ান মিরায়া আর রায়ানকে বলে-
“আসলে রেসের পর একটা সাকসেস ফুল পার্টি এ্যারেন্জ করা হয়েছে। আপনারা ইনভাইটেড।”
রায়ান স্বাভাবিক ভাবে বলল-“সমস্যা নেই। আপনারা পার্টি করুন। আমার বাড়ি ফিরতে হবে।”
মিরায়া রায়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো-“উনি তো আমাকে কি জেনো বলবেন বাড়িতে ফিরে। কিন্তু আমি তো বাড়িতে নেই। উনার বাড়িতে ফেরার আগে আমাকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। এখন পার্টির মধ্যে ফাসলে সব শেষ।”
মিরায়াও রায়ানের কথায় তাল দিয়ে বলল-“জ্বি আপনারা পার্টি করুন, তাতে সমস্যা নেই। আমি পারবো না আর সময় দিতে। বাড়ি ফিরতে হবে।”
লারা আদ্রিয়ান দুইজন একে অপরকে দেখে রায়ান আর মিরায়াকে রিকুয়েস্ট করলো-“প্লিজ এভাবে বলবেন না। আথোরিটির নির্দেশ সাকসেস পার্টিতে উইনারস না থাকলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। অল্প সময়ের জন্য হলেও আপনাদের উপস্থিতি কাম্য। অল্প কিছু সময় ৩০ মিনিটের মতো হলেও সমস্যা নেই।”
তাদের রিকুয়েস্টে রায়ান নিজের ঘড়ি দেখলো ১১.৩০ এর মতো বাজছে তখন। সে বিষয়টা আর না বাড়িয়ে মেনে নিয়ে বলল-“ওকে ১২ টা অব্দি থাকা পসিবল হবে। আই এম ইন।”
মিরায়া অবাক হয়ে রায়ানের দিকে দেখলো। রায়ান মিরায়াকে চোখ ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো-“এনি প্রবলেম মিস.রায়া?”
লারা মিরায়ার হাত ধরে বলল-“রায়া প্লিজ এগ্রি।”
মিরায়া আর না করলো না যেহেতু রায়ানের ও দেরি হবে। তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলল- “ওকে। আমিও খুব একটা সময় দিতে পারবো না।”
লারা আর আদ্রিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপরের লোক দের সবটা জানিয়ে দিলো।
কাজ হয়েছে বলে আদনান খুশিতে জ্যাককের কাছে গিয়ে তার খবর দিল-“কাজ হয়ে গেছে বস।”
জ্যাক কাজ হয়েগেছে শুনে বাঁকা হেসে বলল-“তাহলে আর এখানে থেকে কাজ নেই। চল পার্টির ভেনুতে গিয়ে মিস.রায়ার জন্য অপেক্ষা করা যাক।”
এরপর পরই সবাই রেসের ময়দান ছেড়ে বাইক নিয়ে পার্টির জন্য নির্ধারিত ভেনুর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রায়ান আর মিরায়া ও নিজেদের মতো রওনা দেয়। দুইজন প্রায় একদম কাছাকাছি রাইড করেই যাচ্ছিল একটু আগপিছ। রায়ানের পাশেই মাহির রাইড করছিল।
মাহির রাইড করতে করতে রায়ানকে প্রশ্ন করলো-
“তুই পার্টির জন্য হ্যাঁ বললি কেন? বাড়িতে বউ রেখে এসেছিস মাথায় নেই নাকি?
ইদানিং রায়ান বেশি বউ বউ করে তাই মাহির রায়ান কে খেপানোর জন্য কথাটা বলল। আর সেটা রায়ান বুঝতেও পারলো বেশ।
কিন্তু খেপলো না উল্টো বলল-
“বউ যে বাড়িতে রেখে এসেছি তা মনে আছে ঠিকই। কিন্তু বউয়ের কাছে গেলে যেন তোকে মিস না করি তাই আরো একটু সময় কাটতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুই তো জানিস আমি তোকে কত মিস করি।”
মাহির চোখ মুখ বাঁকিয়ে নিয়ে রায়ানকে বলল-
“ওই তোকে না বলছি আমি স্ট্রেট, আমার মেয়ে মানুষ পছন্দ।”
রায়ান আরো রাগাতে বলল-
“হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে তোর কেমন মেয়ে মানুষ পছন্দ। হাঁটুর বয়সী মেয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে আধ দামড়া একটা।”
মাহির এবার সত্যি রেগে গিয়ে বলল-
“তুই আবার বয়সে গেলি? তুই জানিস, যেই মেয়েকে আমার হাঁটুর বয়সী বলছিস ওই মেয়ে ডার্ক রোমান্স ও পড়ে।”
রায়ান খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“ওই মেয়ে ডার্ক রোমান্স পড়ে তুই কিভাবে জানলি রে? তোকে ডার্ক কিছু বলেছে বুঝি?”
মাহির চটে গিয়ে -“আসতাগফিরুল্লা! আমাকে ওইসব কেন বলবে।”
রায়ান সম্মতি দিল-“হ্যাঁ তাও ঠিক তোকে কেন বলবে। তুই যে দামড়া। হয়তো ভেবেছে তুই বুঝবিই না ডার্ক রোমান্স।”
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো।
মাহির রাগে তার বাইক দিয়ে রায়ানের বাইকে ঠুকে দিয়ে বলল-“তোকে কে বলেছে যে ও এমন ভেবেছে। বেশি কম বুঝ। এখন ডার্ক রোমান্স পড়ছে পরে আমারই কাজে দেবে। হালকা জ্ঞান থাকলে আমার কষ্ট করে বোঝাতে হবে না।”
রায়ান মাহিরের কথায় হালকা হতাশা নিয়ে বলল-“তোরটা তো তাও পড়ে জ্ঞান অর্জন করছে ভবিষ্যতে এর জন্য। আমার বউটাকে তো প্রেক্টিকাল ভাবেও বুঝাতে পারি না আমি কি চাই।”
মাহির হালকা হেঁসে জিজ্ঞেস করল-“এক কাজ কর না, তোর কালেকশনে থাকা বই গুলো দিয়ে দে পড়তে। সব বুঝে যাবে।”
রায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে কষ্ট নিয়ে বলল-“আর বই! একদিন ভুল করে মনে হয় কৌতুহলে একটা ডার্ক রোমান্স বইয়ের পাতা উল্টে হাইলাইট করা লাইন পড়ে ফেলেছিল। সেই লজ্জায় খাটের নিচে ঢুকে বসেছিল জানিস! এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো বল তো।”
মাহির রাইড করতে করতে জোরে হেঁসে উঠলো-“থাক ভাই বইয়ের প্লেন তবে বাদ দে। খাটের নিচে বসে থাকলে সমস্যা। তার চেয়ে বরং খাটের উপরেই থাকুক কিছু না বুঝে।”
রায়ান বাঁকা চোখে মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল-“বেশি হাসিস না, আবার মুখ দিয়ে কিছু একটা বেরিয়ে যাবে পরে দেখবি সত্যি হয়ে গেছে সেটাও। পড়ে দেখা যাবে তোর কাহিনি সোফা অব্দি ও পৌছাবে না খাট তো দূরের কথা।”
মাহির তৎক্ষণাৎ বলল-” দেখ রায়ান এসব একদম বলবি না। তোর মুখে কুফা আছে আমার জন্য। যা বলবি তাই হয়ে যাবে। উল্টো পাল্টা না বলে এটা বলল যেন আমি আমার চড়ুই পাখিকে পাই। তোর চড়ুই আমার লাগবে না।”
রায়ান সন্তুষ্ট মনে মুচকি হেঁসে বলল-“যাক আমার বোনের থেকে নজর সড়েছে শুনে শান্তি লাগলো তাই দোয়া করে দিচ্ছি। ঠিক যে দিন আমি আমার বউকে আমার কাছে আনতে পারবো, তুইও সেইদিনই দেখা পাবি তোর চড়ুই এর।”
মাহির চোখ বাঁকা করে তাকিয়ে বলল-“তোলার সাথে আমার টা না জোড়া দিলে হইতো না? তোর যা অবস্থা ভাবি আম্মা মানবে কিনা তারও তো ঠিক নেই। এই অপেক্ষায় তো আমি জীবনেও পাব না ওকে।”
রায়ান মাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল-“তাহলে তাড়াতাড়ি পেতে চাইলে তোর ভাবি আম্মা কে জলদি পটানোর জন্য ভালো ভাবে হেল্প করতে থাক আমাকে বুঝেছিস?”
মাহির এতক্ষণে সব বুঝলো। এইসব কিছুই রায়ান নিজের বউকে সত্যি বলার পর কিভাবে সামলাবে তার চিন্তা তেই বলছিল। মাহির শান্ত গলায় খোঁচা মেরে রায়ানকে বলল-
“এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বললেও হতো মাঝখান থেকে শুধু শুধু আমার লাভ লাইফটা আটকা পড়ে গেল।”
রায়ান কিছু না বলে শুধু হাসলো। মিরায়া রায়ান আর মাহিরের অনেক টা সামনে চলে গেছিল তাদের এমন আলাপ চারিতা করতে করতে। তাই আগে আগে মিরায়া পার্টিতে পৌঁছে যায়। সেখানে অলরেডি সবাই উপস্থিত ছিল। জ্যাক বার কাউন্টারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ড্রিংক করছে বাকি ছেলে পেলেদের সাথে। মিরায়াকে ভিতরে আসতে দেখেই বাকি সবাইকে সড়িয়ে দিয়ে আদনান কে বলল-
“তুই যা। আমার আজকের রাতের রানী কে ওয়েল কাম কর।”
আদনান বাঁকা হেঁসে মিরায়ার কাছে গিয়ে বলল-“ওয়েল কাম মিস.রায়া।” তার গলায় ছিল বানোয়াট আন্তরিকতা আর ঠোঁটে ছিল কুটিল হাঁসি।
মিরায়া চমকে একটু দূরে সড়ে যায় আদনানের থেকে আর বলল-“থ্যাংক ইউ।”
জ্যাক বার ওয়েটার কে বলল-“একটা অ্যালকোহল এর গ্লাস আর একটু ফ্রুট জুস এর গ্লাস রেডি করো।”
জ্যাক এর কথা মতো কাজ হয়ে গেলে ওয়েটার জ্যাক কে দু’টো গ্লাস একটা ট্রেতে করে দেয়। জ্যাক ফ্রুট জুসে একটা ঔষধ মিশিয়ে দিলো। তার পর ওয়েটার কে বলল-
“এবার এইগুলো নিয়ে ওই মেডামটার কাছে যাও। আর ড্রিঙ্কস অফার করো।”
ওয়েটার টা জ্যাকের কথা মতোই মিরায়ার কাছে গিয়ে ট্রে এগিয়ে বলল-“ম্যাম, উড ইউ লাইক টু হেভ সামথিং?”
আদনান পাশেই ছিল সে একবার জ্যাক এর দিকে তাকাতেই জ্যাক ইশারা দিয়ে কিছু বোঝালো তাকে। মিরায়া ভদ্রভাবে ওয়েটার কে বলল-“নো থ্যাংকস। আই ডোন্ট ড্রিংক।”
জ্যাক বাঁকা হেঁসে উঠলো। আদনান আগ বাড়িয়ে জুসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল-“গুড, ওগুলো খাওয়া ভালো ও না। আপনি বরং জুস খান। ফ্রেশ জুস একদম।”
মিরায়া না করতে না পেরে গ্লাসটা হাতে নিলো। আদনান ওয়েটার টাকে ইশারা দিতেই সে চলে গেল। আদনান এবার মিরায়াকে হালকা জোর করলো-“পার্টিতে এসেছেন অথচ কিছুই না নিলে খারাপ দেখায় প্লিজ জুস টা খান।”
মিরায়া কি করবে বুঝতে পারছিল না তাই একটু ভদ্রতার খাতিরে জুসটা খেতে মাস্ক খুলবে এমন সময়ই একই পথে রায়ান আর মাহির প্রবেশ করলো। রায়ানকে দেখে মিরায়া আবার তার ব্যাগ এর গগলস পড়ে নিল। আর মাস্ক ও ঠিক করে নিল। আদনান একটু অধৈর্য হয়ে বলল-
“কি হলো রায়া খাচ্ছেন না কেন? একটা সিপ নিন অন্তত। নাহলে খারাপ লাগবে।”
মিরায়া ছোট থেকে জেদি বিশেষ করে যখন সে বিরক্ত অনুভব করে বা তাকে কেউ জোর করে কিছু করাতে চায় সেটা তার সহ্য হয় না। এই মুহূর্তে আদনানের জোরাজুরিতে আর অস্বস্তি হচ্ছিল-“আজব তো ঢাকার ছেলেরা এতো গায়ে পড়া হয় নাকি!”
বিরক্তি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে মিরায়া ইচ্ছে করে হাত থেকে গ্লাসটা ফেলে দিলো। রায়ান আর গ্লাস ভাঙার শব্দে পাশে তাকাতেই দেখল রায়ার হাত থেকে গ্লাসটা পড়েছে।
মিরায়া এবার মিথ্যা ভাবে নিয়ে-“ইস্! সরি পড়ে গেল। আমি একটু পর আবার দুধ নিয়ে নেব। থ্যাংক ইউ আপনাকে।”
বলেই ওই জায়গা ত্যাগ করে ভিতরের দিকে একটু কম ভীর আছে এমন জায়গায় দাঁড়ালো। মনে মনে বিড়বিড় করছে-
“উফ্! কখন যে চট্টগ্রামের জন্য রওনা দেবো! সবাই আমার জেতার খবরের জন্য অপেক্ষা করছে। ফোন করি নি সবাইকে নিজে খবর দেব বলে।” মিরায়া নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছু টা সময়।
আদনান থ মেরে গেল কি করবে বুঝতে না পেরে জ্যাকের দিকে তাকাতেই জ্যাক শান্ত ভাবে ইশারা করল-“কোনো ব্যাপার না ধীরে সুস্থে করা যাবে পরে।”
রায়ান এবার একটু মিরায়াকে বেশিক্ষণ দেখলো। এখন আর রেসের সুট না বরং নিজের কুর্তিতে আছে মিরায়া। তবে হাতে নিজের রাইডিং গ্লাভস পড়া। গ্লাভস এর জন্য রায়ানের দেওয়া ব্রেসলেট টা দেখা যাচ্ছে না। মাহির রায়ানকে মিরায়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-
“ওই নজর হামলা তোর না বউ আছে!”
রায়ানের ধ্যান ভেঙ্গে গেল। রায়ান একটু সন্দেহ ভাঁজন কন্ঠে মাহির কে বলল-“মাহির শোন, আমার না এই রায়া মেয়েটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখে থাকতে পারি একটু বলবি? আমাদের কলেজে কি কোনো মেয়ের নাম রায়া ছিল?”
মাহির রায়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে সাথে সাথে মিরায়ার দিকে তাকিয়ে বলল-“কই না তো, আমার তো কারো সাথে মিল চোখে পড়ছে না। তুই বেশি ভাবছিস। মেয়েটার দিকে নজর কম দে।”
রায়ান মাহিরের কথায় বিরক্ত হলো তবে তার মাথাতেও এক কথা ঘুরছে-“এই মেয়াটা কেন বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে আমার? এমনি বা কেন লাগছে আমার যে ওকে চিনিস আমি।”
মাহির রায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল-“চল ভেতরে যাই।”
রায়ান মাহিরের সাথে ভিতরে গেল। এবার দুইজনই বার কাউন্টারে দাঁড়িয়ে কোল্ড ড্রিংকস নিলো। তারা কেউই নেশা করে করে না। এমনকি শখের বসেও কখনো হারাম ছুয়ে দেখেনি।
জ্যাক ও পাশেই ছিল। সে রায়ানকে পাত্তা দিলো না। নেশা ধরে গেছে অনেকটা অ্যালকোহলের সেবনের ফলে। এখন শুধু মনের লালসা ফুটে উঠছে চোখে মিরায়ার জন্য। সে ধীরে ধীরে মিরায়ার দিকে হাঁটতে লাগলো। রায়ান না চাইতেও ব্যাপার গুলো খেয়াল করছে। হঠাৎ একটা মেয়ে রায়ানের কাছে এসে বলল-“রায়ান ইউ ওয়ার ফিন্নোমিনাল টুডে। আই রিয়ালি লাইকড ইউ। মে আই হেভ ইউর নাম্বার?”
রায়ানের চোখ মিরায়া আর জ্যাকের দিকে যাচ্ছে পর পর। মাহির রায়ান কে অন্যমনস্ক দেখে ধাক্কা দিল-“ওই মেয়েটা কিছু বলছে তোকে শুনলি?”
রায়ান না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো-“যা বলেছে তা কি আমার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো ভাবে?”
মাহির বলল-“নাহ্।”
রায়ান গম্ভীর গলায় বলল-“চলে যেতে বল তাহলে।”
মেয়েটা হতভম্ব হয়ে গেলো। মাহির তাকে কিছু বলার আগেই সে চলে গেলো দেমাক দেখিয়ে। মাহির এবার হেসে রায়ানকে জিজ্ঞেস করল-“কি রে মেয়েটার দিকে তো দেখলি ও না।”
রায়ান এবার বিরক্ত হয়ে বলল-“বিবাহিত জেনেও যে মেয়ে ওই ছেলের নাম্বার চায়, ওই মেয়ের ছায়া দেখার রুচিও রায়ান চৌধুরীর নেই।”
মাহির এবার খোঁচা দিয়ে বলল-“তাই বলে যে পাত্তা দিচ্ছে না তাকে দেখে যাচ্ছিস শুরু থেকে?”
রায়ান চোখ বাকিয়া তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল-“কি বলতে চাইছিস তুই?”
মাহির সোজাসাপ্টা বলল-“রায়াকে তখন থেকে দেখে যাচ্ছিস অথচ রেসের সময় তো অন্য ভাব ছিল।”
রায়ান মাহিরের কথার কি জবাব দেবে ভেবে পেলো না। সে নিজেও বুঝতে পারছে না। বিষয়টা বুঝার মতো ও না, রায়ান মিরায়াকে কখনো রেস করার সুটে দেখে নি তবে শুরু থেকেই কুর্তিতে দেখেছে। তাই অদ্ভুত ভাবেই একটু আগে যাকে দেখার জন্য একটুও ইচ্ছে জাগে নি, এখন তাকে দেখার ইচ্ছা হচ্ছে। রায়ানের মন বলছে সে মেয়েটাকে চেনে তবে কোনো ভাবেই এমন কিছু মাথায় ধরেছে না কে হতে পারে। মিরায়াই রায়া এটা তার মাথাতে আসবে এমন কিছু ও তার চোখে কখনো পড়ে নি তাই মনে এই নিয়ে সন্দেহ ও ছিল না। তার শুধু কৌতুহল জাগছিল। রায়ান মাহফিলের সাথে আর তর্ক যে গেল না ওই বিষয়ে নিজের চোখ ও সোজা করে রাখলো।
জ্যাক মিরায়ার কাছে গিয়ে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে রইল কিছু সময়। মিরায়া ফোনটাই দেখছিল। হঠাৎ ছায়া পড়াতে সোজা তাকাতেই জ্যাককে সামনে দেখে মৃদু চমকে উঠে-“ওওহহ্!”
হাতের ফোন টা কেঁপে উঠলো একটু। জ্যাক মিরায়াকে হঠাৎ চমকাতে দেখে বাঁকা হেঁসে মিরায়ার একদম সামনে যায় দূরত্ব কমিয়ে। মিরায়া আরো চেপে যায় পিছনের দেয়ালে। মুখে ভয় নয় বরং বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। রায়ানের নজর ঠিক আবার সেই দিকেই গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল ওই দিকে । ওইখানে কি হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। পার্টি তে গানের আওয়াজ খুব বেশি। রায়ান ওয়েবার কে বলল গানে আওয়াজ একটু কমিয়ে দিতে তবে তা খুব সুবিধা করতে পারলো না।
জ্যাক মিরায়ার উদ্দেশ্যে বলল-“হেই মিস.রায়া, আই এম জ্যাক।”
মিরায়া জ্যাকের মুখ থেকে মদের গন্ধ পেয়ে নাক ছিটকাল। আর পর মুহূর্তেই জ্যাক কে এক আঙুল ছুয়িয়ে দূরে পড়াতে ধাক্কা দিলো, যেন হাত লিগালে নোংরা হয়ে যাবে। আর বলল-
“হাই মিস্টার. জ্যাক। ক্যান ইউ টেক টু স্টেপ ব্যাক! you stink.”
রায়ান দূর থেকে দেখে যাচ্ছে সব। অদ্ভুত ভাবে তার এসব ভালো লাগছে না। জ্যাকের কাছে যাওয়া বা কথা বলা কোনো টাই না। রায়ান নিজের কোর্ট ড্রয়িং এক নিঃশ্বাসে শেষ করে ফেলল।
জ্যাক ঠোঁট কামড়ে হেসে খানিকটা সড়ে এলো মিরায়ার থেকে। সে এবার ইচ্ছে করে নেশাগ্রস্ত হওয়ার ভান করে মিরায়ার উপর পড়ে যেতে নিলে মিরায়া তৎক্ষণাৎ সড়ে যায় দেয়ালের থেকে একই মুহূর্তে রায়ান নিজের কোল্ড ড্রিংকের কাঁচের বোতল চেপে ধরে শক্ত করে আর জোরে বার কাউন্টারে রাখলো। মাহির অবাক হয়ে-“কি হয়েছে? এমন করলি কেন?”
জ্যাক দেয়ালে বাড়ি খেলো মিরায়া সড়ে যাওয়াতে। জ্যাক এবার কেন জানি আরো পাগল হয়ে উঠছে। নেশার ঘর বাড়ছে। মিরায়া ওই জায়গা থেকে চলে যাবে এর আগেই জ্যাক আবার তার পর আটকে দাঁড়িয়ে প্রপোজাল দিল-
“আমার সাথে রাইডে যাবে? বাস একবার।”
মিরায়ার মাথায় এবার রক্ত উঠে গেল। সে জ্যাক কে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে ওই মুহূর্তে নিজের জায়গা ত্যাগ করতে যাবে তখনি জ্যাক মিরায়ার হাত ধরে ফেলে। রায়ান এই দৃশ্য দেখে রাগে ফেটে পড়লো।
হঠাৎ মাহির কে বলল-“মাহির ওই দিকে চল।”
তার পর মাহিরের হাত ধরে টেনে মিরায়ার দিকে যেতে থাকলো। চোখে অন্য এক আগুন, যার কোনো অর্থ নেই, ব্যাখ্যা নেই।
মিরায়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নিজে তবে ছাড়তে বলে নি একবারও মিনতি করার মেয়ে সে নয়।
জ্যাক মিরায়াকে উদ্দেশ্যে করে বলে-“এত দেমাক কিসের? এক রাতের ব্যাপার। ট্রাই মি, এমন সুখ দেব যা আর কোথাও কারো কাছে পাবে না।”
কথাটা শুনাল সাথে সাথে মিরায়ার মেজাজ পুরোটা বিগ্রে গেল। পাশেই একজন কোল্ড ড্রিংক খাচ্ছিল দেখতে পেয়ে সাথে সাথে তার থেকে কাঁচের বোতল টা ছিনিয়ে নিয়ে জ্যাকের মাথায় মারলো মিরায়া। এক মুহুর্তের মধ্যে জ্যাকের মাথা ফেটে রক্ত মাটিতে গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। রায়ান এই দৃশ্য দেখে হঠাৎ থেমে গেল, মাহিরের মুখের কোল্ড ড্রিংক বেরিয়ে এলো, গান থেমে গেল, সবাই নিজেদের জায়গায় পাথড়ের মতো স্থির হয়ে গেল। রায়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। এভাবে রায়া প্রতিবাদ করতে পারবে সে আশা করে নি।
জ্যাক নিজের মাথায় হাত দিয়ে তার চোখের সামনে আনতেই দেখলো রক্ত তার হাতে। নেশার ঘরে ব্যাথার অনুভূতি ছিল না তাই আবার মিরায়ার কাছে আসতে চাইলো এবার রায়ান এগিয়ে যেতে উদ্যত হতেই মিরায়া আরেকটা কাঁচের বোতল নিয়ে জ্যাকের মাথায় মারলো এবার জ্যাক নিজের দুই হাত দিয়ে মাথায় ধরলো। মিরায়া পা তুলে লাত্থি মেরে জ্যাক কে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার পা জ্যাকের বুকের উপরে রেখে বলল-
“এক রাতের ব্যাপার তাই না। সুখ বিলাইতে মন চায়? দাঁড়া সুখ কারে বলে কত প্রকার কি কি বুঝাইতেছি।”
এই বলে মিরায়া জ্যাকের দুই পায়ের উরুর মাঝে পা দিয়ে লাথি মারলো। আশে পাশের সবাই আতকে উঠলো। মাহির এর মুখের এক্সপ্রেশন এমন মেনে নিজে অনুভব করছে সেই ব্যাথা। রায়ান চোখ দুটো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে নিয়ে খুলে মিরায়াকে দেখতে লাগলো। চোখে গগলস চড়ানো তবে চোখের রাগ ঝড়ে পড়ছে । রায়ান কঠিন হয়ে থাকলো। জ্যাক ফ্লোরে কাতরাচ্ছে ব্যাথায়।
মিরায়া এবার নিচু হয়ে বসে জ্যাকের চুল টেনে ধরে বলল-
“তোকে এই মাত্র যেই সুখ দিলাম, সেটা এক রাতের ব্যাপার না। সারা জীবনে আর সুখ বিলাতে পারবি না হারামজাদা। না অন্য কোথাও এই সুখ পাবি আর না নিতে যাবি।”
মিরায়া চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িতেই জ্যাক মিরায়ার পা দুই হাতে আটকে ধরে। রায়ান এবার নড়লো না। ধারণা হয়ে গেছে এতক্ষণে এই মেয়ের তার সাহায্যের এখন দরকার নেই। মিরায়া নিজের অন্য পা দিয়ে জ্যাকের হাতে লাত্থি দিয়ে পা ছাড়িয়ে নিলো। আর ছোট করে দুই লাইন গানের লাইন বিড়বিড় করলো-
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪১ (৩)
“চেহারার নাই ডক, নাম রাখছে আব্দুল হক,
আমায় নিয়া ঘুরতে যাবে তার কতো শখ!”
রায়ান ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো মিরায়ার গানের লাইন শুনে।
