আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪৮

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪৮
অরাত্রিকা রহমান

পরের দিন~
সকাল ৭টা বাজছে। রামিলা চৌধুরী, রায়হান চৌধুরী, রুদ্র তিনজনই হসপিটালে ছিলেন, যদি রায়ানের কোনো প্রয়োজন পড়ে বা জ্ঞান ফিরে আসে সেই জন্য। যদিও রামিলা চৌধুরীকে রায়হান চৌধুরী অনেক বার বাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু রামিলা চৌধুরী জেদ ধরে হসপিটালেই থেকে গেছিলেন দুই ছেলের যত্ন করতে। মাহির গত রাতে বাড়ি ফিরে গেছে যেহেতু তার বাড়িতেও কেউ এসব ব্যাপারে জানতো না তাই তারাও বেশ চিন্তায় ছিল, তাছাড়া সকালে আবার কলেজ যেতে হতো। রুদ্র এখন মোটামুটি সুস্থ আছে, রক্ত দেওয়ার পর একটু লম্বা বিশ্রাম নেওয়াতে শরীর টা আর তেমন দূর্বল লাগছিল না তার। মায়ের যত্নে আরো অনেক টা ভালো অনুভব হচ্ছিল।

রামিলা চৌধুরীকে মিরায়ার বিয়ের ব্যাপারটা জেনে যাওয়া, বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে রায়ানের এমন গভীর রাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া সবকিছু জানানো হয়েছে রাতেই। তিনি পরবর্তীতে এই নিয়ে আর কোনো কথাই বলেন নি চুপচাপ ছিলেন মিরায়ার বিষয়ে। রায়হান চৌধুরী রাত থেকে ব্যস্ত থানার আইনি বিষয়াদি নিয়ে যেহেতু দূর্ঘটনা ছিল এটা। মাহির কলেজে যাওয়ার আগে হসপিটাল হয়ে যাবে আগেই বলে রেখেছিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রায়ানকে সকালেই বেডে দেওয়া হয়েছে। রুদ্র ও রামিলা চৌধুরী দুইজনই রায়ানের কেবিনে। রায়ানের মাথায় চৌড়া করে ব্যান্ডেজ করে রাখা যায় উপর থেকে রক্ত শুকিয়ে ভেসে আছে অনেক টা। রায়ানের মাথা ছাড়াও পেটের দিকে ও দুই পায়ে বেশখানিকটা জায়গা কেটে গেছিল গাড়ির ধাড়ালো কোনো কিছু দিয়ে, কি দিয়ে হয়েছে এমন আঘাত আলাদা করে বলা মুশকিল। তাই পেটের বাম দিকের কাঁটা স্থানে আর পায়ের আঘাত প্রাপ্ত স্থানটাও ব্যান্ডেজ করা ছিল। এক রাত আগে সুস্থ সবল ছেলেটাকে চোখের সামনে এমন অবস্থায় হসপিটালের বেডে দেখে রামিলা চৌধুরীর দুই চোখে অশ্রু কণারা ভীর করল। রুদ্র মাকে কি বলে স্বান্তনা দেবে বুঝে পাচ্ছিল না, কেবল কাঁধে হাত রেখে পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল-
“আম্মু শক্ত হও। কেঁদো না প্লিজ। ভাইয়ার এখন আমাদেরকে প্রয়োজন। আমরা দূর্বল হয়ে পড়লে কি চলবে বলল। কেঁদো না।”

রুদ্র মায়ের চোখের জল মুছে দিতে দিতে কথা টা বলতেই মাহিরের উপস্থিত হলো সেখানে। মাহির রামিলা চৌধুরীকে কাঁদতে দেখে একটু চিন্তিত গলায় জিজ্ঞেস করলো-
“কি হয়েছে এখানে? আন্টি তুমি কাঁদছ কেন? রায়ানের কি কিছু হয়েছে? রুদ্র..হয়েছে কি? আন্টি কাঁদছে কেন?”
রামিলা চৌধুরী চোখের পানি মুছে নিজেকে একটু সামলে নিলেন ছেলেদের স্বার্থে। রুদ্র মাহিরের কাছে গিয়ে বলল-
“কিছু হয়নি মাহির ভাই। চিন্তা কোরো না। ভাইয়াও ঠিক আছে। আম্মু ভাইয়াকে এভাবে দেখে কষ্ট পাচ্ছে। তাই একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছে। তুমি ঠিক আছো?”
মাহির রুদ্রর কথা শুনে রামিলা চৌধুরীর দিকে এক নজর তাকালো। এক রাতের মধ্যে মানুষ টার চেহারার কি হালই না হয়েছে ছেলের চিন্তায়। মাহিরের মুখ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো। ওমনি মাহির রুদ্র কে রায়ানের কথা জিজ্ঞেস করলো-

“আমি ঠিক আছি। রায়ান এখন কেমন আছে রুদ্র? ডক্টর কি বলেছেন? জ্ঞান ফিরেছে? ২৪ঘন্টা তো হয়ে এলো।”
রুদ্র মাহিরের প্রশ্নের উত্তর দিতে বলল-
“না, মাহির ভাই। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ডক্টর এখনো আসেনি, হয়তো রাউন্ড দিচ্ছেন। উনি এসে ভাইয়াকে থেকে করে বললে, জানতে পারবো।”
রুদ্রর এই কথা বলতে বলতেই ডাক্তার সাহেব নিজের রাউন্ড শেষ করে অবশেষে এলেন রায়ানের কেবিনে তাকে দেখতে। মাহির, রুদ্র ও রামিলা চৌধুরী সবাই একটু উৎসুক মনে ডাক্তারের জন্য সড়ে দাঁড়ালেন। মাহির ডাক্তার সাহেবকে সকালের শুভেচ্ছা জানালো-
“গুড মর্নিং ডক্টর।”
ডাক্তার সাহেব হালকা মাথা ঝাঁকিয়ে রায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে স্যালাইনের ব্যাগটা দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করলেন-

“প্যাসেন্টের জ্ঞান ফিরে ছিল?”
রুদ্র বলল-“না ডক্টর। এখনো ফেরেনি।”
ডাক্তার সাহেব রুদ্র কথা শুনে মাথা ঝাঁকিয়ে নার্সকে উদ্দেশ্যে করে বললেন-
“নার্স স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে এটা চ্যান্জ করে নতুন একটা রিপ্লেস করুন।”
নার্স ডাক্তার সাহেবের কথায় তাই করতে লাগলো। রামিলা চৌধুরী একটু উত্তেজিত হয়ে ডাক্তার সাহেবের কাছে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
“ডক্টর আমার ছেলের জ্ঞান ফিরছে না কেন? আপনি তো বলেছিলেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরতে পারে। তাহলে আমার ছেলে এখন কেন কথা বলছে না?”
রুদ্র মাকে উত্তেজিত হতে দেখে একটু শান্ত করতে বলল-
“আম্মু শান্ত হও একটু। ডক্টর দেখছেন তো।”
মাহির ডক্টর কে একই প্রশ্ন শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো-
“ডক্টর ওর জ্ঞান কেন ফিরছে না এখনো? Is there any problem?”
ডাক্তার সাহেব মাহির কে উদ্দেশ্য করে বললেন-
“Let me examine him first than I can say something.”
মাহির ডাক্তারের কথা শুনলো। ডাক্তার সাহেব রায়ানের কাছে গিয়ে রায়ানের চোখের পাতা দুটো তুলে চোখ দেখলেন এবং পাল্স রেট চেক করলেন। অতঃপর কেবিনের সবার উদ্দেশ্যে বললেন-

“He is completely fine. Don’t worry.”
রামিলা চৌধুরী আবারো উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে বসলেন-
“If he is fine than why he isn’t opening his eyes? ঠিক আছে বলছেন, কিন্তু আমার ছেলের ঠিক হওয়ার লক্ষণ কোথায়? আমার ছেলে আমাকে মা বলে ডাকছে না কেন? আমার দিকে তাকাচ্ছে না কেন?”
মাহির, রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে ওইভাবেই কি যে বলবে এই মুহূর্তে তাদের নিজেদের মনেও তো একই প্রশ্ন নিয়ে তোলপাড় চলছে। ডাক্তার সাহেব রামিলা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
“Calm down Mrs.Chowdhury. আপনার ছেলে বিপদ মুক্ত সেটা শারীরিক ভাবে তবে জ্ঞান ফেরার বিষয়টা সম্পূর্ণ প্যাসেন্টের মানসিক স্থিতির উপর নির্ভরশীল। এই ক্ষেত্রে ডক্টরদের কিছু করার নেই। এ্যাকসিডেন্ট টা আকস্মিক হওয়ায় প্যাসেন্টের ব্রেইন এখনও স্তম্ভিত। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যেহেতু জ্ঞান ফেরেনি তার মানে সেটার রিকভারি কিছু টা সময় সাপেক্ষ। ধৈর্য ধারণ করুন।”

রামিলা চৌধুরী ডাক্তার সাহেবের কোনো কথায় যেন কানে নিলেন না। ছেলের মুখে আম্মু ডাক শুনার জন্য উৎসুক হয়ে আছেন অথচ ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখতে হচ্ছে। রুদ্র একটু চিন্তায় পড়ে গেল ডাক্তারের কথায়। মাহির উল্টে ডাক্তার কে প্রশ্ন করলো-
“ডক্টর আমরা বুঝতে পারছি বিষয়টা তবে এভাবে কত দিন? আমারা রায়ানের রিকভারি তাড়াতাড়ি করতে কি করতে পারি?”
ডাক্তার সাহেব মাহিরের দিকে তাকিয়ে উত্তর করলেন-
“আসলে এই ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে করার কিছু থাকে না। প্যাসেন্ট নিজেকে মানসিক দিক থেকে মানিয়ে নিতে পারবেন , কেবল তখনি তার জ্ঞান ফেরানো সম্ভব। তবে আপনারা যদি রোগীর আশেপাশে থেকে তার সাথে কথা বলেন তার মস্তিষ্কে একটা স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেন তাহলে অবশ্যই কিছু টা কাজে দিলেও দিতে পারে।”

ডাক্তার সাহেব নিজের কথা গুলো বলে রায়ানের সকল ঔষধ দেখে নিলেন। যেগুলোর প্রয়োজন ছিল সেগুলো রেখে বাকি ঔষধ তিনি পরিবর্তন করে দিয়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যান। রামিলা চৌধুরী ধীর পায়ে এগিয়ে এসে রায়ান পাশে বসে রায়ান একহাত আঁকড়ে ধরে আহাজারি করলেন –
“ঠিক হয়ে যানা বাবা। এই বয়সে তোকে নিয়ে চিন্তা করতে আর ভালো লাগছে না আমার। একটু শান্তি দে আমাকে, কেন বের হতে গেলি তুই এতো রাতে? কেন কেন?”
রামিলা চৌধুরী রায়ানের হাতটা নিজের কপালে ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলেন। রুদ্র আর নিতে পারছিল না এসব তাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। এইদিকে মাহিরের হঠাৎ মনে পড়লো রায়ান শেষ অব্দি চাইছিল চট্টগ্রাম পৌঁছাতে যেন মিরায়াকে ফিরিয়ে আনতে পারে। তবে রায়ানের এ্যাক্সিডেন্টের ব্যপারে মিরায়া তো কিছু জানে না, স্বাভাবিক ভাবেই না জানলে এই নিয়ে দুইজনের মাঝে ভুল বোঝা বুঝির সৃষ্টি হবে। মাহির রায়ান মিরায়ার সম্পর্কের দিকটা চিন্তা করে রুদ্র কে বলল-

“রুদ্র…মিরা ভাবিকে সবটা জানালে ভালো হতো না?!”
রুদ্রর মাথাতেও হঠাৎ একই জিনিস এলো। একটু হকচকিয়ে গিয়ে বলল-
“ওহ্! হ্যাঁ মিরা…মিরাকে তো কিছুই জানানো হয়নি দাঁড়াও এখনি কল করছি।”
মাহির মাথা নাড়ালো, আর নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমাকে কলেজে যেতে হবে রে। তুই থাক এই দিকটা খেয়াল রাখিস কেমন আমি যাই। পরে আসবো।”
রুদ্র মাথা নাড়াতেই মাহির রুদ্র আর রামিলা চৌধুরীর থেকে বিদায় নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল, এখন সোজা কলেজে যাবে।
মাহির যাওয়ার পরপরই রুদ্র সাথে সাথে নিজের ফোনটা বের করলো। রামিলা চৌধুরী মাহির রুদ্রর সব কথা শুনেছেন। রুদ্র মিরায়ার নাম্বারটা ডায়েল করার ঠিক আগ মুহূর্তে রামিলা চৌধুরী গম্ভীর ও কান্না চাপা ভারী গলায় বললেন-

“রুদ্র থাম।”
রুদ্র হঠাৎ চমকে রামিলা চৌধুরীর দিকে তাকাতেই রামিলা চৌধুরী নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন –
“কাউকে কোনো খবর দিতে হবে না।”
রুদ্র অবাক হয়ে বলল-“কিন্তু কেন, আম্মু? মিরা তো সত্যি টা জেনে গেছে। তাছাড়া….”
রুদ্র আর কিছু বলার আগেই রামিলা চৌধুরী রুদ্রর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে মিরায়ার নাম্বারটা ব্লক করে ডিলিট করে দেন। রুদ্র হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে নিজের মাকে। রামিলা চৌধুরী নিজের কাজ শেষ করেই ফোনটা রুদ্র কে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন –
“ওর সত্য জানাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার ছেলের। ও যদি জেদ ধরে বাড়ি ছেড়ে না যেত.. আমার ছেলেকে আজ এই অবস্থায় দেখতে হতো না আমার। সব দোষ ওর, আমার ছেলের এই অবস্থার জন্য একমাত্র ও দায়ী।”
রুদ্র সত্যিই বুঝে উঠতে পারলো না ঠিক কি ভেবে রামিলা চৌধুরী এসব বলছেন। রুদ্র মিরায়াকে আড়াল করতে বলল-

“আম্মু.. কি বলছো এসব? মিরার দোষ কোথায় এতে? এটা একটা এ্যাসিস্ট্যান্ট।”
রামিলা চৌধুরী রুদ্র কথার প্রতিবাদ করে বললেন-
“অবশ্যই ওর দোষ। ছোট থেকে এতো আদর দিয়ে বড় করেছি ওকে, আমাকে বিশ্বাস করে থেকে যেতে পারল না একটা রাত? আমি আর রায়ানের বাবা কি মরে গেছিলাম? আমাদের মুখমুখি হলো না কেন? আমার ছেলে কি ওকে কম ভালো বেসেছে?”
রামিলা চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে রায়ান দিকে আঙুল তুলে বললেন-

“ও কি বুঝবে ঠিক কত টুকু ভালোবাসলে এইভাবে হসপিটালে পড়ে থাকা যায়? ওর অজান্তে ওর বিয়ে দেওয়া অন্যায় হয়েছে তা আমি মানি, কিন্তু একবার আমাকে বলতো যে ও সত্যি জানতে পেড়েছে, একবার বলতো ও কি চায়। কিন্তু ও তা করে নি, নিজের জেদ বজায় রেখে ও এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি চেয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছে যার ফল স্বরূপ আমার ছেলে এখন হসপিটালের বেডে। ও যদি বলতো- মামণি তোমরা ঠিক করো নি আমার সাথে আমি এই সম্পর্ক মানি না, আমি দরকার পড়লে নিজের ছেলের অনুভূতির বিসর্জন দিয়ে ওর কথার মূল্য দিয়ে ওকে মুক্ত করে দিতাম। কেন? কেন বলল না ও? কেন আমার ছেলে ওর জন্য এতো কষ্ট ভোগ করবে?”

রামিলা চৌধুরী নিজের মনের সব ক্ষোভ বের করলেন, হয়তো গত রাত থেকেই অনেক ভেবেছেন এসব নিয়ে কিন্তু কিছু বলেন নি। ছেলেকে যত না ভালো বেসে যত্ন করেছেন তার চেয়ে বেশি ছেলের অবর্তমানে ছেলের বউয়ের যত্ন নিয়েছেন তিনি। আর আজ ছেলের এই অবস্থা তিনি মানতেই পারছিলেন না। রুদ্র বাকহীন দাঁড়িয়ে আছে রামিলা চৌধুরীর সামনে। কিছু বলার সাহস বা জায়গা নেই। এইদিকে মিরায়া যে বিয়েটা মেনে নিয়েছিল এই ধারণাও কারো নেই। মাহির রায়ানের থেকে আধভাঙা যা শুনেছে তাই রুদ্র কে বলেছে কিন্তু ওই অবস্থায় রুদ্র সেটুকুও বোঝেনি যে রামিলা চৌধুরীকে বুঝিয়ে বলতে পারবে।
রুদ্র তবুও ব্যর্থ চেষ্টা করতে চেয়ে বলল-

“আম্মু উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবো একবার মিরার দিকটা।”
তৎক্ষণাৎ রামিলা চৌধুরী রুদ্রর কাছে এসে রুদ্রর হাত নিজের মাথায় রেখে বললেন-
“তোকে আমার কসম রুদ্র ওই বাড়িতে আমার ছেলের কোনো খবর যেন না যায়। নাহলে এর পরিণাম খুব খারাপ হবে।”
এই বলে রুদ্র হাত মাথা থেকে নামিয়ে নিয়ে এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন। রুদ্র ঠায় দাঁড়িয়ে রইল একা রায়ানের সামনে, তার হঠাৎ নিজের হাত পা অদৃশ্য দড়িতে বাঁধা অনুভব হলো।

চট্টগ্রামে~
সকাল ৯টা পার হয়েছে। সকালের খাবার সময়ও শেষ হয়েছে কিন্তু বাড়ির বড় মেয়ের রুমের দরজাও এখনো খুলেনি আর সে খেতেও নামেনি। গত কাল রাতের বেলায় মিরায়া রায়ানের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসেছিল বারান্দায়। বারান্দাতেই বসে থাকা অবস্থায় কখন যে চোখ লেগে এসেছে আর কখন যে সে ঘুমিয়েছে তার নিজের ও খেয়াল নেই। মুখে তীব্র সূর্যের আলো পড়ছে অনেক আগে থেকে কিন্তু চোখ বা মন কোনোটাই জাগার জন্য প্রস্তুত নয়, বলা চলে জোর করেই ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা।

মিরায়া এতো বেলা অব্দি ঘুমাচ্ছে বলে রোকেয়া বেগম সোরায়া কে বলেন মিরায়াকে ডাকতে। সোরায়া সকালে একবার নিজ থেকে ডেকে গেছে মিরায়াকে কিন্তু ভিতর থেকে কেউ সাড়া দেয়নি। মিরায়া ঘুমাচ্ছে ভেবে সে নিচে খেতে চলে গেছিল। এখন আবার চাচির কথায় মিরায়াকে ডাকতে এসে দরজায় খটখট আওয়াজ করতে লাগল সোরায়া। দরজার খটখট আওয়াজে মিরায়া মিটিমিটি তাকায়। সূর্যের আলো সরাসরি চোখে লাগতেই মুখ সড়িয়ে নিলো অন্যদিকে। হঠাৎ ঘুম উধাও হয়ে গেলো। দড়জার অপর পাশ থেকে সোরায়া ডাকছে-

“আপু!, আপু..! দরজা খোলো। আপু…!”
মিরায়ার মাথায় হঠাৎ কি যেন এলো‌। হঠাৎই মেঝে থেকে উঠে দৌড়ে দরজা টা ঠাস করে খুলে ভীষণ খুশিতে সোরায়াকে জিজ্ঞেস করল-
“রায়ান ভাইয়া এসেছে তাই না? কোথায়? নিচে?”
সোরায়া মিরায়ার কথা বুঝলো না- হঠাৎ রায়ান ভাইয়া এখানে আসবে কেন! কিন্তু সোরায়ার মুখে কিছু শোনার আগেই মিরায়া আবার বললো-
“থাক তোকে বলতে হবে না। আমি নিজেই গিয়ে কথা বলে নিচ্ছি তোর ভাইয়ার খবর খারাপ আছে।”
কথাটা বলেই হাসি মুখে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো। সোরায়া অবাক হয়ে উপরে দাঁড়িয়ে থেকে বিড়বিড় করলো-

“কার সাথে কথা বলবে আপু? আমি কখন বললাম রায়ান ভাইয়া এসেছে! ভাইয়ার কি এখানে আসার কথা? কি কিছু জানি না তো!”
মিরায়া ধরফরিয়ে নিচে নামতেই চারপাশটা দেখলো। বসার ঘর পুরো খালি। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে রোকেয়া বেগম হেঁয়ালি করে বলে উঠলেন-
“এই যে মহারানি, ঘুম থেকে উঠার সময় হলো? বেলা কয়টা বাজে? খেতে হবে না নাকি!”
মিরায়া যেন তার কথা শুনেও শুনলো না দুই চোখ অন্য কারো সন্ধান করছে। তবে রায়ানের দেখা না পাওয়ায় মিরায়া রান্নাঘরে গিয়ে রোকেয়া বেগমকে জিজ্ঞেস করলো-

“চাচি কেউ আসেনি?”
রোকেয়া বেগম অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন-
“না তো, কে আসবে? কারো আসার কথা?”
মিরায়া আসলে ভেবেছিল সে যখন ঘুমাচ্ছিল ওই সময়েই রায়ান চলে এসেছে। তাই সোরায়া যখন এভাবে তাকে ডাকছিল তার মনে হয়েছে হয়তো রায়ান এসে তার খোঁজ করছে। কিন্তু এমন কিছুই নয় তা রোকেয়া বেগমের কথায় স্পষ্ট। রায়ান আসেনি বিষয়টা বোধগম্য হতেই মিরায়ার হাস্যোজ্জ্বল মুখটা মলিন হয়ে গেল, হঠাৎই শরীর জোর হাড়ালো। মিরায়া ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের সিঁড়ির দিকে এগোয় ধীর পায়ে। রোকেয়া বেগম আশ্চর্য হলেন মিরায়ার তাৎক্ষনিক পরিবর্তন দেখে। রোকেয়া বেগম মিরায়াকে উদ্দেশ্যে করে বললেন-

“মিরা ওখানেই দাঁড়া চুপটি করে। আমার কথা আছে তোর সাথে।”
মিরায়া দাঁড়িয়ে গেল। রোকেয়া বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মিরায়াকে টেনে নিয়ে সোফায় বসান নিজের মুখমুখি করে এবং জিজ্ঞেস করলেন-
“তোর চাচা বাইরে গেছেন। এখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই। যা জিজ্ঞেস করছি সত্যি সত্যি উত্তর দিবি। চৌধুরী বাড়িতে কি কিছু হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?”
মিরায়া থতমত খেয়ে বড় বড় চোখ করে নিয়ে বলল-
“না না, চাচি। কিচ্ছু হয়নি। কেউ কিছু বলেও নি। কে কি বলবে?”
রোকেয়া বেগম জানেন তার বড় বোন রামিলা চৌধুরী মিরায়াকে পুত্রবধূ হিসেবে ভীষণ আদর করেন এমন রাতের বেলায় মেয়েটাকে ছেড়ে দেবেন এতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন তো তার আপা নন। মিরায়ার কথা যদিও রোকেয়া বেগমের বিশ্বাস হলো না, কিন্তু তাও কিছু বললেন না মিরায়াকে- ভাবছেন সরাসরি রামিলা চৌধুরীকেই এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। অতঃপর মিরায়াকে আদেশ মূলক সুরে বললেন-

“আচ্ছা বেশ মানলাম। যা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে নাম। ডাকতে যেন না হয়।”
মিরায়া উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। রোকেয়া বেগম নিজের ঘরে গিয়ে রামিলা চৌধুরীকে কল করেন। কিন্তু অবাক কর ভাবে রামিলা চৌধুরীর ফোনে কল ঢুকছে না। তিনি অনেক বার চেষ্টা করলেন কিন্তু একবারের জন্যও কল রিং হলো না, লাগাতার বন্ধ দেখাচ্ছে। আসলে রামিলা চৌধুরী রাগে সবার নাম্বার ব্লক করে রেখেছেন এমনকি যেন কোনো ভাবে যোগাযোগ সম্ভব না হয় তার জন্য রুদ্র কে কসম পর্যন্ত দিয়ে রেখেছেন। রোকেয়া বেগম এবার খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলেন-“হঠাৎ কি হলো!? মিরা বাড়ি ফিরে এলো, আপার ফোন বন্ধ। মানে কি এসবের? এই দিকে মিরাও কিছু বলছে না।” এক অদ্ভুত দোটানায় পড়ে গেলেন রোকেয়া বেগম।

মিরায়া নিজের ঘরে গেল সোরায়া মিরায়ার ঘরেই ছিল। মিরায়ান ভাবভঙ্গি আসার পর থেকে অন্যরকম দেখে সোরায়ার মাথায়ও অনেক প্রশ্ন ঘুরছিল। মিরায়া ঘরে এসে সোরায়াকে ঘরে দেখেও যেন দেখলো না। তার কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। আনমনে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল কিছু না বলেই। অতঃপর ফ্রেস হয়ে একে বারে গোসল করে বের হয়। শরীরে এখন কেবল টাওয়াল জড়ানো। সোরায়া এখন মিরায়ার ঘরেই। তার কোনো ভাবেই মন চাইছিল না মিরায়াকে একা রেখে নিজের ঘরে চলে যেতে। মিরায়া আলমারি থেকে নিজের একটা কুর্তি আর সালোয়ার বের করে পড়ে নিল। ঘরে যে সে বাদে অন্য কেউ আছে তার কোনো খেয়ালি নেই। সোরায়া আর চুপ করে না থেকে নিজের মুখ খুলল-

“আপু..!”
মিরায়া সোরায়ার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত বানোয়াট হেঁসে বলল-
“বনু! তুই কখন এলি?”
সোরায়া হতবাক হয়ে গেলো। এতটা সময় সে মিরায়ার ঘরে বসে ছিল মিরায়া একনজর দেখেছে পর্যন্ত কিন্তু জিজ্ঞেস করছে কখন এলো ঘরে। সোরায়া হেঁটে মিরায়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“আপু তোমার কি হয়েছে? এতো অন্য মনস্ক কেন হয়ে আছো তুমি?”
মিরায়া সোরায়ার কথার উত্তর দিলো না। তার নিজেরই মাথা কাজ করছে না ঠিক কি ভেবে সে চট্টগ্রামে এসেছিল আর কি হচ্ছে তার সাথে। সোরায়া মিরায়ার নীরবতা দেখে আবারও জিজ্ঞেস করল-

“আপু.. ওই বাড়িতে কি কিছু হয়েছে? তুমি এখানে কেন এসেছ? রায়ান ভাইয়ার কি এইখানে আসার কথা?”
মিরায়ার কানে রায়ান নামটা বাজলো। হঠাৎ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার। মিরায়া এখন খুব প্রাণবন্ত হয়ে সোরায়াকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসালো। সোরায়া আশ্চর্য হয়ে মিরায়াকে খেয়াল করছে কেমন যেন সেকেন্ডের ব্যবধানে বদল ঘটলো মিরায়ার আচরণে। মিরায়া বেশ আগ্রহ নিয়ে সোরায়াকে বলল-
“বনু তোকে একটা গোপন কথা বলবো?”
সোরায়া স্বাভাবিক ভাবে মাথা নাড়লো-“হুম, বলো না।”
মিরায়া আবারো খুব উৎসাহিত কন্ঠে সোরায়াকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে কানে কানে বলল-
“তোর রায়ান ভাইয়া আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আর আমিও।”
সোরায়া অবাক হয়ে তাকালো মিরায়ার দিকে, সোরায়কে কথাটা বলে মিরায়া হালকা লজ্জায় হেঁসে সোরায়াকে আবার বলল-

“অবাক হচ্ছিস কেন? তুই তো আমার আগের থেকে জানিস এটা।”
সোরায়া মিরায়াকে খুশি দেখে নিজেও হেঁসে বলল-
“হুম জানতাম তো। ভাইয়া সত্যি খুব ভালোবাসে তোমাকে। কিন্তু তুমি এতো তাড়াতাড়ি মানবে তা জানতাম না। বরাবরই তো ছেলেদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে।”
মিরায়া আরো একটু আবেশে হাসলো- “তা তো রাখতাম তোর ভাইয়ার জন্যই। কে জানতো নিজেকে যার জন্য হেফাজতে রেখেছি সে তোর ভাইয়াই।” (মনে মনে)
মিরায়া সোরায়ার দুই হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল-
“আমি নিজেও জানি না কখন কি হয়ে গেছে। কিন্তু হ্যাঁ তোর ভাইয়া এবার নিতে এলে তুমুল ঝগড়া করবো দেখেনিস তুই। লোকটা এখনো পর্যন্ত আসছে না কেন? কোনো কাজ পড়ে গেছে নাকি কে জানে। আমার থেকে কি তার কাজ গুরুত্বপূর্ণ হলো বল তো?”

সোরায়া মিরায়ার কথায় কেমন যেন অদ্ভুত রহস্যময় কিছু অনুভব করছিল। রায়ান মিরায়ার বিয়ের ব্যাপারটা যেহেতু তার অজানা হঠাৎ এমন টান দেখে সে বেশ বিস্মিত। তবে পরিস্থিতি একটু সহজ করতে সোরায়া বলল-
“কাজ থাকতে পারে। একবার কল করে দেখ না।”
মিরায়ার মাথায়ও কথাটা বহুবার এসেছে রাতে কিন্তু জেদ চেপেছিল মাথায় সে কল করবে না। তবে মন মানছে না এমনিতেও তাই সোরায়া বলাতে একটু সাহস নিয়ে বলল-
“উউমম, কল করা যেতে পারে। করে দেখি তবে?”
সোরায়া হেঁসে মাথা নাড়ালো। মিরায়া নিজের ফোন থেকে প্রথমে রায়ানকে কল করতেই ফোনের অপর পাশ থেকে ভেসে এলো-

“আপনি যে নাম্বারটিতে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ।
The number you are calling is not reachable please call of the sometime thank you.”
মিরায়ার ভ্রু কুঁচকে এলো। সোরায়া মিরায়াকে জিজ্ঞেস করলো সাথে সাথে-
“কি হলো আপু? কল ঢুকছে না?”
মিরায়া ডানে বামে মাথা নেড়ে বলল-“না, বন্ধ দেখাচ্ছে।”
সোরায়া মিরায়াকে আবার বলল-“আবার কল করে দেখ না।”

সোরায়ার কথায় মিরায়া বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলো কল করার। কিন্তু প্রতিবারই একই ভাবে নাম্বারটা বন্ধ দেখালো। অতঃপর মিরায়া চৌধুরী বাড়ির সকলের নাম্বারে এক এক করে কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করল। কিন্তু রায়ানের নাম্বারের মত অন্য সবার নাম্বার ও বন্ধ দেখাচ্ছিল। হঠাৎ একসাথে সবার নাম্বার বন্ধ থাকবে তাতো হয় না। মিরায়া বুঝতে পারল হয়তো সম্পূর্ণটাই ইচ্ছাকৃত। কেউ তার সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না বিধায় নিজেদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন করেছে। সোরায়া যদিও কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে কিন্তু মিরায়ার মুখশ্রীতে ফুটে ওঠা ভাব চিত্ত তার কাছে খুবই অদ্ভুত ঠেকলো।

সোরায়া কিছু বলতে নেয় মিরায়াকে-“আপু..আমি..!”
সোরায়া আর নিজের সম্পূর্ণ কথাটা শেষ করতে পারল না তার আগেই মিরায়া সোরায়াকে শান্ত ভঙ্গিতে বলল-
“সোরা বেরো ঘর থেকে..! আমি একটু একা থাকতে চাই।”
সোরায়া চুপ করে গেল। মিরায়া বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেল। সোরায়া বুঝলো তার আর সেখানে থেকে কাজ নেই, তাই নিজের থেকে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। মিরায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে রইল কিছু সময়-

“আচ্ছা উনি কি আমার থেকে মুক্তি চাইছেন? আমার থেকে দূরে যেতে চাইছেন? সব কিছু শেষ করতে চাইছেন? উনি কি আমাকে ভালোবাসেন নি? তবে কি ওই ডিভোর্স পেপার টাই সত্যি আর আমি যা অনুভব করেছি সেসব কিছুই কি মিথ্যা ছিল?”
অজান্তেই চোখ ভিজে উঠলো মিরায়ার। তবে সময় নিজের মতো বয়ে যাচ্ছে ঠিকই।

প্রায় এক সপ্তাহ পর~
মিরায়া এখন কিছু টা অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। সারা দিন রাত যতটা দীর্ঘ সময় সম্ভব কেবল ঘুমিয়ে কাটায়। নিজের ঘরের বারান্দা ছাড়া বাইরের আবহাওয়া দেখতে ও এতো দিনে বাইরে পা রাখে নি। প্রতিদিনের খাবার তার ঘরে দিয়ে যাওয়া হয় কারণ সে সবার সাথে বসে খেতে চায় না। নিজের ঘরে যে খুব খায় এমন নয়। কিছু টা খাবার মুখে দিয়ে বাকিটা ওভাবেই রেখে দিত শুরুর কিছু দিনে কিন্তু এই নিয়ে রোকেয়া বেগম ও শফিক রহমানের জিজ্ঞাসাবাদ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন অতিরিক্ত খাবার গুলো বারান্দায় রেখে দেয় যাতে পাখিরা এসে খেয়ে যায়। তার ঘরে কারো ঢোকার জো নেই। মাঝে মাঝে সোরায়া উঁকিঝুঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করে কি চলছে কিন্তু সব সময়ই সে মিরায়াকে খাটে ঘুমন্ত অবস্থায় পেতো। চাচা-চাচির ক্ষেত্রেও তাই ঘটতো। খাওয়া আর ঘুমানোই কেবল মিরায়ার কাজ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এই কিছু দিনে।

আজ ১২ অক্টোবর। দুপুর ঠিক ২টা পেড়িয়েছে, মিরায়া এখনো বিছানায়-বিভরে ঘুমোচ্ছে। সোরায়া দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছে, ঘর নীরব ছিল তাই পা টিপে টিপে ঘরে প্রবেশ করলো। মিরায়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোরায়া মিরায়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে খাবারটা সাইড টেবিলের উপর রেখে মিরায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে নিজে নিজে বলল-
“আপু! আর কত ঘুমাবে? এবার তো উঠো। কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ তুমি? এমন অপেক্ষার কি মানে যার পরিণতি তোমার জীবনকে ঝুঁকি পূর্ণ করে তুলছে।”
মিরায়া চোখ দুটো বন্ধ রেখেই সোরায়া কে বলল-
“আমি খাবার খেয়ে নেব সোরা। তুই যা এখান থেকে।”
সোরায়া বুঝতে পারলো মিরায়া ঘুমিয়ে নেই, তার কথায় বিরক্ত বোধ করছে। সোরায়া সাহস করে একবার মিরায়াকে জিজ্ঞেস করলো-

“আপু.. বলছিলাম কি..আমি কি একবার ওই বাড়িতে কল করবো?”
মিরায়া সোরায়ার কথাটা শোনার সাথে সাথে চোখ খুলে রাগি চোখে সোরায়ার দিকে তাকালো। সোরায়া হঠাৎ মিরায়ার চহুনিতে একটু ভয়ে দূরে সরে গিলো। মিরায়া সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে বসে সোরায়ার উপর চেঁচিয়ে বলল-
“তোকে আমি বলেছি আমি কারো অপেক্ষায় আছি? কেন করবো আমি এমন মানুষের জন্য অপেক্ষা যার জীবনে আমার জন্য বিন্দু মাত্র জায়গা নেই? তোকে পাকামো করতে কে বলেছে? খুব বড়ো হয়ে গেছিস না?”
সোরায়া চোখে অশ্রু জমা হলো মায়ের মতো আগলে রাখা বড়ো বোন তার সাথে এভাবে কথা বলবে সে ভাবে নি। সোরায়া কিছুটা ভয়ার্ত কন্ঠে একটু আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলো-

“আ..আপু..আমি.. শুধু..!”
-“বেরো…! বেরো এখুনি..! আর আমার ঘরে আসবি না। আর হ্যাঁ, তোকে একটা বলে দিচ্ছি কান খুলে শোন। ওই বাড়িতে কখনো কল করবি না। আমার টা আমি বুঝে নেব।”
সোরায়া কান্না আটকে রাখতে পারলো না আর ছোট্ট বাচ্চার মতো কেঁদে উঠলো মিরায়ার ধমকে। আর সাথে সাথেই দৌড়ে মিরায়ার ঘর থেকে চলে গেল। সোরায়ার যাওয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইল মিরায়া। নিজের আচরণে নিজেই বিস্মিত সে, কেন করছে? কি বলছে? কিন্তুর ঠিক নেই। কয়েক মিনিট পর উঠে প্রতিদিনের মতো আবার একবার বারান্দায় গেল। বোনের মনে নিজের কথা দিয়ে কষ্ট দিয়েছে ভেবে হঠাৎ খারাপ লাগতে শুরু করলো। খেতে ইচ্ছে করলো না তাই খেলো না। সাইড টেবিলের থেকে খাবারের প্লেট টা বারান্দায় এনে রেখে আবারো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল অবেলায়।

সোরায়া কাঁদতে কাঁদতে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল হঠাৎ তখন তার তাড়াহুড়ো তে রোকেয়া বেগমের সাথে ধাক্কা লাগে। রোকেয়া বেগম মিরায়ার ঘরেই যাচ্ছিলেন তখন কিন্তু সোরায়াকে এভাবে কেঁদে বেরোতে দেখে তিনি সোরায়াকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে সামলান কিছুক্ষণ। চাচা শফিক রহমান তখন ঘরেই ছিলেন। সোরায়া এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। রোকেয়া বেগম ও শফিক রহমান দুই জন একবার চোখাচোখি করলেন কিভাবে কি সামলাবেন বুঝতে পারছেন না। মিরায়ার বিষয়টা প্রথম দিকে স্বাভাবিক থাকলেও এখন তা বাড়ির সবার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার উপর কারণ সম্বন্ধে কারো ধারণাই নেই। এখনো পর্যন্ত যতবার মিরায়ার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন তারা মিরায়া প্রতিবার কথা এড়িয়ে যেত আর না হয় ঘুমিয়ে থাকতো।
কিছুক্ষণ পর সোরায়া কান্না থামিয়ে একটু শান্ত হলে শফিক রহমান গভীর গলায় তবে শান্ত ভাবে সোরায়াকে প্রশ্ন করলেন-

“সোরা মা একটু বলতো মিরার হয়েছে টা কি? এমন আচরণ করছে কেন?”
সোরায়া আরো ভয়ে শিটিয়ে গেল। চৌধুরী বাড়িতে রায়ান মিরায়ার সম্পর্কের কথা চাচা চাচি কে বলা ঠিক হবে কিনা সেটা ঠিক বুঝতে পারছিল না ফল স্বরূপ চুপ করে রইল সে । রোকেয়া বেগম সোরায়া কে ভয়ে চুপ থাকতে দেখে অভয় দিয়ে বললেন-

“দেখ মা তোর আপুর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে তোর চোখের সামনে। আমাদের থেকে কিছু লুকাস না। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি মিরারই হবে। একবার নিজের আপুর কথা ভেবে দেখ মেয়েটা কেমন ঘর কোণে হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মেয়েটা পাগল হয়ে যাবে। সত্যি টা বল আমাদের।”

সোরায়া নিজের মনকে বোঝালো সত্যিই যদি পরিস্থিতি আরো দূরে গড়ায় অনেক খারাপ কিছু হয়ে যাবে। সোরায়া সাহস করে চাচা চাচি কে রায়ানের কথা জানালো। চৌধুরী বাড়িতে রায়ান মিরায়ার ঘনিষ্ঠতা। একে অপরকে ভালো লাগা সবটা বলল। আর মিরায়া যে আশা করছে তাকে রায়ান এসে নিয়ে যাবে আর এখন ওই বাড়ির কারো সাথেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না সেসব ও বললো। সোরায়ার কথা শুনে রোকেয়া বেগম ও শফিক রহমানের মাথায় ঠিক যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। এত বছর পর রায়ান বাংলাদেশে ফিরেছে সে কথা তারা জানতেন না। আর সব শেষে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠতা তৈরি হওয়ার পর এভাবে রায়ান আবার মিরায়াকে ঠেকাবে সেটাও তাদের হজম হলো না, বিশেষ করে শফিক রহমানের। সবটা জানার পর শফিক রহমান সোরায়ার উদ্দেশ্যে বললেন-

“সোরা, নিজের ঘরে যা তুই। তোর চাচির সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
সোরায়া আর বড়দের মাঝে অবস্থান করলো না, উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। এই দিকে রোকেয়া বেগম আকস্মিক সব কিছু বুঝতে শুরু করলেন কেন মিরায়া কারো আসার কথা জিজ্ঞেস করছিল? কেন রামিলা চৌধুরীকে করে পাওয়া যাচ্ছে না? সব কিছু পরিষ্কার হয়ে ধরা দিল। সোরায়ার চলে যাওয়ার পর ঘরের দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে শফিক রহমান চিৎকার করে উঠলেন-
“রোকেয়া তোমার আপাকে কল করে জিজ্ঞেস করো তার ছেলে আমার মেয়ের সাথে কি করেছে।”
রোকেয়া বেগম হতভম্ব হয়ে আনমনে আওড়ালেন-

“আপাকে আমি অনেক আগেই কল করেছি। কল ঢোকে নি, কথাও হয়নি।”
শফিক রহমানের মেজাজ হঠাৎ বিগড়ে গেলো। তিনি গর্জে উঠলেন রোকেয়া বেগমের উপর-
“মানে কি? তোমার ভাগ্নে পেয়েছে কি আমার মেয়েকে? কোনো খেলনা পুতুল? বিয়ের পর বিদেশে চলে যাবে, বাংলাদেশে ফিরে আবার পুরোনো কাসুন্দি ঘাটবে তারপর আবার হাওয়া হয়ে যাবে- কি খেলা খেলছে ওরা আমার মেয়েকে নিয়ে?”

রোকেয়া বেগম চুপচাপ সব কথা শুনলেন তিনি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তার আপা এমন কিছু করতে পারে যে কিনা মিরায়াকে ছোট থেকে মেয়ের মতো করে আদর করেছে, এতো যত্ন করেছে। রোকেয়া বেগম শফিক রহমান কে একবার অনুরোধ করে বললেন –
“তুমি একবার খবর নিন না। রায়ান এখন কোথায়? বাড়ির বাকিরাই বা কোথায়।”
রোকেয়া বেগমের অনুরোধ যেন আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলো, শফিক রহমান আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গলা উঁচিয়ে বললেন-

“খবর নেব মানে? তোমার কি মনে হয় আমার মেয়ের জন্য ছেলের অভাব পড়বে যে আমার ভাগ্নের সাথেই আমার মেয়ের বিয়ে দিতে হবে আমার। ওই বাড়ি থেকে কেউ কখনো নিতে এলেও আমি আমার মেয়েকে দেব না। আর একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নেও তোমার বা আমার ওই বাড়ির সাথে আর কোনো প্রকার সম্পর্ক থাকবে না।”
রোকেয়া বেগম শফিক রহমানের কথায় কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পেলেন না। তিনি নিজের বড় বোনের সাথে সম্পর্ক কেন ছিন্ন করবেন এর কি আদতেও কোনো মানে হয়। রোকেয়া বেগম বেশ রেগে গিয়ে বললেন –
“সম্পর্ক শেষ মানে? কি সব বলছ তুমি? আমার আপার সাথে আমার সম্পর্ক, মিরার সাথে রায়ানের বিয়ের সম্পর্ক তুমি কিভাবে অস্বীকার করতে পারো? তা ছাড়া সোরায়ার কাছে স্পষ্ট শুনলেন মিরা ও রায়ানকে ভালোবাসে। তবে..!”

-“আমি এতো কিছু শুনতে চাইনি রোকেয়া। যা বলেছি তাই হবে। ভালোবাসার পরিণামে যদি আমার মেয়ের এই অবস্থা হয় আমি নিজে গলা টিপে মেরে ফেলবো এই ভালোবাসা। কোনো প্রয়োজন নেই।”
শফিক রহমান রোকেয়া বেগমের কথা শেষ হওয়ার আগেই বললেন।
রোকেয়া বেগম আবারো বিয়ে করা তুলে বললেন-
“তুমি ভুলে যাচ্ছ মিরা রায়ানের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগে। আর দুইজনেই মেনে নেবে যদি জানাতে পারে। সমস্যা কোথায়?”
শফিক রহমান উচ্চ স্বরে বললেন-

“সমস্যা? সমস্যা তোমার ভাগ্নের মধ্যে। ওই ছেলে তখনও আমার মেয়ের হাত ছেড়ে চলে গেছে, আবার এখন ফিরে এসে আমার মেয়েকে নিজের ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এমন ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে কখনো তুলে দেব না। বাকি রইল বিয়ে তাই না? আমি আমার মেয়ের আবার বিয়ে দেব। তোমার ভাগ্নের থেকে অনেক বিশ্বাস দায়িত্ব বান ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেব খুব শীঘ্রই তুমি দেখে নিও।”
রোকেয়া বেগম হা হয়ে রইলেন এই দিকে শফিক রহমান নিজের কথা বলেই চলে গেলেন ঘর থেকে। রোকেয়া বেগম কি করবেন কিচ্ছু বুঝে উঠতে না পেরে আবার রামিলা চৌধুরীর ফোনে লাগাতার কল করতে থাকলেন এই আশায় হয়তো কল রিসিভ হবে-

“আপা ফোনটা তোলো। ছেলে মেয়ে দুটোর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে পুরো। একবার কথা বলো।”
তবে আশানুরূপ কোনো হলো না। স্বামীর জেদের কারণে না চাইতেই হাড় মেনে নিলেন আর সম্পূর্ণ পরিস্থিতিও হাত ছাড়া হয়ে গেল।

দিন দিন মিরায়া আরো অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। আগে ঘুম থেকে উঠতো, খেতো, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমাপ্তিহীন অপেক্ষায় বসে থাকতো আবার ঘুমিয়ে যেত। কিন্তু এখন বিষয়টা অনেক গভীরে চলে গেছে। এখন সারাটা দিন এখন বন্ধ ঘরে বারান্দার ফাঁকা জায়গায় পর্দা দিয়ে ঢেকে অন্ধকারে শুয়ে বসে বা একা একা কথা বলে সময় কাটায়। খাওয়ার সময়ের ঠিক নেই কবে ঠিক মতো খেয়েছে তারও ঠিক নেই। মিরায়া বোকার পর সোরায়া আর অনুমতি ছাড়া মিরায়া ঘরে প্রবেশ করেনি। কেবল যখন মিরায়া চাইতো তখনি ঘরের ভেতর যেত কিন্তু স্বাভাবিক মনভাব সম্পন্ন মানুষের জন্য ওমন ঘরে টেকা মুশকিল তাই চাইলেও সোরায়া বেশিক্ষণ মিরায়ার সাথে থাকতে পারতো না আবার ঘরের আলো জ্বালাতে তাতে মিরায়া বেশ বিরক্ত হতো। শফিক রহমানের সাথে কথাকাটাকাটির পর রোকেয়া বেগম তার সাথে বাড়তি কোনো কথাই বলতেন না। মেয়ে দুটোর যথাযথ যত্ন নিতে চেষ্টা করতেন কিন্তু মিরায়াকে সামলানো এতোটা কঠিন হয়েছে যে তিনি চেয়েও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে মিরায়াকে ফেরাতে পারেন নি।

বাড়িতে মিরায়া আছে তা বোঝা দায় তবে হ্যাঁ কেবল একটা সময় তার অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়- যখন তার কল্পনা ভঙ্গ হয়। সোরায়া বেশ কিছু দিন আগে খেয়াল করেছে মিরায়া অন্ধকারে কল্পনায় কারো সাথে কথা বলে। একদিন সোরায়া মিরায়ার ঘরে সামনে যেতেই ভিতর থেকে মিরায়ার আওয়াজ এলো-
“আরে আপনি আজকে আবার এসেছেন? কতদিন বলবো চাচা চাচি বা বনু আপনাকে দেখতে পেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
ঘরের ভিতরে মিরায়া ছাড়া অন্য কেউ আছে এটা মনে হলো সোরায়ার যদিও ভিতর থেকে কেবল একতরফা উক্তি ভেসে আসছিল। মিরায়া আবার উত্তেজিত তবে খিলখিলিয়ে হেঁসে কথা বলল-

“আপনি যে রোজ এভাবে আমার কাছে আসেন আমি কাউকে বলিনি। যদি আপনাকে আমার কাছে কেউ আসতে না দেয় এই ভয়ে। আচ্ছা আপনি ঠিক আছেন তো?”
-“আমি আপনার সাথে কথা বলবো না। আবার কেন জিজ্ঞেস করছেন কেন হ্যাঁ। অসভ্য লোক দূর থেকে দাঁড়িয়ে কথা বলে যখনি একটু ধরতে যাই হওয়া হয়ে যায়। এমন বর দিয়ে আমার কাজ নেই। চলে যান আপনি। চলে যেতে বলছি কাছে আসছেন কেন? আজ ভুলেও আমি আপনাকে ছুঁতে যাবো না আপনি আবারো হারিয়ে যাবেন। দূরে থাকুন তবু আমার কাছে আমার সামনে থাকুন। না বলছি তো কাছে আসতে, আবার চলে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন তাই না?”

-“না প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না রায়ান। প্লিজ আমার কাছে আসবেন না। আমি চাইনা আবার আপনি হারিয়ে যান। থেকে যান না আমার কাছে। সত্যি বলছি কাউকে বলবো না টপ সিক্রেট থাকবে আমাদের। আমরা এভাবে আমাদের সংসার সাজাবো।”

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪৭

সোরায়া দরজার অপর দিক থেকে রায়ানের নাম শুনে সাথে সাথে দরজা ধাক্কা দিলো। মিরায়া হঠাৎ চমকে দরজার দিকে তাকালো আবার সাথে সাথে ঘরের চারপাশে তাকিয়ে রায়ানকে খুঁজতে থাকলো। কিন্তু রায়ানের অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না। অবশেষে বুঝতে পারলো সেদিনের মতো তার কল্পনা ওখানেই শেষ। রাগে ক্ষোভে আগে যদিও ভাঙচুর করতো কিন্তু সেদিন এমন কিছুই করলো না- নিত্য দিনের জীবনে এক অদ্ভুত অভ্যাস হয়ে গেছে তার।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৪৮ (২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here